#তুমি_নামক_সপ্তর্ষি_মন্ডলের_প্রেমে💖
#দ্বিতীয়_খন্ড [ কার্টেসিসহও কপি করা নিষেধ ]
২+৩.( Is she really dead )
‘ রাতের খাবার খান খাইয়া লও…. এখানে তুমি না খাইলে কারোর যাবে আসবে না তাই অন্যের উপর জিদ দেখিয়ে ভুখা পেটে থেকো না।নাও খেয়ে নাও…’ এক ভদ্র মহিলা তাহরীমকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলো বললেন তারপর তাহরীমের দিকে দুটো শুকনো রুটি আর এক পাশে ভাজি দিয়ে একটা থালা এগিয়ে দিলেন।
তাহরীমের কাছে মহিলার ব্যবহার ভালো লাগলো তাই ঔ ভাবলো না খেয়ে থেকে কি হবে।সেই তো ওকেই কষ্ট পেতে হবে আর কেউ তো ওর কষ্টে কষ্ট পাবে না একমাত্র ওর ভালোবাসার মানুষ ছাড়া যে এখন ওর খুব কাছে থেকেও নেই।তাই মহিলার দিকে তাকিয়ে আলতো হেসে থালা টা নিয়ে নিল।মহিলা বেরিয়ে গেলে তাহরীম খাওয়ার জন্য রুটিতে হাত দিল কিন্তু একটা রুটি শেষ করে আরেকটা রুটির ভাঁজ খুলতেই ভাজের মাঝ থেকে ছোটো একটা কাগজ বেরিয়ে এলো। তাহরীম কাগজটা খুলে দেখল সেখানে কিছু একটা লেখা আছে খুবই ছোট করে তবে ইংলিশে লেখা।লেখার সারমর্ম এই যে…
‘ একটু পরে সবার খাওয়া দাওয়া শেষ হলে জরিনা খালা( যে তাহরীমকে খাবার দিয়েছিল ) আপনাকে বের হতে সাহায্য করবে।জরিনা খালা আপনাকে কারাগারের দরজা খুলে দিলে আপনি চলে আসবেন।আর বাকি কেউ দেখলো কিনা সেটা নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।তার ব্যবস্থা আমি করে ফেলবো। ‘
লেখাগুলো পড়ে তাহরীমের ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠল।তাহলে ওর এখান থেকে পালানোর সব ব্যবস্থা সে করে ফেলেছে।এখন অপরাহ্ন ভোজের বিরতি চলছে।সকলেই খাওয়ায় ব্যস্ত তাই তাহরীমও আর সাত পাঁচ না ভেবে খাওয়ায় মনযোগ দিলো।অনেক খিদে পেয়েছিল।সেই কাল থেকে না খেয়ে আছে।কখনো খিদা কি তার অর্থ বুঝত না তাহরীম যদি না এক রাত জেলে কাটাতে হতো।কাল রাতে এক প্রকার জেদ করেই খাবার মুখে তুলে নী তাহরীম।
এইদিকে জরিনা খালাকে আঁধারে এক নারী অবয়ব কারোর ফোনে বলছে,
জরিনা: এবার কি আপা আপনার প্লানমত কাজ করবো?
নারী অবয়ব জরিনার কথা শুনে বললো ‘ হ্যাঁ…আমি যা যা বলে দিয়েছি তাই তাই করবে।কাজ ঠিক মত করতে পারলে টাকা পাবে আর হ্যাঁ হ্যাঁ সব প্রমাণ ক্লিয়ার করে দিবে যেন কেউ তোমার উপর সন্দেহ করতে না পারে। রিমেম্বার দেট ধরা পড়লে কিন্তু বিপদ তোমারই,আমার কিছু হবে না তাই বি কেয়ারফুল। ‘
জরিনা: আচ্ছা আপা তাহলে আমি এখন রাখি।
নারী অবয়ব আচ্ছা বলে ফোন কেটে দিলো তারপর ঘর কাপিয়ে অট্টহাসি হেসে বললো ‘ তোমার অপরাধের পাল্লা ভারী হয়ে গেছে মিস্টার আনসারি।আর যে অপরাধ করে তাকে তো শাস্তি পেতেই হবে।খুব শীঘ্রই তুমি তোমার সব অপরাধের শাস্তি পাবে আর তুমি আমার পায়ে পড়বে যেন তোমাকে ক্ষমা করে দেই কিন্তু আপসোস আমি তোমায় ক্ষমা করবো না কারণ তুমি আমার মাকে শান্তি দাওনি।আমার কাছ থেকে আমার মাকে কেড়ে নিয়েছিলে না তুমি? তোমার কাছ থেকেও আমি সব কেড়ে নিবো। ‘
একে একে সকলেই যে যার যার খাবার খেয়ে নিল।থানা অফিসার তার বাড়ী থেকে আনা খাবার খেলেন।খাবার খেয়ে যে যার যার মত কাজে লেগে পড়লো।সব আয়ারা আবার সবজি কাটা নিয়ে বসলো কারণ রাতের খাবারের প্রস্তুতি নিতে হবে।জরিনা খালা সবজি কাটতে কাটতে গল্প করতে লাগলেন অন্য আয়াদের সঙ্গে।
অফিসার তার বউয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলছে।ওই দুষ্টু মিষ্টি ঝগড়া।আবার টোনাটুনির সংসারও বলা চলে।আসলে নতুন নতুন বিয়ে কিনা তাই মনটা সারাদিন বউয়ের কাছেই পরে থাকে।হঠাৎ কোথা থেকে একটা উড়ন্ত গোল ধরনের জিনিস এসে থানার ঘরটার মাঝে পড়লো।জিনিসটা অফিসারও খেয়াল করলেন।উনি কনস্টেবল রফিক মিয়াকে বললেন,
অফিসার: কনস্টেবল রফিক যান তো গিয়ে দেখুন জিনিসটা কি…
আঁধারে এক নারী অবয়ব হাতে দুটো অল্প বয়স্ক ছেলে মেয়ের ছবি নিয়ে দাড়িয়ে আছে।ছবির মানুষ দুটির মুখের উপর সামান্য হাত বুলিয়ে নারী অবয়বটি বললো ‘ মা তোমাকে শান্তি দিতে পারিনি কিন্তু তোমার অপরাধীর শাস্তি দিবো।মিষ্টার আনসারী কে যে তার অপরাধের শাস্তি পেতে হবে।উনার শাস্তির কাউন্ট ডাউন এখন থেকেই শুরু। ওয়ান…. টু… থ্রী…. বুম… বলেই নারী অবয়বটি আবারও অট্টহাসি হেসে উঠলো।
জিনিসটার ভিতর থেকে প্রচুর পরিমাণে ধোয়া বের হতে লাগলো।সেকেন্ডের মাথায় পুরো থানা ধোঁয়ায় ভরে গেলো।ধোয়ার কারণে কিছুই দেখা যাচ্ছেনা। সব কনস্টেবলরা ছুটাছুটি শুরু করলো।অফিসার অন্ধকারের মাঝে কিছু দেখতে না পেলেও উনার বুঝতে বাকি রইলো না যে এই জিনিসটা থানায় ফেলার আসল উদ্দেশ্য কি।উনি চিৎকার করে সব কনস্টেবলদের বললেন,
অফিসার: এই সবাই সব সেলের কাছে দাড়ান।এই ধোয়া এখানে তৈরি করা হয়েছে যাতে এর সুযোগ নিয়ে অপরাধী পালিয়ে যেতে পারে।আপনারা সব সেলের কাছে গিয়ে দাড়ান।
অফিসার এই ঘটনার কারণ ঠিকই ধরতে পারলেন কিন্তু ঘটনায় আসল উদ্দেশ্য ঘটে যাওয়া থেকে আটকাতে পারলেন না। আস্তে আস্তে ধোয়া কমতে লাগলো।এক সময় পুরো থানা ধোঁয়া শূন্য হয়ে আগের অবস্থায় ফিরে এলো।অফিসার কনস্টেবল রফিক কে অর্ডার করলেন,
অফিসার: রফিক মিয়া যান তো গিয়ে দেখে আসুন সব অপরাধী ওদের সেলে আছে কিনা…
রফিক মিয়া অফিসারের কথা মত ‘ আচ্ছা সাব ‘ বলে সেলের দিকে এগিয়ে গেলেন।কিছুক্ষণ পর রফিক মিয়ার আত্মচিৎকার ভেসে এলো সকলের কানে।থানা অফিসার দৌড়ে গেলে সেই চিৎকার কে অনুসরণ করে।সেখানে গিয়ে দেখলেন কাল রাতে ডক্টর তাহরীম মেহমাদ নামক যেই অপরাধীকে ধরে আনা হয়েছিল সেই অপরাধীর সেল খালি আর তার দরজা খোলা তারমানে অপরাধী পালিয়েছে।
‘ এতগুলো কনস্টেবল থাকতেও অপরাধী কি করে পালাতে পারে? আপনারা কি কেউ টের পেলেন না ডক্টর তাহরীম মেহমাদ পালানোর সময়? মন কোথায় ছিল আপনাদের? এই কারণে আপনাদের এত টাকা দিয়ে হায়ার করা হয়েছে? কী ট্রেনিং নিয়ে এসেছেন আপনারা এই চাকরি তে? আমি আপনাদের সাবধান করিনি যে সবাই যার যার সেলে গিয়ে পাহারা দিন,অপরাধী পালাতে পারে? তাহলে আপনারা আমার কথা কেন গুরুত্ব দিলেন না। ‘ রাগান্বিত হয়ে সব কনস্টেবল এবং অন্যন্য অফিসারদের উদ্দেশ্যে বললেন থানা অফিসার।
সকলে এক লাইনে সারি বদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে।যদি অফিসারের কথা গুরুত্ব দিত তাহলে আজ হয়তো অপরাধী পালাতে পারতো না কিন্তু তাদের কি আর জানা ছিল এই ধোঁয়ার সুযোগ নিয়ে অপরাধী পালিয়ে যাবে।অফিসার এবার সবার উদ্দেশ্যে আবার বললেন,
অফিসার: এবার আমি উপরের মহল আর মিস্টার আনসারী কে কি উত্তর দিবো? এটা বলবো যে একটা সামান্য ডাক্তার কে আটকে রাখতে পারিনি? আমরা কি এতটাই ব্যর্থ? ওয়েল ভুল যখন হয়েছে তখন জবাব তো দিতেই হবে।
অতঃপর অফিসার প্রথমে উপরের মহলের সবার কাছে খবরটা জানালেন।উনার দায়িত্বহীনতার জন্য উনাকে অবশ্য অনেক কথা শুনে হয়েছে কারণ থানার হেড অফিসার তো উনিই তাই কেউ ভুল করলে তার জবাবদিহি উনাকেই করতে হবে।অতঃপর অফিসারদের সঙ্গে কথা শেষে এবার আনসারী কে ফোন লাগলেন।
অন্যদিকে আনসারী ওর পুরো কথা শেষ করবে তার আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো। ও ফিরোজা কে ছেড়ে দিয়ে ফোনের দিকে এগিয়ে গেলো।খানিকটা ঝুঁকে ফোনটা তুলে নিলো।ফোন রিসিভ করে কানে দিতেই ওপাশ থেকে আশা চাঞ্চল্যকর খবর শুনে ওর হুস উড়ে গেলো। ও বড় বড় চোখ করে অফিসারের উদ্দেশ্যে বললো,
আনসারি:হোয়াট? তাহরীম পালিয়ে গেছে?কি করে পালালো ও? আপনাদের এত টাইট সিকিউরিটি থাকতে ও পালিয়ে কি করে গেলো?
আনসারি সরিয়ে দেওয়াতে কোনরকম দেওয়াল ধরে বালান্স করলো ফিরোজা।বুকে হাত দিয়ে হাপাচ্ছিল কিন্তু আনসারীর কথা কানে আসতেই ওর কপালে চোখ উঠে গেলো।গোলগোল চোখে তাকালো আনসারীর দিকে।
—
ঘুমন্ত দিশা কে কোলে করে বারান্দা থেকে নিয়ে এসে নিজের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার গায়ে পাতলা চাদর টেনে দিল আলভী।তারপর দিশার পাশে বসে দিশার দিকে তাকিয়ে বললো,
আলভী: তুই এমন কেন দিশা? তোকে দেখলে মনে হয় দুনিয়ার সব কষ্ট যেন তোর ওই মুখ দেখলেই ভুলে যাবো।তুই আমার কাছে সবসময় থাকবি তো?…
‘ আইসক্রিম… ‘ ঘুমের মাঝেই বিড়বিড় করে বলে দিশা।
দিশা কে ঘুমের মধ্যে আইসক্রিমের কথা বলতে দেখে আলভী আর না পারতে হেসে দেয়।দিশার ললাটে লেপ্টে থাকা চুলগুলো আলতো করে দিশার কানের পিছনে গুজে দিয়ে বলে,
আলভী: পাগল মেয়ে একটা।ঘুমের মধ্যেও আইস ক্রিম এর সপ্ন দেখছে।
তাপর আলভি ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুলটা একটু ঠিক করে বেরিয়ে আসে।সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসতেই সোনিয়া বেগম মানে দিশার মা আলভিকে কোথাও যেতে দেখে বলে,
সোনিয়া: আলভি কোথাও যাচ্ছিস?
আলভী সোনিয়া বেগমের দিকে তাকিয়ে বলে,
আলভী: হুম ওই একটু কাজ আছে এই জন্য বাইরে যাচ্ছি।
তখনই রান্নাঘর থেকে কতগুলো প্লেট হাতে বেরিয়ে আসে লিজা বেগম মানে আলভী আর অলিভের মা।ছেলেকে বাইরে যেতে দেখে আধো বাংলায় খানিকটা থেমে থেমে বলে,
লিজা: যেখানেই যাচ্ছ যাও কিন্তু মাস্ক পড়ে যাও।তোমার বাবা চায়না আমরা যে দেশে এসেছি সেটা কেউ জানুক। সো বি কেয়ারফুল…
মায়ের কথা শুনে আলভী আলতো মাথা নেড়ে মুখে ডাবল মাস্ক পড়ে বেরিয়ে যায়।এইদিকে তানভীর ভিলার উদ্দেশ্যে দুরন্তর গতিতে রওনা দিয়েছে আরাফাতের গাড়ি। তখন আরাফাত ড্রাইভ করতে এমন সময় তাহরীম বলে,
তাহরীম: এই পুরো প্ল্যানিং টা কার ছিল?
আরাফাত: এজ ইউসুয়াল আমাদের কুইনের ছিল ইউর হাইনেস…
আরাফাতের ব্যবহারে তাহরীম অবাক হয়। ও বিস্ময় সুরে জিজ্ঞেস করে,
তাহরীম: এরকম হাইনেস হাইনেস করছো কেন?
আরাফাত: আমাদের কুইন বলেছেন উনি যেহেতু রানী সেহেতু উনার বরও রাজা তাই তাকে যেন রাজার মত মাথায় তুলে রাখা হয়।
আরাফাতের কথায় তাহরীম ঠোঁট প্রসারিত করে খানিক হেসে বললো,
তাহরীম: তাই বুঝি?
আরাফাত তাহরীমের কথা শুনে মাথা সামনে পিছনে ডানে বায়ে সবদিকে নাড়িয়ে ইসারা করে বললো হুম..
তানভীর ভিলার পুরো খাওয়ার টেবিল সেজে উঠেছে রঙিন খাবারে।পুরো টেবিল জুড়ে যেখানেই দেখি সেখানেই খাবার।টেবিল ভরে উঠেছে খাবারে খাবারে। যে কেউ দেখলে বলবে নির্ঘাত বাড়িতে বিয়ে লেগেছে নাহলে পুরো টেবিল ভর্তি খাবার কেন থাকবে? কিন্তু কেউ কি আর জানে আজ বাড়িতে কারাগার থেকে পালিয়ে আসা জামাই আসছে।
যথাসময়ে আরাফাত আর তাহরীম এসে হাজির হলো তানভীর ভিলার সামনে। ভিলাতে পা রাখতেই রিফাদ সাহেব, নিহাদ,সোনিয়া বেগম,লিজা বেগম, ফায়াজ( আরাফাতের বাবা আর সোনিয়া বেগমের স্বামী ), অলিভ, দিশা সকলেই তাহরীমকে বরণ করলো কারণ তাহরীম বাড়ির জামাই।
নিহাদ: কোনো কথা না বলে আগে আমাদের জামাই কে তার বউয়ের কাছে যেতে দাও সবাই।কতদিন আমার বেচারা ভাগ্নেটা তার ভালোবাসার বউকে দেখেনি।বুকটা কষ্টে চিনচিন করছে তাইনা?
নিহাদের কথায় অলিভ তাহরীমের লেগ পুল করে বললো,
অলিভ: আহারে আমাদের দুলাভাই বেচারা আমাদের আদরের বোনটাকে কত ভালবাসে যে তাকে দেখার জন্য সাত সমুদ্র তেরো নদী পার করে জেল থেকে পালিয়ে এসেছে।ওকে তোমরা এভাবে বলো না।বেচারা লজ্জা পাচ্ছে।
দিশা: ইস তোমরা এত খারাপ হতে পারলে? এভাবে আমাদের দুলাভাই কে লজ্জা কেন দিচ্ছ? তোমাদের লেগ পুল করার জন্য সে বেচারা তো তার বউয়ের কাছে যেতে…আর বলতে পারলো না দিশা কারণ তার আগেই দিশা আর অলিভের কান টেনে ধরলো লিজা বেগম।
লিজা: এটা আমাদের বাড়ির জামাইয়ের লেগ পুল করার জন্য আর এই যে ভাই নিহাদ নিজের কানটা না একটু সামলে রাখ।কারণ বলা তো যায়না তোমায়ও কান মোলা খেতে হয়।
তাহরীম: মামী ওদের ছেরে দিন।ওরা বাচ্চা মানুষ তাই মজা করছিল আমার সঙ্গে।আর ওরা যেহেতু আমার শালী তাই ওদের সঙ্গে আমার সম্পর্কই হলো হাসি ঠাট্টার।
তাহরীমের কথায় লিজা বেগম দিশা আর অলিভের কান ছেড়ে দিল। ছাড়া পেতেই দিশা দৌড় দিয়ে তাহরীমের পিছনে চলে গেলো আর বললো,
দিশা: ও ও শালী…ডাক্তার সাহেবের বউয়ের বোন আমরা তাইনা অলিভ আপু…?
‘ দেখলে তো আবারও মজা করছে ওরা তোমার সঙ্গে। ‘ কপট রাগ দেখিয়ে বললো সোনিয়া বেগম।
‘ আচ্ছা থাক ছেরে দিন।বলছি কি আমি একটু মিসেস আফরিনের সঙ্গে দেখা করি? ‘ বিনয়ের সুরে বললো তাহরীম।
‘ আরে যাও যাও দুলাভাই। তোমার বউই তো। যাও গিয়ে বউয়ের সঙ্গে দেখা কর।বলা তো যায়না বউয়ের সঙ্গে দেখা না করতে পেরে এখানেই না হার্ট এ্যাটাক করে বসো। ‘ টিটকারী মেরে বললো অলিভ।
‘ তোকে তো আমি…’ লিজা বেগম অলিভের কথা শুনে ওর পিছনে ছুটলেন।
‘ তাহরীম তুই গিয়ে আফরিনের সঙ্গে দেখা কর। সিড়ি দিয়ে সোজা গিয়ে শেষের ঘরটা। কথাবার্তা বলে নিচে আয় ফ্রেশ হয়ে।সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে বসবো।রাত তো হয়ে এসেছে। ‘ বললেন মিস্টার রিফাদ।
তাহরীম তার বড় মামার কথা শুনে আলতো মাথা নেড়ে সিড়ি দিয়ে উপরে এসে সোজা শেষের ঘরে চলে এলো। শেষের ঘরের কাছে আসতেই তাহরীমের পুরো শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো।আজ কতদিন পর ওর আফরিনের সঙ্গে দেখা হবে। তাহরীম তো এক্সাইটমেন্ট এ এটাই ভাবতে পারছে না প্রথমে কি বলবে।
যাই হোক আগে দেখা হোক তারপর নাহয় ভাববে কি বলা যায়। তাহরীম আস্তে করে নৈঃশব্দে ঘরের দরজা খুললো।দরজা খুলে যা দেখলো তা দেখার জন্য ও মতই প্রস্তুত ছিলো না। ও দেখলো আফরিন….
৩.( A Beautiful Confession )
ঘরে থাকা বড় ডেস্কটপের সামনে বসে আছি আমি। ডেস্কটপের কিবোর্ডে সমান তালে আঙ্গুল বিচরণ করে চলেছে সেই সঙ্গে কানে গেমিং হেড ফোন। কানে হেড ফোন হওয়ার কারণে আমার আশেপাশে যদি দুনিয়া ধ্বংসও হয়ে যায় সেটা আমার জানার কথা না আর তাই হলো।ডাক্তার সাহেব যে আমার ঘরে এসেছেন সেটা আমি জানিনা।
ডেস্কটপে গেম খেলতে ব্যস্ত আমি আর সেই সঙ্গে ঘরের মধ্যে সফট মিউজিকও চলছে।রুম সাউন্ড প্রুফ হওয়ায় ঘরের আওয়াজ বাইরে যায়নি।আমি এক নাগাড়ে ডেস্কটপের দিকে তাকিয়ে আছি। ডেস্কটপে আমার ফেভারিট ফাইটিং গেম Onmyoji Arena খেলছি।এই গেমটা বরাবরের মতই আমার কাছে বড্ড এক্সাইটিং। এটা যতবার খেলি ততবারই ভালো লাগে।
ঘরে ঢুকেই যে তাহরীম এরকম একটা দৃশ্য দেখবে সেটা ভাবতে পারেনি তাহরীম।আসলে পরিচিত মানুষটাকে হঠাৎ অপরিচিত রূপে দেখবে সেটা আশা করেনি। যেই আফরিন সবসময় নিজেকে ডেস্কটপ গেম থেকে দূরে রাখতো সেই আফরিন কে গেম খেলতে দেখা রীতিমত হাতে চাঁদ পাওয়ার মত। তাহরীমের ঠোঁটের কোণে হাসি চলে এলো।তাহলে তার ভালোবাসার মানুষ আস্তে আস্তে বদলাতে শুরু করেছে তবে মানুষ বদলালেও তার ভালোবাসা বদলায় না।
আমি তখন গেম খেলতে ব্যস্ত হঠাৎ আমার পুরো শরীরে শীতল হাওয়া বয়ে গেলো কারণ আমার ঘাড়ে কারোর উষ্ণ নিশ্বাস আছড়ে পড়ছে।সঙ্গে সঙ্গে কীবোর্ডের উপর বিচরণ করা আমার আঙ্গুলগুলো থেমে গেলো, ডান হাতে থাকা মাউসের কার্সরও থেমে গেল।আমি ক্ষণিকের জন্য থমকে গেলাম।নড়াচড়া করার ক্ষমতাও হারিয়ে ফেললাম। শরীর অবশ হয়ে এলো আমার।
ধীরে ধীরে নড়াচড়া করার মত বল শরীরে ফিরে পেলাম। তারপর আস্তে করে পিছন ফিরলাম।পিছন ফিরে কাঙ্ক্ষিত মানুষটাকে এতদিন পর দেখে চোখের কার্নিশ বেয়ে অশ্রু বিন্দু বিন্দু জলকণা হয়ে গড়িয়ে পড়লো।বরাবরের মতই আমার চোখে জল,মুখে হাসি।আমি মুগ্ধ দৃষ্টিতে মানুষটার দিকে তাকালাম।
ঘর্মাক্ত ডাক্তার সাহেবের ললাটে জড়ো হয়েছে গুটি কতক চুল, যা ডাক্তার সাহেবের ললাটে জড়ো হয়ে তার ঘামে সিক্ত শ্রীর সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।চুলগুলো বাইরে আজ রোদ উঠায় উষ্কখুষ্ক লাগছে।আমি হাত এগিয়ে দিয়ে ডাক্তার সাহেবের ললাটে জড়ো হওয়া চুলগুলো ঠিক করে দিলাম।ডাক্তার সাহেব আমার দিকে বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছেন।উনার সেই ঘায়েল করা টোল পড়া হাসি যতবারই উনি দেন ততবারই মনে হয় উনার এই হাসিতেই আমার সর্বনাশ লুকিয়ে আছে।এই হাসি দেখলেই আমার দিন দুনিয়া থেমে যায়, আশপাশটা অন্ধকার মনে হয়।
‘ আমি যে সুন্দর সেটা আমি জানি কিন্তু তাই বলে আপনি আমার বউ হয়ে আমার দিকে এরকম লুচুর মত তাকিয়ে থাকতে পারেন না।আপনি এভাবে তাকিয়ে থাকলে বাকিরা কি করবে? ‘ কথাগুলো বলতে বলতে আমার ঘরে থাকা ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাড়িয়ে ডাক্তার সাহেব উনার ঘর্মাক্ত শার্ট খুলে ফেললেন।
‘ আমি লুচু হলে আপনার কি সমস্যা? আমি লুচ্চামি করলে আমার বরের সাথে করবো আর আমার মনে হয়না এতে কারোর কোনো সমস্যা হতে পারে। ‘ কথাগুলো বলতে বলতে ডাক্তার সাহেবের দিকে এগিয়ে গিয়ে উনাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
‘ আরে আরে মিসেস আফরিন কি করছেন কি?আমি সবে বাইরে থেকে এসেছি।আমার গায়ে এখনও ঘাম লেগে আছে তার উপর দিয়ে আমি এখনও নিজেকে স্যানিটাইজ করিনি। আপনাকে জার্মস অ্যাটাক করতে পারে। ‘ আমি জড়িয়ে ধরাতে আমার কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে খানিকটা দূরে সরে গিয়ে কথাগুলো বললেন ডাক্তার সাহেব।
‘ আপনার গায়ের ঘামও আমার কাছে অধিক প্রিয় ডাক্তার সাহেব।আমার সবেতেই আপনার বিচরণ আর আপনার সবকিছুই আমার ।আপনি আমাকে যেমন ঘামে সিক্ত অবস্থায় জড়িয়ে ধরলে আমি বিরক্ত হবো না তেমনই আপনারও আপনি ঘামে সিক্ত অবস্থায় আমি জড়িয়ে ধরলে বিরক্ত হওয়া উচিত নয়। ‘ কোমরে হাত রেখে ডাক্তার সাহেবের দিকে তাকিয়ে মুখ ফুলিয়ে বললাম আমি।
‘ ভালোবাসেন আমায় ? ‘ ডাক্তার সাহেব সরাসরি প্রশ্নটা ছুড়ে দিলেন আমার দিকে ।
ডাক্তার সাহেবের প্রশ্ন শুনে মৌন রয়ে গেলাম।আগে হলে হয়তো উনার ব্যবহারে কষ্ট পেয়ে বলতে পারতাম যে উনার প্রতি আমার অনুভূতিগুলো ঠিক কি,কিন্তু এখন কি সেটা আমার পক্ষে সম্ভব? আমার ধারণা ভালোবাসা বলে কয়ে নয় বরং ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকাশ করতে হয়।তাহলে এই ‘ ভালোবাসা ‘ নামক এত গভীর একটা অনুভুতি শুধুমাত্র তিনটা শব্দে কি করে প্রকাশ করি?
‘ ভালোবাসা একটা গভীর অনুভূতি যার গভীরতার কোনো শেষ নেই। এই ভালোবাসার শুরু তো আছে কিন্তু শেষ নেই । আমি ফ্যান্সি শব্দ বলে আপনার মন জয় করতে পারবো না আর না করবো।আপনি আমার কাছে সেই অনুভূতি যার কোনো নাম নেই।আপনি আকাশের সপ্তর্ষি মন্ডলের মতই দুর্বোধ্য যা পাওয়া আসলে ভাগ্যের ব্যাপার।ভালোবাসা নামক গভীর অনুভূতির শীর্ষে যদি কোনো অনুভূতি থাকে তাহলে আপনি আমার সেই অনুভূতি, যা অনুভব করার সাধ্য তো আছে কিন্তু প্রকাশ করার সাধ্য নেই। ‘ কথাগুলো বলে গভীর দৃষ্টিতে তাকালাম ডাক্তার সাহেবের দিকে। ধীরে ধীরে ডাক্তার সাহেবের ঠোঁটের কোলে এক মিষ্টি হাসি ফুটে উঠলো।
‘ আফরিন ভালোবাসার এক অন্য নাম যার কথা ভাবলেই আমি তাকে আমার মায়ের পরে জায়গা দিতে পেরেছি। আফরিন তুমি দ্বিতীয় সেই নারী যাকে আমি আমার পাশে মৃত্যুর আগ অব্দি চাই। আমার যৌবন থেকে বার্ধক্য সবটাতেই আমি তোমার হাতে হাত রেখে পথ পাড়ি দিতে চাই। আফরিন নামক এই মোহময়ী ফুলের পবিত্র মানুষটার জোয়ারে ভেসে যেতে চাই। আফরিন আমি #তুমি_নামক_সপ্তর্ষি_মন্ডলের_প্রেমে পড়েছি যার শুরু আছে কিন্তু শেষ নেই । ‘
এক নাগাড়ে কথাগুলো বলে ডাক্তার সাহেব এবার একটু দীর্ঘশ্বাস ফেললেন যার অর্থ অনেকদিন পর নিজের মনে থাকা অনুভূতির পাথর উগ্রে দিতে পেরে আজ সস্তির নিশ্বাস ফেলেছেন।আমি কোনো কথা বললাম না শুধু দাড়িয়ে দাড়িয়ে উনাকে দেখতে লাগলাম। তাহরীম এমন একটা মানুষ যার সৌন্দর্য আর ব্যক্তিত্বের প্রেমে পড়তে যে কেউ বাধ্য কিন্তু মানুষটা একান্তই আমার। সে অন্য কারোর মনে অনধিকার প্রবেশ করতে পারলেও তার মনে প্রবেশ করার অধিকার একমাত্র আমারই আছে।
‘ এইভাবে দাড়িয়ে থাকলে চলবে? আমার তো ফ্রেশ হয়ে নিচে যেতে বললো।আপনি একটু বসুন।তারপর আমরা দুজনে একসঙ্গে নিচে যাবো। ‘ আমার চুলগুলো নিয়ে খেলতে খেলতে কথাগুলো বললেন ডাক্তার সাহেব।
আমি উনার কথা শুনে আলতো মাথা নাড়লাম তারপর আলমারি থেকে উনার জন্য আনা নতুন টি শার্ট আর ট্রাউজার উনার হাতে ধরিয়ে দিলাম।উনি আমার দিকে তাঁকিয়ে স্মিত হেসে বাথরুমে চলে গেলেন।আমি ঘরে এতক্ষণ টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে থাকলেও নিচে যাবো বলে জামাটা বদলে নিলাম। টিশার্ট বদলে কালো রঙের ট্রাউজারের সঙ্গে একটা কালো রঙের কামিজ পড়লাম।তারপর গাঁয়ে ওড়না জড়িয়ে নিয়ে বাথরুমের মুখোমুখি থাকা বিছানার ধার ঘেঁষে বসলাম যাতে ডাক্তার সাহেব বেরোলেই সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পারী।
মিনিট দশেক পর ডাক্তার সাহেব গোসল সেরে বের হলেন।আমি তখন জানালার দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে ব্যস্ত। গায়ে ঠান্ডা পানির ছিটা পড়তেই চমকে উঠে পিছনে ফিরলাম।বুঝলাম ডাক্তার সাহেব ইচ্ছা করে আমার গাঁয়ে উনার চুলের পানি ছিটিয়ে দিয়েছেন যাতে আমি বিরক্ত হই কিন্তু উনি জানেন না আমি এখন আর আগের মত এত ধৈর্য্যহারা নই।
আমি উনার দিক থেকে চোখ সরিয়ে আবারও দৃশ্য দেখে মন দিলাম।অনেকক্ষন বাইরে তাকিয়ে থাকার পরও যখন ডাক্তার সাহেবের কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না তখন পিছন ফিরলাম কিন্তু পিছন ফিরতেই ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে ধাক্কা খেলাম।
ব্যাথায় উফফ শব্দ করে সামনে চোখ দিতেই আমার দৃষ্টি স্থির হয়ে গেলো।সদ্য গোসল সেরে বেরোনোর কারণে ডাক্তার সাহেবের চুলগুলো এখনও ভেজা।উনার ভেজা চুলগুলো সবসময়ের মতই এবারও উনার ললাটে লেপ্টে আছে।উনার দিকে তাকিয়ে হালকা শুকনো ঢোক গিললাম কারণ উনার এই স্নিগ্ধ রূপে আমি ক্রমশ বেসামাল হয়ে পড়ছি। উনার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলাম।
‘ চোখ সরিয়ে নিলেন কেন? আমায় কি ভালো লাগছে না ? না লাগলে বলুন চেঞ্জ করে অন্যগুলো পড়ি। আরও তো আছে। ‘ ডাক্তার সাহেব আমায় উদ্দেশ্য করে বললেন।
আমি উনার কথা শুনে চোখ বন্ধ করেই না বোধক মাথা নাড়ালাম যে খারাপ লাগছে না । ডাক্তার সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে অতঃপর প্রশ্ন বিদ্ধ চাহনি দিয়ে বললেন ‘ তাহলে তাকাচ্ছেন না কেন ? ‘
আমি এবার আস্তে আস্তে চোখ জোড়া খুলে উনার দিকে পূর্ণ দৃষ্টি দিলাম। কথা বলার কারণে উনার ঠোট দুটো কাপছে তিরতির করে।
নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে এমন একটা কাজ করে ফেললাম যার কারণে ডক্টর সাহেব চোখ জোড়া বড় বড় করে ফেললেন।আমি ডাক্তার সাহেবের রুক্ষ ঠোঁট জোড়ায় ডুবিয়ে দিলাম আমার ঠোঁট।ডাক্তার সাহেব চোখ দুটো রসগোল্লার ন্যায় গোলগোল করে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। খানিক বাদে উনাকে ছেড়ে একটু দূরে সরে দাড়ালাম।
ডাক্তার সাহেব এখনও আমার দিকে বড় চোখে তাকিয়ে আছেন।উনার কাছ থেকে দূরে সরে যেতেই আমার মাঝে পৃথিবীর সব লজ্জা এসে ভর করলো।আমার ফর্সা গাল দুটো রক্তিম লাল হয়ে উঠলো।আমি ডাক্তার সাহেবের দিকে চোখ রাখতে পারছিলাম না নিজের এই অতর্কিত হামলার জন্য তাই উনার নজর এড়াতে দ্রুত গতিতে ঘরের দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম ।
তবে আমার পথে বাঁধা হয়ে দাড়ালেন ডাক্তার সাহেব।উনার দিকে এক পলক দৃষ্টি দিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম।উনার ঠোঁটের কোলে সবসময়ের মতই দুষ্টু হাসি বিদ্যমান।ডাক্তার সাহেব আমার কোমরে হাত রেখে আমায় নিজের দিকে টেনে নিয়ে আমাকে নিজের সঙ্গে মিশিয়ে নিলেন। সঙ্গে সঙ্গে আমার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেলো।একটু আগে ঝোঁকের বসে উনাকে কিস করলেও এখন হঠাৎ লজ্জা লাগছে।
‘ আমায় এভাবে ফ্রেঞ্চ কিস করে পালিয়ে যাচ্ছিলেন।নিজে তো আমার সুযোগ নিয়ে নিলাম কিন্তু আমার কথা একবারও ভাবলেন না।আপনি যখন আমার কথা ভাবেন নী তখন আমারই নিজের কথা ভাবতে হবে।আমার নিজেকে শান্ত করতে হবে তো নাকি।এবার আমার পালা। ‘ দুষ্টু হেসে কথাগুলো বলে আমার দিকে এগিয়ে এলেন।
আমার গালে উনার হাত রেখে আমায় নিজের দিকে এগিয়ে নিলেন।আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।আমরা খুব কাছাকাছি,ডাক্তার সাহেব আমায় যেইনা কিস করতে যাবেন ওমনি দরজার বাহিরে থেকে দিশা বললো,
দিশা: আরে আফরিন আর তাহরীম ভাইয়া তোমাদের কতক্ষন লাগবে?সুযোগ পেয়েই কি রোমান্স শুরু করে দিলে? আরে রোমান্স পরে করো, আগে খেতে আসো।আমরা সবাই তোমাদের জন্য না খেয়ে আছি তো।
আমি দিশার আওয়াজ পেতেই ডাক্তার সাহেবের থেকে দূরে সরে দাড়ালাম তারপর দরজার দিকে এগিয়ে গেলাম।দরজার দিকে যাওয়ার সময় ডাক্তার সাহেব পিছন থেকে বললেন ‘ বাকিটা রাতে কন্টিনিউ করবো মিসেস আফরিন । ‘
উনার কথা শুনে অপ্রস্তুত হয়ে উনার দিক থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিলাম।তাড়াতাড়ি গিয়ে দরজা খুলেই দেখলাম দরজার বাইরে দুষ্টু হাসি দিয়ে দাড়িয়ে আছে দিশা।আমি ওর দিকে তাকিয়ে ওর মাথায় একটা টোকা মেরে সিড়ির দিকে হাঁটা দিলাম।
আমার টোকা খেয়ে দিশা ‘ উফফ আফরিন ‘ বলে আমার পিছু নিল।তারপর আমি আর দিশা সিড়ি দিয়ে নেমে এলাম আর আমাদের পিছন পিছন ডাক্তার সাহেবও এলেন। আমি সবার দিকে একবার নজর বুলিয়ে বললাম,
আফরিন: আলভি ভাইয়া কোথায়?
মামী আমার কথা শুনে আমার উদ্দেশ্যে বললেন,
লিজা: তোমার ভাইয়ের কি ঠিক আছে? যখন ইচ্ছা যেখানে ইচ্ছা বেরিয়ে যায়। দেখো হয়তো কোথাও একা একা ঘুরছে।বলেছিলাম ও যেন বাইরে না যায় কিন্তু ও শুনলে তো….
‘ মা আমি কাজে গিয়েছিলাম… ‘
আমি মামীকে কিছু বলবো তার আগেই আলভী ভাইয়ার শব্দ পেলাম। ওর গলার আওয়াজ শুনে পিছনে ফিরলাম আর পিছন ফিরতেই ওর হাতে পলিথিন চোখে পড়লো।ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম পলিথিনে চকলেট আইসক্রিম আছে আর এই একই জিনিসটা দিশাও খেয়াল করলো।আমরা দুজন খুশিতে দৌড় মেরে গিয়ে ভাইয়ার হাত থেকে আইস্ক্রিম এর ব্যাগটা নিয়ে আইস্ক্রিম বের করতে শুরু করলাম।আমরা দুজনেই আইস্ক্রিম শীতকালে খেতে খুবই পছন্দ করি তবে এছাড়া বছরের অন্য সময় আইস্ক্রিমের খবরও থাকে না।
আমি আর দিশা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে কাউন্ট ডাউন শুরু করলাম কারণ দুজনেই একসঙ্গে আইস্ক্রিম মুখে দিবো কিন্তু আমাদের হাত ধরে ফেললো আলভী ভাইয়া আর ডাক্তার সাহেব।আমার হাত ধরে দাড়িয়ে আছেন ডাক্তার সাহেব আর দিশারটা ধরে দাড়িয়ে আছে আলভী ভাইয়া।আমরা দুজনেই ওদের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালাম।ডাক্তার সাহেব আমাকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
তাহরীম: এখন খাওয়া যাবে না…
আমি ডাক্তার সাহেবের কথা শুনে উনার হাত ছেড়ে দিয়ে ভ্রু কুচকে উঠে দাড়ালাম তারপর বললাম,
আফরিন: কেন কেন কেন?
তাহরীম: আমি যখন একবার না করেছি তখন নাই।
আফরিন: আমার আমার প্রশ্নের উত্তর চাই…
তাহরীম: আমি দিতে বাধ্য নই…
আফরিন: ফাইন তাহলে আমিও আপনার কথা শুনতে বাধ্য নই।
এবার ডাক্তার সাহেব আমার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিতে ভ্রু কুচকে বললেন,
তাহরীম: আপনি বড্ড ঘাড়ত্যাড়া সেটা কি আপনি জানেন? আপনার ভালো আপনি কেন বুঝতে পারছেন না।এখন এত রাতে আইস্ক্রীম খেলে আপনার ঠান্ডা লাগার চান্স আছে।এখন না খেয়ে কাল দিনের বেলা খান। দিশার ক্ষেত্রেও একই কথা বলবো আমি।এখন এত রাতে এগুলো খাওয়ার দরকার নেই।
ডাক্তার সাহেবের সিরিয়াস কথা শুনে দিশা উপায়ন্তর না পেয়ে রাজি হয়ে গেলো আর আমি ডাক্তার সাহেবের উপর রাগ করে দিশার পাশে গিয়ে বসে পড়লাম।আমি দিশার পাশে বসাতে ডাক্তার সাহেব আমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আর আলভী ভাইয়া আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে।কিন্তু আমি ওদের পাত্তা দিলাম না।সোজা খাওয়া শুরু করলাম।
~ চলবে ইনশাল্লাহ্
মিফতা তিমু…