ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৮
আজ পুষ্পর বিয়ে। ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে মাঝের একদিন কেটে গেলো। সকাল থেকে আফিয়া বেগম, দাদী আর নীলের মা বিয়ের আয়োজন নিয়ে ব্যস্ত।
পুষ্প এখনো নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করতে পারছে না। একটা অপরিচিত মানুষের সাথে তাকে সারাটা জীবন থাকতে হবে এটা ভাবলেই তার বুকটা কষ্টে ফেটে যায়। যেই মানুষটার সাথে তার বিয়ে হতে চলছে তাকে জানার সুযোগটাও দিলো না তাকে তার মা আর দাদী।
রূপা ও অবিনাশ বাবুর কাছে পাপড়ি সবকিছু বলে আজ সকালেই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায় নীল আর পাপড়ি। স্টেশনে এসে ট্রেনের অপেক্ষা করছে তারা দুজন। পাপড়ির মনে পুষ্পর বিয়ে নিয়ে অনেক প্রশ্ন জেগে ওঠেছে আর সাথে পুষ্পর বিয়ে নিয়েও টেনশন চলছে। তাকে ছেড়েই এতো বড় ডিশিসন কীভাবে নিয়ে ফেললো মা আর দাদী।
রাতে যখন পাপড়ি পুষ্পকে ফোন দিয়েছিলো তখন ফোনে পুষ্প অনেক কান্না করছিলো। বোনের এভাবে কান্না কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না পাপড়ির।
কিছুক্ষণ পরই ট্রেন চলে আসে। ট্রেনে ওঠে পড়েছে নীল আর পাপড়ি এখন শুধু বাসায় যাওয়ার অপেক্ষা।
সকাল থেকেই রাইয়ান তার মাকে তার বিয়েতে যাওয়ার জন্য রাজি করানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু মিসেস মাহমুদা কিছুতেই রাজি হচ্ছে না। মি. রাশেদও অনেকবার বলেছে তাকে কিন্তু কোন লাভ হয়নি।
অবশেষে রাইয়ান তার মাকে বললো
– তুমি যদি জীবনে আমাকে এতটুকু ভালোবেসে থাকো তো আমার বিয়েতে তুমি যাবে। আর যদি না যাও তো ভাববো তুমি আমাকে কখনো তোমার সন্তানই ভাবো নি।
ছেলের এমন কথা শুনে আর রাগ করে থাকতে পারলো না মিসেস মাহমুদা। শুধুমাত্র ছেলের খুশির জন্য বিয়েতে যেতে রাজি হলো সে। মিসেস মাহমুদার এমন সিদ্ধান্তে সবাই খুশি হলো।
আফিয়া বেগম রুমে গিয়ে পুষ্পের মাথায় হাত রেখে বললো
– এখনো আমাদের ওপর অভিমান করে কাঁদছিস তুই?
মায়ের এমন কথায় পুষ্প আফিয়া বেগমের দিকে তাকালো আর বললো
– অভিমান! সেটা তো আমার আপন যারা তাদের সাথে করা যায় আর তোমরা তো আমায় মুহূর্তেই পর করে দিলে। আমার ইচ্ছা-অনিচ্ছা কিছুই জানতে চাইলে না?
আফিয়া বেগম মুচকি হেসে বললো
– শুনো মেয়ের কথা, বিয়ে দিয়ে দিলেই কি মেয়ে পর হয়ে যায়? তোকে ৯ মাস পেটে ধরেছি আর সামান্য বিয়ে কি তোকে আমাদের থেকে আলাদা করে দিবে? তোর বাবা যদি আজ বেঁচে থাকতো তখনও কি তুই এভাবেই বলতি? হ্যা, তোর বিয়েটা তাড়াহুড়ো করে দিচ্ছি, তাই বলে এ নয় যে তোকে আমরা বোঝা ভাবি। তোকে সারা জীবন সুখে দেখতে চাই তাই এ বিয়ে দিচ্ছি।
আফিয়া বেগম পুষ্পের হাত ধরে বললো
– আমি ছেলেটার চোখে তোর জন্য অনেক ভালোবাসা দেখেছি তাই আমি এ বিয়েতে মত দিয়েছি। তুই ঐ বাসায় অনেক সুখি থাকবি।
মায়ের মুখে এতো খুশি দেখে পুষ্প আর কিছু বলতে পারলো না। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়েই নিজেকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত করে নেয় সে।
রাইয়ান লাল সেরোয়ানি পড়েছে। বুকে বা পাশে একটা সুন্দর ব্রোজ, মাথায় পাগড়ী, পছন্দের পারফিউম সব মিলিয়ে রাইয়ানকে খুব সুন্দর লাগছে। আর কিছুক্ষণ সময় এরপরই যাবার পালা। সিড়ি দিয়ে নামতেই সবাই এক নজরে রাইয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। মি. রাশেদ মুখে হাসি নিয়ে রাইয়ানকে জড়িয়ে ধরে বললো
– আজ আমার ছেলেকে একদম রাজপুত্রের মতো লাগছে।
পেছন থেকে শায়ন বললো
– হ্যা, সে তো লাগবেই। সাজিয়ে কে দিয়েছে দেখতে হবে তো। আর সুন্দর না লাগলে রাজকুমারী যদি বিয়ে না করে তাহলে তো আমার বন্ধুর মনটাই ভেঙ্গে যাবে।
শায়নের এমন কথায় সবাই একসাথে হেসে ওঠলো।
পুষ্পকে সাজানো হচ্ছে। পাশের বাসার কণা দিদি তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। পুষ্প মনে মনে বলছে,
– পাপড়ি থাকলে এই সাজানোর কাজটা পাপড়িই করতো। কতো ইচ্ছে ছিলো পাপড়ির তার বিয়ে নিয়ে। এখন হয়তো ট্রেনে বসে আমার কথাই ভাবছে।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
পাপড়ির আর অপেক্ষা সহ্য হচ্ছে না। কখন যে বাসায় যাবে। আপুর কথা খুব মনে হচ্ছে তার। আপুর বিয়েতে সবসময় পাশে থাকার ইচ্ছাটা আর পূরণ হলো না।
নীল পাপড়িকে চুপচাপ থাকতে দেখে তাকে হাসানোর অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু নীল ব্যর্থ, পাপড়ি তার কোনো কাজেই খুশি বা রাগ হচ্ছে না। ট্রেন সিটের এক কোনায় স্থির হয়ে বসে আছে পাপড়ি।
বরযাত্রী চলেছে কথাটা শুনতেই পুষ্প বুকে ধক করে ওঠল। মনের ভিতর আবার সেই অজানা ভয়টা কাজ করতে শুরু করেছে। এমনসময় পাপড়িকে পুষ্পর খুব প্রয়োজন।
– কোথায় পাপড়ি তুই, এখনো আছিস না কেন?
বরযাত্রী চলে আসতেই আফিয়া বেগম তাদের বরণ করে নেয়। হঠাৎ করে শায়ন মজা করে বলে ওঠলো,
– শোনেছি, হবু ভাবির একটি ছোট বোন আছে তো সে কোথায়? বিয়েতে তো শালীদের অনেক কাজ থাকে।
পাপড়ির কথা বলতেই আফিয়া বেগমের মনটা খারাপ হয়ে যায়। পাপড়ি ছাড়া এ বিয়ে কিছুতেই দিতে চাচ্ছিলো না আফিয়া বেগম, শুধু শাশুড়ীর কথা ফেলতে পারবে না বলে এখনো চুপচাপ আছে।
শায়নের এমন কথা শুনে দাদী বললো,
– আপনাদের তো বলেছিলাম যে আমার ছোট নাতনী তার বান্ধবীর বিয়েতে গেছে। ট্রেনে আছে কিছুক্ষণ পরই চলে আসবে।
চলবে….