তুমি রঙিন প্রজাপতি পর্ব-০১

0
952

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি🦋
#WriterঃSumaiya_Afrin_Oishi
#সূচনা পর্ব

“এ বিয়ে হবে না।যে মেয়ে’র মা স্বামী, সন্তান রেখে পুরনো প্রেমিকে’র সাথে পালিয়ে গেছে তার মেয়েকে আমার ছেলে’র বউ করবো? অসম্ভব! দেখা যাবে কিছুদিন পরে এই মেয়েও মায়ের মতো ন’ষ্টা’মি করে বেড়াবে। কথাই আছে, ” মা যেমন সন্তান ও হয় তেমন!” এর রক্তেই সমস্যা। এ বিয়ে কিছুতেই হবে না! বাবু তুই জলদি উঠে আয়?”

ঘর ভর্তি মানুষের সামনে হবু শ্বাশুড়ির মুখ থেকে এমন তিক্ত কথা শুনে বুকটা তিব্র বিষাদে ভরে উঠলো বধু রুপে লম্বা ঘোমটা দিয়ে জড়সড় হয়ে বসা থাকা কিশোরী মেয়ে চাঁদনী’র। আজ মায়ের করা ভুলে’র জন্য প্রতিটা পদে পদে তাকে হেনেস্থা হতে হয়। লোকে তার দিকে আঙুল তুলে কথা বলার সাহস দেখায়, তার চরিত্রের উপরে কালী দেয়। এই মা নামক নারী’কে চরম ঘৃণা করে সে। মায়ে’র প্রতি আরো একবার তীব্র ক্ষোপ, ঘৃণা জমলো চাঁদনী’র কিশোরী মনে। আজ তার মা যদি থাকতো মানুষজন তার দিকে কখনো আঙুল উঁচু করে কথা বলতে পারতো না। তার জীবনটা এভাবে ন’র’কে পরিণত হতো না। তবুও ভিতর থেকে অভিমানী কিশোরী মন আক্ষেপ করে বলে উঠলো,

“আমার জন্য হলেও থেকে যেতে মা! কেনো? কেনো? কেনো এমন করলে? কেনো কেঁড়ে নিলে আমার শৈশব, কৈশোর বয়সের আনন্দটুকু! কেনো মা! কেনো আমাকে বঞ্চিত করলে মা’য়ের আদার স্নেহ থেকে! তুমি তো নিজের সুখটা খুঁজে নিলে মা! আমাকে দিয়ে গেলে এক আকাশ সমান যন্ত্রণা। আমারও যে ভীষণ কষ্ট হয় মা! বুকটা তীব্র হাহাকার করছে মা। জানো মা? মানুষ গুলো বড্ড স্বা’র্থ’প’র! নি’ষ্ঠু’র মানব ওরা। ওরা আমায় সুযোগ বুঝে তীব্র ব্যথা দিয়ে কথা বলে। মানুষের এমন কথা শুনলে আমার ম’রে যেতে হচ্ছে করে মা! ওদের কথাগুলো যে আমার কলিজায় এসে তীরের মতো বিঁধে, ক্ষণে ক্ষণে র’ক্তা’ক্ত করে বুকটা। সেই ছোট বেলা থেকে তোমার জন্য এমন ম’র’ন যন্ত্রণা সহ্য করে এসেছি। আমি আর পারছি না! পারছি না আমি এসব নিতে মা! তুমিও একটিবার এই ছোট্ট মেয়েটার কথা ভাবলে না।
তোমাকে কক্ষণো ক্ষমা করবো না আমি।কক্ষণো না!”

না এই মহিলা তার কেউ না। ভাববে না সে তার কথা। যে মহিলা ছোট বয়সে তাকে রেখে চলে গিয়েছে তার কথা কেনো সে ভাববে? ঘৃণা করে ঐ “মা” নামক মানুষটা’কে। তার কোনো মা নেই! নেই মা! সে অনাথ। মুহুর্তেই শ্যামসুন্দর মুখ খানায় আধাঁর ঘনিয়ে আসলো । লজ্জায়, অপমানে বুকটা ভারী হয়ে আসলো। বুকের ব্যথা গুলো যেন চোখ দিয়ে অশ্রুকণা হয়ে গড়িয়ে পড়ছে অবিরত। যা লম্বা ঘোমটা’র আড়ালে সীমাবদ্ধ হয়ে রইলো।

ছেলেপক্ষ বিয়ের আসর ছেড়ে চলে যাচ্ছে। পরক্ষণেই বিয়ের শান্ত পরিবেশে হৈচৈ শুরু হয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে মানুষজন কানাঘুঁষা, গুঞ্জন শুরু করে দিয়েছে। গায়ের রং এমনিতেই চাপা মেয়েটা’র আবার কলঙ্ক লেগেছে গায়ে!” বিয়ের আসর ছেড়ে বর চলে যাচ্ছে!” এটা কি কম ক’ল’ঙ্ক? এ মেয়ে’কে আর কোনোদিন বিয়ে দেওয়া যাবে না। কে করবে এই মেয়ে কে বিয়ে?

সৎ মা আফরোজা’র চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো। এই উঁটকো বোঝা’টা কোনো ভাবে ঘাঁড় থেকে নামাতেই পারছে না সে। কোনো ভাবে এইটা বিদায় করতে পারলেই বড়জোড় বাঁচে সে।
চাঁদনী’র বাবা ফিরোজ দিশেহারা হয়ে পড়লো। ভরা সমাজে’র কাছে তার মানসম্মান নষ্ট হতে চলছে। তার মাথায় হাত! দিশেহারা হয়ে ছেলে’র মায়ের কাছে হাতজোড় করে কাকুতিমিনতি কণ্ঠে বললো,

“দয়াকরে আপনারা চইলা যাইবেন না আপা! দোহাই আপনাদে’র আমগো মানসম্মান এইভাবে নষ্ট কইরেন না! আমার মাইয়া’ডা খুবই ভালো। ওর এ,ওো বড় ক্ষ*তি কইরেন না আপনারা !”

ছেলে’র মা “হাসিনা খানম” খেঁকিয়ে উঠলো, ফিরোজ মিয়ার দিকে আঙুল তাঁক করে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বললো,

“চুপ করুন মিয়া! আপনার আবার কিসের মানসম্মান? কাপুরষ কোথাকার! নিজের বউকে তো কনট্রোল করে রাখতে পারলেন না। আপনারে রাইখা তো অন্য ব্যাটার সাথে চলেই গেলো। কেমন পুরুষ আপনি বোঝা বাকি নাই। এর নাকি আবার মানসম্মান!”

মুহূর্তেই লজ্জায়, অপমানে ফিরোজ মিয়া মাথা নত করে ফেললো। এই মুহুর্তে বলার মতো কিছু খুঁজে পেলো না ফিরোজ মিয়া। তার মুখে “রা” নেই। এদের কথপোকথন শুনে কিছু প্রতিবেশী লোক মিটমিট করে হাসছে। তারা যেন বিষয়টি ভীষণ উপভোগ করছে। হাসিনা খানম পুনরায় চেঁচিয়ে আবারও বললো,

“আপনারা এতো বড় কথা বিয়ের আয়োজন করা’র আগে গোপন রাখলেন কেনো? অবশ্যই রাখবেন। জেনেশুনে তো আর এমন পরিবারের মেয়ে’কে কেউ বউ করবে না। আমার সোনার টুকরো ছেলে’র গলায় ন’ষ্টা মায়ের ন’ষ্টি মেয়ে ঝুলিয়ে দিতে চাইছেন। আমাদের ভাগ্য ভালো যে বিয়ে’র আগ মুহূর্তেই শুনেছি এসব ফ’ষ্টি’ন’ষ্টি’র কথা। জেনেশুনে তো আর এমন থার্ডক্লাস-পরিবারের মেয়েকে ছেলের বউ করতে পারি না। আমাদের সমাজে একটা নাম ডাক আছে। কিচ্ছুতেই এ বিয়ে হবে না। চলো সবাই। বাবু চল আর এক মুহূর্তও এখানে থাকতে চাইনা।”

কথা,শেষ করে হাসিনা খানম ছেলের হাত ধরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালো, ছেলেও বাধ্য ছেলে’র মতো মায়ের সাথে হাঁটা দিলো। কিন্তু বাঁধা হয়ে দাঁড়ালো একজন ভদ্রলোক। কিছুসময় চুপচাপ এদের কান্ড দেখে বরপক্ষে’র মধ্যে ছেলে’র চাচাতো মামা “আফজাল হোসেন”। উনি আর চুপ থাকতে পারলো না। এমন অন্যায় মেনে নিতে পারছে না। এতে মেয়েটার কি দোষ? উনি ছেলে’র মা’কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

“এসব কেমন ব্যবহার আপা? বিয়ের সব ঠিকঠাক করে এখন বিয়ে হবে না। এটা কোনো কথা? মেয়ে কি কোন ফেলনা নাকি। সব তোমাদের ইচ্ছেতেই হবে? এদের কি কোনো সম্মান নেই। এটা ভারি অন্যয় হচ্ছে। ভরা সমাজে একজন মেয়ের বাবা’কে এই ভাবে হেনেস্তা করছো ! বিয়ের ডেট ফিক্স করা’র আগে এসব জানা উচিত ছিলো। খোঁজ খবর নিয়ে তবেই আসতে। এখন তোমার বাবু’কেই এই বিয়ে করতে হবে।”

“তুই চুপ কর আফজাল। এদের প্রতি তোর এতো দরদ কোথাথেকে আসলো? এতোই যখন দরদ, তা তোর ও দু’টো ছেলে আছে তাদের একজনার সাথে বিয়ে দিয়ে একেবারে ঘরে তুলে নে এই মেয়ে। আমার একমাত্র ছেলে এর থেকে ভালো কিছু ডিজার্ভ করে।”

গলার স্বর উঁচু করে কিছুটা তাচ্ছিল্য করে কথা শেষ করেই চলে যাবার জন্য উদ্বিগ্ন হলো হাসিনা খানম। আফজাল হোসেন বোনের কথা পাওা না দিয়ে ভাগ্নিকে বললো,

“তুই কিছু বল বাবু?”

বাবু কিছু বলার আগেই হাসিনা খানম ক্রোধিত কণ্ঠে বললো,

“ও কি বলবে আবার। যা বলার আমি বলে দিয়েছি।”

বলেই ছেলের হাত ধরে বাহিরে চলে গেলো হাসিনা খানম। আফজাল হোসেন সে দিকে তাকিয়ে বাবু’কে উদ্দেশ্য করে বিড়বিড় করে বললো,

“কাপুরষ! তোর সাথে বিয়ে হয়নি বড় বাঁচা বেঁচেছে মেয়েটা!”

বিয়ের আসড় ছেড়ে বর পক্ষ চলে গিয়েছে তা দেখে ফিরোজ মিয়া মাথায় হাত দিয়ে চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লো। মুহূর্তেই কনে পক্ষে’র লোকের মাঝে আরো একদফা হৈচৈ, হা-হুতাশ শুরু করলো। চাঁদনী স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। তার মধ্যে এসবের কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না। আনমনে গভীর ভাবে কিছু একটা ভাবছে সে। যা দেখে আফরোজা বেগম তেঁ’ড়ে গিয়ে চাঁদনী’র চুলের মুঠি ধরে এলোপাথাড়ি মারতে থাকলো। আকস্মিক চুলে ব্যথা পেয়ে চাঁদনী চিৎকার দিয়ে বললো,

“ও মা গো!”

যা দেখে আফরোজা অকথ্য ভাষায় বলে উঠলো,

“এই যে নবাবজাদি…! কি ভাবোছ তুই? মা’র মতো হইছো! কোন নাগরের কথা এতো ধ্যান দিয়ে ভাবোছ? অ’লক্ষ্মী!মুখ পুঁড়ি! তোর জন্য আমগো’র টাকাপয়সা মানসম্মান নষ্ট হইলো। তুই এক্ষণি বাড়ি থেকে চলে যাবি। তোর জন্য আমার মাইয়া দুইডাও ভালো ঘরে বিয়া দেওন যাইবো না। তোর মুখ দেখবার চাই না আমি! যা বাইরা ঘর থাইকা”

কথা শেষ করে আফরোজা বেগম চাঁদনী’কে টানতে টানতে ঘর থেকে বের করে দিচ্ছে। সবাই তামাশা দেখছে কেউ কিচ্ছু বলছে না। যার মা নেই পৃথিবীতে তার কেউ থাকে না।
চাঁদনী একবার আশপাশে দৃষ্টি বুলিয়ে নিজের হাত মুচড়িয়ে ছাড়াতে ছাড়াতে বললো,

“মা হাত ছাড়েন। এখানে আমার কি দোষ আমি কি করছি?”

শুনলো না আফরোজা। উনি ধাক্কা দিয়ে চাঁদনি’কে উঠানে ফেলে দিলো। মেয়ে’টা শাড়ীর সাথে পেঁচিয়ে উঠানে’র শক্ত মাটিতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে গেলো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলো নরম দেহটা। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো ক্ষীণ আর্তনাদ,

“ওহ আল্লাহ!”

কেউ শুনছে না তার আর্তনাদ! বাবা সামনে বসে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। তার মানসম্মত নষ্ট হয়েছে এই মেয়ে ম’র’লে’ও তার কিচ্ছুটি না। চাঁদনী একবার বাবা’র দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নিলো। মা যখনই তাকে রেখে চলে গিয়েছে বাবা’টাও আর তার রইলো না। মা চলে যাবার সাথে সাথে সুখ পাখিটাও চলে গিয়েছে চাঁদনী’র জীবন থেকে।
বাবা পুনরায় বিয়ে করে তার জন্য নতুন মা এনেছে। আর নতুন মায়ের ভালোবাসা হিসেবে লাঠি-ঝাঁ’টা খেতে খেতে সে অভ্যস্ত। নিজের বলতে শুধু নিজেই রয়েছে সে। তাই কারো ভরসায় না থেকে আস্তে ধিরে উঠে বসলো চাঁদনী। মায়াবী চোখ জোড়া ফুলে একাকার, শ্যামমুখটা মলিন দেখাচ্ছে। চাঁদনী কে এখনো বসে থাকতে দেখে আফরোজা আবারো ধাক্কা দিয়ে ক্রো’ধিত কণ্ঠে বললো,

“কি হইলো এখনো বইসা আছোছ ক্যান? যাও না কেন? আর কত বসে বসে বাপের অ’ন্ন’ধ্বং’স করবি? মানসম্মত তো খাইছোই এবার বাপরে শেষ করা’র আগে যা বাড়ি থাইকা।”

“আমি কোথাও যাবো না। এটা আমার বাবা’র বাড়ি। আমারও অধিকার আছে এখানে থাকার।”

চোখ মুখ শক্ত করে বললো চাঁদনী। যা শুনে আবারো চুলের মুঠি ধরলো আফরোজা। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো ,

“শ’য়’তা’নে’র বাচ্চা! আমার মুখে মুখে কথা কও?”

এরি মধ্যে কোথা থেকে ছুটে আসছে চাচাতো বোন জোছনা আপা। উনি চাঁদনী’কে ধরে কান্না করতে করতে বললো,

“চাঁদ কে আর মা’ই’রে’ন না চাচি। ওরে ছাইড়া দেন চাচি। ওর কষ্ট হচ্ছে।”

“জোছনা তুই এইহান দিয়া যা। ওরা আজ আমি মা’ই’রা’ই ফেলমু।”

“না! না! চাচি ওরে আর মা’ই’রো না। মা’র’তে হলে তুমি আমারে মা’রো’। এই বাচ্চা মেয়ে’টারে আর মে’রো না।”

এরি মধ্যে আফরোজা’র নয় বছরের জমজ দু’টো মেয়ে “অহনা” “মোহনা” কাঁদতে কাঁদতে মায়ের আঁচল ধরে টানতে টানতে বললো,

“মা! আপারে ছাইড়া দেও। আপা ব্যাথা পায়।”

মেয়েদের ধমকে বলে উঠলো তিনি, ” যা এখান থাইকা। মার থাইকা মাসির দরদ!”

এদের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে আবারো বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো আফজাল হোসেন। উনি এতক্ষণ বাড়ির সামনে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলো। বরপক্ষ সবাই চলে গেছে উনাকে রেখেই। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই পা জোড়া থেমে গেলো তার। লাল বেনারসি পড়া কিশোরী এক মেয়ে’কে এলোপাথাড়ি মা’র’ছে কেউ। অথচ মেয়ে’টা টু শব্দও করছে না। হয়তো শরীর আঘাতের কাছে মনের আঘাত তীব্র। উনার বুঝতে সমস্যা হলো না মেয়েটাই পাএী। এতো বড় মেয়েকে এভাবে কেউ মারে?
উনি দ্রুত এসে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“আরে আপনি কি মানুষ! মেয়েটাকে এভাবে মা’র’ছে’ন কেনো?”

আফরোজার হাত থেমে গেলো। তবুও চুল ছাড়লো না সে। সামনে থাকা লোকটার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে চিনতে পারলো উনি বরপক্ষে’র লোক। যা দেখে বাজখাঁই গলায় খেঁকিয়ে উঠলো আফরোজা ,

“আপনারা, আপনে এহানে কেন? আমগো মানসম্মত ডুবাইয়া শান্তি অয়নাই। এহন আবার তামাশা দেখতে আইছেন? আমগো মাইয়া ওরে মা’রি কাঁ’টি তাতে আপনার কি? যান এইহান থাইকা।”

“ভদ্র ভাবে কথা বলুন। এতো বড় মেয়ে’কে লোকসমাজে এভাবে কেউ মা’রে? কেমন মা আপনি? ছিঃ! এখানে মেয়েটার দোষটা কোথায়?”
সবার উদ্দেশ্য করে আবার বললো,

“আর আপনারাও কেমন মানুষ? সামান্য মনুষ্যত্ববোধ নেই আপনাদের মধ্যে? মেয়েটাকে মারছে আর আপনারা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছেন।”

আফজালে’র কথা শুনে এক বৃদ্ধ মহিলা নাক চোখ কুঁচকে বলে উঠলো,

“ভরা সমাজে এগো সম্মান নষ্ট কইরা এহন আইছেন নীতি কথা হুনাইতে। একবার বিয়া ভা’ই’ঙ্গা গেছে মাইডার এহন কেডায় বিয়া করবে ওরে? পারবেন মাইয়াডা’র চরিত্রে’র থাইকা এই ক’ল’ঙ্ক মুইছা দিতে?”

আশ্চর্য! এখানে মেয়ে’র চরিত্রে ক’ল’ঙ্ক লাগার কি আছে? বিয়েতো আর হয়নি। বর্তমানে এমন তো অহরহ হয়ে থাকে। এদের মন-মানসিকতা দেখে চরম অবাক হয়ে বাকরুদ্ধ আফজাল।
.
.
এতক্ষণে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে গেছে আফরোজা।জোসনা জোর করে চাচির মুঠো থেকে চুল ছাড়িয়ে ঝাপটে ধরলো তার চাঁদ কে। আফরোজা আরো একবার শাসিয়ে বললো,

“জোসনা ঐ অল’ক্ষ্মীরে যেন আর ঘরে না দেখি আমি। ওরে বাড়ি থেকে চইলা যাইতে ক।”

কথা,শেষ করে গটগট পায়ে ঘরের ভিতরে চলে গেলো আফরোজা। জোসনা চাচা ফিরোজ মিয়া’র দিকে তাকালো। লোকটা কেমন বসে আছে আর তার চোখের সামনে মেয়েটাকে এভাবে মারছে। কেমন বাবা উনি? তবে কি মা না থাকলে বাবারাও এভাবে পর হয়ে যায়! জোসনা’র কোমল মনটা চাঁদনীর ব্যথায় বিষাদময় হলো।কান্না করতে করতে অস্পষ্ট স্বরে দিশেহারা হয়ে বললো,

“এই চাঁদ! চাঁদ! ব্যথা পাচ্ছিস? কোথায় বোন বল আমাকে? দেখি আমাকে ধরে উঠে দাঁড়া।”

জোছনা’র আহ্লাদী উদ্বীগ্ন হওয়া কণ্ঠ শুনে নিজেকে আর সামলিয়ে রাখতে পারলো না চাঁদনী। হুড়মুড় করে আপা’কে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে উঠলো।
একমাত্র এই জোসনা আপা’টা তার কষ্ট গুলো বোঝে। তার ব্যথায় খুব কাঁদে। ছোট বেলা থেকে তাকে মায়ের মতো আদর, স্নেহ করে এই আপাটা। তারও বিয়ে হয়ে গেলো একবছর আগে। শ্বশুর বাড়ি থাকলেও মনটা সর্বক্ষণ ছটফট করে করে চাঁদের জন্য। চাঁদনির বিয়ে হবার খবর শুনে এসেছিলো সে। এসেই অহনা মোহনা’র থেকে এমন খবর শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না জোসনা। বোনকে বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে স্নেহময় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে ব্যস্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,

“খুব ব্যথা করছে চাঁদ? কষ্ট হচ্ছে বোন? আপাকে বল কোথায় কষ্ট হচ্ছে?”

“হ্যাঁ আপা ভীষণ ব্যথা করছে। এই যে, এই বুকে বড্ড ব্যথা করছে আপা! আমার সাথেই কেনো এমন হয় আপা! কেনো? আচ্ছা আপা! মায়েরা’তো সবসময় সন্তানের ভালো চায় তাই না? তবে আমার বেলায় কেনো এমন হলো আপা! মায়ের করা কর্মে’র ভুক্তভুগী আমায় কেনো নিতে হচ্ছে। আর কত সহ্য করবো আমি আপা। আমার কষ্ট হচ্ছে আপা! আমি আমি আর পারছি না। ক্লান্ত আমি, হাঁপিয়ে গিয়েছি ভীষণ! এবার আমার একটু শান্তি চাই আপা। আমায় একটু শান্তি দেও!”

ক্লান্ত স্বরে কান্নাত কণ্ঠে কথা গুলো বলে একদম শান্ত হয়ে বোনের বুকে চুপটি করে রইলো চাঁদনী। ইশ কতটা কষ্ট মেয়ে’টার মনে। বুক ফাঁ’টা অসহায়ত্ব কথাগুলোর কি জবাব দিবে জোসনা? জবাব দিতে পারলো না সে। দূরে দাঁড়িয়ে মেয়েটার করুণ অসহায়ত্ব দেখে বুকটা ভারী হয়ে উঠলো আফজালের। উনি মনে মনে কঠিন এক সিদ্ধান্ত কষলো……..।

#চলবে………

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে