#তোমাকেই_ভালোবাসি❤
#পর্বঃ_০৩❤
#Writer_Safan_Aara❤
বিষ্ময় কাটিয়ে অদিতি আবারও কথা বলতে লাগলো নীড়ের সাথে।
-“আচ্ছা তাহলে টমিকে তুমি আজই প্রথম দেখলে!”
-“হুম”
-“কোন ফ্লোরে থাকো তোমারা?”
-“ফিফ্থ ফ্লোর।”
-“ফিফ্থ ফ্লোর!”
-“হুম। তোমরা?”
-“তুমি চলো আমার সাথে। তাহলেই দেখতে পাবে।”
-“সত্যি? তোমার সাথে?”
-“হুম চলো।”
-“আচ্ছা।”
টমিকে কোলে নিয়ে অদিতির হাত ধরে হাটতে থাকলো নীড়।লিফটে করে চলে গেলো দুজনেই। ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজালো অদিতি। কিছুক্ষণ পর অদিতির মা এসে দড়জা খুলে দিলো।
-“অদি! বাবুটা কে?”
-“আমাদের বিল্ডিংয়েরই মা।”
-“ভিতরে নিয়ে আয় ওকে।”
অদিতি নীড়কে নিয়ে ভেতরে চলে গেলো। সোফায় বসিয়ে দিয়ে বললো-
-“নীড়! তুমি এখানে বসো। আমি তোমার জন্য ঠান্ডা ঠান্ডা জুস নিয়ে আসি। ছাদে তো প্রচুর গরম ছিলো। তাই না?”
-“হুম।”
অদিতি জুস আনতে চলে যেতেই রায়হান নিজের রুম থেকে বের হলো। সদ্য গোসল করা গায়ে শুধুমাত্র একটা টাওয়াল জড়ানো তার। এতোক্ষণ খেলাধুলা করে এখন অবেলায় গোসল করেছে সে। নিত্য দিনের অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে তার এ স্বভাব। “মা” “মা” করে ডাকতে ডাকতে বেখেয়ালি রায়হান ড্রইংরুমে আসতেই থেমে গেলো। নীড় টমিকে কোলে বসিয়ে আদর করছিলো। হঠাৎ কারো আওয়াজ শুনতে পেয়ে ওদিকে তাকাতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো তার। সাথে সাথে ছোট্ট হাত দুটি দিয়ে চোখ ঢেকে ফেললো সে। ঘটনার আকস্মিকতায় হতভম্ব রায়হান “মা” বলে চিৎকার দিয়ে আবার দৌড় লাগালো তার রুমের দিকে। রায়হানের গলার শব্দ আর শুনতে না পেলেও চোখ দুটো বন্ধ করেই বসে ছিলো নীড়। অদিতি জুস হাতে ওর সামনে দাড়িয়ে ডাকলো ওকে।
-“নীড়! কি হয়েছে? এভাবে আছো কেন?”
চোখ খুলে নীড় অদিতির দিকে তাকালো।
-“আপু! কে ছিলো গো ওটা! এভাবে খালি গায়ে ঘোরে কেন বাড়িতে।”
-“কার কথা বলছো নীড়?”
-“আমার কথা!”
অদিতির পেছন থেকে উত্তর দিলো রায়হান। চোখে মুখে তার লজ্জাভাব স্পষ্ট। এবার সে আর খালি গায়ে নেই। ড্রেস পড়েই এসেছে।কথাটুকু বলে আবার নিজের রুমে চলে গেলো।
-“ও হয়তো গোসল করে বেড়িয়েছে নীড়। তুমি জুস নাও।”
বললো অদিতি। অদিতির হাত থেকে জুসের গ্লাসটা নিয়ে নীড় বললো-
-“ও কে?”
-“রায়হান। আমার ছোট ভাই।”
-“একদম আমার বড় ভাইয়ার মতো। রোজ গোসল করে তোয়ালে পড়ে বাইরে এসে “মা” “মা” বলে চিল্লাচিল্লি করতে থাকে।”
-“তাই!”
♣
-“মা, মা…….”
সদ্য গোসল করা গায়ে শুধুমাত্র একটা টাওয়াল জড়ানো তারও।
-“কি হয়েছে? এভাবে চেচাচ্ছিস কেন?”
-“ড্রেস কোথায় আমার?”
-“কতো বড় হয়েছিস তুই। এখনো তোর ড্রেস আমার কাছেই চাইবি! নিজের সব কাজ তো করতে পারিস।এটা করতে কি সমস্যা?”
-“কেন বোঝনা বলোতো মা। আমি শুধুমাত্র তোমার পছন্দ করা জিনিসই পছন্দ করি। এখন দাও আমার ড্রেস।”
-” হুম!”
রায়হানের মতই সে-ও এতোক্ষণ বাহিরে খেলাধুলা করে এখন এ অবেলায় গোসল করেছে।
.
.
গ্রুপ স্টাডির বাহানা করে আবারো খেলতে চলে গেলো সে বাহিরে। বাড়ি থেকে কিছুদূর একটা মাঠে সে তার বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করে।
-“আজও কি সেই একই বাহানা করে চলে।এসেছিস তুই?”
দৌড়ে এসে অননের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো আকাশ। কাধ থেকে ব্যাগপ্যাকটা নামিয়ে ঠোট বাকালো অনন।
-“হুম! তো কি করবো আর? আমার পড়ালেখা একদম ভালো লাগে না।”
-“আর তো কয়েকটা দিন। আমাদের মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেলেই তো শেষ। ”
-“এটাই তো প্রব্লেম। মাস্টার্স কমপ্লিট হয়ে গেলেই তো ঝামেলা।”
-“আচ্ছা বলতো। তোর কি প্রব্লেম? রোজ এভাবে মিথ্যা বাহানা দেওয়ার কি দরকার? আন্টিতো আর তোকে গায়ক হতে নিষেধ করে নি। সে করবেও না আমি জানি। তাহলে কি আংকেলকে ভয় পাস!”
-“দেখ ভাই। বাবার প্রতি আমার কখনই ভয় ছিলো না। যা ছিলো, যা আছে, আর যা থাকবে তার পুরোটাই হচ্ছে সম্মান আর ভালোবাসা। আমি যখন বাবাকে বলেছিলাম আমি গায়ক হবো বাবা মুখের উপর না করে দিয়েছিলেন। বলেছিলেন পড়াশোনা কম্পলিট করে তার বিজনেস এ জয়েন করতে। কিন্তু আমি কোনো ব্যাবসা বা চাকরি করতে চাই না। আমার ভালো লাগে না সেসব।”
-“তা তো আমি জানি। কিন্তু আংকেলের দিকটাও তো তোর ভাবা উচিত।”
-“চুপ হয়ে যা তুই। আর এসব নিয়ে আমায় কোনো কথা বলবি না। খেলতে চল।”
বলেই দৌড় লাগালো অনন।নিজের কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে আকাশ বললো-
-” ছেলেটা কবে যে নিজের ভালোটা বুঝবে!”
♣
-“তুমি অনেক সুইট জানো,অদিপু! আমি রোজ তোমার সাথে খেলতে আসবো।”
-“তুমিও অনেক অনেক সুইট নীড়ুপাখি। অবশ্যই এসো। আমিও রোজ তোমার অপেক্ষায় থাকবো। আচ্ছা চলো তোমাকে তোমাদের বাড়িতে দিয়ে আসি। খেলতে খেলতে তো সন্ধ্যাই হয়ে গেলো।”
-“হুম চলো।”
ড্রইংরুমে আসতেই মা বললেন-
-“কই যাচ্ছিস অদিতি?”
-“ওকে দিয়ে আসি মা।”
-“কোন ফ্লোরে থাকে ওরা।”
-“৫ম।”
-“কি বলিস! তোমার মায়ের নাম কি নীড়?”
-“মিসেস সালেহা বেগম।”
-“আরে আরে। তুমি সালেহার মেয়ে! এদিকে এসো।”
হাত বাড়িয়ে নীড় কে ডাকলেন মিসেস রোকেয়া। নীড় তার কাছে যেতেই নীড় কে কোলে তুলে নিলেন উনি। আদর করে দিলেন মন ভরে। নিজের বেস্টির মেয়ে বলে কথা!
-“কাল আবার এসো ঠিকাছে?”
-“হুম আন্টি। অবশ্যই আসবো।”
মিসেস রোকেয়াকে “টাটা” বলে চলে গেলো নীড় অদিতির হাত ধরে।
নীড়কে তার ফ্ল্যাটে দিতে গিয়ে সেখানেই আটকা পড়ে গেলো অদিতি। সালেহা আন্টি ছাড়তেই চাইছে না তাকে। অবশেষে একঘন্টা সেখানে কাটিয়ে অদিতি নিজের ফ্ল্যাটের দিকে রওয়ানা দিলো। পাশাপাশি দুটো লিফট। একটা লিফটে অদিতি ঢোকার পর লিফটের দড়জা বন্ধ হতেই পাশের লিফটের দড়জা খুলে গেলো। বেড়িয়ে এলো অনন। এক সেকেন্ড এর জন্য দুনিয়া উথাল-পাথাল হওয়ার থেকে বেচে গেলো।
.
.
কিছুক্ষণের মধ্যেই অদি নিজের ফ্ল্যাটে পৌঁছে গেলো। গিয়ে মায়ের সাথে কথা বলতে লাগলো।
♣
-“এই কুকুরছানাটা কে এনেছে বাড়িতে?”
টমিকে দেখেই চেচিয়ে উঠলো অনন।ছোট ছোট পায়ে এগিয়ে এসে টমিকে কোলে তুলে নিলো নীড়।
-“আমি এনেছি ভাইউ!”
ভয়ে ভয়ে বললো নীড়। ভ্রু কুচকে অনন বললো-
-“আমি আগেই বলেছি এসব বাড়িতে না আনতে। যাও এখনই বাইরে রেখে এসো।”
-“ভাইউউউউউ! রাত হয়ে গেছে তো! টমি এখন কোথায় যাবে! কত্তো ছোট ও দেখেছো। আজ রাতটা থাকুক না প্লিইইইইইইইইইইইইইইইইজ!”
-“রাখতে দে না। কাল রেখে আসবে নি ও। আজ থাকুক।”
মায়ের অথবা নীড়ের কারো কথারই উত্তর না দিয়ে অনন নিজের রুমে চলে গেলো।
নীড় মনে মনে ভাবলো সে ভালোই জানে টমি কোথায় ভালো থাকবে।
?
সকালে ভার্সিটিতে হেটে যেতেই ভালো লাগে অদিতির। তাই সে ঠিক করেছে রোজ সকালে হেটেই যাবে সে।
ওদিকে অনন বাইকে করে অদিকে পাশ কাটিয়ে ওকে পিছনে ফেলে রেখে চলে গেলো ভার্সিটিতে।তুলনামূলক কম সময়ে ও পৌছে গেলো। ওখানে যেতেই রকি ওরফে অননের রাইট হ্যান্ড দৌড়ে এলো ওর কাছে।
-“ভাই! ভাই! কোন মেয়ে নাকি কাল আপনাকে সবার সামনে অপমান করেছে। কি যেন নাম মেয়েটার! হ্যা, হ্যা, অদিতি।”
-” আররে!!! ও কিছু না। ”
-“কি বলেন কিছু না। ওই মেয়ের সাহস কি করে হয় আপনাকে অপমান করার। দাড়ান ওকে দেখাচ্ছি মজা।”
বলেই দৌড়ে চলে গেলো রকি ফার্স্ট ইয়ারের ক্লাসরুমে। অননের ডাক তার কান পর্যন্ত পৌছলোই না।
-“এখানে অদিতি কে?”
রকির উচ্চস্বরে সবাই ভয় পেয়ে গেলো। ভয়ে ভয়ে একজন আঙুলের ইশারায় বলেই দিলো কে অদিতি। অদিতি সবেমাত্র ভার্সিটিতে এসে ক্লাসরুমে ঢুকে বসেছিলো। পানি খাবে বলে ফ্লাস্কের ঢাকনাটা খুলতেই রকি এসে চেচামেচি শুরু করে। রকি অদিতির হাত ধরে তাকে টানতে টানতে ক্লাসের বাইরে নিয়ে যায় অননও রকির পিছন পিছন আসছিলো। যার দরুন ক্লাসের খুব কাছেই ছিলো অননের অবস্থান। রিক অদিতি হাত ধরে টেনে নিয়ে আসার সময় সামনেই অননকে দেখতে পেয়ে ওর দিকে এক প্রকার ছুড়ে মারে অদিতিকে। যার দরুন নিজেকে সামলে উঠতে না পেরে পড়ে যায় অননের বুকে। আর হাতে থাকা ফ্লাস্ক থেকে সব পানি পড়ে যায় অননের শরীরে।
-“এটা কি করলি রিক!”
বলে চিৎকার করলো অনন।
চলবে…………..।❤