তোমাকে আমার প্রয়োজন পর্ব-১০

0
2499

#তোমাকে আমার প্রয়োজন??
#মেঘ পরী??

??পর্ব-১০??
.
?
.
.

আজ তিন দিন হল তিথি তার বাসায় এসেছে।তিথি ফিরে আসায় বাসাটা যেন পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।সারাদিন মামা আর ভাইয়ার সাথে দুষ্টুমি করে আর মিতুর সাথে ফোনে কথা বলে তার দিন অতিক্রান্ত করছে।

আর নিলয়ের কাছে এই তিনটে দিন যেন তিনটে বছরের সমান মনে হয়েছে। সারাদিন তিথির ছবিটার দিকে তাকিয়ে নিজের সময় অতিক্রান্ত করছে।তিনটা দিন সে তিথির মুখ দেখেনি সামনে থেকে,,,তিথির গলা শোনেনি। তিথির বাচ্চা বাচ্চা কতগুলোকে খুব মিস করছে নিলয়।তবে বেশিক্ষণ তাকে এসবকিছু সহ্য করতে হবে না,,, নিলয় ঠিক করে ফেলেছে তাকে কি করতে হবে। নিলয় মনে মনে ভাবছে-;

-: অনেক জ্বালিয়েছ তুমি আমাকে তিথু পাখী,,, নাও ইটস মাই টার্ন।সো বি রেডি ফর দিস পাখী।

তারপর নিলয় ফোনটা বের করে কাকে যেন ফোন করলো,, কিছুক্ষণ পর ফোন রিসিভ করার পর নিলয় তাকে বলল-;

-: কাজটা হয়েছে???

ওপর পাশে ব্যক্তিটি কি বলল তা শোনা গেল না,,,তারপরেই নিলয় ফোনটা রেখে দিল। নিলয় ফোনটা রাখার পর বাঁকা হেসে বলল-;

-:এবার কোথায় পালাবে পরী।তোমাকে যে আমার কাছে ধরা দিতেই হবে।কারন #তোমাকে আমার প্রয়োজন।।
.
.
?
.
.
এদিকে তিথির মামি তিথির আনা সোয়েটারটা পড়ে বিভিন্ন স্টাইলে পোজ দিচ্ছে,,, আর তিথি নাচতে নাচতে তার ছবি তুলেছে। তিথির মামা চেয়ারে বসে,,, তার তেল চিটচিটে টাকলা মাথায় আইসব্যাগ দিয়ে রেখেছে এক হাতে,, আর আরেক হাতে ছোট হাতপাখা দিয়ে নিজেকে হাওয়া করতে করতে তিথি এবং তিথির মামির কাণ্ডকারখানাগুলো দেখছে।তিথি বাড়িতে যতক্ষণ থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত তার মামার টাকে আইসব্যাগ টাও থাকে,,, শুধুমাত্র রাতের শোবার টাইম টা বাদ দিয়ে।কারণ বাড়িতে থাকাকালীন তিথি যে সমস্ত কান্ড করে তা সাধারন মানুষের পক্ষে সহ্য করা সম্ভব নয়।অথচ তিনি কিছু বলতেই পারেন না তার গুণধরী একমাত্র বউ টার জন্য,,,কিছু বলতে গেলেই খুন্তি নিয়ে তেড়ে আসে,,,আর নয় তো তাকে সব সময় ঝাঁঝালো গলায়, বিদ্রুপ করে বলে-;

-: বলেছিলে তো বাসর রাতে আমাকে নিয়ে প্যারিস ঘুরতে যাবে,,হানিমুনে।তা আজ,,,,তো দেখতে দেখতে ২৭ টা বছর কেটে গেল,,,প্যারিসে যাওয়ার টিকট ও তো চোখের দেখা দেখলাম না। এখন তো ছেলে মেয়েদের সময় হয়ে এসেছে,, হানিমুনে যাওয়ার,,তা কবে হানিমুনে নিয়ে যাবে আমাকে,,শুনি।

ব্যাস এই একটা কথাই তিথি মামার মুখে টেপ দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।মাঝে মাঝে তার মনে হয় সংসার জীবন ত্যাগ করে অনেক দূরে কোথাও চলে যেতে।কোন কুক্ষণে যে বাসর রাতে তার বউ কে কথা দিয়েছিল যে সে তাকে হানিমুনে প্যারিস ঘুরতে যাবে,,,তা কেবল উপরওয়ালাই জানে,,যত্তসব।তিথির মামা অনেক্ষন ধরেই মামি-ভাগ্নির লোকাল ড্রামা দেখছিল চুপ করে।। কিন্তু এবার আর চুপ করে থাকতে পারল না বলেই ফেলল-;

-:আচ্ছা তোমাদের কি মিনিমাম কমনসেন্স বলতে কিছুই নেই,,,এই গরমে কেউ এরকম সোয়েটার পড়ে সং সেজে ফটো তোলে নাকি,, যতসব জোকার এসে আমার বাড়িতেই জুটেছে।

মামার এমন কোথায় মামি তেলেবেগুনে জ্বলে উঠল,, আর বলল-;

-:কি বললা তুমি আমি সং,,,আয়নার সামনে গিয়ে নিজেকে একবার ভালো করে দেখে এসো। কে সং আর কে জোকার তা তুমি নিজেই বুঝতে পারবে।

তিথি তার মামিকে আর একটু ক্ষেপানোর জন্য বলে উঠলো-;

-: আরে মামি,,,বুঝছো না কেন মামা তোমার গ্ল্যামার দেখে হিংসায় জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে।

-: তা আর বলতে।কেউ তো আর ওই চকচকে মাথার জন্য ফিরেও তাকায় ওর দিকে। তাই আমার রূপ দেখে হিংসে হচ্ছে।(মামার দিকে তাকিয়ে দাঁত কড়মড় করে বলতে লাগল)

-: কারেক্ট,,,একদম ঠিক বলেছ মামি।।

-: কি তুমি আমাকে এত বড়ো কথা বলতে পারলে,,, তুমি না আমার বউ। শেষ পর্যন্ত আমার মাথাটাকেও রেহাই দিলানা তোমরা মামি-ভাগ্নি(মন খারাপ করে,, টাকে হাত বুলাতে বুলাতে)

তিথির মামী একবার মামার দিকে তাকিয়ে ভেংচি কেটে আবার নিজের পোজ দেওয়ায় মনোযোগী হলেন।হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো,,,মামা গিয়ে দরজাটা খুলে সামনে তাকিয়ে দেখলেন একজন কুরিয়ার বয় দাঁড়িয়ে আছে।

-: কাকে চায়?

-:জি এখানে তিথি আহমেদ আছে। আসলে উনার জন্য একটা পার্সেল আছে।

-: আমি তিথির মামা আমার কাছে দিন,,,আমি ওকে পার্সেলটা দিয়ে দেবো।

-:আচ্ছা ঠিক আছে।

তিথি মামা পার্সেলটা নিয়ে ঘরে ঢুকে তিথির হাতে পার্সেল টা দিলেন।।তিথি পার্সেলটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভাবছে এইসময় তার জন্য পার্সেল কে পাঠাতে পারে।আর কিছু না ভেবে পার্সেলটা নিয়ে উপরে চলে গেল।পার্সেলটা খুলতেই তিথি অবাক হয়ে গেল কারণ পার্সেল এর ভিতরে একটা দামি স্মার্টফোন রাখা।তিথি স্মার্টফোন টা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করে দেখলো।।তিথি কিছুতেই বুঝতে পারছেনা যে এত দামি স্মার্টফোন তাকে কে দিতে পারে। হঠাৎ তিথির নজর গেল পার্সেলটির মধ্যে থাকা একটা সাদা খামের উপর।।সাদা খামটা তুলতেই দেখল যে সেটা একটা চিঠি,,,তিথি চিঠিটা খুলে পরতে শুরু করলো-;

প্রিয়,
আমার পিচ্চি পরী,❤️❤️

কেমন আছে আমার পিচ্চি পাখিটা।আমাকে কী তার মনে পড়ে,,,আমার তো মনে হয় একদমই ভুলে গেছে সে আমাকে।। কিন্তু সে কি জানে তার বিরহে আমি জল ছাড়া মাছের মত প্রতিটা মুহূর্তে ছটফট করছি।।সে তো চলে গেছেই আর তার সাথে চুরি করে নিয়ে গেছে আমার জীবনের রং আর ছন্দ।সে কি জানে এই তিনটা দিন আমার কাছে তিনটি বছরের মত মনে হয়েছে।প্রতিটা মুহূর্তে তার মায়াময় মুখ,,,মুখের কোণে সবসময়ের ঝুলে থাকা তার সেই মনকাড়া হাসি,,আর তার মিষ্টি দুষ্টুমি গুলোকে যে আমি খুব মিস করছি।।পাগলীটা কি জানে তার অস্তিত্ব আমার প্রতিটি রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে গিয়েছে।।না সে এসব কিছুই জানে না,,,সে তো একটা বাচ্চা মেয়ে।এই পিচ্চি শুনে রেখে তুমি অবুঝ হতে পারো কিন্তু আমি অতো অবুঝ নয় বুঝেছ তুমি। আমি আর পারছিনা তোমার বিরহ মেনে নিতে। তাই এই ফোনটা পাঠাচ্ছি,,যাতে তোমার মিষ্টি গলার সুর শুনে কিছুটা হলেও আমার হৃদয় কে ভোলাতে পারি।।আর খবরদার ফোনটা ভুলেও কাউকে দেবে না,,,আর ফোনটায় নতুন সিম লাগানো আছে,,,রাতে আমি ফোন করবো ফোনটা সাথে সাথে যেন রিসিভ করা হয় বুঝেছ।।নইলে তোমার খবর আছে।
ইতি-;
তোমার বিরহে পাগল প্রেমিক।♥️♥️

তিথি চিঠিটা পড়ে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইল।।কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে যে তাকে কে এই চিঠি এবং ফোন পাঠাতে পারে।চিঠি টা পরে নিজের অজান্তেই তিথি হেসে ফেলল।অবশ্যই ফোনটা পেয়ে সে খুশিই হয়েছে,,, তার অনেক দিনের ইচ্ছা ছিল এরকম একটা ফোন কেনার।।কিন্তু মামা তাকে বলেছিল এইচএস এক্সাম দেওয়ার পরেই,,,তাকে ফোন কিনে দেবে।কিন্তু এখন ফোন টাকে লুকিয়ে রাখতে হবে,,,নয়তো কেউ দেখে ফেললেই তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়ে যাবে।।

তিথি ফোনটা খুলতেই দেখল ফোনে আগে থেকেই সিম দেওয়া আছে এবং ওয়ালপেপারে নিলয় এবং তিথির একটা ছবি সেট করা আছে।।তিথি ছবিটার দিকে কিছুক্ষণ অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল,,,নিজেও জানেনা যে কখন ছবিটা তোলা হয়েছিল।।সেদিন রেস্টুরেন্টে নিলয় এবং তিথি যখন বসে ছিল তখনকার ছবি এটা।এইবারে তিথি পুরোপুরি নিশ্চিত হলো যে এটা নিলয়ের ই কাজ।।হঠাৎ ফোনে একটা মেসেজ এলো,,তিথি মেসেজটা ওপেন করতেই দেখলো,,, সেখানে লেখা আছে-;

“”রাত দশটায় ফোন করবো।।ফোনটা যেন প্রথমবারেই রিসিভ করা হয়,,,নাইলে খবর আছে।””

তিথি মেসেজটা দেখে মনে মনে বলল-;

-:ঘরে এসেও শান্তি পাবো না।

বলে ফোনটা বালিশের তলায় রেখে দিয়ে,,, চিঠি এবং বক্সটা আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখল।।

.
.
?
.
.
তিথি রাতে ডিনার করে,,,যখন ঘরে ঢুকল তখন দেখল অলরেডি দশটা দশ বেজে গিয়েছে।।সঙ্গে সঙ্গে বালিশের নিচ থেকে ফোনটা তুলে চেক করতেই দেখল নিলয়ের টেন প্লাস মিসড কল।।যেই কল ব্যাক করতে যাবে তখনই ফোনটা বেজে উঠলো,,,তিথি সঙ্গে সঙ্গে ফোনটা রিসিভ করল। ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে নিলয় চেঁচিয়ে বলে উঠলো-;

-:কোন কাজে ব্যস্ত ছিল শুনি,,যে আমার ফোনটা ধরার সময় পেলে না।।কি হল কথা বলছো না কেন স্পিক আপ ড্যামেট।।

নিলয়ের ওমন চিৎকারে তিথি কিছুটা কেঁপে উঠলো তারপর নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল-;

-:আ…আসলে ডি…ডিনার করতে এক..একটু লেট হয়ে গিয়েছিল।তাই ফোনটা রিসিভ করতে পারিনি।।

তিথির জবাব শুনে নিলয় কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে তারপরে বলে উঠলো -;

-: কতদিন তোমার গলার আওয়াজ শুনিনি,,,কেমন আছো তিথু পাখি।।

-:জ্বি…জ্বী ভালো,,,আপনি কেমন আছেন।।

-:যেমনটা তুমি রেখে গিয়েছো ঠিক তেমনটাই আছি।।

-:মা..মানে।।

-: মানে আর এখনো যদি না বুঝতে পারো তবে আর কবে বুঝবে।।

বলে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল,,তারপর আবার বলল-;

-:তবে আর চিন্তা করতে হবে না এবার থেকে আমি তোমাকে সব কিছুই শিখিয়ে দেবো।(বাঁকা হেসে)

-:কি..কি শিখিয়ে দিবেন।।(কনফিউজড হয়ে)

-:এই যে প্রেম,,ভালোবাসা কিভাবে করতে হয়।।

-:কি..কি সব যাতা বলছেন আপনি।।(ঢোক গিলে বলল তিথি)

-: এখন এসব কথা ছাড়ো।।আগে বলতো কাল তুমি স্কুল যাবে।।

-:কেন??

নীলয় রাগী সুরে বলে উঠল-;

-: যেটা বলেছি তার উত্তর দাও যাবে হ্যাঁ অথবা না।।

-:যাবো।।

-:গুড,,,স্কুল ছুটি হওয়ার পর গেটের সামনে দাঁড়াবে,,, আমি তোমাকে নিতে আসবো।আর কোথাও যাওয়ার চেষ্টাও করবে না নইলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না,,, বুঝেছ ওয়াট আই সে।।

নিলয়ের কথা শুনে তিথি অবাক হয়ে নিলয়কে জিজ্ঞাসা করল-;

-:মানে কি যা তা বলছেন,,,আপনি আমাকে নিতে আসবেন মানে।।

-:চুপচাপ যা বলছি তাই করো বেশি কথা আমার একদম পছন্দ না।।অনেক রাত হয়েছে ঘুমিয়ে পড়ো,,ঠিক আছে আর কালকে সময় মতন পৌছে যাব যদি তোমাকে না পেয়েছি তো তোমার বাসায় চলে আসবো,,,সো বি কেয়ারফুল।ওকে বাই,,,গুড নাইট।।

বলেই ফোনটা রেখে দিল।।এদিকে তিথির মাথা পুরো হ্যাং হয়ে যাচ্ছে।দাঁত দিয়ে নখ কাটছে আর পুরো ঘর এমাথা থেকে ও মাথা হাঁটছে আর বিড় বিড় করে বলছে-;

-: এই উগণ্ডাটা আমাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না।পৃথিবীতে কি মেয়ের অভাব ছিল যে দেখে দেখে আমাকেই ভালোবাসতো হল।আচ্ছা সে কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে।উফ্ আমি আর টেনশন নিতে পারছিনা,,,একটা বাচ্চা মানুষকে পেয়ে এত জালিম আল্লাহ কিছুতেই সহ্য করবে না।।দেখে নিস তোর কি হাল হয় তোর বউ বাসর রাতেই তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে।।উফ্ তিথি কি হবে তোর,,,,তুইতো এবার পাগলই হয়ে যাবি।।না না তিথি এসব কথা বাদ দিয়ে,,,এখন ঘুমিয়ে পড়,,,কাল যদি স্কুলে যেতে না পারিস,,,, তাহলে ওই কালা কুমির তোর বাসায় সিওর চলে আসবে।ওই গন্ডারটা পারেনা এমন কোন কাজ নেই।। তুই বরং ঘুমিয়ে পড়।।

এই বলে তিথি খাটে গিয়ে শুয়ে পরলো,,, আর কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমের রাজ্যে পাড়ি দিল।।
.
.
?
.
.
সকাল দশটায় ব্রেকফাস্ট করে মিতুর সাথে তিথি স্কুলে চলে গেলো।।প্রতিদিন তিথির ভাইয়া তাকে স্কুল থেকে নিতে আসে কিন্তু আজ তিথি তার ভাইয়াকে আসতে বারণ করে দিয়েছে শুধুমাত্র নিলয় এর জন্য।।কারণ নিলয় তাকে নিতে আসবে বলেছে।।

এদিকে তিথি বারণ করেছে বলে তিথির ভাইয়া তাকে নিতে আসবে না এইটা শুনে,,,মিতু মন খারাপ করে তিথির সাথে কথা বলছে না।।মিতু যে মনে মনে তিথির ভাইয়াকে পছন্দ করে,, তা একমাত্র তিথীই জানে। কারণ তিথি আর মিতু ছোটবেলা থেকেই একে অপরের বেস্ট ফ্রেন্ড,,, কেউ কারোর কাছ থেকে কোন কথা লুকিয়ে রাখে না। সপ্তাহে অন্তত একবার হলেও মিতু তিথির বাড়ি যায় তিথির সাথে কথা বলার অজুহাতে,,, শুধুমাত্র তিথির ভাইয়া আশফিকে একপলক দেখার জন্য।।এই নিয়ে তিথি যে কতবার মিতুকে জ্বালিয়েছে তার কোন হিসাব নেই।।তিথি বুঝতে পারে মিতু মনে মনে তার ভাইয়াকে ভালবাসে।। কিন্তু আশফি তো এইসব ভালোবাসা টালোবাসা বিশ্বাসই করে না,,,তাই কোনদিনও সে এইসবের দিকে ফিরেও তাকায়নি।।

কিন্তু মিতুও হেরে যাওয়ার মেয়ে নয়। সে মনে মনে ঠিক করেই নিয়েছে যদি বিয়ে করেতেই হয় তাহলে একমাত্র আশফি কেই করবে নয়তো কাউকে নয়।অনেকবার সে তার মনের কথাগুলো আশফি কে বলার চেষ্টা করেছিল,,, কিন্তু আশফির কাছে গেলেই তার সব গুলিয়ে যায়,,, তাই আজ পর্যন্ত তার মনের কথাগুলো সে তাকে বলতে পারেনি।তিথি সাত থেকে আট দিন বাড়িতে ছিল না বলে সবথেকে বেশি কষ্ট মিতুই পেয়েছিল কারণ সে আশফিকে সাত থেকে আট দিন দেখেনি।।।তাই সে ভেবেছিল আজ তাকে দেখবে কিন্তু তার আশায় এক বালতি জল ঢেলে দিল তিথি,,,আর তাই সে তিথির সাথে কথা বলছে না।।

পুরো ক্লাসে তার সাথে কথা বলিনি,,তিথি অনেকবার চেষ্টা করেছে কিন্তু তাও বলেনি।।শেষে তিথি নিলয়ের এ ব্যাপারে সবকিছু খুলে বলতে মিতু তিথির সাথে কথা বলেছে।কাল স্কুল ছুটি থাকবে তাই তিথি মিতুকে দুপুরে তাদের বাসায় আসতে বলল কারন কাল আশফিও বাড়িতে থাকবে,,,এতে মিতু খুশিতে তিথিকে জড়িয়ে ধরল।।

বিকেল সাড়ে চারটের সময় স্কুল ছুটি হল।স্কুল ছুটির পর মিতু তিথির জন্য দাঁড়াতে চেয়েছিল কিন্তু তিথি তাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।।এরপর নিলয়ের কথামতো তিথি গেটের সামনে দাঁড়িয়ে রইল।কিছুক্ষণ পর একটা কালো গাড়ী তার সামনে এসে দাড়ালো,,দরজা খুলে বেরিয়ে এল নিলয়।তিথি নিলয়ের দিকে একবার তাকালো ব্রাউন কালারের ফুল হাতা শার্ট,, শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত গোটানো।। হোয়াইট কালারের জিন্সের প্যান্ট,,চোখে একটা সানগ্লাস।সিল্কি চুল গুলো কপাল ছুঁয়ে যাচ্ছে বারবার।এককথায় নিলয়কে অসাধারণ লাগছে,,,তিথি নিজের অজান্তেই বারবার নিলয়ের দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছে।।

আর এদিকে নিলয় একদৃষ্টিতে তার মায়াপরীর দিকে তাকিয়ে আছে সাদা কামিজের উপর সবুজ ওড়না ভাঁজ করে দুদিকে সেফটিপিন দিয়ে লাগানো,,,দুই দিকে বিনুনি করে চুল বাধা,,,আর কাধে একটা ব্যাগ।।পুরো পিচ্চি পরী লাগছে। চোখ ফেরানো যাচ্ছে না।।

নীলয়ের ওমন তাকানো দেখে তিথি নিলয় কে বলল-:

-:কি বলার তাতাড়ি বলুন আমাকে এক্ষুনি যেতে হবে।।

তিথির কথায় নিলয়ের ধ্যান ভাঙলো,,, তারপর তিথিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে,,, তিথির হাত ধরে গাড়িতে বসিয়ে দিল।।তারপর নিজে তিথির পাশে ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।
.
.
.
.
.
[বাকিটা নেক্সট পর্বে]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে