দুপাতার পদ্ম পর্ব-০৭

0
687

#দুপাতার_পদ্ম
#পর্ব_০৭
#Writer_Fatema_Khan
আয়াতের এভাবে চলে যাওয়া মেহেরের কাছে অবাকের শীর্ষে। যে কিনা কয়েক ঘন্টা আগেও তার কাছে কিছুটা সময় চাইলো আর এখন কিনা কথাও বললো না। মেহেরও নিচে চলে এলো। আয়াত সোজা নিজের ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো। মেহের আয়াতের ঘরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কিছুক্ষণ আয়াতের ঘরের দরজার দিকে চেয়ে রইলো। তারপর নিচে চলে গেলো। সেখানে মা আর চাচীকে কাজে সাহায্য করতে লাগলো। কাজের ফাকে ফাকে মেহের বারবার উপরের দিকে তাকাচ্ছে আয়াত আসছে কিনা। মেহেরের নিজের মাঝেই খারাপ লাগছে তার জন্য আয়াত আজ নিচে খেতেও নামে নি।
“মেহের।”
মায়ের ডাকে হুশ ফেরে মেহেরের।
“হুম মা কিছু বলবে?”
“কি এত ভাবছিস?”
“কই কিছু নাতো মা।”
“আচ্ছা আমেনা যা না একটু দেখে আয় ছেলেটা এখনো খেতে আসে নি কত বেলা হয়ে এলো।”
“ভাবি কাসফি তো বললো আয়াত ঘরে নেই সে ডাকতে গিয়েছিলো।”
“এখন একটু দেখ গিয়ে।”
আয়াতের মা উপরে চলে গেলেন আয়াতের কাছে। আর মেহের নিজের হাতের কাজ শেষ করে নিজের ঘরে চলে গেলো। কিছু সময় পর মেহের অফিসের জন্য বেড়িয়ে যায়। তারপরেই আয়াতের মা মুখ গোমড়া করে নিচে নেমে আসে। মেহেরের মা আমেনার মুখ ফ্যাকাসে দেখে জিজ্ঞেস করে,
“কি হয়েছে, আয়াত কিছু বলেছে?”
“ভাবি আয়াত বলেছে ছাদের উপরের ঘরটা গুছিয়ে দিতে, আজ থেকে আয়াত উপরেই থাকবে।”
“একি কেনো! ও নিজেই তো এবার নিচে থাকতে চেয়েছে।”
“আমি এই প্রশ্ন করাতে আয়াত বলে যাকে দেখার জন্য নিচে থাকতে চেয়েছিলাম সে আমাকে দেখতে চায় না। তাই আমিও আর এখানে থাকব না। আর তোমরা আমাকে আর কোনো কাজে বাধা দিও না প্লিজ।”
মেহেরের মায়ের চোখে পানি এসে গেলো বাড়ির ছেলেটার এই অবস্থার কথা শুনে।
“ভাবি তোমার দুইটা হাত ধরি মেহেরকে তুমি একটু বুঝাও, আমার ছেলেটা ওকে খুব ভালোবাসে। সেই ছোটবেলা থেকেই।”
“আমেনা এর মানে তুই সব আগে থেকেই জানতি কিন্তু কাউকে বলিস নি কখনো।”
“আয়াত আমাকে সবকিছুই বলেছিলো। কিন্তু কি করে বলব ভাবি, তখন আয়াত মানা করেছিলো যাতে কাউকে কিছু না বলি। সময় হলে সে নিজেই জানাবে। কিন্তু এর মাঝেই মেহের জানালো সে আবিরকে পছন্দ করে তাকে বিয়ে করতে চায়৷ আমি আয়াতকে জানালাম সবকিছু আর বললাম সবাইকে জানাতে। কিন্তু মেহের আরেকজনকে ভালোবেসে জেনে আয়াত আমাকে চুপ করিয়ে দিয়েছিলো। তাই আমি আর কাউকে কিছুই বলি নি। ভাবি আমার ছেলেটার উপর একটু দয়া করো মেহের রাজি হলেই ভাইয়া আর আয়াতের বাবা রাজি হয়ে যাবে।”
“তুই আমাকে এসব আগে বলিস নি কেনো, তাহলে হয়তো আমাদের ছেলে মেয়ে দুইটাই সুখে থাকত।”
“আমি যাই ভাবি উপরের ঘরটা গুছিয়ে দিয়ে আসি।”
“দাড়া আমার কাজএ শেষ। আমিও সাথে আসছি।”

ছাদের ঘরটা গুছাতে দুপুর গড়িয়ে গেলো। অনেক বছর কেউ এখানে থাকে না। তাই গুছানোও হয়নি৷ ধূলোময়লা জমে একাকার। আয়াতের মা আর মেহেরের মা আয়াতের প্রয়োজনীয় সব জিনিস গুছিয়ে দিয়ে নিচে চলে এসেছে। আয়াত দুপুরে খেয়ে একেবারে ছাদে চলে এসে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলো। তারপর আয়াত বিকেলের দিকে বেড়িয়ে পরলো উদ্দেশ্য কাসফির স্কুল। কাসফির স্কুলের সামনে মিনিট পাচেক অপেক্ষা করতেই কাসফি বের হয়ে এলো তার বান্ধুবিদের সাথে কথা বলতে বলতে৷ আয়াত যে গেইটে দাঁড়িয়ে আছে সেদিকে তার কোনো নজর নেই৷ আয়াত কাসফির এমন চঞ্চলতা দেখে হেসে ফেললো। তারপর কাসফির একটা বেণি ধরে টান দিলো। চুলে টান খেতেই কাসফি বলে উঠলো,
“কার এতবড় সাহস কাসফির চুলে হাত দেয়?”
পেছনে ফিরে আয়াতকে দেখে অবাক।
“ভাইয়া তুমি! এই তোরা যা আমার ভাইয়া আসছে আমি ভাইয়ার সাথেই যাব।”
কাসফির বান্ধুবিরা চলে গেলো। কাসফি আয়াতের দিকে তাকিয়ে দাঁত বের করে হাসছে৷
“কিরে পিচ্চি এভাবে তাকিয়ে হাসছিস কেনো?”
“ভাইয়া এখন না আমরা বাসায় যাব না।”
“বাসায় না গেলে কই যাব!”
“আমি আর তুমি ঘুরব আর অনেক কিছু খাব। জানো তো এই মেহের আপু না বাইরের কিছুই খেতে দেয় না। খালি ধমকের উপর রাখে কিছু বললে।”
আয়াত শব্দ করে হেসে কাসফির মাথায় একটা বারি দিয়ে বলে,
“আচ্ছা চল আজ আমি তোকে অনেক কিছু খাওয়াবো।”
কাসফি খুশি হয়ে আয়াতের সাথে চলতে লাগলো। কিছুদূর যাওয়ার পর আয়াত একটা রিকশা ডাকলো। রিকশা গিয়ে থামলো একটা রেস্টুরেন্টের সামনে। কাসফি রিকশা থেকে নেমে বললো,
“আমি কি একবারও বলছি যে আমি রেস্টুরেন্টে খাব, আমি অন্যকিছু খাব।”
“আচ্ছা কি খাবি বল?”
“আমি ঝালমুড়ি, ফুসকা, চটপটি, বাদাম, হাওয়াই মিঠাই আর সবশেষে বাসায় যেতে যেতে আইসক্রিম খাব।”
“এইজন্যই মেহের তোকে বকে বুঝলি।”
“ভাইয়া তুমিও।”
“আচ্ছা চল।”
আয়াত পুরো বিকাল কাসফি যা যা চাইলো সব আবদার পূরণ করলো। তারপর দুইজনে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকে রাতের খাবার খেয়ে নিলো।
“ভাইয়া আমি আর পারব না। এবার বাসায় চলো। কিন্তু রিকশায় যাওয়ার পথে একটা আইসক্রিম।”
আয়াত হেসে দিলো। তারপর দুইজনের জন্য দুইটা আইসক্রিম কিনে রিকশায় উঠে বসলো৷ বাসায় ঢুকে কাসফি খুশিতে নিজের মাকে সব বলতে লাগলো আজ কি কি করেছে। মা তাকে থামিয়ে আগে ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হতে বললো। তাই কাসফি নিজের ঘরে চলে গেলো। আয়াতও তার মাকে বললো,
“মা আমি আর কাসফি খেয়ে এসেছি, তাই আমি আর রাতে খাব না। আমি ঘুমাতে গেলাম।”
সোফায় বসে থাকা মেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে আয়াত উপরে চলে গেলো৷ মেহের আয়াতের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
কাল শুক্রবার কাসফির স্কুল নেই, তাই সে খুব খুশি কারণ আয়াত আসার পর সে একদিনও ছুটি পায় নি। রোজ স্কুলে যেতে হয়েছে। কিন্তু কাল সে অনেক মজা করবে ভাইয়ার সাথে। কাসফি রাত ৯টার দিকে আয়াতের ঘরের সামনে যায়। দরজায় কয়েকবার টোকা দিতেই ভেতর থেকে আয়াত দরজা খুলে দেয়। কাসফিকে দেখে হেসে বললো,
“পিচ্চি তুই না পড়ে এখানে কি করিস?”
মুখ ভেঙচি দিয়ে রুমের ভেতর ঢুকে পরলো কাসফি।
“কেনো ভাইয়া তোমার রুমে আসা বারণ নাকি? বললে আর আসব না।”
“ওমা পিচ্চির দেখি রাগও আছে।”
খাটের উপর পা তুলে বসে কাসফি বললো,
“আর তুমি কি জানো না আমার পড়তে ভালো লাগে না। আর কাল তো শুক্রবার স্কুলও বন্ধ। কি মজা তাই না ভাইয়া!”
“হুম অনেক মজা।”
আয়াতের রুমটা ভালো করে দেখে কাসফি বললো,
“ভাইয়া তোমার রুমটা এমন দেখাচ্ছে কেনো? কোনো কিছুই নেই খালি তুমি আছো।”
“আমিও চলে যাব। আমার ল্যাপটপ টা নিতে এসেছিলাম শুধু। এখন নেওয়া হয়ে গেছে তাই চলে যাচ্ছি।”
“ভাইয়া তুমি আমাদের সবাইকে ছেড়ে প্লিজ যেও না। কত বছর পর আসলে দেশে এখন আবার চলে যাবে?”
“আরে পাগলি আমি কোথাও চলে যাচ্ছি না, আমি আগে সবসময় যেখানে থাকতাম সেখানেই যাচ্ছি। আর তখন তো তুই আরও পিচ্চি ছিলি তাই হয়তো ভুলে গেছিস। আমি ছাদে যে ঘরটা আছে ওইটাতেই থাকতাম আগে। তাই এখন আবার ওখানে চলে যাচ্ছি।”
“ওহ তাই বলো আমি আরও ভাবলাম আপু তোমাকে বিয়ে করবে না বলে রাগ করে আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছ।”
কথাটা বলেই জিভে কামড় কাটলো কাসফি। আয়াতেরও হাসি মিলিয়ে গেলো কথাটা শুনে। তবে কাসফির দিকে তাকিয়ে ব্যাপারটা স্বাভাবিক করার জন্য আয়াত হেসে দিলো আর বললো,
“তোর বোনের চেয়ে কত সুন্দরী আমার চারপাশে ঘুরঘুর করতো বিদেশে তুই জানিস?”
“না তো! অনেক মেয়েরা ঘুরতো বুঝি?”
“হুম, পরে একসময় সব বলব। এখন তুই ঘুমাতে যা।”
কাসফিও আয়াতের কথামতো নিজের ঘরে চলে গেলো আর আয়াত নিজের ল্যাপটপ নিয়ে ছাদে চলে গেলো।
চলবে,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে