দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন..PART1

0
3158

দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন..PART1
মোঃ জুবাইদুল ইসলাম.
বেনিংটন ট্রায়াঙ্গল জঙ্গলের সবুজে ঘেরা এক রহস্যময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস জেরায়াস নামক এক উপজাতির। গোত্রের মাঝে এক অদ্ভুত নিয়ম। অদ্ভুত সব রীতিনীতি। তবে অবাক করা একটা ব্যাপার হলো গোত্রের সব মানুষের চেহারার গঠন খুবই সুন্দর তবে গায়ের বর্ণ নিকষ কালো। তাদের বিচরণ সেই পাহাড় ঘীরেই। কাঠের তৈরি ঘরগুলো সব বড় বড় গাছের সাথে সংযুক্ত। গোত্রের মাঝে রয়েছে উঁচু-নিচু জাতপাতের বৈষম্য। যারা নিচু জাতের তারাই গোত্রের অদ্ভুত সব নিয়মনীতির সম্মুখীন হয়। বাধ্য হয়ে মেনে নিতে হয় সেসব নীতি। তাদের ঘরগুলো পাহাড় থেকে কয়েক মিটার দূরত্বে। আর যারা উঁচু জাতের তারা সবসময় সবকিছু উপভোগ করে। তাদের ঘরগুলো পাহাড়ের পাদদেশে গা ঘেঁষে গাছের সাথে তৈরি করা। এর একটা বিশেষ কারণও রয়েছে। সবুজে আচ্ছন্ন এ পাহাড়ের চূড়াটা সমতল। চূড়াটা সমতল করা হয়েছে বিশেষ অানুষ্ঠানিকতার জন্য। তবে চূড়ায় উঠার জন্য নেই কোনো সিঁড়ি, খাদ বা অন্য সরঞ্জাম। প্রতিবছর পাহাড়ের চূড়ায় উঠার জন্য একটি করে সিঁড়ি কাটা হয়। তবে সিঁড়ি কাটার জন্য ব্যবহার করা হয় কুমারী সুন্দরী মেয়ের বক্ষপিঞ্জরের হাড় আর মাথার খুলি। একটা সিড়ি কাটার পর বলি দেওয়া সেই কুমারী মেয়ের রক্তে পা ধুয়ে সেই রক্ত দিয়ে সিঁড়ি লেপে দেওয়ার পর গোত্রের প্রধান খুলির উপর পা দিয়ে সিঁড়িতে উঠেন। অনুষ্ঠানটা করা হয় প্রত্যেক বছরের কৃষ্ণপক্ষ ও শুক্লপক্ষের মাঝামাঝি সময়ে। এভাবে প্রতিবছর একটি একটি করে সিঁড়ি কাটা হয় পাহাড়ের চূড়ায় যাওয়ার জন্য। তবে প্রতিবছর গোত্রপ্রধান পাহাড়ের চূড়ায় উঠেন না। যতগুলো সিঁড়ি কাটা ঠিক ততোটুকু উঠে পাথরের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন পুরো রাত। তার সামনে চলে বিশাল অনুষ্ঠান।

শুক্লপক্ষ শেষ হতে আরও তিনদিন বাকী। তিনদিন পর শুরু হবে গোত্রের মাঝে সেই অদ্ভুত অনুষ্ঠান। এদিকে একজন মেয়ের জন্মদিন উদযাপন করার জন্য ডি ডট এমজি নামক তরুণদের গ্রুপ সন্ধ্যামুখে প্রবেশ করলো বেনিংটন ট্রায়াঙ্গলে। মেয়েটির নাম আনাহী। একজন মেডিকেল স্টুডেন্ট। গ্রুপের সকল সদস্যরা একেকজন একেক বিষয়ের স্টুডেন্ট। পুরোনো ফ্রেন্ডসার্কেল টিকিয়ে রাখার জন্য পড়াশুনার পাশাপাশি বিভিন্ন এডভেঞ্চারে ঘুরে বেড়ায় এই গ্রুপ। গ্রুপের থ্রিলমাষ্টার হলো ট্রুডো। বলতে গেলে সেই গ্রুপের প্রধান। যেমন রহস্যপ্রেমী তেমনি হাজারো বিস্তৃত রহস্যে ঘেরা তার জীবন। যেকোনো মিশনে সবার আগে সামনে থাকে সে। তাকে দেখে বুঝাই যায় না যে তার মাঝে ভয়ভীতি বলে কিছু আছে কিনা। গ্রুপের সাতজন সদস্য যার তিনজন হলো মেয়ে। জেফারী, মেডেকি, আনাহী। আর বাকী চারজন ছেলে হলো ট্রুডো, ভিরেক্স, ব্লেডিকো আর মিউরিস। সব টেলেন্ট সদস্যদের নিয়ে এই গ্রুপ। ভয়ঙ্কর ও দুঃসাহসিক সব অভিযানের রেকর্ড রয়েছে এই গ্রুপের।
সন্ধ্যার অন্ধকার যখন ধীরে ধীরে রাতের তমাধারে রুপ নিলো তখনই থেমে গেলো চলাচল৷ তাবু খাটানোর জায়গা হিসেবে বেছে নিলো সেই পাহাড়ে থাকা উপজাতির বসবাসের ঠিক বিপরীত জায়গায়। বিশাল বড় পাহাড়। তাই আন্দাজও করা গেলো না যে জঙ্গলে এক উপজাতি আছে। মেয়েদের জন্য পর বড়সড় একটি আর ছেলেদের জন্য দুইটি তাবু খাটানো হলো। এখন কে কোথায় থাকবে সেটা নিয়ে হলো এক ঝামেলা। জেফারী, মেডেকি আর আনাহী এক তাবুতে থাকার জন্য রাজি কিন্তু ছেলেদের মধ্যে ট্রুডো একাই এক তাবুতে থাকতে চাইছে। এদিকে আরেকটা তাবু খাটানোর মতো তেমন সরঞ্জামও নেই। অনেক ঝামেলার পর ট্রুডোকে এক তাবুতে দেওয়া হলো আর বাকী তিনজন রাজি হলো আরেক তাবুতে থাকার জন্য। সবাই যার যার জিনিসপত্র তাবুতে গুছিয়ে রাখতে গেলো।
কিছুক্ষণ পর….
জেফারী আর মেডেকি বাইরে যাওয়ার কথা বলে তাবু থেকে বের হয়ে ট্রুডোর তাবুতে প্রবেশ করলো। এদিকে ব্লেডিকো আর মিউরিসও ট্রুডোর তাবুতে এসে হাজির জন্মদিনের সারপ্রাইজ কিভাবে দেওয়া যায় সেসব নিয়ে আলোচনা করার জন্য। হঠাৎ ভিরেক্সকে না দেখতে পেয়ে ট্রুডো বললো, “ভিরেক্স কোথায়? নিশ্চয় আনাহীর কাছে গিয়েছে। সত্যিই একে আর সামলাতে পারলাম না। ”
জেফারী ট্রুডোর কথা শুনে মুচকি হেসে বললো,”সুযোগ একটা পেয়েছে, হাতছাড়া করবে কেন!! এক দিনে দুইটা সারপ্রাইজ পাবে আনাহী। ”
ট্রুডো একটু রাগি গলায় বললো,”তো প্রোপোজ করার সময় এটা? আমরা এখানে এসেছি অন্য কারণে আর সে? ”
ট্রুডোর কথা শেষ না হতেই ব্লেডিকো বলে উঠল,”আচ্ছা বাদ দে না সেসব, এখন কি প্ল্যানটা কি? ”
সবাই মিলে প্ল্যান করে ঠিক করলো কিভাবে আনাহীকে সারপ্রাইজ দেওয়া যায়। সবাই বাইরে বের হয়ে যে যার কাজে লেগে পড়লো। ট্রুডো মশাল জ্বালানোর জন্য গেলো কাঠ আনতে। ব্লেডিকো গেলো বার্থডে কেক ঠিক আছে কিনা আর সব সরঞ্জাম ঠিক আছে কিনা তা দেখতে। মিউরিস তাবুর সামনের জায়গাটা পরিষ্কার করতে শুরু করলো। মেডেকি আর জেফারী তাদের তাবুতে প্রবেশ করার সাথে সাথেই দেখলো ভিরেক্স ইতস্তত করছে। প্রপোজ করার কতোনা ইচ্ছা ছেলেটার কিন্তু কথাগুলো এসে মুখ পর্যন্ত থেমে গেছে আর বের হচ্ছে না। মেডেকি আর জেফারীকে দেখে তাবু থেকে বের হয়ে গেলো ভিরেক্স। জেফারী আনাহীর কাছে গিয়ে গা ঘেঁষে বসে বললো,”ভিরেক্স কি বললো রে? ”
আনাহী মোবাইল টিপতে টিপতে বললো,”কই! কিছু না তো। সে তো এসেই কেমন ইয়ে মানে ইয়ে মানে করে চলে গেলো।”
তিন বান্ধবী মিলে একটু মজা করে রাতের জন্য রেডি হতে শুরু করলো। এদিকে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে ট্রুডো মশাল জ্বালানোর জন্য শুকনো কাঠ এনে আবার জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলো দ্রুত পায়ে। সময় যেন তার জন্য স্থির। চারিদিক হন্তদন্ত হয়ে দেখতে লাগলো। রাতের আধারে জঙ্গলের ভেতরের পরিবেশটা পুরো চেনা পরিচিত জায়গায় রুপান্তরিত করতে হবে। শুরু হলো ট্রুডোর রাতের বিচরণ। দ্রুতপায়ে চলতে চলতে হঠাৎ থেমে গেলো ট্রুডো। কোনো এক মেয়ের কান্নার আওয়াজ আসছে। চাপা গলার করুণ কান্না। শব্দের উৎসের আন্দাজ অনুভব করে সেদিকে যেতে লাগলো ট্রুডো। শুষ্ক পরিবেশ। জঙ্গলের ভেতরে শুকনো গাছের পাতা পড়ে ভরে গেছে। চলার সময় খচখচ আওয়াজ হচ্ছে। কয়েকমিনিট হাঁটার পর সামনে চোখে পড়লো একটা ফাঁকা জায়গা।পাহাড়ের এককোণ থেকে ঝর্ণা নেমে এসেছে। নিদারুণ পরিবেশ। জঙ্গলের যে সমতল জায়গা দিয়ে ঝর্ণার পানি প্রবাহিত হয়ে চলেছে তার দুপাশে ঘাসের নতুন কচি পাতার আস্তরণ। যেন সবুজের মাদুর বিছানো দুইপাশে। অর্ধেক চাঁদের মিষ্টি আলোয় ভুবন মাতানো পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। একটা গাছের আড়ালে বসে আছে একটা মেয়ে। আসছে কান্নার শিহরণ শব্দ। পেছন থেকে পুরো পিঠ লম্বা চুলে ঢেকে গেছে। ঘন কালো লম্বা চুলে যেন নিজেকে আড়াল করে নিয়েছে মেয়েটি। আস্তে আস্তে ধীর পায়ে সামনে এগোতে লাগলো ট্রুডো।
..
..
..(চলবে….)
..
..
..
গল্প সম্পর্কে যেকোনো অভিমত, রিভিও, আলোচনা ইত্যাদি গ্রুপে করতে পারবেন। ধন্যবাদ সকলকে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে