#তোমার_নেশায়_আসক্ত
#part:9
#Suraiya_Aayat
রুমে ঢুকতেই আরূ দেখল আরিশ বসে আছে আর মুখে আছে একরাশ রাগ ৷আরুর এখন আর অসুবিধা হয় না যে কখন আরিশ রেগে থাকে তা বুঝতে , আরিশকে দেখলেই বুঝে যায় যে আরিশ এর মুডটা কেমন ৷আগে না বুঝলেও এখন বেশ ভালই বুঝতে পারে ৷ দিন দিন আরিশের অভ্যাসগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে আরু না চাইতেও ৷
আরুশি ঘরে ঢুকে চুপচাপ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে সামনের দিকে একপাও এগোচ্ছে না আর আরিশ ও একইভাবে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে, ও নিজেও কোনো কথা বলছে না ৷ আবহাওয়া যে বেশ গরম তা ওর স্বভাব থেকেই প্রকাশ পাচ্ছে ৷
অনেকক্ষণ ধরে আরূকে সেই একই জায়গায় স্ট্যাচুর মত দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আরিস ধোমকে আরুকে বলল : দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আছো কেন? দরজা দিয়ে আমার কাছে এসো ৷
আরোশী চমকে গিয়ে তাড়াতাড়ি দরজা বন্ধ করে দিল ,দিয়ে আরিশ এর সামনে গিয়ে দাঁড়াল ভয়ে ভয়ে৷
আরিশ : এতক্ষণ নিচে তুমি কি করছিলে ? আর আমি 12 মিনিট 37 সেকেন্ড ধরে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি, আমাকে এরকম অপেক্ষা করে রাখার মানে কি সেটা কি জানতে পারি , যদি আপনার আমার ওপর আবার দয়া হয় ৷ আপনার তো আবার দয়া মায়ার স্বভাব ৷
আরুশি : এভাবে আপনি কেন বলছেন ! আসলে আপনার মা মানে আন্টি উনি তো আমার সঙ্গে কথা বলছিলেন, আমাকে আটকে রেখেছিলেন বলে আমি আসতে পারিনি ৷
আরিশ এবার উঠে দাঁড়ালো, উঠে দাঁড়িয়ে ক্রমশ আরুর দিকে ধীরপায়ে এগিয়ে যেতে লাগল আর আরু তত পিছিয়ে যেতে লাগল ৷
আরিশ : মা না ডাকলে বুঝি আমার কাছে চলে আসতে এক্ষুনি?
আরুশি: আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসছেন কেন?
আরিশ : এই যে এখুনি তুমি বললে যে মামনি আটকে না রাখলে তুমি আমার কাছে আসতে তার জন্যই তো তোমার কাছে যাচ্ছি ৷
বলতে বলতে এক পর্যায়ে আরুর পিঠ দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেল ৷
আরূ: আপনি আমার দিকে এগিয়ে আসবেন না, প্লিজ সরে দাঁড়ান আমার খুব ভয় করছে ৷
খরিশ দাঁতে দাঁত চেপে :তাহলে আমার কথার অবাধ্য কেন হও আমাকে যখন এতই ভয় পাও! মনে হয় না যে উনি বলে গেছেন ঘরে আসতে তাড়াতাড়ি তাই আমি তাড়াতাড়ি যাই ৷
আরুশি : তাই বলে আপনি আমাকে এত বকাঝকা করবেন ? আর মাত্র 12 মিনিটে তো ৷
আরিশ: সময়টা তোমার কাছে মাত্র মনে হলেও আমার কাছে অনেক ৷ সময়ের মূল্য দিতে তুমি জানো? জানো না ! জানলে আমার ধৈর্যের পরীক্ষা নিতে না ৷
আরু বুঝতে পারছে না যে মাএ 12 মিনিটে কি এমন যায় আসে যে, যার জন্য আরিশ ওকে এত কথা শোনাচ্ছে ৷
আরিশ : নেক্সট টাইম যদি আমার কথা মত যদি না চলো তো ওই বেলকনি দেখছো , ওখান থেকে ধাক্কা মারে ফেলে দেবো ৷
আরুশি প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে : আমি আপনার সব কথা শুনব প্লিজ আমাকে ধাক্কা মারবেন না ৷
আরুশির কাচুমাচু ফেস দেখে আরিশের খুব হাসি পাচ্ছে , তবুও কোনভাবে আরুশির সামনে হাসতে চায় না ৷
আরিশ কিছুটা দূরে সরে গিয়ে: ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর একসঙ্গে ব্রেকফাস্ট করতে যাব ৷
আরশি : আচ্ছা ৷
দুপুরবেলা,,,,,
আরিশ সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে গেছে , খুব একটা ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে ৷ আর সানা আর আরিশ এর মা ও বাড়িতে নেই , শপিং এ গেছেন ৷ কালকে আরুশির আর আরিশের বৌভাত বলে সব কেনাকাটা করতে গেছেন ওদের জন্য৷ সবকিছু এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেল যে তাই অতি দ্রুত হাতে সব কাজ নিজেরাই সামলাচ্ছেন ৷
কাজের লোকগুলোও যে যার মতো কাজে ব্যস্ত , খুব একটা বেশি কাজের লোক বাড়িতে নেই ৷ দুটোই রয়েছে ৷ একজন বাগান পরিষ্কার , গাড়ির ধোঁয়া এই সমস্ত কাজের জন্য আর একজন ঘর পরিষ্কার করার জন্য , এত বড় বাড়ি একা পরিষ্কার করা সম্ভব নয় সেই কারণেই ৷ রান্না করার জন্য আরিশ এর মা কাউকে রাখেননি, তার কারণ আরিশের বাবা আরিশের মায়ের হাতের রান্না খেতে খুব পছন্দ করেন, অন্যের হাতে রান্না খুব একটা খান না ৷ তাই সকাল , দুপুর ও রাত্রেবেলা রান্নাটা আরিশের মা নিজেই করেন৷
আরু খুবই বোর ফিল করছে একা একা , তাই ভাবল যে সারা বাড়িতে একটু ঘুরে ঘুরে দেখা যাক ৷ দেখতে দেখতে আরিসের ঘরের ব্যালকনিতে গেল, গিয়ে দেখল নিচে একটা বিশাল বড় সুইমিং পুল আর সেখানে বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা করা আছে , অপরূপ সুন্দর , আর সেই দৃশ্যটা বেশ চোখে ধরল আরুশির ৷ সুইমিংপুলের কাছে যাবে বলে যেই নিচে নামতে গেল তখনই ফোনে ফোন আসতেই থেমে গেল ও ৷
ফোনটা ধরতেই দেখল তিথি ফোন করেছে,,,,,
আরুশি কিছু বলবে তার আগেই তিথি বলে উঠলো:
তিথি : হ্যা রে দোস্ত কালকে আরিশ ভাইয়ের সঙ্গে কি কি করলি?
আরুশি : আজিব প্রশ্ন ! এসমস্ত কথা কেন জিজ্ঞাসা করছিস আমাকে তুই? সকালবেলা সানা আর এখন তুই ৷ বলছি তোদের কি লাজ লজ্জা বলে কিছু আছে নাকী? ফ্রেন্ড বিয়ের রাতে কি করেছে তাই নিয়ে মাতামাতি করছিস ৷
তিথি: লজ্জা পাচ্ছিস কেন ? বলনা রে ৷
আরুশি : আমার আর উনার মধ্যে তেমন কিছুই হয়নি যে তোকে বলবো ৷
তিথি : বুঝতে পেরেছি এখন তুই বোলবি না ৷ থাক তোকে আর বলতে হবে না , আমার যখন বিয়ে হবে তখন তো আমি জানতেই পারব ৷ লজ্জায় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে ৷
আরুশি : বজ্জাত একটা ৷
তিথি: হ্যাঁরে , আঙ্কেল-আন্টি তোদেরকে মেনে নিয়েছেন? আমি তো তাড়াতাড়ি করে চলে এলাম তার পরে কি হল কিছুই জানিনা ৷
ওর বাবা-মার কথা শুনে আরুর মনটা খুব খারাপ হয়ে গেল ৷ সত্যিই খুব মিস করছে ওদেরকে , বিশেষ করে আহান কে ৷ শেষমেশ আহান ও ওকে ভুল বুঝল এটাই সবথেকে বড় কষ্ট ওর , আর কালকের পর থেকে আহান এখনো ওকে একবার ফোনও করল না৷ কথাগুলো ভাবতেই চোখ থেকে অটোমেটিকলি কয়েক ফোটা নোনা জল গড়িয়ে পড়ল ৷
আরুশি কিছু বলছে না চুপ করে আছে ৷
তিথি : কিরে ? কিছু বলছিস না কেন ?
তখনই দ্রুত পায়ে কারোর হাঁটার শব্দ পেয়ে আরুশি দরজার দিকে তাকাতেই অবাক এর থেকেও বেশি অবাক হল , অভ্র এসেছে এখানে ৷
তিথি : কিরে বল?
আরুশি আমতা আমতা করে : অভ্র এসেছে!
তিথি :অভ্র ভাইয়া! অভ্র ভাই ওখানে কি করছে?
আরোশী : আমি জানি না রে আমি এখন রাখছি বলে ফোনটা রেখে দিল ৷
অভ্র এখনো ঠায় দাঁড়িয়ে রয়েছে, ঘরের ভিতরে৷
আরু কাঁদো কাঁদো হয়ে: তুমি !এখানে তুমি কি করে এলে?
অভ্র: তুমি এখানে কষ্টে আছো আর আমি কি করে না এসে পারি বল , তাই ছুটে চলে এলাম তোমার কাছে৷ আমি তোমাকে ওই মানুষটার হাতে একা ছেড়ে দেব না ৷ না জানি কখন কি ক্ষতি করে বসে তোমার৷
আরশির মনে অভ্রর জন্য একরাশ দুঃখ রয়েছে, ওর বারবার শুধু ভাবে যে ও অভ্র কে ঠকিয়েছে ৷
অভ্র : আমি তোমাকে নিতে এসেছি, তুমি এক্ষুনি আমার সাথে যাবে ৷
আরুশি ; এটা আর কোনোভাবেই সম্ভব নয় ৷
অভ্র আরুর কাছে এসে ওর হাতে হাত রেখে বলল: কেন সম্ভব নয় আরুশি ? তোমার ইচ্ছা থাকলে সব সম্ভব , আমি তোমাকে আর এক মুহূর্তও এই বাড়িতে রাখতে চাইনা ৷ তুমি আমার সাথে চলো ৷ বলে আরুশির হাত ধরে নিয়ে যেতে গেলেই আরুশি বলে উঠলো ,,,,,,,
আরূশি: আপনি প্লিজ চলে যান, আর আমাকে ফেরাতে আসবে না প্লিজ ৷ উনি যদি একবার জানতে পারেন যে আপনি এখানে এসেছেন তাহলে আপনাকে শেষ করে দেবে উনি আর আমি চাইনা আমার জন্য আপনার দ্বিতীয়বার আবার কোন ক্ষতি হোক৷
অভ্র কাঁদো কাঁদো হয়ে : তোমাকে হারিয়ে আমার যে বড় ক্ষতি হয়েছে তা তুমি হয়তো তুমি জানো না ৷ তুমি শুধু আমার সাথে চলো , দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে ৷
আরুশি: আপনি প্লিজ চলে যান , তাছাড়া বাড়ির অন্য লোক দেখলে খারাপ বলবে ৷ আমি আপনার সাথে যেতে পারবো না ৷
অভ্র রেগে গিয়ে : আজ খালি হাতে ফিরছি ঠিকই, তবে তোমাকে তো আমি এখান থেকে নিয়েই যাব না হলে যে আমার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে ৷ বলে রাগ দেখিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল ৷
অভ্র চলে যেতেই আরু মেঝেতে বসে হাউ হাউ করে কাঁদতে লাগল, বারবার ওর মধ্যে অনুশোচনা কাজ করছে যে ও অভ্রকে ধোঁকা দিয়েছে ৷ ওর মনে হচ্ছে যে ও যদি বিয়ের দিন সবটা অভ্রকে বলে দিতে তাহলে এই পরিস্থিতি হত না, আর এতদিনের নিজের মনের অভ্র কিছুটা হলেও জায়গা তৈরি করে নিতে পেরেছিল তাতে কোন সন্দেহ নেই আরুর ৷ একদিকে ওর পরিবার আর অন্যদিকে আরিশ ৷দোটানার মধ্যে পড়ে গেছে আরূ ৷
বয়সটা নিতান্তই কম , 18 পার করে 19 এর দোরগোড়ায় পা দিয়েছে, নতুন কলেজে ভর্তি হয়ে এত সব কিছু ঘটে গেলো তা ওর জীবনটাই বদলে দিল ৷ এমনটা ও কখনই চাইনি , সুখে-শান্তিতে একটা মানুষের সঙ্গে সংসার করতে চেয়েছিল কিন্তু সবকিছুই যেন কেমন ওলট পালট হয়ে গেল……
বারে বসে ড্রিঙ্ক করছে অভ্র, চোখ মুখ লাল হয়ে আছে, নিজের মধ্যে কোনও হুস ই নেই ৷ চারিদিকে মেয়েদের নাচ দেখতে মগ্ন ও ৷ একটা অন্য জগতে যেন চলে গেছে ও , আশেপাশে কি হচ্ছে তার সম্বন্ধে কোনো ধারণা নেই ৷ হঠাৎই নাকের উপর একটা ঘুসি দিতেই গল গল করে রক্ত বের হতে লাগল নাক দিয়ে৷
মেঝেতে পড়ে গিয়ে ওপরের দিকে তাকিয়ে আরিশ কে দেখলো কিন্তু ওর এখন কি করা উচিত তার কোন ধ্যান ধারণায় ওর নেই ৷
আরিশ ওকে মেঝে থেকে তুলে আর একটা ঘুসি দিলে ওর মুখে সবাই এখনও আরিশ আর অভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে ৷ শহরের কমবেশি সবাই আরিশ কে জানে আর চেনে ,তাই সবাই এখন অবাক ৷
অভ্রের জামার কলার ধরে বলল : তোর সাহস হয় কি করে আমার বাড়িতে গিয়ে আমার বেডরুমে ঢুকে আমার বউকে তোর কাছে নিয়ে আসার কথা বলার ৷
অভ্র : যা করেছি বেশ করেছি , আর করবো , শুধু তোর বেডরুম কেন তোর বউয়ের শরীর টা ছিড়েকুড়ে খাব , তখন দেখবি তুই কিছুই করতে পারবি না ৷
আরিশ অভ্র কে ধরে বেধড়ক পেটাতে লাগলো , কথাটা যেন ওর বুকের মধ্যে তীরের মত বিধেছে৷
আশেপাশের লোকজন আরিশকে থামালো ৷মার খেয়ে মাটিতে পড়ে আছে অভ্র ৷
আরিশ : আর যদি তোকে কখনো আমার বউয়ের আশেপাশে দেখেছি তো সেদিনই তোকে শেষ করে দেবো বলে বেরিয়ে গেল ওখান থেকে ৷
আরিসের মাথায় যেন রক্ত উঠে গেছে, ঠিক ভুলের কোন জ্ঞান হিতাহিত জ্ঞান ওর এখন নেই ৷
এদিকে রাত অনেক হয়ে গেছে প্রায় এগারোটা ছুঁইছুঁই ,এখনো বাড়িতে যাইনি আরিশ…..
প্রচন্ড স্পিডে গাড়ি চালিয়ে বাড়িতে গেল আরিশ ৷ ওর বাবা-মাও অপেক্ষা করতে করতে অবশেষে না পেরে ঘরে চলে গেছেন ৷ অবশ্য আরুও যে অপেক্ষা করে আছে তেমনটি নয় ৷ ভালো লাগছেনা বলে ঘরে না থেকে সুইমিংপুলে নিজের পা দুটো ডুবিয়ে বসে আছে আরুশি, কিছুটা হলেও রিলাক্স ফিল করছে এখন ৷
রুমে ঢুকে আরুশিকে খুঁজে না পেয়ে ব্যালকনির দিকে নজর পড়লো , দেখল যে আরুশি নিচে বসে আছে জলে পা ডুবিয়ে ৷
এতো রাতে ও রুমে না থেকে সুইমিংপুলে দেখে যেন আরিশের রাগ আরো বেশি বেড়ে গেল ৷ দ্রুত পায়ে সুইমিং পুলের পাশে গিয়ে পিছন থেকে আরুশিকে জলের মধ্যে ধাক্কা মারলো আর নিজেও জলে নেমে গেল ৷
চলবে,,,,,,