তোমাতেই বিমোহিত পর্ব-০৫

0
1122

#তোমাতেই_বিমোহিত
#পর্বঃ৫ (অতীত এর কিছু অংশ)
#লেখিকা আরোহি জান্নাত( ছদ্মনাম)

আজ যে কত তৃপ্তি করে আরোহি খাবার খেল সেটা আরোহি ছাড়া কেউ জানে না। তবে কোথাও একটা কিন্তু থেকে যায়। ইহান অন্য নারীকে নিজের জীবনে জায়গা দিয়েছিল। অন্য নারী ইহানের সন্তানের মা হয়েছে যেটা কখনো আরোহি ভুলবে না। ইহান যে অন্য কারো সেটা আরোহি মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।তাই এই বিষয় টা নিয়ে এতো খুশি হওয়ার কিছু নেই।এটাই নিজেকে বোঝালো আরোহি। তখনই ইহান ঘরে প্রবেশ করলো।

ইহানের দিকে এক পলক তাকিয়ে শুয়ে পড়ল আরোহি। ইহান ও কোনো কথা না বলে সোফায় শুয়ে পড়ল।কেটে গেল বেশ কিছু সময়।ইহান ফোনটা অন করে দেখল রাত ৩ টা ৪৬।আরোহি এখন গভীর ঘুমে।তাই আস্তে করে উঠে গেল ইহান।আরোহির বিছানার পাশে হাটু গেড়ে বসল। গভীর দৃষ্টিতে দেখতে এই তো সেই মেয়ে যাকে ইহান নিজের থেকে ও ভালো বাসত কিন্তু একটা ছোট্ট জেদ আজ সব কিছু শেষ করে দিল।ইহান মনে মনে বলে উঠল,

আমি জানি আরোহি আমি তোমার কাছে অনেক বড় অপরাধী। কিন্তু কি করব বলো সেদিন রাগ টাকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।
তবে বিশ্বাস করো আমাকে তুমি যত বড় অপরাধী ভাবো আমি কিন্তু তত বড় অপরাধ করিনি। কিন্তু আফসোস তোমাকে সেটা বোঝাতে পারব না।”কথাগুলো ভেবেই একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল ইহান।আর বেশিক্ষণ বসে থাকলে আরোহি আগের দিনের মতো টের পেয়ে যাবে।আগের দিন একটু এর জন্য ধরা পড়েনি ইহান।তাই আজ আর রিস্ক নেবে না।

সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ল ইহান।আর মনে করতে তাকল সেই তিক্ত অতীতের কিছু কথা।

“খালামনি তোমার মেয়ে যদি আর এক মিনিট ও লেট করে আমি কিন্তু ওকে আমার সাথে নিয়ে যাবো না বলে দিলাম। কিছু দিন পর তোমার মেয়ে এইচ এস সি পরিক্ষা দেবে এখনো সে কলেজ এর টাইম মেইনটেইন করতে শিখল না।”

কথাটা বলেই পিছন ফিরে তাকাতে চোখ স্থীর হয়ে গেল ইহানের। আরোহি একটা সাদা থ্রী পিচ পরে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো সাজ নেয় কিন্তু এই মুহূর্তে পৃথীবির সব থেকে স্নিগ্ধ লাগছে আরোহিকে।

“কি ব্যাপার?এতক্ষণ তো খালামনি খালামনি করে চিৎকার করছিলেন এখন আমি রেডি হয়ে দাঁড়িয়ে আছি দেখতে পাচ্ছেন না?”

বেশ ভাব নিয়ে বলল আরোহি।আরোহির কথায় ধ্যান ভাঙল ইহানের। বলল,

“হ্যাঁ চল। অনেক দেরি হয়ে গেছে।আসছি খালামনি।”

গাড়িতে উঠে বসল ইহান আর আরোহি। বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে ইহান বলে উঠল,

“আরোহি তুমি আর সাদা রঙের পোশাক পরবে না।অন্য যে কোনো কালার পরবে কিন্তু সাদা রং নয়।বুজেছো?”

“কিন্তু কেন ইহান ভাইয়া?আর একটা জিনিস আমি দেখেছি আপনি সবার সামনে আমাকে তুই করে বলেন কিন্তু যখন আমি একা থাকি তখন তুমি করে বলেন। কেন বলুন তো?”

বলল আরোহি।

“সেটা তোমার গভেট মাথায় ঢুকবে না।আগে বড় হও তারপর বুঝবে।” বলল ইহান।

“আমি তো অনেক কিছুই বুঝি।কিন্তু প্রকাশ করতে পারিনা।আচ্ছা আমি যেটা বুঝি আপনি কি সেটায় বোঝাতে চান আমায়।”

“হয়তো”।মুচকি হেসে বলল ইহান।

আরোহি আর কথা বাড়ালো না।এভাবেই সরাসরি না বললে ও নিজেদের অনুভূতির সাথে পরিচয় ছিল আরোহি ইহানের। আরোহি ইহান যে একে অপরকে পছন্দ করে সেটা নিজেরা বুঝতো কিন্তু কখনো প্রকাশ করে নি।

এভাবেই কাটছিল দিন।অন্য প্রমিক প্রমিকাদের মতো প্রতিদিন দেখা করা।ফোনে গল্প করা এগুলো ঘটতো না আরোহি ইহানের মধ্যে। কিন্তু মনের অনুভূতি গুলো ছিল খুব গাড়ো।আর পাঁচটা কাজিন যেমনভাবে মিশত আরোহি ইহান ও সেই ভাবে মিশত।তবে এসব কিছুর মধ্যে একটু ভিন্নতা ছিল যেমন ইহান ছোট থেকে খুব রাগী। সাথে জেদি ও কিন্তু কখনো আরোহির সাথে রাগ দেখাতো না ইহান।আর আরোহি সকলের কাছে খুব চুপচাপ শান্ত ধরনের হলে ও ইহানের কাছে আলাদা।অনেক বেশি অধিকার ইহানের উপরে।অনেক বেশি বায়না ইহানের কাছে।

সব কিছু সঠিকভাবে চলছিল। আরোহির এইচ এস সি পরীক্ষার পরে সকলকে আরোহিকে পছন্দ করার বিষয় টা জানাবে বলে ভেবে রেখেছিল ইহান।কিন্তু তার আগেই সব কিছু ওলট-পালট হয়ে গেল।

আরোহির পরীক্ষার মাস খানেক আগে একদিন টিউশন থেকে ফিরে নিজের ঘরে রেষ্ট নিচ্ছিলো আরোহি তখনই আরোহির মা জানায় তাদের বাড়িতে নাকি গেস্ট আসবে।

বিষয়টা অতটা ও গুরুত্ব দেয় না আরোহি কিন্তু বিপত্তি বাধে বিকালে তারা আসার পর।তারা নাকি আরোহিকে দেখতে এসেছেন।আর ছেলে আরোহির বাবার বন্ধুর ছেলে। তারা যখন আরোহিকে দেখতে চায় আরোহি রাজি হয় না।বলে দেয় তাদের সামনে যাবে না। আরোহি সমস্ত লজ্জা ভেঙে এটা ও বলে তার মাকে যে আরোহি একজনকে পছন্দ করে।তাকে বিয়ে করতে চায় কিন্তু আরোহির মা সেটাতে গুরুত্ব দেয় না কারন তিনি ভাবেন এটা তাদের সামনে না যওয়ার একটা প্লান। তাই তিনি আরোহিকে বলেন যেনো বাবার সম্মান রক্ষার জন্য আরোহি তাদের সামনে যায় আর আরোহির পছন্দের ব্যাপারটা তিনি পরে দেখবেন।

সেদিন মায়ের কথাতে ভরসা করাই আরোহির জীবনে সব থেকে বড় কাল হয়ে দাড়ায়।আরোহির মা আরোহিকে হালকা সাজিয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে যায়। ড্রয়িং রুমে গিয়ে আরোহির মাথা ঘুরে ওঠার উপক্রম। কারন সেখানে ইহান আর তার মা ও উপস্থিত। একটু আগে আতশি বেগম ইহান আর তা মাকে জানায় আজ আরোহিকে দেখতে আসবে। তাই তারা যেন এই সময়ে উপস্থিত থাকেন।প্রথমে ইহান বিষয়টা বিশ্বাস করতে পারে নি। তাই নিজের চোখে দেখার জন্য খালামনির এক কথায় চলে এসেছে সে।

আর আরোহিকে তাদের সামনে আসতে দেখে বিশ্বাস হয় ইহানের।ইহানকে দেখে চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে আরোহির।তবে নিজেকে সামলে নেয়।কারণ সে তা মাকে জানিয়েছে তার মা নিশ্চয়ই কিছু না কিছু করবে।তবে আরোহির ধারণা ভেঙে যায় যখন ওনারা ওই দিনই এনগেজমেন্ট করে রাখতে চায় আর আরোহির বাবা মা ও তাতে রাজি হয়।আরোহির কাছে সব টা অবাস্তব মনে হয়।কিন্তু কিছু করার থাকে না।ইহানের সামনেই আরোহির এনগেজমেন্ট হয়।

আর আরোহি পাথরের মতো সেই এনগেজমেন্ট করে নেয়।আরোহও আর ইহানের মনে জমানো ভালোবাসাগুলো যেন তিলে তিলে মারা যাচ্ছিল ওই সময়।দুজন মানব মানবি চাচ্ছিল কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। ইহান চাচ্ছিল আরোহি একবার বলুক সে এই বিয়ে করতে চায় না।আর আরোহি চাচ্ছিল ইহান একবার বলুক যাতে এই বিয়ে আর আজ আরোহির এনগেজমেন্ট না হয়।কিন্তু কারো আকাঙ্খাই পুরো হয় না।বরং ভেঙে যায় দুটি সিক্ত হ্রদয়। নিজেরা অনুভব করলে ও জানাতে পারে না নিজেদের কমল হ্রদয় এর অনুভূতি।
সেদিন ই ঠিক হয় আরোহির এইচএসসি পরীক্ষার পরে আরোহি আর সেই ছেলের বিয়ে হবে। ছেলেটির নাম নাকি রিজু।সেদিন আরোহিকে আংটি পরিয়েই ছেলেটি কাজের বাহানা দিয়ে বেরিয়ে যায়।আর সে চলে যাওয়ার পর দুই পরিবার মিলে এই সিদ্ধান্ত নেয়।

সেদিনের পর থেকে কেটে যায় এক সপ্তাহ। আরোহি ইহান কেউ কারো সাথে যোগাযোগ করে না।এমন কি দেখা ও হয় নি দুজন এর।আতশি বেগম আরোহিকে জানায় আরশি বেগম নাকি তাকে ডেকেছেন সাথে আরোহি কে ও কোনো বিশেষ কাজে তবে আরোহির যেতে ইচ্ছা করে না।শরীর খারাপের অজুহাতে বাড়িতে থেকে যায় আরোহি।তবে রাতে যে এত ভয়াবহ একটা খবর পাবে সেটা আরোহিয় কল্পনার বাইরে ছিল।আরোহি কিছুতেই কথাটি বিশ্বাস করতে পারছিল না তাই ছুটে গিয়েছিল ইহানদের বাড়ি আর গিয়ে দেখল,

চলবে,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে