দু মুঠো বিকেল পর্ব-৩৬+৩৭+৩৮

0
1897

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩৬
Writer-Afnan Lara
.
ড্রয়িং রুমে থাকা আট দশটা চেয়ার ভর্তি মানুষ,,,সবাই মুরব্বী আর দাঁড়িয়ে আছেন সেই আটদশজন পুরুষের বিবাহিত স্ত্রীরা
সবাই চোখ বড় বড় করে একজন আরেকজনের সাথে আলাপ আলোচনা করে যাচ্ছেন,বিষয়টা সাংগাতিক!!!!

স্পর্শ দরজা খোলা পেয়ে হুরমুড়িয়ে ভিতরে ঢুকে তাই বুঝলো এতক্ষণ ধরে
কিন্তু রিমঝিম কোথায়??
গলার থেকে টাইটা ঢিল দিয়ে সে ভেতরে প্রবেশ করার আগেই উপরের তলার একজন মুরব্বী ওর সামনে এসে দাঁড়ালেন,এতক্ষণ তিনি স্পর্শকেই দেখছিলেন
.
সন্ধ্যা হয়ে গেছে,স্পর্শ সবেমাত্রই অফিস থেকে ফিরেছে
কিন্তু বাসার মহলের আগামাথা কিছুই বুঝছে না সে
এরা সবাই এখানে কি করছে?আর রিমঝিমই বা কোথায়??
.
কি হলো দাদা??
.
কি হয় নাই সেটা বলবা তুমি,এতদিন ধরে একটা মেয়েকে তুমি বিয়ে না করে তোমার সাথে একই বাসায় রাখতেছো আর খবর আমরা আজ পেলাম??সমাজ কি নাই দুনিয়ায়??
গুরুজনদের শিক্ষা দীক্ষাও পাওনাই নাকি??
.
স্পর্শর আর বুঝতে বাকি নেই যে তিল থেকে ব্যাপারটা তাল হয়ে গেছে
সে হালকা কেশে বললো”না আসলে বিষয়টা এরকম না”
.
থামো তুমি!!এই এরিয়ায় সমস্ত মান্যগণ্য মানুষরা থাকে
এর ভিতরে তোমরা কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসে যুবসমাজ নষ্ট করবা তা তো আমরা হতে দিতে পারি না!!
কি শিখবে বাকিরা??মেয়েকে বিয়ে না করে তার সাথে থাকা অন্য দেশে নরমাল হলেও আমাদের দেশে নরমাল নয়
.
রিম কোথায়?
.
আমাদের কথায় তোয়াক্কা না করে তুমি আবার সেই মেয়ের নাম নিচ্ছো,তোমার মা বাবার নাম্বার দাও,আমরা কথা বলছি,তোমাদের পুলিশে দেওয়ার ব্যবস্থাও আমরাই করে দেবো
.
স্পর্শ সবাইকে সরিয়ে রিমঝিমের রুমের কাছে এসে দেখলো ও রুমের এক কোণায় বসে আছে,চোখ মুখ ভিজে একাকার তার
তার পাশে কয়েকজন মহিলা অগ্নি দৃষ্টিতে চেয়ে আছেন ওর দিকে
যেন কামান বন্দুক দিয়ে মারবেন
.
রিম?
.
রিমঝিম মাথা তুলে স্পর্শকে দেখে কেঁদে ফেললো,কিছু বলার সাহস পেলো না আর
.
এদিকে স্পর্শ গিয়ে যে রিমকে সামলাবে তার ও কূল নেই
.
এবার জনসমাবেশে একটা কথা রটে গেলো আর সেটা হলো ওদের ধরে বিয়ে করিয়ে দেওয়া উচিত
.
রিমঝিম না চমকালেও চমকেছে স্পর্শ
.
সে ড্রয়িং রুমের দিকে গিয়ে বললো”এসব কি বলছেন আপনারা??আমি আজই রিমঝিমকে ওর বাসায় পাঠিয়ে দেবো,তাও এই ডিসিশানের কথা মাথায় আনবেন না”
.
শুনো ছেলে,এত সহজে সব কিছু হলে এর পরে তোমার বয়সের অবিবাহিত ছেলেরাও কদিন মেয়ে এনে রেখে তারপর আবার তার বাড়ি পাঠিয়ে দেবে,আজ তোমাদের উচিত শিক্ষা না দিলে ওরা নষ্ট হয়ে যাবে এসবে
.
এদিকে একজন তো বলেই দিলো জলদি করে ইমামকে খবর দিতে
রিমঝিমের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়েছে এমন অবস্থা,তার এখন কি করা উচিত??

বিকালবেলা কলিংবেল বেজে উঠতেই রিমঝিমের মনে হলো এটা স্পর্শ
ইচ্ছে করে মুখটা ফুলিয়ে সে গেলো স্পর্শকে ঝাড়ি দিতে,তাকে কিছুতেই বুঝতে দেওয়া যাবে না যে সে মোটেও রেগে নেই
দরজা খুলতেই মূহুর্তেই মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো রিমের
ওর সামনে জনে জনে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে,মহিলারা তো রীতিমত ওকে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ভিতরে ঢুকে পুরো রুমগুলো ভালো মতন পরোক করে নেওয়া শুরু করে দিলো
রিমঝিম মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারলো কারণ তার জানা হয়ে গেছে এরা এমন বিহেভ কেন করছে
একটা মহিলা এগিয়ে এসে রিমের হাত চেপে ধরে বললেন”মা বাবা এসব শিখিয়েছে?বিয়ের আগে একটা ছেলের সাথে থাকা??লজ্জা করে না?বেহায়া মেয়ে কোথাকার”
.
একজন আস্তে করে বললেন”মনে হয় রক্ষিতা”
.
জাতের ঠিক আছে তো তোমার??নাকি নিষিদ্ধ পল্লী থেকে এসেছো??
.
রিমঝিম ছলছল চোখে তাকিয়ে বললো”এসব কি বলছেন আপনারা??স্পর্শ আমার রিলেটিভ হয়”
.
রিলেটিভ হয়,স্বামী তো না,আমরা বেশ খবর পেয়েছি তোমরা বিবাহিত না
বিয়ে ছাড়া এখানে সংসার পেতেছো,একসাথে থাকছো,ঘুমাচ্ছো
কাল ভাগ্যিস আমার ছেলে রাতের বেলায় বারান্দায় এসে তোমাদের কুকর্ম দেখে ফেলেছিল নাহলে তো জানতামই না আমাদের কলোনিতে এসব হয়,ছিঃ ছিঃ”
.
রিমঝিম একটা টু শব্দ ও করার সুযোগ পেলো না,যে যা পারছে তা বলে যাচ্ছে,অপমান করতে করতে ওকে রুমের এক কোণায় বসিয়ে রেখে দিয়েছে তারা

স্পর্শ ঘুরে রুমে এসে রিমের হাত ধরে নিচ থেকে তুলে বললো”চলো তোমাকে তোমার বাসায় দিয়ে আসব আমি,তারপর যা হবার হবে”
.
মোহাম্মদ আনোয়ার মিয়া এগিয়ে এসে পথ আটকালেন ওদের তারপর শক্ত গলায় বললেন”হুম,যাবে,যাওয়ার হলে অবশ্যই যাবে,তবে অবিবাহিত রুপ নিয়ে নয়,তুমি এই মেয়েকে আজ এই মূহুর্তে বিয়ে করবে,নাহলে আমরা পুলিশ ডাকব”
.
স্পর্শ রিমের হাত ছেড়ে দিয়ে আনোয়ার মিয়ার মুখোমুখি হয়ে বললো”ফাইন,ডাকেন পুলিশ”
.
ওপাশ থেকে দুটো লোক এগিয়ে এসে আনোয়ার মিয়ার কানে ফিসফিস করে বললেন”পুলিশের চক্করে পড়লে কি হবে বুঝেন তো,ওদের ধরে নিয়ে যাবে,তারপর ওরা ছাড়া পেয়ে ঘুরে ফিরে বেড়াবে,তো লাভ হলো কি আমাদের??”
.
আনোয়ার মিয়া একটা চেয়ার টেনে বসলেন,তারপর সাদা দাঁড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে হালকা হেসে বললেন”ডাকো পুলিশ তোমরা,সাথে মিডিয়ার লোকদের ও ডাকো,ওদের চেহারা পুরো বাংলাদেশ দেখুক”
.
রিমঝিম চোখ বড় করে উনাদের দিকে তাকালো,তারপর স্পর্শর দিকে করুন চোখে তাকালো সে
এরকম বদনামি হলে বেঁচে থাকাই বৃথা হয়ে যাবে
স্পর্শর ও বিষয়টা সুবিধার মনে হলো না
তাহলে এখন করবো তো কি করবো?
.
স্পর্শ জলদি করে পকেট থেকে ফোন বের করলো চাচাকে কল করার জন্য তার আগেই ওর হাত থেকে একজন ফোন কেড়ে নিয়ে বললেন”খবরদার দলবল ডাকবা না,যা হবার যা করার আমরাই করবো”
.
আমি আমার চাচাকে কল করবো,উনি এই দালানের মালিক
.
সে যায় হোক,উনি এসেও এটাই বলবেন,আর তুমি এখন কাউকে ফোন করতে পারবে না
আর তোমরা সবাই কিসেরই বা অপেক্ষা করছো??কল দাও পুলিশকে,সাথে মিডিয়ার লোককেও
.
রিমঝিম কেঁদে ফেললো,জলদি করে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে রেখেছে সে যাতে কান্নার আওয়াজ না বের হয়
.
স্পর্শ এক ধমক দিলো সামনে থাকা সব মুরব্বীদের
তারপর কঠিন গলায় বললো”অনেক হয়েছে,ডাকুন পুলিশ,ডাকুন মিডিয়ার লোকদের”
.
আনোয়ার মিয়া পাশে তাকিয়ে একজনকে ইশারা করতেই লোকটা ফোন নিয়ে কানে ধরলো
রিমঝিম কান্না থামিয়ে স্পর্শর হাত ধরে বললো”না স্পর্শ,এত বড় বিপদ ডেকে আনবেন না”
.
তাই বলে আমি তোমাকে বিয়ে করে তোমার জীবন নষ্ট করতে পারি না,এর চেয়ে সবাই জানুক,তাও অন্তত বিয়েটা হবে না
.
না!!!
.
রিমঝিম কাঁদতে কাঁদতে স্পর্শর পায়ের কাছে বসে গেলো
তারপর অস্পষ্ট স্বরে বললো”তাহলে মৃত্যু ছাড়া আর উপায় থাকবে না আমার”
.
স্পর্শ রিমকে ধরে তুলতে নেওয়ার আগেই আনোয়ার মিয়া এক ধমক দিয়ে বললেন”ব্যস,,মুরব্বীদের সামনেও এসব করছো তোমরা!!!নিশাদ মিয়া জলদি করে আক্কাস ইমামকে ডাক দাও এখনই”
.
স্পর্শ রিমকে টেনে রান্নাঘরে নিয়ে আসলো,রিম কান্নার জন্য কিছু বলতে পারছে না
.
রিম তুমি আমাকে বিয়ে করতে চাও?
.
রিম চোখ তুলে বললো”চাই না আমি,তবে সামনে যে বদনাম আসতে চলেছে তার চেয়ে এটাই ভালো মনে করি
আমার দোষেই আজ এত বড় একটা ডিসিশান নিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে আমাদের
না আমি বাসা থেকে জেদ ধরে পালিয়ে আসতাম,না আপনার কাছে এসে এভাবে থাকতাম
না আজ এমনটা হতো
.
দোষ তোমার নয় রিম,দোষ আমার,,আমি কাল মাতলামি না করলে আমাদের কথা কেউ জানতই না
.
কি ছেলে??আর কতক্ষণ গপ্পো করবা,এবার বন্ধনে আটকা পড়ো,আমরাও বাঁচি,আমাদের সমাজ ও বাঁচুক
.
একজন মহিলা হনহনিয়ে রান্নাঘরে ঢুকে রিমের হাত ধরে নিয়ে গেলেন,স্পর্শ বের হতেই দেখলো ইমাম ও এসে হাজির ততক্ষণে
হাতে মোটা বই,আজ মনে হয় বিয়েটা দিয়েই ছাড়বে
মহিলাটি রিমের মাথায় ঘোমটা টেনে দিয়ে বললেন”কবুল বলতে কইলে সাথে সাথে কইবা,তোমাগো উত্তর পাওয়ার আশায় এত সময় নষ্ট করতে পারবো না বাপু,এমনিতেও ঘরের কাজ ফালাই সমাজ বাঁচাইতে আসছি
কি মেয়েরে বাবা তুমি!!এই শিক্ষা দিলো পরিবার??এবার হলো তো???”
.
ওপাশ থেকে একজন এসে বললেন”কবুল বলো”
.
দু ফোটা চোখের পানি ফেলে রিমঝিম কবুল বলেই দিলো
স্পর্শর ও বলা শেষ,,সবাই একসাথে আলহামদুলিল্লাহ বলে উঠলেন
একটা দিনে সব পাল্টে যাবে এভাবে কখনওই ভাবেনি রিম
এত কড়াকড়ি হয়ে যাবে তা জানলে সে এখানে আসতোই না
আসলে আমি ম্যাচিউর না,আমি অজ্ঞাত এসব ব্যাপারে
কিন্তু স্পর্শ?সে কি জানত না এমন একটা পরিস্থিতিতে আমরা পড়তে পারি??আমরা তো এমন কাছাকাছি আসিনি একসাথে এতদিন থাকার পরেও
কাল কে কি দেখলো তার জন্য দায়ী স্পর্শ,তবে তার সম্পূর্ন দোষ ও নয়,সে সজ্ঞানে তো ছিলো না
আর আজ তো সে বিয়েও করতে সাফ না করে দিয়েছিলো
তার তো নিহার সাথে বিয়ে হওয়ার কথা,বাধ্য হয়ে আমাকে বিয়ে করলেন উনি,আমার সাথে সাথে তার জীবনটাও নষ্ট হয়ে গেলো
এতবড় হুমকি দিবে এরা আমরা তো ভাবতেই পারিনি
.
রিমঝিম হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে আশেপাশে তাকালো,সবাই চলে গেছে,কেউ নেই
রাত দশটা বাজে তখন
.
রিমঝিম নিচ থেকে উঠে দাঁড়িয়ে কিছুটা দ্রুত গতিতে রুম থেকে বের হতে যেতেই স্পর্শর সাথে ধাক্কা খেলো
রিমঝিম কপালটা মুছে স্পর্শর দিকে মলিন চোখে তাকিয়ে বললো”আপনার সাথে কিছু কথা আছে আমার”
.
স্পর্শ নিচের দিকে চেয়ে থেকে বললো”আমারও”
.
আপনি বলুন আগে
.
স্পর্শ নিজের রুমে চলে গেলো কিছু না বলেই
রিমঝিম কৌতুহল নিয়ে সেও পিছু পিছু গেলো
স্পর্শ অফিসের শার্ট চেঞ্জ করে বাসার টি শার্ট পরছে,মুখটা কালো করে রেখেছে সে
রিমকে দেখে সামনে তাকানো অবস্থাতেই সে বললো”ভুলে যাও আজ কি হয়েছিল
কেউ জানবে না তোমার বিয়ে হয়েছে আমার সাথে,তোমার জীবন এখনও নষ্ট হয়নি,আমি আর তুমি ছাড়া বিষয়টা কেউ জানবে না
এই এরিয়ার লোক জানে তো কি হয়েছে,তোমাদের এরিয়ার কিংবা ঢাকার অন্য এরিয়ার মানুষ তো আর জানে না যে তোমার আমার বিয়ে হয়েছে,আমার পরিবার জানে না,তোমার পরিবার ও জানে না
সুতরাং ভুলে যাও”
.
রিমঝিম নিচের দিকে তাকিয়ে সোজা নিজের রুমে চলে আসলো,সেও ঠিক এই কথাই বলতে এসেছিলো,সবটাই স্পর্শ বলে দিয়েছে
তাহলে আর কি বলবো আমি??
এসব ভাবতে ভাবতেই রিম টের পেলো স্পর্শ তার রুমের দরজা লাগিয়ে ফেলেছে
রিমঝিম বুঝলো স্পর্শ একটা শকের ভেতর আছে
আজ আর রাতের খাওয়া হবে না,দুপুরে তো রেঁধেছিলাম,সেগুলো পড়ে আছে,অফিস থেকে দেরি করে আসলেন উনি,দুপুরে খেয়েছেন কিনা কে জানে
একবার কি ডাকব??দরজা তো লাগিয়ে ফেলেছে,আবার যদি রেগে যায়?
.
অনেক ভেবে এগারোটার দিকে রিমঝিম খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে স্পর্শর দরজার কাছে এসে নক করলো,ওপাশ থেকে সাথে সাথে স্পর্শর জবাব আসলো,তার মানে সে এখনও ঘুমায়নি
স্পর্শ বললো”কি হয়েছে?”
.
খাবার এনেছি,খেয়ে নিন,দুপুরে তো খান নি মনে হয়
.
খিধে নেই আমার
.
মাত্র বললেন সব ভুলে যেতে তাহলে আপনি সেসব মনে রেখে খাওয়ার সাথে রাগ করছেন কেন?
চলবে♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩৭
Writer-Afnan Lara
.
ভুলে গেছি আমি,জাস্ট মুডটা খারাপ,খিধে নেই,বরং তুমি খেয়ে নাও
.
রিমঝিম আর কিছু বললো না,নিজের রুমে চলে আসলো
যেটা আজ হয়েছে তাতে করে তার গলা দিয়েও খাবার নামবে না
বিয়ে এমন একটা কিছু এটা ভুলতে চাইলেও ভুলা অসম্ভব ব্যাপার
আমার মনে তো সুই সুতো দিয়ে মনে হচ্ছে গেঁথে দিয়েছে কেউ
না না ভুলতেই হবে আমাকে
এই বিয়েটাকে স্বীকৃতি দেওয়া যাবে না কোনো মতেই
.
বালিশে মাথা রেখে রিমঝিম বাইরের অন্ধকার আকাশ দেখছে,আজ আর চাঁদ ওঠেনি,উঠলে হয়তবা ভাল্লাগতো,এখন সব আঁধার দেখে আরও মন খারাপ হচ্ছে
ঘুম ও আসছে না

পরেরদিন ভোর বেলায় স্পর্শ ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরার আগেই রিমঝিমের রুমের কাছে এসে দাঁড়ালো,কাল রাতে এক মিনিটের জন্যও সে ঘুমায়নি,রিমঝিম ঘুমিয়েছে??
কম্বলের জন্য ওর মুখ দেখা যাচ্ছে না,হাতটা ফ্লোরের উপর এসে গেছে দেখছি
স্পর্শ এগিয়ে এসে নিচে বসলো,রিমকে সে এভাবে চায়নি কোনোদিন
বিয়ের কথা তো সে কখনওই ভাবতো না,এভাবে বিয়েটা সম্পূর্ণ হবে তা তার ভাবনার বাহিরে ছিল
বিয়ের মতন একটা পবিত্র বন্ধনে আটকা পড়েও আমাদের মাঝে এত এত দূরত্ব
এই বিয়ে আমি মানলেও রিমঝিম কখনওই মানবে ন,আর ওর পরিবার, আমার মা তো জীবনেও মানবে না
তাহলে কেন আমাদের দুজনেরই এই বন্ধনে আবদ্ধ হতে হলো??
কি আছে কপালে??যেখানে আমাদের এই বিয়ের কোনো মূল্যই নেই সেখানে এত ঘটা করে বিয়েটা হলোই বা কেন??
স্পর্শ উঠে চলে আসলো নিজের রুমে,কিচ্ছুই ভালো লাগছে না
সব কিছু গুলিয়ে আসছে,,,
রিমঝিম ঘুম থেকে উঠে চুপচাপ রান্নাঘরে আসলো, তারপর কাজে লেগে পড়লো সে
আজ আটটা বাজতে অনেক দেরি,কিন্তু তাও স্পর্শ বেশ তাড়াহুড়ো করে রেডি হচ্ছে অফিস যাবে বলে,কারণ যতই সে বাসায় থাকবে ততই রিমঝিমের মুখোমুখি হতে হবে তাকে আর নানান চিন্তা এসে ঘুরপাক খাবে
হাতে ঘড়ি লাগাতে লাগাতে স্পর্শ চলেই যাচ্ছিলো
রিমঝিম ওকে চলে যেতে দেখে হাতে রুটি বেলার বেলুন নিয়ে দৌড় দিয়ে এসে বললো”কই যাচ্ছেন এসময়ে?”
.
স্পর্শ রিমের দিকে না তাকিয়েই দরজা খুলতে খুলতে বললো”আজ অফিসে জলদি যেতে বলেছে বস”
.
তাই বলে এসময়ে?ছয়টা বাজে সবে
.
স্পর্শর তাও বেরিয়ে গেলো
রিম দরজা খুলে বেরিয়ে একটু এগিয়ে এসে বললো”কাল রাত থেকে আমিও কিছু খাইনি,এভাবে খাবারের উপর রাগ দেখাচ্ছেন কেন?ভেবেছিলাম একসাথে খাব”
.
কথাগুলো শুনে স্পর্শ আবার ফেরত এসে নিজের রুমে ঢুকে গেলো
রিমের সাথে কোনো কথা বললো না সে
রিমঝিম দরজা লাগিয়ে আবারও নিজের কাজে ফেরত আসলো,রুটি ছেঁকতে ছেঁকতে হঠাৎ রিম নিজের হাতটা খালি তাওয়াতে দিয়ে দিলো আর এক চিৎকার দিয়ে হাত সরিয়েও ফেললো সে
স্পর্শ বারান্দায় ছিল,হালকা আওয়াজ কানে আসতেই সে রুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘর পর্যন্ত এসে দেখলো রিম রুটি ছেঁকছে
তাই আর কিছু না বলে সে চলে গেলো আবার
রিমঝিম নাস্তা বানানো শেষ করে সব ড্রয়িং রুমে এনে এনে রাখতে রাখতে স্পর্শকে ডাক দিলো একবার
স্পর্শ নিচের দিকে তাকিয়ে এসে বসলো খেতে
রিমঝিমের খুব রাগ হলো,কারণ স্পর্শ আগের মতন বিহেভ করছে না তার সাথে
কি আজব!
রিমঝিম না খেয়েই নিজের রুমে চলে গেছে অথচ স্পর্শ তাও কিছু বললো না,সে তার খাওয়া শেষ করে অফিসের ব্যাগ হাতে নিয়ে যেতে যেতে বললো”দরজা লাগাও,আমি যাচ্ছি”
.
রিমঝিমের রাগ তো শেষ সীমানায়,সে খাবার ঢেকে রেখে দিয়েছে,কিছু খাবে না
লোকটার কাছে আমার মূল্য দিন দিন কমেই যাচ্ছে,কাল রাত থেকে কিছু খাইনি,একবার আমাকে খেতেও ডাকলো না
বিয়ে করেছেন আমাকে,আমার প্রতি কি তার কোনো দায়িত্বই নেই??
অবশ্য আমিও বেকুব!বিয়েটা তো আমরা দুজনেই এখন মানছি না তাহলে আমি দায়িত্বের কথা আনছি কি জন্য??
থাক কোনো দায়িত্ব নেই তার
আমিও খাব না,আগে যে কাজ করত বিয়ে হওয়ায় এখন সেটাও করছেন না উনি
.
ঠিক বিকালবেলা স্পর্শর অফিসের কাজ শেষ হলো কিন্তু তাও সে বাসায় ফিরতে ইচ্ছে করেই লেট করছে,অফিসের গাড়ী করে না এসে সে হেঁটে আসছে,যাতে দেরি হয়
তারপর চাচার বাসায় এসে ডিনার ি করলো,,দেরির উপরে দেরি
রাত নয়টায় স্পর্শ বাসায় ফিরেছে,সবগুলো রুম অন্ধকার
আন্দাজে হেঁটে হেঁটে স্পর্শ তার রুমে গিয়ে লাইট জ্বালালো,চুপচাপ ফ্রেশ হয়ে নিয়ে সে বিছানায় বসলো এবার
রিমের কথা মনে পড়ছে বারবার,একবার কি দেখে আসব??আজ এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো কেন?
.
স্পর্শ রুম থেকে বেরিয়ে রিমকে দেখতে আসলো
লাইটটা অফ,অন্ধকারে কিছুই দেখছে না স্পর্শ,তাই লাইট জ্বাললো
রিম ঘুমিয়ে আছে,স্পর্শ একটু এগিয়ে এসে রিমকে দেখে আবারও চলে যেতে নিতেই ওপাশ থকে রিমের ডাক শোনা গেলো
স্পর্শ ওর দিকে তাকানোর শক্তি পাচ্ছে না বলে,, না তাকিয়েই বললো”কি?”
.
আমাকে এত কষ্ট দিতে ভাল্লাগছে আপনার??
.
কষ্ট?কিসের কষ্ট?আমি তোমার থেকে দূরে থাকছি শুধুমাত্র আমাদের মাঝে যেন স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের টান না চলে আসে তাই
.
বিয়ের আগে তো এমন ছিলেন না??আর আপনি তো আমাকে বলেছেন সব ভুলে যেতে তাহলে সব ভুলে গিয়ে আপনি কেন আমার সাথে আগের মতন বিহেভ করছেন না
আমি তো ভুলার চেষ্টা করে নরমাল বিহেভ করে যাচ্ছি আর আপনি কিনা!
.
ব্যস রিম!
.
স্পর্শ চলে গেলো তার রুমে
রিমঝিম উঠে দাঁড়ানোর শক্তি টুকু পাচ্ছে না,স্পর্শর সাথে রাগ করে আজ সারাদিনেও কিছু মুখে দেয়নি সে,সারাদিন ঘুমিয়েই কাটিয়েছে

রাত বারোটার দিকে স্পর্শ পানি খেতে আসলো রান্নাঘরে
এসে দেখলো পাতিল সব ধুয়ে রাখা
আচ্ছা,,রিম কি জানত আমি রাতে খাব না??
কি জানি!!
স্পর্শ পানি খেয়ে আবার নিজের রুমে ফেরত যাওয়ার আগে রিমঝিমের রুম থেকে আওয়াজ পেয়ে সেদিকে গেলো,রিমঝিম বমি করছে ওয়াসরুমে
বমি করছে কেন??,শরীর খারাপ নাকি
ভাবতে ভাবতেই স্পর্শ দেখলো রিম আস্তে আস্তে ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো,,স্পর্শ এগিয়ে এসে বললো”কি হয়েছে তোমার?বমি করতেছিলা কেন?কি খেয়েছিলে?”
.
রিম স্পর্শর কথার জবাব না দিয়েই কম্বল গায়ে টেনে শুয়ে পড়লো
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে এগিয়ে এসে রিমের হাত ধরে উঠিয়ে বললো”কি সমস্যা? ”
.
আপনার কি তাতে?দূরত্ব বজায় রাখুন না,নাহলে তো বাচ্চার বাবা হয়ে যাবেন
.
কথাটা শেষ করার সাথে সাথে এবার রিম নিজে গালে চড় খেলে
স্পর্শ এভাবে হাত উঠাতো না,কিন্তু আজ মন মেজাজ ভালো ছিল না তার যার কারণে এমনটা করতে রীতিমত সে বাধ্যই হয়েছিল
রিমঝিম চড় খেয়ে কোনো রিয়েকশান দেখালো না,চুপ করে সে ফ্লোরের দিকে তাকিয়ে আছে এখন
স্পর্শ রিমকে ধরে এক ঝাঁকুনি দিয়ে বললো”কথার উত্তর দিচ্ছো না কেন??কি খেয়েছিলে?”
.
কিছু খাইনি,শুনে রাখুন,কাল রাত থেকে আমি কিছুই খাইনি
হইছে?এবার বের হোন রুম থেকে,অনেক কেয়ার দেখিয়েছেন,বিয়ের কয়েক বছর পর কিছু কিছু ছেলে বদলে যায় শুনেছিলাম কিন্তু বিয়ের দিন থেকেই বদলে যায় সেটা আপনাকে না দেখলে বিশ্বাসই করতাম না
.
এই বিয়েটা কোনো বিয়েই ছিল না
.
তো??আমি মানি??মানি না,আমি নরমাল ব্যবহার করছি তাও
কিন্তু আপনি??আপনি তো বিয়েটাকে হাইফাই কিছু একটা ভেবে বসে আছেন,আবার দূরত্ব ও বজায় রাখছেন
.
আসলে তুমি কি চাও?
.
আমি চাই আপনি এখন এই রুম থেকে বের হোন!
.
স্পর্শ বড় করে একটা শ্বাস নিলো তারপর রাগী চোখে রিমঝিমের দিকে চেয়ে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কলিংবেল বেজে উঠেছে
“এ অসময়ে কে আসতে পারে??”
.
রিম গায়ে কম্বল টেনে বসে পড়েছে ততক্ষণে
স্পর্শ উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই দেখলো চাচা আর চাচি দাঁড়িয়ে আছেন
স্পর্শ মুখ ফুটে কিছু বলার আগেই চাচা স্পর্শর কান টেনে ধরে বাসার ভিতরে ঢুকলেন,, চাচি তো সোজা রিমঝিমের রুমের দিকে চলে গেছেন
.
কিরে স্পর্শ?এসব কি শুনছি আমরা??আনোয়ার মিয়া বললো”তোদের নাকি হারাম সম্পর্ক থেকে হালাল সম্পর্কে আবদ্ধ করে দিছেন উনি,আমি তো কিছুই বুঝলাম না উনার কথাবার্তাতে
তুই তো এখানে একা থাকতি তাই না??তাহলে বিয়ে?আর যতদূর জানি রোকসানা ভাবীর মুখে শুনেছি তোকে তার বোনের মেয়ে নিহার সাথে বিয়ে দেবে,তাহলে এই মেয়েটা কে?”
.
চাচা আমি ওরে বিয়ে করতে চাই নিই,আর ও নিজেও বিয়েটা করতে চায়নি,ও একটা সমস্যায় পড়েছিল বলে আমার কাছে আছে কদিন ধরে,কিন্তু উনারা কি থেকে কি ভেবে নিল আর এক ঘন্টার ভেতর বিয়েটাও জোর পূর্বক সেরে নিলো,না আমার মত ছিল না রিমঝিমের
.
ভাইয়া ভাবী জানে এসব??মেয়েটার পরিবার জানে??
.
জানলে আমাদের দুজনকে টুকরো করে নদীর জলে ভাসিয়ে দেবে,তাই কাউকে জানাইনি,বিয়েটা আমরা দুজনেই অস্বীকার করলাম
.
চাচি রিমের রুম থেকে বেরিয়ে এসে বললেন”বিয়ে তো অস্বীকার করার মতন কোনো বস্তু নয় যে করলা আবার রিমোভ ও করে ফেললা,,এটা বিয়ে ছিল,তোমরা আজকালকার ছেলেমেয়েরা বিয়ের আসল মানেই জানো না”
.
স্পর্শ চাচা চাচিকে চেয়ার টেনে দিতে দিতে বললো”ডিভোর্স দিতে কত মাস ওয়েট করতে হবে?”
.
চাচা মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে বসলেন,রিম মাথায় ঘোমটা টেনে চুপিচুপি রান্নাঘরে গেলো চা বসাতে
.
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে বললো”কি হলো চাচা জানো না?”
.
চাচি মুখ বাঁকিয়ে বললেন”পাঁচ বছর একসাথে থাকার পর দেওয়া যায়,বাচ্চা দুই তিনটা না হলে তো ডিভোর্স এক্সেপ্টই হয় না”
.
চাচি মজা করছো?
.
মজা তো তোমরা করছো,ধর্ম মতে বিয়েটা করে এখন তা মানতে নারাজ হচ্চো,তাহলে আর করলেই বা কেন?
.
ঠিক,,আমিও তোমার সাথে এক মত,ওরা যখন রাজি না তখন বিয়েটা করার কি দরকার ছিল
.
উনারা আমাদের হুমকি দিচ্ছিলো,মিডিয়ার লোক ডাকবে বলে
.
সামান্য একটু বদনামির ভয়ে তোমরা এত বড় ডিসিশান নিয়ে নিলে??
.
সামান্য?
.
হ্যাঁ সামান্যই তো,,বিয়েটা অনেক বড় একটা ডিসিশান
.
সে যাই হোক,ডিভোর্সের প্রসেসটা বলো,কারণ আমি জানি তোমরা ভাল বলতে পারবে
.
বাড়া ভাতে ছাই দিব না আমরা,ভালোই বয়স হয়েছে
তোদের দুটোকে আলাদা করার আইডিয়া আমরা দেবো না,বরং মিলানোর কাজ করতে পারি
.
কি করবা তোমরা??যেখানে দুজনের মনের মিল নেই সেখানে কাকে দিয়ে শুরু করবা প্রথমে?
.
তোকে দিয়েই,কারণ তোর হিস্ট্রি ভালোমতন জানা আছে আমাদের
কয় বছর ধরে রিমকে জ্বালাচ্ছিস ভাইয়া বলছে আমাদের,,যাই হোক,বিয়ে করেছো ভালো করেছো,ছাড়াছাড়ির নাম নিবা না আর,যদি নাও তো কল করে তোমার আর তোমার বউয়ের সব খবর তোমাদের পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবো
.
এবার তোমরা বাকি ছিলে হুমকি দেওয়ার
.
তোদের হুমকি দিয়েই সব করাতে হবে যা বুঝলাম
.
চাচা কথা শেষ করে পাশে তাকাতেই দেখলেন রিম হাতে চা আর বিসকিট নিয়ে আসছে
.
চাচি বললেন”তোমাকে দেখে মনে হয় তোমার শরীর খারাপ,,এর ভিতরে এসব করতে গেলে কেন?”
.
স্পর্শ চেয়ার টেনে বসতে বসতে বললো”অসুখ হলে মানুষের মাথার মগজ উল্টে যায় শুনেছিলাম,আজ সেটাও দেখে নিলাম
তা নাহলে রাতের সাড়ে বারোটার সময় কেউ চা বিসকিট দিতো না মেহমানকে
চলবে ♥

দু মুঠো বিকেল⛅♥
#পর্ব_৩৮
Writer-Afnan Lara
.
রিম ট্রেটা আরেকটা চেয়ারের উপর রেখে স্পর্শর দিকে রাগী চোখে তাকালো
চাচি রিমকে স্পর্শর পাশে বসতে বললেন,রিম তাই চুপচাপ চেয়ার একটা নিয়ে বসলো,স্পর্শর পাশে না তবে একটু দূরে
চাচি নিজের গলার একটা পাতলা স্বর্নের চেইন খুলে রিমের গলায় পরিয়ে দিতে দিতে বললেন”নতুন বউয়ের গলা খালি থাকা ভালো শোভা দেয় না”
.
রিমঝিম অবাক হয়ে উনার মুখের দিকে চেয়ে আছে,আসলে চাচির এমন বিহেভটা স্বাভাবিক,স্পর্শকে তিনি ছোট থেকেই নিজের ছেলে ভেবে এসেছেন কারন তার কোনো ছেলে নেই,তাহলে স্পর্শর ওয়াইফ তো তার পুত্রবধুই হয়
যাই হোক,উনি রিমের মাথা মুছে দিয়ে চাচাকে নিয়ে চলেও গেলেন কারণ রাত অনেক হয়েছে,তাদের বাসাটাও খালি
.
রিম ট্রেটা রান্নাঘরে রেখে পিছন ফিরতেই দেখলো স্পর্শ দাঁড়িয়ে আছে
রিম ওকে উপেক্ষা করে হেঁটে চলে যেতে নিতেই স্পর্শ হাত দরজার উপর রেখে আটকালো ওকে
.
আবার কি চাই?
.
আমার রুমে চলো
.
কেন?
.
স্পর্শ সাথে সাথপ রিমকে কোলে তুলে নিয়ে বললো”আমার ওয়াইফ আমার রুমেই তো থাকবে তাই না??”
স্পর্শর এই কথার উত্তরে রিমঝিম কিছুই বললো না
চুপ করে স্পর্শর বুকের সাথে মাথাটা এলিয়ে রাখলো
ঝগড়া করার কিংবা কোনো কথা বলার শক্তি আর মন মানসিকতা দুটোর একটাও তার নেই এখন
আপাতত সে একটু ঘুমাতে চায়
.
স্পর্শ বেশ অবাক হলো রিমের এমন ভাব দেখে
নরমাল দিন হলে এতক্ষণে তুলকালাম বাঁধিয়ে তুলতো কোলে তুলছে কেন এই নিয়ে
স্পর্শ হাঁটতে হাঁটতে বললো”শরীর বেশি খারাপ লাগছে?হসপিটাল যাবে??”
.
উহু
.
কি খাবে বলো
.
স্পর্শ রিমকে নিচে নামিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলো
রিম বললো সে কিছু খাবে না,পানি হলেই চলবে
স্পর্শ পানি এগিয়ে দিয়ে রান্নাঘরে আসলো,আজ সে রান্না করবে
জীবনে রান্না করেনি তবে আজ সে রান্না করবে
তেল জাতীয় কিছু রাঁধা যাবে না নাহলে সেটা খালি পেটে খেলে রিমের হাল আরও খারাপ হবে
তাহলে কি বানাবো ওর জন্য,,অনেক ভেবেচিন্তে স্পর্শ রুটি দুটো বানালো তাও ভারতের মানচিত্রের মতন সেম টু সেম
আর অল্প তেলে ডিম ভাজি করে নিলো,দেখতে পপকর্নের মতন হয়েছে
সারা গালে হাতে আটা মাখামাখি করে ফেলেছে,তখন রাত দেড়টা বাজে সব রেডি করে রুমে এসে দেখলো রিমঝিম কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে
কিন্তু এসময়ে তো ঘুমালে চলবে না
না খেলে সকলাবেলা ওরে খুঁজেই পাব না,তখন আরও বেহাল হয়ে যাবে
খাবার নিচে রেখে স্পর্শ রিমকে ডাক দিলো কয়েকবার
রিম উঠে বসে বললো”আজ কি আমাকে ঘুমাতে দেবেন না?”
.
না দিব না,নিজে রেঁধেছি ঠিক হয়ে বসো,আমি খাইয়ে দিচ্ছি
.
আপনি?
.
রিম স্পর্শর হাতে থাকা রুটি আর ডিম দেখে হেসে ফেললো,হেসে বললো”এটা কি রেঁধেছেন?
.
জানি সুন্দর হয়নি,তবে রুটি তো ছিঁড়েই খেতে হবে তাই না?আর ডিম ও তো কুচি করে খেতে হয়,গোটা তো আর খাওয়া যায় না,আচ্ছা এত কথা না বলে হা করো
.
রিম হা করলো,স্পর্শ মুখটা গম্ভীর করে রিমকে খাইয়ে দিচ্ছে
রিম গিলছে আর স্পর্শর হাতে থাকা পশমগুলোর দিকে তাকাচ্ছে বার বার,মাঝে মাঝে চোখ যাচ্ছে স্পর্শর গায়ের দিকে,শার্টের কটা বোতাম খোলা
রিম সেটা অনেকক্ষণ ধরে দেখছিলো
স্পর্শ রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বললো”চোখ দিয়ে ইভটিজিং করছো?”
.
রিম সাথে সাথে মুখটা আরেক দিকে ফিরিয়ে নিলো
.
তখন যে কোলে নিলাম তখন কিন্তু আমি মদ খাইনি,সজ্ঞানে ছিলাম, তাহলে বকলে না কেন?
.
শক্তি ছিল না ঝগড়া করার
.
আচ্ছা বাদ দাও,এবার ঘুমাও
.
রিম উঠতে যেতেই স্পর্শ চোখ বড় করে বললো”কোথায় যাচ্ছো?
.
কেন?আমার রুমে
.
আরেকটা চড় খাবে?তুমি না আমার বিয়ে করা বউ,গলায় চেইন পরে তো পুরোপুরি হয়ে গেলা,তো আমার বউ আমার রুমেই ঘুমাবে
.
আপনি এমন কেন বলুন তো,একবার দূরে দূরে থাকেন আবার একদম কাছাকাছি চলে আসেন,আপনি আসলেই কি চান?
.
তুমি এমন কেন বলোতো??তোমাকে ইগনর করলেও দোষ হয়ে যায়,তোমাকে কাছে টানতে চাইলেও দোষ হয়ে যায়,আমার ঠিক কি করা উচিত বলো
.
সরুন,আমি আমার রুমে যাব
.
না যাবে না
.
যাব সরুন
.
স্পর্শ রিমঝিমের গায়ের থেকে ওড়না নিয়ে ওর হাতের সাথে বাঁধলো এক কোনা,বাকি কোনা জানালার গ্রিলের সাথে বাঁধলো
.
যাও এবার
.
আমার এক হাত খালি আছে,আমি ঠিক খুলতে পারবো
এটা বলে রিম হাত ছাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা শুরু করে দিলো
ওমা ততক্ষণে স্পর্শ রুমের লাইট অফ করে দিয়ে পাশে শুয়েও পড়েছে
রিমের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠলো,,তারপর একটু সরে গিয়ে সে অন্ধকারেই ওড়নাটা খুলার চেষ্টা করছে,হাত ব্যাথা হয়ে গেছে তাও এই সামান্য গিট্টু খুলছে না,এমন টাইপের গিট্টু দিয়েছে বাপরে,অবশ্য এক হাত দিয়ে গিট্টু খুলতে গেলে এরকম হওয়াটাই স্বাভাবিক
রিমঝিম ক্লান্ত অনেক,তাই দেয়ালে হেলান দিয়েই সে ঘুমিয়ে পড়েছে,স্পর্শ মাঝে মাঝে এত নাছোড়বান্দা গিরি করে উফ!!!
এদিকে চুড়ির আওয়াজ আসছে না দেখে স্পর্শ উঠে বসে ফোনের টর্চটা অন করলো,অন করে দেখলো রিম মাথাটা দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে
স্পর্শ আস্তে করে গিট্টুটা খুললো,,তাও পাক্কা ১০মিনিট পর,যখন রিম গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে ঠিক তখন,,তারপর রিমকে সুন্দরমত শুইয়ে দিয়ে গায়ে কম্বলটা টেনে দিল সে
এতদিনে রিম তার আসল বউ হলো,অবউ থেকে আবউ
আসল বউ=আবউ
যাই হোক,রিমের এমন কেয়ার করতে পেরে অনেক অনেক ভালো লাগছে,আমার স্ত্রী সে
আমি কখনওই বিয়ের কথা ভাবতাম না কারণ দুই পরিবারের অমত
আর ওর বিয়ে ভাঙ্গতাম কারন আমি চাই না রিম অন্য কারোর বউ হোক,শেষ পর্যন্ত দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তার আগেই কিসমতের জেরে বিয়েটা এত জলদি হয়ে গেলো,ওকে পেয়েও না পাওয়ার মতন অবস্থা হচ্ছে
ওকে খুব করে নিজের করতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু!
না ওর অনুমতি আছে
না দুটো পরিবারের
.
স্পর্শ রিমের চুলগুলো ঠিক করে রাখলো বালিশের পাশে,তারপর রিমের ওড়নাটা হাতে নিয়ে হাসলো,কারণ এই ওড়নাটা সে গিফট করেছিলো
তিনটা বছর ধরে যে মানুষটাকে পাগলের মতন ভালোবেসেছি আজ সে আমার স্ত্রী, সে আমারই রুমে,আমারই বিছানায় শুয়ে আছে,অথচ তাকে ছোঁয়া বারণ
এই তিনবছরে আমি ওকে দূর থেকে দেখেও নিজেকে অনেক কষ্টে কন্ট্রোল করতাম আর এখন সো আমার এত কাছে,এবার নিজেকে কন্ট্রোল করা খুব কঠিন হয়ে যাবে
.
ঘুম আসছে না দেখে স্পর্শ সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বারান্দায় চলে আসলো
.
রিম আমাকে মেনে নিবে কিনা জানি না তবে যদি সে মানে তবে এই প্যাকেট আর কোনোদিন স্পর্শ ছোঁবে না,রিমের নেশাই বড় নেশা

ফজর নামাজের আজান শুনা যাচ্ছে,রিমঝিম জেগে গেলো সেই সময়ে,চোখ ডলতে ডলতে তার মনে পড়লো সে স্পর্শর রুমে ঘুমিয়ে পড়েছিলো,তারপর হাতের দিকে তাকিয়ে কোনো বাঁধন না দেখে বুঝলো স্পর্শ বাঁধন খুলে দিয়েছিল,,কিন্তু তিনি কই??
রিমঝিম উঠে গিয়ে দরজার দিকে এক নজর তাকালো,দরজা তো ভেতর থেকে বন্ধ তা দেখে বারান্দায় আসলো সে
স্পর্শ বারান্দায় একটা চেয়ারে ঘুমিয়ে আছে
রিমঝিমের মনে হলো স্পর্শ বুঝি ওর সাথে ঘুমাতে গিলটি ফিল করছিল তাই এখানে এসে ঘুমিয়েছে
আমার জন্য সারারাত শীতের ভেতর এই জায়গায় ঘুমিয়েছেন উনি?
.
রিম কিছু বলার আগেই স্পর্শ জেগে গেলো,রিমকে দেখে অবাক হলো না সে
চুপচাপ অজু করতেও চলে গেছে
রিম মন খারাপ করে নিজের রুমে ফিরে আসলো
তারপর নিজেও অজু করে নামাজ পরে নিলো,,নামাজ পড়লে মনে আলাদা একটা প্রশান্তি কাজ করে,বিশেষ করে ফজরের নামাজে,,
রিমঝিম পানি নিয়ে বারান্দার গাছগুলোতে পানি দিতে দিতে গুনগুন করে তার চিরচেনা সেই পছন্দের গানের দু লাইন গাইলো
“”””ক্রমশ এই গল্পে আরও পাতা জুড়ে নিচ্ছি
দু মুঠো বিকেল….
লাইনটা শেষ করার আগেই দরজার কাছে কারোর আসার আওয়াজ পেয়ে মাথা পিছিয়ে রিম দরজার দিকে তাকালো
স্পর্শ হুডির পকেটে হাত ঢুকিয়ে তাকিয়ে আছে,কালো হুডি পরা,কালো আর নীল রঙের হুডিতে স্পর্শকে বেশ মানায়,আর সে তো বেছে বেছে এই দুটি রঙের হুডি পরে প্রায়ই সময়
রিমঝিম চোখ নামিয়ে ফুল একটা ছুঁয়ে কিছুক্ষণ ধরে ভাবলো তার শখের গোলাপ গাছটার জানি কি খবর
স্পর্শ কাছে এসে গ্রিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বললো”আঁখিকে বলেছিলাম তোমার গাছটায় যেন আমার বারান্দায় দাঁড়িয়ে পানি দেয়,কারণ তোমার গুনধর ভাই তামিম তো জীবনেও পানি দেবে না,সে পানি দেয় তার ক্যাকটাস গাছে
.
রিম নিচু স্বরে বললো”ধন্যবাদ”
.
শরীর কি এখনও খারাপ?
.
নাহ,ঠিক আছি,তা আজ জলদি অফিস যাবেন না?
.
খোঁচা দেওয়া ছাড়া আর কিছু পারো না?
.
না পারি না,আপনাকে আমি বুঝতে পারি না
.
হইছে আবার শুরু করছো,এত সকাল সকাল ঝগড়া করতে পারবো না আমি,যাচ্ছি আমার রুমে,কাল রাতে ভালো ঘুম হয়নি,একটু ঘুমাবো এখন
.
স্পর্শ চলে যেতে নিতেই রিম বললো”কি দরকার ছিল আমাকে দয়া দেখানোর?আমার রুমে আমি ঘুমালে তো আর মরে যেতাম না”
.
স্পর্শ রিমঝিমের দিকে তাকালো শক্ত চোখে,তারপর বললো”তোমার কি মনে হয় আমি বারান্দায় ঘুমিয়েছি তোমার থেকে দূরত্ব বজায় রাখতে??
.
কথাটা শেষ করে স্পর্শ রিমঝিমের খুব কাছে চলে আসলো তারপর দাঁতে দাঁত চেপে বললো”আমার যখন ইচ্ছা হবে তখন আমি তাই করবো,এটাকে তুমি দূরত্ব মনে করো কিংবা অন্য কিছু
আর হ্যাঁ একটা কথা!!তোমার সাথে একসাথে আরেকদিনও ঘুমিয়েছি আমি,তাও বিয়ের আগে,সো আমার কোনো সমস্যা হয় না,তুমি এটা খুব ভালো করে জানো
শুধু শুধু মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং ক্রিয়েট করবা না,আর আমি একা কেন ঘুমাবো এখন???,তুমি সহ ঘুমাবে,চলো
গাছে পানি দেওয়াও শেষ এবার তুমি আমার সাথে ঘুমাবে,ছয়টায় উঠে পরে নাস্তার ব্যাপারে ভাবা যাবে
.
রিম হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বললো”আমি আমার রুমে ঠিক আছি”
.
স্পর্শ রিমের কথার কেনো তোয়াক্কা না করেই রিমকে আবারও কোলে তুলে নিয়ে যেতে যেতে বললো”সকাল সকাল ৪৯কেজির ডালের বস্তা তুলতে হচ্ছে,দিনটা আজ কেমন যাবে কে জানে”
.
রিম ব্রু কুঁচকে স্পর্শর গায়ে কয়েকটা কিল ঘুষি দিয়ে বললো”বিয়েটা মানেন না তো এখন এমন করছেন কেন?”
.
কে মানে না,,আমি??তিন বছর ধরে কি তোমাকে আরেকটা ছেলে ডিস্টার্ব করছিল?কে করছিল?
.
ইসতিয়াক স্পর্শ
.
তো তাহলে আমি মানি না এটা ধরছো কেন,হ্যাঁ ঠিক আছে বলেছিলাম আমি মানি না,বাট তুমি কি করে এটা ধরে নিলে?
আমি তুমি বলতে পাগল আর সেই তুমি কিনা ভাবছো আমি তোমাকে পছন্দ করি না বলে বিয়েটা মানতে চাইছি না??
.
আপনি কোথাকার কথা কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন,কিছুই বুঝছি না আমি
.
বুঝতে হবেও না তোমায়,জাস্ট আমি আগের মতন বিহেভিয়ার শুরু করেছি,তুমিও তেমন টাই করে
.
আগে আমি আমার রুমে ঘুমাতাম
.
মাঝে মাঝে আমার রুমেও
.
উফ!!
.
উফ!!!!রাগ হচ্ছে??খুব রাগ হয় আমার উপর??তাহলে প্লিস দুটো চড় মেরে দাও
.
রিম চোখ বড় করে স্পর্শর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে,ঐ দুটো চড়ের কথা স্পর্শ মনে রেখেছে??
চলবে♥

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে