#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব:২
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
মিনহাজ চৌধুরি : বিয়েটা হয়ে যাক তোর সব শর্ত মানব।
মেহতাব : Ok then .
মিনহাজ চৌধুরি : আলহামদুলিল্লাহ বিয়ে টা তাহলে সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন হলো ।
(বিয়ের আসরে )
সব মেয়েদের চোখ এখন মেহতাব এর দিকে কিন্তু মেঘ এর একটাই চিন্তা মেহতাব কি তাকে মেনে নেবে তার ভাগ্যে সুখ সইবে। জন্মের পরে বাবা-মা ছেড়ে চলে গেছে। বিয়ের দিন হবু বড় তার বড় বোনের সাথে বিয়ে করেছে।
(অহনার দিকে তাকিয়ে)
মেঘ : আপু তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো আমার জন্য আজ তোমার চাকরি করার সপ্ন ভেঙে গেছে। তারা কি তোমায় চাকরি করতে দেবে। আমি শুনেছি তারা খুব ভালো মানুষ । আমায় ক্ষমা করে দেও আমার জন্য তোমার সপ্ন পুরণ হলো না ।
অহনা : পাগলি এতে তোর দোস কোথায় আমি শুধু চাই তুই যেন সুখি থাকিস একটা ভুলবুঝাবুঝির জন্য আরেকটু হলে আমাদের সম্মান ধুলোয় মিশে যেত যদি না মেহতাব লন্ডন থেকে এই বিয়েতে না আসত ।
মেঘ : আমি খুশি এই বিয়ে নিয়ে তুমি এত চিন্তা করো না । যার সাথে বিয়ে হওযার কথা ছিল তাকে আমি চিনি না কিন্তু সে খুব ভালো মানুষ শুনেছি তোমাকে অনেক সুখি রাখবে । আমার বড় বোন আমার জা আমি তো অনেক খুশি তবুও অচেনা পরিবেশে চেনা কাওকে পাব।
অহনা : আমার কিছুই মাথায় আসছে না। আমি শুধু তোকে খুশি দেখতে চাই । ( কান্নার স্বরে )
মেঘ : তুমি সবসময় ধৈর্যশীল থাকতে বলো তাহলে কান্না কেন করছো আপু তোমার কান্না দেখলে আমার ও কান্না পায় তুমি কান্না থামাও না হলে আমিও কান্না করে দিব কিন্তু । তুমিই তো বলো আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন।
(বাসর ঘরে)
সৌরভ ( মেহতাব এর বন্ধু ) : শোন সবাই একটা টাকাও কম নিবি না। শালায় জীবনে একটা ছেড়া লুঙি পর্যন্ত দেয় নাই । বিদেশ এ গিয়া আমাগো ভুইলা চিনি দিয়া মিশাইয়া খাইছে। বৌ এর কাছে আমরা ওরে ফজর এর আজানের আগে যাইতে দিমু না।
সিমরান ( খালাতো বোন ) : না আর মানা যায় না । তুমি যেই গুছি ( GUCCI ) শার্ট পড়ছ ওই টা কি তোমার শশুর দিছে । মেহতাব ভাইয়া তোমার বার্থডেতে দিছে।
সৌরভ : ভাইয়ের বোইন চুপ থাক। আমি কি তা কইছি গাধা ।
সিমরান : আমি গাধী হতে পারি কিন্তু গাধা না। তাইলে কি বলছ ?
সৌরভ : সবি দিছে খালি কোনো ছিরা লুঙি দেয় নাই এইটা কইতে চাইছি । বৌ নাই একটা লুঙি বা কম্বল অন্তত দিত ।
(সৌরভ কথা শুনে সবাই হা হা করে হেসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা)
রৌফ ( মেহতাব এর বন্ধু ) : সবি ঠিক আছে আগে ওগো মধ্যে ঝামেলা শেষ করতে হইব । মানে মেঘ আর মেহতাব অর মধ্যে ।
মিথিলা ( মেহতাব এর খালাতো বোন ) : আমি কিন্তু রৌফ ভাইয়ের সাথে সহমত ।
শাম্মি ( মেহতাব এর খালাতো বোন ) : হুম আমিও ।
সিয়াম ( মেহতাব এর বন্ধু ) : আমিও সহমত কিন্তু মেহতাব এত ইজি প্লেয়ার না ও মেয়েদের দিকে তাকাই না আবার প্রেম করব বৌ এর লগে মনে নাই তোগও কলেজে সব মেয়েরা অর জন্য পাগল ছিল ও তো পাত্তাই দিত না । দেখবি ও কয়দিন পর লন্ডন যাইবও গা ।
সৌম ( মেহতাব এর মামাতো ভাই ) : তাইলে কি করা যাই মাথা তো খালি ।
সামির ( মেহতাব এর বন্ধু) : তার জন্য দরকার বুদ্ধি আর বুদ্ধির জন্য দরকার খাবার আমি তো এই জায়গার সব চেয়ে বুদ্ধি বিশেষজ্ঞ ।
মিথিলা : ok then prove it . যে বুদ্ধি = খাবার ।
সামির : বুদ্ধি পাওয়ার জন্য দরকার ঠান্ডা মাথা ঠান্ডা মাথার জন্য দরকার পেটের শান্তি আর পেটের শান্তির জন্য দরকার খাবার।
তাই সামির বিশেষজ্ঞ প্রমান করছে যে,
বুদ্ধি = খাবার
L.H.S = R.H.S
সৌরভ : বাহ ! আমার চেলা আমার থেকে বিশেষজ্ঞতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।
সৌরভ এর কথা শুনে সবার পেট ফাটার অবস্থা ।
রৌফ : যেমন গুরু তার তেমন শিষ্য । একটা গাধা আরেকটা রাম গাধা।
সৌরভ : মুখ সামলা নাইলে দাত সহ খুইলা পরব ।
মেহসান ( মেহতাব এর ছোটো ভাই ) : হুল্লোড় পার্টি আমায় ছাড়া কি প্লান করছে ।
সিয়াম : ভাবতাছি কিভাবে মেহসান এর ১০ নম্বর গার্লফ্রেন্ড কে পটানো যায়।
মেহসান : I’M A PURE BOY . তোমরা এইসব কিভাবে ভাবতে পারলে । ( নকল কান্না করে )
সিমরান : না মেহসান এইসব কিছুই না আমরা মেহসান ভাইয়া আর মেঘ ভাবিকে একসাথে করতে চাইছি তাই নিয়ে আলোচনা।
মেহসান : নো টেনশন , মেহসান করে সকল সমস্যার অবসান । এখন বলো সমস্যা টা কি?
সামির : আমি বুঝায়,
মেহতাব = রাগী , মেঘ= মিষ্টি
রাগী = মিষ্টি
আর আমরা সবাই জানি, মেহতাব এর মিষ্টি তে এলার্জি ।
This is the problem.
সৌরভ : আমার ভাই থাম তুই তোর কি অঙ্ক তে মির্কি বেরাম ছিল।
মিথিলা : Bro they are coming . Be ready hullor party .
সবাই একসাথে দরজার প্রবেশ দারে দাড়িয়ে ।
মেহতাব : তোরা সব হুল্লোড় পার্টি একসাথে । Any problem ?
সবাই শাম্মিকে কানে কানে টাকা চাওয়ার জন্য বলছে ।
শাম্মি : Why me bro ?
সিমরান : আমি জানি ভাইয়া আমাদের ভালোবাসে কিন্তু আমি পারব না। অ্যাডভান্স এ বলে দিলাম।
মেহতাব : আচ্ছা শাম্মি তুই বল কি চাই । Hurry up I need to go to the wash room
এমনি অনেক ধকল গেছে তারাতারি বল । আমি কিছু বলবো না।
সামির : Actully dost ,
ফুলশয্যা রাত = গেট ধরা = টাকা = খাবার = অনাহার থেকে মুক্তি ( মায়াবি চেহারা করে )
মেহতাব : তা ক্লিয়ার করে বললেই তো হতো গাধা।
এই নে এতে হয়ে যাবে আশা করি 40000 টাকার একটা কার্ড দিয়ে ( আগেই বলে নিলাম তারা টপ বিজিনেসম্যান তারা অনেক বড়লোক ) আর সিমরান , শাম্মি , মিথিলা তোরা মেঘ কে নিয়ে আসিস আমি গাড়ি থেকে এসে পড়েছি। Go hurry up or they can say I’m not a responsible person .
চলবে……
#তুমি_এসেছিলে_বলে
পর্ব ৩
#নাদিয়া_আক্তার_সিয়া
বাড়ির সামনে দাড়িয়ে আছে মেঘ আর অহনা । তারা বুঝতে পারছেনা । এটা বাড়ি না রাজপ্রাসাদ । ছোট বেলায় দাদুমনির কাছে অনেক রাজা-রানীর রাজপ্রাসাধ এর কথা শুনেছে আজ তা দেখেও নিল ।
অহনা : মেঘ আমাদের মতো গরিব ঘরের মেয়েদের তারা কেনো নিজেদের বাড়ির বৌ করে এনেছে।
মেঘ : জানি না আপু । কিন্তু তাদের মন কি এই বাড়ির মতো সুন্দর হবে। নাকি আমদের অপমান করবে আমরা তো তাদের মতো এতো বড়লোক নই আমরা তো মধ্যবিত্ত শ্রেণীর।
“এই যে দুই ভাবি এতো কী ভাবছো বাড়িতে ঢুকবে না ” মিথিলা বলল।
মিথিলার ডাকে তাদের হুশ ফিরল ।
সিমরান : আসো ভিতরে চিন্তা নেই । DON’T WORRY .
শাম্মি : আরে আসো তো ( হাত ধরে ঢুকিয়ে দিয়ে )
অরিন সাহেবা ( মেহতাব এর মা ) : বাহ! আমার দুই ছেলের তো কপাল খুলে গেছে লাল টুকটুকে বৌ পেয়েছে ।
(এই কথা শুনে দুজেনে খুব লজ্জা পেয়েছে)।
শাম্মি : লজ্জা পেয়েও না আজকে রাতে অনেক লজ্জার কথা শুনতে হবে । তক্ষণ এর জন্য বরং তুলে রাখো ।
অরিন বেগম : সিমু তোর মেয়ে তো ভালোই পেকেছে ।
সিমু বেগম ( মেহতাব এর খালামনি ) : একদম ঠিক বলেছো আপা । এক এক টা বাদর এর হাড্ডি ।
মারজা বেগম ( মেহতাব এর দাদী ) : আমার নাতনির বৌ গো তো দেখলাম। এখন শুধু পুতি গো দেহনের পালা ।
(হুল্লা পার্টি নিচে নামতে নামতে)
সৌরভ : দাদী আপনি তো এহনো যৌবোন ধইরা রাখছেন আপনারে দেইখ্যা মনে হয় এহনো পাত্র খুজলে লাইন লাইগা যাইবো ।
মারজা বেগম : (সৌরভ এর কথা শুনে রেগে) দাড়া বান্দর ছেড়া তোর একদিন কী আমার একদিন । (লাঠি নিয়ে এগিয়ে )
সৌরভ : আরে থামো দাদী ভাবি গো সামনে ইজ্জত টা রাখলা না । ( লাঠির বারি থেকে বাচার জন্য দৌড় দিয়ে বলতে বলতে )
(সবাই তাদের কান্ড দেখে ইতিমধ্যে হাসি হাসি শুরু করে দিয়েছে । মেঘ আর অহনাও হাসছে )
মারজা বেগম : বদমাইশ পোলাপান তোগো লইগা
মইরাও শান্তি পামু না তায় আবার কবরে গিয়া কইবি দাদী উঠো তোমার লেইগা একটা পাত্র পাইছি বিয়া করবা না।
( দাদীর কথা শুনে এবার হাসির আওয়াজ আরো বেড়ে গেল )
অরিন বেগম : হুশ সবাই থাম । আজ সবার অনেক ধকল গেছে সবাই ঘুমাতে যা আর সিমরান , মিথিলা , শাম্মি তোরা মেঘ আর অরিন কি নিজেদের রুম দেখিয়ে দে। মেঘ কে মেহতাব এর রুম এ আর অহনা কে আহতাব এর রুম এ ।
তারা ৩ জন মেঘ আর অহনা কে নিজেদের রুম এ দিয়ে চলে গেল ।
মেঘ : বাহ! রুম টা তো অনেক সুন্দর। ছেলেদের রুম এতো পরিপাটি হয় নাকি। কিন্তু মেহতাব কোথায় ? ( এই সব ভাবতে ভাবতে পিছনে যেতেই কোনো এক দেহের সাথে পিঠ ঠেকলো পিছনে তাকাতেই সে রীতি মতো অবাক। মেহতাব কে ভালো করে এই প্রথম দেখলো কোনো কমতি নেই যেন নিজেকে তার সাথে মাপতে গেলে কোনো অংশেই মানানসই নয় । উচ্চতা হবে হয়ত ৬ ফুট, গায়ের রঙ ধবধবে সাদা, চুলগুলো সিল্কি যা বাদামি আর কালো কালারের মিক্স , চোখের পাপড়ি গুলো অনেক বড় , ঠোঁটটা হাল্কা গোলাপি সব মিলিয়ে যেকোনো মেয়েকে পাগল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট । রাস্তায় হাটলেও যেকোনো মেয়ে তাকে দেখে উস্ঠা খেয়ে পরবে ।
মেহতাব : এই মেয়ে ।
( মেহতাব এর ডাকে মেঘ এর হুশ ফিরল )
মেঘ : জি বলুন ।
মেহতাব : যাও ফ্রেশ হয়ে নেও।
(মেহতাবের কথা শুনে মেঘ যেন আকাশ থেকে পরল সে ভেবেছিল তাকে মেহতাব অনেক কটু কথা শুনাবে কারন এই বিয়েটা হঠাৎ হয়েছে কেউই তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না )
মেঘ : আপনার কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন আমি কিছু মনে করব না।( মেহতাব এর দিকে তাকিয়ে )
মেহতাব : তুমি যদি ভেবে থাকো যে আমি তোমাকে অত্যা**চার করব কারন এই বিয়ে আমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে হয়েছে । তাহলে তুমি ভুল ভাবছো। আমি মেয়েদের গায়ে হাত তুলি না বা তাদের সম্মান কে অপমান এর চোখে দেখি না ।
মেঘ : আসলে আমি আপনার কাছে দুঃখিত আমার পরিবারের সম্মান বাচানোর জন্য আজ আপনাকে আমার মতো একটা অজানা অচেনা মেয়েকে বিয়ে করতে হলো।
মেহতাব : IT’S NOT YOUR FAULT . SO , DON’T BE SORRY . যাও ওয়াশরুম এ গিয়ে চেঞ্জ করে নেও নাকি এগুলো পরে ঘুমাবে।
মেঘ : হুম , যাচ্ছি।
(ওয়াশরুম এ আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে)
মেঘ : কে বলেছে তুই সুন্দর না। মাসআল্লাহ করো নজর যেন না লাগে ।
(মেঘ মেহতাব এর থেকে অতো সুন্দর না হলেও কম যায় না। গায়ের রং ধবধবে ফর্সা না হলেও ফর্সা , চুলগুলো অনেক সিল্কি কোমর পর্যন্ত ছাড়িয়ে গেছে , গোলাপি ঠোট, ঠোঁটের বাম পাশে ছোট একটি তিল। যেকোনো পুরুষকে পাগল করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট)
চলবে…….