……………….#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
……………….মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
………………………PART:06…………………………
নানান বিষয়ে ভাবতে ভাবতে ট্রুডোর মনে পড়ে গেলো এলিনার কথা। মনে পড়ে গেলো তার দেওয়া প্রতিশ্রুতির কথা। কিন্তু এলিনা আর তার গোত্র সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু অজানা। বিশ্রাম শেষে বিকেলের দিকে বেরোলো এলিনার সাথে দেখা করার জন্য। এলিনার কথাগুলো শুধু মনে ভেসে উঠতে লাগলো ট্রুডোর। কি সুন্দর দেহের গঠন, মুখমন্ডল অবর্ণনীয়, শূভ্র দেহে মিষ্টি ফুলের গন্ধ সত্যিই যে কাউকে আকর্ষিত করবে। কিন্তু ট্রুডোর মনটা খারাপ হয়ে গেলো জেরায়াস উপজাতির সেই অনুষ্ঠানের কথা মনে করে। আগামীকাল রাতেই এলিনাকে বলি দেওয়া হবে কথাটা ভাবতেই হৃদয়টা হু-হু করে উঠে ট্রুডোর। আনমনে ভালোবেসে ফেলে এলিনাকে। কারণ ট্রুডোর ধারণা এলিনাও একজন ভ্যাম্পায়ার। তার গায়েও ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি আছে। এসব ভাবতে ভাবতে সেই ঝর্ণার তীরে পৌঁছে গেলো ট্রুডো। এলিনা পাড়ে বসে পানিতে পা দোলাচ্ছে। হালকা বাতাসে তার এলোকেশী চুল নগ্ন ঢেউয়ে মেতে উঠেছে। পেছন থেকে একটু হাসিখুশিই লাগছে এলিনাকে। ট্রুডো পাশে গিয়ে বসলো।
এলিনার দিকে তাকিয়ে দেখে মুখটা মিষ্টি মায়াবী এক হাসিতে আচ্ছন্ন। শূভ্র গালে টোল পড়েছে। ধবধবে চেহারায় ঠোঁটের কোণের কালো কুচকুচে তিলটা পুরো মুখমন্ডলকে আরও হৃদয়আকর্ষী করে তুলেছে। ট্রুডোকে দেখে একটু রাগ করে এলিনা বললো,”আমার কথা না শুনেই গতকাল ওভাবে দৌঁড়ে গেলেন কেন? নিশ্চয় আপনার কোনো ক্ষতি হয়েছে। ”
ট্রুডো অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো,”আপনি জানেন কিভাবে?”
এলিনা মুচকি হেসে বললো,”এই জঙ্গলের প্রত্যেকটা গাছের পাতার সাথে চিরচেনা এক রহস্য লুকিয়ে আছে আমার। আমি জানবো না মানে? ”
কথাটা ট্রুডোর কাছে ঝাপসা লাগলো। ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না। কালকে কি বলতে চেয়েছিলো এলিনা তা শুনার জন্য ট্রুডো প্রশ্ন করার মুহূর্তেই চোখে পড়লো তার ভ্যাম্পায়ার লকেট। এলিনার গলাতেও ঠিক একই লকেট। এলিনার পীঠেও ঠিক একই ভ্যাম্পায়ার চিহ্ন। ট্রুডো মনে মনে জোড়ালোভাবে বিশ্বাস করে নিলো যে এলিনা একজন ভ্যাম্পায়ার। আর তাকে বলি দেওয়ার হাত থেকে বাঁচানোর জন্য একটাই উপায় আছে আর তা তাকে নিয়ে পালানো। ভ্যাম্পায়ার লকেটটা থাকলে অবশ্য পালাতে হতো না। সবগুলোর রক্ত চুষে নিলেই সমস্যা মিটে যেতো কিন্তু লকেটটা হারাতেই হয়েছে যত বিপদ।
সাত পাঁচ ভেবে ট্রুডো এলিনাকে হঠাৎ বলে দিলো, “আমার সাথে আপনাকে পালাতে হবে। এটাই আপনার সমস্যার সমাধান। ”
এলিনা কথাটা শুনার পর একটুও অবাক হলো না বরং এমন ভাব দেখালো যাতে এতে কোনো কাজই হবে না। দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে এলিনা বললো,”তাতে কি কোনো লাভ হবে? একদিন না একদিন তো আমাকে তারা খুঁজেই নেবে। তখন বাঁচাতে পারবেন আমাকে? ”
ট্রুডো নিশ্চিন্তে বলে দিলো,”নিশ্চয় পারবো। এখন যেহেতু পালানার সাহস আছে তেমনি বাঁচানোর সাহসও মনে আছে।”
এলিনা শেষ চেষ্টা হিসেবে ট্রুডোর কথা মেনে নিলো। কিভাবে ও কখন পালাবে সেগুলো সব ঠিক করলো তারা। ট্রুডো এলিনার দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। এলিনাও ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বললো,”কি দেখছেন আপনি?”
ট্রুডো হকচকিয়ে গেলো এলিনার কথা শুনে। ঝটপট উত্তর দিলো,”ভাবছি। ”
এলিনা ভ্রু কুচকে বললো,”ভাবছেন, কি ভাবছেন শুনি। ”
ট্রুডো বললো,”ভাবছি আপনি তো এক উপজাতির মেয়ে। বর্তমান বিশ্বের সাথে আপনার কোনো তফাৎ খুঁজে পাচ্ছি না। না ভাষার তফাৎ, না পোশাক,না আচরণের। কারণটা বলবেন? ”
কথাটা শুনেই এলিনা ফিক করে হেসে দিলো। এলিনার হাসি দেখে ট্রুডো একটু হরকে গেলো। হাসি থামিয়ে বললো,”আপনাকে কিন্তু আমি আগে থেকেই চিনতাম। তবে আপনার নামটা জানতাম না।”
এলিনার কথা শুনে ট্রুডো যেন আকাশ থেকে পড়লো। বিষ্ময়ের সপ্ত আকাশে উদয়ন করলো ট্রুডো। গভীর মনোযোগের সাথে জিজ্ঞাসা করলো এলিনাকে,”কি বলছেন আপনি? আমাকে আপনি আগে থেকে কিভাবে চিনবেন? আপনাদের বিচরণ তো এই পাহাড়কে ঘীরেই। ঠিক বুঝলাম না ব্যাপারটা।”
এলিনা ট্রুডোর দিকে তাকিয়ে বললো,”আপনি যে কলেজে পড়েছেন আমিও সেখানে পড়েছি। কিন্তু আমি প্রতিদিন কলেজে যেতাম না। আপনিও মিথলজি ও ভ্যাম্পায়ার বিষয়ে স্টাডি করেছেন আমিও সেই বিষয়েই করেছি।”
এলিনার কথা যেন ট্রুডোর কাছে অমাবশ্যার চাঁদের মতো মনে হচ্ছে। একটু জোড়ালো গলায় বললো,”যদি তাই হয় তাহলে আমি আপনাকে একটি দিনও দেখতে পেলাম না কেন? ”
এলিনা বললো,”আমি প্রতিদিন কলেজে যেতাম না। যেদিন কলেজে যেতাম ছদ্মবেশে যেতাম। আমি যে পড়াশুনা করেছি তা গোত্রের কেউ জানে না। এমনকি আমার বাবা মা ও পর্যন্ত নয়।”
ট্রুডো মনে মনে সবকিছু মেলাতে লাগলো। ভাবতে লাগলো ভ্যাম্পায়ার বলেই হয়তো সম্ভব। অবশেষে ট্রুডো বিশ্বাস করে নিলো এলিনার কথা। কিন্তু প্রশ্ন করলো,”সেটা নাহয় বুঝলাম। আপনার পড়াশুনা শুরু হলো কিভাবে? গোত্রের তো কেউ পড়াশুনা করেনি বলে মনে হচ্ছে। ”
এলিনা বললো,”ঠিক বলেছেন। আমার পড়াশুনা শুরু হয় এক ধূর্ত ও চতুর ব্যক্তির হাত ধরে। যেহেতু আমরা নিচুজাতের লোকেরা দেবী মিনার্ভার পূজা করতাম তেমনি গোত্রে এমন একজন ছিলো যে গোপনে শয়তানের পূজা করতো। শয়তানের পূজা করে বিভিন্ন বিষয়ে পান্ডিত্ব অর্জন করেন তিনি। আমি উনার কাছ থেকেই পড়াশুনা শুরু করেছিলাম। একদিন তিনি আমাকেও ভ্যাম্পায়ার শক্তির কিছু অংশ প্রাপ্তিতে সাহায্য করেন। আমার পীঠে যে ভ্যাম্পায়ার চিহ্নটি আছে সেটা উনারই করা। চিহ্নটাকে খুব সাবধানে লুকিয়ে রেখেছি এতোদিন।”
ট্রুডো নিজেও যে একজন ভ্যাম্পায়ার সেটা আগেই এলিনাকে বললো না। উল্টো প্রশ্ন করলো এলিনাকে,”চিহ্নটা লুকানোর কি প্রয়োজন ছিলো? আর লোকটি এখন কোথায়? ”
এলিনা ঝর্ণার দিকে তাকিয়ে কয়েক্ষণ স্থির থেকে বললো,”লোকটা শয়তানের পূজা করতো এটা গোত্রপ্রধান জেনে গিয়েছিলো তাই তাকে গোত্র থেকে বহিষ্কার করে দিয়েছে। আর এই চিহ্নটা দেখলে আমাকে বহিষ্কার করতো না বরং খাবার বানানো হতো চুপাকাবরাদের। যদিও লোকটা এখন বিশাল শক্তির অধিকারী। এই জঙ্গলের সব হিংস্র প্রাণীদের সামলায় সে। চুপাকাবরার দলও তার অধীনে। তিনি চাইলেই আমাকে চুপাকাবরার খাবার হওয়া থেকে বাঁচাতে পারতো কিন্তু তিনিই আমাকে বলেছিলেন এই চিহ্নটি লুকিয়ে রাখার জন্য।”
কথাটা শুনার পর একটা রহস্যের উদঘাটন করতে পারলো ট্রুডো। বুঝতে পারলো যে চুপাকাবরাগুলো কেন তার ভ্যাম্পায়ার রুপ দেখেও তার উপর আক্রমণ করেছিলো। একটা উদ্দেশ্য নিয়েই লোকটা ট্রুডোর পেছনে চুপাকাবরার দলকে লেলিয়ে দিয়েছিলো।
..
..
..
..
..(চলবে………..)
..
আজকের পর্বটি ছোট করে দেওয়া হয়েছে। রমজান মাসব্যাপি গল্প দেওয়ার চেষ্টা করবো রাত নয়টা থেকে দশটার মধ্যে। ধন্যবাদ সকলকে।