নিয়তি পর্ব-১৫+১৬

0
1270

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন(কন্ঠ)
#পার্ট১৫

বাহির থেকে এসেই বিভোর বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে ফোনের স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি দেখতে থাকে।এরই মাঝে হৃদি কফি নিয়ে হাজির হয়।উঁকি দিয়ে আবছা আবছা একটা মেয়ের ছবি দেখতে পায়।হৃদি গলা ঝাড়তেই বিভোর লাফ দিয়ে উঠে পড়ে।

-কাকে দেখছিলেন?
-ক..ক..কই!কাওকে দেখছি না।
-নাহ মনে হলো কোনো মেয়েকে দেখছেন তাই জিজ্ঞাস করলাম আর কী!বাই দ্যা ওয়ে,, এই নিন আপনার কফি।

কথাটা বলে হৃদি বিভোরের হাতে কফির কাপটা দেয়।বিভোর কফির কাপে চুমুক দিয়ে বলে,,

-আপনার ভাবির সিজারের ডেট কবে?
-সামনে সপ্তাহের মঙ্গল বারে, কেন?
-নাহ এমনি।
-সিঁথি দি তো বিয়ে করে বাচ্চার মা হতে চলেছে।আপনি জোড়া বাধবেন কবে?
-শীঘ্রই। আপনার সাম্যদাও তো বাবা হবে দু দিন পরে।আপনি মিসেস হচ্ছে কবে তাহলে মিস?
-মনের মতো মানুষ পেলে করে ফেলবো ফরজ কাজটা।

কথাটা বলেই হৃদি হেসে দেয়।বিভোরও হেসে দেয় হৃদির সাথে। হৃদি বিছানায় বসে বিভোরকে জিজ্ঞেস করে,,

-আপনার আর অন্যকাওকে পরে ভাল্লাগে নাই?
-লাগবে না কেন?লাগছে।
-অহ আচ্ছা তাহলে ফোনে তার ছবিই দেখছিলেন?বাই দ্যা ওয়ে সে জানে?
-নাহ।
-হেল্প লাগলে বলিয়েন।
-ভাবতেছি তাকে মনে কথাটা বলে দেবো,কিন্তু কিভাবে বলবো?
-কিভাবে বলবো মানে?আপনি বাচ্চা ছেলে নাকি?শিখিয়ে দিতে হবে?
-শিখিয়ে দিলে খারাপ কী?

হৃদি হাসতে হাসতে বলে,

-কে শেখাবে আপনাকে?
-আপনার মতো বন্ধু থাকতে আর অন্য কাওকে লাগে?
-আচ্ছা আমি লিখে আপনাকে দেবো নি

কথাটা বলেই হৃদি চলে যায়।রাত্রে খাওয়ার পরে হৃদি বিভোরের ঘরে আসে।হাতে একটা কাগজের পাতা।বিভোর তখন ফোনে ব্যস্ত।হৃদি বিভোরের হাতে কাগজটা দিয়ে বলে,,

-এটা পড়ে দেখুন।

বিভোর মন দিয়ে কাগজটায় চোখ বুলায়।কাগজের লেখা দেখে বিভোরের চক্ষু চড়কগাছ। কাগজটায় লেখা ছিলো,,

প্রিয় (তার নাম),,

জানিনা তোমার মধ্যে আমি কী দেখলাম।প্রথম দেখায়ই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।মায়ারী চোখ,দীঘল কালোচুল,মুক্তোর মতো ঝকঝকে দাঁতের হাসি আমায় পাগল করে দিয়েছে।ঘুম কেড়ে নিয়েছে আমার।আমি এখন প্রতিরাতে বেল্কনিতে বসে থাকি।রাতের আকাশে চাঁদের জায়গায় তোমায় দেখতে পাই।
i can feel that..তুমি আমার সব.. দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ…
At last I want to say i love you…will you be my mather’s daughter in law??

কাগজটা পড়ে বিভোর কী করবে বুঝতে পারছে না।হৃদির কাছে সে এক গ্লাস পানি চায়।পানি এনে দিলে বিভোর সেই পানি ঢগঢগ করে খেয়ে ফেলে।হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,,

-এইগ্ল্যা কী লেখছেন?এভাবে কাওকে প্রপোজ করলে সে জুতা ছুড়ে মারবে।
-মেয়েরা ডিফ্রেন্ট কিছু পছন্দ করে তো!তাই আর কী…
-থামেন ভাই!বুঝছি আমি

হৃদির কথা শেষ হওয়ার আগে বিভোর কথাটা বলে হৃদিকে থামিয়ে দেয়।হৃদি কী করবে বুঝতে পায় না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যেতে নিতে নেয়।ঠিক তখনই বিভোর পেছন থেকে ডাক দেয়,,,

-জ্বী বলুন
-আপনার কী ফুল পছন্দ?
-কেন?
-বলেনই না মিয়া!
-সাদা গোলাপ।
-আচ্ছা এখন যান

হৃদি আর কিছু বলে না।চুপচাপ নিজের ঘরে চলে যায়।

বিভোরের ডাক শুনে হৃদি ছাদে এসেছে অথচ বিভোরেরই দেখা নেই!এই লোকটা নাকি আবার পুলিশ।১০মিনিট যাপৎ দাঁড়িয়ে আছে হৃদি অথচ তার খবর নেই।চিলেকোঠার বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে ছিলো হৃদি। এমন সময়ই বিভোর আসে।নিঃশব্দে হৃদির পেছন গিয়ে দাঁড়ায়।

-প্রিয় অমক আই মিন হৃদি,,
জানি না তোমার মানে আপনার মধ্যে কী দেখলাম।প্রথম দেখায়ই তোমার প্রেমে পড়ে গেছি।মায়াবী চোখ, দীঘল কালোচুল,যদিও আপনার চুল কিছুটা বাদামি!গজ দাঁতের হাসিতে আমি প্রথমে পাগল না হলেও ধীরে ধীরে পাগল হতে চলেছি। আমি প্রতি নয় হঠাৎ রাতে বেল্কনিতে বসে থাকি।
I can feel that আপনি আমার সব, দাঁড়ি কমা ফুলস্টপ।

At last i Want to say i love you…will you be my mother’s daughter in law?

কথাগুলো বিভোরের মুখ থেকে শুনে হৃদি চমকে যায়।কিছু বুঝে উঠতে পারে না।হা করে তাকিয়ে থাকে সে।বিভোর তার সামনে তুরি বাজালে হৃদির ধ্যান ভাঙে।

-কী হলো?
-আপনি মেইবি রঙ এড্রেসে আসছেন।
-নাহ ঠিকানা ঠিকই আছে।আর এই নিন আপনার সাদা গোলাপ।আমি সিনামার স্টাইলে প্রপোজ করতে পাই না।যা শিখায় দিছেন তাই করছি।

কথাটা বলে বিভোর চলে যায়।হৃদি হা করে তাকিয়ে থাকে বিভোরের যাওয়ার পানে। সে একবার ফুলের দিকে তাকায় একবার বিভোরের দিকে তাকায়।নিজের চোখে বিশ্বাস হচ্ছে না।একটু আগে যা ঘটে গেলো সেগুলো কী আদোও সত্য?

চলবে,,,

#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১৬

-উনি সিগারেট খায় জানতাম।কিন্তু গাঁজা খান জানতাম না।তা না হলে…দেখলো একজনকে প্রপোজ করলো আমায়?হয়তো রিহার্সাল ছিলো।নাহ!রিহার্সাল থাকলে তো পরে জিজ্ঞেস করতেন কেমন হয়েছে।আর ফুলই বা দিতেন কেন?

রাত তিনটা অথচ হৃদির চোখে ঘুম নেই।বিছানায় এপাশ ওপাশ করছে আর নিজে নিজে কথাগুলো বিড়বিড় করছে সে।খাটের পাশে জানালাটা খুলে দেয় হৃদি।শীতল হাওয়ায় ঘর ঠান্ডা হয়ে যায়।কেন জানি আজ খুব হাওয়া বইছে!চুলগুলো এলোমেলো ভাবে উড়তে লাগে। কাটা দিয়ে হালকা করে খোঁপা বেঁধে অবাধ্য চুল গুলো নিয়ন্ত্রণে আনে হৃদি।চোখ বন্ধ করে শীতল হাওয়া উপভোগ করতে লাগে হৃদি।কিন্তু চোখ বন্ধ করলেই সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ঘটনার দৃশ্যটা হৃদির চোখের সামনে ভেসে উঠে।খাটের এক কর্ণারে বিভোরের দেওয়া ফুল গুলো অনাদরে পড়ে ছিলো।হৃদি সেগুলো তুলে নেয়।আলতো করে ফুল গুলোকে গালে ছোঁয়ায়।এক অদ্ভুত অজানা অনুভূতি ঘিরে ধরেছে হৃদিকে।

হৃদিকে ক্যাম্পাসে এখন বিভোরই আনা নেওয়া করে।সকালের ক্যাম্পাসে যাওয়ার পথে হৃদি বিভোরকে বলে,,

-কাল্কে কী আপনার মাথা ঠিক ছিলো?
-কেন?
-সন্ধ্যায় কী করছিলেন ঐগ্লা?
-মন বললো করছি।
-সিরিয়াসলি?
-হু
-তো উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে এলেন!
-লজ্জা লাগলো তখন!আর আমি জানি আপনি সরাসরি উত্তর দিতেন না।

অ্যাহ! এই লোকটা হৃদির ভেতরের খবর জানলো কিভাবে?হৃদি গলা ঝেড়ে কাশে আর বলে,,

-কিভাবে দিতাম তাহলে?
-রিটার্ন গিফট বা অন্য ভাবে হয়তো!

হৃদি আর কিছু বলে না।হৃদিকে নামিয়ে গিয়ে থানায় যায় বিভোর।


ক্লাস শেষে আনমনে বসে আছে হৃদি।দেখে মনে হচ্ছে গভীর চিন্তায় ডুবে আছে।দিয়া এসে হৃদির কাঁধে হাত রাখতেই সে চমকে উঠে।তা দেখে দিয়া,,

-কী হলো?এভাবে লাফিয়ে উঠলি কেন?আর কী ভাবিছিলি?
-কিছু না
-আরেহ বল না কি হইছে!

হৃদি এ টু যেড সব খুলে বলে দিয়াকে।সব শুনে দিয়া বলে,,

-যেহেতু তুইও উনারে পছন্দ করিস কিন্তু লজ্জায় বলতে পারছিস না।তো আমি মনে করি উনাকে রিটার্ন গিফট দেওয়াই বেটার।
-কী দিতাম?
-উনি সিগারেট খান না?
-হু
-তুই সিগারেট গিফট কর।

অ্যাহ! সিগারেট?লাইক সিরিয়াসলি? দুনিয়ায় এত জিনিস থাকতে শেষে সিগারেট?কেউ এমন উদ্ভট গিফট নেয় না দেয়!শেষে মান সম্মান নিয়ে টানাটানি করতে হবে!

-তুই পাগল হইছিস?
-প্যারা নাই চিল
-অনেক প্যারা আছে
-ছেলেরা সিগারেট গিফট পেলে খুশী হয়।
-সিউর?
-হান্ড্রেড পার্সেন্ট
-কিন্তু কিনা দিবো কে?আমি মেয়ে হয়ে সিগারেট কিনতে যাবো!কেমন কেমন দেখায় না?

দিয়া জয়কে ডাক দেয়।ফ্রেন্ডসার্কেলের মধ্যে একমাত্র ছেলে যাকে ডাক দিলেই পাওয়া যায়। আর বাকীগুলা প্রেম নিয়ে ব্যস্ত।

-সিগারেট কিনতে পারবি?
-কার জন্য?কী সিগারেট?
-হৃদির জন্য।যে কোনো একটা ভালো ব্রেন্ডের এনে দিলেই হবে।

হৃদির জন্য মানে?এই মেয়েকে না জয় ভালো ভেবেছিলো।কিন্তু এই মেয়ে সিগারেট খোর কে জানতো!

-হৃদি তুই সিগারেট খাস?
-আস্তাগফিরুল্লাহ।

কথাটা বলে কপালে থাপ্পড় দেয় হৃদি।দিয়া জয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বলে,,

-ছাগল। দুলাভাইরে সিগারেট গিফট করবো।
-হৃদি তুই মিঙ্গেল?
-ইনশাল্লাহ হবে।এখন তুই ভাগ

দিয়া কথাটা শুনে জয় দৌড় দেয় সিগারেট আনার জন্য।এদিকে দিয়ার কথা শুনে হৃদির চোখ অক্ষীকোটর থেকে বেরিয়ে আসার মতো অবস্থা।কেমনে কী?দুলাভাই? কে দুলাভাই?

-এই হারামী!দুলাভাই কে?
-কেন? অফিসার বিভোর!

দিয়ার কথার জবাবে হৃদি কী বলবে ভেবে পায় না।এরই মধ্যে জয় সিগারেট নিয়ে হাজির।

-কত?
-দুইশো আশি

হৃদি জয়ের হাতে তিনশ টাকা দিয়ে বলে,,

-রাখ।আমায় ফকির বানাইলি।বাকী টাকা পরিশ্রমিক
-তাই বলে বিশ টাকা।
-রাখ ছাগল।আর ভাগ

সিগারেটের দাম সহ বারতি কিছু টাকা দিয়ে জয়কে বিদায় করে হৃদি।এরই মধ্যে বিভোরও হাজির।হৃদি ভিষণ ঘাবড়ে যাচ্ছে।যদি উলটা পাল্টা কিছু হয়!তো দিয়া শেষ।কাঁপতে কাঁপতে ক্লাস রুম থেকে বের হয় হৃদি।হৃদিকে এমন অবস্থায় দেখে বিভোরের মনে প্রশ্ন জাগে।আড়চোখে হৃদির দিকে তাকিয়ে সে হৃদিকে বলে,,

-এনি প্রবলেম?
-উহু কিছু না।
-তো এমন করছেন কেন?
-এমনি

কথাটা বলে হৃদি ব্যাগ থেকে সিগারেটের প্যাকেটটা বের করে কাঁপা হাতে বিভোরের হাতে দেয়,,,

-আ..আ..আ..আপনার রিটার্ন গিফট

কথাটা বলেই দাঁতে দাঁত কামড় দিয়ে চোখ বন্ধ করে হৃদি।সিগারেট দেখে বিভোরের মুখে হাসি ফুটে।এক রাশ হাসি মাখা মুখ নিয়ে বলে,,

-থ্যাংক ইউ।আর আমি আমার উত্তর পেয়ে গেছি।

বিভোরের কথা শুনে হৃদি বিভোরের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়।উনি রাগ করেন নি!যাক বাবা তিনশ টাকা গচ্চা গেলো না।হুমায়ুন আহমেদ বলেছিলেন ছেলেরা নাকি সিগারেট গিফট পেলে খুশী হয়।ভুল কিছু বলেন নি।বিভোরের হাসিই তার জলজ্যান্ত প্রমাণ।

চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে