তোমায় ছেড়ে যাবো কোথায় পর্ব-১২

0
701

#তোমায়_ছেড়ে_যাবো_কোথায়?
লেখা – মুনিরা সুলতানা।
পর্ব – ১২।

————-*
আমাদের জীবনের গতিপথ বদলাতে মুহূর্তও লাগেনা তা আজ আবারও গভীর ভাবে উপলব্ধি করলাম। এর আগে আমার হুট করে বিয়ে হয়ে যাওয়ার ঘটনায় সেটা উপলব্ধি করেছিলাম। আসলে জীবনের কোন কিছুই আমাদের ইচ্ছে মাফিক চলেনা। আমরা হয়ত একটু আগেই কোন সুখময় ঘটনার আবেশে বুদ হয়ে আছি, পর মুহূর্তেই হয়ত অন্ধকারের ধোঁয়াশায় ডুবে যাওয়া কোন বিচিত্র নয়।
এইযে গতকালের কথায় ধরলে কি সুন্দর স্বপ্নময়ী ছিল দিনটি। কিন্তু মাত্র একদিনের ব্যাবধানে কি থেকে কি হয়ে গেল। সকালটাও কত আনন্দময় ছিল। অথচ দুপুর পেরোতে না পেরোতেই সবকিছু কেমন বদলে গেল। দুশ্চিন্তার সাগরে আমাদের তলিয়ে যেতে বাধ্য করল পরিস্থিতি।

এখন রাত আটটা বাজে। অথচ কামরানের সাথে কোন যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছেনা। সেইযে দুপুরে এসে খেয়ে বেরিয়েছিল আর কোন খবর নেই। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছেনা। ঐদিকে চট্টগ্রাম থেকে শাশুড়ি মা ফোন করেছিলেন। আমার ননদ তাসমিয়াকে হসপিটালে নেয়া হয়েছে। সকালেই বলছিলেন ওর শরীরটা ভালো নেই। সন্ধায় তা আরও খারাপ হয়ে পরলে তৎক্ষনাৎ হসপিটালে নেয়া হয়েছে। কামরানকে ফোনে না পেয়েও শাশুড়ি মা দুশ্চিন্তা করছেন। আমি বাসায় একা একা কি করব কিছুই বুঝতে পারছি না। কামরানকে নিয়েও চিন্তা হচ্ছে। দুপুরে বাসায় এসেছিল প্রায় ঝড়ের বেগে। এসেই সোজা ওয়াশরুমে ঢোকার আগে বলেছিল,

” আমাকে এখুনি ইম্পর্ট্যান্ট একটা কাজে বেরোতে হবে। শাওয়ার নিয়েই আমি বেরোবো। ”

” ঠিক আছে আপনি শাওয়ার নিয়ে আসেন। আমি খাবার বারছি। ”

” আমার খাওয়ার সময় হবেনা। একটা প্রবলেম হয়েছে সাইটে। এক্ষুনি যেতে হবে। ”

” ঠিক আছে বুঝলাম। আপনি আগে ফ্রেশ হয়ে আসেনতো।”

কামরান গোসলে ঢুকতেই আমি টেবিলে ঝটপট খাবার গুলো সাজিয়ে ফেললাম। যতই বলুক সময় নেই,খাবেনা। তাই হয় নাকি? সেই কোন সকালে ব্রেকফাস্ট করেছিল সেগুলো কখন হজম হয়ে গেছে। বললেই হলো খাবেনা। আমি ওকে না খাইয়ে ছাড়লে তো। ও একেবারে রেডি হয়ে এসেছে। আমি বললাম।

” খাবার একদম রেডি। একটু কিছু মুখে দিয়ে তারপর যেখানে খুশি যান।”

কামরান এক পলক টেবিলের দিকে তাকিয়ে আমার দিকে ফিরে বললো, ” সত্যি বলতে একদম সময় নাই। তাছাড়া আমার এখন খেতে ইচ্ছেও করছেনা। ”

” এটা্ বললেতো হবেনা। এই ভর দুপুর বেলায় না খেয়ে বের হবেন। এটা একদম ঠিক না। এরপর কখন খাবেন? কোথায় খাবেন? এভাবে না খেয়ে থাকলে শেষে শরীর খারাপ করবেনা? যেখানে যান যেই কাজেই যাননা কেন সবার আগে শরীরের এনার্জির দরকার। তবেই না পরিস্থিতির সাথে ঠান্ডা মাথায় মোকাবিলা করতে পারবেন। আর কোন কথা বলে সময় নষ্ট না করে চুপচাপ চটপট দুটো খেয়ে নিন।চলেনতো, খেতে বসেন। ”

আমি একটু সাহস করে কামরানেন একটা হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলাম টেবিলের দিকে। একটা চেয়ার টেনে বসে ও বললো,

” তুমি তাহলে না খাইয়ে ছাড়বেনা? অগত্যা খেতেই হবে। পরেছি বাঘের হাতে খানা খেতে হবে সাথে। ”

আমি প্লেটে ভাত বেড়ে দিতে দিতে মুচকি হেসে বললাম, “এইতো বুঝতে পেরেছেন। এখন ঝটপট খেয়ে নিন।”

কামরান খাওয়া শুরু করার আগে বললো, ” তুমি খাবেনা? বস খেয়ে নাও।”

আমি কথা না বাড়িয়ে একটা প্লেটে একটু ভাত তরকারি তুলে নিয়ে খেতে বসলাম। আস্তে ধীরে জিজ্ঞেস করলাম,

” কি প্রবলেম হয়েছে বলুন ত?”

” আর বলনা একটা সাইটে দুই তিনদিন যাওয়ার সময় হয়নি। আজ গিয়ে দেখি সেখানে নাকি দুই নাম্বার কাঁচামাল এসেছে। ভাগ্যিস কেবল দুটো দেয়াল গাঁথা হয়েছিল। একদম সময় মত গিয়েছিলাম। তাই আমাদের মাল সাপ্লাই দেয় যেখান থেকে সেখানে মানে নারায়ণগঞ্জ যেতে হবে। আমরা যেসব কাঁচামাল ইউস করি সম্পূর্ণ যাচাই-বাছাই করে নেই। হঠাৎ করে ওরা এমন বাজে মাল কেন পাঠালো সেটা আমাকে জানতে হবে। তাই ফেস টু ফেস সেটা করতে চাই। তুমি চিন্তা করতে পার এই মাল ইউস করে বিল্ডিংটা তৈরি হলে কি অবস্থা হতো? পাবলিকের জানমালের ক্ষতি তো হতোই সেই সাথে আমাদের এতো বছরের গড়ে ওঠা রেপুটেশন ধুলোয় মিশে যেত। ”

বেশ উত্তেজিত গলায়ে কথাগুলো বলেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল কামরান। ওর কথার মর্মার্থ ধরতে পেরে আমি শিউরে উঠলাম। সত্যিই তো কি সাংঘাতিক ঘটনা। আমি বললাম,

” ভাগ্যিস সময় মতো ধরা পরেছে। আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আপনার পাশে আছেন বলেই বড় কিছু হওয়ার আগেই ধরতে পেরেছেন। আল্লাহর উপর ভরসা রাখেন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

” তাই যেন হয়। ”

এরপর কামরান খাওয়া সেরে চলে গিয়োছিল। সেই দুপুর বেলায়। আর এখন সন্ধ্যা রাত। আরও দুশ্চিন্তার বিষয় সন্ধ্যা হতে না হতে প্রকৃতিও কেমন বিরুপ রুপ ধারণ করেছে। শুরুতে কালবৈশাখী ঝড়ের তা*ন্ডবে কি উথাল পাথাল পাগলা হাওয়া বয়ে গেল। বিকট শব্দে বিদ্যুৎ চমকের দমকে চারিদিকে মুহুর্তের জন্য কেমন ঝলমলে আলোয় ফকফকা হয়ে উঠছিল। আবার পর মুহূর্তেই নিকষ কালো ভুতুড়ে আঁধারে ছেয়ে যাচ্ছিল৷ এখন একটু বাতাসের বেগ হালকা হয়েছে। কিন্তু ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি ঝরে চলেছে অবিরাম। জানিনা এই মুহুর্তে কামরান কোথায় আছে। দুশ্চিন্তায় আমি এক দন্ড স্থির হয়ে স্বস্তি নিয়ে বসতে পারছিনা। আমাকে একা রেখে আসমা এবং রানি দুজনের কেউ বাসায় যায়নি। অবশ্য আসমার এখনো যাওয়ার সময় হয়নি। ওদের ধারণা এই ঝড় বৃষ্টির রাতে একা একা এত বড় বাড়িতে আমার ভয় করবে। কিন্তু সত্যি বলতে এসবে আমার ভয়ডর একদমই নেই। বরং এমন সুন্দর মাতাল করা প্রকৃতির সৌন্দর্যই আলাদা। বৃষ্টি ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধে মনটা ভরে ওঠে। অবিরাম মধুর ছন্দে একিভাবে বৃষ্টি ঝরার ঝিরিঝিরি শব্দ কোন সুরেলা গানের চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এমন মনোমুগ্ধকর পরিবেশে কিযে ভালো লাগে আমার! বৃষ্টির শুরুতে বেশ উপভোগ্যই ছিল এই সন্ধাটা। কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথে যখন কামরানের সাথে যোগাযোগ করায় ব্যার্থ হয়ে সেই ভালোলাগার অনুভূতি বেশিক্ষণ স্হায়ী হয়নি। এখন সেই জায়গায় জায়গায় দুশ্চিন্তা ভর করেছে।

বাইরে ঝড়ের বেগ কমে গেছে। কেবল বৃষ্টি ঝরে চলেছে। লিভিং রুমের সাথে বেলকনির গ্লাস ডোর বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল ঝরের সময়। সেটা এখন খুলে দিলাম। সঙ্গে সঙ্গে একরাশ সজীব নির্মল শীতল বাতাস হুরমুর করে আমাকে ধাক্কা মেরে ঘরের ভিতরে প্রবেশ করল। আমি সাবধানে পা ফেলে বেলকনিতে গিয়ে দাড়ালাম। বেলকনির মেঝেতে বৃষ্টির পানিতে ভিজে সপসপে হয়ে আছে। বাইরে আলোর ব্যাবস্থা আছে। কিন্তু বেলকনির সাথে লাগোয়া বাল্বটা বোধহয় ঝড়ে ভে*ঙে গেছে। তাই সামনের অংশটুকু আবছা আধারে ছেয়ে আছে। গাছের পাতাগুলো কেমন ভুতুড়ে আলোড়ন তুলে নেচে চলেছে মনে হচ্ছে। বৃষ্টির পানি গাছের পাতা বেয়ে গড়িয়ে টুপটাপ শব্দ করে মাটিতে ঝরে পরছে। আমি চুপচাপ গ্রীলে দু’হাতের ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। যতবার গেটের সামনে দিয়ে কোন গাড়ি যাচ্ছে আমি প্রত্যাশা নিয়ে সেদিকে তাকিয়ে দেখছি। কামরান এলো বুঝি এই ভেবে। কিন্তু প্রতিবারই নিরাশ হতে হচ্ছে। দেখতে দেখতে নয়টাও পেরিয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে শাশুড়ি মাকেও একবার ফোন করে জানতে পারলাম কিছুক্ষণের মধ্যে তাসমিয়ার সিজারিয়ান অপারেশন শুরু হবে। উনাকে সাহস যুগিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করলাম।

কামরান এলো যখন, তখন রাত সারে দশটা পেরিয়ে গেছে। ওকে দেখে আমার ধরে যেন প্রান ফিরে পেলাম। একমুহূর্তের জন্য মন চাইছিল দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরি। কিন্তু সব ইচ্ছে তো আর পূরণ হওয়া সম্ভব নয়। আমাদের মধ্যে এখন অব্দি জড়িয়ে ধরার মত ঘনিষ্টতা হয়ইনি। একটা গোপন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ওর পিছু পিছু আমাদের বেডরুমের দিকে যেতে যেতে বললাম,

” যে ঝড় বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। আমিতো ভয়ে টেনশনে কি করব বুঝতে পারছিলাম না। আপনার এত দেরি হল কেন?”

কামরান আমার দিকে ফিরে দাঁড়িয়ে কৌতুক সহকারে হেসে উঠে বললো, ” ও আচ্ছা তুমি ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত ভ*য় পাও?”

কামরানের কথা শুনে আমি থতমত খেয়ে গেলাম। বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পরেছি। কামরান আমার কথার ভুল মানে বের করেছে। আমি তাই দ্রুত জবাব দিলাম,

” মোটেই না। আমি ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত, অন্ধকারে একা থাকতে একদমই ভ*য় পাইনা। এসবে আমার কোন ফোবিয়া নেই। আমিতো ভয় পাচ্ছিলাম আপনার জন্য। এত ঝড় বৃষ্টির সময় আপনি গাড়ি নিয়ে রাস্তায় ছিলেন। তাই খুব টেনশন হচ্ছিল। ”

কামরান রুমের ভিতরে প্রবেশ করে বললো,” এতে ভ*য় পাওয়ার কি আছে? কত শত মানুষ ঐ সময়ে বাইরে ছিল বল। আমিও কাজ সেরে ঢাকার পথেই ছিলাম। হঠাৎ ঝড় শুরু হওয়ায় একটা সেফ জায়গায় গাড়ি থামিয়ে ওয়েট করেছি। তারপর ঝড়ের গতি কিছুটা কমে এলে আবার রওনা দেই। সো এসব নিয়ে অহেতুক চিন্তা করবেনা। ওকে?”

আমি মাথা নেড়ে সায় জানালাম। বেলকনি থেকেে টাওয়েল এনে কামরানের হাতে দিলাম। ও ততক্ষণে ওয়ালকাবার্ড থেকে টিশার্ট আর ট্রাউজার বের করছে। টাওয়েল নিয়ে বাথরুমের দিকে এগোতে এগোতে বললো,

” খুব খিদে পেয়েছে। আমি ঝটপট শাওয়ার নিয়ে এসেই খেতে বসব। ”

আমি মৃদু হেসে বললাম, ” আপনি বেরিয়ে একদম গরম গরম খাবার রেডি পাবেন। ”

কামরান জবাবে মাথা দুলিয়ে হাসলো। তারপর ওয়াশরুমের ভিতর ঢুকে গেল। আমিও হাসি মুখে কামরা ছেড়ে বেরিয়ে এলাম। দ্রুত গতিতে টেবিলে খাবার বাড়তে হবে। রানি চলে গেছে ঝড় থামতেই। ওর বাসা আশেপাশেই কোথাও। বাসায় ছোট বাচ্চা আছে। আসমা নিচেই এই বাড়ির সার্ভেন্ট কোয়ার্টারে থাকে। তাই সে রাতের খাওয়া দাওয়া হয়ে গেলে সব গুছিয়ে রেখে তবেই যায়। অবশ্য এবাড়িতে রাতের খাবার দশটার আগেই সম্পন্ন হয়ে যায়। কিন্তু আজ এই আচানক ঝড় বৃষ্টি দৈনিক রুটিনের ব্যাঘাত ঘটিয়েছে। যাইহোক সব ঠিকঠাক আছে। কামরান সহিসালামতে বাড়ি ফিরে এসেছে। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া। ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে রান্নাঘরের দিকে এগোলাম।

এখন রাত বারোটা। খাওয়া দাওয়া সেরে টুকটাক কাজ সেরে এককাপ কফি বানিয়ে বেডরুমে এলাম। কামরান ফোনে কথা বলতে ব্যাস্ত। কফির মগটা ওর সামনে ধরতে হাত বাড়িয়ে মগটা নিল সে। বোধহয় তিয়ানার সাথে কথা বলছে। খাওয়া শেষে কামরানকে চিটাগংএর পরিস্থিতি সম্বন্ধে ধারণা দিয়েছিলাম। আমি বিছানায় গিয়ে বসলাম। কামরানের চোখে মুখে খুশির ঝিলিক। ও হঠাৎ বেশ উত্তেজিত গলায় বলে উঠলো,

” সত্যি! ওয়াও… আমি মামা হয়েছি তাও আবার টুইনসের। রিয়েলি আমার এখুনি ওখানে ছুটে যেতে ইচ্ছে করছে।”

আমারও মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। টুইন বেবি হয়েছে। যাক সব ঠিকঠাক হয়েছে। আল্লাহতালার অসীম কৃপা। কামরানের কথা শেষ হলে আমিও কথা বললাম।

” আপু কেমন আছে? ”

ওপাশে তিয়ানার জবাব, ” আপু ভালো আছে। এখন পোস্ট অপারেটিভ কেয়ারে আছে। কেবিনে বোধহয় সকালে দিবে।”

” আচ্ছা। যাক অবশেষে সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটলো। এখন বেবি ও মা সুস্থ সবল ভাবে বাড়ি ফিরে আসুক। তা ভাগ্নে নাকি ভাগ্নি? ”

তিয়ানা বেশ শব্দ করে হেসে উচ্ছ্বসিত কন্ঠে বললো, ” ভাগ্নে ভাগ্নি দুটোই। ”

” মানে?” তখনই খেয়াল হলো কামরান টুইনস বেবীর কথা বলছিল।

” মানে, একটা ছেলে একটা মেয়ে।” ওপাশে তিয়ানা বললো।

” সত্যি! বাহ আপুরতো জ্যাকপট লেগেছে। একবারের কষ্টেই একদম সুখি পরিবারের কনসেপ্ট। দ্যাটস্ অওসাম।”

” হুম। আপুর জন্য এটাই দরকার ছিল। বারবার সামলাতে কে যাবে? একবারেই ঝামেলা মিটে গেল। ”

তিয়ানার কথার মানে বুঝতে না পেরে বললাম, ” দরকার ছিল মানে? ”

তিয়ানা চট করে জবাব দিল, ” হ্যা, বারবার কষ্ট করতে হবেনা। আচ্ছা এখন রাখি ভাবি পরে কথা হবে।”

আমি আর কথা বাড়ালাম না। ওরা এই মুহুর্তে ব্যাস্ত। তাই বিদায় জানিয়ে বললাম, ” ঠিক আছে টেক কেয়ার। আল্লাহ হাফিজ। ”

কল কেটে দেখি কামরান ঘরে নেই। কফি মগও নেই। বোধহয় বেলকনিতে। আমিও সেদিকে এগোলাম। হ্যা চেয়ারে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। আমি দরজায় দাড়িয়ে বললাম,

” আবার এখানে এসে বসলেন যে।” আমার কথা শুনে আমার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল সে। আমি আবারও বললাম, ” সারাদিন অনেক ধকল গেছে আপনার উপর দিয়ে। রাত অনেক হয়েছে। শুয়ে পরেন।”

কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে উঠে দাঁড়াল কামরান। বললো, ” হ্যা চল শুয়ে পরি। সত্যি শরীর ভেঙে আসছে। বিছানায় শুতে দেরি ঘুম আসতে একমুহূর্তও দেরি হবেনা আজ। কফির জন্য ধন্যবাদ। মাথাটা এত ধরেছে। এটার দরকার ছিল। ”

বলেই মগটা আমার হাতে দিয়ে ভিতরে পা বাড়াল সে। আমিও চলে এলাম ভিতরে। ওয়াশরুম থেকে বেড়িয়ে দেখি কামরান শুয়ে পরেছে। কেমন এপাশ ওপাশ করছে। আস্তে করে বিছানার অপর পাশে গিয়ে শুয়ে পরলাম। বোধহয় মাথা ব্যাথা করছে। করবেনা? সারাদিন একমুহূর্তের জন্য বিশ্রাম নাই। এত পরিশ্রম করলে শরীর খারাপ করাটাই স্বাভাবিক। কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখে কি করব দ্বিধার কারণে কিছু বলারও সাহস পাচ্ছি না। কিন্তু ওর অস্থিরতা দেখে না থাকতে পেরে দ্বিধা ঝেড়ে শেষে উঠে বসলাম। ইতস্ততভাবে বললাম,

” মাথাটা ম্যাসাজ করে দেব? যদি একটু আরাম হয়। ”

কামরান কপাল থেকে হাতটা সরিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালো। বললো,

” হ্যা দাও। মাথাটা কেন যে এত ব্যাথা করছে? ”

আমি এগিয়ে গিয়ে আলতো হাত রাখলাম ওর কপালে। হালকা করে ম্যাসাজ করতে করতে বললাম, ” শরীরেরও তো একটা সহ্য ক্ষমতা আছে। যখন অতিরিক্ত প্রেশার পরবে শরীর ঠিক বিদ্রোহী হয়ে উঠে। তখন মাথা ব্যাথা পা ব্যথা শরীর ব্যাথা করে প্রতিবাদ করতে শুরু করে। বুজলেন? ”

” ঠিক বলেছ। তুমি খুব ভালো ম্যাসাজ করতো। ”

আমি উৎসাহিত হয়ে শুধালাম, ” আপনার ভালো লাগছে? ব্যাথা কমেছে একটু? না কমলে ঔষধ খেয়ে নেন।”

কামরান আমার হাতের উপর ওর একটা হাত রেখে চেপে ধরল। আমার হাতটা শিরশির করে উঠলো। সেই শিরশিরানি হাতের শিরা-উপশিরা বেয়ে শরীরের সবখানেও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পরছে। ও বলে উঠলো,

” কখনো কখনো এমন একটু আধটু শরীর খারাপ মন্দ নয়। তা নইলে বউয়ের মিষ্টি হাতের ছোঁয়ায় এমন মিষ্টতা মিশানো সেবাযত্ন পেতাম? এইযে এতটা কাছেও কি পেতাম? ”

কামরানের চোখে মুখে দুষ্টুমি হাসি ঝুলে আছে। আমি যে ওর এতোটা গা ঘেঁষে তাও আবার ওর উপর বেশ ঝুঁকে বসে আছি এতক্ষণ সেটা খেয়ালই করিনি। লজ্জায় আমার যায়যায় অবস্থা। সত্যি বলতে আমি নিজে থেকে কখনো ওর কাছাকাছি যাইনি। রাতের গভীরে যখন টের পাই আমি ওর বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে আছি, আমি যে টের পেয়েছি তাও কখনো বুঝতে দেইনি। টিনএজ মেয়েদের মতো এতো লজ্জা কেন লাগছে? নাকি কিছু কিছু লজ্জা ও অনুভূতির কোন বয়স হয়না। হৃদপিণ্ডের গতিও অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে। আমি অন্যদিকে চেয়ে নিরবে ওর মাথায় ম্যাসাজ করে যাচ্ছি। নিজেকে ধাতস্থ করে বললাম,

” এখন এতো কথা বলতে হবেনা। আমি মাথা টিপে দিচ্ছি আপনি ঘুমান।

কামরান আমার চোখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে চোখ দুটো বুজে ফেললো। আমি ওর চুলগুলো টেনে দিতে লাগলাম। সত্যি ভিষণ ক্লান্ত ও। তার প্রমাণ কয়েক মিনিটের মধ্যেই ওর গভীর শ্বাস প্রশ্বাস টের পেলাম। ঘুমিয়ে পরেছে। আরও কিছুক্ষণ পরে আস্তে করে সরে গিয়ে ওর পাশ ঘেঁষে শুয়ে পরলাম।

চলবে ইনশাআল্লাহ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে