………………দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন……………….
………………মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
……………………..PART::02……………………….
ট্রুডো মেয়েটির দিকে যেতে যেতেই হঠাৎ ঝর্ণার পানিতে চাঁদের আলো প্রতিফলিত হয়ে তার শরীরে গিয়ে পড়লো। গায়ে আগুন লাগার মতো ছটফট করতে লাগলো ট্রুডো। তাড়াতাড়ি একটা গাছের আড়ালে গিয়ে লুকালো। অন্ধকারে আবার স্বাভাবিক হয়ে গেলো ট্রুডো। সামনে চাঁদের আলো থাকায় গাছের আড়াল থেকেই মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলো ট্রুডো। মেয়েটি কাঁদতে কাঁদতে ঝর্ণার পানিতে পা ডোবালো আর সাথে সাথেই শীতল ঠান্ডা বাতাস এসে মেয়েটির লম্বা কালো চুলগুলোকে এলোমেলো করে দিলো। চুলগুলো একদিকে সরে যাওয়াতে ফুটফুটে চাঁদের আলোয় মেয়েটির পিঠে একটা চিহ্ন দেখতে পেলো ট্রুডো। চিহ্নটা দেখতে পাওয়া মাত্রই অবাক হয়ে গেলো। ট্রুডোর ঘাড়েও ঠিক সেরকম চিহ্ন আছে। মেয়েটির সাথে কথা বলার জন্য অস্থির হয়ে উঠলো ট্রুডো। কিন্তু সামনে যেতে পারছে না তাই গাছের আড়াল থেকেই দেখতে লাগলো মেয়েটিকে। এদিকে রাত ক্রমশ গভীর হতে চলেছে। রাত বারোটায় আনাহীকে জন্মদিনের উইস করতে হবে। এসব কিছুই খেয়াল নেই ট্রুডোর। দেখতে দেখতে মেয়েটি কান্না থামিয়ে ঝর্ণার জলে হাত পা ধুয়ে দাঁড়ালো। মেয়েটির লম্বা চুলগুলো হাটু পর্যন্ত পুরো শরীর ঘীরে নিলো যেন কালো চাঁদরে ঢাকা। চুলগুলোকে উড়িয়ে পেছন ফিরে তাকিয়ে মেয়েটি তার ঘরে যেতে লাগলো। ধবধবে পরীর মতো চেহারা দেখে ট্রুডো টাসকি খেয়ে গেলো। অবাক দৃষ্টিতে পলকহীনভাবে তাকিয়ে রইলো সে। কিন্তু এদিকে আস্তে আস্তে জঙ্গলের ভেতরের রাস্তা ধরে অন্ধকারে বিলিন হয়ে গেলো মেয়েটি। কিন্তু ট্রুডোর পলক পড়লো না। একদিকে তাকিয়েই রইলো সে। কয়েকক্ষণ পর ব্লেডিকোর ডাক শুনে হুশ এলো ট্রুডোর। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ঝর্ণা থেকে পানি নিয়ে তাবুতে ফিরে গেলো ট্রুডো।
তাবুতে এসে দেখে সবকিছু রেডি। মশাল জ্বালানো হয়েছে। কিন্তু মেডেকি, আনাহী আর জেফারী এখনো তাবু থেকে বের হয়নি। সম্ভবত এখনো রেডি হচ্ছে। রাত প্রায় বারোটা বাজে। আনাহী সাজতে ব্যস্ত। জেফারী আর মেডেকি এই সুযোগে বাইরে এসে সবার সাথে সবকিছু রেডি করলো। কিন্তু ট্রুডো একবারও এদিকে না এসে দূর থেকেই সবকিছু রেডি করতে বললো। সবকিছু রেডি হয়ে গেলে নিজে রেডি হওয়ার জন্য তাবুর ভেতরে গেলো ট্রুডো। সে যাওয়ার সাথে সাথে আবার আনাহী এসে গেলো। বারোটা বাজার সাথে সাথে সবাই উইশ করলো আনাহীকে। চমকে গেলো আনাহী। মজা করতে লাগলো সবাই। কেক কাটার সময়ে দেখলো ট্রুডো নেই। আনাহী বললো,”ট্রুডো কোথায়? সে তো আমাকে উইশ করলো না। ”
ব্লেডিকো জঙ্গল থেকে ধেয়ে এসে বললো,”সরি, ট্রুডোকে খুঁজতে গিয়ে আমারই দেরি হয়ে গেলো। ট্রুডো ফিরেছে?”
ভিরেক্স বললো,”সে রেডি হচ্ছে।”
আনাহী মৃদুভাবে বকবক করে বলতে লাগলো,”বার করছি তার রেডি হওয়া, এখনিই তাকে রেডি হতে হলো! দাঁড়া দেখাচ্ছি মজা। ”
কথাটা বলেই ট্রুডোর তাবুতে প্রবেশ করা মাত্রই অবাক হয়ে গেলো। টি-শার্ট এখনো পড়া হয়নি। শুধু প্যান্ট পড়া ট্রুডোর। বিছানায় টি-শার্ট। এখনি পড়তে যাবে এই সময়ে আনাহী তাবুতে প্রবেশ করেছে। ট্রুডোর পুরো বডি দেখে অবাক হয়ে তাকিয়েই রইলো আনাহী। ট্রুডো আনাহীকে লক্ষ না করে ব্যাগ থেকে কি যেন গ্লাসে ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিয়ে টি-শার্ট পরে পেছনে তাকাতেই দেখে আনাহী। ভয়ে ট্রুডো বললো,” কি রে, তুই এখানে কি করছিস?”
ভ্রু কুচকে আনাহী মুচকি হেসে বললো, “ড্রিলমাস্টার ভয় পেলো বুঝি? এই প্রথম তোর চোখে ভয়ের আভাস দেখতে পেলাম। কি সৌভাগ্য আমার!”
ট্রুডোও একটু মুচকি হেসে বললো, “ঠিক আছে ঠিক আছে। এখন তুই বাইরে যা। আমিও যাচ্ছি।”
বাইরে গিয়ে ট্রুডো ব্লেডিকোকে ইশারা করতেই মশাল নিভিয়ে দিলো। ঘন গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে নম্র আলোয় চাঁদ উঁকি দিচ্ছে। ট্রুডো তাবুর পেছনে গিয়ে জেনারেটর অন করলো। সাথে সাথে তাবুর আশেপাশের সব গাছে লাগানো লাইটগুলি জ্বলে উঠলো। জেনারেটরের আলোয় পরিবেশটা সাজানো হয়েছে পুরো ভূত চতুর্দশীর মতো। সাজানোর আইডিয়াটা পুরোটাই ট্রুডোর। সারারাত পার্টি, আনন্দে মাতামাতি করে ঘুমিয়ে পড়লো সবাই। সবার তাবুতে লাইট নেভানো কিন্তু একমাত্র ট্রুডোর তাবুতে লাইট জ্বলছে। তবে সেটা মোমবাতির। শার্ট খুলে খানিক ব্যয়াম করে বিছানায় বসলো ট্রুডো। একটা বাক্স থেকে এক প্যাকেট রক্ত বের করলো। সামনে কাচের গ্লাসে এক গ্লাস রক্ত নিয়ে আবার রক্তের ব্যাগটা বাক্সতে লুকিয়ে রাখলো ট্রুডো। তৃপ্তিভরে এক গ্লাস রক্ত খেয়ে শুয়ে পড়লো।
সকাল। সূর্যের আলো এখনো জঙ্গলের ভেতরে পৌঁছায়নি। শুধু অন্ধকার কেটেছে মাত্র। মিউরিস তার তাবু থেকে বের হয়ে সকালে মর্নিং ওয়াক করতে বের হলো। কয়েকমিনিট পর জেফারী আর মেডেকিও একসাথে বের হলো মর্নিং ওয়াক করার জন্য। জেফারী আর মেডেকি জঙ্গলের ভেতরের এক সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলো। কিন্তু রাস্তাটি গিয়ে শেষ হয়েছে সেই উপজাতিদের আস্তানায়। বাকীরা সব মরার মতো ঘুমাচ্ছে। জঙ্গলের ভেতরে বিভিন্ন জায়গায় হরেক রকমের গাছের সামনে দাঁড়িয়ে একসাথে ছবি তুলতে লাগলো আর এগোতে লাগলো জেফারী ও মেডেকি। চলতে চলতে দুজনে পৌঁছে গেলো জেরায়াস উপজাতির আস্তানায়। তাদের টং ঘরগুলো দেখে আনন্দে ছবি তুলতে লাগলো। হঠাৎ চারদিক থেকে ঘীরে নিলো উপজাতির কয়েকজন পালোয়ান। ভয়ে হাত পা কাঁপতে লাগলো দুজনের। দুজনে বন্দি হলো উপজাতিদের কাছে।
এদিকে মিউরিসও চলতে চলতে হঠাৎ জঙ্গলের রাস্তায় কয়েকটা মরা পশু দেখে থেমে গেলো। পকেট থেকে রুমাল বের করে নাকে মুখে চেপে ধরে এগিয়ে গেলো দেখার জন্য। মরা পশুগুলোকে দেখে ভীমড়ে গেলো মিউরিস। সবকটা প্রাণীরই দেহের কয়েক জায়গা থেকে মাংস খুবলে খাওয়া। তার উপর আরও অবাক করা একটা ঘটনা হচ্ছে মরা প্রাণীগুলোকে যদি কোনো হিংস্র প্রাণী খেয়েও থাকে তবে জায়গাটিতে রক্ত লেগে থাকবে কিন্তু সেখানে এক ফোটা রক্তও নেই। এমনকি প্রাণীগুলোর শরীরের যে অংশগুলো খুবলে খাওয়া হয়েছে সে ক্ষত স্থানেও রক্তের ছিটেফোটা নেই। প্রাণীগুলোর দিকে ধীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে এসব ভাবতে লাগলো মিউরিস। হঠাৎ তার পেছনে একটা হিংস্র পশুর গড়গড় আওয়াজ শুনা গেলো। চমকে গিয়ে পেছনে তাকাতেই মিউরিস দেখে ছাগলের আকৃতির একটা পশু। মুখটা বড় ধারালো চোখা রক্তমাখা দাঁত। লম্বা লেজটা কাটায় ভরা। ভয়ানক দেখতে পুরো শরীর। শরীরের কিছু অংশ কুমিরের সাথে মিল আর কিছু অংশ গিরগিটির সাথে মিল আছে। চোখদুটো লাল টকটকে। মুখ থেকে রক্ত পড়ছে টুপটুপ করে। ভয়ে পেছনে যেতে লাগলো মিউরিস। অদ্ভুত প্রাণীটাও গড়গড় আওয়াজ করতে করতে মিউরিসের দিকে ধেয়ে যেতে লাগলো। পেছনে সরতে সরতে মাটিতে পড়ে গেলো মিউরিস। বসে বসেই পেছনে যেতে লাগলো সে। প্রাণীটাও আস্তে আস্তে হা করে এগোতে লাগলো তার দিকে। সরতে সরতে মিউরিসের হাতের কাছে একটা শুকনো গাছের ডাল আটকে পড়লো। ডালটিকে হাতে নিলো মিউরিস। তাড়াতাড়ি উঠে দাঁড়ালো কিন্তু সে অতোটাও বোকা নয় যে তা দিয়ে প্রাণীটাকে আঘাত করবে। মিউরিস বুঝতে পারলো যে কয়েকক্ষণের মধ্যেই কয়েকটা প্রাণীকে খেয়েছে তাই তাকে শুধু আক্রমণ করে নিজের কাছে রাখবে যাতে পরে খেতে পারে। কিন্তু সে দৌঁড় না দিতে আস্তে আস্তে পেছনে সরে যেতে লাগলো কারণ সে জানে এসব জঙ্গলের প্রাণীদের সাথে দৌঁড়ে পেরে উঠা যাবে না। আস্তে আস্তে মুখ থেকে রুমালটা খুলে ডালটায় বেধে নিলো মিউরিস। দ্রুত পকেট থেকে দিয়াসলাইটা বের করা মাত্রই মিউরিসের উপর ঝাপিয়ে পড়লো প্রাণীটা। দ্রুত সরে গিয়ে ডালটার আগায় বাঁধা রুমালে আগুন লাগিয়ে প্রাণীটার সামনে ধরলো। সাথে সাথে ভয়ঙ্কর চিৎকার করতে করতে জঙ্গলের ভেতরে চলে গেলো প্রাণীটা। মিউরিসও দেরি না করে তাবুর দিকে দৌঁড়ে যেতে লাগলো। তাবুতে পৌঁছে সবাইকে চিৎকার দিয়ে ডাকতে লাগলো। তাবু থেকে তাড়াতাড়ি আনাহী, ভিরেক্স, ব্লোডিকো আর ট্রুডো বেরিয়ে এলো। হাঁপাতে হাঁপাতে মিউরিস বললো,”এখনই এখান থেকে চলে যেতে হবে। এখানে হিংস্র প্রাণী আছে। আমি কোনোরকমে রক্ষা পেয়েছি।”
আনাহী বললো,”কি হয়েছে? ঘটনাটা কি? ”
মিউরিস সবকিছু বলার পর ট্রুডো বললো, “জেফারী আর মেডেকি কোথায়? তারাও কি প্রাণীটার কবলে পড়েছে? ”
চারদিকে তাকিয়ে দেখে সত্যিই জোফারী আর মেডেকি নেই। হঠাৎ আনাহী বললো,”তারা তো মর্নিং ওয়াকে বের হয়েছিলো। আমাকেও ডেকেছিলো কিন্তু ঘুমের কারণে যেতে পারিনি।”
ভিরেক্স বললো,”আমি তাদের খুঁজে আনছি। ” একথা বলে জঙ্গলের ভেতরের দিকে যেতে লাগলে হঠাৎ ট্রুডো ভিরেক্সকে থামিয়ে দিয়ে বললো,”না। হয়তো তারা ফিরে আসছে। আর নয়তো সেই প্রাণীর কবলে আছে। আমরা বরং একসাথে যাবো। ”
..
..
..
..(চলবে….)
..
গল্পটি সম্পর্কে যেকোনো অভিমত গ্রুপে জানাতে পারবেন। ধন্যবাদ সকলকে।