#নিয়তি
#লুৎফুন্নাহার_আজমীন
#পার্ট১৩
-আচ্ছা আপনি তো বললেন না যে আপনি সিঁথিদিকে কিভাবে চিনলেন।
হৃদির ক্যাম্পাসে কোনো কাজের জন্য এসেছিলো বিভোর। মনে হলো হৃদির সাথে দেখা করে যাক।ক্লাস রুমের সামনে বারান্দার এক কোণায় হৃদির আর বিভোর দাঁড়িয়ে কথা বলে।কথার মাঝখানে হঠাৎ করেই হৃদি সিঁথির কথা জিজ্ঞেস করে বসে বিভোরকে।যেহেতু হৃদি আর বিভোরের মাঝে বন্ধুত্বের মতো একটা মিষ্টি সম্পর্ক হয়েছে তাই কোনো কিছু গোপন রাখা হয়তো ঠিক হবে না।কিন্তু কিভাবে হৃদিকে কথা গুলো বলবে তা বিভোর বুঝতে পারছে না।
-আচ্ছা আপনার কী আরও ক্লাস আছে?
-নাহ নাই তবে কিছু নোট তুলতে হতো।
-যা বলতাম মনে হয় এখানে বলা ঠিক হতো না।
-আপনি একটু ওয়েট করুন।আমি পিক তুলে আনছি।
কথাটা বলে হৃদি দৌড়ে ক্লাসের ভিতর যায়।ক্লাসমেটের খাতার কয়েকটা পিক তুলেই আবার বিভোরের কাছে চলে আসে।
-চলুন।
বিভোর আর কিছু বলে না।হাঁটা লাগায়। দোতলা থেকে হৃদি আর বিভোর যখন এক সাথে নীচে নামছিলো অন্যান্য স্টুডেন্টরা হা করে তাকিয়ে ছিলো।বিশেষ করে মেয়েরা,বিভোরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।মেয়েরা বরাবরই এখন লম্বা ছেলে পছন্দ করে।বিভোরও বেশ ভালোই লম্বা আছে।উচ্চতা মোটা মুটি পাঁচ ফিট নয়-দশের মতো হবে।তার মধ্যে পুলিশ ইউনিফর্ম পড়া। যে কোনো মেয়ের রাতের ঘুম কাড়ার জন্য এই টুকুই যথেষ্ট।মেয়েরা যে বিভোরের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে তা হৃদির চোখ এড়ায় না।সে মুখ টিপে হাসতে লাগে।তা দেখে বিভোর,,,
-কী হলো মুখ টিপে হাসতেছেন কেন?
-কিছু না।
বিভোর শ্যাম বর্ণের।ছেলেদের শ্যাম বর্ণেই মানায় ভালো।সাম্যের গায়ের রঙ আবার ছিলো ধবধবে ফর্সা।দেখতেই ভালো দেখা গিয়েছে শুধু।বাহিরে ফিটফাট ভেতরে সদর ঘাট।বাহিরটা সাদা।কিন্তু ভেতটা কালো।ঠিক যেম৷ মাক্কাল ফল।হৃদি নানির কাছ থেকে শুনেছিলো এ ফলের বাহিরটা সুন্দর হলেও ভেতরটা নাকি খুবই বিশ্রী।তার নাতিও হয়েছে তেমন।ভেতটা বিশ্রী।এক দিক দিয়ে ভালোই হয়েছে সাম্যের সাথে হৃদির জোড়া করে দেন নি ওপর ওয়ালা।ফর্সা ছেলে হৃদির কাছে বর হিসাবে পার্ফেক্ট না।ফর্সা ছেলে মানেই বদ।আলভীও তো বেশ ফর্সা ছিলো।পরে তো দেখিয়েই দিয়েছে নিজের রূপ।এখন জেলে আছে।বেশ হয়েছে।না জানি কতগুলো মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে মা ছেলে।
বিভোর বাইক চালাচ্ছে।আর হৃদি পেছনে বসে আছে।দুরত্ব বজায় রেখেই বসেছে হৃদি।কিন্তু আশে পাশের লোকজনের চাহনীতে মনে হচ্ছে সদ্য প্রেমে পড়া যুবক যুবতী ডেটে বেরিয়েছে।বর্তমান ছেলেমেয়েদের ভাষায় যাকে বলে নিব্বা নিব্বি!
-তখন জানেন কেন মুখ টিপে হাসছিলাম?
-জিজ্ঞাস করলাম তো কারণ বললেন না।তো কিভাবে বলবো আপনি কেন হাসছিলেন!
-মেয়েরা আপনার দিকে টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় ছিলো।তাই হাসছিলাম
-টাস্কিত মিন্স?
-মানে সাহিত্যিক ভাষায় যাকে বলে মুগ্ধ দৃষ্টিতে।
-তাকায় ছিলো কেন?
-আমি কিভাবে জানবো?মেয়ে গুলো জানে ওরা কি জন্য আপনার দিকে টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় ছিলো।
বিভোর বাইক একটা পার্কের সামনে দাঁড়ায়।হৃদিকে একটা ব্রেঞ্চে বসতে দিয়ে ফুচকার অর্ডার দিতে যায়।কিছুক্ষণ পর দুই প্লেট ফুচকা নিয়ে হাজির হয় বিভোর।
-হঠাৎ ফুচকা!
-লম্বা আর হাসির কাহিনী তো। ফুচকা সাথে থাকলে মজাটা ডাবল হবে।
কথাটা বলে বিভোর ব্রেঞ্চে বসে।এ টু যেড সব বলে দেয় হৃদিকে।সবটা শোনার পর হৃদি বলে,,
-কষ্ট লাগতেছে না আপনার?
-কষ্ট কিসের?ঐ সব ঘটনার কথা মনে পড়লে আমার আরও হাসি পায়।সব নষ্ট আবেগ।
-আমিও না নষ্ট আবেগের পাল্লায় পড়েছিলাম।
-মানে?
-সিঁথিদির বর মানে সাম্যদা আমার নষ্ট আবেগ। We are same broo…
কথাটা বলে হৃদি হেসে দেয় সাথে বিভোরও।হাসতে হাসতে বিভোর বলে,,
-আমার কাহিনী তো শুনলেন।তো আপনারটা কী শুনতে পারি?
-প্রায় সেইমই। আপনাকে যেমন সিঁথিদি আপনাকে আগে প্রপোজ করেছিলো সাম্যদাও আমায় আগে প্রপোজ করেছিলো।আর সেইম কাহিনি দুর্বলতা থাকায় আমিও ফিরিয়ে দিতে পাই নি।শুধু পার্থক্য হলো সিঁথি দি আপনাকে অনেক আগে ছেড়ে গেছে আর সাম্যদা আমায় কয়েকদিন আগে।
★
কাজের চাপ কম থাকায় এখন প্রায়ই হৃদিকে ক্যাম্পাস থেকে বিভোর নিয়ে আসে।স্টুডেন্টরা তো ধরেই নিয়েছে হৃদি আর বিভোর একেওপরকে ভালোবাসে।হ্যাঁ ভালোবাসে তবে তা বন্ধু হিসাবে।বিভোর এম্নেতে সব সময় ক্লিন শেইভে থাকে।তবে ইদানীং বিভোরের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি হয়েছে।তাতে অবশ্য বিভোরকে মন্দ লাগছে না।বিভোর বাইক চালাচ্ছিলো আর হৃদি পেছনে বসে ছিলো।বাইকের আয়নায় বিভোরের মুখ পড়েছে।হৃদি প্রথমে খেয়াল না করলেও পরে ঠিকই খেয়াল করে।
-এক্টা কথা বলবো?
-কী কথা?
-কিছু মনে করবেন না তো?
-উমমম,,,নাহ।বলেন।
-আপনি না এইরকম হালকা খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি রাখিয়েন।ভালো লাগবে দেখতে আপনাকে!
-তাতে কী মেয়েরা টাস্কিত দৃষ্টিতে তাকায় থাকবে?
কথাটা বলে বিভোর হেসে দেয়।বিভোরের কথা শুনে হৃদিও হাসি আটকাতে পায় না।সেও হেসে দেয়।
বাসায় পৌঁছে ফ্রেশ হয়ে হৃদি বিছানায় গা এলিয়ে দেয়।এরই মধ্যে বিলকিস বেগমের ফোন আসে।
-হ্যাঁ মামি বলো।
-সুখবর আছেরে হৃদি।
-কী সুখবর।
-তোর সাম্যদা বাবা হতে চলেছে।
চলবে,,,