#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০৫❤
#Writer_Safan_Aara❤
দুজনের আপনি বলে চেচিয়ে ওঠায় অবাক হলো নীড়! শুধু নীড় নয় পাশাপাশি মিসেস রোকেয়াও।তবে সেদিকে খেয়াল নেই অনন অথবা অদিতি কারোরই।
-“আপনি! আপনি আমার পিছুপিছু আমার বাড়ি পর্যন্ত চলে এসেছেন? এতোগুলো পানি দিয়ে ভিজিয়েও মনে শান্তু হয় নি আপনার? আবার কি করতে এসেছেন, হ্যা? বলেন। বলছেন না কেন?”
ভ্রু কুচকে রাগান্বিত কন্ঠে বললো অদিতি। কিন্তু অনন এটাই ভেবে যাচ্ছে এ বাড়ি ওদের হলো কি করে! বাড়িওয়ালা কি এই বাড়িটা ওদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে! কিন্তু এমন কোনো খবর তো তার কানে এসে পৌছায় নি এখনো! তাহলে মেয়েটা এভাবে নিজের বাড়ি নিজের বাড়ি করছে কেন!
-“কি হলো?কিছু বলছেন না কেন?”
অদিতির ডাকে চমকে উঠলো অনন। ভাবনার রাজ্য থেকে যেন ধপ করে নিচে পরেছে সে। কিন্তু অদিতি কথার কোনো উত্তর দিলো না অনন। দিলো না বৈকি দেয়ার সুযোগ পেলো না সে। অদিতির কথা বলা শেষ করার পর অননের পেছন থেকে বেড়িয়ে এলো নীড়। অননের সুঠাম দেহের আড়ালে নীড়কে দেখতেই পাচ্ছিলো না অদিতি। আর অননের তুলনায় অদিতি হাইটে ছোট হওয়ায় নীড়ের দেখা পাওয়া তার জন্য অসম্ভব প্রায়।
-“অদিপুউউউউ………।”
বলে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো অদিতিকে। এতোক্ষণ পর বিষ্ময় কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে নীড়। তার একহাতে ছিলো টমি। অন্য হাতে সে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে অদিতিকে।
-“আরে নীড়! তুমি! এখন! এখানে! কি হয়েছে?”
হকচকিয়ে বললো অদিতি।
-“ওকে বাইরে দাড় করিয়েই সব জিজ্ঞাসা করে নিবি? ভেতরে নিয়ে আয়!”
এতোক্ষণ বিষ্ময়ে ছিলেন মিসেস রোকেয়াও। এখন সে-ও স্বাভাবিক হয়েছেন আর নীড় কে ভেতরে নিয়ে আসার কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
-“উপপপস্!আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। আসো আসো, ভেতরে আসো।”
অনন ভাবছে এই অদিতির কথাই তো বোধহয় মা বলেছিলো। তাহলে এই অদিতিই সে-ই অদিতি! কি মেয়ে মাইরি! অদিতি নীড় কে নিয়ে ভেতরে ঢুকে গেলো। অননের সেদিকে খেয়ালই নেই। নীড় কে ভিতরে নিয়ে ঠাস করে দড়জা লাগয়ে দিলো অদিতি। এতোক্ষণ ঘোড়ে থাকলেও দড়জার আওয়াজে সে বুঝতে পারে এটা ছিলো তার “মুখের উপর অপমান”।
-” এভাবে কেউ কারো মুখের উপর দড়জা লাগিয়ে দেয় নাকি! আজব! অসভ্য মেয়ে একটা! হুহ!”
বলে সিড়ি দিয়ে নেমে যায় সে। লিফট থাকতেও সিড়িকে অপছন্দ করা ছেলে কিনা আজ লিফট রেখে সিড়ি ব্যাবহার করছে। তাও একটা মেয়ের কথা ভাবতে ভাবতে! বড়ই অদ্ভুত ব্যাপারটা।
.
বাড়িতে ঢুকেই চেচিয়ে উঠলো অনন।
-“খাবার দাও মা। খুব খিদে পেয়েছে।”
-“আসছি বাবা!”
♣
-“কি হয়েছে নীড়? তুমি এভাবে এ সময়ে ছুটে এলে কেন? আর তোমার সাথে যে এসেছিলো সে কে?”
এক নিঃশ্বাসে বললো অদিতি। নীড়কে নিজের রুমে এনে বসিয়েছে সে।
-“ও আমার ভাইউ!”
-“ভাইউ!”
-“হুম।”
-“কিন্তু এতো রুড বিহেভড একটা ছেলে এতো কিউট,সুইট মেয়ের ভাই কি করে হতে পারে বুঝলাম না।”
-“আমিও মাঝে মাঝে এমনই প্রশ্ন করি নিজেকে যে এই ছেলেটা আমার ভাই কি করে হতে পারে!”
নীড়ের কথায় হেসে ফেললো অদিতি।
-“তাই!”
-“হুম। জানো, ভাইউ না টমিকে একদম পছন্দ করে না। টমিকে বাড়িতে রাখতে নিষেধ করেছে আমাকে।”
-“অঅঅঅঅ……..! কি বলো নীড়!”
-“হুম! সত্যি বলছি! আচ্ছা মিষ্টিপু তুমি ওকে রাখবে নিজের কাছে?”
-“হ্যা, অবশ্যই।”
-“থ্যাংক ইউ…….!”
-“ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম! ও আমার কাছেই থাকবে। তুমি রোজ ওকে দেখতে এসো। ওর সাথে খেলবে। তাহলে আমার সাথেও খেলতে পারবে।”
-“হুম!”
-“আচ্ছা চলো খেয়ে নিই। আমার সাথে খাবে চলো।”
-“না আপু। আমি খেয়ে এসেছি। আম্মু খাইয়ে দিয়েছে।খাওয়া শেষ করে যখন পানি খাচ্ছিলাম তখনই তো ভাইউ এসে চেচাতে লাগলো।”
-“ওহ! আচ্ছা।”
-“হুম। তুমি বরং এক কাজ করো। আমাকে আমার ফ্ল্যাটে দিয়ে আসো।”
-“এখনই চলে যাবে?”
-“হুম। বিকেলে আসবো আবার।”
-“আচ্ছা চলো।”
ওকে নিয়ে চলে গেলো অদিতি। অননদের ফ্ল্যাটের দড়জায় এসে কলিং বেল চাপতেই দড়জা খুলে দিলেন মিসেস সালেহা বেগম। অদিতিকে দেখে তার চোখ দুটো ঝলমলিয়ে উঠলো। অদিতিকে বার বার জোড় করেছে সে ভেতরে যাওয়ার জন্য। কিন্তু অদিতি নানা অজুহাত দিয়ে চলে এসেছে। পালিয়ে এসেছে বললেও ভুল হবে না! পালিয়ে আসার কারণটা কিন্তু মিসেস সালেহা নন,কারণটা হচ্ছে অনন!
.
.
দুপুরের খাবার খেয়ে অদিতি কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়লো কোচিং-এর জন্য। সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরতেই মা জানালেন মিসেস সালেহা এসেছিলেন। আগামী শুক্রবার তাদের বাড়িতে দুপুরের খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ করে গেছেন। তেমন একটা এক্সাইটেড না হলেও বেশ বিরক্ত হয়েছে অদিতি খবরটা শুনে। অননের বাড়িতে যেতে হবে ভেবেই তার এই বিরক্তি। ছেলেটা জাস্ট সহ্যই হয় না ওর। কি না কি করে বসবে ওদের বাড়িতে গেলে।
.
.
পরের দিনগুলো খুব ভালোই কাটিয়েছে অদিতি। শুধু বিরক্তিকর ওই সময়গুলোই ছিলো যখন অননকে দেখতে পেতো সে। অননেরও একই অবস্থা। দুজন দুজন
কে যথাসম্ভব ইগনোর করে। যখনই দেখা হয় ঠোট বাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নেয় তারা।
দেখতে দেখতে চলে এসেছে শুক্রবার। সকাল থেকেই অদিতি ভেবে যাচ্ছে আজ কি না কি করবে অনন। মায়ের তাড়া দেওয়ায় সে তৈরি হয়ে বেড়িয়ে এলো রুম থেকে। টমিকে একা তো আর রেখে যাওয়া যাবে না তাই সাথেই নিয়ে নিয়েছে নিজের। সবাই চলে গেলো অননদের ফ্ল্যাটে।কলিং বেল চাপতেই দড়জা খুলে দিলেন অননের বাবা।যেন দড়জার পাশেই দাড়িয়ে ছিলেন এতোক্ষণ।
-“আরে আরে ভাই। আসেন। ভিতরে আসেন। কেমন আছেন?”
-“এইতো আলহামদুলিল্লাহ।আপনি?”
-“ভালো।আপা,আপনি কেমন আছেন?”
-“জ্বি ভালো ভাই।”
-“এইযে ছোট সাহেব। ভালো আছেন তো আপনি?”
রায়হানের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন তিনি।রায়হান মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে হ্যা সূচক উত্তর জানালো।
-“আসসালামু আলাইকুম, আংকেল।”
-“ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো মামুনি?”
-“জ্বি আলহামদুলিল্লাহ। আপনি?”
-“ভালো! খুব ভালো। কতো বড় হয়ে গেছো তুমি! মাশাল্লাহ! এসো। ভেতরে এসো।”
ভেতরে যেতেই নীড় “মিষ্টিপুউউউউ……” বলে দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরলো অদিতিকে। সবাই কুশলাদি বিনিময় করে কথা বলছে একসাথে বসে। অদিতি শুধু এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। ভয় ভয় ভাব তার চেহারায় স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। অবশ্যই অননকে খুজছে সে। কিছুক্ষণ পর কোত্থেকে যেনো অনন এসে হাজির হলো।এসেই সালাম দিলো অদিতির বাবা মা কে। আর অদিতির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট দুটো বাকালো সে। অদিতিও বিপরীতে একই কাজ করলো।
-“অননও তো চলে এসেছে। চলুন তাহলে এবার খেয়ে নেয়া যাক।”
বললেন মিসেস সালেহা।তার কথায় সম্মতি জানালেন সবাই। খাবার টেবিলে গিয়ে বসেছে অদিতি। তার পাশেই নীড় এসে বসলো। অনন অদিতির বরাবরের চেয়ারটাই খালি পেয়ে বসেছে ওখানে। দুজনের একবার চোখাচোখি হতেই ঠোট বাকিয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুড়িয়ে নিলো তারা।খাবার সার্ভ করলেন মিসেস সালেহা। নীড়কে খাওয়াতে বসতেই সে বায়না ধরলো অদিতির হাতে খাবে সে।মিসেস সালেহা বার বার না করলেও নীড় কি আর শোনে তার কথা!তাই অদিতি মিসেস সালেহাকে বললো-
-“আন্টি, দেন আমাকে। আমি ওকে আগে খাইয়ে দিচ্ছি। তারপর আমি খেয়ে নিবো।”
সালেহা বেগম তাও দিতে চাইলেন না। কিন্তু অদিতি জোর করেই নিয়ে খাওয়াতে শুরু করলো। কিছুক্ষণ পর ও বুঝতে পারলো কেউ ওর পায়ে খোচাচ্ছে। ওর সামনে তো অনন বসেছে। তাই ভাবলো নির্ঘাত একাজ অনেনেরই।
-“কি মারাত্মক অসভ্য ছেলেটা। তবে আমিও কম না। দাড়াও চান্দু! দেখাচ্ছি মজা।”
বিরবির করে বললো অদিতি।
-“কিছু বললে?”
নীড়ের প্রশ্নে হকচকিয়ে উঠলো অদিতি।
-“না না। তুমি খাও।”
বলে ওর মুখে আরেক লোকমা উঠিয়ে দিতেই আবার পায়ে কারো খোচা অনুভব করলো অদিতি। সাথে সাথে সামনে থাকা অননের পায়ে নিজের পায়ের বড় বড় নখ দিয়ে খামচি বসিয়ে দিলো সে। অনন ব্যাথা অনুভব করতেই চেচিয়ে দাড়িয়ে পড়লো চেয়ার থেকে।
-“আউউউউউউউউচ……।”
চলবে…..……❤।