দূর হতে আমি তারে সাধিব পর্ব-০৩

0
321

#দূর_হতে_আমি_তারে_সাধিব
#পর্ব_০৩
#অনন্যা_অসমি

” আপনাদের একসাথে বেশ লাগছে ভাইয়া। আপুটা কিন্তু বেশ সুন্দরী। এই নেন আপনার ফুল।”

সাফাইত প্রতিউওরে কিছু বললনা। হেঁসে ছেলেটা থেকে ফুল জোড়া নিয়ে টাকা পরিশোধ করে সামনে এগিয়ে গেল। একটা ফুল পকেটে রেখে অন্যটা তোহার চুলে ক্লিপ দিয়ে আটকে দিল। নীরবতা কাটিয়ে তোহা বলল,

” ছেলেটার ভূল ধারণা ভাঙালিনা কেন? ও তো অন্যকিছু মনে করছে।”

” কি মনে করছে? আমাদের একসাথে তো ভালোই লাগছে, ম্যাচিং ম্যাচিং কালার। বেস্টফ্রেন্ডরাতো ম্যাচিং ম্যাচিং পড়তেই পারে। কিন্তু ছেলেটা একটাই ভূল কথা বলেছে।”

” কী?”

” এই যে তুই সুন্দরী৷ নির্ঘাত ওর চোখে কেউ জাদু করেছিল তাই তোকে ওর সুন্দর লেগেছে। তোর দিকে তাকালে তো আমার শেওড়া গাছে পা ঝুলিয়ে থাকা পেত্নীর কথা মনে পড়ে।”

” শয়’তানরা কখনো ভালো জিনিসের মূল্য করতে জানেনা৷ তোর চোখ যে নষ্ট তা আমি জানি।”

সাফাইত চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকাল। তোহা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে তাকে ছেড়েই হাঁটতে লাগল।

আইসক্রিম খাওয়ার সময় ভুলবশত তোহার মুখে খানিকটা আইসক্রিম লেগে গেল।

” দেখত সাফু গিয়েছে নাকি?”

” সর, তোর দাঁড়া হবে না গাধী। এটা ধর, এদিকে আয়।”

তোহাকে টেনে আরেকটু সামনে আনলো সে। যত্ন সহকারে মুখে লেগেটা আইসক্রিম মুছে দিল।

” এবার ঠিক আছে।”

তোহা সাফাইতের দিকে তার আইসক্রিমটা বাড়িয়ে দিয়ে নিজেরটা খাবে তার আগেই সাফাইত বেশখানিকটা খেয়ে ফেলল।

” কি করলি তুই! কুত্তা তুই আমারটা কেন খেলি?”

সাফাইত নিজের আইসক্রিমে কামড় বসিয়ে ভাব দেখিয়ে বলল, ” আমি কোন বিনামূল্যে করিনা। তোর মুখে লেগে থাকা আইসক্রিম পরিষ্কার করে দিয়েছে তার তো কিছু মূল্য দিতে হবে। আমি তো জানি তোর থেকে চেয়ে লাভ নেই তাই নিজেরটা নিজেই বুঝে নিলাম।”

নিজের আইসক্রিমটাও সাফাইতের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তোহা রেগে ধুম করে একটা কিল বসিয়ে দিল তার পিঠে। যদিও সে খুব বেশি ব্যথা পায়নি তবুও নাটক করে বলল, ” ও আম্মা গো আমার পিঠের হাড় মনে হয় ভেঙে গিয়েছে। আন্টি আপনার মেয়ে আমাকে পঙ্গু করে দিয়েছে।”

তোহা তার মাথায় টোকা দিয়ে বলল, ” গাধা মানুষ পায়ে হাঁটতে না পারলে তাকে পঙ্গু বলে।

তাদের এই হাসিঠাট্টা কেউ দূর থেকে যে দেখছে এটা দু’জনের কেউ লক্ষ্য করেনি।

মাকে রান্নায় সাহায্য করছিল ইশরা, ফোনের শব্দে রুমে এসে দেখল আননোন নম্বর থেকে কল এসেছে।

” কে বলছেন?”

” ইশরা আমি সিনথিয়া। কেমন আছিস?”

” এইতো ভালো আছি। তোর কি খবর? নম্বর সেভ না থাকার কারণে বুঝতে পারিনি।”

” আমিও ভালো আছি। আচ্ছা তোর কি সাফাইত ভাইয়ের সাথে ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে নাকি?”

সিনথিয়ার কথা শুনে চমকে উঠল ইশরা। ব্যস্ত কন্ঠে বলল, ” না না সেরকম কিছু হয়নি। আমাদের মাঝে তো সবঠিকই আছে।”

” দেখ ইশরা আমি তোর ক্লোজ ফ্রেন্ড না হলেও আমরা ক্লাসমেট। তোর সাথে আমার কোন ঝামেলাও নেই যে আমি তোর ক্ষতি চাইব। তোর ভালো চাই বলেই জানানোর জন্য তোকে ফোন করলাম।”

মেয়েটার কথার ভঙ্গিমা দেখে ইশরা মন ঘাবড়াতে লাগল।

” সিনথিয়া হেঁয়ালি না করে একটু পরিষ্কার করে বল কি হয়েছে?”

” আসলে আমি একটা পার্কে এসেছিলাম ঘুরতে। এখানে সাফাইত ভাইকে একটা মেয়ের সাথে দেখলাম। বেশ হেসেখেলে সময় কাটাচ্ছে তারা। ম্যাচিং কালারের ড্রেসও গায়ে দেখছি। ভেবেছিলাম হয়তো তোদের ব্রেকাপ হয়ে গিয়েছে এখন শুনি সেরকম কিছুই হয়নি৷ তার মানে কি সাফাইত ভাইয়া চিট করছে নাতো?”

সাফাইতকে অন্য মেয়ের সাথে হেসেখেলে সময় কাটাচ্ছে জেনে ইশরার বুক কেঁপে উঠল। সাফাইতকে সে প্রচুর বিশ্বাস করে, সে যদি বিশ্বাস ভেঙে দেয় তাহলে ইশরা পরবর্তীতে কাউকে ভরসার করার সাহস দেখাবেনা।

” কি হলো ইশরা? তুই ঠিক আছিস? আমি বুঝতে পারছি কথাটা শুনে…..”

” আচ্ছা মেয়েটা কেমন দেখতে বলতো।”

” আমি তোকে ছবি ওয়াটসএপ করেছি, নিজেই দেখে নে।”

ইশরা দ্রুত ছবিটা দেখল। ছবিতে তোহাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিল সে।

” ধুর মেয়ে তুই তো আমাকে ভয়ই পাইয়ে দিয়েছিলি। আরে এটা ওর বেস্টফ্রেন্ড, আমি চিনি আপুকে। তুই আর চিন্তা করিস না। সাফাইত আমাকে কখনো ধোঁকা দিবে না।”

” ও…আচ্ছা।” নির্লিপ্ত কন্ঠে বলল মেয়েটি। পরবর্তী আবারো বলল, ” তাও এখন যা অবস্থা, কোন কিছুর বিশ্বাস নেয়। খেয়াল রাখিস ওদের দিকে। বন্ধুদের পেছনে তোর অগোচরে যদি কিছু করে বেড়ায়। বেশি বিশ্বাস করে ছেড়ে দিসনা, হারিয়ে গেলে তখন পস্তাবি। রাখছি আমি।”

সিনথিয়া ফোন তো রেখে দিল কিন্তু ইশরার মনে ভয় এবং সন্দেহের বীজ পুঁতে দিয়েছে।
.
.

ঘাসের উপর ধপ করে ইশরার পাশে বসে পড়ল সাফাইত। তাকে চুপচাপ দেখে জানতে চাইল,

” কি হয়েছে? এভাবে চুপচাপ বসে আছো কেন? সকালে কিছু খাওনি নাকি?”

” খেয়েছি।” র্নিলিপ্ত কন্ঠে বলল সে।

” তাহলে এভাবে বসে আছো কেন? কিছু বলো। এই ইশু তোমার কি মন খারাপ? আমার দিকে তাকাও তো।” গালে হাত দিয়ে নিজের দিকে ফেরালো সাফাইত। ইশরা গাল থেকে হাত সরিয়ে তা আঁকড়ে ধরে বলল, ” কাল একবারো ফোন করোনি কেন? জানো কতক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম।”

” আচ্ছা এই কারণে মহারাণীর মন খারাপ। আসলে কাল ফোনটা পানি পড়ে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আসার পর ঠিক করাতে দিয়ে এসেছি। পরে তোমাকে অন্য ফোন থেকে ফোন দিতেও মনে ছিল না। দাঁড়াও তোমাকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিল।”
ব্যাগ থেকে একটা শুকনো গোলাপ ফুল তার দিকে এগিয়ে দিল সে, যার কয়েকটা পাপড়ি ইতোমধ্যে ঝড়ে গিয়েছে।

” এটা তোমার জন্য কালকে নিয়েছিলাম। তখন অনেক তাজা ছিল, কি টকটকে লাল ছিল রঙ। কিন্তু এখন দেখো শুকিয়ে মরা হয়ে গিয়েছে। তোমার কথা ভেবে নিয়েছিলাম এখন না দিলেও শান্তি পাবো না। তাই শুকনো, মরমরেটাই দিলাম।”

ইশরা হেসে ফুলটা নিয়ে বলল, ” তুমি আমাকে ভালোবেসে যায় দাও না কেন আমি তাতেই খুশি।”

কথায় কথায় ইশরা অন্যদিকে চলে গেল। সে ভেবেছিল কড়া করে জিজ্ঞেস করবে সাফাইত কাল কোথায় ছিল যদিও বা সে জানে। কিন্তু কথার তালে তা সম্পূর্ণ ভূলে গিয়েছে।

তবে বেশ কিছু সময় কথার তালে সাফাইত নিজেকেই বলল, ” জানো কালকে তোহাকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছিলাম৷ সেসময় এই ফুলটা নিয়েছি। ওর আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছিলাম বলে সে কি রাগ।”

ইশরা কথা কাটানোর জন্য বলল,
” তা তো অবশ্যই করবে। আচ্ছা সেসব বাদ তাও, তুমি….. ” পুনরায় তারা অন্য কথায় চলে গেল। আপাতত ইশরা সেসব নিয়ে কোন ধরনের কথা বলে তাদের সুন্দর মূহুর্তটা নষ্ট করতে চাইনা।
.
.

সাফাইত বারবার ঘড়ি দেখছে দেখে তোহা বলল,

” কিরে এতোবার ঘড়ি দেখছিস কেন? কি হয়েছে?”

” সময় যাচ্ছেই না। কখন যে এই ক্লাসটা শেষ হবে।” বেঞ্জে কপাল ঠেকিয়ে বলল সে।

” বারবার ঘড়ি দেখলে কি সময় দ্রুত চলে যায়? কোন জরুরি কাজ আছে নাকি?”

” হুম ইশরার সাথে দেখা করতে যাবো। পরের ক্লাসে ওর অফ।”

চুপ হয়ে গেল তোহা। কয়েক সেকেন্ড পরে ধীর কন্ঠে বলল, ” হাতটা এদিকে দে তো।”

সাফাইত নিজের ডান হাতটা এগিয়ে দিল। তবে তোহা সেটা সরিয়ে বাম হাতটা সামনে আনলো এবং ঘড়িটা খুলে নিজের ব্যাগে রেখে দিল।

” ঘড়ি খুলেছিস কেন? পছন্দ হয়েছে তোর? নিয়ে যাবি?”

” তোর তুই পঁচা ঘড়ি আমার লাগবেনা। বারবার সময় দেখলে অস্থিরতা বাড়বে। তাই এটা এখন আমার কাছে থাক এখন তুই ক্লাসে মনোযোগ দে। পরে আমাকে যদি বলিস বুঝিয়ে দিতে তাহলে তোর খবর আছে।”

সাফাইত হতাশ হয়ে গালে হাত দিকে স্যারের দিকে তাকিয়ে রইল শুধু, কোন পড়াই তার কানে যাচ্ছেনা। তার অবস্থা দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলল তোহা।
লিখতে লিখতে বলল,

” কবে যে এই ছেলে ঠিক হবে।”

ক্লাস থেকে স্যার বেরিয়ে যেতেই সাফাইতের মনে যেন প্রাণ এলো। তার সব অলসতা যেন মূর্হুতে উবে গেল। তা দেখে তোহা খোঁচা দিয়ে বলল,

” এতোক্ষণ তো ম’রা মুরগীর মতো ঝিমচ্ছিলি এখন বুলেট ট্রেনের মতো দৌড়াচ্ছিস।”

” ও তুই বুঝবিনা। প্রেম করতে হলে মরা মুরগী হলে চলেনা। বুলেট ট্রেন নাহলে প্রেম করে মজা আছে নাকি?”

সাফাইত ব্যাগ নিয়ে দ্রুত পায়ে বেরিয়ে যেতে লাগল। পেছন থেকে তোহা উচ্চস্বরে বলল, ” আরে সাফু তোর ঘড়ি তো নিয়ে যা।”

সাফাইত না থেমেই জবাবে বলল, ” তোর কাছে রেখে দে আমি কাল নেব। পরবর্তী ক্লাসগুলো মন দিয়ে করিস, আমাকে নোট’স পাঠিয়ে দিস।”

” আর ক্লাস করবি না আজ?”

” নারে তোহারাণী৷ আজ আমি গেলাম, সাবধানে বাড়ি যাস। তোর কিছু হলে আমি নোট’স পাবো না।” শেষ কথাটা শুনে তোহা কটমট করে তার দিকে তাকাল। যা দেখে সাফাইত ভীষণ মজা পেল। হাসতে হাসতে ক্লাস রুম ত্যাগ করলে সে।

চলবে……

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে