তুমি রঙিন প্রজাপতি পর্ব-২৫+২৬

0
651

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পর্বঃ২৫

আচমকা শব্দ পেয়ে ফারিহা’র তন্দ্রা ভাব কে’টে যায়,সে খানিকটা ভয় ও পেয়ে যায়। পরক্ষণে শব্দ অনুসরণ করে দরজার দিকে তাকালো। এখনো পালাক্রমে দরজা খটখট করছে কেউ। ফারিহা উঠতে গিয়েও পারছে না। আয়ান এখনো তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে, লোকটার হুঁশ নেই বেঘোর ঘুমাচ্ছে সে। কি একটা মুসিবত! ফারিহা কি করবে ভেবে পাচ্ছে। আয়ান কিছুক্ষণ হলো ঘুমিয়েছে, তার ঘুমটাও ভা’ঙ’তে ইচ্ছে করছে না। আবার নিজেও উঠতেও পারছে না। নতুন বউ হাঁক ছেড়ে জিজ্ঞেস করতেও পারছে না, কে ওখানে? এতো ভোরে কেই বা এমন করছে?
ফারিহা আস্তে ধীরে কোনো মতে নিজেকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালো। মাথা থেকে ভেজা তাওয়ালটা খুলে মিনিটের মধ্যে নিজেকে পরিপাটি করে দরজা খুললো। দরজার ওপাশে শ্বাশুড়িকে দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হলো ফারিহা। কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই উনি বিরক্তি মাখা কণ্ঠে বলে উঠলো,

“এতক্ষণ লাগে দরজা খুলতে?”

নতুন দাম্পত্যদের প্রথম সকালে শ্বাশুড়ির এমন কান্ডহীন কথা পছন্দ হলো না তার। তবুও নিজেকে ধাতস্ত করে মৃদু কণ্ঠে বললো,

” স্যরি! শুনতে পাইনি আম্মা। ঘুমে ছিলাম।”

বিপরীতে শাশুড়ী মা “নিহা বেগম” গমগমে আওয়াজে বললো,

“সে কেমন কথা..! তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? কতবেলা হয়েছে খেয়াল আছে? আমার সাথে রান্না ঘরে এসো।”

শ্বাশুড়ির এমন কর্কশ আচরণে হতবাক মেয়েটা! মনে মনে ভীষণ কষ্ট পেলো সে।
ইতোমধ্যে শ্বাশুড়ি খানিকটা দূরে চলে গিয়েছে, কথা শেষ করেই। পিছনে ঘুরে ফারিহাকে হাবলার মতো দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি কিড়মিড় করে উঠলো, চিবিয়ে চিবিয়ে বলে উঠলো,

“আমার কথা শুনতে পাও নাই তুমি? নাকি তোমাকে কোলে করে নিয়ে আসতে হবে।”

ফারিহার টনক নড়লো। সে পুনরায় আবারো চমকে উঠলো। বিস্মিত হওয়া মুখটা নিয়ে শ্বাশুড়ির পিছনে পিছনে ছুটলো। মিনিট পেরোতেই নিহা বেগম রান্না ঘরে এসে ফারিহাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“সবার জন্য সকালের নাস্তাটা বানিয়ে ফেলো বউ। দেখি এতগুলো বছর তোমার মা তোমাকে কেমন রান্না শিখিছে।”

রান্না ঘরে আগে থেকেই কাকি ও ফুফা শ্বাশুড়িরা বসা ছিলো। তারাও নিহা বেগমের সাথে তাল মিলিয়ে বললো,

“হ্যাঁ। হ্যাঁ। দেখি নতুন বউয়ের রান্না খেতে কেমন মজা লাগে। তাড়াতাড়ি রেঁধে ফেলো বউ মা।”

অতঃপর তারা একে একে সবাই রান্না ঘর ছাড়লো। ফারিহা তাদের যাওয়ার দিকে মিনিট খানিক সময় অবিশ্বাস্য নয়নে তাকিয়ে রইলো। শ্বাশুড়ির এমন আচরণে দেখে তার মস্তিষ্ক ভাবাচ্ছে, প্রথম সকালেই নতুন বউকে ঘুম থেকে তুলে রান্না ঘরে নিয়ে যেতে হবে? এতো দিন কি তারা না খেয়ে থাকতো? আরো কয়টা দিন সময় কি তাকে দেওয়া যেতো না। আচ্ছা রান্না করতে হবে, এটা ভালো করে বলা যেতো না? এ কেমন আচরণ। প্রথম সকালেই তিক্ততায় বিষিয়ে উঠলো তার মন। শ্বশুর বাড়িতে পা রাখতে না রাখতেই এমন বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়তো কোনো মেয়ে আজ অবধি হয়নি। মুহূর্তেই তার চোখ দু’টো ছলছল করে নোনা পানিতে টইটম্বুর। চোখের জল নিয়েই রুটি বানানোর জন্য আটা হাতে নিলো।
এরিমধ্যে হঠাৎ করেই চাঁদনী’র কথা মনে পড়ে গেলো। তার মা ও তো প্রথম থেকে এমনটা করে এসেছে মেয়েটার সাথে।
এ যেন ও রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার! তার মা অন্যের মেয়ের সাথে বাজে আচারণ করছে, এখন তার মেয়ের সাথে অন্যরা করছে।
পরক্ষণেই তার অচেতন মন চাঁদনী’র প্রতি ক্ষি’প্ত হলো, ঈষৎ হিংসা হলো চাঁদনী’কে। সব দোষ ওই অ’প’য়া মেয়েটার! মেয়ে’টা যদি তাদের বাড়িতে না আসতো তাহলে তার মা তো আর এসব আচরণ করতে পারতো না। আর না রিভেঞ্জ হিসেবে তার কাছে আসতো।
এই প্রথম চাঁদনীর প্রতি তার ভীষণ রাগ হচ্ছে। এ-সব সাত-পাঁচ ভেবে ভেবে রুটি বানিয়ে নিলো ফারিহা। বেখেয়ালি হয়ে ডিম ভাজতে গিয়ে হঠাৎ করে তেল ছি’ট’কে হাতে পড়ে তার। গরম তেল পড়তেই যন্ত্রণায় মৃদু স্বরে “আহ্” করে শব্দ করে উঠলো মেয়েটা।
যা দেখে নিহা বেগম দূর থেকে পৈ’চা’শি’ক আনন্দে কিঞ্চিৎ হাসলো। ফারিহাকে তার কোনো কালেও পছন্দ না। তার ছেলের সমবয়সী বয়স্ক একটা মেয়ে কিনা তার একমাত্র ছেলের বউ! এটা মানতে পারছে না সে। এতো লেখাপড়া ও তার পছন্দ না। ঘরের বউদের এতো পড়াশোনার কি দরকার? ছেলের বউ হিসেবে সুন্দরী ক’চি মেয়েই তো মানানসই! সেখানে ফারিহার বয়স দ্বিগুণ, অনার্স কমপ্লিট। এমন মেয়ে কি তার ছেলের সাথে যায়? শুধু মাএ একমাত্র ছেলে হাত ছাড়া হবার ভয়ে চা’পে পড়ে ছেলের পছন্দ অনুযায়ী বিয়ে করিয়াছে। তাই বলে কি মাথা কিনে নিয়েছে। সে ও দেখবে আফজ্জাইল্লার বুড়া মাইয়া কেমনে শান্তিতে থাকে!
খানিক বাদে মুখের হাসিটা মিলিয়ে নিলো, তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরে প্রবেশ করলো নিহা বেগম। অতঃপর পিছন থেকে ফারিহাকে তাছিল্য করে বলে উঠলো,

“এতো বয়স হয়েছে তাও ঠিক মতো একটি ডিম ভাজতে পারো না? এতগুলো বছর বাপের ঘরে বসে কি শিখাইছে তোমার মা? অথচ তোমার থেকে ছোট মেয়েরাও দিব্যি স্বামীর সংসার করছে।”

তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমান মেয়ে ফারিহা। শ্বাশুড়ি যে তাকে আকার ইঙ্গিতে বয়স্ক বলে সম্মোধন করছে, ঠাহর করতে বেশ একটা বেগ পেতে হয়নি তার। আসতে না আসতেই শ্বাশুড়ির উস্কানি মূলক কথা শুনে চোখ ভিজে গেলো। তাকে তো বকছেই তার সাথে মাকেও টানছে। এসব শুনে মেয়েটার হাতের ক্ষতের সাথে হৃদয়টাও পুড়ছে ভীষণ!
.
.
ক্যালেন্ডারের পাতায় এখন আষাঢ় মাস।আকাশে সাদা মেঘ,রৌদ্রময় দিন, বৃষ্টির দেখা নেই।
প্রকৃতি দেখে একবার মনে হচ্ছে গ্রীষ্মকাল এখনো। আবার বাতাস দেখে মনে হচ্ছে শরৎকাল চলছে।কেমন যেনো সব কিছু বদলে গেছে! কোমলতা হারিয়ে প্রকৃতি হয়ে উঠেছে রু’ক্ষ!
সেই সাথে ভিতরে ভিতরে রু’ক্ষ’তা’য় ছেয়ে গিয়েছে ফারিহার হৃদয়খানী।
জনমানবের জীবন থেকে চলে গিয়েছে আরো কয়েকটি সপ্তাহ। নতুন দাম্পত্যের বউভাত সহ যাবতীয় বিয়ের সকল আচার-অনুষ্ঠান শেষ হয়েছে।
ফারিহা বাবা’র বাড়ি থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে কয়েকটা দিন। বাড়িতে এসেও সবার সাথে একদম স্বাভাবিক থেকেছে সে। যেতে না যেতেই শ্বাশুড়ির কর্কশময় আচরণের কথা কাউকে কিচ্ছুটি বলেনি। এমনকি আয়ানকে ও না। বাড়িতে শ্বাশুড়ি সম্পর্কে কেউ জিজ্ঞেস করলে, সে হেসেই বলেছে “ভীষণ ভালো”। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে যতই দিন যাচ্ছে শ্বশুর- শ্বাশুড়ি আয়ানের অগোচরে অযথাই তাকে বিভিন্ন কটুবাক্য শুনাচ্ছে। ফারিহাও প্রথম প্রথম যতটা সম্ভব সহ্য করেছে কিন্তু ইদানীং সে ও কথার বিপরীতে উত্তর দিচ্ছে। তবুও আয়ানকে জানতেও দিচ্ছে না এই বিষয়ে। কিন্তু আয়ানের আচরণে এসব ভুলে যায় সে।
মাঝে মাঝে নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হয়। জীবনে সঠিক মানুষ নির্বাচন করতে সফল হয়েছে সে। তার আয়ান যেমন প্রেমিক হিসেবে সেরা ছিলো তেমনি স্বামী হিসেবেও সেরা। ভাগ্য করে এমন একটা স্বামী জুটেছে। তার জন্য তো এতটুকু সহ্য করাই যায়!
নতুন সংসারে এসেই মা-ছেলের মাঝে ঝামেলা হোক ঘুনাক্ষরে ও চায় না সে। শ্বশুর -শ্বাশুড়ি যেমনই হোক দিনশেষে মানসিক তৃপ্তি দিবার জন্য একান্তই একজন রয়েছে তার।
এইতো সকালের জন্য নাস্তা তৈরী করছে ফারিহা। তাকে এতক্ষণ কাজে সাহায্য করেছে আয়ান। ফারিহা না করা সত্যেও আয়ান এটা সেটা করে দিচ্ছে তাকে। কাজ শেষে ফারিহা রান্না করছে আয়ান পিছন থেকে তাকে জড়িয়ে ধরে ঘাঁড়ে মুখ ডুবিয়েছে। এই গরমে চুলার কাছে জামাইর এমন রোমান্টিক অ’ত্যা”চা’রে অ’তি’ষ্ঠ হয়ে উঠেছে ফারিহা। আবার লোকজনের ভয় ও করছে। যদি হুট করে কেউ এসে পড়ে। লজ্জা জনক ব্যাপার! কিন্তু আয়ান নাছোড়বান্দা। নিজেও ঘেমে গিয়েছে তবুও ছাড়ছে না। ফারিহা এবার আর না পেরে কিঞ্চিৎ বিরক্ত কণ্ঠে বললো,

“এমন করছো কেনো আয়ান?ছাড়ো তো।”

কিন্তু আয়ান বিপরীতে হাসলো,
আরো একটু হাতের বাঁধন শক্ত করে ধরে মোহনীয় কণ্ঠে বললো,

“উঁহু ছাড়ছি না তোমাকে। ছাড়ার জন্য তো আর তোমার হাত ধরিনি জান। তাছাড়া আমি তোমার বাপ-ভাইকে কথা দিয়েছি, তোমাকে সারাজীবন এভাবে আগলে রাখবো।”

ফারিহা হ’তা’শ! কারে কি বলছে সে? গরমে তার জান বেরিয়ে যাচ্ছে আর এই ছেলে না কত রোমান্টিক মুডে আছে।
পরক্ষণেই ফারিহা খু’ন্তী হাতে নিয়ে রাগী রাগী চোখ করে বললো,

“আয়ানননন! তুমি যাবে এখান থেকে? নাকি খু’ন্তী’র ছ্যা’কা খাবে?”

এমন করছো কেনো ফারু?

“তো কেমন করবে শুনি?”

“রাগ না দেখিয়ে জামাইকে আদর টাদর করে চুমুও খেতে তো পারো নাকি?” দুষ্ট হেসে বললো আয়ান। ফারিহা এর সাথে আবেগে গা না ভাসিয়ে ঠান্ডা স্বরে বললো,

“উফফ বাচ্চামো করছো কেনো আয়ান? নিজেও গরমে কষ্ট করছো। আমাকে….

ফারিহার পুরো কথা শেষ হবার আগেই আয়ান বলে উঠলো,

“কষ্ট পাচ্ছি না তো। আমারতো দারুণ লাগছে। রোমান্টিক রোমান্টিক ফিল হচ্ছে। বলেই ঘাড়ে টুকুসস করে এক চুমু দিলো।

ফারিহা রয়ে সয়ে কিঞ্চিৎ চেঁচিয়ে বললো,

“আমার গরম লাগছে ছাড়ো।”

আয়ান ছেড়ে দিলো সাথে সাথে। মুখ কালো করে বললো,

“একদিন কিন্তু এসব মিস করবে ফারিহা। তখন আর আমাকে চাইলেও পাবে না।”

বলেই আয়ান চলে যেতে নিলো। ফারিহার বুকটা কেঁপে উঠলো হঠাৎ করেই। যতদিন যাচ্ছে আয়ানের ছুটি শেষের দিকে যাচ্ছে। কি করে থাকবে সে এই মানুষটা কে ছাড়া?
ফারিহা চুলা বন্ধ করে দিলো। পিছন থেকে আয়ানের হাত ধরে ফেললো। আয়ান দাঁড়িয়ে গেলো। ফারিহা তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

“স্যরি জান! আমি এভাবে বলিনি রাগ কিংবা কষ্ট পেও না প্লিজ! এই গরমে তুমি কষ্ট পাচ্ছো তাই বলছিলাম আরকি, রুমে গিয়ে আরাম করো।”

আয়ান হাসলো। বউ এভাবে বললে কি আর তার সাথে রাগ কিংবা অভিমান করে থাকা যায়? হয়তো যায়। কিন্তু আয়ান পারলো না।
ফারিহার দিকে ঘুরে ফিসফিস করে বললো,

“ট্রাস্ট মি বউ! আমি তোমার কাছেই আসলেই ভীষণ শান্তি পাই।”

ফারিহা মৃদু হাসলো। আয়ান তার কপালে গভীর ভাবে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিলো। হঠাৎ করেই ওপাশ থেকে নিহা বেগমের কথার আয়োজন আসছে। উনি এদিকেই আসছে। আয়ান ফারিহা দু’জনই ভয় পেয়ে ছিটকে দূরে সরে গেলো। ভাগ্যিস মা কথা বলেতে ছিলো। না হয় কি একটা লজ্জায় পড়তে হতো। আয়ান কি ভেবে, কি করবে বুঝে উঠতে না পেরে বন্ধ চুলায় খুন্তী দিয়ে পরোটা উল্টা-পাল্টা করছে। এমন একটা ভাব! মনে হচ্ছে সে মনযোগ দিয়ে পরটা ভাজি করছে। আয়ান কে বন্ধ চুলায় পরোটা ভাজতে দেখে ফারিহা হঠাৎ করেই খিলখিল করে হেসে উঠলো।
এরিমধ্যে নিহা বেগম আসলো, ছেলেকে রান্না ঘরে দেখে ব্যস্ত হয়ে বলে উঠলো,

“সেকি কথা আয়ু বাবু! তুই মহিলাদের মতো রান্না ঘরে কি করছিস?
আহারে ছেলেটা ঘেমে-নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।”

ছেলের কপালের ঘাম মুছে দিতে দিতে বললো উনি। মায়ের এমন কথায় বিপওিতে পরে যায় আয়ান।
মাথা চুলকিয়ে আমতা আমতা করছে। পরক্ষণেই মা ফারিহার দিকে এক পলক চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,

“তুমি এখানে বসে দাঁত বের করে হিহি করছো। আর আমার ছেলেকে দিয়ে কাজ করাচ্ছো?”

ফারিহা হাসি মুখটা চুপসে যায়। কিছু বলতে নিয়েও থেমে যায়। অপেক্ষা করতে লাগলো আয়ানের প্রতিক্রিয়া দেখার জন্য। তান্মধ্যে আয়ান মাকে মৃদু কণ্ঠে বলবো,

“ওর সাথে এমন করে কথা বলছো কেনো আম্মু? তোমার ছেলে’কে দিয়ে কাজ করায়নি, সে অখ্যাতই আছে।”

বউয়ের হয়ে ছেলের এমন আচরণ পছন্দ হলো না তার। তেমন কিছু বলতেও পারছে না, দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। ছেলেকে তো হাত ছাড়া করা যাবে না। কয়দিন আর থাকবে ছেলে বাড়িতে। পরে দেখা যাবে কি করে থাকে এই মেয়ে এই বাড়িতে।

মা কথা ঘুরিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বললো, আসলে তোকে দিয়ে তো কখনো কাজ-কর্ম আমি করাইনি আয়ান। তাই তোর ঘামার্ত মুখখানা দেখে নিজেকে সামলাতে পারিনি। মাফ চাই বাপ। তোর বউরে কিছু কইতাম না আর। তুই পারলে আমার জন্য এক পাতা ব্যাথার ঔষধ এনে দিস৷ হাঁটুটা ভীষণ ব্যাথা করছে সকাল থেকে।”

শাশুড়ীর কথা শুনে মৃদু হেসে চট করে ফারিহা বলে উঠলো,

“কি আজব দুনিয়ায়! নিজের সন্তানের ঘামার্ত মুখখানা দেখলেই মায়ের বুক কাঁ’পে, কষ্ট লাগে। অথচ অন্যের সন্তান সারাদিন খেটে ম’র’লে’ও দিনশেষে শুনতে হয়, কিচ্ছু পারে না। এই মেয়ে কোনো কাজের না।”

মোক্ষম জায়গায় মোক্ষম জবাব শুনে মা কিচ্ছুটি বললো না। ভিতরে ভিতরে একরাশ ক্রোধ নিয়ে
হনহন করে ডাইনিং টেবিলে বসলো মা।
আয়ান কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেলো। একদিকে জন্মদাত্রী অন্য দিকে অর্ধাঙ্গিনী। এমন পরিস্থিতিতে তার কি করা উচিত? তার থেকে এখন বরং চুপ থাকাই শ্রয়। কথায় কথা বাড়বে। আয়ান ও আর একমুহূর্তও দাঁড়ালো না। চুপচাপ বাড়ির বাহিরে চলে গেলো। যা দেখে মনে মনে হাসলো নিহা বেগম। তার ছেলে কাজ করছে এটা সমস্যা নয় তার। তার সমস্যা হচ্ছে, বউকে কেন এতো সাহায্য করতে হবে? হিংসা হচ্ছে তার। বউকে এতো ভালোবাসার কি দরকার? বউ রাখতে হবে শাসনের উপর। তা না করে তার ছেলেটা কেমন বউয়ের আঁচল ধরেছে। কি আছে ওই মেয়ের মাঝে? রুপ দিয়ে নিশ্চয়ই তার ছেলেটার মাথাটা খেয়েছে। মুহূর্তেই ফারিহার উপর আরো একরাশ ক্রোধে মাথা চাপা দিলো তার। ক্রো’ধের উওাপে ঝলসে যাচ্ছে তার শরীর। সে ও দেখে নিবে, কি করে তার সংসারে সুখী হয় এই মেয়ে।
.

সকাল এগারোটা বেজে গিয়েছে ইতোমধ্যে। আয়ান সেই যে গেলো এখনো বাসায় ফেরেনি। মোবাইলটা ও বাসায় রেখে গিয়েছে। আয়ান আসছে না দেখে ফারিহা ও এখন খায়নি।
নিজের কাজ শেষ করে সব গুলো নাস্তা টেবিলে সাজিয়ে রেখেছে। এতোদিন নিজ হাতে শ্বাশুড়িকে বেড়ে খাওয়ালেও তার ব্যবহারে অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছে, আজ আর তাকে খেতে ডাকেনি। নিজেও খেলো না, রুমে গিয়ে আয়ানের জন্য অপেক্ষা করছে।
কিয়াৎক্ষণ পরেই ডাইনিং টেবিলে থেকে থালা-বাসনের ঠা’সঠা’স শব্দ পেয়ে রুম থেকে ছুটে আসে ফারিহা।
ডাইনিং টেবিলে নাস্তা খেতে বসেছে নিহা বেগম। সবগুলো খাবার মুখে দিয়ে ফেলে দিচ্ছে। তার মুখো ভঙ্গিমা এমন, মনে হচ্ছে কোনো অখাদ্য মুখে দিয়েছে।
সাথে বাটিতে তুলে রাখা খাবার গুলোও ছুঁড়ে ফেলছে আর বাজখাঁই কণ্ঠে বকছে,

“যার যা ইচ্ছে, তাই রান্না করে রাখে আজকাল। এগুলো কি মানুষ খেতে পারে? যতসব অ’খা’দ্য কু’খা’দ্য রান্না করে রাখে। বুড়ো হয়েছে তাও ঠিক ভাবে আজ অবধি রান্নাটা শেখেনি।”

“অতোটা ও অখাদ্য হয়নি রান্না। কাউকে পছন্দ না হলে তার সবকিছুই অপছন্দ।”পিছন থেকে স্বাভাবিক কণ্ঠে বললো ফারিহা।

ফুঁসে উঠলো নিহা বেগম। পুনরায় রাগ নিয়ে সবজির বাটিটা হাতে নিলো।
এতক্ষণ দূরে দাঁড়িয়ে ফারিহা দেখছিলো শ্বাশুড়ির কান্ড গুলো। যখনই দেখলো খাবার গুলো ফেলে দিচ্ছে, সে এগিয়ে আসলো ডাইনিং টেবিলের সামনে। সবজির বাটিটা শ্বাশুড়ির হাত থেকে নিয়ে পুনরায় বললো,

“এগুলো ফেলতে হবে না। এ-সব অখাদ্য আপনি না খেতে পারলে রেখে দিন আম্মা। বাকিদের খেতে অসুবিধা হবে না।”

ফারিহার উপর সকালের ক্রো’ধের হিসাব নিকাশ বাকি রয়ে গিয়েছে। যার জন্য এমন করছে নিহা বেগম। নিজের কাজে বাঁধা পেয়ে কটমট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো তিনি। নিজের জন্য নেওয়া খাবারের প্লেটা হাত দিয়ে ধা’ক্কা মা’র’লো। প্লেটটা গিয়ে পড়লো ফারিহার পায়ে।
মুহুর্তেই কাঁচের প্লেটটা নিচে পড়ে ভেঙে চূ’র্ণবিচূ’র্ণ হয়ে গেলো। ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো ফারিহা, ভা’ঙা এক টুকরো কাঁচ লেগে পাটাও কেটে গিয়েছে অনেকটা। ফারিহা পায়ে হাত দিয়ে ফ্লোরে বসে পড়লো। নিহা বেগম দেখেও না দেখার ভান করে নিজের রুমে চলে গেলো।
তান্মধ্য বাড়ির গেইটে থেকে গাড়ির শব্দ আসছে। ফারিহা ব্যথাতু নয়নে একপলক তাকালো সেদিকে। হঠাৎ করেই গাড়ির ভিতর থেকে নিজের ভাইদের হাস্যজ্জল মুখ দু’টো দেখা গেলো।

#চলবে…

#তুমি_রঙিন_প্রজাপতি

#writer_sumaiya_afrin_oishi

#পর্বঃ২৬

ভাই দু’টোর মায়াবী, হাসিমাখা মুখ দুটো দৃষ্টিতে পড়তেই ফারিহা মনোবল পেলো, মলিন ওষ্ঠে কিঞ্চিৎ হাসলো। তড়িঘড়ি করে চোখের জলটুকু আড়াল করে ফেললো, হাঁটুতে ভর দিয়ে কা’টা পা-টা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।মুহুর্তেই পুনরায় যন্ত্রণা ককিয়ে উঠলো, তবুও দাঁতে দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করছে। পা টেনে টেনে ব্যস্ত হাতে ডাইনিং টেবিলের ছড়ানো ছিটানো খাবার গুলো তুলে ফেললো।
সে চায় না, তার ভাইরা এসেই এমন অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির মুখোমুখি হোক। তার পারিবারিক সমস্যা না হয় গোপনই থাকুক।
ফারিহা টেবিল গুছিয়ে নিচে বসে একটা একটা করে ভা’ঙা কাঁচ গুলো তুলছে। এরিমধ্য দুই ভাই দুই হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে ভিতরে চলে এসেছে।
ভিতরে প্রবেশ করতে করতে ফাহাদ গলা উঁচু করে বোনকে ডাকতে লাগলো,

“টুকি…?”

অনেক দিন পরে ভাইয়ের মুখে আদুরে ডাক শুনে ফারিহা মুচকি হেসে উঠে দাঁড়ালো। ফাহাদ, মাহিম কাছে এগিয়ে আসলো। আসতে না আসতেই বোনের র’ক্তা’ক্ত কা’টা পা-টা দেখে ভাইদের হাসি মুখটা মলিন হয়ে গেলো, কপাল পড়লো চিন্তা ভাঁজ। দুই ভাই চিন্তিতো কণ্ঠে একসাথে বলে উঠলো,

“পা কিভাবে কাটলো টুকি?”

ফারিহা খানিকক্ষণ নিশ্চুপ রইলো। ফাহাদ হাতের ব্যাগ চেয়ারের উপর রেখে চঞ্চল পায়ে বোনের কাছে এগিয়ে আসলো। তা দেখে ফারিহা বিচলিত হয়ে নিষেধ দিয়ে বললো,

“ওখানে দাঁড়া ভাই। সাবধানে! নিচে কাঁচ ভা’ঙা।

ফাহাদ ফ্লোরের দিকে চাইলো, নিচে ছড়ানো ছিটানো ভা’ঙা কাঁচ গুলো এখনো রয়ে গিয়েছে। এতক্ষণ এটা খেয়াল করেনি তারা। ফাহাদ জিজ্ঞেস করলো,

“এগুলো কিসের কাঁচ টুকি? কিভাবে ভাঙলো?”

ফারিহা খুব গোপনে ভিতর থেকে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো, একটু আগের হওয়া সবকিছু এড়িয়ে গেলো। ঠোঁটে মিথ্যা হাসি ঝুলিয়ে বললো,

“হাত ফসকে প্লেট পড়ে গিয়েছে ভাই। যার ফলে পায়ে লেগে পা কে*টে গিয়েছে।”

“সাবধানে কাজ করতে পারিস না আপু? এতো তাড়াহুড়া করছিস কেনো? কা’ট’লি তো পা-টা। ” বিজ্ঞদের মতো মুখ করে বললো মাহিম।

ফারিহা বিপরীতে পুনরায় হাসলো। কিন্তু ফাহাদ নিশ্চুপ। বোনের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি বুলালো একবার। হাসির মাঝেও বোনের মুখটা বিষন্ন। তার ধাঁ’রা’লো ম’স্তি’স্ক বলছে, বোনের কিছু একটা তো হয়েছেই। কিন্তু এই মুহূর্ত সে কোনো প্রশ্ন করলো না।

পরক্ষণে দুই ভাই মিলে কাঁচ গুলো তুলে নিলো। ফাহাদ হাঁটু গেঁড়ে বসে বোনের পা-টা ছুঁয়ে দেখে বললো,

“ইশ কতখানি কে’টে গিয়েছে। র’ক্ত পড়ছে এখনো। এটা না বেঁধে, র’ক্তা’ক্ত পা-টা নিয়ে ও কাজ করছিস টুকি। নিজের প্রতি তোর এতো অবহেলা!”

বড় ভাই পা ছোঁয়াতে ফারিহা অস্বস্তিতে পড়ে যায়। নিজের পা ছাড়াতে ছাড়াতে বিচলিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

“আমি ঠিক আছি ভাই। সামান্য একটু লেগেছে।
তুই পা ছাড় প্লিজ!”

ফাহাদ বোনকে শাসনের সুরে মৃদু ধমক দিয়ে, চুপ থাকতে বললো। বাড়িতে কারো সাড়াশব্দ না পেয়ে জানতে চাইলো বাড়ির অন্যরা কোথায়?
তান্মধ্যে ফারিহার ননদ তনয়া আসলো। এতক্ষণ কোচিং এ ছিলো সে, স্ববে মাত্র ফিরলো। এসেই ফাহাদ’কে দেখে মনে মনে ভীষণ খুশী তনয়া। এক গাল হেসে তনয়া ফাহাদ’কে জিজ্ঞেস করলো,

“কেমন আছেন ভাইয়া? ”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?” খানিকটা গম্ভীর কণ্ঠেই বললো ফাহাদ।

তনয়া মুচকি হেসে বললো, আমিও ভালো আছি।

ফাহাদ ততক্ষণাৎ তনয়ার কাছে ফাস্ট বক্স চাই। তনয়া বিনাবাক্যে চলে গেলো।
ফাহাদ বোনকে ধরে একটা চেয়ারে বসিয়ে দিলো। তান্মধ্যে তনয়া বক্স নিয়ে হাজির। ভাবির পা কিভাবে কাটলো জানতে চাইলো। ফারিহা কিচ্ছুটি বলার আগেই মাহিম বললো, প্লেট পড়ে কে*টে গিয়েছে।
কেউ আর কথা বাড়ালো না।
ফাহাদ চটজলদি কা’টা জায়গাটা পরিষ্কার করে খুউব যত্ন করে বেঁধে দিলো।
.
মিনিট পনেরো পেরোতেই তনয়া হালকা নাস্তা দিলো দুই ভাইকে। কিন্তু কেউ কিচ্ছুটি খেলো না। ফারিহা বসে আছে ভাইদের সাথে, সাথে তনয়া ও বসেছে। যদিও ফারিহা কয়েকবার উঠে রান্না ঘরে যেতে চাইলো। কিন্তু ফাহাদের ধমক খেয়ে চুপ রইলো।
সাধারণত কথা-বার্তার মধ্যে দিয়ে আরো কিছু সময় অতিবাহিত হলো। ফাহাদ অপেক্ষা করছে সবার সাথে দেখা করার জন্য। তবুও এখন অবধি তনয়া ছাড়া বাসার কাউকে দেখছে না তারা।
নিহা বেগম ঘুমের ভান করে রুমে ঘাপটি মেরে সুয়ে আছে। তাই কেউ তাকে ডাকলো না।
ফাহাদ এবার উঠে দাঁড়ালো। হাতে আর বেশিক্ষণ বসার সময় নেই তার। এবার দোকানে যেতে হবে। ফাহাদ আসার পর সেই থেকেই বাবার সাথে দোকান দেখাশোনা করছে। সাথে সকাল বিকেল কিছু টিউশনিও জুগিয়ে।
মাহিম ও ফাহাদ নিহা বেগমের রুমের দরজার কাছে গিয়ে একবার ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বিদায় নিলো। এরিমধ্যে কয়েকবার তনয়া, ফারিহা অন্ততো দুপুরের খাবারটা খেয়ে যাবার জন্য জোড় করেছে। কিন্তু ফাহাদ নিজ সিদ্ধান্তে অটল। বাড়ির লোকজন, পরিবেশ তার পছন্দ হচ্ছে না। সেখানে থাকার তো কোনো মানেই হয় না!
ফারিহা হাল ছেড়ে দিয়ে ভাইদের সাথে গেইট পর্যন্ত এসেছে, সাথে তনয়া ও আছে।
ফাহাদ বোনকে একটু আড়ালে ডাকলো, বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে চাপা স্বরে জিজ্ঞেস করলো,

“এখানে তুই ভালো আছিস টুকি? কোনো সমস্যা হয়নি তো? তোকে এতো বিষন্ন লাগছে কেনো বোন?”

ভাইয়ের এমন কথায় খানিকটা ঘাবড়ে যায় ফারিহা। ভাইয়ের স্নেহেতু হাতের স্পর্শ, তার কোমল মাখা আদুরে কথা শুনে এতক্ষণের চাপা কষ্ট গুলো যেন দলা পাকিয়ে বাহিরে আসতে চাইছে। তার কেনো জানি কান্না ভীষণ পাচ্ছে।কিন্তু বহুকষ্টে নিজেকে সামলে, ফারিহা দিব্যি হাসলো।
ভালোবেসে আয়ান কে নিজ ইচ্ছে বিয়ে করেছে সে।
শ্বশুর -শ্বাশুড়ি যেমনই হোক না কেনো, তার প্রিয় পুরুষটিতো তাকে সাধ্যের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। দিন শেষ এতটুকুই তো মহা প্রাপ্তি।
এই মানুষটার অসম্মান কি করে করবে সে? ফারিহা আগের ন্যায় সবকিছু এড়িয়ে গেলো।
ভাইকে চমৎকার এক হাসি উপহার দিয়ে শুধালো,

“আমার কিচ্ছুটি হয়নি ভাই। চিন্তা করিস না। আমি এখানে ভীষণ ভালো আছি।”

“খুব বড় হয়ে গেছিস টুকি? ভাইয়ের কাছেও কথা লুকানো শিখে গেছিস।”

ফারিহা নিশ্চুপ। ফাহাদ আর এ বিষয়ে কথা বাড়ালো না। সে জানে, বোনকে এখন আর যতই জিজ্ঞেস করা হোক কিচ্ছুটি বলবে না। শুধু বললো, “সবার সাথে মিলেমিশে থাকিস।”

অতঃপর পুনরায় বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় নিলো দুই ভাই।
.
.
বেলা গড়িয়ে প্রায় দুপুর একটা বেজেছে। দোকানে বসে আছে ফাহাদ ও কর্মচারী ছেলেটা। বাবা ও মাহিম বাড়িতে গিয়েছে ঘন্টা খানিক আগে। দোকানে এখনো গুটি কয়েক কাস্টমার আসে যায়। ফাহাদে’র কেনো জানি খারাপ লাগছে আজ। মূলত বোনের বিষন্ন মুখটার জন্যই এই খারাপ লাগা। সে কিচ্ছুতে মন বসাতে পারছে না। তান্মধ্যে মুঠোফোনটা বেজে উঠলো। স্কিনে জ্বলজ্বল করছে কৃষ্ণকলি নামটা। ফাহাদ মন খারাপের মধ্যে ও মুচকি হাসলো। এই কয়দিনে তাদের সম্পর্কটা আরো উন্নতি হয়েছে।
ফাহাদ একটু দ’ম নিলো , কল কে’টে ব্যাক করলো। ওপাশে চাঁদ সাথে সাথে রিসিভ করে ব্যস্ত কণ্ঠে বললো,

“হ্যালো ফাহাদ।”

ফাহাদ বিপরীতে কিঞ্চিৎ গম্ভীরতা নিয়েই মৃদু কণ্ঠে বললো, বলো চাঁদ।”

“কি হয়েছে তোমার? কতবার কল দিলাম রিসভ করলে না যে?”

ফাহাদ পাল্টা প্রশ্ন করে জানতে চাইলো, “কল দিয়েছিলে?”

“ও মা তুমি দেখোনি।” অবাক হয়ে বললো চাঁদ।

“স্যরি চাঁদ পাখি! শুনতে পাইনি। মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো।”

চাঁদের এতক্ষণের দুশ্চিন্তা দূর হলো। দু’জন আরো টুকটাক কথা বললো। চাঁদনী ফারিহা আপার ভালো মন্দ খবর নিলো। সবশেষে ফাহাদ বাসায় আসছি বলে ফোনকল কেটে দিলো।
চাঁদ সাথে সাথে একটা টেক্সট দিয়ে বললো, “সাবধানে এসো!”
ছোট্ট এই টেক্সটায় অদ্ভুত এক ভালোবাসা মিশানো ছিলো যেন। ফাহাদ পরপর কয়েকবার হাসলো। পরপরই প্রিয় নাম্বার থেকে আবারও এক টেক্সট আসলো।

“পরজন্মে আমি না মেঘ হবো, তুমি হবে আকাশ। হঠাৎ যেমন রোঁদ ঝলমলে আকাশে মেঘ উড়ে এসে দখল করে নেয় আকাশের বুক। আমিও না হয় তেমন করে মেঘ হয়ে ছড়িয়ে যাবো তোমাতে। ভালোবাসি প্রিয় পুরুষ!”

ফাহাদে’র ঠোঁটের হাসিটা এবার দীর্ঘ হলো। হাসি-হাসি মুখেই মোবাইলটার দিকে চোখ রেখে বলে উঠলো ছেলেটা, পা’গ’লী!
তার এতক্ষণের মনের বিষন্ন ভাব’টা আংশিক কে’টে গিয়েছে। মেয়েটার এই ছোট ছোট কেয়ার গুলো তার ভীষণ ভালো লাগে।
তান্মধ্যে দোকানের কর্মচারী’ ছেলেটা ফাহাদ’কে একা একা হাসতে দেখে চ’ট করে প্রশ্ন করলো,

“কি’রে ফাহাদ ভাই। একা একা হাসতাছেন ক্যান?”

ফাহাদ চমকালো! পরক্ষণে নিজেকে সামলে নিলো। কয়েক সেকেন্ড সময় নিয়ে স্বভাবগত গম্ভীর মুখে ছোট্ট করে বললো, “তেমন কিছু নয়। এমনিতেই। ”

ছেলেটা অবিশ্বাস্য চোখে একবার ফাহাদ’কে আগাগোড়া পরখ করে নিলো। তার ছোট্ট মস্তি’ষ্ক ভাবাচ্ছে, এমনিতে কেউ হাসে নাকি? তাও আবার উনার মতো গম্ভীর লোক। নিশ্চয়ই প্রেম, প্রেম কাহিনী চলছে। কিন্তু ফাহাদ’কে আর প্রশ্ন করার সাহস হলো না।
ফাহাদও আর দাঁড়ালো না৷ ছেলেটাকে সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে বের হলো।

দুপুর টাইম চলছে, যার ফলে গাড়ী পাওয়া মুশকিল। ফাহাদ গাড়ীর ভরসা না চঞ্চল পায়ে করে হাঁটা শুরু করে দিলো।
বাজার পেরিয়ে গলির মোড়ে “সদর হাসপাতালের” কাছে আসতেই তার চঞ্চল পা জোড়া আকস্মিক ভাবে থেমে যায়। বুকের ভিতর ড্রিম ড্রিম কম্পন সৃষ্টি হচ্ছে। কতগুলো দিন পর এক কালের প্রিয় মুখটা দেখে, মুখ থেকে আপনা-আপনি বেরিয়ে আসলো একটি নাম, ইশা মনি..!”
হ্যাঁ ওইতো, ইশা মনি। তার চোখের সামনে, হাসপাতালের বারান্দায়। কিন্তু মেয়েটাকে অস্বাভাবিক লাগছে, মাথায় গজ কাপড় দিয়ে বাঁধা। তাকে দু’পাশে দিয়ে বোরকা পরিহিত দুই মহিলা ধরে সামনের দিকে এগিয়ে আসছ। এক কালের সব থেকে প্রিয় নারী’কে এতগুলো বছর পরে এই করুণ পরিস্থিতি দেখে ছেলেটার সচল মস্তিষ্ক থেমে গেলো। তার কেনো জানি খুব করে জানতে ইচ্ছে করে, “কি হয়েছে মেয়েটির?”
পরমুহূর্তেই নিজের ভাবনার উপর রাগ হলো তার। স্বজ্ঞানে ফিরতেই, দৃষ্টি সরিয়ে নিলো ছেলেটা। ক্ষণে ক্ষণে মনে পড়ছে মানুষটার করা মিথ্যা অভিনয় গুলো। যে অভিনয়ের উওাপে আজ ও পু’ড়’ছে তার হৃদয়। এই মুখ সে আর দেখবার চায় না। না ঘুনাক্ষরে ও না! সে কাউকে চিনে না। ওখানে কেউ নেই তার। মনকে কঠিন ভাবে শাসিয়ে দ্রুত চোখের আড়ালে চলে গেলো ফাহাদ।
দীর্ঘ শ্বাস, চাপা কষ্টে ভরে উঠলো ছেলেটার বুক। তবুও যাওয়ার আগে আড় চোখে একবার চেয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠলো,

অ’ভিশাপ তো দিতে পারবো না, দিতে চাইও না।তবে এইটুকুই শুধু চাইবো, তোমার মতই একজন যেন তোমার জীবনে আসে।

এই ধরো,কথা দিয়ে কথা না রাখুক, ভালোবেসে আগলে না রাখুক, ছেড়ে না যাওয়ার শপথ নিয়েও ছেড়ে চলে যাক, স্বপ্ন দেখিয়ে সে স্বপ্ন ভে’ঙেচুরে এ’কাকার করে দিক, গল্প করতে করতে ভোর হয়ে যাওয়া রাত গুলো দী’র্ঘ’শ্বা’সে ভরে উঠুক, তবেই না তুমি বুঝবে।
তবেই না তুমি বুঝবে, তুমি ঠিক কেমন একটা মানুষ। আদোও মানুষ হয়েছ কি না স’ন্দেহ আছে, মানব জন্ম পেলেই তো আর মানুষ হওয়া যায় না।
মানুষ হতে গেলে তো মনুষ্যত্ব থাকতে হয়, থাকতে সুন্দর একটা হৃদয়, তোমার তো সবটাই ছিলো মিথ্যে অভিনয়ের আশ্রয়।
একতরফা অভিনয় হলেও এক তরফা তো ভালোবাসাই ছিলো, তাই তো তুমি নির্দ্বিধায় এতোটা পো’ড়াতে পেরেছ।
অ’ভিযোগ নেই কোনো অভিশাপও দিবো না, জীবনটা ভরে উঠুক তোমার, তোমার মতই পেয়ে একজনা।
“অ’ভিশাপ দিতে পারবো না”
অপ্রিয় তুমি! আমি চাই তুমিও একজন ভুল মানুষের প্রেমে পরো।”

অতঃপর মুখ ফিরিয়ে নিলো ছেলেটা। আজ আর কোনো মায়া নেই বে’ই’মা’নদের জন্য, নেই কোনো পিছুটান।ফোঁস করে এক শ্বাঃস ছাড়লো ফাহাদ। আর এক মুহূর্ত সময় নষ্ট না করে, পুনরায় চঞ্চল পায়ে হাঁটা দিলো নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।
.
.
বাড়িতে পা রাখতেই মায়ের সাথে দেখা হলো ফাহাদে’র। মা ছেলে’র কাছে এগিয়ে আসলো। ছেলের কাছে ব্যস্ত হয়ে জানতে চাইলো,

“তার মেয়েটা কেমন আছে?”

ফাহাদ কিছুটা চে”পে গিয়ে মা’কে আশ্বাস দিয়ে বললো, তার বোন ভালো আছে।
মা পরপর মেয়ের বিষয় এটা সেটা জানতে চাইলো। মেয়েটার জন্য ভিতরে ভিতরে তার হৃদয়টা পু’ড়’ছে। এর আগে মেয়েদের ছাড়া কোথাও একটা দিন থাকেনি সে। এখন মেয়ে চোখের আড়ালে থাকছে। মায়ের অচেতন মন, কত কিছুই না জানার আগ্রহ প্রকাশ করছে।
ফাহাদ বুঝলো সেসব, মায়ের সকল প্রশ্ন এক এক করে ঠান্ডা মাথায় জবাব দিলো। অতঃপর নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে কেউ নেই আজ। এতদিন এসেই চাঁদনী’কে ডাকতো ফাহাদ। কিন্তু আজ আর চাঁদকে ডাকলো না। এই মুহূর্তে তার একটু একা থাকা ভীষণ প্রয়োজন।
রুমে এসেই ঘামার্ত শার্ট খুলে নিলো ফাহাদ। ফ্যানটা ফুল পাওয়ারে ছেড়ে, চোখ বন্ধ করে বিছনায় শরীরটা এলিয়ে দিলো। না এতোও শান্তি লাগছে না। মাথাটা বেশ ব্যথা করছে। উঠে বসলো ফাহাদ। তাওয়াল নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো। মিনিট পাঁচেক সময়ের মধ্যে গোসলটা করে নিলো। এরপর চুপিচুপি সিগারেটের প্যাকেটটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো।
.
সময় বদলায় সম্পর্কের ডাক নাম বদলায়।চেনা মানুষ অচেনা হয়,পরিচিত মুখ অপরিচিত হয়।শূন্যস্থান পুরন হয়।না পাওয়ার আক্ষেপ মুইছে যায় নতুন মানুষকে পাওয়া পূন্যতায়।নতুন একটা মানুষ হয় নিজের একটা সংসার হয়।সবাইকে নিয়ে দিব্যি চলে সেই সংসার।
তবুও কোনো এক মন খারাপের দিনে বহুবছর আগে হারিয়ে যাওয়া মানুষটার কথা হুট কইরা মনে পইরা যায়। জানতে ইচ্ছে করে মানুষ টা কেমন আছে?
তখন চোখে থেকে দু-ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে শেষ বিকেলের ধূসর রোধের আভায় তা মিলিয়ে যায়।আমরা আবার ব্যস্ত হয়ে পড়ি জীবনের তাগিদে তবুও হুটহাট মনে পড়ে। যোগাযোগহীনতায় আফসোসে ভিতরে ভীষণ পু’ড়ে।কিছু মানুষ না থাইকাও বোধহয় থাইকা যায় কোথাও না কোথাও।
এই যে বারান্দায় গিয়ে একটার পর একটা সিগারেট টানছে ফাহাদ। এতেও যেন কিচ্ছুটি হচ্ছে না। অশান্ত মনটা শান্তি খুঁজে পাচ্ছে না কোথাও। না চাইতেও অদ্ভুত এক টানে বারবার পুরনো ক্ষ’তটা কোথাও যেন রয়েই যায়। নিজেকে শত সামলানোর চেষ্টা করার পড়েও, হুটহাট মনে পড়ে সেই পুরনো প্রথম অনুভূতিকে।
ফাহাদ বিরতিহীন ভাবে হাতের জ্ব’লন্ত সিগারেটেটা লম্বা কয়েক টান দিয়ে নাক-মুখ থেকে গলগল করে ধোঁয়া ছাড়লো। আকাশের দিকে মুখ করে চোখ বন্ধ করে নিলো।
তান্মধে ফাহাদ’কে খুঁজতে খুঁজতে এখানে চলে আসলো চাঁদ। এতক্ষণে সে রান্না ঘরে ব্যস্ত ছিলো। হাতের কাজ শেষ করে সবেই ফিরেছে। ফাহাদ’কে বারান্দায় দেখে মুচকি হেসে পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলো,

“কখন আসলে তুমি? আজ ডাকলে না যে।”

চাঁদের কণ্ঠ শুনে চোখ খুলে তাকালো ফাহাদ। পিছনে ঘুরে এক পলক মেয়েটার দিকে তাকিয়ে মৃদু কণ্ঠে বললো,

“এইতো একটু আগেই। তুমি কাজে ব্যস্ত ছিলে তাই ডাকিকি।”

চাঁদনী গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো ফাহাদে’র দিকে। ততক্ষণৎ সিগারেটের গন্ধ নাকে আসতেই গা- ঘুলিয়ে উঠলো তার। এই সিগারেট একদম পছন্দ নয় তার। এর গন্ধও সহ্য করতে পারে না চাঁদ।
চাঁদ আর এগালো না, কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে বিরক্ত কন্ঠে বলে উঠলো,

“তুমি সিগারেট খাচ্ছো?”

ফাহাদ শুনেও না শুনার ভান করে পুনরায় লম্বা এক টান দিলো। চাঁদ যা দেখে চেঁচিয়ে বলে উঠলো,

“কি হলো?”

“কি হবে?”

“সিগারেট খাচ্ছো আবারো?”

“না গা*ঞ্জা খাচ্ছি। খাবে তুমি?”

“কিহ স্যতি?” চোখ বড়বড় করে, কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো চাঁদ। ফাহাদ এবার কিঞ্চিৎ বিরক্ত মাখা কণ্ঠে বলে উঠলো,

“বোকা তুমি? দেখতেই তো পারছো সিগারেট খাচ্ছি।”

“তাও খাচ্ছো কেন? আমি সিগারেট পছন্দ করি না।”

“তো?”

“তো আবার কি? এখন থেকে আর খাবে না সিগারেট। প্লিজ ফেলে দেও! ইয়াক! কি বি’শ্রী গ’ন্ধ! এগুলো কি করে খাও তুমি?”

“তোমার কাছে বি”শ্রী ঠেকলেও আমার প্রিয় এগুলো৷ একবার খেয়ে দেখো তোমার ও ভালো লাগব চাঁদ ? হ্যাব্বি ট্যাশট!”হেলদোল ভাবে বললো ফাহাদ।
ফাহাদে’র এমন বিরক্তিকর কথায় এবার বেশ রেগে গেলো চাঁদ। কিঞ্চিৎ রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলে উঠলো,

“তুমি আমার সাথে মজা করছো?”

“তুমি কি আমার বিয়াইন লাগো?”

“ধ্যাত বিরক্তিকর।” বলে মুখ গোমড়া করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো চাঁদ।
ফাহাদ নিশ্চুপ। সে এখনো হাতের সিগারেট ফুঁকছে। চাঁদ অন্য দিকে ফিরেই পুনরায় আবার বললো,

“স্যতি আমি সিগারেট পছন্দ করি না ফাহাদ।”

ফাহাদ তাকালো চাঁদের দিকে। কয়েক সেকেন্ড চুপ থেকে, এবার বেশ সিরিয়াস কণ্ঠে বললো ফাহাদ,
“আমিও এদের ছাড়তে পারছি না চাঁদ। কি করে ছাড়ি বলো? আমার শত কষ্ট, নির্ঘুম রাতের সঙ্গীতো এরাই ছিলো।”

চাঁদনী ও মিনিট সময় নিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো, “আমার জন্য না হয় ছাড়ুন।”

“তোমার জন্য এদের কেনো ছাড়বো?”

“কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আচ্ছা একটা কথা বলোতো, আমাকে তুমি একটুও ভালোবাসো না? ভালোবাসার মানুষের জন্য এতটুকু পরিবর্তন করতে পারবে না তুমি?”

“নিজেকে পরিবর্তন করে কেনো অন্য কাউকে ভালোবাসতে হবে চাঁদ? সবার আগে আমি নিজেকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার এই ছন্নছাড়া আমিটা কে আমি ভীষণ ভালোবাসি। এই যে আমার এলোমেলো চুল, সিগারেটে পো”ড় কালচে ঠোঁট, চোখের নিচে কালো দাগ। এগুলোও আমার ভাল্লাগে।
আমার নিজেরে ভীষণ ভাল্লাগে!নিজেকে দেখতে সুন্দর লাগে, নিজেকে শুনতে মধুর লাগে, নিজেকে ভাবতেও প্রশান্তি লাগে।আমি আসলে গোটা মানুষটাই সুন্দর !
আমি সুন্দর করে সবাইকে নিয়ে ভাবি, নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য নিয়ে ভাবি, আমি রঙিন করে স্বপ্ন দেখি, স্বপ্ন ভাঙার ভ’য়ে ডানাছাটা পাখির মতো যে জাপটে ম’রি সেও সুন্দর !
আমি সুন্দর করে ভালোবাসি। সাধ্যের মধ্যে খুব নিঁখুত করে ভালোবাসি, আমি যত্ন করি!
আমি বড্ড অভিমানভরা, এককালের অতি নগণ্য সব নিয়ে ভীষণ অভিমান জমে মেঘ হয়ে আছি। মানুষ অভিমানে ভুল করে, ভুল করে আবার ভুল করে, তারপর আবার ভুল…..
একবার ভুল করতে শুরু করলে ভুলের আর কোনো সীমা থাকে না!
আমার ভুলগুলোও সীমা ছাড়িয়ে গেছে….
আমি ভুলগুলো রংতুলিতে নবোরূপ দিতে ব্যস্ত, আমি চাই আমার ভুলগুলোও সুন্দর হোক!
সব ভুল মন্দ নয় যদি প্রমাণ করা যায় এই আর কী!
আমার চিন্তা সুন্দর, আমার ত্যাগ, আমার চাহিদা সুন্দর। আমার মেনে নেওয়া, মানিয়ে নেওয়া; মুখ বুঝে বহুকিছু সহ্য করা, বোবা চিৎকারে পাঁজর ভে’ঙে আসা অনুভূতি সুন্দর।
আমার শালীনতা, আমার সীমার মাঝে অসীম আধুনিকতা, আমার সমোঝোতা সুন্দর ! আমার মধ্যবিত্ত ভালোবাসা, মধ্যবিত্ত পাওনা ও প্রাপ্তি, আমার মধ্যবিত্ত স্বাধীনতা সব সুন্দর, অসহ্য সুন্দর ! সর্বশেষে আমার এই আমিটকে নিয়ে আমি ভীষণ সন্তুষ্ট। যে আমাকে ভালোবাসবে, সে আমার এই পুরো আমিটাকেই ভালোবাসবে। অন্যের ভালোবাসার জন্য আমি কেন নিজেকে পরিবর্তন করবো?”

থামলো ফাহাদ। চাঁদনী এবার নিশ্চুপ। তার মুখটা চুপসে এতটুকু হয়ে গিয়েছে। ফাহাদ অহেতুক খানিকটা হাসলো। পুনরায় চাঁদ’কে বললো,

“তুমি ভিতরে যা-ও চাঁদ। প্লিজ আমাকে একটু একা থাকতে দেও।”

কথা শেষ করেই চাঁদনীর থেকে আরো কিছুটা সরে গেলি ফাহাদ, নতুন করে আরো একটা সিগারেট ধরালো সে। চাঁদনীর এবার সহ্যের সীমা অতিক্রম হয়ে গেলো। সেও চট করে আস্তে, আস্তে ফাহাদে’র পিছনে দাঁড়িয়ে ছোঁ মেরে ফাহাদে’র মুখের সিগারেটের ফেলে দিলো।
ফাহাদ হিতাহিতজ্ঞান শূন্য হয়ে কষে এক থাপ্পড় দিয়ে বসলো, চাঁদনী’র নরম গালে।

-চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে