নারীর সতীত্ব পর্ব-১৩

0
1530

#নারীর_সতীত্ব
#পর্ব_১৩
Wohad Mahmud

_দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আমার সব কথা শুনছিল কিন্তু আমি বা কেউ খেয়াল করি নাই। কারণ আমরা যে পজিশনে দাঁড়িয়ে ছিলাম তার ঠিক পিছনে ভাবির ঘরের দরজা। সেই জন্যই আমরা কেউ খেয়াল করি নাই। ভাবির কথা শুনে আমি পিছনে ফিরে তাকালাম। ভাবি আমাকে বলল মাহমুদ কে কোথায় থাকবে কী থাকবে না এটা তোমার কথায় চলবে না। দরকার হলে তোমরা চলে এখান থেকে। বাবা আর মা আমাদের সাথে এখানে থাকবে। বাবা মায়ের প্রতি আমাদের ও অধিকার আছে যতটুকু তোমার আছে।

আমি মুচকি হেসে বললাম ভাবি অধিকার কথাটা ছোট হলেও এর পরিধি অনেক বড়। এতোক্ষণ তো ঘরের মধ্যে তো বেশ ভালোই আরাম করলেন আর মা এখানে একা রান্না করেছিল কই একটু ও এসে সাহায্য করলেন না। কোনো উপায় না পেয়ে আমিই রান্নার কাজে সাহায্য করলাম।

বাসায় তো কাজ করার জন্য আমি একা নেই। আরো দুজন তো আছে। তাঁরাও তো সাহায্য করতে পারে।

আমি হেসে হেসে বললাম আপনার মতো মানুষ থাকতে বাসায় কী আর কেউ শান্তিতে থাকতে পারে। দিলেন তো সাবনাজের হাতটা পুড়িয়ে ইচ্ছা করে,তাহলে কাজটা কীভাবে করবে? আর মাহমুদা তো টিউশনিতে ছিল সে কীভাবে কাজ করবে? আর আপনি বাকি ছিলেন,কাজ করার বাহানা করে শয়তানি বুদ্ধি নিয়ে সাবনাজের হাত পুড়িয়ে দিলেন।

তখন ভাবি বলল আমি ইচ্ছা করে করি নাই। যা হয়েছে সব ভুল করে হয়েছে। সাবনাজের সাথে আমার কিসের শত্রুতা যে তার এতো বড় ক্ষতি করব।

আমি হেসে হেসে বললাম শত্রুতা না, হিংসা। তার সুখের সংসার আপনার সহ্য হয় না‌

কথা কাটাকাটি করতে করতে কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেলাম। আমি ইশারায় সবাই কে রুমের ভিতরে চলে যেতে বললাম। কারণ নিশ্চিত বাবা আর শ্বশুর এসেছে। আমি চাই না তারা এসে এসব দেখুক। কারণ বাবা অসুস্থ এমন পরিস্থিতিতে আরো অসুস্থ হয়ে যাবে‌। আর শ্বশুর ও আছে সে দেখলে আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি হবে।

আমার ইশারা বুঝে সাবনাজ আর মাহমুদা রুমে চলে যায়। আর মা রান্না ঘরে গিয়ে খাবার নিয়ে আসে ডাইনিং এ। আর আমি গিয়ে দরজা খুলে দিলাম। বাসায় এসে বাবা আর শ্বশুর ফ্রেশ হয়ে গল্প করছে‌।

আমি গিয়ে বসে বাবাকে বললাম আজ তোমার চেকাপ করাতে নিয়ে যেতে হবে।

বাবা বলল না লাগবে না বাবা আর। এখন অনেকটা ঠিক আছি। ডাক্তারের কাছে যেতে ইচ্ছা করছে না।

তোমার মাঝে মাঝে সব পাগলামি মেনে নিয়েছি। কিন্তু এখন আর না। আজকেই যেতে হবে বিকালে। অবশেষে রাজি করালাম ডাক্তারের কাছে যাওয়ার জন্য।

দুপুরে সবাই খাওয়া দাওয়া করে রেস্ট নিচ্ছিলাম। আমি সাবনাজ কে বললাম। আজ বিচার হবে রাতে। মায়ের সামনে তুমি সব কথা সত্যি সত্যি বলতে পারবে তো?

সবনাজ বলল কার বিচার আর কিসের বিচার? আমি কিছু বুঝতে পারছি না কী বলছো। একটু বুঝিয়ে বলো প্লিজ মাহমুদ।

আমি বললাম এতো দিন ভাবি তোমার প্রতি যা যা অন্যায় করেছে তার সব বিচার হবে আজ। কিছু না বলে বলে অনেক বেশি বাড় বেড়েছে।

সাবনাজ আমার হাতে ধরে বলল, প্লিজ এমন কিছু করার দরকার নেই। হাজার হলেও সে তোমার বড় ভাবি হয়। এভাবে তার প্রতি এমন করলে সে আরো বেশি জ্বালাতন করবে আমাদের। তার থেকে ভালো হয় যেমন করে চলছে চলুক। এসব সামান্য বিষয় আমি সহ্য করে নিতে পারব। কোনো সমস্যা হবে না।

আমি রাগি কন্ঠে বললাম, তুমি সব সহ্য করে নিতে পারবে কিন্তু আমি পারব না। আমার স্ত্রীর প্রতি যে, অন্যায় অবিচার করবে আমি তাকে একটুও ছাড় দিব না। আর তুমি যদি আমার বিরোধিতা করো আর সব সত্যি কথা মায়ের সামনে না বলো তুই আমার ভালোবাসা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাবে।

আমার কথা শুনে অনেক ভয় পেয়ে যায় সাবনাজ। তারপর বলে আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যা বলবে আমি সব শুনব। আর মায়ের সামনে সব সত্য কথা বলব।

বিকালে বাবাকে নিয়ে হাসপাতালে গেলাম আমার সাথে মাহমুদা ও ছিল। আমি নিজে নিজে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আজ বাবাকে আর বাসায় নিয়ে যাব না। বাবাকে আজ ছোট ফুফির বাসায় দিয়ে আসব। বাবাদের দুই বোনের মধ্যে অনেক মিল। আর দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে। বাবার এমন পরিস্থিতির কথাও জানে না। বাবা বলতে নিষেধ করেছিল। কারণ বাবার এমন পরিস্থিতি সহ্য করতে পারবে না।

প্রাইভেট হাসপাতাল আর ডাক্তার আমার স্যার ছিল তাই চেকাপ করা অনেক তাড়াতাড়ি হয়েছিল। স্যার আমাকে তার ভিজিটিং কার্ড দিয়ে বলে সামনে মাসে আমার সাথে যোগাযোগ করবে‌।

ডাক্তার দেখানো শেষে মাহমুদা আর বাবাকে নিয়ে ফুফির বাসায় গেলাম আর মাহমুদা কে বললাম। বাবা এখানে থাকবে এক সপ্তাহ মতো সাথে তুই ও থাকবি।

কেন ভাইয়া? আজকেই দেখা করে চলে যাই। এতদিন এখানে অকারণ থেকে কী করব। আর মাকে বলে ও আসি নাই এখানে থাকবো আমার।

আমি যা বলছি তাই কর। বাসার যেই পরিস্থিতি এখানে থাকলে ভালো হবে বাবার জন্য। তোর প্রয়োজনীয় জিনিস আমি দিয়ে সমস্যা নেই। এখানে থেকেই পড়াশোনা কর এক সপ্তাহ।

বাবাকে এখানে রাখার মূল কারণ। আজ রাতে কিছু না কিছু একটা হয়ে যাবে বাসায়। হয় বাসায় তারা থাকবে আর না হয় আমরা থাকব। আর এই পরিস্থিতি দেখলে বাবা নিশ্চিত আবার হার্ট অ্যাটাক করবে। আর আমি চাই না ক্ষতি হোক বাবার। সেখানে কয়দিন শান্তি মতো থাকুক। পরিবেশ ঠান্ডা হলে আবার বাড়িতে নিয়ে আসব।

বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে যাই আমার কিছুটা। বাসায় ফিরে দেখি মা, সাবনাজ আর সাবনাজের বাবা, ভাইয়া বসে গল্প করছে। কিন্তু এটা কীভাবে সম্ভব। সাবনাজের বাবা আর ভাইয়ের তো চলে যাওয়ার কথা কিন্তু এখানে বসে গল্প করছে।মনে হয় সাবনাজ জোর করে রেখে দিয়েছে কারণ আমি যাতে আজ কোনো ঝামেলা সৃষ্টি করতে না পারি।

আমাকে একা এসে দেখে মা বলে–
তোমার বাবা আর মাহমুদা কোথায়?

আমি বললাম ছোট ফুফির বাসায় রেখে আসছি। ওখানে কয়দিন থাকলে ভালো হবে বাবার জন্য। সাথে তো মাহমুদা আছে সমস্যা হবে না।

মা বলল ঠিক করেছিস বাইরে থাকলে মন ভালো হবে। কয়দিন বাইরে থেকে ঘুরে আসুক।

তারপর রাতের খাবার খাওয়ার দাওয়া করলাম কিছুক্ষণ পরে। কিন্তু ভাইয়া আর ভাবি আসল না। মা আমাকে বলল ডেকে আনতে। আমি রুমে গিয়ে ডাক দিলাম খাওয়া দাওয়া করার জন্য। কিন্তু আসল না। বলল যে, খাবে না এই বাড়িতে আর। নিজেরা রান্না করে খাওয়া দাওয়া করবে।

আমি এসে মিথ্যা কথা বললাম। বললাম যে, ভাইয়া অফিস করে অনেক ক্লান্ত একটু পরে খাবে। ডাইনিং এ খেতে ইচ্ছে করছে না।‌ বলল যে ভাত আর কিছু তরকারি দিয়ে আসতে। আমি গুছিয়ে ভাত তারকারি দরজার কাছে রেখে, দরজায় নক নিয়ে আস্তে করে বললাম ভাত তারকারি আমি দিয়ে গেলাম। বাকিটা আপনাদের ইচ্ছা কী করবে।

তারপর রুমে এসে বললাম আজ শুধু তোমার বাবা আর ভাইয়ার জন্য ভাবি বেঁচে গেল। তোমাকে থাপ্পড় মারার কথা, ইচ্ছা করে গায়ে চা ফেলে দেওয়ার কথা। সব কিছু আজ তুলে ধরতাম। আর ভাইয়া ও একটু দেখত তার স্ত্রী কেমন মানুষ। যার একদম বিবেক বুদ্ধি আর মনুষ্যত্ববোধ নেই।

ঘুমিয়ে পড়লাম আমি। তারপর সকালে উঠে আমি রাতের অপেক্ষায় আছি। সাবনাজের বাবা আর ভাইয়া চলে যাবে‌ আজ বিকালে। আমি আর অপেক্ষা করতে পারছি না। কখন ভাবির মুখোশ খুলব আমি। সাবনাজের বাবা আর ভাইয়া চলে যায়। যাওয়ার সময় সাবনাজের ভাই বলে‌। আমার বোন আপনার কাছে আমানত রেখে দিলাম দুলাভাই।

আমি বললাম চিন্তা করো না ভাইয়া আমার জীবনের থেকে তোমার বোনকে আমি ভালোবাসি।

রাতে মাকে বললাম মা তোমার রুমে একটু জেগে থাকো কথা আছে‌। ভাইয়া আর ভাবি ও আসবে।

মা বলল কেন কী হয়েছে?

আমি বললাম অপেক্ষা করো জানতে পারবে। তার ভাইয়া আর ভাবিকে ডেকে নিয়ে আসলাম। আমার কিছু বলার আগেই ভাবি বলে আমিও কিছু বলব।

আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে বলেন আগে আপনি।

এরপর ভাবি যা বলল তাতে ভাবির উপর যতো রাগ ছিল সব পানি হয়ে গেল মায়ের। মা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। এতো খুশি আমি অনেকদিন দেখি নাই,,,,

চলবে,,,,

বি.দ্র: ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে