নেশা তুই আমার Part:13(last part)

0
3887

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:13(last part)

হঠাৎ করেই আমার গালে খুব জোরে একটা চড় পরে।গালে হাত দিয়ে অশ্রুসিক্ত চোখে অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি বাড়ির সকলের সামনে।
“”থামলে কেন কাকী?আরো দুটো কষে দাও।এই মেয়ে এটার ই যোগ্য।””
আরমান ভাইয়ের কথা শুনে আমার কান্নার বেগ আরো বেশি বেড়ে গেল।কিন্তু আমার মা আমার কান্নাকে পাত্তা না দিয়ে আমার দুই বাহু শক্ত করে ধরে নিজের দিকে ঘোরালো।
“”বলতে পারিস তোর কোন জিনিসটায় আমরা কোন কমতিটা রেখেছি?এতো ভালোবেসেছি তোকে।নিজেরা না খেয়ে তোকে খাইয়েছি।আর তুই?এতো বড় একটা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলি।এই এদিকে তাকা।বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময়ই এক বারো কি তোর আমাদের কথা মনে পরে নি।একবার ও মনে হলো না আমরা কি নিয়ে বাচবো।তুই তো আমাদের একমাত্র সম্বল রে।তোকে নিয়েই বেঁচে আছি আমরা।তাহলে কোন সাহসে তুই এই সিদ্ধান্তটা নিলি?কিভাবে চলে গেলি তুই আমাদের ছেড়ে?
কথা গুলো বলতে বলতেই মা কান্নায় ভেঙে পরল।মায়ের কান্না দেখে আমারো ভীষণ কান্না পাচ্ছে।এবার বুঝতে পেরেছি আমি কত বড় ভুল করেছি।তাঁদের ভালো করতে গিয়েই যে তাঁদের এতটা কষ্ট দিয়ে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।আরমান ভাই ঠিক ছিল আরো কিছু চড়ের যোগ্য আমি।এইটুকু শাস্তি তে হবে না আমার।মাথা নিচু করে কেঁদেই চলেছি তখনই বড় মা এগিয়ে এলো।
“”আমি বলেছিলাম না এই মেয়ে যার জীবনেই যাবে তার জীবনটাই ধ্বংস করে দেবে।এই মেয়ে একবার দেখ আমার ছেলের জীবনটা কি করেছিস তুই।এইকয়দিনে তো ওর মুখটা দেখার ও সুযোগ হয়ে ওঠেনি।যদিও কখনো কখনো বাড়ি ফিরেছে তখন তো তার দিকে তাকানোই কষ্ট দায়ক হয়ে গিয়েছে।কি অবস্থা হয়েছে আমার ছেলেটার চোহারার?সব তোর জন্য হয়েছে।আমার ছেলের এই অবস্থার জন্য তুই দায়ী।””
“”স্টপ ইট মা।এখনো তোমার বলা শেষ হয়নি?সেদিন কি কিছু কম বলেছিলে যে আজ আবার শুরু হয়ে গেলে।হ্যা তোমার ছেলের এই অবস্থার জন্য ওই মেয়েটাই দায়ী।কিন্তু ও আমার জীবনে আসার জন্য নয়। কিছুদিনের জন্য ও আমার জীবন থেকে চলে যাওয়ার জন্য আমার এই অবস্থা।আমি বুঝি না তুমি এমন নিকৃষ্ট মানসিকতার কি করে হতে পারো।কিছু দূর্ঘটনাকে তুমি মিতুর ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছ।””
“”আমি কোনো দূর্ঘটনা কে চাপিয়ে দিচ্ছি না ওর ওপর।যা সত্যি তাই বলছি।””
“”কোন সত্যির কথা বলছো?কাকার ব্যবসায় ধোকার খাওয়ার কথাটা?সেটা কাকার নিজের অনভিজ্ঞতার কারনেই হয়েছে।আর যদি তুমি কাকীর এক্সিডেন্টের কথা বলো তাহলে আমি বলি ঢাকায় এমন অনেক এক্সিডেন্ট ই হয়।তুমি কোন কোন এক্সিডেন্টের দায় ভার মিতুর ওপর চাপাবে?আর ওই পীর যার কথা শুনে তুমি মিতুকে আজ অবধি দোষারোপ করছ সে কিছু বছর আগেই
ভন্ড পীর প্রমান হয়ে এখন জেল খাটছে।আর এখন বাকি রইল দুবার বিয়ে ভাঙার কথা।ওটা মিতুর জন্য নয় আমার জন্য ভেঙেছে।
ভাইয়ার এই কথায় সবাই তার দিকে অবাক চোখে তাকালো।আমার চোখেও প্রশ্নবোধক চিহ্ন আটকে রইল।আমার বিয়ে ভাইয়ার জন্য ভেঙেছে কিন্তু কিভাবে?
“”আমি ভেঙেছি ওই বিয়ে।আমি জানতাম মা মিতুকে ততটা পছন্দ করে না।তাই তার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করতাম কিন্তু আমি ওকে অন্যকারোর ও হতে দিতে পারতাম না।তাই সবার আড়ালেই আমি ওর বিয়ে ভেঙেছি।””
“”আর ওই বন্যা?””
“”মাআ বন্যা আসবে এই নিউজটা খবরে নিউজ পেপারে কতদিন আগে থেকে ছাপা হচ্ছিল।এটা একটা প্রাকৃতিক দূর্যোগ যা মিতু গ্রামে গেলেও আসতো না গেলেও আসতো।তবে কি জানো তো মা তোমার এই দৃষ্টিভঙ্গি আমি হাজার চেষ্টা করলেও বদলাতে পারবোনা যদি না তুমি নিজের থেকে বদলানোর চেষ্টা করো।””
বড় মা আরো কিছু বলতে যাবে কিন্তু তার আগে বড় আব্বু বলে উঠল
“”উফ কি হচ্ছে কি এখানে?এতসব কথা কেন হচ্ছে আমাকে বলবে দয়া করে।এতক্ষণ ধরে চুপ ছিলাম কিন্তু আর নয়।বন্ধ করো এসব।আর মিতু তুমি যা করেছ তা অবশ্যই ভুল ছিল।আর ভুলের শাস্তি তোমাকে পেতেই।আর সে শাস্তি হিসেবে তোমাকে আবার আমার ছেলেকেই বিয়ে করতে হবে।””
বড় আব্বুর কথায় আমি চমকে উঠলাম।
“”আমার ছেলে তোমাকে ভালোবাসে।তোমার সাথেই সে সুখে থাকবে।আর একজন বাবার এর থেকে বড় পাওয়া আর কি থাকতে পারে?বিয়ে আবার হবে।ধুমধাম করে হবে।কি বলিস রাজ্জাক।
বলেই বাবার কাঁধে হাত রাখল বড় আব্বু।বাবার চোখ ছলছল করছে।তার সাথে আমারো।
.
.
.
?
প্রায় এক মাসের মধ্যে দ্বিতীয় বারের মতো আমাদের বিয়ে টা হলো।তবে এই বিয়েটা পরিবারের সম্মতিতে।ধুমধাম করে।একদম আমার স্বপ্নের মতো করেই পেয়েছি আমি আমার ভালোবাসা কে।কিন্তু এই কয়দিনে আরমান ভাই আমার সাথে তেমন কোনো প্রয়োজন ছাড়া কথাই বলেনি।হয়তো এখনো অভিমান করে আছে আমার ওপর।বড় মাও কেমন ভারী ভারী।হয়তো আমায় মেনে নেওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু যেই কাজটা এতদিন ধরে হয়নি সেটা এত সহজে কি হতে পারে?তারপরও হয়তো নিজেকে বদলানোর চেষ্টা করছে।আমি এই মূহুর্তে লম্বা ঘোমটা টেনে আরমান ভাইয়ের ঘরে বসে আছি তার অপেক্ষায়।কিন্তু তার আসার এখনো কোন নাম গন্ধ নেই।নিশ্চয়ই বাইরে তার বন্ধুরা তাকে আটকেছে।বেচারার হাল বোধহয় আজ তারা বেহাল করে দিয়েছে।ভাইয়ার বেচারা মার্কা মুখটা ভাবতেই বেশ হাসি পাচ্ছে আমার।আনমনে তার কথা ভেবে হাসছি ঠিক তখনই দরজা খোলার শব্দ কানে এলো।বুঝলাম ভাইয়া এসেছে।আমি উঠে তাকে সালাম করতে যাবো তার আগেই ভাইয়ে সরে গেল।আমি অবাক চোখে তার দিকে তাকাতেই সে অন্যদিকে মুখ করে বলল
“”অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পর।””
কথাটা বলেই ও বারান্দায় চলে গেল।তার এমন কথায় আমার ভীষন কান্না পাচ্ছে।ভাইয়া কি তাহলে আর কোনোদিন ও আমার সাথে কথা বলবে না।আমার একটা ভুলের জন্য আমায় এতবড় শাস্তি দেবে ও।ধুর নিকুচি করেছে তার শাস্তির।মানি না আমি কোনো শাস্তি টাস্তি।আজ তো তাঁকে আমার সাথে কথা বলতেই হবে।দেখি কি করে কথা না বলে থাকে।আমি আমার ভারী শাড়িটা দুই হাতে উঁচু করে ধরে বারান্দার দিকে অগ্রসর হলাম।আরমান ভাই উল্টো ঘুরে ব্যস্ত নগর দেখতে দেখতে সিগারেটে ধোঁয়া ওড়াচ্ছে।ও মাঝে মাঝেই স্মোক করত।আমি সেটাকে পোরোয়া না করে সোজা তার সামনে গিয়ে রেলিংয়ে ঠেস দিয়ে দাড়ালাম।আমাকে হঠাৎ ই তার সামনে আসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে অন্যদিকে যাবে তার আগেই আমি আবার তার সামনে গিয়ে তার পথ আটকালাম।এবার হয়তো আরমান ভাই কিছুটা বিরক্ত হলো ভ্রু কুচকানোর সাথে সাথে দাঁতে দাঁত চেপে ধরে এককদম আমার দিকে এগিয়ে এসে কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো।তার এগিয়ে আসাতে আমি কিছুটা ভয় পেয়ে পেছনে ঝুঁকে গেলাম।যা রাগ যদি চড় টর মেরে বসে তখন।কিন্তু আরমান ভাই কিছু না বলেই আবার সেখান চলে আসবে তখনই আমি তার ডান হাত চেপে ধরলাম।ভাইয়া এবার প্রচন্ড মাত্রায় রেগেই আমার দিকে এগিয়ে আসতে গেল কিন্তু তার আগেই আমি তার হাত আমার পেটের ওপর রাখলাম।আমার এমন কাজে ও কিছুটা অবাক চোখেই আমার দিকে তাকালো।
“”তুমি যদি আমার সাথে কথা না বলো তাহলে কিন্তু আমরা তোমার ওপর ভীষন অভিমান করবো।””
কথাটা মুখ ফুলিয়ে তার দিকে তাকালাম।যদিও নিজের চেহারায় ইনোসেন্ট লুক নিয়ে ছিলাম তারপরও আমার বুকের ভেতরে একপ্রকার তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছিল।আমায় কথায় তার অনুভুতিটা কি করকম হবে তা দেখার জন্য অধীর আগ্রহে আমি আরমান ভাইয়ের দিকে তাকালাম।আরমান ভাই নিজের চোখে এক সাগর বিস্ময় নিয়ে একবার আমার দিকে র একবার আমার হাতের দিকে তাকাচ্ছে।আমি ঠোঁটের কোণে মুচকি হাসি আর চোখ এত্ত গুলো আগ্রহ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।তার অনুভুতি টা জানার জন্য।আরমান ভাই জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে নিয়ে অন্যদিকে তাকালো।হয়তো নিজের চোখের জল টা আড়াল করার জন্য।কিন্তু তার চোখের ছলছল দৃষ্টি টাতো অনেক আগেই আমার কাছে ধরা পরেছে।ভাইয়া দুবার জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিয়ে আবার আমার দিকে তাকালো।তারপর কাপা কাঁপা গলায় বলে উঠল
“”ইউ নো হোয়াট?আজ হয়তো এই প্রথম কারো বাসর যে কি না শাসর রাতেই জানতে পারছে সে বাবা হতে চলেছে।””
তার আবেগ পূর্ণ এমন কথায় আমার ভেতর টা কেপে উঠল।তার ছলছল দৃষ্টি আজ আমায় জানান দিচ্ছে আমি কতটা ভাগ্যবতী।আরমান হাঁটু গেড়ে বসে আমার পেটে আলতো করে নিজের ঠোঁট ছুঁইয়ে আবার উঠে দাঁড়িয়ে হঠাৎ করেই আমায় জড়িয়ে ধরল।
“”ভালোবাসি মিতু।খুব খুব খুব বেশিই ভালোবাসি তোকে।তুই তো আমার জীবনে এন্জেল হয়ে এলি রে।””
এন্জেল আর আমি?আমি ও কি কারো জীবনের এন্জেল হতে পারি?হ্যা!পারি!কেন পারিনা?আমি এন্জেল!আরমান ভাইয়ের এন্জেল।
এই থুরি কি বলছি আমি?নিজের স্বামীকে ভাই বলে সম্বোধন করছি।কিন্তু যদি ভাই না বলি তাহলে কি বলে ডাকবো?নাম ধরে?এই না না?ও আমার কত বড়!নাম ধরে ডাকলে কেমন জানি দেখায়।তাহলে কি বলবো?””ও গো শুনছো””ইসস কি লজ্জা গো।নিজের লজ্জা লুকোতে আমি তার বুকেই নিজের মাথা গুজে দিলাম।কারণ লজ্জার উৎপত্তি যেখান থেকে তার নিঃশ্বেস ও যে সেখানেই।
বেঁচে থাক এভাবেই হাজারো ভালোবাসা এই সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি পেরিয়ে।।।।
সমাপ্তি…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে