#নীল_ডায়েরির_সেই_মেয়েটি
#আরদ্ধিতা_রুহি
#পর্বঃ০৭
🍁
দুইটা ক্লাস শেষ করে আরোহীরা বসে আছে।
কিন্তু
ক্লাসে সবাই বার বার আরোহীর দিকে তাকাচ্ছে,
আবার অনেকে বলা বলি করছে মেয়েটা কি তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ড নাকি! নাহলে তাশরিফ আঁধারকে যেখানে কেউ প্রোপোজ করতে পারে না, চোখ তুলে তাকাতেই পারেনা।
আর এই মেয়েটি আজকে ভরা মাঠের সবার সামনে তাকে কিস করলো!
আবার চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে ছিলো কিন্তু তাশরিফ আঁধার তাকে কিছুই বললো না, উল্টো ক্লাসে আসতে বললো এটা কিভাবে হতে পারে!
আবার অনেকে হিংসার চোখে তাকাচ্ছে বার বার আর বলা বলি করছে, নিশ্চয়ই রুপ দিয়ে ফাঁসিয়েছে তাশরিফ আঁধারকে।
আরোহীর কানেও কিছু কিছু কথা এসেছে কিন্তু সে কি বলবে নিজেই বুঝতে পারছে না।তার এখন মনে হচ্ছে সে তখন ওইটা না করলেও পারতো, তার উচিত ছিলো আঁধারকে সবটা বলে পার পেয়ে যাওয়া কিন্তু সে উল্টো ঘটনা উল্টে দিলো।
আরোহীর ভিষণ অসস্তি হচ্ছে, তাই,
দাঁত দিয়ে বার বার নখ খুঁটছে আরোহী। সে ভালো করেই বুঝতে পারছে বর্তমানে সে ভার্সিটির টপ নিউজের মধ্যে আছে! এরই মধ্যে অনেকে আসে তাকে দেখেও গেছে, তার এখন মনে হচ্ছে সে যেনো আঁধারের বিয়ে করা নতুন বউ।
–‘আজব আমি কি আঁধারের বিয়ে করা নতুন বউ নাকি সবাই এভাবে দেখতে আসছে কেনো আমায়?’
–‘তুই আজকে যেটা করেছিস মনে হচ্ছে না কখন ও আজ অব্দি কেউ এমটা করতে পেরেছে, তাই সবাই এভাবে দেখে যাচ্ছে। ‘
আরোহী কথাটা ধিরে বললে ও রাহি শুনতে পায়, আর তার পর পরই উত্তর হিসেবে এই কথাটা বলে।
–‘তবে আর যাই বলিস না কেনো,আঁধার ভাইয়ার বউ হওয়া কিন্তু ভাগ্যের ব্যাপার!’ আমি তো ওনাকে দেখেই ক্রাশ খেয়েছি, আর সবার কথা বার্তা শুনে মনে হচ্ছে উনি ভার্সিটির সবার ক্রাশ। তুই ওনাকে যে সত্যিই চুমু খেয়েছিস অনেকেই সেটা বিশ্বাস করতে পারছে না।
আরোহীকে দাঁত দিয়ে আবার নখ খুঁটতে দেখেই কথাটি বলে উঠে রাহি। আরোহী এবার একটু সিরিয়াস হয়,,
–‘দোস্ত এদিকে কানটা নিয়ে আয় একটা কথা বলবো!’
আরোহীর সিরিয়াস মুখের কথা শুনে রাহি আরোহীর দিকে নিজের কানটা এগিয়ে দেয়।
–‘এই যে ভার্সিটির ক্রাশ আছে না মানে তাশরিফ আঁধার চৌধুরী, উনি আমার বর!’ তাই তাকে চুমু টুমু খাওয়া আমার জন্য ক,খ পড়ার সমান।
বলেই লাজুক হাসি দেয়।
–‘নাইস জোকস।’
বলপই রাহি সরে যায় কিন্তু পরক্ষণেই কথাটা ভালো করে বুঝতেই চেঁচিয়ে উঠে,,,
–‘কিহহহহহহহহহ’
আরোহী কানে হাত দেয়। আসে পাশের সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে, রাহি ভেবাচেকা খেয়ে যায়। পরমুহূর্তে আরোহীর দিকে তাকিয়ে বলে,,,
–‘ফাজলামোর একটা লিমিট থাকে এয়ার?’
–‘উফফ বা’ল ডায় আমি তোর সাথে ফাজলামো করতে যাবো কেন বল তো?’
–‘যাহ্ বিশ্বাস হয় না, নাহলে উনি তোকে প্রথমে অচেনার মতো কথা বললো কেনো?’
রাহির কথায় আরোহীর মুখটা ছোট হয়ে যায়, সেদিনের ব্যাবহারের কথা মনে পড়ে যায়৷ কিছু না বলেই চুপ করে থাকে।
–‘ধুর সর এধরণের মজা আমার সাথে আর করবি না,এখন চল খিদা পেয়েছে আগে কিছু খেয়ে আসি। ‘
রাহির কথায় মলিন মুখে আরোহী মাথা নাড়ায়।
–‘হুর মন খারাপ করিস না দোস্ত আমি তোর আর আঁধার ভাইয়ার সেটিংসটা করিয়ে দিব কেমন!’
দাঁত বের করে হেসে বলে উঠে রাহি।আরোহী বলে,,
–‘আমি অলরেডি তাশরিফ আঁধার চৌধুরীর বউ বুঝলি তাই তোর আর সেটিংস করতেই হবে না।’
–‘তাই নাকি প্রমাণ কর তাহলে তুই আঁধার ভাইয়ার বউ নাহলে বিশ্বাস করবো না!’
–‘যদি পারি তখন?’
রাহির কথায় আরোহী কথাটি বলে।
–‘আমি তোকে ঢাকার বড় রেস্তোরাঁতে খাওয়াব যাহ্।’ আর তুই যদি না পারিস তখন?
একটা ভ্রু উচু করে জিজ্ঞেস করে রাহি।
আরোহী রহস্যময় হাসি দিয়ে বলে,,
–‘তুই যেটা বলবি সেটাই করবো যাহ্!’
রাহি লাফিয়ে উঠে বলে,,
–‘ওকে ডান তাহলে।’
আরোহী ও মাথা নাড়ায়।
এরইমধ্যে তারা দেখে আঁধার এখন ও গাছ তলায় দাড়িয়ে আছে, কিন্তু এবার তাকে ঘিরে অনেকেই দাড়িয়ে আছে।আরোহী ভাবে হয়তো বন্ধুরা নয়তো জুনিয়ররা।
তারা কেন্টিনের দিকে চলে যায় কিন্তু আরোহী বুঝতেই পারে না এক জোড়া চোখ ভ্রুকুচকে তাকিয়ে আছে তারই দিকে।
–‘কি রে আঁধার তুই ওই মেয়েটাকে এভাবে তাকিয়ে দেখছিস কেনো বল তো?’ সেই তখন থেকেই জিজ্ঞেস করছি সবাই, মেয়েটি তোর কি হয়! তুই তাকে তখন কিছু বললি না কেনো বল তো? তের যে কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই সেটা আমরা সবাই ভালো করেই জানি, সো এখন বল কাহিনি কি? নাকি ওইটায় আমাদের ফিউচার ভাবি?
এক নিঃস্বাসে কথাগুলো বলে থামলো সোহেল কিন্তু এতে যেনো আঁধারের হেলদোল নেই বললেই চলে।
–‘আধার তুই কি আদও আমাদের কথা বুঝতে পারছিস? ‘ সোহেলের কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেনো? কে হয় মেয়েটি তোর?
বিরক্ত হয়েই প্রশ্ন করলো নীলিমা।
–‘আমার মনে হয় আঁধার মেয়েটির প্রমে পড়েছে!’ শুধুই পড়ে নি একপ্রকার বাজে ভাবেই ফেসে গেছে।
রাতুলের কথায় ভ্রুকুচকে রাতুলের দিকে তাকায় আঁধার কিন্তু কিছু বলে না।
নীলিমা এক পলক আঁধারের দিকে তাকায় তার এসব সহ্য হচ্ছে না,প্রচুর কান্না পাচ্ছে কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলতে পারছে না।
–‘আঁধার, তই কি শুনতে পারছিস সবাই কি কি বলছে?’ চুপ করে থাকবি এখন ও তুই।
একপ্রকার চেঁচিয়েই বলে এবার নীলিমা।
কিন্তু এবারও আঁধার চুপ করেই থাকে কাউকে কিছু বলে না।
–‘ওই ব্যাটা, কথা বলিশ না কেনো বল না দোস্ত? ‘
শিহাবের কথায় আঁধার চোখ তুলে শিহাবের দিকে শান্ত চোখে তাকায় আর বলে,,,
–‘আমি জানি না বাট, ” She is very special person for me and my life.”
–‘ওহহহহহহহহ ” Special person.”
একসাথেই সকলে বলে উঠে হেসে দেয়, শুধু মাত্র নীলিমা বাদে। নীলিমার বুকের বা পাশে চিনচিন ব্যাথা শুরু হয়ে যায়, সকলের আড়ালেই চোখের পানি মুছে নেয়। মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে আঁধারকে বলে,,,
–‘সত্যি তাহলে মেয়েটি অনেক স্পেশাল, আমাদের আঁধার যাকে স্পেশাল বলেছে সে কি আর সামান্য মেয়ে হতে পারে নাকি?’
–‘আরে নীলি, শুধুই স্পেশাল বলছিস কেনো, বল অনেকককককক স্পেশাল। ‘
সোহেলের কথায় সকলে আর এক দফা হেসে ফেলে।
–‘ তবে যাই বলিস না কেনো আমাদের ভাবি কিন্তু মারাত্মক জোস দেখতে। ‘
তরি কথায় নীলি বলে,,,
–‘ হুম ঠিক বলেছিস, আমাদের আঁধারের সাথে একদম সুন্দর ভাবে মানাবে। ‘
–‘অবশেষে শালা প্রেমে পড়লি তাহলে?’
বলেই রাতুল, সোহেল, শিহাব মিলে আঁধারে ঝাপটে ধরে।
(নীলিমা,সোহেল,আঁধার, তরি,রাতুল ও শিহাব এরা ছোট বেলার বন্ধু সবাই৷ সবাই একে অপরকে অনেক ভালোবাসে, একজনের কিছু হলে দ্বিতীয় জন প্রাণ ও দিতে পারে।সবই ঠিক শুধু মাত্র ব্যাতিক্রম হয়েছে নীলিমার ক্ষেত্রে, নীলিমা কলেজ লাইফ থেকেই আঁধারকে ভালোবাসে কিন্তু কখন ও সাহস করে বলতে পারেনি বন্ধুত্ব নষ্ট হওয়ার ভয়ে। ঠিক যেমটা আজকে ও বলতে পারলে না। কিন্তু আঁধার তরি ও নীলিমাকে বোনের চোখেই দেখে ।)
ক্যান্টিন থেকে বের হওয়ার সময় একটা ছেলে আরোহীকে দেখেই সালাম দেয়,,,
–‘আসসালামু আলাইকুম ভাবি!’
–‘ওয়ালাইকুম আসসালাম।’
–‘ কে ভাবি ভাইয়া?’
সালাম আরোহী নিলেও প্রশ্নটা করে রাহি। ছেলেটা থতমত খেয়ে যায়।
–‘আরে কে- কেউ না আসি ভাবি।’
বলেই ছেলেটা চলে যায় আর রেখে যায় অবাক হয়ে যাওয়া আরোহী ও রাহিকে।
–‘রাহি ছেলেটা কি তোকে ভাবি বলে গেলো?’ তোর বয়ফ্রন্ড কি এই ভার্সিটিতে পড়ে নাকি?
আরোহী প্রশ্নটা করেই চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকে রাহির দিকে। রাহি ভেবাচেকা খেয়ে যায়,,
–‘কি সব বলছিস, আমার বয়ফ্রেন্ড কোথা থেকে আসবে? ‘ পাগল হয়ে গেলি নাকি তুই? তোকে ভাবি বলেছে হয়তো!
রাহির উত্তর ও প্রশ্নের মাঝেই আরোহী কিছুই বুঝতে পারে না। রাহিও আর কথা বাড়ায় না,
–‘ওই যে আঁধার ভাইয়া চল চল প্রমাণ কর?’
আঁধারকে দেখে আরোহীর হাত ধরে টানতে টানতে বলে রাহি৷
আরোহী চোখ তুলে তাকাতেই আঁধারের শান্ত মূখশ্রী দেখতে পায়। আঁধারের এই শান্ত চাহনিই যে কারো কলিজা কেঁপে উঠতে বাধ্য।ঠিক এখন যেমন আরোহীর কলিজা কেঁপে উঠছে।
–‘কি রে আরো চল?’
রাহির কথাতেই আঁধারের দিক থেকে নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয় আরোহী।
আঁধারদের কাছাকাছি আসতেই আঁধারের বন্ধুরা সকলে মুখ টিপে হাসে,,
–‘আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।’
এক গাল হেসে বলে রাহি৷
–‘ওয়ালাইকুম আসসালাম!’
মুচকি হেসে সালামের উত্তর দিয়ে আরও কিছু বলবে সোহেল তার আগেই আঁধারের গম্ভীর গলায় বলা কথাটি শুনে সোহেল সহ সকলে কপাল চাপড়ায়।
–‘তোমরা এখানে কেনো?’ এনিথিং ইস রং?
–‘আসলে ভাইয়া আরোহী আপনাকে কিছু একটা বলবে বলছিলো,সেই তো নিয়ে আসলো আমায় এখানে। ‘ কি রে আরো বল?
চটপট করে কথাটা বলেই আরোহীর পেটে ঘুতো দেয় রাহি৷ আরোহী বেচারি কাচুমাচু করে কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
রাহির কথা শুনে আঁধার এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় আরোহীর দিকে।আরোহীকে কাচুমাচু করতে দেখেই আঁধারের ভ্রু খানিকটা কুচকে যায়।
–‘সাপের মতো মোচড়া মুচড়ি না করে যেটা বলতে এসেছিলে সেট বলো ইডিয়েট?’
আঁধারের ধমকে কেঁপে উঠে আরোহী।
–‘আমার মনে হয় আমাদের যাওয়া উচিত, কি বলিস তোরা?’
সকলের উদ্দেশ্যে কথাটি বলে সোহেল। সবাই মাথা নাড়িয়ে চলে যায়। থেকে যায় শুধু আঁধার, আরোহী ও রাহি।
–‘ কি হয়েছে এবার বলো?’
আঁধারের প্রশ্নে আরোহী রাহির দিকে একপলক তাকিয়ে বলে,,
–‘রাহির নাকি খুব ইচ্ছে তার দুলাভাইয়ের সাথে দেখা করবে তাই নিয়ে এলাম আর কি!’
আঁধার এবার আরোহীর দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রাহির দিকে তাকায়।
রাহি হা করে তাকিয়ে আছে, তার বিশ্বাসই হচ্ছে না এখন ও আঁধারই আরোহীর স্বামী। কিন্তু রাহির মনে অনেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।
–‘কি ব্যাপার শালি সাহেবা, দুলাভাইকে দেখার এতো তাড়া?’
মুচকি হেসে বলে উঠে আঁধার। রাহি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে, সে শুনেছিলো আঁধার সবসময় গোমড় মুখ করে থাকে কিন্তু এই প্রথম হাসতে দেখছে ব্যাপারটা তার ঠিক হজম হচ্ছে না।
–‘আসলে ভাইয়া, আমার কেনো জানি বিশ্বাসই হচ্ছে না আপনি আমার জিজু?’
আমতা আমতা করে বলে রাহি।
এবার শব্দ করে হেসে দেয় আঁধার, রাহি যেনো আরও অবাক হয়ে যায় আর এবার রাহির সাথে সাথে আরোহী নিজেও অবাক হয়ে যায়। আঁধারকে এভাবে হাসতে কখন দেখেনি আরোহী৷
–‘কেনো বিশ্বাস হচ্ছে না শুনি?’ তোমার বান্ধবী ভরা মাঠে সকলের সামনে এমনি এমনি তো আর চুমু খায় নি, আসলে কি বলো তো ১মাস দূরে ছিলাম তাই আমায় দেখে আর নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারেনি বুঝলে তো!
বলেই চোখ টিপ দেয় রাহিকে। রাহি নিজেও এবার হেসে ফেলে৷ আরোহী লজ্জায় লাল হয়ে যায়, আঁধার আর চোখে তাকাতেই চোখ পাকিয়ে তাকায় আরোহী। আঁধার মুচকি হেসে রাহিকে বলে,,,
–‘এই যে দেখো দেখো, আবার আমায় ইশারা করছে?’ তা বউ বাড়ি গিয়ে বাকি চুমু টুকু দিয়ো এখন থাক কেমন সবাই আছে তো।
প্রথমের কথাটা রাহির দিকে তাকিয়ে বললেও শেষের কথাটা আরোহীর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে বলে।
–‘অসভ্য।’
বলেই হনহন করে চলে যায়৷ আঁধার আর রাহি দু’জনেই ফিক করে হেসে দেয়।
–‘আচ্ছা রাহি এখন যাও পড়ে ভালোকরে পরিচিত হবো কেমন, দেখো মহারানি কোথায় গেলো। ‘ আমার ও আবার একটু কাজ আছে।
–‘সমস্যা নেই ভাইয়া, আমি যাই।’
আঁধারের কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায় রাহি।আঁধারও নিজের গন্তব্যে চলে যায়।
আর এদিকে চৌধুরী বাড়িতে,,,
–‘এই মেয়ে আজকে থেকে তুমি আদরের সাথে আদরের ঘরেই থাকবে বুঝলে?’ স্বামী অসুস্থ অন্তত সেবাটা তো করতে পারো নাকি?
কাঠকাঠ গলায় কথাগুলো আলিশার উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন মিসেস আঁকলিমা চৌধুরী।
আলিশা চোখ মুখ কুচকে তাকায় আঁকলিমা চৌধুরীর দিকে,তাকে দেখেই মনে হচ্ছে মিসেস চৌধুরীর কথাটা তার ঠিক পছন্দ হয়নি।
–‘বাড়িতে কি সার্ভেন্টের অভাব হয়ে গেছে আন্টি? ‘
আলিশার কথায় ক্রোধ নিয়ে তার দিকে তাকায় আঁকলিমা চৌধুরী।
–‘না মানে আমায় সেবা করার কথা বলছেন তো তাই বললাম আর কি?’
মিসেস চৌধুরীর কঠিন দৃষ্টি দেখে আমতা আমতা করে বলে উঠে আলিশা।
–‘সার্ভেন্টের সাথে আমার ছেলের বিয়ে দেইনি বুঝলে, তাই যেট বললাম মাথায় রেখো?’ আমার ছেলের খারাপ সময়ে তুমি না ছিলে পাশে আর না করছো সেবা, কেমন বউ তুমি? লজ্জা হওয়া উচিত তোমার, অবশ্য তোমার আাবার লজ্জা আছে নাকি! লজ্জা থাকলে তো আর এসব করতে পারতে না।আমার ছেলে ভালো মানুষ তাই তোমার মতো মেয়েকে বিয়ে করেছে।
কিছুটা তাচ্ছিল্য করেই বলেন আঁকলিমা চৌধুরী।
আলিশার কিছুটা খারাপ লাগে কিন্তু তার থেকে বেশি রাগ হয়৷
এতোসব বলাতে মিসেস আঁকলিমা চৌধুরীর ও খারাপ লাগে কিন্তু তার কিছু করার নেই আলিশার ব্যাবহারেই আজকে এতোকিছু তাকে বলতে বাধ্য হলেন মিসেস চৌধুরী। কিন্তু আলিশার কথা শুনে মাথাট গরম হয়ে যায়।
–‘বিয়ে করার জন্য কি আমি আপনার ছেলের পায়ে পড়েছিলাম নাকি?আমার মতো মেয়ে আপনার ল্যাংড়া ছেলের বউ হয়েছে তাতে আপনার উচিত আমায় মাথায় তুলে রাখা আর আপনি.. ‘
আর কিছু বলতে পারে না আলিশা তার আগেই শক্ত হাতের থা’পড় খেয়ে পড়ে যায়।
আঁকলিমা চৌধুরী যেনো আঁতকে উঠেন।
–‘কি করলি আদর এটা তুই, বউয়ের গায়ে হাত তুললি? ‘ এই শিক্ষা দিয়েছি আমি তোকে?
–‘ওর সাহস হয় কি করে মা তোমার সাথে এভাবে কথা বলার? ‘ আর বেয়াদবি করার সাহস পায় কোথায় ও?
চিৎকার করে বলে উঠে আদর। আলিশা কেঁপে উঠে আদরের চিৎকারে। কিন্তু আদর থামে না,,,
–‘আমি ১মাস বেডে পড়ে ছিলাম বলে তুই আমায় ল্যাংড়া বললি তোর এতো বড় সাহস!’ তোকে তো আমি,,
আলিশার দিকে তেড়ে যেতে ধরলেই আঁকলিমা চৌধুরী টেনে সরিয়ে আনে আদরের গালে একটা চড় মেরে দেয়।
–‘ বেয়াদব তো তুই হয়েছিস?’ তোর জন্য আজকে আমাদের এই দিন দেখতে হচ্ছে, আমার তো আপসোস হয়, তোকে মানুষ করতে পারিনি! আমি মানুষ করতে পারিনি তোকে!
বলেই আচঁলে মুখ চেপে কেঁদে উঠছেন বার বার আঁকলিমা চৌধুরী।
আলিশাকে ধরে উঠিয়ে বিছানায় বসিয়ে পানি খাওয়ায় আঁকলিমা চৌধুরী। তারপর আদরের উদ্দেশ্যে বলে,,,
–‘আজকে থেকে তোরা একসাথে থাকবি, আর নিজেদের মানিয়ে নিতে চেষ্টা কর! ‘ যা করেছিস নিজের ইচ্ছায়, আর হ্যা আরোহী এখন তোর বড় ভাইয়ের বউ আশা করবো তুই তাকে ভাবির সন্মানটা দিবি। আগে যা হয়েছে ভূলে যা।
–‘আর হ্যা এই যে তুমি, মাথায় রেখো কথাটা ভালো করে।আর আমার আরোহী ও আঁধারের থেকে দূরে থেকো , তোমার সবকিছু এই একমাস খেয়াল করেছি আমি। কথাটা ভালো করে মাথায় রাখবে নাহলে ফল ভালো হবে না।
আলিশার উদ্দেশ্যে কথাগুলো বলে গটগট করে চলে যান আঁকলিমা চৌধুরী।
আদর ও আলিশার দিকে একপলক তাকিয়ে চলে যায়।
–এই নীলি কি হয়েছে তোর বল তো?’ মন খারাপ করে আছিস কেনো রে?
রাতুলের কথা শুনে মলিন হেসে বলে নীলিমা,,,
–‘বাবা মায়ের কথা অনেক মনে পড়ছে রে, ভাবছি গিয়ে ঘুরে আসি কিছুদিন?’
–‘তুই একা যাবি?’
ভ্রুকুচকে জিজ্ঞেস করে আঁধার।
–‘হুম, তোরা তো সবাই ব্যাস্ত এখন তাই!’
–‘সোহেল গিয়ে দিয়ে আসবে, কিরে সোহেল তুই কি বলিস?’
আঁধারের কথায় মলিন হাসে নীলিমা, যে হাসির কথা কেউ বুঝতে না পারলেও আঁধার ঠিকই বুঝতে পারে কিন্তু তার কিছুই করার নেই। নীলি ও তরিকে ছোট থেকেই বোনের মতো ভেবে এসেছে৷ তার বোন না থাকার কারণে তার বাবা মা ও তাদের নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসেন। কিন্তু আঁধার সবসময় ছোট বোনের আসনেই বসিয়েছিলো আর এখন ও আছেই।
#চলবে?