নেশা তুই আমার Part:7

0
3381

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:7

বেশ কিছুক্ষণ পরেই ভাইয়া আমায় ছেড়ে উঠে বসলেন।আর আমি ছাড়া পাওয়ার সাথে সাথে এক লাফে উঠে দাড়ালাম।দরজায় ধাক্কা ক্রমাগত বেড়েই চলেছে।একটা বড় সড় ঢোক গিলে ভাইয়ার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম।
“”এখন কি হবে?কেউ যদি এতো রাতে আপনাকে আমার ঘরে দেখে তাহলে সর্বনাশ হয়ে যাবে।””
আমি কথাটা যতটা দুশ্চিন্তার সহিত বললাম।ভাইয়ার ততটা দুশ্চিন্তা হলো বলে মনে হলো না।খুব আরাম করে পেছনে দুই হাতে ভর করে বসে আয়েশি কন্ঠে বলল
“”সো হোয়াট?সর্বনাশ হবে তোর হবে।আমার কি?আমি তো ছেলে মানুষ না? এটা ওটা বলে কাটিয়ে দেব।তবে তোর কি অবস্থা হবে সেটা তুই ভাব।””
ভাইয়ার কথা শুনে এবার আমার রাগ হলো।প্রচন্ড রকমের রাগ হলো।একটা মানুষ এতটা নিষ্ঠুর স্বার্থপর কি করে হতে পারে?খারাপ,খুবই খারাপ লোক একটা।কেন যে এর ভালোবাসায় হাবুডুবু খেলাম কে জানে?এখন মাঝ দরিয়ায় পরে পস্তাচ্ছি তো?একদম ঠিক হয়েছে।আমি এটাই ডিজার্ভ করি।আমার মতো মেয়ে এমনটাই ডিজার্ভ করে।কাজিনকে ভালোবাসবে তাই না?বাস এখন ভালো করে বাস।আমার কান্না পাচ্ছে।ভীষন কান্না পাশে।কেঁদে কেঁদে বন্যা বইয়ে দেওয়ার ইচ্ছে করছে।সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাক এই বন্যা।পৃথিবীর কোনো কিছুই যেন বাদ না থাকে।এই পৃথিবীর সবকিছু নির্দয় পাষান স্বার্থপর।
আমার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে আবারও দরজার ধাক্কার গতি বেড়ে গেল।এমন ভাবে ধাক্কাচ্ছে যেন এক্ষুনি দরজাটা ভেঙে ফেলবে।কোনো উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে।দরজা খুলতে হুড়মুড় করে বড় মা ঘরের ভেতর ঢুকে এলো।বড় মা কে দেখে ভয়ে আমার বুকের হৃদস্পন্দন থমকে গেল।এখন কি হবে?বড় মা তো ভাইয়া কে দেখে ফেলবে।কথাটা ভাবতেই বিছানার দিকে চোখ যেতেই আরমান ভাই ওখানে নেই।ওমা গেল কই লোকটা?এক্ষুনি তো এখানেই ছিল।ভ্যানিশ ট্যানিস হয়ে গেল নাকি?তবে যাই হোক না কেন?আমি তো এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।এটাই ঢের বাবা।একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বড়মার দিকে তাকাতেই বড় মা আমার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল
“”এতক্ষণ ধরে কি করছিলি?দরজা খুলছিলিনা কেন?””
“”আ…আ..আসলে বড় মা খুব ঘুম পেয়েছিল তাই ঘুমিয়ে পরেছিলাম।তুমি যে দরজায় ধাক্কা দিচ্ছ আমি তো বলতেই পারবো না।””
“”তাই নাকি?তা এমন কি মরার ঘুম ঘুমোচ্ছিলি যে এতো ধাক্কানোর পর ও তোর ঘুম ভাঙে নি?
“”এসব কথা বাদ দাও না।তুমি বলো এতো রাতে তুমি আমার ঘরে কি করছো?””
মিনমিন করে কথাটা বলতে বড় মা গর্জন দিয়ে উঠল
“”আরমান কোথায় বলতে পারবি?””
কথাটা শুনেই আমি চমকে উঠলাম।বড় মা এদিক ওদিক নজর দিচ্ছেন।
“”আব আ আরমান ভাই কোথায় আমি কি করে বলব?আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম না?কেন কি হয়েছে?””
“”না কিছু না।আরমান ওর ঘরে নেই তাই ভাবলাম এখানে এসেছে কি না?তুই ঘুমো আমি যাই।””
কথাটা বলেই বড় মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেল।আর আমি সাথে সাথে দরজা লাগিয়ে ঘরের লাইট জ্বালিয়ে দিলাম।খাটের তলা টেবিলের তোলা বাথরুম আলমারির পেছনে সব জায়গায় খুঁজেও ভাইয়াকে কোথাও খূঁজে পেলাম না।গেল কোথায় লোকটা।ঘরের এদিক ওদিক দেখতে দেখতে বারান্দায় আসতেই দেখি ভাইয়া আমার বারান্দার নিচে দাঁড়িয়ে আমার দিকেই তাকিয়ে আছে।তার মানে ভাইয়া পাইপ বেয়ে নিচে নেমে গেছে।আমাকে এক নজর দেখেই ও সেখান থেকে চলে গেল।বুঝলাম ভাইয়া এবার সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে ঢুকবে।বুকের ওপর এক হাত রেখে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লাম।খুব বড় বাঁচা বেঁচে গেছি আজ।নিজের ঘরে এসে ড্রেসিংটেবিলে নিজের প্রতিবিম্ব ওপরেই নজর পরল আমার।আমি এক পা দু পা করে আয়নার সামনে দাড়ালাম।আমি যে আহামরি সুন্দরি তা তো নয়।গায়ের রঙ একটু চাপা।শুধু একটু না অনেকটাই চাপা।তারপর ও আরমান ভাই আমায় কতটা ভালোবাসে।শুনেছি ভালোলাসার মানুষের অনুভুতি নাকি চোখ দেখেই বোঝা যায়।আমিও বুঝেছি আরমান ভাইয়ের চোখে আমার জন্য ভালোবাসা দেখেছি।আর এই অনুভূতি টা সেই ছোট বেলা থেকেই দেখে এসেছি।কিন্তু আমি যে তার মুখ থেকে শোনার জন্য ছটফট করছি।আমার অস্থিরতা টা কি ভাইয়া বোঝে না।আরমান ভাই যেদিন আমায় নিজের মুখে ভালোবাসার কথা বলবে সেদিন আমার কিরকম অনুভুতি হবে সেটা ভাবতেই আমার পেটে শুরশুরি শুরু হয়ে যায়।ইসস তখন কার অনুভুতি টা কি সুন্দর ই না হবে।লজ্জায় নিজের প্রতিবিম্বর দিকেই তাকাতে পারছি না।দুই হাতে নিজের মুখ ঢেকে নিলাম।ইসস কি লজ্জা।
?
নিজের ক্লাসে বসে এক নাগারে লিখে চলেছি।কি লিখছি জানি।শুধু যা মনে আসছে তাই লিখে যাচ্ছি।আজ আমাকে লিখতেই হবে।লিখে লিখে হাত ক্ষয় হয়ে যাক তাও আমায় লিখতেই হবে।কিন্তু আমার এই লেখার মাঝে বাঁধ সাধল সুমন।ব্যাটা আমার কলমটাই কেড়ে নিল।
“”এই চ্যাৎড়া কি করছিস কি।কলম নিলি কেন আমার?””
“”বেশ করেছি নিয়েছি।ইচ্ছে হলে আরো নেব।””
“”এই কলম কি তোর বাপের সম্পত্তি নাকি?ইচ্ছে হলো আর নিলি।দে আমাকে আমার কলম।লিখবো আমি।””
“”আহারে লিখবো আমি(ভেংচি কেটে)।পড়াশুনায় তো নবঘন্ট এখন ইনি আমাদের লেখালিখি দেখাতে এসেছেন।তা কি লেখিছিলি দেখি একটু।””
“”কেন দেখাবো?দেখাবো না।একটুও দেখাবো না।আগে আমার কলম দে বলছি।””
“”এটা এই মূহুর্তে তুই আর পাঁচ্ছিসনা বুঝলি।””
বলেই এক বেঞ্চ পেছনে গিয়ে বসল।
“”আচ্ছা দিবি না তো?দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা।””
কথাটা বলেই হাতে থাকা খাতাটা মুড়িয়ে তার পিঠে সর্ব শক্তি দিয়ে মারা শুরু করলাম।সে আমার হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করে চলেছে আর আমি তাঁকে মেরেই চলেছি।আর আমার পাশে বসে থাকা বন্ধুরা আমাদের কান্ড দেখে হেসেই চলেছে।বুঝলাম না এখানে হাসার মতো কি হলো?আমি একা এতো কষ্ট করে মারছি কোথায় আমায় একটু হেল্প করবে তা না শুধু দাঁত কেলিয়ে যাচ্ছে হারামির দল কোথাকার।
আমি ইচ্ছে মতো সুমনকে খাতার বারি দিয়েই চলেছি এমন সময় ক্লাসের মধ্যে…..
চলবে❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে