………………..#দ্যা_ভ্যাম্পায়ার_কুইন………………
………………..মোঃ জুবাইদুল ইসলাম………………
…………………………PART:14…………………………
সকাল হতে চলেছে। ক্লান্ত শরীর। নেই কোনো বিশেষ শক্তি। ঘুমোবার জন্য তাবুটাও নেই। চারদিকে শুধুই নিঃসঙ্গতার ধূসর প্রবাহ। খারাপ লাগছে। মন খারাপ হয়ে গেলো হঠাৎ। হাঁটা শুরু করলো ট্রুডো। হাঁটতে হাঁটতে আবার সেই জায়গা। চারদিকে ভোরের মিষ্টি আলো। ঝর্ণার পানির কলকল প্রতিধ্বনি। গাছপালার নিঃশব্দ ক্রন্দন। জঙ্গলের ভেতরে পড়ে থাকা সাজানো শুকনো পাতাগুলি এলোমেলো হয়ে আছে। হবে না কেন সারারাত ছুটাছুটি, হানাহানি। কতো ধকল গেলো। এতো বছরের বন্ধুত্বকে নিমেষের মধ্যেই শেষ করা হলো। ভ্যাম্পায়ার শক্তিটাও হারাতে হলো। ঝর্ণার তীরে বসে ভাবতে লাগলো ট্রুডো। ঝর্ণার পানির ঠান্ডা বাষ্পহাওয়ায় শীতল প্রবাহ দিচ্ছে। চোখটা লেগে এলো। ঘুমিয়ে পড়লো ট্রুডো। আর মৃত্যুর ভয় নেই, নেই হারানোর ভয়।
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ট্রুডো। সেই দাঁড়কাকটা উড়ে এসে ট্রুডোর মাথায় ঠুকরাতে লাগলো। হুরমুড়িয়ে উঠলো ট্রুডো। সাথে সাথে ভ্যানিস হয়ে গেলো কাকটি। রওনা দিলো সেই গোত্রের আস্তানায়। এখনো কেউ ঘুম থেকে উঠেনি। সবখানে জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সতর্কতার সাথে এলিনাকে খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। ট্রুডোর উপস্থিতি বুঝতে পেরে এলিনা ডাক দিলো ট্রুডোকে। তাড়াতাড়ি এলিনার কাছে দৌঁড়ে গেলো ট্রুডো। শিকলবন্দি এলিনাকে দেখে চোখ ছলছল করে উঠলো তার। শিকটা খোলার জন্য চাবি খুঁজতে লাগলো ট্রুডো।
এলিনা বললো,”গোত্রপ্রধানের কাছে চাবি আছে কিন্তু তার থেকে নেওয়াটা অসম্ভব। তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন।”
ট্রুডো আস্তে আস্তে গোত্রপ্রধানের ঘরের দিকে এগোতে লাগলো। দরজা খুলার শব্দে একটা গাছের আড়ালে লুকালো ট্রুডো। বেরিয়ে এলো গোত্রপ্রধান। হাটতে হাটতে এলিনার সামনে এলো। এলিনা চোখ দিয়ে ইশারা করলো তার ঘরে যাওয়ার জন্য। ট্রুডো তাড়াতাড়ি গোত্রপ্রধানের ঘরে প্রবেশ করলো। শুরু হলো চিরুনি তল্লাশি। ঘরের যেদিকেই হাত দেওয়া হচ্ছে শুধু পুরোনো পুঁথি আর বই। মায়াবিদ্যার যতো বই আছে মনে হয় সব এই গোত্রপ্রধানের কাছে। সবকিছু উল্টিয়ে পাল্টিয়ে চাবিটা খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। গোত্রপ্রধানকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করলো এলিনা। এলিনার কথাকে পাত্তা না দিয়ে ঘরের দিকে যেতে লাগলো গোত্রপ্রধান। ভয়ে এলিনার মন অস্থির হয়ে উঠলো। পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে ভয় পেয়ে গেলো ট্রুডো। ঘরে ঢুকলো গোত্রপ্রধান। পেছনে সরে যেতে লাগলো ট্রুডো। আটকে গেলো দেয়ালে। ট্রুডোকে দেখে গোত্রপ্রধান প্রচন্ড রেগে গিয়ে তাকে মারার জন্য এগিয়ে যেতে লাগলো। হাত লেগে একটা মোটা বই মাটিতে পড়ে গেলো। বইয়ের ভেতর থেকে একটা চোখা ধারালো সুইয়ের মতো একটা পিন গড়িয়ে এলো ট্রুডোর পায়ের কাছে। তাড়াতাড়ি পিনটাকে হাতে নিয়ে গোত্রপ্রধানের বুকে বসিয়ে দিলো এক ঘা। মাটিতে পড়ে গেলো গোত্রপ্রধান। গোত্রের অন্য লোকেরা আসার আগেই তাড়াতাড়ি গোত্রপ্রধানের শরীরে চাবি খুঁজতে লাগলো ট্রুডো। হঠাৎ গোত্রপ্রধানের গলার দিকে চোখ যায় ট্রুডোর। একটা সবুজ আলো ঝলকানো পাথরের সাথে একটা চাবি গলায়। অতোশত না ভেবে একটা হ্যাচকা টান দিয়ে গলা থেকে লকেটসহ চাবিটা নিয়ে দৌঁড়ে বাইরে চলে এলো ট্রুডো। তাড়াতাড়ি শিকলের তালাটা খুলতে লাগলো ট্রুডো। আস্তে আস্তে গোত্রের লোকেরাও ঘুম থেকক উঠে বাইরে আসতে লাগলো। তালাটা প্রায় খোলে গেছে। গোত্রের কয়েকজন ট্রুডোকে তালা খুলতে দেখে তেড়ে আসতে লাগলো তার দিকে। তালাটা খুলে যেতেই ভয়ঙ্কর এক গর্জনে এলিনা ভ্যাম্পায়ার হয়ে গেলো। বিশাল পাখাদুটি দিয়ে আছাড় দিলো গোত্রের লোকগুলোকে। তাদের আওয়াজ শুনে ঘর থেকে সবাই হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে এলো। সাথে সাথে ট্রুডোকে নিয়ে আকাশে উড়াল দিলো এলিনা। তাদের ধরতে না পেরে রাগে খিচতে লাগলো গোত্রের লোকগুলো। গোত্রের একজন তাড়াতাড়ি গোত্রপ্রধানের ঘরে প্রবেশ করে দেখে জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পড়ে আছে গোত্রপ্রধান। চিৎকার দিয়ে সবাইকে ডেকে আনলো সে। বাইরে বের করা হলো গোত্রপ্রধানকে। বুকে একটা ছোট ছিদ্র দেখতে পেয়ে একজন সবাইকে বললো,”সরে যাও সবাই। দুদিন সময় লাগবে উনার। তার মায়াশক্তি দিয়ে দুদিন পর তিনি আবার ফিরে আসবেন।”
চমকানো চোখে সবাই তাকিয়ে রইলো গোত্রপ্রধানের দিকে। চোখ ছলছল দৃষ্টি সবার। গোত্রপ্রধান অচেতন থাকায় গোত্রের ভেতরে সবাই স্তব্ধ হয়ে রইলো। কেউ কোথাও বের হওয়ার সাহসও পেলো না। এলিনাকে ফিরে আনতে গোত্রের সেই লোকটি এলিনার বাবা মাকে বন্দি করার আদেশ দিলো। সাথে সাথে বন্দি করা হলো এলিনার বাবা মাকে।
ট্রুডোকে নিয়ে কয়েক কিলোমিটার দূরে আরেক অজানা জঙ্গলে নামলো এলিনা। উঁচু পাহাড়ের শেষ মাথাটা বেকে গিরিখাদের উপরে এসে পড়েছে। সেখানে দাঁড়িয়ে পুরো জায়গাটায় নজর রাখা যায়। একটা বিশাল বড় গাছও আছে। গাছের নিচে বসে দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেড়ে একটা মুচকি হাসি দিলো ট্রুডো। এলিনাও মানুষ রুপে এসে বসে পড়লো ট্রুডোর পাশে।
এদিকে মিউরিসকে একটা হাসপাতালে নেওয়া হলো। অপারেশন করে পা টা কেটে ফেলে দেওয়া হলো। মাত্র একজনের জন্য ভেঙ্গে গেলো এতোবছরের প্রিয় গ্রুপটি। আনাহীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ভিরেক্স অনেক খু্ঁজাখুঁজি করেছে আনাহীকে। কোথাও খুঁজে পায়নি। আনাহীর জন্য চিন্তায় আছে তারা। অভিমান করে চলে গেছে আনাহী। যেকোনো সময় যাকিছু করে ফেলতে পারে। হসপিটালে জেফারীকে রেখে বাকীসব বের হলো আনাহীকে খুঁজে আনার জন্য। সারাদিন খুঁজাখুঁজি করার পর সবাই একত্রিত হলো ভিরেক্স এর বাসায়। ভিরেক্সও খুব কষ্ট পাচ্ছে। অবশেষে ঠিক করা হলো থানায় জানানোর জন্য। দুজন চলে গেলো থানায়। শুরু হলো পুলিশ আর তাদের খুঁজাখুঁজি। পার হতে লাগলো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। চিন্তা বাড়তে লাগলো সবার।
..
..
..
..
..
..
..(চলবে……………)