#নীলাময়ীর_প্রেমে
#Written_by_Tarin_Jannat
#পার্ট০৬
“চন্দ্রঘোনা ফেরীঘাট পার হলেই রাহ্খালী স্টেশন! আর ফেরী পার হওয়ার পর এই জায়গাটাই এসে বিরাট সমস্যায় পড়তে হয়। গাড়ি সব এসে একজায়গায় ভির করে। কখনো কখনো ৩ ঘন্টারো বেশি সময় প্রয়োজন হয় এই অসহ্যকর পরিস্থিতি থেকে বের হবে।
–“এইবার কী করবো এভাবে জেমে আটকে থাকলে সামনে যাবো কীভাবে??”(আবির)
–“ভাইয়া আপনি গাড়ি বামপাশে ওই যে রোডটা দেখছেন সেদিকে নিয়ে যান!!”(রাহা)
–“সেদিকে গেলে কী হবে??”(ফাহান)
–“গেলেই দেখতে পাবেন!!”(রাহা)
রাহার কথামতো আবির গাড়ি সে ছোট রোডের দিকে নিয়ে যায়। রাহার দেখানো লোকেশন অনুযায়ে আবির গাড়ি সোজা রাহখ্লী বাজারে নিয়ে যায়। তারা তো অবাক! এদিকে ও যাওয়া যায়??
–“এদিকে যাওয়ার রাস্তা আছে আগে বলেননি কেন?”(আবির)
–“আমি তখন খেয়াল করিনি!! এবার আমাদের খাবার নিয়ে নিলে ভালো হতো!! ”
–হ্যাঁ, আমি আর নোভা যাচ্ছি।(আবির)
তারা দুজনে বের হতে যাবে তখনি রাহার চিৎকার।
–“ইয়াকক!! আমার কাপড়ে এতো ময়লা?? আর আমার ব্যাগ?? আল্লাহ সেখানে রেখে এসেছি মনে হয়?
রাহার বিক্ষিপ্তচিত্ত কথা শুনে আবির তাড়াতাড়ি করে এসে সামনে থেকে রাহার ব্যাগ নিয়ে রাহার হাতে দেয়।মুহুর্তে রাহা ঠান্ডা হয়ে যায়। ব্যাগে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস আছে তাইতো রাহা হঠাৎ বিচল হয়ে পরে।
–“সরি আমার খেয়াল ছিলো না। ব্যাগটা আমি সেখান থেকেই দেখার পর নিয়ে নিয়েছিলাম।”(আবির)
–“ধন্যাবাদ ভাইয়া?? “(বিকম্পিত কন্ঠে)
রাহা তাড়াতাড়ি ব্যাগে এলবাম আছে কী না দেখে নেয়। এলবাম হাতে নিয়েই স্বস্তির শ্বাস ছাড়ে। ফাহান,আবির, আর নোভা বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে রাহার দিকে।তাতে রাহার কোনো হেলদেল নেই স্বাভাবিকভাবেই বলে উঠে…
–“আপু আপনারা খাবার নিয়ে আসেন,,আমি এখানে পাশে একটা পার্লার আছে সেখানে গিয়ে আমার ড্রেসটা চেঞ্জ করে আসি ততক্ষনে। “(রাহা)
–“তুমি একা যেও না ফাহান ও যাবে তোমার সাথে,”(নোভা)
–“”তার দরকার নেই!” (রাহা)
বলেই ব্যাগ নিয়ে গাড়ি থেকে হাঁটা দেই রাহা। ফাহানও কম কিসে? রাহা ঝাঁঝালো কন্ঠের কথা ফাহানের ইগোতে লাগে নেমে রাহার পেছনে গিয়ে হাত ধরে জোরে টান দিয়ে নিজের দিকে ফেরাই,,,
দূর থেকে আবির আর নোভা এদের কান্ড দেখে হেসে গাড়ি লক করে ফুড-কর্নারের দিকে চলে যায়।
–“এই মেয়ে সমস্যা কী তোমার?? একা যাচ্ছো কেন? যদি আবার বিপদে পরতে হয় তাহলে??”(ফাহান)
এক ঝাটকায় হাত ছাড়িয়ে নেয় ফাহানের থেকে।
–” ফাস্ট অফ অল আমাকে তুমি করে বলার অধিকার আমি আপনাকে দেই নি! সো আপনি করেই বলবেন!” (ক্রোধিত দৃষ্টি নিয়ে ফাহানের দিকে তাকিয়ে বলে)
–” এখানে এই কথাটা আসছে কেন?? আর আমি আমার ইচ্ছেতে চলি। তোমার কথা শুনতে যাবো কেন?? “তোমার সাথে আমার কী কোনো কালে শত্রুতা ছিলো?? এভাবে বিহেভ করার রেজনটা কী??”(ফাহান)
এর উত্তর রাহার নেই,,হাত ছাড়িয়ে চুপচাপ পার্লারের দিকে হাঁটা দেয়। সে ও কী বলবে??
–(আসলেই উনার সাথে আমার শত্রুতা আছে?? নাকি উনি খুব ভালো গান করেন বলেই আমার সমস্যা??একবার তো ঠকেছি।নিজেকে সামলাতে হিমসিম খেয়েছিলাম অনেক।দ্বিতীয়বার আমি সেই ভুল করতে চায় না।তাইতো এভাবে ব্যাবহার করেছি।উনার প্রতি অদ্ভুদ এক মায়া হয় যতবার দেখি।আমি চায় না এ মায়ার ক্ষিপ্রতা। নিজেকে সামলানোর শক্তি দাও আল্লাহ প্লিজ!! আমি এভাবেই ভালো আছি-মনেমনে)”(রাহা)
রাহার নিজেরই খারাপ লাগছে ফাহানের সাথে এভাবে ব্যাবহার করে। ফাহানেরও বুকে গিয়ে আঘাত করে রাহার এমন ক্রুদ্ধ কথায়!! তবুও নিজেকে সামলে নেই রাহার সাথে গিয়ে পাশাপাশি হাঁটতে লাগলো।রাহা ফাহানকে পাশে দেখে কোনো রিয়েক্ট করেনি আর পুনরায়!!
–(কেন জানি তোমাকে জ্বালাতে ইচ্ছে করছে বিষণ। তাহলে তোমার ওই রেগে লাল হয়ে যাওয়া মুখটা আরেকবার দর্শন করতে পারতাম।–মনেমনে)(ফাহান)
রাহা পার্লারে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে ২০ মিনিট পর বের হয়।দেখে সামনে ফাহান দাড়িয়ে আছে।
ফাহান রাহাকে দেখে এবারো আরো মুগ্ধ হয়ে যায়। নীল রঙের লং টপসে বিষণ সুন্দর লাগছিলো রাহাকে।চুল গুলো এবার বেঁধে ফেলেছে। মুখে কোনো সাজ নেই।বেশ ফ্রেস লাগছে এবার রাহার। ফাহান এবার নিজের কিউরিসিটি আটকে রাখতে না পেরে রাহার থেকে জিজ্ঞেস করে বসে…..
–“তোমার কী নীল রঙটা বেশি প্রিয়??”
–“”নাহ আমার মায়ের বেশি প্রিয় ছিলো!! কিন্তু নীল রঙের বস্ত্রে নিজেকে জড়াতে বেশ ভালো লাগে আমার।মনে হয়…””
বলতে গিয়ে থেমে যায় আনমনে কী বলতে যাচ্ছিলো এখন। তাই আর কিছু না বলে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়। ফাহান কিছুক্ষন তাকিয়ে আবারও ডাক দেয়..
–“#নীলাময়ী!!! (ফাহান)
এবার রাহা আবারো থেমে যায়।এ নামটায় অদ্ভুদ একটা মায়া এবং টান অনুভূব করে রাহা। চাইলেও উপেক্ষা করতে পারে না।
অপ্রতিভ হয়ে পরে ফাহান। কেন যে এই নামটায় ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে বলতে পারো না।’ রাহা’ ডাকতে গিয়েও #নীলাময়ী ডেকে ফেলে।
দুজনে স্তব্ধীত হয়ে দাড়িয়ে আছে ঠায়। তখনি নোভার ডাকে দুজনের ঘোর ভাঙে। ফাহানও হঠাৎ নোভার ডাকে বিব্রতবোধ করে।
–“কী হয়েছে চলো আমরা কতক্ষন ধরে অপেক্ষা করছি।”(নোভা)
–“আসছি আপু!!'”
বলেই হাঁটা দেয়।তারা চারজনে এখন গাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ায়। ফাহান,আবির,নোভার দৃষ্টি রাহার দিকে।
–“ভাইয়া আপনি রাঙ্গামাটি গিয়েছিলেন??”(রাহা)
–“হ্যাঁ গিয়েছি তো!!কেন??”(আবির)
–“সেখানের রাস্তা কেমন লেগেছিলো আপনার কাছে”!!(রাহা)
–“আঁকাবাঁকা ছিলো।প্রথমবার গিয়েছিলাম তাই ড্রাইভ করতে অনেক ভয় লেগেছিলো।কিন্তু কেন??”
–“আমরা যেখানে যাবো সেখানের রাস্তা আরো ২০গুন ভয়ংকর। পাহাড়ী রাস্তা তার উপর কতটুক উঁচু তা আমি বলতে পারবো না কিন্তু অনেক উঁচু। বেশ সাবধানে গাড়ি ড্রাইভ করতে হয়। সে পাহাড়ের রাস্তা থেকে আপনি একশো মাইল দূর পাহাড়ের রাস্তাও দেখতে পাবেন।এখন কথা হচ্ছে আপনি ড্রাইভ করতে পারবেন নাকি আমি একজন দক্ষ ড্রাইভার হায়ার করবো??”(রাহা)
আবিরের ভিতূ মুখ দেখে ফাহান বলে উঠে…
–“তার দরকার নেই আমি ড্রাইভ করবো।গাড়িতে বসো সবাই।”(ফাহান)
তারপর সবাই গাড়িতে বসে পরে। আবির জায়গার লোকেশন ফোনে দেখতে লাগে কিন্তু ফলাফল শূন্য।
–“ফাহান “বাঙ্গালখালী”’ নামে কোনো জায়গার লোকেশন ম্যাপে পাচ্ছি না।””(ফাহান)
–“আরে ভাইয়া ওইখানে পাবেন না।আমি চিনি আমি পথ দেখিয়ে দিবো!! “(রাহা)
রাহার কথার শুনে ফাহান আর কিছু না বলে গাড়ি স্টার্ট দেয়। ১ ঘন্টা যাওয়ার পর রাহার ফোনটা বেজে উঠে..
তাকিয়ে দেখে রাহান ফোন দিয়েছে…
–“এ্যাঁ রাহান কেন আছোস??”(রাহান কেমন আছো)
–“আপু আঁয় ভালা আছি,,তুঁই কেন আছোস??(আমি ভালো আছি আপু তুই কেমন আছিস)
–“আঁইও ভালা আছি। কল কিল্লে দিয়োছ দে??(কল কিজন্য দিয়েছিস??)
–“তুই হডে ইয়েন ফুসাল-লইবেল্লাই!!(তুই কোথায় সেটা জিজ্ঞেস করার জন্য)
রাহা খেয়াল করেছে তার ভাই কথা গুলো কেমন কেঁপেকেঁপে বলছে। নিশ্চয় কোনো না কোনো গন্ডগল আছে।
–“ওহ এতাল্লাই?? (ওহ এজন্য??)
–“ওয়ো তুই হনডে আপু?? (তুই কোথায় আপু)
–“আঁই বান্দরবান যাইদ্দি!! (আমি বান্দরবান যাচ্ছি)
কথাটা বলার সাথে সাথে কলটা ওইপাশ থেকে কেটে যায়।রাহার সন্দেহটায় ঠিক কেউ রাহানকে দিয়ে ফোন করিয়েছিলো! তাইতো মিথ্যে বলেছে।
ফোনটা ব্যাগে রেখে চোখ তুলতেই দেখে নোভা আর আবির ওর দিকে তাকিয়ে আছে!ফাহানও গাড়ির আয়না দিয়ে রাহার দিকে তাকাচ্ছে একটু পরপর!
–“কী হয়েছে এভাবে তাকাচ্ছেন যে?”(রাহা)
–“এতক্ষন এসব কী ভাষায় কথা বলছিলে রাহা”(নোভা)
–“আমাদের চিটাগং এর আঞ্চলিক ভাষা এটা!”
–ওহহহ!!
এরপর তারা আর কথা বলেনি।শুধু রাহা রাস্তাটা দেখিয়ে দিয়েছিলো ফাহানকে। সবাই শুধু ভয়ংকর সুন্দরে ভরপুর পাহাড়ী রাস্তাটা মুগ্ধচোখে দর্শন করতে লাগলো।ফাহান নিজেও অবাক যে এতো সুন্দর জায়গা আছে।পর্যটনের জায়গা গুলোকেও যেনো হার মানায়। এক প্রান্ত থেকে অপর-প্রান্ত পর্যন্ত শুধু সবুজের সমারোহ!!
(এখানে কল্পিত কিছু নেই সবই বাস্তব)?
দীর্ঘ পাঁচঘন্টা পর তারা বাঙ্গালখালী বাজারে পৌছায়। বাজার পেরিয়েই আর্মিদের ক্যাম্প!! তাই গাড়ি আর্মিদের ক্যাম্পে থামাতে বলে রাহা। তারা তারপর গাড়ি থেকে নেমে যায়। নোভা তো পাগল হয়ে যাচ্ছিলো এতোসুন্দর জায়গা দেখে।তার উপর আকাশ ঘন মেগমেদুরে। কোথাও একটু রোদের ছিটেফুটাও নেই।
–“গাড়ি এখানে থামাতে বললেন কেন??” (আবির)
–“আমার সাথে আসেন আপনারা!!”(রাহা)
তখনি তারা চারজনে আর্মিদের ক্যাম্পের সামনে একটা রিসেপশনের মতো জায়গা আছে সেখানে যায়।
–“ফয়সাল মামা! ফয়সাল মামা!! “(রাহা)
তখনি একজন মধ্যবয়স্ক লোক এসে বের হয়। উনি রাহাকে দেখেই চিনতে পারে। কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছে যে রাহাকেই দেখছে।স্পষ্ট শব্দে বলে উঠেন…
–“নীলা মামনি!!( ফয়সাল মামা)
–“চিনতে পেরেছেন মামা!!”
–“ওরে কলিজা তোকে চিনবো না! ”
বলেই রাহার কাছে এসে জড়িয়ে ধরে রাহাকে তারপর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
–“মামা উনাদের দেখো আমার আপু আর ভাইয়া হয় উনারা। ”
ফাহানরা তো চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে তাদের দিকে।তাহলে তার দেওয়া নামে রাহাকে আরো কেউ ডাকে?? তাহলে নিশ্চয় রাহার আসল নামও নীলা! রাহার কথায় ধ্যান ভাঙে ফাহানের।
তখনি তিনজনে সালাম দেয়। উনি সালাম দিয়ে ককথাবার্তা বলে নেই।
–“মামা গাড়িটা এখানে রেখে গেলাম! যাওয়ার সময় একেবারে নিয়ে যাবো। ততদিনের জন্য খেয়াল রাখবেন!”
–“চিন্তা করিস না যা তোর জন্য মামি-মা অপেক্ষা করছেন হয়তো। ” আর দাড়া হেঁটে যাস না গাড়ি দিয়ে যাস।
–” না তার দরকার নেই আমরা হেঁটে যাবো!!”
–“আপনাদের আপত্তি আছে??”
আবির আর নোভা চট করে বলে তাদের কোনো আপত্তি নেই। তাই ফাহান আর কিছু না বলে হাঁটা ধরে তাদের সাথে।
–“আচ্ছা রাস্তা তো ঠিক আছে!! গাড়ি থেকে নামতে বললেন কেন?? (আবির)
–“বাইরের গাড়ি ভেতরে এলাউ করেন না উনারা।যদিও আমার জন্যে কোনো সমস্যা হতো না।কিন্তু সবার জন্য নিয়ম এক। আমি কেন নিয়ম ভঙ্গ করবো।”
রাহার কথায় যুক্তি আছে তাই কিছু বলেনি আর ফাহানও। যেতে যেতে একসময় ওরা একটা সুন্দর ডিজাইন করা তিনতলা বাড়ির সামনে গিয়ে দাড়ায়।পাহাড়ের কিনারাই একদম বাড়িটা।
কলিংবেল বাজাতেই সুন্দর বয়স্ক একজন মহিলা দরজা খুলে।রাহাকে দেখতেই কলিজা বলে রাহাকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়।
–ওরে আমার কলিজা এতোদিনের আসার সময় হলো তোর। আমারতো বিশ্বাসই হচ্ছে না তুই এসেছিস।
–“আরে নানুমনি! এসেছি বলে এখন দরজার বাইরে দাড়িয়ে রাখবে।”ভেতরে আসতে দাও!
রাহার কথাই উনি ঘোর থেকে বের হয়। তারপর ভেতরে আসতে দেয়। সাথে ফাহানদেরও। রাহা ফাহানদের পরিচয় করিয়ে দেয় তার নানুর সাথে।
তখনি রাহার ময়না আপু দৌড়ে এসে রাহাকে জড়িয়ে ধরে।
–“নীলা এতো বছর পর এসেছিস তুই?? আমি তো ভাবলাম তোর দেখা আর জীবনেও পাবো না!!জানিস কতো মিস করেছি তোকে!!
–” ময়না আপু!! তোমার মিসের ঠ্যালাই আমাকে আসতে হলো এখন ছাড়ো।
সবাই রাহার কথাই হেসে দেয়।এবং ড্রইংরুমের ছোফায় বসে পড়ে।
চলবে..