নীলাম্বরে জোছনা পর্ব-১৬

0
433

#নীলাম্বরে_জোছনা
#নুসাইবা_ইভানা
#পর্ব -১৬

সকালের নাস্তা শেষ করে, নিজের আইডি লগইন করলো মানহা। কাঁপা কাঁপা হাতে মিফতাজকে আনব্লক করলো। প্রথমে ভাবলো টেক্সট করবে।কিন্তু পরক্ষণেই অডিও কল করে বসলো। এখানে এখন সকাল এগারোটা বাজে। তারমানে বাংলাদেশে রাত একটা। এখনো জেগে আছে তো মিফতাজ!

বেডের সাথে হেলান দিয়ে বসে গিটারে টুংটাং সুর তুলে গান গাইছে মিফতাজ।

বড় ইচ্ছে করছে ডাকতে,
তার গন্ধে মেখে তাকতে,
কেন সন্ধে সন্ধে নামলে সে পালায়!
তাকে আটকে রাখার চেষ্টা, আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তেষ্টা!
আমি দাঁড়িয়ে দেখছি শেষটা জানালায়।
বোঝেনা সে বোঝে না
বোঝেনা সে বোঝে না
বোঝে না, বোঝে না, বোঝেএএএএ না
পায়ে স্বপ্ন স্বপ্ন লগ্নে তার অন্য অন্য ডাকনাম।
তাকে নিত্য নতুন যত্নে কে সাজায়!

সব স্বপ্ন সতি হয় কার?
তবু দেখতে দেখতে কাটছি
আর হাঁটছি যেদিক আমার দু’চোখ যায়।

বোঝেনা সে বোঝে না
বোঝেনা সে বোঝে না
বোঝে না, বোঝে না, বোঝেএএএএ না

হুট করে মোবাইলের রিংটোনে বিরক্ত হয়ে মোবাইলটা সাইলেন্ট করার জন্য হাতে নিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে রয়। যেনো হার্ট তার ক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে। দুইবার রিং হয়ে কেটে যায়। তৃতীয় বার রিং হতেই রিসিভ করে কানের কাছে ধরে,
মানহা কিছু সময় চুপ করে থেকে বলে, আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো!
‘তার আগে আমার কথার উত্তর দিতে হবে৷
ভালোবাসা কখনো ফুরিয়ে যায়?
‘আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই মিফতাজ আয়মান!
‘মনে আছে তোমাকে আমি বলেছিলাম, আমাদের মাঝে কখনো বিচ্ছেদ হলে, সেটা তোমার জন্যই হবে!
‘তখন তো জানতাম না, আপনার চেহারার পিছনের মানুষটাকে!
‘এখন খুব ভালো জানো বুঝি!
‘জানার ইচ্ছে নেই, শুধু শেষবারের মত একটা অনুরোধ ছিলো।

‘বলতে পারো রাখা না রাখা আমার ব্যাপার?
‘জীবন এগিয়ে গেছে, এখন আর নিজের ঘৃণ্য অতীত না টানলেই নয়!
‘এটা আমি করবোই তোমাকে নিমন্ত্রণ রইলো আগামীকাল রাত বারোটায়। তুমিও না জানা কথাটুকু জেনে নিও।
‘শুনেন আমার৷ সাথে আর কখনো কোন রকম যোগাযোগ রাখবেননা!
‘আচ্ছা রাখবো না। তোমার এই কথাটা রাখবো।খুব তাড়াতাড়ি তুমি নিজেই আমার কাছে ভালোবাসা চাইবে!
‘চেয়ে নেয়া জিনিসে আমি কোন ভালোবাসা খুঁজে পাই না!
‘তুমি কি জানো আপন মানুষ ছাড়া কেউ চাইতে পারেনা। চাওয়াটাই হচ্ছে অধিকার আর চাওয়ার পর দেয়াটা ভালোবাসা।
‘তবে তোমার আমার পরিসংখ্যান ভুল!
আমার কাছে চাওয়ার পরে পাওয়াটা হচ্ছে জোড় করে আদায় করা! আর স্বইচ্ছায় কেউ দিলে সেটা হচ্ছে ভালোবাসা।
‘এই যে বললে জোড় করে পাওয়া!অধিকার ছাড়া কি জোড় করা যায়!
‘সব জোড়ে কি অধিকার থাকে?
‘আমি চাইলাম তুমি দিলে, আর না চাইলে চুপ করে সরে রইলে তাহলে এখানে ভালোবাসা কোথায়? বরং আমি না করছি তাও তুমি দিচ্ছো সেটাই আমার কাছে ভালোবাসা। আমি হাজার বার বলছি আমাকে কল করবে না। কিন্তু আমার না করার মধ্যে তুমি হ্যা খুঁজে নিয়ে কল করেই যাচ্ছো এটাই ভালোবাসা।
‘তারমানে বলতে চাইছো আমাদের মধ্যে ভালোবাসা নেই!
‘হয়তো,দেখো আমি বললাম তুমি আর যোগাযোগ রাখবে না। তুমি মেনে নিলে।
‘এতো কিছুর পরেও আশা করো আমি জোড় করে তোমাকে ফেরাবো! তুমি না চাইলেও তোমায় ভালোবাসবো!
‘আমি না চাইলে তুমি ভালোবাসবে না!আর আমি ভালোবাসা চেয়ে নেবো না!

‘তুমি না চাইলে আমি কখনো ফিরবো না। আমি না বললেও ভালো থাকবে, তবুও ফর্মালিটি রক্ষার্থে বলছি, ভালো থেকো।

‘আমি ফর্মালিটি ও রক্ষা করবো না। আপনার ইচ্ছে যেমন খুশি থাকেন!
‘সময় যত দ্রুত পাল্টায়, মানুষ তারচেয়ে দ্রুত পাল্টে যায়।

‘তবে একটা কথা মনে রাখো, তুমি ফিরবে আমার কাছেই ফিরবে! তুমি নিজে এসে চাইবে আমার ভালোবাসা!
‘এমন দিন কখনো আসবে না।আমার আত্মমর্যাদা কখনো আমাকে এরকম কিছু করতে দেবে না।
বলেই ফোনটা কেটে দিলো। মোবাইল রেখে হাঁটুতে মুখ গুঁজে ফুপিয়ে কেঁদে ওঠে মনে মনে বলে, ামি নিজেকে কখনো ছোট করবো না। কখনো না!

মিফতাজ মোবাইলটা রেখে বলে, খুব তাড়াতাড়ি তুমি আসবে আসবেই, কিন্তু এতো সহজে তোমাকে ক্ষমা করছি না!

✨প্রিয় মানুষটার বাহুতে আবদ্ধ আয়াত, কত প্রতিক্ষা কত রাগ অনুরাগের পরে একে অপরের এতে কাছে আসতে পেরেছে!

আরহাম আয়াতের হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,আচ্ছা তুমি যে চিঠিতে বলেছিলে, আমাকে ভালোবাসো না!
‘আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো।কিন্তু বারবার বলার পরেও দেশে ফিরতে চাইছো না! তাই এই চিঠি লিখা।

‘খুব চালাক তো তুমি!

‘তোমাকে ফেরাতে এতোটুকু করতেই হতো!
আরহাম আয়াতের চোখে চোখ রেখে বলে, আমার ভিনদেশী তারা! আমার আমাবস্যা রাতে তুমি আলোর ফোয়ারা!

‘আয়াত হেসে বলে, ভালোই ছন্দ বলতে শিখেছো।
‘ভালোবাসা মানুষকে কত কিছু করায়।

‘বাসায় যাবো।
‘যাও কালকে আসছি একেবারে নিজের করে নিতে।
‘আর তর সইছে না বুঝি!
‘উঁহু একদম না৷ ইচ্ছে করছে তোমাকে নিজের মধ্যে লুকিয়ে রাখি।

‘এই চলো তাড়াতাড়ি যেতে হবে। আচ্ছা একটা কথা জানো!
‘কি?
‘আগামীকাল মানহার বার্থডে। কিন্তু মেয়েটা কত দূরে!আমরা ছাড়া ওর কে আছে বলো!

‘মন খারাপ করতে হবে না। বিয়ের পর হানিমুনে কানাডা চলে যাবো। কেমন!

‘সত্যি!
‘একদম সত্যি। আচ্ছা মনে থাকে জেনো। এবার চলো বাসায় ফেরা যাক।


বারান্দায় আনমনে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে আদুরী।

আদূরী আকাশের দিকে দৃষ্টি রেখে বলে,’মনের আকাশটা আজ রাতের মতই কালো! সাজানো স্বপ্নগুলো হয়ে গেছে এলোমেলো!
আয়াত আদুরীর পাশে দাঁড়িয়ে বলে,যখন পৃথিবীর সব আলো নিভে যায়! তখন #নীলাম্বরে_জোছনা উঁকি দেয়!
‘আমি কোন মুখে ওর সামনে দাঁড়াবো! আমি তো একটি বারের জন্যও ওর পরিস্থিতি বুঝতে চাইনি। নিজের দিকটা ভেবেছি ওর কথা ভাবিনি।
‘এবার যাও তাকে জড়িয়ে ধরে বলো,বাকি জীবনটা তোমার দুঃখগুলোর ভাগ নিতে চাই! দেখবে পরম যত্নে আগলে নেবে।

‘সবাই কি আরহাম হবে?
‘সবাই আদিলও হবে না। যে ছেলেটার এতো সফলতার পরেও তোমার জন্য নিজেকে আগলে রেখেছে। সে জানেও না তোমাকে এ জীবনে আর পাবে কিনা! তাহলে তার ভালোবাসা কতটা নিখুঁত বলো!ভুলতো মানুষেরই হয়! ভুলকে শুধরে নিতে হয়, আগলে রাখতে হয় না।
‘জানিস সেদিন যখন আদি ওর কাজিনকে নিয়ে এসে বলেছিলো, ও আমার সাথে টাইমপাস করেছে, আসলে আমাকে ভালোবাসে না৷ সেদিন আমার দুনিয়া অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছিলো। এরজন্য ওর চোখে আমার ভালোবাসার আলো দেখতে পারিনি। একবার ওর দৃষ্টিতে দৃষ্টি রাখলে আমি বুঝতাম ও আমার ছিলো আমার আছে! কিন্তু এই হাতে আমি ওকে চড় মেরেছিলাম। এই ঠোঁট দিয়ে আমি ওকে কটুকথা শুনিয়েছি। আচ্ছা তখন ওর হৃদয়টা ক্ষতবিক্ষত হয়েছে আর আমি দেখলাম না। কথাগুলো বলছে আর চোখ থেকে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
‘আয়াত আদুরীর চোখের পানি মুছিয়া দিয়ে বলে,তোমার ভালোবাসা দিয়ে সব ক্ষত সারিয়ে দাও। ভালোবাসা হলো ম্যাজিকের মত এক নিমিষেই সব রাগ অভিমান সারিয়ে দিতে পারে!যে মানুষটা তোমাকে এতো ভালোবাসে, যে মানুষটা তোমার জায়গা অন্য কাউকে দিতে পারেনি। তাকে নিজের সবটুকু দিয়ে আগলে রাখো।
‘হুম আমি আবার ফিরিয়ে আনবো আমার আদিকে!ও আমাকে কখনো ফেরাতে পারবে না।এবার আর ছাড়বো না একদম নিজের আঁচলে বেঁধে রাখবো।
‘ইশশ এতো সুন্দর সময়ে মানহাটা আমাদের সাথে নেই! ও থাকলে তিন বোন নিজেদের সুখটুকু ভাগাভাগি করে নিতাম।
‘আদুরী বলে আমি মানহার সাথে রুড বিহেভ করেছিলাম। মেয়েটা তোর ভালো করতে চেয়েছিলো আমি ভুল বুঝে মেয়েটাকে দূরে ঠেলে দিলাম। বুঝিয়ে দিলাম রক্তের সম্পর্ক না থাকলে কেউ আপন হয় না!
‘কি বলছে আপু! তুমি মানহার সাথে খারাপ ব্যাবহার করেছো! কিন্তু কেনো? তুমি জানোনা আমাদের জন্য ও হাসতে হাসতে নিজের জীবনও দিয়ে দিতে পারে!
‘আসলে খারাপ সময় মাথা ঠিক থাকে না। তবে সে সময় আসল রুপ বেড়িয়ে আসে, নয়তো কিভাবে ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারলাম!

রাহাত সাহেব একটা চেয়ারে বসে আছেন, তার হাতে একটা তিন মাসের বাচ্চার ছবি।ছবিটা নিজের ওয়াইফ রেবেকা বেগমকে দেখিয়ে বলে, আমরা যা অন্যায় করি সবটা সময় মত প্রকৃতি আমাদের ফেরত দেয়!

#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে