পরিত্যাক্ত প্রাসাদ পর্ব-০২

0
351

গল্প: #পরিত্যাক্ত_প্রাসাদ ২য় পর্ব
লেখক: #হাসান

রাকিব ভাবছে, সে এখানে আসলো কিভাবে?? সে তো তার রুমে ছিলো। এসব ভাবতে ভাবতেই: রাকিবের কানে ভেসে আসলো, অদ্ভুত সুরে ডাকা, বাবা ডাক। কেউ রাকিব কে বলছে
” বাবা, ও বাবা দেখো আমি ফিরে এসেছি।”

রাকিব সামনে তাকিয়ে দেখলো: একটা বাচ্চা মেয়ে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তবে মেয়েটা অক্ষত নয়। মেয়েটার শরীর অর্ধেকটা আগুনে পুড়ে গেছে। কি বিভৎস ভয়ংকর চেহারা। মেয়েটিকে দেখে ভয়ে রাকিবের শরীর কেঁপে উঠলো।
বাচ্চাটার মুখ থেকে মাটিতে র*ক্ত ঝরে পড়ছে। আর বাচ্চাটার শরীরের পোড়া অংশ থেকে পুঁ*জ গড়িয়ে পরছে মাটিতে। এসব দেখে রাকিবের বমি আসছে। রাকিব তার নাক মুখ ঢেকে বমি আটকানোর চেষ্টা করছে। এর মধ্যেই বাচ্চাটি আবার বলে উঠলো:
বাবা ও বাবা, তুমি আমায় দেখে এমন করছো কেন?? তুমি কি আমায় কোলে নিবে না??

এবার রাকিব আরো বেশি ভয় পেয়ে যায়। কারন বাচ্চাটি তাকে বাবা বলে ডাকছে। তবুও রাকিব ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো: কে তুমি??

বাচ্চাটি বললো: আমাকে চিনতে পারছো না বাবা‌। আমি তোমার মেয়ে। আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি।

এই কথা শুনে ভয়ে রাকিবের আত্মা বেরিয়ে যায় যায় অবস্থা। রাকিব কাঁপা কাঁপা গলায় বললো: আমার তো কোনো মেয়ে নেই। তাহলে কে তুমি??

মা তো বললো তুমিই আমার বাবা। জানো বাবা, মা এতোদিন আমাকে তোমার কাছে আসতে দেয়নি। মা বলে তুমি নাকি অনেক পচা।

কে তোমর মা ??

বাবা তুমি আমার মাকেও ভুলে গেছো?? আমার মাকে তো তুমি নীলা বলে ডাকতে।

নীলা নামটা শুনেই রাকিবের শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠলো। ভয়ে রাকিবের হাত পা ঠান্ডা হয়ে যেতে লাগলো।

বাচ্চাটি আবারো বললো:
এইতো সেদিন তুমি মাকে এই পরিত্যাক্ত প্রাসাদে রেখে গিয়েছিলে। আর সেদিন থেকে এখানেই থাকি আমি আর মা। মা তোমাকে পছন্দ করে না, তাই মা চলে গেছে। তবে তুমি এসব নিয়ে ভেবো না, আমি তোমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাবো।

না আমি যাবো না। আমি তোমার সাথে যাবো না। তুমি চলে যাও।

এমন বললে কি হবে। তুমি তো এখনো মাকে বিয়েই করোনি। তাই এখন তোমার সাথে আমি মায়ের বিয়ে দিবো।

নীলা তো মরে গেছে। আমি তাকে বিয়ে করবো কীভাবে??

মাকে বিয়ে করতে হলে, তোমাকেও যে মরতে হবে বাবা। তবে তুমি চিন্তা করো না, আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে মারবো না। এই পরিত্যাক্ত প্রাসাদের মধ্যে আগুনে পুড়িয়ে মারবো। তারপর তোমার সুন্দর মুখটা পুরে আমার মতো হয়ে যাবে। আর তখন মা তোমায় অনেক আদর করবে। বলেই অট্টোহাসিতে ফেটে পড়লো বাচ্চাটি।

বাচ্চাটির হাসি এইরকম হাসি যেন, রাকিবের কলিজায় তীরের মতো বিঁধছে। রাকিব কাঁপা কাঁপা গলায় বললো:
না আমাকে মেরো না। আমাকে ছেড়ে দাও।

তোমাকে তো ছাড়বোই, তার আগে তোমার একটা কাজ করতে হবে বাবা।

কী কাজ???

সেদিন আমার মাকে তুমি এখানে রেখে যাওয়ার পর, কে জেনো মাকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে। কিন্তু তুমি জানো বাবা, এখনো কেউ মায়ের জানাজা পড়ায় নি। কেউ মাকে দাফন করেনি। তাই তুমি এখন মায়ের জানাজা পড়িয়ে, মাকে দাফন করবে। ঠিক আছে??

না আমি পারবো না। আমায় ছেড়ে দাও।

মেয়েটি আবার বলে উঠলো: তুমি এখন মায়ের দাফন না করলে, আমি কিন্তু মায়ের সাথে তোমার দাফনও একসাথে করে দিবো।

বাচ্চাটির মুখে এই কথা শুনে, রাকিব নীলার দাফন করতে রাজি হলো। কিন্তু রাকিব ভাবছে নীলার তো কোনো শরীর নেই। সব আগুনে পুড়ে গেছে। শুধু কয়েকটা হার অবশিষ্ট আছে। তাহলে তাকে কীভাবে দাফন করবে?? তাই রাকিব মেয়েটাকে কিছু বলতে যাবে। তার আগেই মেয়েটা বলে উঠে: তুমি ভাবছো কীভাবে মায়ের দাফন করবে। আর মা কোথায়??

মা তো তোমার পাশেই আছে।

মেয়েটির কথা শুনে রাকিব পাশে তাকিয়ে দেখে, তারপাশে কাফনে মোড়ানো একটা লাশ পড়ে আছে। লাশটা দেখে রাকিব ভয়ে আঁতকে উঠে। সে এতোক্ষণ এই লাশটার সাথে পড়ে ছিলো। এটা ভাবতেই রাকিব ভয়ে শিউরে উঠে।

হটাৎ আচমকা একটা ঠান্ডা বাতাস শুরু হলো। আর লাশটার মুখ থেকে কাপড় সরে গেলো। রাকিব দেখতে পেলো সেই কাফনের কাপড়ের ভিতরে নীলার লাশ। এই লাশ দেখে রাকিবের শরীর থরথর করে কাপছিলো। কারন রাকিব নীলাকে পুড়িয়ে মেরেছে প্রায় একবছর হয়ে গেছে। কিন্তু এখনো নীলার শরীর অক্ষত। নীলার শরীরে মুখে একটা দাগও নেই। কিন্তু হঠাতই নীলার মুখের চামরা কুকড়ে যেতে লাগলো। দেখে মনে হচ্ছে নীলার মুখটা ধীরে ধীরে পুরে যাচ্ছে। আর মুহূর্তের মধ্যেই নীলার মুখ থেকে মাংশ খসে পড়া শুরু করলো। নীলার চেহেরাটা ভয়ংকর হয়ে গেলো। কী বিভৎস চেহারা। যা কোনো সাধারণ মানুষ দেখলে ভয়েই জ্ঞান হারিয়ে ফেলবে। কিন্তু রাকিব জ্ঞান হারাচ্ছে না। রাকিব শুধুই ভয়ে কাঁপছে।

আর মেয়েটি আবারো বললো: তোমার হাতে থাকা কোদাল দিয়ে প্রাসাদের বাইরে থাকা তেঁতুল গাছের নিচে একটা কবর খুড়ো।

রাকিব তাকিয়ে দেখে, তার হাতে একটা কোদাল। অথচ একটু আগেও রাকিবের হাত খালি ছিলো। রাকিবের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে, এই মেয়েটির অদ্ভুত শক্তির অধিকারী।
রাকিব না চাইতেও ভয়ে ভয়ে কবর খোঁড়ার জন্য একপা দুইপা করে এগিয়ে যাচ্ছে তেঁতুল গাছের দিকে।

★★
একবার ভেবে দেখেছেন হাসান ভাই?? রাতের অন্ধকারে একটা পরিত্যাক্ত প্রাসাদে একাকি একটা কবর খোঁড়া কতটা ভয়ংকর কাজ। এটা ভাবতেই আমার শরীর শিউরে উঠে। আর এই কাজটিই রাকিব কে করতে বলা হয়েছে।

রাকিব কি সেই কবর খুঁড়তে পেরেছিলো নাহিদ ভাই??

রাকিব সেই কবরটা খুড়ার জন্য যখনই মাটিতে একটা কোপ দিলো। মাটি থেকে পানির মতো কিছু একটা রাকিবের শরীরে ছুড়ে আসলো। রাকিব অন্ধকারের জন্য বুঝতে পারেনি সেটা কি। রাকিব তার গায়ে হাত দিয়ে দেখে, এই পানির মতো তরল পদার্থ টা হচ্ছে র*ক্ত। যা একদম গরম। মনে হচ্ছে এই র*ক্ত কারো শরীর থেকে এইমাত্র বের হলো।আর রাকিব সামনে তাকিয়ে দেখে: সে কোদাল দিয়ে মাটিতে নয়, নিজের পায়েই কোপ মেরেছে। আর এই রক্ত তার পা থেকে বেরুচ্ছে। বাকির ভয়ে আঁতকে উঠলো। কারন রাকিব তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল কেটে ফেলেছে, রক্তে চারিপাশটা ভেসে যাচ্ছে। অথচ রাকিব কোনো ব্যাথা পাচ্ছে না।

রাকিব তার রক্ত দেখে চিৎকার করছে। আর একটু পরেই রাকিবের পায়ে ব্যাথা শুরু হলো। রাকিব ব্যাথায় পাগলের মতো লাফাচ্ছে। আর সামনে থাকা সেই বাচ্চাটি হাসছে। হঠাৎ সামনে থাকা বাচ্চাটি উধাও হয়ে গেলো। আর রাকিব রাস্তার দিকে তাকিয়ে দেখে, কয়েকজন অপরিচিত লোক হেঁটে যাচ্ছে। রাকিব দৌড়ে তাদের কাছে গেলো, আর বললো আমায় বাঁচান। আমাকে বাঁচান। বলেই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে নেতিয়ে পড়ল রাকিব।

★★
রাকিবের যখন জ্ঞান ফিরে আসলো। রাকিব তাকিয়ে দেখলো: সে হাসপাতালে শুয়ে আছে। আর তার মা বাবা তার পাশে বসে আছে। রাকিব জ্ঞান ফিরা মাত্র তার পায়ের দিকে তাকালো। আর দেখতে পেলো, সে তার পায়ের বুড়ো আঙ্গুল হাড়িয়ে ফেলেছে। এই অবস্থা দেখে রাকিব অঝরে কাঁদতে শুরু করলো।
আর একটু পর রাকিব তার মাকে জিজ্ঞেস করলো: তাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছে কে??

জানেন হাসান ভাই?? এরপর রাকিবের মা রাকিব কে যা বললো। তা শুনে রাকিব মাথা ঘুরে পড়ে গেলো।
চলবে………??

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে