………………#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম……………….
……………………..PART:04………………………….
ট্রুডো সামনে এগোতেই হালকা মিষ্টি গন্ধের সাথে মৃদু বাতাস বইতে লাগলো। মেয়েটির চুলগুলো উড়ে পীঠের একদিকে সরে গেলো। ধবধবে গায়ে পরিষ্কারভাবে ভেসে উঠলো ট্রুডোর ঘাড়ের ভ্যাম্পায়ার চিহ্নের মতো একটা চিহ্ন। ট্রুডো মেয়েটির কাছে গিয়ে কাঁধে হাত রাখতেই হালকা চমকে উঠলো। আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে ট্রুডোকে দেখে চমকে বলে উঠলো,”একি! কে আপনি? আমাকে স্পর্শ করলেন কেন? ”
ট্রুডো মেয়েটির কথা শুনে একটু বিব্রত হয়ে নম্রভাবে উত্তর দিলো,”আমি ট্রুডো। আপনার গায়ে স্পর্শ করার জন্য দুঃখিত। আসলে কাল এদিকে ঘুরতে এসে দেখি আপনি বসে বসে কাঁদছেন। আজকেও এসে দেখলাম কাঁদছেন। আপনার কি কোনো সমস্যা হয়েছে? ”
মেয়েটি উদাস হয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো,”আমার সমস্যা আপনাকে বললে কি আপনি তার সমাধান করতে পারবেন? আর আপনি এখানে এলেন কিভাবে?”
ট্রুডো বিচক্ষণতার সাথে আশ্বাস দিয়ে বললো,”সমাধান করতে পারবো কি না সেটা সমস্যাটা জেনে ঠিক করতে হবে। না জানলে কিভাবে সমাধান করবো? আর আপনার নাম কি? পরিচয়টা কি জানতে পারি? ”
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে আলতোভাবে চোখের পলক ফেলিয়ে ঝর্ণার পানির মৃদু স্রোতের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,”আমার নাম এলিনা। এই ঝর্ণাটা যে পাহাড় থেকে নেমে এসেছে সেই পাহাড়ের সাথেই আমার বাড়ি। আমরা উপজাতি। তবে একই উপজাতি হলেও জাত-পাতের বৈষম্য আছে। পাহাড়ের গা ঘেঁষে যাদের ঘরগুলো তারা উঁচু জাতের আর যাদের বাড়ি খানিক দূরে তারা নিচুজাতের।”
ট্রুডো এলিনার কথার মাঝেই প্রশ্ন করলো,” বুঝলাম। মনে হয় পাহাড়ের কোনো বিশেষত্ব আছে আর তা নিয়ে অন্ধবিশ্বাসে ডুবে আছে সবাই। কিন্তু আপনার সমস্যাটা কি? ”
এলিনা ব্যর্থতার সাথে বললো,”আমিও এক নিচুজাতের ঘরের মেয়ে। আর পাহাড়ের বিশেষত্ব পুরোটা আজ পর্যন্ত যতটুকু জেনেছি তা হলো আমাদের গোত্রপ্রধান অনেক বছর আগে অন্য এক জায়গায় থাকতো। অবশ্য তখন তিনি গোত্রপ্রধান ছিলেন না। যখন গ্রীসের বিভিন্ন দেব-দেবীদের মধ্যে নির্লিপ্ততা, লালসা ও অহংকারের প্রতিযোগীতা দেখা দিলো আর ধর্মযাজকদের উপর পড়তে লাগলো সেসব দেবদেবীর ক্রোধ তখন আমাদের গোত্রপ্রধান তার কিছু অনুসারিদের নিয়ে এখানে চলে আসে। তিনিই ছিলেন তখন লোকদের মাঝে সবচেয়ে বয়োজ্যেষ্ঠ আর অ্যাথিনা দেবীর এক প্রাণভক্ত ধর্মযাজক। তাই এখানে চলে আসার পর তিনিই গোত্রপ্রধান হন। ”
কথা বলতে বলতেই এলিনার চোখে যেন সেই পুরোনো ইতিহাসের ছবিগুলো ভেসে উঠতে লাগলো। মনে হতে লাগলো একের পর এক ঘটনা। কিন্তু ট্রুডো এলিনাকে এক আজব প্রশ্ন করলো,”এসবের সাথে পাহাড়ের কি সম্পর্ক? ”
এলিনা আবার বলতে লাগলো,” যখন আমরা এখানে আসি তখন এই পাহাড় জুড়ে ছিলো চুপাকাবরাদের বসবাস। হিংস্র হায়েনাকেও এরা হার মানায়। কিন্তু এই নরখাদক চুপাকাবরার সাথে দেবী অ্যাথিনার এক যোগসূত্র থাকায় গোত্রপ্রধান অ্যাথিনা দেবীর পূজা করে যে শক্তি অর্জন করেছিলো তা দ্বারা এই চুপাকাবরাদের এই পাহাড় থেকে বিতাড়িত করেন। আর যেহেতু গোত্রপ্রধান অ্যাথিনা দেবীর প্রাণভক্ত ধর্মযাজক তাই এখানেও তার মুর্তি স্থাপন করে পূজা করে ক্ষমতাশালী হওয়ার জন্য চেষ্টা করছে। কিন্তু তার জীবনে অর্জিত সব শক্তি চুপাকাবরাদের তাড়াতে ব্যবহার করে ফেলেন যার জন্য অ্যাথিনা দেবীকে সন্তুষ্ট করতে মরিয়া হয়ে উঠেন গোত্রপ্রধান। আর এই গোত্রপ্রধান দেবী অ্যাথিনার মুর্তি এই পাহাড়ের চূড়ায় স্থাপন করার জন্য কিছু লোককে পাহাড়ের চূড়া সমতল করার জন্য নির্দেশ দেয়। তার নির্দেশমতো তারাই সেখানে গিয়েছিলো যারা অ্যাথিনার সমকক্ষ রোমান দেবী মিনার্ভার ভক্ত ছিলেন। পাহাড়ের চূড়া কাটা হলো। কিন্তু উপরে উঠার জন্য তারা সিঁড়ি বা ছোট ছোট খাদ দিতে ভুল করেছিলো বলে আর মিনার্ভা দেবীর ভক্ত হওয়ার কারণে তাদের শাস্তিস্বরুপ পরবর্তী বংশধরে যতগুলো কালো সুন্দরী মেয়ে আসবে তাদের বলি দিয়ে একেকটা সিঁড়ি কাটা হবে। আর তাদের চিনে রাখবার জন্য নিচুজাত মনে করে পাহাড়ের খানিক দূরে ঘর বানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়। ”
কথাটা শুনার পর অবাক হয়ে গেলো ট্রুডো। বুঝতে পারলো এলিনার সমস্যাটা। তার মনে আস্তে আস্তে অস্থিরতা বাড়তে লাগলো। মেয়েটির রুপের মায়ায় আর সেই চিহ্নটার রহস্য বের করাট জন্য তার বন্ধুদের কথা ভুলে গেলো। দুইজন বান্ধবীদের সে খোঁজতে বেরিয়েছে আর তার বন্ধু মিউরিস চুপাকাবরার কবলে এসব কিছুই খেয়াল নেই তার। মেয়েটির মায়াবী আচরণ আষ্টেপৃষ্টে ঘীরে নিয়েছে তাকে। বিচলিত কণ্ঠে ট্রুডো এলিনাকে বললো,”তার মানে এবারের শিকার আপনি? আপনাকে বলি দিয়ে আরেকটি সিঁড়ি কাটা হবে?”
মেয়েটি মুখ ভার করে দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে উত্তর দিলো,”হ্যাঁ। এবার আমার পালা।”
ট্রুডো আগ্রহী কণ্ঠে আবারও এলিনাকে প্রশ্ন করলো,” কিন্তু আপনাকে আগে বলি দেওয়া হলো না কেন? আর যদি আপনাকে বলি দেওয়ার সময় হয়ে থাকে তবে কোন সময়ে এই বলি দেওয়ার অনুষ্ঠানটা পালন করা হয়? ”
এলিনা বললো,”বলি দেওয়ার জন্য কিছু নিয়ম কানুন আছে। যে মেয়েকে বলি দেওয়া হবে তাকে প্রথমে প্রাপ্তবয়স্ক নারী হতে হবে। চেহারা হতে হবে অনন্যা সুন্দরী যাতে গোত্রের সব নারীদের থেকে তার আলাদা বৈশিষ্ট বা গুণ থাকে। আর এই অনুষ্ঠানটা পালন করা হয় প্রতিবছর শুক্লপক্ষ আর কৃষ্ণপক্ষের মাঝামাঝি সময়ে। অর্থাৎ, অমাবশ্যা আর পূর্ণিমার ঠিক মাঝ সময়ে।”
ট্রুডো আশ্চর্য হয়ে গেলো এলিনার কথা শুনে। কোথায় সৌন্দর্য ও বিশেষ গুণের জন্য অ্যাওয়ার্ড দেওয়ার কথা আর এখানে দেওয়া হচ্ছে শাস্তিস্বরুপ বলি। কি অমানবিক কাজ!
ট্রুডো এলিনার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে অজ্ঞাতসারে প্রশ্ন করলো,”কি বলছো! আগামী পরশুই তো শুক্লপক্ষ শেষ! তার মানে সেদিনই………! ”
আনমনা হয়ে এলিনা মাথা নাড়লো। প্রশ্ন করলো ট্রুডোকে,”আপনি এখানে আসলেন কিভাবে? এখনই চলে যান নাহলে মরতে হবে।”
কথাটা শুনে ট্রুডোর হঠাৎ তার বান্ধবীদের কথা মনে পড়লো। তাড়াতাড়ি এলিনাকে বললো, “আপনি কি দুইটা মেয়েকে দেখেছেন। সম্ভবত এদিকেই মর্নিং ওয়াক করতে এসেছিলো।”
এলিনা বলতে যাবে ঠিক এমন সময়ে হঠাৎ জঙ্গলের ভেতর থেকে জেফারীর গলার আওয়াজ ভেসে আসলো বাঁচাও বাঁচাও বলে। তৎক্ষণাৎ ট্রুডো জঙ্গলের দিকে ছুটে চলে গেলো। এলিনাও তাড়াতাড়ি দাঁড়িয়ে ট্রুডোকে সতর্ক করতে বললো,”দাঁড়ান, কোথায় যাচ্ছেন। বিপদে পড়বেন। কথাটা শুনে যান। ” এলিনার কথা না শুনেই জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলো ট্রুডো। এদিক সেদিক খুঁজতে খুঁজতে একটা গাছের নিচে দেখতে পেলো জেফারীকে। দৌঁড়ে জেফারীর কাছে গেলো ট্রুডো। শরীরের কয়েক জায়গায় আঁচড়ের দাগ। রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে আছে। ট্রুডোকে দেখে অস্থির হয়ে পড়লো জেফারী। হাপাতে হাপাতে বললো,”চুপাকাবরা। মেডেকি….”
কথাটা শেষ না হতেই অজ্ঞান হয়ে গেলো জেফারী। তার হাতের দিকে তাকাতেই দেখে হিংস্র চুপাকাবরার আঁচড়ে রক্ত বের হয়ে জমাট বেঁধে গেছে। রক্ত দেখার সাথে সাথে ট্রুডোর মাঝে ভ্যাম্পায়ার সত্ত্বাটি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো। মাথা ভনভন করতে লাগলো। অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও ভ্যাম্পায়ার রুপ এসে গেলো ট্রুডোর। রক্ত খাওয়ার জন্য ছটফট করতে লাগলো। সামনে জেফারী অজ্ঞান হয়ে আছে। বারবার জেফারীর রক্ত চুষে খেতে ইচ্ছে করছে ট্রুডোর। কিন্তু তার মাঝের মনুষ্যত্ব বাধা দিচ্ছে। রক্তের নেশা কাটানোর জন্য টি-শার্টের ভেতর থেকে ভ্যাম্পায়ার লকেটটি বের করে তার দিকে তাকাতেই রক্ত খাওয়ার অস্থিরতাটা কমলো ট্রুডোর। জেফারীকে কাঁধে তুলে নিয়ে তাবুর দিকে যেতে লাগলো। আর ভাবতে লাগলো মেডেকির কথা। জেফারী অজ্ঞান হওয়ার আগে চুপাকাবরার কথা বলেছিলো। তার মানে মেডেকিকে চুপাকাবরা ধরে নিয়ে গেছে। এখনই না গেলে মেডেকির রক্ত চুষে খাবে চুপাকাবরার দল। প্রচন্ড গতিবেগে তাবুর কাছে গিয়ে একটা গাছের আড়ালে গিয়ে নিজের মানুষ রুপে এসে জেফারীকে তাবুতে আনাহীর কাছে রেখেই তাবু থেকে বের হয়ে গেলো মেডেকি আর মিউরিসকে বাঁচানোর জন্য। পুরো জঙ্গলের মাঝে আলোড়ন তুললো ট্রুডো। যদিকে মন চাইছে সেদিক থেকেই খুঁজছে। অবশেষে খুঁজে না পেয়ে আবার তাবুতে ফিরে এলো ট্রুডো। এসে দেখে জেফারীর এখনো জ্ঞান ফিরেনি। ট্রুডোকে দেখামাত্র আনাহী বললো,”তুই তো এইমাত্র বের হলি। আবার এখনই চলে আসলি। বুঝলাম না। কি করছিস তুই? আর জেফারীকে নিয়ে এলি মেডেকি কোথায়?”
ট্রুডো বললো,”জেফারী একটা গাছের নিচে ছিলো। আমি দৌঁড়ে গিয়ে দেখি তার শরীরে চুপাকাবরা আঁচড় কেটেছে কিন্তু তাকে নিয়ে যেতে পারেনি। আমাকে দেখে জেফারী বললো চুপাকাবরা, মেডেকি।ব্যাস। এতটুকু বলার পরই অজ্ঞান হয়ে গেলো।”
বলতে বলতে জেফারীর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিতে লাগলো ট্রুডো। খানিকপর জেফারীর জ্ঞান ফিরতেই ট্রুডো তার কাছে গিয়ে প্রশ্ন করলো, “তখন কি বলতে চেয়েছিলি? তোরা কি চুপাকাবরার কবলে পড়েছিলি? ”
জেফারী ভয়ার্ত তৃষ্ণার্ত অবস্থায় বললো,”হ্যাঁ। আমি কোনো মতে বাঁচতে পেরেছি কিন্তু মেডেকিকে চুপাকাবরার দল ধরে নিয়ে গেছে।”
ট্রুডো বললো,” কোনদিকে গেছে বলতে পারবি? ”
জেফারী আঙ্গুল দিয়ে জঙ্গলের ভেতরের একটা সরু অন্ধকার রাস্তা দেখিয়ে দিলো। ট্রুডো জেফারীর দেখা রাস্তায় দৌঁড়ে গেলো মেডেকিকে বাঁচানোর জন্য।
..
..
..
..(চলবে…….)
..
..
গল্পটির রহস্য নিয়ে আপনাদের কাছে কিছু প্রশ্নের আশা করছি কমেন্টে। নাইস, ওয়াও, অসাম ইত্যাদি কমেন্ট না করে গল্পের যেকোনো দিক তুলে ধরে কমেন্ট করতে পারেন। ধন্যবাদ সকলকে।