নেশা তুই আমার Part:12

0
3738

#নেশা_তুই_আমার
#Mst.Mitu Rahman
#Part:12

প্রায় ভোর রাত।আমি আরমান ভাইয়ের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি।আর ও আমায় এক হাতে জড়িয়ে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে।ঘুমের মাঝেও আমায় জড়িয়ে রেখেছে যেন ছেড়ে দিলেই কোথাও পালিয়ে যাবো।কথাটা ভাবতেই আমার ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠল।আমি মাথা তুলে তার দিকে তাকালাম।ইসস কি মায়া এই মুখে।ঘুমিয়ে থেকে যেন এই মায়া আরো বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।আমি তার গালের খোঁচা খোচা দাড়ি গুলোতে আলতো করে হাত ছুঁইয়ে দিয়ে আবার তার বুকে মাথা রাখলাম।কতদিনের লোভ ছিল এই দাড়ি গুলো ছুয়ে দেয়ার।আজ তা পূরণ হলো।ফজলের আযানের ধ্বনিতে আমি আরমান ভাইয়ের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে বসলাম
চুল গুলো হাত খোঁপা করতে করতে কাবার্ড থেকে নিজের ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালাম।চোখ গুলো ভীষন জ্বালা করছে।হয়তো সারা রাত ঘুম না আসার কারনে।আসলে আমি ঘুমোতেও চাই নি।আরমান ভাইয়ে সাথে কাটানো প্রত্যেকটা মূহুর্ত কে শুধু অনুভব করতে চেয়েছি।ঘুমিয়ে পরে এই রাতের একটা ছোট মূহুর্ত ও আমি মিস করতে চাই নি।এই মূহুর্ত গুলোকে নিয়েই তো বাকি জীবনটা কাটাতে হবে?আচ্ছা আমি কি পারবো তাকে ছাড়া থাকতে।নাহ্ পারতে আমাকে হবেই আরমান ভাইয়ের জন্য হলেও আমাকে পারতে হবে।তার ভালোর জন্য আমাকে সবকিছুই পারতে হবে।একটা বুক ফুলানো দীর্ঘশ্বাস ফেলে শাওয়ার শেষে ওজু করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলাম।ফজরের নামাজটা কাজা করলাম।নামায শেষে জায়নামাজ গুছিয়ে রেখে আরমান ভাই একগাদা বই থাকা টেবিলের কাছে গেলাম।একটা নোট পাতার মধ্য পাতা ছিঁড়ে ওটাতে লিখতে বসলাম।লেখা ততটাও ভালো না।ভাঙা ভাঙা হাতা বাকা বাকা অক্ষরে মনের আসছিল তাই লিখে যাচ্ছিলাম।আজ এই লেখাটা আমাদের জীবন বদলে দেবে।এই চিঠিটাই আরমান ভাই আর আমার দুজনের পথ আলাদা করে দেবে।আচ্ছা সামান্য একটা চিঠির ওপর ভিত্তি করে কি ভাইয়া আমার থেকে দূরে সরে যাবে?একবারের জন্যেও খোজার চেষ্টাও করবে না?সে যাই করুক না কেন ও আমি তো চাই ভাইয়া আমায় ভুলে যাক।নিজের জীবন নিজের মতো করে সাজিয়ে নিক।আমার মতো একটা পোড়া কপালির জন্য ও কেন নিজের জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনবে।আর আমিই বা কি করে হতে দেই এটা।ভাইয়ার ভালোর জন্য আমাকে তার জীবন থেকে দূরে যেতেই হবে।অনেক দূরে যেতে হবে।
চিঠিটা লেখা শেষ করে কাগজটা ভাঁজ করে বিছানার পাশের টেবিলে ওয়েট চাপা রেখে দিলাম।তারপর নিজের প্রয়োজনীয় জিনিস পত্র নিয়ে বেরিয়ে পরলাম ঘর থেকে।আরমান ভাইয়ের জীবন থেকে অনেক দূরে সরে যাওয়ার জন্য।সারা জীবনের জন্য!!!!!!!!!!!!!!
.
.
.
.
.
.
?
আজ এগারো দিন আমি ওই বাড়ি ছেড়ে চলে এসেছি।এখানে চট্টগ্রামে বসবাসরত এক বন্ধু টিয়ার বাড়িতে উঠেছিলাম।তার মা এক এনজিও মেম্বার।আমি তাঁদের সাথে কথা বলেই এনজিও তে একটা কাজের কথা বলি।যেহেতু নিজের এডুকেশনের সকল কাগজ পত্র সাথে নিয়েই এসেছিলাম তাই কাজটা পেতে ততটা বেগ পেতে হলো না।কিন্তু আমার অতীত শুনে টিয়ার মা আমার দিকে এক অন্যরকম নজরে তাকানো শুরু করলেন।সেই নজর খুব সহজেই পরে নেওয়া যায়।নিজের লাভের জন্য তো আর অন্যের ক্ষতি করতে পারি না।তাই হাতে যতটুকু টাকা ছিল তার কিছু টাকা দিয়ে একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়েছিলাম।আজ আমি পুরো।আর আমার জন্য অন্য কারো কোনো ক্ষতি হবে না কারো না।
?
রাত নয় ল্যম্পোস্টের আলোয় রাস্তার ধার ঘেঁষে আনমনে হেঁটে চলেছি।এনজিওর এ একটা কাজে এলাকা এলাকা গিয়ে মিটিংয়ের মাধ্যেমে সামাজের মানুষদের সামাজিক গুরুপ্ত পূর্ন বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দিতে দিতে অনেকটা দেরী হয়ে গেছে।মেইন রোড দিয়েই এলাম।চাইলে রিকশা ভাড়াও নিতে পারতাম।কিন্তু আমি এখনো আমার কাজের মাইনে পাইনি।আর আমার কাছে যতটুকু টাকা আছে সেটা দিয়ে আমায় পুরো মাস চলতে হবে।তাই টাকা বাঁচানোর ছোট্ট একটা পদক্ষেপ মাত্র এটা।ল্যাম্পোস্টের মৃদু আলো ছড়াচ্ছে পুরো রাস্তায়।আর আমি একাই একটা মেয়ে হেঁটে চলেছি এক ধোঁয়াশা জীবনে উদ্দেশ্য।এই মূহুর্তে বাড়ির লোকেদের কথা খুব মনে পরছে আমার।আচ্ছা বাবা মা যখন আমায় বাড়িতে খুঁজে পায়নি তখন তাঁদের মানসিক অবস্থা কেমন ছিল?নিশ্চয়ই খুব কেদেছে।আর?আর আরমান ভাই?সে কি আমায় খুঁজেছে?নাকি চিঠিটাকেই মান্য দিয়ে নিজের নতুন করে জীবন শুরু করেছে।এই এগারো দিনেই কি ও আমায় ভুলে গেছে।আচ্ছা আমার কথা মনে করে ও?নাকি সবকিছু আবেগ ভেবে উড়িয়ে দিয়েছে?চোখের কোণ টা ঝাপসা হয়ে এলো ডান হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখটা মুছতেই পেছনে খুব দ্রুত চলন্ত গাড়ির শব্দ পেলাম।ভয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখি গাড়িটা খুব দ্রুত আমার দিকে এগিয়ে আসছে।মূহুর্তেই মনে হলো এখানেই আমার থমকে যাবে।নিজের অজান্তেই নিজের হাত কে সাহারা ভেবে ডান হাত মুখের সামনে নিয়ে এসেছে বা চার চেষ্টা করলাম।কিন্তু একি?হঠাৎ ই মনে হলো গাড়িটা আমার খুব কাছে এসে থেমে গেছে।হাত সরিয়ে সামনে তাকাতে যাবো তার আগেই কারো হাত খুব শক্ত করে আমায় গলা চেপে ধরে আমায় পিছিয়ে নিয়ে যেতে যেতে কিছু একটার সাথে আমার পিঠ ঠেকালো।ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে যাওয়ার জন্য আমার মাথায় কিছুই ঘুকলো না।নিজের হাত পেছনে নিয়ে গেলে বুঝতে পারলাম আমি গাছের সাথে আটকেছি।এবার আমি গাছ থেকে হাত সরিয়ে গলায় থাকা হাতটা ধরে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতে লাগলাম।এই যেন আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে।আমি বা চার জন্য ছটফট করতে করতে সামনের দিকে তাকাতেই থমকে গেলাম।ল্যাম্পোস্টের আলো সাথে গাড়ির হেটলাইটের আলোয় আরমান ভাইয়ের ভয়ঙ্কর মুখটা আরো বেশি ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।আমি আমার আমার গলায় থাকা হাতটার কথা ভুলে তার দিকে অবাক চোখে তাকালো ইসস কি অবস্থা করেছে নিজের চেহারা টার।উস্কোখুস্কো চুল,খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলোও হালকা বেড়ে গেছে।চোখের লাল আভা টা যেন আমায় জ্বালিয়ে দিচ্ছে।ভাইয়া এবার আমার গলায় হাত রেখেই আমার দিকে কিছুটা এগিয়ে এলো।আমার চোখে চোখ রেখে বলল
“”সাহস হলো কি করে তোর আমার থেকে দূরে পালাবার কথা ভাবতে?””
আরমান ভাইয়ের মুখ থেকে এক উদ্ভট গন্ধ বেরোচ্ছে।বুঝলাম ভাইয়া ড্রিঙ্কস করেছে।আর তাই এতটা কন্ট্রোললেস হয়ে গেছে।আমায় চুপ থাকতে দেখে ভাইয়া আরো কঠিন গলায় বলে উঠল
“”যদি দূরেই চলে যাবি তাহলে সেই রাতে আমার সাথে বিছানায় শুয়েছিলি কেন?নিজের শরীরের খিদে মেটানোর জন্য।””
তার কথায় এবার আমি ঘেন্নায় মুখ সরিয়ে নিলাম।অস্পষ্ট কন্ঠে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আরমান ভাই আলমরো শক্ত করে আমার গলা চেপে ধরে বলল
“”চুপ একদম চুপ।একটা শব্দ গলা থেকে বের করলে গলা চেপে মেরে এখানেই পুঁতে রাখবো।কি ভেবেছিস কি তুই আমি তোকে খুজে পাবো না?এই পৃথিবীর যেই কোণাতেই লুকিয়ে থাক না কেন তোকে আমি খুজে বের করবই।আমার থেকে পালোনো এতটা সহজ নয়।খুঁজে তো আমি তোকে সেই কবেই পেয়েছি।কিন্তু প্রচন্ড রকমের রাগ আমাকে জেকে বসেছিল।ভেবেছিলাম যখন তুই আমার থেকে দূরে গিয়ে নতুন জীবন শুরু করতে চাস তাহলে আমি কেন পারবো না?ভুলতে চেয়েছিলাম তোকে।তোকে ভোলার জন্য সব ধরনের মাদকদ্রব্য সেবন করে মাদকাসক্ত হয়েছি।কিন্তু তোর নেশা সবকিছু কে হার মানিয়ে দিয়েছে।একটা মূহুর্তও তোকে ভুলতে দেয় নি আমায়।#নেশা_তুই_আমার।তোর নেশাতে নেশাগ্রস্ত আমি।তোকে ছাড়া থাকা অসম্ভব।””
আরমান ভাই কথা গুলো বলতে বলতেই আমার গলা ছেড়ে গালো বুড়ো আঙুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগল।নিজের ঠোট আমার ঠোটের একদম কাছে নিয়ে এলো।তার এমন আচরচণে আমার বুক দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।ভীষন কান্না পাচ্ছে আমার।কাঁদতে ইচ্ছে করেছে।তার বুকে মাথা রেখে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।কিন্তু আমার সব ইচ্ছে কে ধূলিচাপা দিয়ে ভাইয়া হঠাৎ ই আমার গাল ছেড়ে হাত ধরে টানতে টানতে গাড়ির দিকে নিয়ে যেতে লাগল।
চলবে❤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে