নূপুর বাঁধা যেখানে পর্ব-০১

0
4513

#নূপুর_বাঁধা_যেখানে-১
#মিফতা_তিমু

‘ এই যে মিস নূপুর, আপনার নূপুর তো নিয়ে যান। ‘

মেঝেতে পড়ে থাকা নূপুর হাতে তুলে সামনে দ্রুত পায়ে এগিয়ে যাওয়া রমণীর উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে উঠলো ফাহমান। সে এসেছিল মনোবিজ্ঞান বিভাগের ডাক্তার আরিসের পূর্ব পরিচিত এক রোগীকে দন্ত বিভাগের ডাক্তার মির্জার কাছে পৌঁছে দিতে। রোগী ভুলক্রমে ডাক্তার আরিসের কাছে গিয়েছিলেন। রোগীকে পৌঁছে দিয়ে বের হবার সময় ডাক্তার মির্জা আবার তার এক আত্মীয়র কেস হিস্ট্রি হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন ফাইল যেন ডাক্তার আরিসের হাতে পৌঁছে দেয়।

ফাইল হাতে দ্রুত পায়েই বেরিয়ে যাচ্ছিল সে কারণ তার এখন লিফট দিয়ে এই পাঁচ তলা থেকে নিচ তলায় যেতে হবে। তারপর সেখান থেকে আবার মনোবিজ্ঞান বিভাগের ডাক্তার আরিসের কাছে ফাইলটা রিপোর্ট করতে হবে। কিন্তু পথে হাঁটতে গিয়ে ধাক্কা খেয়েছিল এক অচেনা রমণীর সঙ্গে। ধাক্কা খেয়ে রমণী মনে হয় বিব্রত বোধ করেছিল। তাই সে দুঃখী গলায় বলেছিল ‘ দুঃখিত, খেয়াল করিনি। ‘

রমণীর অসহায় গলা শুনে ফাহমান তার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলো। দেখেছিল রমণীর পরনে গোলাপি সুতি শাড়ি, বাম হাতে কিছু ডার্ক কালারের কাঠের চুড়ি আর কানে গলায় শোভা পাচ্ছে সরু কাজের রুপোর গয়নাগাটি। রমণীর কাজল দীঘির মতো কেশরাশি বাতাসের দাপটে হালকা উড়ছিল। মুখে তার সার্জিকাল মাস্ক তাই শুধু টানা টানা চোখগুলো দৃশ্যমান। সেই চোখ ভর্তি এক রাশ স্নিগ্ধতা।

‘ ইটস ওকে… আমি ‘

রমণী ফাহমানের কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেনি বোধহয় কিংবা তাড়াহুড়োতেই ছিল সে। ফাহমানের পুরো কথা না শুনেই এগিয়ে গেছে সে। রমণীর গমন পথে অবাক হয়ে তাকিয়েছিলো ফাহমান। এমন মেয়ে সে আগে দেখেনি। ধাক্কা দেওয়ায় ফাহমান তার ক্ষমা চাওয়ার বদলে ইটস ওকে বললো অথচ মেয়ে সেটা শুনলোই না। ভারী বিচিত্র এই রমণী।

যাক জাগতিক এসব চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের রোগীদের দিকে মন দেওয়া উচিত ভাবলো ফাহমান। এগিয়ে যেতে নিলো কিন্তু দেখলো হাসপাতালের মেঝেতে পড়ে আছে রুপোর নূপুর। একটু আগে তো ধাক্কা দেওয়া সেই রমনীই ছিল এখানে। তবে কি নূপুরটা তার ?
পড়ে থাকা নূপুর হাতে তুলে নিয়েছে ফাহমান। গলা চড়িয়ে ডেকেছিল রমনীকে।

কিন্তু নারী ততক্ষনে দৃষ্টি বাহিরে। ফাহমানের ডাক হয়তো তার কান অব্দি পৌঁছায়ইনি। তার আর নেওয়া হলো না ফেলে যাওয়া নূপুরখানা। ফাহমান ভাবলো কি করবে নূপুরটা। প্রথমে মনে হলো ট্র্যাশ বিনে ফেলে দেওয়া উচিত, অন্যের জিনিস। পরে মনে হলো এই জিনিসটা তো ওই অচেনা মানুষটার খুব প্রিয়ও হতে পারে। ইচ্ছে করে ফেলে দিয়ে অন্য কারোর কষ্টের কারণ হবে সে ? তার থেকে কাছে রেখে দেওয়া যায়। কোনওদিন সুযোগ হলে নাহয় ফিরিয়ে দিবে।

নূপুরখানার কথা ভাবতেই ফাহমানের চোখে মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়লো। মনে পড়লো অচেনা সেই নারীর টানা টানা চোখ দুটোর কথা। কেমন মুখ ঢাকা থাকা সত্ত্বেও চোখগুলো যেন তাকে আকর্ষিত করছিলো। ফাহমান আলতো হেসে এপ্রণের পকেটে নূপুরটা রেখে কাজে মন দেওয়ার জন্য এগিয়ে গেলো।

মাসুদ সাহেবের সঙ্গে কথা শেষে মিস তানিয়া শাহজাহান লক্ষ্য করলেন কথা বলতে বলতে তিনি দন্ত বিভাগের বাহিরে চলে এসেছেন অথচ সঙ্গে ঝুমুর নেই। তিনি উদ্বিগ্ন চোখে আশেপাশে তাকালেন কিন্তু পেলেন না। চিন্তায় ঝুমুরের নাম্বারে ফোন দিলেন কিন্তু ঝুমুর ফোন তুললো না। ঝুমুরও ততক্ষনে উনার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। উনার কল কেটে দিয়ে সে বলল ‘ কিছু বলবে নাকি ?’

‘ কোথায় ছিলি ? ‘

‘ শুনলে না ? বললাম তো আমার পার্স ফেলে এসেছিলাম। ‘

ঝুমুরের কথা শুনে মিস তানিয়া শাহজাহান সস্তির নিশ্বাস ফেললেন। অতঃপর দুজনে বাড়ি ফেরার পথ ধরলেন। ঝুমুর মিস তানিয়া শাহজাহানের বাড়ি এসেছে বেশ কদিন হয়ে গেছে। আগামী পরশুদিনই সে বাড়ি ফিরবে। তারপর আবার যান্ত্রিক শহরের যান্ত্রিকতার ভিড়ে হারিয়ে যাবে।

—-

বোনজি ঝুমুরকে নিয়ে তানিয়া শাহজাহান এসেছিলেন হাসপাতালে ডেন্টাল চেকআপ করাতে। পঁয়ত্রিশোর্ধ্ব সে ইদানিং খুব বেশিই দাতের ব্যথায় ভুগছে। ডাক্তার মির্জা তার চেকআপ করেছিলেন। চেকআপ করে তিনি কড়া বিধি বিশেষ জারি করলেন। কঠোর ভাবে বললেন তানিশা শাহজাহানের এখন থেকে মিষ্টি, চকলেট জাতীয় জিনিস খাওয়া বন্ধ। বিস্ময়ে তানিয়া শাহজাহান তখন হতবাক। ডাক্তার মির্জা যে এমন বিধি নিষেধ জারি করবে সেটা তার ভাবনার বাহিরে। লোকটা দেখি ব্যক্তিগত সম্পর্কের ফায়দা তুলছে। খালাতো ভাই বলে কি যা ইচ্ছে তাই করবে ?

মামার মুখে এই নিষেধাজ্ঞা শুনে ফিক করে হেসে দিয়েছিলো ঝুমুর। তার ইমো কিনা এসব খাওয়া বন্ধ করবে। আরে বাবা যার শশুর বাড়ি চকলেটের সাগরে বাস করে সে কিনা আবার চকলেট না খেয়ে থাকবে। এ তো জগতের অষ্টম আশ্চর্য।

ঝুমুর এসেছিল তার ইমোকে নির্জন মুহূর্তে সঙ্গ দিতে। ডাক্তার দেখাতে এসে তানিয়া শাহজাহানকে অনেকক্ষণ সিরিয়ালে বসে থাকতে হবে। কাজেই সেই সময়টা কেউ সাথে থাকলে একঘেয়েমি লাগবে না। ঝুমুরের যখন হাতে সময় আছে তখন আসাই যায়। এখন তো তার হাতে অগাধ সময়। মাত্র কিছুদিন আগেই তো উচ্চ মাধ্যমিক দিলো সে।

ঝুমুর বরাবর ঘরকুনো আর পড়ুয়া ধরনের মানুষ। যেই বয়সে মেয়েরা বাহিরে টো টো করে ঘোরাঘুরি করতে আর নিজের রূপচর্চা করতে ব্যস্ত সেই বয়সে সে ঘরে থেকে বই পড়াকে কাজের কাজ মনে করে। রুপে,গুনে সে নেহাতই কম নয়। তার বুদ্ধিদীপ্ত বেশভূষায় বরাবরই ঐশ্বরিক সৌন্দর্য প্রকাশ পায়। কাজেই নিজের রূপ নিয়ে চিন্তা করবার দরকার নেই তার।

রূপচর্চা নিয়ে চিন্তা করবার বদৌলতে সেটুকু সময় যদি পড়ার কাজে ব্যয় করে তাতে তার সময়ের মূল্যায়ন করা হবে বলেই ধারণা ঝুমুরের। তাই ঘরকুনো,একঘেয়ে ধরনের ঝুমুরের জন্য জীবনের শুরুতেই ক্যাডেট কলেজের মতো নিয়ম কানুনের আঁচলে বাঁধা প্রতিষ্ঠানকে বেচেঁ নেওয়া কঠিন কিছু ছিল না। তার বহুদিনের ইচ্ছে সে ক্যাডেট কলেজ থেকে ভালো ফলাফল নিয়ে বেরিয়ে সোজা গিয়ে ঢুকবে মেডিক্যাল কলেজে।

তবে চিরকাল নাতনিকে চোখে চোখে রাখা আজমাঈন সাহেব আর মনোয়ারা বেগম কোনোদিনই নাতনীর এই সিদ্ধান্তে রাজি ছিলেন না। কিন্তু তাতে কি? নিজের কথা দ্বারা যে কাউকে মানিয়ে নেওয়ার মতো এক ঐশ্বরিক ক্ষমতা ঝুমুরের বরাবরই ছিল। তাইতো যুক্তি তর্কে তার কাছে হেরে গেলেন আজমাঈন সাহেব। ঝুমুরের ইচ্ছেকেই ভবিতব্য মেনে নিলেন।

সেই সঙ্গে অনুমতি পেয়ে হাসিখুশি ঝুমুরও নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পা বাড়ালো অচেনা এক শহরে। কিন্তু ক্যাডেট কলেজে পড়া যতটা সহজ মনে করেছিল ঝুমুর আদতে তা এত সহজ নয়। দ্রুতই নিয়মের শেকলে বাঁধা পড়ে বন্দী জীবন কাটাতে শুরু করলো সে।

তবুও ঝুমুর খুশি। সামান্য কষ্টের বিনিময়ে সে যদি নিয়মানুবর্তিতার মতো সৎ ও চরিত্রবান কিছু গুণাবলী আয়ত্তে আনতে পারে তাতে ক্ষতি কি। সামান্য কষ্টের বিনিময়ে তার লাভ তো অনেক হয়েছে। সেই লাভের খাতা খুলে বসলে দিনশেষে শুধুমাত্র ক্ষতির তালিকায় ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত হয়ে পড়ার অভিযোগই থেকে যাবে।

ক্যাডেট কলেজে ঝুমুরের দিনগুলো কাটত ভীষন ব্যস্ততায়, আর রাত কাটত এক টানা ঘুমিয়ে। ছুটিতে সে বাড়ি আসতো দুই তিন মাস অন্তর অন্তর। প্রচুর নিয়ম মেনে চলতে হয়েছে তাকে। দূর্বল সে কখনো কখনও সেসব নিয়মের সঙ্গে তাল মিলাতে গিয়ে হোচটও খেয়েছে। তবে পরমুহূর্তেই নিজেকে সামলে নিয়েছে সে। জীবনে পথ চলতে গেলে এমন আরও অনেক হোচটই খেতে হবে। কিন্তু তার জন্য তো আর থেমে থাকলে চলবে না। মনে সাহস নিয়ে আবারও এগিয়ে যেতে হবে।

তবে এতদিনের বাঁধাধরা জীবন শেষে সাময়িক একটা বিশ্রামও প্রয়োজন ছিল তার। তাই উচ্চ মাধ্যমিক শেষে বাক্স পেটরা বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে কিছুদিনের জন্য ঘুরতে তার ইমো মিসেস তানিয়া শাহজাহানের বাড়ি চলে এসেছিল ঝুমুর। ঘুরাঘুরি শেষে এখান থেকেই একেবারে নিজের বাড়ি ফিরবে সে। কথাটা ভাবলেই ঝুমুরের গা শিউরে উঠে। কতদিন যে তার স্বপ্নের বাগানটা দেখা হয় না তার হিসেব নেই। কতদিন বকুলতলায় বসে আকাশ পানে চেয়ে থাকা হয়না।

ভাগ্নিকে হাসতে দেখে ডাক্তার মির্জার চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে তানিয়া শাহজাহান তখন চোখ পাকিয়ে বলেছিলেন ‘ অত হেসো না বুঝলে ডিয়ার। বেশি হাসলে কাদতে হয়। ‘
ঝুমুর সেই কথা হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলো। কিন্তু কে জানত একদিন এই কথাই ফলে যাবে। প্রেমিক পুরুষকে ভালোবেসে এভাবেই কেঁদে যেতে হবে। আচ্ছা ভালবাসা কি এমনই ? সুখেও কাদায়, দুঃখেও কাদায়।

—-

বাহির থেকে ফিরে গোসল নিয়ে চুলগুলো ঝেড়ে বিছানায় বসলো ঝুমুর। শাড়িটা গা ঝাড়া দিয়ে এখন শান্তি লাগছে। এতক্ষণ অসস্তি করছিলো তার। হাফ বাঙালি আর হাফ কোরিয়ান হওয়ায় বাঙালিদের এসব ঐতিহ্যবাহী জিনিসের প্রতি তার এক ধরনের আগ্রহ থাকলেও শাড়ি সামলানো যে বেশ কঠিন সেটা সে অনেক পূর্বেই জেনেছে। কম দিন তো আর হয়নি সে বাংলাদেশে এসেছে।

মায়ের নিরুদ্দেশ হওয়ার পরপরই তো তাকে তাকে তার নানুর বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন মোতালেব সাহেব। ঝুমুর জানে না তার বাবা মোতালেব সাহেব কেন তাকে নিজের কাছে রাখেননি। শুধু এটা জানে হালমনি বলেছিলেন তাকে দেখলে নাকি মোতালেব সাহেবের নিজের নিরুদ্দেশ স্ত্রীয়ের কথা মনে পড়ে। তাই তিনি ঝুমুরকে এক পলকও দেখতে চাননা।

তবে তার মানে এই না মেয়ের প্রতি দায়িত্বে কোনো গাফিলতি করেছেন মোতালেব সাহেব। দূর থেকেও তিনি মেয়ের সমস্ত চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছেন। মেয়ের কখন কি লাগবে, না লাগবে সবকিছুরই খেয়াল রাখছেন। এসবই হচ্ছে ঝুমুরের আপি মনোয়ারা বেগমের সাহায্যে। যদিও মেয়ে জামাইয়ের এই ধরনের কাজে উনি আশাহত তবে মেয়ের মেয়েকে নিজের চোখের সামনে রাখতে পেরে উনি ক্ষ্যান্ত।

ঝুমুরের মা কখন নিরুদ্দেশ হয়েছিলেন জানা নেই তবে ঝুমুর বাংলাদেশে আছে বিগত দশ বছর যাবত। এই কারণেই হয়তো গায়ে গতরে, কথাবার্তায় আর আচরণে তার বাঙালি সংস্কৃতির খানিকটা আভাস আছে। ঝুমুর হালমনির(দাদী) কাছে শুনেছিল তার মায়ের নাকি শাওমি(ঝুমুরের ছোট বোন) হবার কয়েক বছর পরই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে গিয়েছিল তাই সে এখন ফেরার। শাওমি বয়সে ঝুমুরের তিন বছরের ছোট হলেও তারা পিঠাপিঠি দুই বোন।

সে অনেক পুরনো কথা। মায়ের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই ঝুমুরের। মানুষটা কোথায় আছে, কি করছে কে জানে। সে কি তাকে খুঁজছে ? অথচ সে যে স্বার্থপরের মতো চলে এসেছে সেই দূর দেশে মাকে ফেলে। এর কি আদৌ কোনো ক্ষমা আছে ?

আয়নার সামনে বসে চুলে চিরুনি চালাতে চালাতে ঝুমুরের মনে পড়লো তাসনুবা অনেক যত্ন করে তার ছোট ছোট চুলে চিরুনি করে দিত। অথচ এখন মানুষটাই নেই। ঝুমুর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুলে দ্রুত চিরুনি চালালো। আঁচড়াতে আঁচড়াতে সে লক্ষ্য করলো তার মাত্র এক পায়ে নূপুর। আরেক পা সম্পূর্ণ খালি।

ঝুমুর এবার লাফিয়ে উঠলো। নূপুর এক পায়ে কেন ? আরেক পায়েরটা কোথায় ?এখন কি হবে ? নূপুরগুলো যে ঝুমুরের খুব প্রিয়। সেগুলো যে তার মায়ের ছিল। ঝুমুর তন্নতন্ন করে ঘর থেকে বাথরুম সব জায়গায় খুঁজলো। তাকে এভাবে খুঁজতে দেখে চিন্তিত তানিয়া শাহজাহান বললেন ‘ হাসপাতালে ফেলে এলি নাকি ? ‘

হতাশায় মাথায় হাত রেখে বসে পড়লো ঝুমুর। হাসপাতালে যদি ফেলে এসে থাকে তবে ওটা আর ফিরে পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। যেখানে পড়ে আছে সেখানে তো কেউ চিনে ফেরত ও দিতে পারবে না। তবে ঝুমুরের আর দুই পায়ে নূপুর পড়া হবে না। এখন থেকে তার এক পায়েই নূপুর পড়তে হবে।

—-

রোজকার মতোই ভোরের আলোয় ছাদের খোলা হাওয়ায় এসে দাঁড়িয়েছে ফাহমান। এই এলাকার খুব পুরনো বাসিন্দা তারা। পূর্বে থাকতো রসুলবাগের দিকে। তবে কিছু কারণ বশত বছর কয়েক যাবত প্রিয় বন্ধু ফারুকের সহায়তা নিয়ে ফারুকদের বাড়ির সামনের বাড়িতেই থাকছে।

ফারুক ফাহমানের কলেজ লাইফের বন্ধু। সেই সুবাদেই প্রিয় বন্ধুর স্বার্থে নিজ উদ্যেগে এই বাড়িখানা বছর কয়েক আগে খুঁজে বের করেছিল। এই বাড়িটা ফারুকের বাবা আজমাঈন সাহেবের ঘনিষ্ঠ বন্ধু মুজিব সাহেবের। তাই এত সাশ্রই মূল্যে ভাড়া দিতে রাজি হয়েছেন মুজিব সাহেব। বিশেষ করে ফারুক নিজে আজমাঈন সাহেবকে দিয়ে অনুরোধ করিয়েছে। ঠিক এই কারণেই বন্ধু ফারুক এবং তার পরিবারের প্রতি অনেক কৃতজ্ঞ ফাহমান।

বহু পুরনো বন্ধু হওয়ায় নাকি সাহায্য করার খাতিরে কে জানে, ফাহমানের বাড়ির সকলের আবার ফারুকের পরিবারের সবার সঙ্গে বেশ খাতির। ফাহমানের বাড়িতে মানুষই বা কজন ? সবেমাত্র তিনজন তারা। ফাহমান, তার মা মরিয়ম এবং সদ্য উচ্চ মাধ্যমিক দেওয়া বোন হৈমন্তী।

হৈমন্তী উজ্জ্বল ভবিষ্যতের তাড়নায় চেনা শহর, চেনা বাড়ি থেকে দূরে ক্যাডেট কলেজে পড়তো। তবে এবার পরীক্ষা শেষে সে বাড়ি ফিরেছে। তার সঙ্গে নাকি আবার ফারুকের ভাগ্নি কি ঝুমুর না নূপুর, তার আবার বেশ সখ্যতা। ফাহমান এতকিছু জানেনা। ফারুকের ভাগ্নিকে আজ অব্দি সামনাসামনি সে দেখেনি। দেখবে কি করে ? মেয়েটা যখন বাড়ি আসে তখন সে থাকে না আর যখন সে থাকে তখন মেয়েটা থাকে না।

কলেজ একই তো ছিলই, ভাগ্যক্রমে ঝুমুর হৈমন্তীর হাউজ রুমও একই ছিল। একই রুম হওয়ায় দুজনের বন্ধুত্ব দেখবার মতো ছিল। পুরো কলেজে তারা দুই দেহ এক প্রাণ নামে পরিচিত। ফাহমান ওই মেয়েকে স্রেফ কয়েকবার ছবিতে ফারুকের সঙ্গে দেখেছে। ঝুমুর আর হৈমন্তী, দুই বান্ধবীর মাঝে এতই মিল যে তারা দুজনে ছুটিতেও আসে এক সঙ্গে। শুধু ব্যস্ততার কারণে ঘরে থাকা বোনের সঙ্গে ফাহমানের রোজ দেখা হলেও সেই নূপুর কিংবা ঝুমুরের সঙ্গে আর দেখা হয় না।

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে