ত্রিভুজ প্রেম
জান্নাতুল ফেরদৌস সূচনা
পর্বঃ১৬
– শুনো বউমা, সব কিছুই তো জানলাম, আর ছেলেও আমাদের পছন্দ হয়েছে। তাহলে তোমার বিয়ে দিতে প্রবলেম কোথায়?
শাশুড়ীর মুখে এমন কথায় আফিয়া বেগম আশ্চর্য হয়ে বলেন
– মা আপনিও এই কথাই বলছেন।
– হ্যা বলছি, কারণ এতো ভালো সমন্ধ হাত ছাড়া করা যায় না। এছাড়া ছেলেও পুষ্পকে পছন্দ করেছে। তাদের সমস্যা বলেই তো তারা এতো তাড়াহুড়ো করছে, নয়তো তারা এমন করতো কি?
– কিন্তু মা এটা কিভাবে সম্ভব? পাপড়ি বাড়িতে নেই। আর আমাদের রূপার বিয়েতে যেতে হবে? আর একদিনে সব কিভাবে হবে?
আর পুষ্পও কি এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে রাজি হবে?
– দেখো বউ মা, তোমার চিন্তা আমি বুঝতে পারছি। তবে এখন যদি আমরা না করে দিই তাহলে হয়তো সমন্ধটা হাতছাড়া হয়ে যেতে পারে। তুমি একটু বোঝার চেষ্টা করো? রূপাকে না হয় আমরা পরে বুঝিয়ে বলবো? আর রূপা বিয়ে কাল। কাল বিয়ের পর রাতের ট্রেনেই পাপড়ি এখানে চলে আসতে পারবে। আর তারা তো বলেছেই ছোট খাটো আয়োজনে বিয়েটা সম্পন্ন করতে চায়। আমরা যদি সবাই মিলে একসাথে কাজ করি তো একদিনে সব হয়ে যাবে আশা করি।
– কিন্তু মা, পুষ্প কি রাজি হবে?
– ও নিয়ে তুমি ভেবো না। ওকে তুমি কসম দিয়েছো, যা পুষ্প কখনোই ভাঙ্গবে না। তুমি আর আপত্তি করো না, হ্যা বলে দাও।
এতো তাড়াতাড়ি বিয়েতে আফিয়া বেগমের আপত্তি থাকলেও শাশুড়ীর কথায় আর কিছু না বলে রাজি হয়ে গেলো।
মি. রাশেদ মাথায় চিন্তা নিয়ে সোফায় বসে আছে। হঠাৎ দাদী আর আফিয়া বেগমকে নিচে নামতে দেখে তাদের দিকে এগিয়ে যায়।
মি. রাশেদকে দেখে মুখে একরাশ হাসি নিয়ে দাদী বললো
– আমরা রাজি আপনার কথায়। এই শুক্রবারেই বিয়ে হবে।
কথাটা শুনা মাত্রই মি. রাশেদ খুশিতে আত্মহারা।
– আমাকে বুঝার জন্য আপনাদের কিভাবে ধন্যবাদ জানাবো বুঝতে পারছি না।
– না না ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করবেন না আমাদের। আপনার কষ্টটা আমরা বুঝতে পেরেছি, কি বলো বউমা?
আফিয়া বেগমের মুখে হাসি নেই। শাশুড়ীর এমন কথায় তিনি শুধু মাথা নাড়িয়ে হ্যা বলে।
দাদী আবার বলে
– তাহলে এবার আসি, সবকিছুর প্রস্তুতি নিতে হবে তো আমাদের।
মি. রাশেদ তাদের বিদায় দিয়ে রাইয়ানকে জোরে জোরে ডাকে। মি. রাশেদের ডাক শুনে রাইয়ান ও বাসার অন্যরাও নিজ রুম থেকে বের হয়ে আসে।
রাইয়ান তার বাবার কাছে আসতেই মি. রাশেদ তাকে জড়িয়ে ধরে বলে
– প্রস্তুতি শুরু কর, আগামী শুক্রবার তোর বিয়ে।
বাবার মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে বললো
– কিন্তু পুষ্প কি এ বিয়েতে রাজি হয়েছে?
– হ্যা হ্যা সবাই রাজি।
মিসেস মাহমুদার দিকে তাকিয়ে বলল
– তোমার ঘরে বউ আসতে চলছে আজ থেকেই বিয়ের আয়োজন শুরু কর মাহমুদা
মি. রাশেদ এমন কথা শুনে মিসেস মাহমুদা রাগে গরগর করতে করতে বলল
– এ বিয়েতে যেহেতু আমার মতামত নেই সেহেতু এ বিয়ের কোন কাজেই আমি থাকবো না। এমনকি বিয়েতেও না।
বলেই রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয় মিসেস মাহমুদা।
মিসেস মাহমুদার এমন আচরণ দেখে মি. রাশেদ ও রাইয়ান দুজনই খুব কষ্ট পায়।
তাদের কষ্ট পেতে দেখে তাদের মন ভালো করার জন্য শায়ন চিৎকার দিয়ে বলল
– ওহ! কি মজা। আমার মতো তুই বিয়ের জেলখানাতে আটাকাবি। পারশু মেরে ইয়ার কি সাদি হে, ও মেরে ইয়ার কি সাদি হে।
শায়নের এমন কথা শুনে মি. রাশেদ ও রাইয়ান দুজনই হেসে ওঠে।
– হ্যা, এখন তোরা তুই বন্ধু গল্প কর আমি একটু আসছি।
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মি. রাশেদ সেখান থেকে যেতেই রাইয়ান শায়নকে জড়িয়ে ধরে বলে
– তুই ছিলি বলেই সব সম্ভব হয়েছে, নাহলে আমি তো এ কথাটা কখনোই বলতে পারতাম নাহ।
– আরে বন্ধু হয়ে বন্ধুর জন্য এইটুকু করতে না পারলে কিসের বন্ধু হলাম আর?
– কিন্তু শায়ন, পুষ্প যে আমার ফোন ধরছে না, অফিসেও আসছে না। ওর কি বিয়েতে মত আছে কি নেই সেটাই বুজছি নাহ?
– আরে, তোর সাথে ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে, তাই হয়তো লজ্জায় তোর সামনে বা কথা বলতে পারছে না।
– হুম, তাই যেন হয়।
– কিহ! এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করা আমার পক্ষে কিছুতেই সম্ভব না। তোমরা আমার মতামত না জেনেই সব ঠিকঠাক করে চলে আসলে?
পুষ্প এমন কথা শুনে দাদী বললো
– তো কি হয়েছে? তোকে তো বলেছিই যে ছেলের দাদা অসুস্থ তাই তারা তাড়াতাড়ি বিয়েটা করাতে চায়। আর বিয়ে পরশু হোক বা ১ মাস পর বিয়ে তো তোকে করতেই হবে তাই না?
– হ্যা, তাই বলে কি, এতো তাড়াতাড়িই আমাকে বিদায় করে দিবে? এতো বড় বোঝা
হয়ে গেছি তোমাদের কাছে আমি? আর মা তুমি কিছু কেনো বলছো না দাদীকে? কেনো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছো?
– বউমা কি বলবে? আমি কি তোর মন্দ চাই? তোর ভালোর জন্য তোকে এ পরিবারে বিয়ে দিচ্ছি। তুই সুখে থাকবি ওখানে।
– আচ্ছা বুজলাম, কিন্তু পাপড়ি ছাড়া তোমরা কিভাবে আমার বিয়ে দিতে পারবে? আমি পাপড়িকে ছাড়া কোনমতেই বিয়ে করবো না।
– কাল রূপার বিয়ে শেষ হলেই ওরা রাতের ট্রেনে ওঠলেই সকালে এখানে পৌছাতে পারবে। আর তুই ভুলে যাস না যে তোর মা তোকে কসম দিয়েছে। কসমের কথা মনে আছে তো তোর?
দাদী এই কথাটা শোনার পর আর কিছু বলতে পারলো না সে। চোখে পানি চলে আসে তার দৌড়ে সে রুমে চলে যায়।
– মা, পুষ্পকে এইভাবে জোর করে বিয়ে দেওয়াটা কি ঠিক হচ্ছে?
– বউমা কি বলছো? আমি ওর খারাপ চাই না। দেখবে বিয়ের পর সব ঠিক হয়ে যাবে।
তুমি বরং নীলেকে ফোন দিয়ে পাপড়িকে সব জানিয়ে দাও।
-হ্যালো, জেঠিমা কেমন আছো?
নীলের এমন প্রশ্নে ফোনের ওপাশ থেকে আফিয়া বেগম বললো
– হুম, ভালো আছি। তোরা কেমন আছিস?
-হ্যা আমরা ভালো আছি। তুমি কোথায় এখনো রওনা হও নি?
– না মানে কিছু কথা ছিলো? পাপড়ি কোথায়?
– কেন কিছু সমস্যা হয়েছে জেঠিমা?
– না, তুই পাপড়িকে একটু ফোনটা দে।
– পাপড়িকে তো খোঁজেই পাচ্ছি না আমি। পাপড়িকে খোজে আমি তোমাকে একটু পর ফোন দিচ্ছি কেমন?
– আচ্ছা
চলবে…..