নীরবে_নীরবে পর্ব ৮..
দিলু রান্না সেরে সাখাওয়াতের ঘরে গেল। সে এদিক-ওদিক জিনিস ছড়িয়ে রেখেছে। দিলু একে একে সবই গোছাতে লাগল। মাঝে মাঝে সে তাকাতে লাগল, কী একটা কাগজের দিকে ঝুঁকে পড়া সাখাওয়াতের দিকে। ইশ, এতটা মনোযোগ দিয়ে যদি সে দিলুর দিকে তাকাত। দিলু মুখ বাঁকিয়ে তার বই গোছাতে লাগল। লোকটি মোটা মোটা বই পড়তে শুরু করেছে। সারাটা দিন তো বাইরে থাকেই। আবার বাকিটা সময় বই নিয়ে পড়ে থাকে। মাঝে মাঝে তার ইচ্ছে হয়, বইগুলো তার মাথার উপর ছুঁড়ে মারতে। সপ্তাহ দুই-তিনেক পার গেছে। অথচ লোকটা দিন দিন এককুনোই হয়ে যাচ্ছে। দিলু বেশ কয়েকবার ঝাড়ি দিয়েছে। কিন্তু সাখাওয়াত কিছু বলেনি। কেবল যখন দিলু এই ঘরে চলে আসার কথা বলে তখনই সে কথা বলে উঠে।
“শুনুন, আজ ছুটির দিন। ভিন্ন কিছু একটা করুন। সারাক্ষণ বইয়ের মধ্যেই কেন লম্বা নাকটা গুঁজে রাখেন?”
সে নাক তোলে তাকালো। দিলুর হাসি পেল, কিন্তু তা দমিয়ে রাখল।
“কী করব আমি? সকালে বাইরে হেঁটে এসেছি।”
“এখন কী করবেন?” দিলু কিছুক্ষণ ভেবে বলল, “নাশতা বানাতে পারেন।”
“নাশতা?”
“যাই ইচ্ছে হয়, বানাবেন। আসুন। তেল, ময়দা সবই আছে।”
সাখাওয়াত ভ্রূ কুঁচকে তাকালো। বুদ্ধিটা মন্দ নয়। বই আর ভালো লাগছে না। অগত্যা সে উঠে রান্না ঘরে যায়। এখানে দিলু আসার আগে সে রান্নার কাজ করেছে ঠিক, কিন্তু তরকারি ব্যতীত আগে কিছু করেনি। পরক্ষণে দিলু এলো তাকে সাহায্য করতে।
“কী করতে চান?”
“বিকেলের জন্য পরোটাই করি।”
“ঠিক আছে। পানি গরম করুন।”
দিলু যা যা বলল সাখাওয়াত সবই করে গেল। সাখাওয়াত শেষ পরোটা তেলে দেওয়ার পর দিলু লক্ষ করল, দুপুর অবধি তারা বানিয়ে গেছে। এতগুলো পরোটা বোধ হয় বিল্ডিঙের সবাইকে দেওয়া যাবে। সাখাওয়াতের দিকে তাকিয়ে সে ভাবতে লাগল কেন সে তাকে বাধা দেয়নি। কারণটা হয়তো দিলু তার সাথে সময় কাটাতে চায়। আচমকা সাখাওয়াত তার একটা আঙুল মুখে দিলো।
“কী হয়েছে?”
“কিছু না।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।
গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা
◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।
আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share
“দেখি তো। আঙুলের ডগা যে দেখছি লাল হয়ে গেছে।” সে তড়িঘড়ি করে তার আঙুল ঠান্ডা পানির বাটিতে ডুবিয়ে দেয়। সাখাওয়াত তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে রইল। দিলুর মনে হলো, এই বুঝি আবারও আগের সাখাওয়াত ফিরে এসেছে। বলাকওয়া ছাড়াই সাখাওয়াত তার হাত ছেড়ে চলে গেল। দিলু দরজার দিকে চেয়ে রইল। নিরর্থক ভাবছে, তাদের সম্পর্কের কী কোনো গতি হবে না? নাকি দিলুকেই তার ভালো লাগে না? পোড়ার গন্ধ পেয়ে সে তড়িঘড়ি করে চুলা বন্ধ করে দেয়।
তার কাছে কোনো ঘরেই যেতে ইচ্ছে হলো না। সে সামনের ঘরের সোফায় শুয়ে পড়েছে। সাখাওয়াতকে ছাড়া ওই পানসে রুমে সে অনেকদিন থেকেছে। আর ভালো লাগছে না। দ্বিতীয় রুমে সাখাওয়াত নিজেই যেতে দেবে না। বিষণ্ণতা কবে তাকে ঘুমের জগতে নিয়ে গেল সে টের পায়নি। নইলে সে দেখতে পেত, দরজার কাছে সাখাওয়াত দাঁড়িয়ে আছে। তার দিকে সে চেয়ে আছে।
এখানে আসার পর দুইদিন না যেতেই সে কাজে যাওয়া শুরু করেছিল। নিজেকে সে কোনো একটা কিছুতে ব্যস্ত রাখতে চায়। অনেকদিন শুয়ে-বসে সে কাটিয়েছে। পুরোপুরি সুস্থ হয়ে না উঠলেও আর কিছু ভালো লাগছিল না। অনেক সময় সবকিছু ঠিক হয়ে যাওয়ার ফলেও মনে এক ধরনের শূন্যতা বিরাজ করে। জীবনে উথাল-পাতাল থাকা উচিত। নইলে তা বড্ড একরোখা হয়ে যায়। এখন সব সমস্যা মিটে গিয়ে চারিদিকটা নিস্তব্ধ করে দিয়েছে। তাছাড়া তার মনে এখন কোনো চাহিদা নেই। জীবন অনেক কিছু ছিনিয়ে নিয়েছে। আপনজনেরাও আস্তে আস্তে সরে পড়েছে। তাদের প্রতি বলতে গেলে আর কোনো টান নেই। তাছাড়া যে সত্যের বোঝাটা সে বয়ে চলেছে তা তাকে ভুলিয়ে দিয়েছে জীবনে স্বাদ বলেও কিছু থাকে।
সে নিঃশব্দে গিয়ে দিলুকে ঘরে এনে শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণ ওই ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে থেকে সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা বন্ধ করে চলে গেল।
.
দিলু স্তব্ধ হয়ে রান্নাবান্না করতে লাগল। পরোটাগুলো এখনও অস্পর্শ অবস্থায় রয়েছে। সে বারবার মূল দরজার দিকে তাকাচ্ছে। সাখাওয়াত এখনও ফিরে আসছে না। তার আর তর সইছে না। আজ সে তাকে অনেক প্রশ্ন করবে। তার আর সহ্য হচ্ছে না। স্পষ্ট করে বলতেই হবে লোকটা কী চায়। দিলু চুলা বন্ধ করে আওয়াজ করে ঢাকনা বসিয়ে দিয়ে হনহন করে হেঁটে ব্যালকনিতে চলে এলো। মাথাটা ব্যথায় টনটন করে ফেটেই যাওয়ার জোগাড়। নিচের রাস্তাটা এখনও নির্জন। দূরে তাকিয়ে সে দেখল মেয়েটি তার দিকে চেয়ে আছে। সে কি বুঝতে পারছে, আজ সূর্য পশ্চিম দিকে উঠেছে? আজ দিলু সাখাওয়াতের উপর রাগ করেছে?
“বাহ্, অসময়ে উত্তপ্ত হওয়া কেউ যেন তোমার কাছ থেকে শেখে। যে লোকটা এতদিন মারল-ধরল, তাকে কিছু করলে না। আর আজ যে লোকটা তোমাকে বিছানায় যত্ন করে শুইয়ে দিলো, তার উপর রাগ দেখাচ্ছ?”
“দেখাব না কেন? ও আমার জন্য সবসময় ধাঁধাঁ বানিয়ে রাখবে। আর আমি সমাধান না করতে পারায় চুপচাপ মুখে হাত রেখে চেয়ে থাকব?”
“কী প্রশ্ন করবে?”
“লোকটা কী চায়। কতদিন এভাবে থাকবে। এসবই জিজ্ঞেস করব। জিজ্ঞেস করব, কতদিন ওর পথ চেয়ে থাকতে হবে আমার। বলব, ওর বাবাই আমাকে…”
“তোমাকে কী?”
“কিছু না।” দিলুর মেজাজ ঠান্ডা হয়ে গেল। সে কী বলে দিচ্ছিল? যেই দিলু পেছনে ফিরে তাকায়, তার বুকের ভেতরের বাতাস আটকা পড়ল।
“আপনি কবে এসেছেন?”
সাখাওয়াত অন্য ব্যালকনির দিকে তাকালো। সে দিলুর হাত আলতো করে ধরে তাকে ভেতরে এনে বসাল। নিজে তার পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসল।
“কার সাথে কথা বলছিলে?”
তার হাতটা সে এখনও ধরে আছে বলে দিলুর সঙ্কোচ হচ্ছে। ইশ, সে রাগের বশে জোরে জোরে ব্যালকনিতে কথা বলছিল টের পায়নি। এই রাগটাকে সে এখন পারলে পুড়ে ফেলত। এতদিন মেয়েটির সাথে মনে মনে কথা বলত। আজ কিনা সরাসরি কথা বলিয়ে দিয়েছে।
“কী হলো? বলছ না কেন? কার সাথে কথা বলছিলে?”
“ওই দূরের ব্যালকনিতে একটি মেয়ে বসেছিল তার সাথে।”
“ওখানে কোনো মেয়ে বসে থাকে না। ওটা অনেকক্ষণ যাবৎ খালি রয়েছে। আমি দেখেছি, তুমি নিজের সাথে কথা বলছিলে।”
“না, এটা.. এটা সম্ভব নয়। ওভাবে পাগলেরা বলে।” বলতে বলতে তার চোখে পানি এসে গেল। সাখাওয়াত তার হাত ছেড়ে অন্য এক দিকে তাকিয়ে রইল।
“আমিই বুঝি তোমাকে পাগল করিয়ে দিয়েছি। নইলে তুমি এতো ডিপ্রেসড হয়ে একা একা কথা বলতে না।”
দিলু কী বলবে বুঝে উঠতে পারছে না।
“চলো খেয়ে নেই। এগারোটা বাজছে।”
দিলুর চোখ বিস্ফারিত হলো। এগারোটা? কিন্তু সে কিছু বলল না। তারা নীরবে খাবার খেল।
“তোমার কিছু বলার আছে?” সাখাওয়াত খাওয়া শেষে বলল।
দিলু মাথা নাড়ল। সাখাওয়াত দীর্ঘশ্বাস ফেলে উঠতে যাবে, দিলু তার হাত ধরে ফেলল।
“আপনি কী চান? কেন সবকিছুকে জটিল করে ফেলছেন? আমরা কি অন্যান্যদের মতো স্বাভাবিকভাবে থাকতে পারি না? আমি জানি, আপনি ছাড়া আমাকে বিছানায় রেখে আসার মতো এখানে কেউ নেই। আমি এও জানি, আপনি নিজেকে যা দেখাতে চাইছেন, আপনি তা নন।”
সাখাওয়াত জ্যোতিহীন দৃষ্টিতে তার দিকে তাকালো, “আমি তোমার যোগ্য নই।” বলে সে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।
“খুলুন দরজা।”
“চলে যাও এখান থেকে। আমি তোমাকে ভালো একটা জীবন দিতে পারিনি।”
দিলুর কেন যেন মনে হচ্ছে, সাখাওয়াতের গলার স্বরটা ভিন্ন হয়ে গেছে। লোকটা দরজার ওপাশে কি কাঁদছে? দিলু আরও জোরে দরজায় বাড়ি দিতে লাগল।
“দরজা খুলুন। প্লিজ। নিজেকে আর কতদিন এভাবে গুটিয়ে রাখবেন?”
আরেকবার বাড়ি দেওয়ার পর দরজাটা খুলে গেল। সাখাওয়াত পেছনে ফিরে থেকেই বলল, “তাহলে তুমি জানতে আব্বাই তোমাকে সেইরাতে আমার রুমটা দেখিয়েছিল।”
দিলুর মুখ হা হয়ে গেল, “আমি.. আমি নিশ্চিতভাবে জানি না। আমার খুব ঘুম পাচ্ছিল। ওই আওয়াজটা উনার মতো মনে হয়েছে।”
সাখাওয়াত যখন দিলুর দিকে তাকালো, তখন দিলু একজোড়া লাল চোখ দেখতে পেল।
“আব্বা এমনটা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছিলেন। উনাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। প্লিজ।” বলে সে হাতজোর করল।
“একি করছেন?” কিন্তু তার হাতগুলো সহসা উঠছে না।
“আব্বা তোমার মাকে..” সাখাওয়াত বলতে না পেরে অন্যদিকে ফিরে গেল, “লাইটটা বন্ধ করে দেই?”
সে বাতি নিভিয়ে দিলো। এখন কেউ কাউকে দেখতে পাচ্ছে না। এভাবে কথা বলতে হয়তো সহজ হবে। দিলুর মনে হলো, সময়টা থমকে আছে। কখনও সে ওই রাতের ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে যায়নি। তার মাথায় এতদিন আসেনি, আমজাদ নিজ ছেলের রুম চেনার সত্ত্বেও তাকে কেন ওখানে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ের কী ব্যাপার এসবে?
অন্ধকার থেকে সাখাওয়াতই উত্তর দিলো, “তোমার মাকে তিনি পছন্দ করতেন। আমি আর তুমি যেভাবে বুঝতে পারছি, এটা অবৈধ, তোমার মাও তা জানত। তিনি উনার থেকে দূরে-দূরেই থাকতেন। রোমেনার বিয়ের প্রস্তাব তিনি নিজেই ফিরিয়ে নিয়েছিলেন আব্বার মনোভাবনা বুঝতে পেরে। আর আব্বা এতে অনেক আহত হয়েছেন, যার ফল আমাকে আর তোমাকে ভুগতে হয়েছে।”
দিলু রুদ্ধশ্বাসে বসে রইল। একসময় উঠে বাতি জ্বালিয়ে দিলো।
“আপনি এসব আগে থেকেই জানতেন?”
“না দিলু। আব্বা মারা যাওয়ার আগে আমাকে এসব গাড়িতে বলে ক্ষমা চেয়েছেন, বিনা দোষে আমাকে ফাঁসানোর জন্য। আর আমি কিনা তাঁকে ক্ষমা করিনি। এর জন্য আমি নিজেকেও কখনও ক্ষমা করতে পারব না।” সে দুই হাত দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগল। দিলু তার কাছে গেল।
“এভাবে কাঁদবেন না।”
“দিল, আমি তোমারও যোগ্য নই। আমি তোমাকে বিশ্বাস করিনি। আমার ভালোবাসায় খাদ ছিল।”
“এমনটা বলবেন না। নইলে আপনি এভাবে এসব কথা আমাকে বলতেনও না।”
সে বলে গেল, “..আমি তোমার উপর এতো নির্যাতন করেছি যে, ক্ষমা চাইলেও তার সমতুল্য হবে না। বিশ্বাস করো, আমি এতটা কঠোর হয়েছি সময়ের কারণেই। মা-বাবা, ভাই, বন্ধু সবাই আমার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। আমি নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েছি। আমার ভেতরটা শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তবু একটা কথা না বললে নয়, যতবার তোমাকে দেখি আমাদের ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে যায়। আমি তোমাকে নীরবে ভালোবেসে গেছি দিলু। এরচেয়ে বেশিকিছু আমি করতে পারলাম না। আমার শাস্তি পাওয়া উচিত।”
“ঠিকই বলেছেন। আপনার শাস্তি পাওয়া উচিত। এদিকে আসুন।”
সাখাওয়াত দিলুর কথা নীরবে শুনতে লাগল, যেভাবে দিলু করত, জানে না তাকে কী করাবে। দিলু তাকে তাদের ঘরে নিয়ে গেল।
“ব্যালকনির দরজার কাছে দাঁড়ান।”
দিলু রডের সাথে রশি বেঁধে দরজার উপর চাপিয়ে নিয়ে এসে সাখাওয়াতের হাতের কবজি বাঁধল। সাখাওয়াতের ঠোঁটের কোণে মৃদু একটা হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে, যেটা একসময় দিলু তার সঙ্গ পেলে দেখা যেত। দিলু একটা কাপড় এনে তার চোখ বেঁধে দিলো। সাখাওয়াতের খুব অস্বস্তি হচ্ছে। দিলুকে তার দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। অনেক বছর হলো, তাদের মুহূর্ত এসেছে একে অপরের দিকে ভালোবাসা নিয়ে তাকানোর। কিন্তু সে ধৈর্য ধরে রইল। হঠাৎ ঠান্ডা কিছু তার গায়ে স্পর্শ হতেই তার মনোযোগ ফিরে এলো।
“আমি আপনাকে ছুঁব। আপনি পানি ঢেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আমি পানি দিয়ে ছুঁব। এটাই আপনার শাস্তি।”
সাখাওয়াত কিছুই বলল না। কিন্তু ভেতরে একটা বাঘ জঙ্গল কাঁপিয়ে গর্জন করছে। বেশ কিছুক্ষণ চারিদিক শুনশান রইল। দিলু কোথাও যেন গেছে। সাখাওয়াত ধৈর্য নিয়ে অপেক্ষায় রইল। কিন্তু কিছুই হলো না। একসময় তার চোখের কাপড় দিলু খুলে দেয়। সে দেখতে পেল সবুজ শাড়ি পরা এক অতীব সুন্দর মেয়েকে।
সাখাওয়াত চোখ জ্বলে উঠল, “প্লিজ আমার হাতের বাঁধন খুলে দাও।”
“না দেব না। আপনাকে ছুঁতে দিতেন?”
“প্লিজ।”
“তাহলে বলুন, আমাকে নিয়ে ব্যালকনিতে বসে জ্যোৎস্না স্নান করবেন।”
“হ্যাঁ হ্যাঁ করব।”
সাখাওয়াতের হাত মুক্ত হলো। সে একদৃষ্টে দিলুর চোখের দিকে তাকিয়ে রইল। সে আগে কেন এভাবে তাকায়নি? নিশ্চয় অনেক আগেই ভেতরটা নরম হয়ে আসত।
“ঠিক এটাই। আপনি বুঝতে পারেননি, আমাদের সম্পর্কটা ঠিক করে ফেললে আপনি মুক্তি পেতেন স্বাদহীন একটা জীবন থেকে।”
অতঃপর তার একটা হাত ধরে সে তাকে নিয়ে ব্যালকনিতে চলে গেল। আজ দূর ওই বিল্ডিঙের ওই ব্যালকনিতে কোনো মেয়ে বসে নেই। এখানে ফিরে আসার পর যখন দিলু আনন্দে ছিল, তখনও মেয়েটা ছিল না। মনে হয়, এখন থেকে সে আর থাকবে না।
(সমাপ্ত…!)
লেখা: ফারিয়া কাউছার