নূপুর বাঁধা যেখানে পর্ব-০৯

0
1214

#নূপুর_বাঁধা_যেখানে-৯
#মিফতা_তিমু

বরাবর নিয়ম মেনে চলা ঝুমুরের মনে আজ আবারও নিয়মের বাঁধ ভেঙে অনিয়ম করার ইচ্ছা জেগে উঠেছে। খাঁচায় পোষ মানা পাখি সে আজ অবাধ্য হয়েছে। নিজের চিরাচরিত সত্তা থেকে বেরিয়ে এসেছে। দূরন্ত চিলের মতো মেঘ ভেসে বেড়ানো আকাশে সে কল্পনায় উড়ে বেড়াচ্ছে।

ক্লান্তিময় দিনশেষে সাড়ে দশটায় বিছানায় গা এলিয়ে দেওয়া ঝুমুর আজ মনের কাছে হার মেনে অনিদ্রায় রাত কাটাতে ব্যস্ত। মন তার ভীষন ক্লান্ত। এই ক্লান্ত মন নিয়েই সে সারা রাত্রি বই পড়ে কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সচরাচর এমনটাই হয়। পড়াশোনার অনুপস্থিতিতে মন যখন বেজায় খারাপ থাকে তখন ঝুমুর এভাবেই বই হাতে বসে পড়ে চোখে সরু কালো চশমা এটে। তার তখন জায়গা হয় প্রিয় লবি চেয়ারে ল্যাম্প শেডের নিচে।

ঝুমুরের সাধারণত তেমন চা কফির আসক্তি নেই। শুধু ভোরের সময়টাতে সে ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বাগানময় পায়চারি করে বেড়ায়। তার নিত্য দিনের রুটিন মেনে চা খাওয়াটা তখনই হয়। তবে মাঝে মাঝে এক্ষেত্রেও নিয়মের বাঁধ ভাঙে সে। তখন সে চা খায় মাঝ রাত্তিরে বই হাতে হালকা হলুদাভ আলোর নিচে বসে।

ঝুমুর এখন নিয়ে বসেছে কোলেন হুভারের ‘ ইটস এন্ড উইথ আস ‘ নিয়ে। বইটা কদিন আগেই নিয়েছে সে। ইদানিং সে রিডার্স ব্লকে ভুগছে। দু তিনদিন আগেই জনপ্রিয় এক লেখিকার বইটা নিয়ে বসেছিল তবে ওটাতে মন বসাতে পারেনি বলে কয়েক পাতা পড়ে রেখে দিয়েছে। মনে হলো বাংলা সাহিত্যে যখন মন বসছে না তখন হাওয়া বদল করা যায়। বাংলা সাহিত্যের স্বাদ ছেড়ে ইংরেজি সাহিত্যের সঙ্গে আলাপ জমানো যায়।

মাঝ রাত্তিরে চা খাওয়ার জন্য ঝুমুরের নিজস্ব এক ফ্লাস্ক আছে। সেখানে সে গরম চা ভরে রাখে যাতে গরম গরম খেতে পারে। ঝুমুর সবসময় রং চা খায়। দুধ চা সে শুধু মিসেস তানিয়া শাহজাহানের হাতেরটাই খায়। মিসেস তানিয়া শাহজাহান কম জাল করে অল্প চিনি দিয়ে চা করেন আর ঝুমুরদের বাসায় করা হয় বেশি করে চিনি, চা পাতা দিয়ে কড়া স্বাদের দুধ চা যেটা ঝুমুরের খেতে অনেক আপত্তি। এত কড়া স্বাদের চা তার রুচির সঙ্গে যায় না।

ঘরের দক্ষিণ দিকের জানালা খোলা সেই সঙ্গে বারান্দার মস্ত বড় স্লাইড ডোরও হালকা ভিড়ানো। দখিনের শীতল সমীরণ ঝুমুরের শরীর এসে ছুঁয়ে দিচ্ছে। বই পড়তে পড়তে গরম চায়ের সঙ্গে হলুদ বাতির নিচে বসে এই শীতল পরিবেশটা বেশ উপভোগ করছে ঝুমুর। তার খারাপ হয়ে থাকা মনটা ক্রমশ ভালো হচ্ছে। কেটে যাচ্ছে মনের সমস্ত মেঘ মেদুর ভাব আর উকি দিচ্ছে এক টুকরো ভোরের স্নিগ্ধ আলো।

ফাহমানের শান্তি হচ্ছে না। বেশ কয়েকবার বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করলো সে। কিন্তু কিছুতেই অস্থিরতা কমছে না। এই মুহূর্তে সে আছে হাসপাতালের এক স্টাফ রুমে। ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে রাউন্ড দিয়ে সিনিয়র ডক্টরের কাছে রিপোর্ট করে এসেছে যে দুই ঘণ্টা পরই সে আবার রাউন্ডে যাবে। ঘরে এসে বিশ্রাম নিয়ে বের হবে ভেবেছিল। কিন্তু ঘরেতে শান্তিই তো মিলছে না।

ঘর বদল বলেই কিনা কে জানে, কিন্তু ফাহমানের অস্থিরতা কাটছে না। মনে হচ্ছে ঘরের ভিতর কেমন দম বন্ধ লাগছে। এই শীতের সময়টাতেও গরম লাগার ব্যাপারটা অস্বাভাবিক। পরনে থাকা ফুল হাতা টিশার্ট ইতিমধ্যে গলার কাছে ঘামে ভিজে জবজবে হয়ে উঠেছে। আর শুয়ে থাকতে পারলো না এই অবস্থায়। উঠে বসলো ফাহমান।

ফাহমানের মনে হলো এখনই এই গরমে উষ্ণ হয়ে ওঠা ঘর ছেড়ে বের হতে হবে। ফাহমান বেরোলো তবে রুমের সঙ্গে লাগোয়া বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। রুমের উষ্ণ পরিবেশ ছেড়ে বারান্দায় ঠান্ডা পরিবেশে দাড়াতেই শরীরটা অজানা আবেশে ছেয়ে গেল। অস্থির মনটা শান্ত হলো। ফাহমান জানে না ওর অস্থির কেন লাগছে। তবে মনে হচ্ছিল চোখ বন্ধ করলেই এক জোড়া গভীর চোখ তার সামনে ভেসে উঠছে।

ফাহমান জানে ওই চোখ দুটো কার। কিন্তু তার মন মানতে চাইছে না সেই নারীকে। বারবার মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছে। আবার এই অবচেতন মনটাই বলছে মেনে নে ফাহমান, মেনে নে ওটা তোর নূপুর। নূপুর!! তাও আবার ফাহমানের ? উহু… ও ফাহমানের কেউ নয়। সরাসরি তাদের সম্পর্কের কথা বলতে গেলে সে ফাহমানের বোনের বান্ধবী যার নাম ঝুমুর। অথচ ফাহমান বারবার অবচেতন মনে তাকে নূপুর ডাকে। আবার হসপিটালের সেদিনের সেই নূপুরওয়ালীর সঙ্গেও গুলিয়ে ফেলে।

আচ্ছা এমনটা কেন হচ্ছে ফাহমানের সঙ্গে ? সে কি অবচেতন মনে থেকে যাওয়া সেদিনের সেই নূপুরওয়ালী আর আজকের এই ঝুমুরকে কোনোভাবে একজন ভেবে ভুল করছে ? কিন্তু কেন ? কোথায় দুজনের তো মিল নেই। হাসপাতালের নূপুর তো শাড়ি পড়ে আর ঝুমুর পড়ে ফ্রক, কুর্তি জিন্স, সালোয়ার কামিজ। দুজনের আচার আচরণেও কোনো মিল নেই। হাসপাতালের নূপুর চঞ্চল আর হৈমন্তীর বান্ধবী ঝুমুর শান্ত। সে ও একান্তে কিছুটা চঞ্চল সেটা আলাদা কথা।

আবার ফাহমান হাসপাতালের নূপুরকে দেখেছেই বা কদিন। মাত্র তো এক ঝলক দেখেছিল। তাতেই তার সম্পর্কে আন্দাজ করা এত সহজ নয়। তবুও কেন হাসপাতালের নূপুর আর হৈমন্তীর বান্ধবী ঝুমুরকে গুলিয়ে ফেলছে সে ? জানেনা ফাহমান, কিছু জানে না সে।

ফাহমান দুই নারীর মাঝে আটকে এবার বেশ বিভ্রান্ত হলো। বিভ্রান্তিতেই সে অজান্তে প্যান্টের পকেটে রাখা হাসপাতালের সেই নূপুর কন্যার ফেলে যাওয়া নূপুরটা বের করলো। পূর্ণিমার রাত্রে আকাশ জুড়ে সেজে ওঠা রুপোলি চাঁদের আলোয় পুরনো সেই নূপুরের সৌন্দর্য্য উন্মোচন হলো। এর আগেও সে বেশ কয়েকবার এই নূপুর দেখেছে কিন্তু কোনওদিন চাঁদের আলোয় দেখবার মতো সুযোগ হয়নি তার। রুপোলী চাঁদের আলোয় ক্ষয়ে যাওয়া পুরনো এই নূপুর যেন অন্যরকম এক সৌন্দর্য্য।

ফাহমানের মনে হলো চাঁদের আলোয় সে জ্বলজ্বল করা হীরে দেখছে। হয়তো হীরের তুলনায় পুরনো এই নূপুরের দ্যুতি উজ্জ্বল নয় তবুও ভালো লাগছে দেখতে। কেন সে তো ফাহমানই বলতে পারবে। কিন্তু ফাহমান আসলে বলতে পারছে না। সে নিজের মনকে নিজেই বুঝতে পারছে না। এই মন বলছে তার ঝুমুরকে দেখতে ইচ্ছে করছে, তাকে খোঁচা দিয়ে কথা বলতে ইচ্ছা করছে আবার পরক্ষনেই মনে হচ্ছে সেদিনের ওই কেশবতি নূপুর হারানো নারী আসলে কে। কি তার পরিচয় ? সবটাই জানার আগ্রহ তার।

ফাহমানের জীবনে হয়তো ঝুমুর অপেক্ষা হাসপাতালের সেই নূপুর কন্যার উপস্থিতি কম তবুও তার ক্ষণিকের উপস্থিতি ওর উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। তার সেই টানা টানা গভীর চোখ দুটো যেন কতকিছু অনাড়ম্বরে বলে দিচ্ছে তাকে। ফাহমান জানে না তাকে আসলে কে বেশি টানছে। হাসপাতালের সেই নূপুর কন্যার টানা টানা চোখ দুটো নাকি ঝুমুরের কাজল পড়ানো কাজল কালো চোখ ? এই এক দ্বিধা দ্বন্দ্বে ভুগতে ভুগতে ফাহমানের সময় গড়ালো।

ফাহমান গায়ে আবারও ডক্টরস এপ্রোন চাপিয়ে বেরিয়ে পড়লো ওয়ার্ড রাউন্ড দেওয়ার উদ্দেশ্যে। ঘরে যখন মন টিকছে না, বারবার দুই নারীর মাঝে হারিয়ে যাচ্ছে তখন ঘরে বসে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। এর থেকে আরেকবার রাউন্ড দিয়ে ভোরের দিকে বেরিয়ে পড়া যাবে। আবার তো কাল সকাল নয়টার দিকে হাসপাতালে আসতে হবে।

নাইট ডিউটি ফাহমানের কদাচিৎ পড়লেও মাঝে মাঝে তাকে ত্যক্ত করে ছাড়ে। এই পর্যন্ত এমন অভিজ্ঞতা তার দুদিন হয়েছে। আবারও কাল হবে। সারারাত ডিউটি করে আবার সকাল দশটার মধ্যে হাজির হওয়াটা কঠিন হয়ে দাড়ায়। অবশ্য বাসায় না গিয়ে স্টাফ রুমে থেকে বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগ আছে কিন্তু ফাহমানের যে তাতে সস্তি মিলে না। নিজের ঘর, নিজের পরিবেশের জন্য মন কেমন করে। তাইতো আবার এতটা পথ বেয়ে বাড়ি যাওয়া।

সব ওয়ার্ড রাউন্ড দিয়ে ডক্টরকে জানিয়ে বেরিয়ে পড়লো ফাহমান। তখন প্রায় ভোর পাঁচটা। বাড়ি পৌঁছতে এখন বেশি সময় লাগবে না। সর্বোচ্চ হলে এক ঘন্টা। তারপর পৌঁছে জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে এক ঘন্টা ঘুমিয়ে উঠে সোজা বেরিয়ে পড়বে হালকা কিছু খেয়ে। এমনটা হলে মন্দ হবে না। অন্যদিন আরও লেট হয় বের হতে। তবে আজ ভাগ্য ক্রমে সিনিয়র ডক্টর জানালেন যেই জুনিয়রের অনুপস্থিতিতে তাকে নাইট ডিউটি দেওয়া হয়েছিল সে এসেছে ঘন্টা তিনেক আগে।

—-

কানে ওয়ারলেস ইয়ারফোন গুঁজে ট্রেডমিলে হরদমে পা চালাচ্ছে ঝুমুর। পরনে জগিং সুট। আগে বলা হয়নি কিন্তু ঝুমুরদের ছোট এক চিলেকোঠার ঘর আছে। সেই ঘরটা মূলত হোম জিমনেশিয়াম হিসেবেই ব্যবহার করা হয়। ঘরটাকে জিমনেশিয়ামে রূপ দেওয়ার ইচ্ছাটা ফারুক আর ঝুমুরের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত। ফারুক এই ঘরটায় রাতের দিকে এক্সারসাইজ করে। আর ঝুমুর করে সকালের দিকে।

কানে হেডফোন গুঁজে শরীর হতে ঘাম ঝরাতে ঝুমুরের ভালো লাগে। সকাল সকাল ব্যায়াম করার পর শরীরটা ঝরঝরে লাগে। এতদিন তো পড়াশোনাসহ আরও বিবিধ কারণে সে এই অভ্যাসটা চালিয়ে যেতে পারেনি। তার হাউজ রুমে জিমও ছিল না। তবে অন্যসব এক্টিভিটিজের ব্যবস্থা তো তাদের ছিল। ওটাই শরীর চর্চার জন্য যথেষ্ট।

আধা ঘন্টা ট্রেডমিলে দৌড়ে ঝুমুর একসময় ট্রেডমিল ছেড়ে নামলো। মেঝেতে দাড়িয়ে হাত পা চারটা বারবার উপর নিচে ছুঁড়ে জাম্পিং জ্যাক স্টেপস করলো। এভাবেই ঝুমুরের এক ঘন্টা কেটে গেলো বিভিন্ন ধরনের মুভস করতে গিয়ে। এক্সারসাইজ করলে মন মেজাজ ভালো থাকে। মুখে রুচিহীনতার ভাবটা কেটে যায় কারণ পরিশ্রম করে ততক্ষণে পেট খালি। কাজেই তখন প্রয়োজনীয় নিউট্রিশন ইনটেক করা যায়।

ঝুমুর বাগানে গিয়েছিল এক্সারসাইজ করতে যাওয়ার পূর্বেই কাজেই এখন সে তৈরি হয়ে খেয়ে দেয়ে বেরিয়ে পড়বে। সেই মতে ঝুমুর তৈরি হয়ে ব্যাগে প্রয়োজনীয় জিনিসগুলো নিয়ে নিলো। তারপর কিচেনে চলে গেলো। ঝুমুর সকালের সময়টাতে হেভি ব্রেকফাস্ট করে কারণ ব্রেকফাস্ট করার পরেই তাকে কাজে লেগে যেতে হবে।

ঝুমুর কিচেন থেকে ব্রেকফাস্ট নিয়ে এসে ওর নির্ধারিত জায়গায় বসে পড়লো। ব্রেকফাস্টে স্যান্ডউইচ আর সালাদ উইথ পোচড এগ। খাওয়া দাওয়া শেষে ঝুমুর বেরিয়ে পড়লো। সে সকালের সময়টাতে একটু বেশি খায়। দুপুরের তার থেকে কম আর রাতে তার থেকেও কম। এমনিতেই তো সকালের পর আর তেমন কোনো কাজ থাকে না। কাজেই দুপুর আর রাতের খাবারটায় কার্বোহাইড্রেট কম তরী তরকারি রুটিনে বেশি থাকলে বডি ফিট থাকবে।

আজ ফাহমানের তৈরি হয়ে বের হতে দেরি হয়ে গেছে। তাড়াহুড়োয় সে হাঁটার বদলে আজ রিকশা নিয়ে এসেছে কলেজ গেট। সে সাধারণত কলেজ গেট থেকেই আজিমপুর যাওয়ার বাস ধরে। ফাহমানে ভেবেছিল বাসে উঠে মাঝের সারিতে বসবে। কিন্তু বাসে বসার জায়গা তো দূর দাড়ানোর জায়গাও নেই। কন্ডাকটর যে কেন জায়গা না থাকতেও তাকে ওঠালো কে জানে। তার এখন মেজাজের পারদ চড়ছে।

একেতেই আজ বের হতে দেরি হয়ে গেছে তার উপরে বসার জায়গা নেই। ভিড় ঠেলে কোনো সিট দেখাও যাচ্ছে না। এমতাবস্থায় বাসে উঠে ফাহমান মেজাজের খেই হারালো। কন্ডাকটরকে বললো ‘ বাসে একটুও জায়গা নেই তারপরও আমাকে উঠালেন কেন ? ‘
কন্ডাকটর সাহেব আরেক হারে বজ্জাত লোক। সোজা মুখের উপর ছুঁড়ে দিল ‘ না ভালো লাগলে নাইমা যাইবার পারেন। আমরা আপনারে আটকায় রাখতেছি না। ‘

কন্ডাক্টরের কথায় ফাহমানের মেজাজ হারালো। হাত মুঠো করে মাথা ঠাণ্ডা করার চেষ্টা করলো। তখন এক মেয়েলি হাত ভিড়ের মধ্যে তার হাত টেনে ধরলো। আচমকা মেয়েলি স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠলো সে। অচেনা সেই মেয়ে ততক্ষণে তাকে টেনে বসিয়ে দিয়েছে নিজের পাশে। থমকালো ফাহমান। বিস্মিত হয়ে ক্ষণিক আগে তার হাত টেনে ধরা মেয়েটার দিকে নজর দিলো। আর তখনই আকাশে বিনা মেঘে বজ্রপাতের মতো ফাহমান আবিষ্কার করলো মেয়েটা আর কেউ নয় বরং বাগান কন্যা ঝুমুর।

ফাহমানকে এভাবে বড় বড় চোখে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকতে দেখে অসস্তি হলো ঝুমুরের। তবে অসস্তিটুকু চোখে মুখে ফুটে উঠতে দিলো না সে। মুখে বললো ‘ ওভাবে তাকানোর প্রয়োজন নেই। আমার পাশে জায়গা ছিল আর আমার মনে হয়েছিল আপনার বসা প্রয়োজন তাই ওভাবে হাত টেনে ধরেছিলাম। ‘

ফাহমান এখনও কিছুটা ঘোরের মধ্যে আছে। ঝুমুর কথা বলার সময় কয়েকবার তার ঘন আঁখি পল্লব ঝাপটা দিয়েছিলো। গোলাপি ঠোঁট দুটোও কেমন একে অপরের গাঁয়ে চেপে আছে। আছে ঠোঁটের নিচে কাজল বিন্দুর মতো একখানা তিল। যে কেউ ঝুমুরের ওই এক রত্তি মুখখানার দিকে তাকালেই তার চোখ সবার আগে সেই তিলের দিকেই পড়বে।

ফাহমানকে এভাবে এক মনে তাকিয়ে থাকতে দেখে অসস্তিতে পড়লো ঝুমুর। বুঝতে পারলো না কি বলবে। মাথায় প্রশ্ন এলো লোকটা কি এমনই ? যখনই কোনো মেয়ে দেখে তখনই তাকিয়ে থাকে ? এই পর্যন্ত যতবার তাদের দেখা হয়েছে প্রতিবারই ওর দিকে শুধু ফ্যালফ্যাল করেই চেয়ে থেকেছে।

ঝুমুর স্বভাবতই চুপচাপ। তবে কিছু কিছু সময় সে চুপ থাকতে পারে না। তখন তার মনে আসা প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করতে হলেও তার মুখ খুলতে হয়। মুখের উপর ছুঁড়ে দিতে হয় অসস্তি মাখা প্রশ্নখানা যেটা একই সঙ্গে তাকে আর অপর দিকে ব্যক্তি, উভয় কে অসস্তিতে ফেলতে পারে। তখন ঝুমুরের নিজের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ হয়। মনে হয় কেন ফট করে বললাম। এমনই রাগ তার এখনও হচ্ছে। হুট করেই বলা নেই কওয়া নেই করে বসলো এক অদ্ভূত প্রশ্ন যার উত্তর হয়তো ফাহমানের কাছ থেকে পেলে সে নিজেই অসস্তিতে পড়বে।

‘ আচ্ছা আপনি সবসময় আমার দিকে তাকিয়ে এত কি দেখেন ? ‘

ঝুমুর এই প্রশ্নটা করে তো ছিল সরল মনে কোনো ভাবনা চিন্তা ছাড়াই কিন্তু করে মনে হলো সে অদ্ভুত একটা প্রশ্ন করেছে। এই প্রশ্নের উত্তরে কি বলবে ফাহমান ? সে নিশ্চই অসস্তিতে পড়বে এবং সেই সঙ্গে ঝুমুরকেও ঠোঁটকাটা ধরনের অভদ্র রকমের মেয়ে মানুষ মনে করবে। উফফ এই কারণেই লোকে বলে ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না। না ভেবে কাজ করার ফল এমনটাই হয়। অসহ্য… অসহ্য সবই অসহ্য। আস্ত ঝুমুর মানুষটাই অসহ্য। এক ভয়াবহ রকমের অসহ্য।

~চলবে ইনশাআল্লাহ্…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে