#তোমায়_ঘিরে❤️
#Labiba_Islam_Roja
#Part_6
.
.
🥀
কেন জানিনা খুব চিন্তা হচ্ছে আমার।কোথাও যেন খুব কষ্ট হচ্ছে।কিন্তু এরকম তো হওয়ার কথা না।উনাকে তো সহ্য করতে পারিনা আমি। তার যথেষ্ট কারণও বিদ্যমান।কিন্তু তবুও উনার না থাকা এতটা কষ্ট দিচ্ছে কেন আমায়…?কেন মানতে পারছিনা উনি নেই।যেখানে উনি না থাকলে সব থেকে বেশি খুশী বোধহয় আমিই হবো।আমি অনায়াসে আব্বু আম্মুর কাছে চলে যেতে পারবো।সবটা খুলে বলতে পারবো।নিশ্চিত মনে বাঁচতে পারবো।তাহলে কেন এতটা ফাঁকা লাগছে আমার যেন খুব প্রিয় কিছু হারিয়ে ফেলেছি আমি।কারণটা কি….উনি আমার স্বামী!হ্যাঁ স্বামী।উনার সাথে আমার সম্পর্কের পবিএতা রয়েছে।শরীয়ত মোতাবেক উনি আমার স্বামী।একজন স্এীর কাছে স্বামী মহামূল্যবান সম্পদ।তাই আজ আমার স্বামীর এমন খবর শুনে ঠিক থাকতে পারছিনা আমি।উনার প্রতি আমার যতই রাগ ঘৃণা থাকুক না কেন তবুও আমিই উনার অর্ধাঙ্গিনী।এসব ভাবতে ভাবতে চোখ থেকে দু ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো আমার।তখনই মেয়েটা শব্দ করে হেসে উঠলো….মেয়েটির এহেন আচরণে চরম অবাক আমি।মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেলো নাকি!এই কাঁদছে তো এই হাসছে।লোকে বলে মানুষ অধিক শোকে কাতর হলে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে।নিজের মধ্যে থাকে না।মেয়েটারও কি সেই দশা হলো নাকি…!!
.
সিরিয়াসলি বউমণি!তুমি আমার কথা বিশ্বাস করেছো..?বলেই আবারও হাসতে লাগলো নাদিরা। এবার ওর সবকটা দাঁত ভেঙ্গে দিতে ইচ্ছা করছে আমার।ভালোভাবে কিছু বলবেও না আমার হো হো করে হাসবে।
.
তুই চুপ করবি নাদিরা!দেখছিস তোর কথা শুনে মেয়েটা ভয় পেয়ে গেছে তাও মজা করে যাচ্ছিস।তুমি কিচ্ছু চিন্তা করো না মা আরাভ ঠিক আছে।কিচ্ছু হয়নি ওর।এই শয়তান মেয়ে তোমার সাথে মজা করছে।তুমি রেস্ট নাও আমি একটু আসছি।
.
উনার কথা শুনে দেহে প্রাণ ফিরে এলো আমার।যাক লোকটা ঠিক আছে।লোকটা আমার সাথে যাই করুক না কেন তবুও উনার মৃত্যু কামনা করতে পারি না আমি।
.
কি বউমণি ভয় পেয়ে গিয়েছিলে তাই তো৷তোমাকে ভয় দেখানোর জন্য সরি গো।আসলে আমি সবসময় মজা করতে ভীষণ ভালোবাসি।তুমি আবার কিছু মনে করো নি তো।
.
না ঠিক আছে।আসলে তখন তো উনার হাতে রক্ত দেখে আমি সেন্সলেস হয়েছিলাম তাই আর কি!
.
হুম!জানো ভাইয়ার হাতটা অনেক খানি কেটে গেছে।ব্যান্ডেজ করা হয়েছে।কিন্তু এই ঘা শুকাতে অনেকদিন লাগবে।আমি তো দেখেই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
.
আচ্ছা আমি এখানে কি করে…?আমাকে কে নিয়ে আসলো…?
.
আরে বুঝতে পারছো না কে নিয়ে এসেছে।ভাইয়া মানে তোমার বর আরাভ।তুমি তো জ্ঞান হারিয়েই ফুস!কিন্তু ভাইয়া কি করবে।ওই যখম হওয়া রক্তাক্ত হাত দিয়ে ড্রাইভ করে তোমাকে কোলে করে রুমে দিয়ে গেছে।তারপর ডক্টর কে কল দিয়ে আগে তোমার ট্রিটমেন্ট করেছে তারপর নিজের তাও আমার জোরাজুরি আর আম্মুর বকা খেয়ে।কপাল করে এমন স্বামী পেয়েছো।কখনও হারাতে দিও না বুঝছো।
.
আচ্ছা ওই লোকটার কি হলো কিছু জানো…?
.
না বউমণি!ওই ব্যাপারে কিছু জানিনা।
.
ওহ্হ!আচ্ছা উনি এখন কোথায়…?
.
ভ্রু নাচিয়ে কেন খুব ইচ্ছে করছে বুঝি তাকে এক নজর দেখতে।কেমন আছে আমি ঠিক বলছি তো। অবশ্য নিজ চোখেনা দেখলে কেমন কেমন লাগে সবই বুঝি আমি।কিন্তু ভাইয়া এখন বাসায় নাই একটা ফোন আসতেই তাড়াহুড়ো করে বেড়িয়ে গেলো।কখন ফিরবে কেউ জানে না।
.
ওহ্হ আচ্ছা!
.
ও ঠিক ফিরে আসবে তুমি টেনশন করো না কথাটা বলতে বলতে রুমে প্রবেশ করলেন কাকীমা।হাতে দুধের গ্লাস।এখন এই অখাদ্য টাকে খেতে হবে আমায় ডিজগাস্টিং!এটা খেয়ে নাও ভালো লাগবে।সারাদিন পেটে দানা পানি পড়ে নি তাই তো এভাবে সেন্স হারিয়ে ফেললে।।নিজের স্বামী হলো সবচেয়ে নিরাপদ স্থান।এত ভয় পেলে হয় যখন আরাভ তোমার সাথে ছিলো তখন কিসের ভয় বলতো।
.
না মানে আসলে…..
.
ঠিক আছে এবার এসব বাদ দাও।তুমি খেয়ে নাও।দুদিন বাড়ী ছিলাম না এরইমধ্যে ভাইয়া বউ জুটিয়ে নিয়েছে যদিও তার কারণগুলো বলেছে তবুও আমার কাছে কেমন জানি লাগছে।এই বাড়ীর ছেলে বিয়ে হলো অথচ কোনো উৎসব হলো না কেমন খাপছাড়া লাগছে।
.
হইছে তোর বক বক থামা!মেয়েটাকে রেস্ট নিতে দে।চল আমরা বাইরে যাই।
.
না ঠিক আছে!থাকুন না আপনারা।
.
আমরা থাকলে তোমার রেস্ট নেওয়া হবে না।আমার এই মেয়ে সারাক্ষণ বকবক করতেই থাকে।তুমি চুপচাপ শুয়ে থাকো আর টেনশন করো না আরাভ কি একটা জরুরি কাজে গেছে চলে আসবে।আমাকে শুইয়ে দিয়ে রুম থেকে চলে গেলেন উনারা।রাফির কি হলো সেটা জানার জন্য ব্যাকুল হয়ে আছি আমি।কিন্তু কি করে জানবো। কিছুক্ষণ শুয়ে থাকার পর ঘুম ধরা দিলো আমার চোখে।হঠাৎ দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো আমার।কিন্তু রুমে কেউ নেই।হঠাৎ মনে পড়লো এই রুমে তো আমি থাকি না।এটা তো উনার রুম!তাই উঠে দাঁড়িয়ে রুম থেকে বের হতে যাবো তখনই কারো কথা কানে এলো আমার।
.
কোথায় যাচ্ছ…?এখানেই শুয়ে থাকো!আর এখন বেটার ফিল করছো তো নাকি…?
.
উনার কথায় পেছন ফিরে তাকালাম আমি।এক হাতে টাওয়াল নিয়ে মাথা মুছছেন উনি।আর এক হাতে ব্যান্ডেজ পেছানো।দেখেই বোঝা যাচ্ছে সদ্য শাওয়ার নিয়েছেন উনি।কথা বলতে বলতে একটা হোয়াইট টি শার্ট গায়ে জড়িয়ে নিলেন উনি।
.
কি হলো চুপ কেন…?তুমি তো জানোই আমার কাকিমা আর নাদিরা বাসায় ফিরে এসেছেন তাই এখন আর আলাদা রুমে থাকা যাবে না আজ থেকে আমরা এক রুমেই থাকবো।
.
এক রুমে মানে…?আমি আপনার সাথে থাকবো না।
.
আমি বুঝতে পারছি কিন্তু কিছু করার নেই।থাকতেই হবে নয়তো কাকিমা সন্দেহ করবে।আচ্ছা চলো কিছু খাওনি নিশ্চয় খেয়ে নেবে চল।
.
রাফির কি হলো….?
.
আমার কথায় ভ্রু কুঁচকে তাকালেন উনি।মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলে উঠলেন….মরে নি বেঁচে আছে।এখন হসপিটালে আছে পরে হাজতে যাবে।স্পট থেকে পুলিশ ওকে ধরে নিয়ে গেছে নইলে ওখানেই মেরে দিতাম ওকে।
.
যাক নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো।লোকটা মরে নি বেঁচে আছে।এরই মধ্যে নাদিরার ডাক কানে এলো বউমণি ভাইয়া খেতে আসো আমরা ওয়েট করছি।
.
চল নাদিরা ডাকছে!
.
আপনি যান আমি খাবো না।ভালো লাগছে না আমার।
.
ভালো না লাগলে হবে খেতে হবে তো!নিজের জন্য না হোক ওর জন্য তোমাকে ঠিক থাকতে হবে।ওহ্হ সীট!এতসবের মধ্যে রিপোর্ট আমার কথা ভুলেই গেছি আমি।ওকে কোনো ব্যাপার না কাল নিয়ে আসবো।
.
আপনাকে যত দেখি ততই অবাক হই আমি!কোনো কথার আগামাথা বুঝি না।সবটা কেমন ধোয়াশা মনে হয় আমার কাছে।যেখানে আমি নিজে শিওর সেরকম কিচ্ছু হয়নি আমার সাথে সেখানে আপনি জোর করে বাচ্চার মা বানিয়ে দিচ্ছেন আমায়।এই শুনুন অনেক নাটক+পাগলামি সহ্য করেছি আমি কিন্তু আর করবো না।আপনি কি পাগল নাকি সুস্থ সেটা নিয়ে এখন বেশ চিন্তিত আমি।
.
আমাকে এত রাগ দেখাইও না!হ্যাঁ তোমাকে ধোয়াশায় রেখে সবটা করেছি কিন্তু বেশি না আমাকে কয়েকটা দিন সময় দাও আমি সব ক্লিয়ার করে দেবো।তারপর আমাকে পাগল না বলে তুমি নিজেই আমার উপর কৃতজ্ঞ থাকবে।
.
কৃতজ্ঞ তাও আপনার উপর…ইম্পসিবল!আপনাকে ঘৃণা করা যায় কিন্তু আপনার উপর কৃতজ্ঞ হওয়া যায় না।
.
লাইক সিরিয়াসলি!বলেই আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন উনি।উনাকে আসতে দেখে পেছনে পিছাচ্ছি আমি।আমি যত পেছনে যাচ্ছি উনি ততটাই এগোচ্ছেন সামনের দিকে।একসময় আমার হাত চেপে ধরে চোখ রাঙিয়ে বলে উঠলেন উনি…..তোমার সাথে ভালো ব্যবহার করছি তার মানে এই না যে তুমি আমাকে যা ইচ্ছে তাই বলবে।শুধু এই বাড়ীর বংশধর তোমার কাছে বেড়ে উঠছে বলে কিছু বলছিনা নইলে…..
.
এই ভাইয়া!সরি!সরি! রিয়েলি সরি!! আমি জানতাম না এখানে রোমাঞ্চ চলছে।
.
নাদিরাকে দেখে আমাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে দাঁড়ালেন উনি।কেমন একটা পরিস্থিতিতে পড়তে হলো আমাকে।মেয়েটা কি থেকে কি ভাবছে ছিহ!
.
ধুর নাদিরা!তুইও না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন উনি।আমি এখনও চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছি।নাদিরা পাশে এসে দাঁড়িয়ে কি গো!এখানে কি চলছিলো হুম…বলেই হো হো হেসে উঠলো!!আচ্ছা চলো খাবে।
.
না আমি খাবো না!মেয়েটা নাছোড়বান্দা এক প্রকার জোর করেই আমাকে নিয়ে চলে গেলো।টেবিলে বসে আছি আমি আন্টি, নাদিরা, আর উনি ফোনে কি যেন করছেন।সবাই খেতে ব্যস্ত আমিও খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছি কিন্তু খেতে ভালো লাগছে না আমার।তখনই আন্টি বলে উঠলেন….আরাভ খাচ্ছ না কেন…?
.
উফফ আম্মু!তুমিও না ভাইয়া এই হাতে কি করে খাবে।বউমণি তুমি ভাইয়াকে খাইয়ে দাও তো!
.
মেয়েটার কথা শুনে চোখ দুটো রসগোল্লার মতো হয়ে গেলো আমার।ও বলছে আমি খাইয়ে দেবো উনাকে ইম্পসিবল!কথাটা শোনেও না শোনার ভান ধরে বসে আছি আমি।নাদিরা আবারও বলে উঠলো কি গো কথা শুনছো!
.
নাদিরা থাক!আমি পারবো।
.
কি করে পারবে তুমি।কিচ্ছু পারবে না।বউমা যদি কিছু মনে না করো তাহলে ওকে খাইয়ে দাও না প্লিজ।আমিই দিতাম কিন্তু দেখছো তো আমি খাচ্ছি।
.
উনার কথা ফেলতে পারলাম না আমি।বয়স্ক মানুষ এভাবে বলছেন ফেলি কি করে তাই বাধ্য হয়ে উনাকে খাওয়াচ্ছি আমি।উফ এটাও হওয়ার ছিলো।কেন যে তখন রাফিকে মারতে আটকে ছিলাম এখন সেই ভুলের খেসারত দিচ্ছি আমি ডিজগাস্টিং..!!উনাকে খাওয়াচ্ছি আর উনি তৃপ্তি করে খেয়ে চলেছেন।খাওয়া যেন আজ শেষই হচ্ছে না।হঠাৎ কানের কাছে ফিসফিস করে বলে উঠলেন….
.
তখন আমার হাত কাটার জন্য অনেকটা তুমিই দায়ী।তার জন্য মনে মনে নিশ্চয় অনুতপ্ত তুমি।অবশ্য এই অনুতাপ দূর করার জন্য ভালো একটা সুযোগও পাচ্ছ। আমাকে তিনবেলা খাইয়ে সেই অনুতাপ দূর করবে তুমি।জানি কাজটা অসহ্যকর কিন্তু তবুও তোমাকে এটা করতে হবে।আফটার অল তুমি আমার দশটা না পাঁচটা না একমাএ “বউ”(চোখ টিপে)
.
রাক্ষুসটার কথা শুনে চোখ কপালে উঠলো আমার।একটা ভুলের জন্য তিনবেলা খাওয়াতে হবে।তাও এই রাক্ষুস কে যার কিনা আধ ঘন্টায়ও খাওয়া শেষ হয় না।হায় কপাল!এ কোন মসিবতে পড়লাম আমি।
.
.
#চলবে……