#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৭
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
সৌরভ : বাহ ! তোর বৌ তো দেখছি খাটি সোনা । অন্য কেউ হইলে বলতো আপনার ইচ্ছা মা আপনি যা করবেন ভালোর জন্যই করবেন ।
মেহতাব এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না শুধু মুচকি একটা হাসি দিলো ।
মেঘ ড্রেসিং টেবিল এর সামনে বসে রেডি হচ্ছিলো শপিং এর জন্য যাবে বলে । সে একটা নীল কালারের ৩ পিছ পরে নিয়ে চুল ঠিক করছিলো । মেহতাব রুমে ঢোকার সময় মেঘ কে রেডি হতে দেখে বললো।
মেহতাব : কোথায় যাচ্ছো নাকি?
মেঘ : হুম । আমাদের আর অহনা আপুদের রিসিপশন এর জন্য টুকটাক কিছু কেনা কাটা রয়েছে আর ড্রেস কিনতে হবে । তাই আমি মেহসান , অহনা আপু , সিমরান , মিথিলা , শাম্মি আর মা যাচ্ছি শপিং করতে।
মেহতাব : ঠিকাছে । আমি গাড়িতে গিয়ে বসছি তোমারা রেডি হয়ে নেও। ওখানে আমার একটু কাজ আছে যাওয়ার সময় তোমাদের নামিয়ে দিয়ে আসবো ।
মেঘ : আপনি রেডি হবেন না?
মেহতাব : আমার রেডি হতে জাস্ট ১ মিনিট লাগবে আর মেয়েরা ছেলেদের থেকে আগে কোনো সময়ই রেডি হতে পরে না বরং তিন গুন বেশি সময়ের দরকার পরে তাদের ।
মেঘ : এমন ভাবে লেকচার দিচ্ছে যেন আমি সারাদিন লাগিয়ে দিবো । ( মনে মনে বললো )
মেহতাব : মনে মনে এতো কথা বললে সারাদিন না সারারাতও লেগে যেতে পারে । Be quick .
এই বলে মেহতাব একটা তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুম এ ডুকে যায়।
মেঘ : এমন ভাবে কথা গুলো বললেন যেন আমি ওনার পা ধরেছি ওনাকে সাথে নিয়ে যাওয়ার জন্য। ( মনে মনে বললো )
নিচে সবাই রেডি হয়ে গাড়িতে গিয়ে বসে পড়েছে কিন্তু মেঘ আর মেহতাব এর কোনো পাত্তাই পাওয়া যাচ্ছে না।
( মেহতাব এর রুম এ )
মেহতাব : কি বলে ছিলাম মেয়েদের একটু সময় বেশি লাগে । It doesn’t matter .
এই কথা শুনে মেঘ পিছনে তাকালো মেহতাব কে সে যতবার দেখে যেনো চোখই সরাতে ইচ্ছে করে না আজও তার বিপরীত নয় । সে মেঘ এর সাথে মেচিং করে নীল শার্ট আর কালো জিন্স পড়েছে । যাকে বলে এক কথায় ফাটাফাটি লাগছে । বিবাহিত ১০ বাচ্চার বাবা হলেও তাকে বিয়ে করার জন্য মেয়েদের কমতি হবে না যেনো আরো লাইন লেগে যাবে ।
এই কথা ভাবতে ভাবতে মেঘ নিজের মাথায় একটা থাপ্পড় মারলো ।
মেঘ : ( নিজেকে শান্ত করে বললো ) মেঘ মেহতাবের সামনে নিজেকে দুর্বল প্রকাশ করা যাবে না ।
মেহতাব : এভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি কিন্তু নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারব না তোমায় অ্যাডভান্স এ এলার্ট করে দিলাম । ( টি শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতে করতে বললো )
মেঘ : আপনি দিন দিন অসভ্য হয়ে যাচ্ছেন।
মেহতাব : এখনো তো ট্রেলারই দেখলে না । না দেখেই আমাকে অসভ্য বলছো । আমি আবার আমার সম্পর্কে মিথ্যা অপবাদ টোলেরেট করতে পারি না । ( সয়তানি হাসি দিয়ে )
এই বলে মেহতাব মেঘের কাছে এসে একটানে মেঘ কে কাছে এনে মেঘের কোমড় জড়িয়ে ধরলো আরেক হাত দিয়ে মুখে পরে থাকা চুল গুলো পরম যত্নে আলতো হাতে সরিয়ে দিলো । মেহতাবের প্রতিটি স্পর্শে মেঘ কেপে কেপে উঠ ছিলো । এই দেখে মেহতাব মুচকি হেসে বললো , ” এতো কাপকাপির কি আছে আমি তো আর অন্য কেউ নই । নিজের বিয়ে করা বৌ কে ছুলে অসভ্যতা হয় বলে আমি মনে করি না । আর এটা কোনো ক্রাইমও নয় । সো ক্যান আই কিস ইউ ?
মেঘ অবাকের উচ্চসীমা থেকে পরলো মেহতাবের শেষের কথাটা শুনে । কিন্তু সে প্রতিউত্তরে কিছু বললো না ।
মেহতাব : আমি আমার অ্যানসার পেয়ে গেছি।
এই বলে মেহতাব মেঘের আরো কাছাকাছি চলে আসে ।
মেহসান : ভাইয়া তোমাদের নিচে ডাকছে এতো লেট কেনো করছো । ( মেহসান ফোনে গেম খেলছিলও তখন তাই সে ফোন এর স্ক্রিন এর দিকে তাকিয়ে ছিলো )
মেহসান এর আওয়াজ শুনে মেহতাব মেঘের থেকে বেশ খানিক টা দুরে গিয়ে দাড়ালো ।
মেহসান এবার ফোন এর স্ক্রিনের থেকে মাথা তুলে তাদের দুজনের দিকে তাকালো । মেহতাবকে দেখেই সে বুঝতে পরলো সে ভুল টাইমে এসে পড়েছে । মেহতাব মেহসানের দিকে অগ্নিদৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।।
মেহসান : ভাইয়া তুমি এভাবে তাকিয়ে আছো কেন আমি তো শুধু তোমাদের ডাকার জন্য এসেছি সবাই নিচে ওয়েট করছে চলো। আর মেহু ভাবী তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো ?
মেহসানের প্রশ্ন শুনে মেঘ ইতস্ত বোধ করে বললো ” না তেমন কিছু না চলো আমরা নিচে যাই “।
এই বলে মেঘ এক কথায় বলতে গেলে মেহসানের হাত ধরে তারাতারি রুম থেকে বের হয়ে গেলো ।
মেহতাব তা দেখে হেসে ফেললো।
নিচে সিমরান , মিথিলা , শাম্মি সেজেগুজে দাড়িয়ে আছে আর বাকিরা গাড়িতে গিয়ে বসেছে।
সিমরান : ভাইয়া আর ভাবী কেনো আসছে না ?
মিথিলা : আমারও সেম প্রশ্ন এতো দেরি হচ্ছে কেন?
শাম্মি : হয়তো আমি জানি ।(লজ্জা মাখা হাসি দিয়ে)
মিথিলা : হুম জানি কি বলবি । তোর সব উল্টোপাল্টা কথা মাথায় ঘুরপাক খায় ।
মেহসান আর মেঘ সিঁড়ি দিয়ে নামছিলো । আর মেহতাব তাদের পিছনে আস্তে আস্তে আসছিল আর ফোন এ কোনো কাজ করছিলো ।
তাদের দেখতে পেয়ে মেঘ আর মেহতাব কে উদ্দেশ্য করে মিথিলা , শাম্মি , সিমরান একসাথে বলে উঠলো, বাহ ! ভাবী তোমার থেকে তো চোখ সরানোই মুস্কিল। আর ভাইয়া কে তো পুড়াই আগুন লাগছে ।
মেহতাব : হয়েছে গাড়িতে গিয়ে বস। I’m coming .
মেহতাবের কথা শুনে সবাই চুপ চাপ গাড়িতে গিয়ে বসে পরলো । সবাই গাড়িতে বসেছে শুধু মেঘ আর মেহসান ছাড়া । গাড়িতে জায়গা থাক সত্তেও সিমরান বললো।
সিমরান : ভাবী তুমি ভাইয়ার গাড়িতে এসো এখানে আর জায়গা খালি নেই।
শাম্মি : সিমরান আপু এখানে তো অনেক জায়গা খালি ।
এই কথা শুনে সিমরান শাম্মির দিকে রাগী চোখে তাকায় । শাম্মি বুঝতে পেরে কথা ঘুরিয়ে ফেলে ।
শাম্মি : ওহ না আসলেই জায়গা নেই ।
মেহসান : তাহলে আমিও ভাইয়া ভাবীর সাথে যাই ।
মিথিলা : তোর মতো শিশুদের জায়গা এখানে আছে । ভাবী মেহতাব ভাইয়ার সাথে আসুক ।
এই কথা বলতে দেরি কিন্তু কাজ করতে দেরি নেই । তারা মেহসানের মাথায় চাটি মেরে গাড়িতে উঠিয়ে নেয় ।
মেহসান : আমাকে কি খেলনা পেয়েছো একবার এভাবে নয়তো ওভাবে কন্ট্রোল করছো ।
সিমরান : তুই নিজেকে তো সমস্যার অবসান মনে করিস তাহলে এই ব্যাপারটা বুঝতে এতো দেরি হলো কেনো ।
মেহসান : কোন ব্যাপার ? ওহ বুঝতে পেরেছি ।( মুচকি হেসে )
সিমরান : যাক এই গাধাটাকে বুঝানোর দরকার পরে নি ।( রাগ দেখিয়ে )
কিছুক্ষণ পর মেহতাব গাড়ির চাবি নিয়ে আর চোখে সানগ্লাস পরে বেরিয়ে আসলো।
মেহতাব কে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ,
মেঘ : ওনাকে দেখলে বুকের ভিতরে দুপ দুপ আওয়াজটা বেড়ে যায় কেনো ? আমি কি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ?
মেহতাব : এই যে মিস কোথায় থমকে গেলে যাবে না নাকি ? কিভাবে যেতে চাও গাড়িতে নাকি নৌকা লাগবে ?
মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মুচকি হেসে বললো ” চলুন ”
#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৮
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
কিছুক্ষণ পর মেহতাব গাড়ির চাবি নিয়ে আর চোখে সানগ্লাস পরে বেরিয়ে আসলো ।
মেহতাব কে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ,
মেঘ : ওনাকে দেখলে বুকের ভিতরে দুপ দুপ আওয়াজটা বেড়ে যায় কেনো ? আমি কি ওনাকে ভালোবেসে ফেলেছি ?
মেহতাব : এই যে মিস কোথায় থমকে গেলে । যাবে না নাকি ? কিভাবে যেতে চাও গাড়িতে নাকি নৌকা লাগবে ?
মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মুচকি হেসে বললো ” চলুন ”
এই বলে দুজনেই গাড়িতে উঠে পরে । গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে মেহতাব আর তার দিকে এক নজরে মেঘ তাকিয়ে আছে ।
মেঘ : আমি কি সত্তি তাকে ভালোবেসে ফেলেছি ? কিন্তু সে কি আমাকে কোনো সময় ভালবাসার দৃষ্টিতে দেখেছে বা কখনো দেখবে । আমাকে তো সে শুধু দায়িত্বের চোখে দেখে। হয়ত বিয়ের সময় সে না আসলে আজ তার ভাগ্যে আরও ভালো কিছু থাকতো । আমি তার জীবনে বোঝা হয়ে থাকতাম না । ( মনে মনে বললো )
মেহতাব গাড়ির লুকিং মিরোর দিয়ে দেখলো মেঘ তার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । সেটা খেয়াল করে বললো ,
মেহতাব : আমাকে কি ভালোবেসে ফেলেছো নাকি?
মেহতাবের কথায় মেঘের হুশ ফিরলো । তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবলো ,
মেঘ : সে কি মনের কথা পরতে পারে নাকি?
মেহতাব : কি হলো বলছো না কেনো?
মেঘ নিজেকে স্বাভাবিক করে মেহতাবের দিকে তাকিয়ে বললো,
মেঘ : ইয়ে মানে আপনার হঠাৎ এই কথা মনে হলো কেনো ?
মেহতাব : তুমি যেভাবে আমার দিকে তাকিয়ে ছিলে তাই ভাবলাম যে হতে পারে । ( মুচকি হেসে )
মেঘ : যদি বলি ভালবাসি তাহলে ভালবেসে কছে টেনে নেবেন নাকি আমার থেকে আরও অনেক দুরে চলে যাবেন যেখানে আপনাকে ধরা ছোয়া তো দুরের কথা দেখতেও পারব না । ( মনে মনে বললো )
মেহতাব : কি হলো ? Are you okay ?
মেঘ এই কথার প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। শুধু মাথা নাড়িয়ে বললো সে ঠিক আছে ।
গাড়িটি অনেক বড় একটি শপিং মলের সামনে এসে দড়ালো । মেঘ গাড়ি থেকে নেমে পরলো সে বাড়ি থেকে খুশি মনে বের হলেও এখন তার আর ভালো লাগছে না । মেহতাব গাড়ি থেকে নেমে মেঘ কে নিয়ে সিমরান , মেহসান আর বাকি সবার দিকে এগিয়ে গেলো। পাশেই ৫ টা ছেলে সিগারেট টান ছিলো । একটি ছেলে মেঘ কে দেখে বলে উঠলো , ” মামু ওই নীল পরীডারে দেখ সেই ফিগার কিন্তু ” এই কথা শুনে আরেকটা ছেলে বলে উঠলো , ” একদম খাটি কথা আর বাকি ৪ ডা মালও ফ্রি ”
এই কথা গুলো মেঘ , মেহতাব সহ বাকি সবাইদের কানে পৌছালো । মেহতাব কে শান্ত থাকতে দেখে মেঘ মনে মনে বললো ” এখন উনি কি ওদের মারবেন নাকি হিরোদের মতো ”
মেঘের চিন্তা ভাবনায় পানি ঢেলে দিয়ে মেহতাব বললো ” মা আমার একটা গুরুত্ত পুর্ণ কাজ আছে আমায় জরুরি যেতে হবে । Take care ”
এই বলে মেহতাব সেখান থেকে চলে গেলো । মেঘ, অহনা আর অরিন বেগম বুঝতে না পারলেও হুল্লোড় গ্যাং এর সদস্যরা আচ করতে পারলো মেহতাব কিছুতো একটা করবেই । তারা যানে মেহতাব নিজের ইমোশন সো করতে পছন্দ করে না । তার চুপ থাকাই ঝড়ের পূর্বাভাস ।
অরিন বেগম : চলো আমরা ভিতরে যাই।
এই বলে মেঘ , অহনা আর অরিন বেগম চলে গেলো কিন্তু মিথিলা, সিমরান, শাম্মি আর মেহসান সেখানে এক কোনায় লুকিয়ে পরলো।
মিথিলা : তোরা কি সিওর যে মেহতাব ভাইয়া আসবে ?
শাম্মি : আমি তো ৩০০০ টাকা বাজিও ধরতে পারব ।
মেহসান : সিওর মানে ভাইয়া আসবেই দেইখো মিথু আপু ।
সিমরান : ওই তো ভাইয়া টি শার্ট এর হাতা ফোল্ড করতাছে । আর ব্লাক ঘড়ি টা গাড়িতে রেখে দিয়া আসছে ।
মেহসান : এম্বুলেন্স কল করো।
শাম্মি : কেনো?
মেহসান : ওই পচা লোক গুলারে বাচাই তে হইব নাইলে ভাইয়া ওগো ওই জায়গায় পুইতা থুইবো। আহারে….
মেহসান এর কথা শুনে সবাই হেসে দিলো ।
মেহতাব লোকগুলোর দিকে এগিয়ে বলতে লাগল,
মেহতাব : আপনাদের মধ্যে কে যেন নীলপরীর প্রশংসা করছিলো।
একটা লোক বলে উঠলো ” আমি করছি কি করবি রে তুই ”
লোকটার কথা শেষ হওয়ার আগেই মেহতাব তার থুতনিতে জোরে একটা ঘুসি মারলো । আর লোকটা একটু দুরে নিচে পরে গিয়ে বেহুশ হয়ে পরলো ।
মেহসান : বাহ বাহ ! এক ঘুষিতে ১ উইকেট।
বাকি ৪ টা ছেলে এটা দেখে হাতে ছুরি নিয়ে মেহতাবের দিকে আসতে লাগলো । মেহতাব সব কয়টাকে গালে আর ঠিক জায়গা মতো হাত দিয়ে আবার পা দিয়ে মারতে লাগলো ।
মেহতাব : আমার পরিবারের মেয়েদের আর আমার বৌ কে তোরা কুনজর দিবি আর আমি কিছু বলবো না। It’s your big mistake . ( রাগী স্বরে বললো )
এই বলে ওদের মারতে মারতে আধমরা করে ফেললো। এরপর আবার বললো ,
মেহতাব : এখানে আমার বোন বা স্ত্রীর জায়গায় অন্য কোনো মেয়ে থাকলে আমি একি কাজ করতাম । সো নেক্সট টাইম এগুলো দেখেলে জানে মেরে ফেলবো । তোরা এই মেহতাব চৌধুরি কে চিনিস না মাইন্ড ইট ।
সব ছেলেগুলো মেহতাবের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইলো ।
মেহতাব : Now go from here . আমি কাউন্ট ডাউন শুরু করছি 1 , 2 ..3 শোনার আগেই সবাই সেখান থেকে এক দৌড় দিয়ে পালিয়ে গেলো ।
মেহতাব কে দেখে সব মেয়েরা মুগ্ধ দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে। তার হ্যান্ডসামনেস তার কিলার এটিটিউড দেখে ।
এইসব দেখে হুল্লোড় গ্যাং বলে উঠলো ,
সিমরান : OMG!
শাম্মি : ভাই আমার ৩০০০ টাকা কে দিবা দেও?
মেহসান : আপু টাকার কথা বাদ দেও তো । এতো সুন্দর সিন কোনো ফিল্মেও দেখছো । জাস্ট অসাধারণ !
মিথিলা : ভাবী দেখলে ভাইয়ার উপর ক্রাশ খাইতো ।
শাম্মি : হুম ঠিক ।
এই বলে ওরা সবাই শপিং মলের ভিতর ডুকে পরলো ।
অরিন বেগম , অহনা আর মেঘ শাড়ি চুজ করছিলো । মেহসানদের দেখে অরিন বেগম বললো ” কি রে কোথায় ছিলি?”
সবাই সবার দিকে চাওয়া চাওয়ি করে সিমরান বলে উঠলো , ” মেহসানের ওয়াশরুম এ যাওয়ার দরকার ছিলো ওর সকাল থেকে পাতলা পায়খানা হচ্ছে তাই বার বার টয়লেটে আসছিলো আর যাচ্ছিলো ”
মেহসান : বাহ ! সিমু আপু এই ছোটো ভাইয়ের সম্মান টা শেষমেষ এই শপিং মলের লোকদের কাছে বিক্রি করে দিলে । ( অভিমান করে )
সিমরান মেহসানের ইমোশোনাল ব্ল্যাকমেল এর কাছে হার মেনে বললো ” চুপ থাক দুইটা আইসক্রিম কিনে দিবো আর আজকের দিনের জন্য আনলিমিটেড ফোন “।
এই কথা শুনে মেহসানের মুখে গোল্ড মেডেল পাওয়ার মতো একটা উজ্জল হাসি ফুটে উঠলো।
সবার কেনা কাটা করা শেষ এখন শুধু মেঘ আর অহনার বাসায় পড়ার জন্য শাড়ি চুজ করছিলো। মেঘ একটা গোলাপি কালারের শাড়ি নিজের শরীরের উপর দিয়ে দেখছিল কেমন লাগে । তখনি মেহতাব শপ এ ডুকছিলো আর মেঘ কে দেখে তার দৃষ্টি সেখানে যায় এবং সে এক দৃষ্টিতে সেখানে তাকিয়ে ছিলো। মেঘ শাড়ির দাম দেখে শাড়ি টা রেখে দিলো মেহতাব সব সেখানে দাড়িয়ে দেখছিলো ।
মেহতাব কে লক্ষ্য করে অরিন বেগম বলে উঠলো,
অরিন বেগম : মেহতাব তুই এখানে ?
মেহতাব : হ্যাঁ আমার কাজ শেষ । তোমাদের শপিং শেষ করা শেষ হয়েছে ?
অরিন বেগম : হ্যাঁ এখন শুধু মেঘ এর জন্য শাড়ি চুজ করছি সবার শেষ কিন্তু মেঘ কিছুতেই কোনো শাড়ি নিতে চাচ্ছে না। কি করি বলতো ?
চলবে…….
#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব : ৯
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
মেহতাব কে লক্ষ্য করে অরিন বেগম বলে উঠলো,
অরিন বেগম : মেহতাব তুই এখানে ?
মেহতাব : হ্যাঁ আমার কাজ শেষ । তোমাদের শপিং শেষ করা শেষ হয়েছে ?
অরিন বেগম : হ্যাঁ এখন শুধু মেঘ এর জন্য শাড়ি চুজ করছি সবার শেষ কিন্তু মেঘ কিছুতেই কোনো শাড়ি নিতে চাচ্ছে না। কি করি বলতো ?
মেঘ : মা আমার এখন কিছু লাগবে না । যদি প্রয়োজন হয় আমি নিজে চেয়ে নিবো ।
অরিন বেগম : কিন্তু মা ?
মেঘ : কোনো কিন্তু নয় । চলো মেহসান।
এই কথা বলে মেহসান আর বাকি সবাই মেঘের সাথে চলে গেলো । অরিন বেগম আর মেহতাব সেখানেই রয়ে গেলো ।
মেহতাব : মা আমি ওর জন্য শাড়ি কিনে নিবো। তুমি গিয়ে গাড়িতে বসো ।
অরিন বেগম : তুই পারবি ?
মেহতাব : মেঘ যেহেতু আমার রেসপনসিবিলিটি তাহলে ওর ভালো খারাপ দুটিই দেখার দায়িত্ব আমার । Don’t worry I’ll manage .
অরিন বেগম : ঠিকাছে আমি যাচ্ছি। তারাতাড়ি আসবি ।
মেহতাব : Ok . যাও তুমি ।
এই বলে অরিন বেগম সেখান থেকে চলে গেলো । আর মেহতাব শাড়ি চুজ করতে লাগলো । মেহতাব দশটি রঙের শাড়ি চুজ করলো সেগুলো ভিন্ন ধরনের বেগুনি , নীল , আকাশি , সবুজ , হলুদ , কমলা, লাল , গোলাপি , কালো , সাদা এই দশটি কালার বেছে নিলো ।
শপ কিপার বলে উঠলো ” বাহ ! স্যার আপনার ড্রেসিং সেন্স তো খুব ভালো । যে আপনার ওয়াইফ হবে সে খুব লাকি ” ।
এই কথার প্রতিউত্তরে মেহতাব একটি মুচকি হাসি দিলো । আর পেমেন্ট করে চলে এলো।
মেহতাব কাউকে না জানিয়ে একটি হীরের নেকলেসও চুজ করে মেঘের জন্য কিনে নিলো । কারন সে এখন পর্যন্ত মেঘ কে কিছু উপহার দেয় নি । তাদের বিয়েটা স্বাভাবিক ভাবে হয় নি তাই দেওয়ার সুযোগও পায়নি ।
এই দিকে বাইরে সবাই মেহতাবের জন্য অপেক্ষা করছিলো ।
সিমরান : খালামনি ভাইয়া এতো লেট কেনো করছে ?
অরিন বেগম : এক্ষুণি এসে পরবে তোরা গাড়িতে উঠে পর ।
শাম্মি : কিন্তু ভাইয়া করছে টা কি ?
মিথিলা : ওই তো ভাইয়া ।
মিথিলার কথা শুনে সবাই সামনে তাকালো ।
মেহতাব শপিং মল থেকে বের হচ্ছিলো আর কিছু মেয়ে তাকে দেখে কানে কানে কিছু বলছিলো । আর কিছু মেয়েতো মেহতাব এর সামনে এসে মেহতাব কিছু একটা বললো । কিন্তু মেহতাব কিছু একটা বলতেই তারা মন খারাপ করে চলে গেলো ।
এটা দেখে মেঘ প্রকাশ না করলেও মনে মনে খুশি হলো ।
মেহতাব : তোমরা গাড়িতে উঠে পরো।
মেহতাবের কথা মতো সবাই গাড়িতে উঠে পরলো।
মেঘ মেহতাবের পিছু পিছু মেহতাবের গাড়িতে উঠে পরলো। কারন তাকে জানতে হবে মেহতাব কি এমন বললো ? যে মেয়েগুলোর মুখ কালো হয়ে গিয়েছিলো ।
মেহতাব : বাহ ! আমার কথা মতো উঠে পরলে কোনো তর্ক না করে।
মেঘ : আপনি কি আমাকে ঝগড়ুটে বলার ট্রাই করছেন ? ( রেগে গিয়ে )
মেহতাব : I’m sorry . Actully I didn’t mean it you understand it wrongly .
এই বলে মেহতাব গাড়ি চালানো শুরু করলো । মেঘ : একটা কথা বলবো ?
মেহতাব : হুম , বলতে পরো । এতো ফর্মালিটির কি আছে ।
মেঘ : ওই মেয়েগুলো আপনাকে কি বলছিলো ?
মেহতাব : কোন মেয়ের কথা বলছো?
মেঘ : ওই যে শপিং মলের বাইরে।
মেহতাব : ওহ । Actully They ask me for my number .
মেঘ : তারপর আপনি কি বলেছিলেন ?
মেহতাব : আমি বেশি কিছু বলিনি জাস্ট বলেছি , ” If my wife give me the permission then I can give it to you ” ( যদি আমার স্ত্রী আমাকে অনুমতি দেয় তাহলে আমি তোমাকে আমার নাম্বার( it ) দিতে পারব )
মেহতাবের কথা শুনে মেঘ মেহতাবের থেকে মুখ ঘুরিয়ে মুচকি একটি হাসি দিলো। কিন্তু মেহতাবের থেকে তা আড়াল হলো না সে ঠিকিই লক্ষ্য করেছে। তাই মেহতাব বলে উঠলো ,
মেহতাব : তোমার হাসিটা খুব সুন্দর , এন্ড ইউ লুক সো বিউটিফুল হোয়েন ইউ স্মাইল ।
মেহতাবের কথায় মেঘ থতমত খেলো আর একপ্রকার লজ্জাও পেলো । কিন্তু প্রকাশ করলো না । আর গাড়ির কাচ দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখতে লাগলো ।
বাড়িতে পৌছে সবাই দেখলো বাড়ি খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে । চারিদিক ফুলের গন্ধে মো মো করছে । এতো বড় রাজ প্রাসাদের মতো বাড়ি এতো তাড়াতাড়ি সাজানো হবে কেউ তা ভাবতে পারেনি। আর এইদিকে মেহতাবের দাদী সৌরভ , রৌফ , সিয়াম , সামির আর সৌমকে দিয়ে স্টাফদের কাজ করাচ্ছে আর স্টাফরা তাদের হেল্প করছে । সৌরভ বিশাল বড় প্রবেশ দারে ফুল লাগাচ্ছে আর কপাল চাপরাচ্ছে । রৌফ ঝারবাতি গুলো দেয়ালের সাথে লাগাচ্ছে । সিয়াম ফুলের মালা গুলো সিঁড়িতে না লাগিয়ে গলায় পেচিয়ে নিজে সুইসাইড করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে । সামির আর সৌম দাদীর পা আরেকজন ঘাড় টিপে দিচ্ছে । সবার বেহাল দশা ।
এই সব দেখে সবাই হাসবে না কানবে তাই ভাবতে পারছেনা । মেহতাব কিছু না বলে সোফায় বসে পরলো । অরিন বেগম মেঘ আর অহনা মুখ টিপে হেসে নিজেদের রুম এ চলে গেলো । পার্লার থেকে মেঘ আর অহনাকে সাজাতে এসেছে তাই তারা আর সেখানে থাকলো না । আর অরিন বেগম টুক টাক কিছু কাজ সেরে নিতে সেও চলে গেলো আর যাওয়ার সময় মেহতাবের দাদিকে সঙ্গে করে রুম এ দিয়ে আসার জন্য নিয়ে গেলো । দাদী যাওয়ার সাথে সাথে সিমরান একটি ছবি তুলে নিলো আর সৌরভদের উদ্দেশ্য করে পিঞ্চ মেরে বললো ,
সিমরান : এতো হাল নয় যেন বেহাল ।
এতে সিয়াম রাগ করে বললো,
সিয়াম : চুপ থাক সিমের বিচি ।
এই কথা শুনে সিমরান রেগে বললো ,
সিমরান : আমি যদি সিমের বিচি হই তাইলে তুমি পটাশিয়াম ।
রৌফ : বেড়ে বলেছিস তো । তোদের কথা শুনে আমার কবিতা পাচ্ছে ।
শাম্মি : ওয়াশ রুম এ যাও । এইখানে তোমার পচা কবিতার গন্ধ শুনতে কেউ ইন্টারএস্টেট নই।
রৌফ : শাম্মি ভালো হয়ে যা ভালো হইতে জামাই লাগে না ।
মেহতাব : তোরা থামবি । সবাই যার যার রুম এ যা। ( রেগে গিয়ে )
মেহতাবের কথায় সৌরভ আর সৌমিক ছাড়া সবাই চলে গেলো ।
সৌম : ভাইয়া । Can I ask something ?
মেহতাব : হুম বল । কি জানতে চাস ?
সৌম : এতো শপিং কি ভাবির জন্য তুমি করেছো?
সৌরভ : হ্যাঁ বলো বন্ধু আমি তোমার নেংটা কালের বন্ধু হয়ে জানতে উচ্ছুক হচ্ছি ।
মেহতাব এর প্রতিউত্তরে কিছু না বলে সব শপিং ব্যাগ নিয়ে উপরে চলে গেলো ।
সৌরভ : বেডায় আমার নেংটা কালরে অপমান করলো ।
সৌম : থাক আমার বাল্য কালের ভাই। আসো কোলাকোলি করি ।
( মেহতাব এর রুম এ )
মেঘের সাজা প্রায় শেষ। মেঘ আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছিলো। সে গোল্ডেন কালারের একটি কাতানের শাড়ি পড়েছে নিল কারুকার্য করা পাড়ের দিকে , নিল কালারের গর্জীয়াস ব্লাউজ। চোখে ঘন কাজল , ঠোটে রেড কালারের লিপস্টিক , চুলগুলো খোপা করা। মেঘ বেশি গর্জিয়াস মেকআপ পছন্দ করে না। তাই সে পার্লারের লোকদের কাছে সাজেনি । কিছুক্ষণ পর মেহতাব ফোন স্ক্রল করতে করতে রুম এ ঢুকলো আর মেঘ কে একনজর দেখে আবার নিচে চলে গেলো । এতে মেঘের খুব অভিমান হলো । তারই কিছুক্ষন এর মধ্যে মেহতাব আবার রুম এ প্রবেশ করলো হাতে কিছু একটা নিয়ে । আর সেটা গহনার বক্স থেকে খুলে নিজ হাতে মেঘের গলায় পরিয়ে দিলো । একটি হীরের হার দেখতে বেশ সুন্দর । দেখেই বোঝা যাচ্ছে অনেক দাম হবে । আর একটা বেলী ফুলের মালা চুলের খোপাই পরম যত্নে পরিয়ে দিলো । তারপর মেঘকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আয়নার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বললো,
মেহতাব : এখন গেট আপ কমপ্লিট হয়েছে । (মেঘের ঘাড়ে মাথা রেখে)
মেঘ নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো সত্বি ওই গলার নেকলেস আর বেলী ফুলের মালা খোপায় দেওয়ার পর তাকে আগের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে ।
চলবে………