তুমি এলে তাই পর্ব-১১

0
115

#তুমি_এলে_তাই
#পর্বঃ১১
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা

আরশি কলেজ ছুটির পরই চৈতিদের বিল্ডিংএর সামনে এসে দাঁড়িয়ে শুভ্রকে ফোন করল।ফোন রিসিভ করতেই আরশি বলল,

“আমি আপনার বাসার নিচে।তাড়াতাড়ি আসেন।”

বলেই ফোন রেখে দিল।শুভ্র কিছুক্ষন মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইল।এই মেয়ে এমন কেন?এভাবে হুট করে কেও ফোন দিয়ে নিচে আসতে বলে?উত্তরে যে কিছু বলবে তারও তো সুযোগ দেয় নাই মেয়েটা।আজব!
ভাবতে ভাবতে দরজা লক করে নিচে গেটের সামনে যেতেই আরশিকে দেখতে পেল।কাধে ব্যাগ দেখেই বুজল কলেজ থেকেই সরাসরি এসেছে।

“কিরে?কি এমন দরকার পরল যে কলেজ থেকে ডাইরেক্ট আমার বাসায় চলে আসলি?”

“চৈতি যে রেস্টুরেন্টে ছেলের সাথে দেখা করতে গেছে জানেন?”

“হ্যা!না জানার কি আছে।অই তো বলল।”

“ওকে গিয়ে নিয়ে আসুন।ও বাসা থেকে টাকার ব্যাগ নিতে ভুলে গেছে।ওর কাছে এখন এক টাকাও নাই।”

“কিন্তু আমার তো একটু কাজ ছিল।”

“ও আসবে কি করে?আমি রেস্টুরেন্টের ঠিকানা,নাম সবকিছু মেসেজে জানিয়ে দিচ্ছি আপনি যান।”

“আচ্ছা।একটু রেডি হয়ে আসি।”

“হুম।আমি গেলাম।”

শুভ্র ঘরে ফিরে রেডি হয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পরল।গুলশানের কোন একটা রেস্টুরেন্টেই নাকি দেখা করতে গিয়েছে।কিছুদুর যেতেই হঠাত একটা রেস্টুরেন্টের কাছে ভীড় দেখতে পেল।দুর থেকে যা বুঝল অই রেস্টুরেন্টে আগুন লেগেছে।কাজ করে কিভাবে এরা যে আগুন লাগার চান্স থাকে।এত এত মানুষ যায় একটু সাবধানে কাজ করলেই তো হয়।না জানি কত মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।মনে মনে বিরক্ত হয়ে গাড়ি সামনে আগাতে নিয়েই কি একটা মনে করে গাড়ি থামালো।এই রেস্টুরেন্টে আবার চৈতি নাই তো?রেস্টুরেন্টের নামটা কেমন চেনাচেনা লাগছে।মনে মনে দোয়া করছে এই রেস্টুরেন্টে যেন চৈতি না থাকে।কাঁপা কাঁপা হাতে মোবাইল বের করে মেসেজে গিয়েই নামটা দেখে হাত থেকে মোবাইলটা নিচে পরে গেল।তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে৷ ভীড় ঠেলে সামনে যেতেই কয়েকটা পুলিশ থামিয়ে বলল,

“ভিতরে আগুন লেগেছে দেখতে পারছেন না?”

“রেস্টুরেন্টের ভিতরে আমার পরিচিত একজন আছে।”

“ভেতরে কেও নেই।”

“আছে।আমি সিউর!”

“আপনি জানলেন কি করে?”

“দেখুন মেয়েটা যে হট্টগোল শুনে বেরিয়ে আসবে তার কোন চান্স নেই কারণ সে কানে শুনতে পারে না।আর ভিতরে থাকলে চিৎকার করে যে কাওকে ডাকবে সেটাও পসিবল না কারণ সে কথা বলতে পারে না।”

“উনি নিশ্চয়ই বেরিয়ে গিয়েছেন।আপনি শুধু শুধু টেনশন করছেন।”

“আমি নিজে গিয়ে চেক করতে চাই।”

“কিন্তু এতে আপনার ক্ষতি হবে।”

“আমার কোন ক্ষতি হবে না। যেতে দিন আমাকে।আমি জাস্ট সিউর হতে চাই যে উনি ভিতরে আছেন কিনা।প্লিজ যেতে দিন আমাকে।”

“দেখুন আমি আপনার অবস্তাটা বুঝতে পারছি।আমার হাতে কিছুই করার নেই।একজনের জীবন বাঁচাতে আমি আরেকজনকে বিপদে ফেলতে পারি না। ”

“আমার যদি কিছু হয় তার দায়ভার আমি নিব।আপনাকে বিপদে ফালাব না।প্লিজ একটু বুঝার চেষ্টা করুন।মেয়েটা অসহায়!ও নিজে কিছু করতে পারবে না।সাহায্যের জন্য চিৎকারও করতে পারবে না।প্লিজ আমাকে যেতে দিন।”

“কিন্তু…..”

“যেতে দাও ওকে।এখনও আগুন অতটাও ছড়ায়নি যে যেতে পারবে না ও।যেতে দাও ওকে উনাকে তুমি আটকে রাখতে পারবে না।”

কথাটা শুনে শুভ্র আর পুলিশ অফিসার দুইজনেই পাশে তাকালো।লোকটাকে দেখেই পুলিশের লোকটা বলল,

“অবশ্যই স্যার।আপনি যেতে পারেন।”

শুভ্র আর এক মুহুর্তও দেরি না করে সিড়ি দিয়ে বেয়ে রেস্টুরেন্টের ভিতর প্রবেশ করল।
.
.
চৈতির নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।ও এখনো বুঝতে পারছে না রেস্টুরেন্টে হঠাত করে কি হলো?রেস্টুরেন্টে কি আগুন লেগেছে?কেও ওকে ডাকলো না কেন?কিছুক্ষন পর পর কাশি আসছে। তার সাথে শ্বাসকষ্ট তো রয়েছেই।না ওকে এখান থেকে বের হতে হবে।ভেবেই চেয়ার থেকে উঠে একটু হেঁটে সামনে যেতেই পরে যেতে নিলে কেও একজন দুহাত দিয়ে আঁকড়ে ধরল।চৈতি তাকাতেই শুভ্রের মুখ ভেসে উঠল।

“চৈতি,চোখ বন্ধ করবেন না। চোখ খোলা রাখুন।কিচ্ছু হয়নি আপনার।এক্ষুনি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

বলেই পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে চৈতির মুখের সামনে ধরল যাতে ধোয়া নাকে যেতে না পারে।চৈতি এত ধোয়ার মাঝে শুভ্রের বলা কথাটুকু বুঝতে পারল না।

“চলুন।”

এক হাতে জড়িয়েই সিড়ি দিয়ে নামার সময় সিড়ির নিচে আগুন দেখে ভয়ে চৈতি স্তব্দ হয়ে দাঁড়িয়ে গেল।চৈতিকে দাঁড়াতে দেখে শুভ্র বলল,

“কি হলো?এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন?চলুন!আমাদের হাতে বেশি সময় নেই।”

চৈতি তখনও ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আগুনের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।চৈতিকে ছেড়ে ইশারায় বলল,

“চৈতি আমাদের যেতে হবে এখান থেকে।সিড়ির নিচের দিকে তাকাবেন না।চোখ বন্ধ করে রাখুন দরকার হলে।প্লিজ চলুন এখান থেকে।নইলে পরে আটকা পরে যাব দুজনে!”

শুভ্রের কথা শুনে চৈতির হুশ ফিরল।নাথা নেড়ে সিড়ি বেয়ে নামতে শুরু করল।

রেস্টুরেন্ট থেকে নেমেই একটা পার্কের বেঞ্চে বসিয়ে দিয়ে পাশের দোকান থেকে এক বোতল পানি এনে চৈতির দিকে এগিয়ে দিল শুভ্র।শুভ্রের হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে এক ঢোকে পুরো পানির বোতলের পানি খেয়ে একটা জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করল।

“ঠিক আছেন আপনি?”

চৈতি মাথা নাড়লো।

“চলুন ডাক্তারের কাছে যাই।”

“নাহ, আমার ডাক্তার দেখানো লাগবে না।আমি একদম আছি।”

“কিন্তু তাও…..কোথাও ব্যাথা পাননি তো?”

“নাহ,ধন্যবাদ। হেল্প করার জন্য। এত বড় বিপদ থেকে বাঁচানোর জন্য।আমি জানতামই না আগুন যে লেগেছে।কেও বলেও নাই।হঠাত নাকে ধোয়ার গন্ধ পেয়ে আশেপাশে তাকাতেই দেখি কেও নেই।ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।সবাই নিশ্চয়ই নিজের জীবন বাঁচানোর জন্যই দৌড়ে চলে গিয়েছিল।তাই আমাকে তাদের চোখে পরেনি।আর আমিও কি একটা চিন্তায় বিভোর ছিলাম তাই হয়তো টের পাইনি।”

“কিন্তু তাও ওদের তো উচিত ছিল আপনাকে জানানোর!আপনাকে খোঁজার জন্য যখন যেতে চেয়েছিলাম তখন পুলিশ আমাকে বলেছিল ভিতরে নাকি কেও নাই!চেক করেছেন তারা।তাহলে আপনি কই থেকে আসলেন?একটা জল জ্যান্ত মানুষকে নাকি তারা দেখেননি!কিভাবে সম্ভব?শুধু আপনার জন্য ওদের কিছু বললাম না।নইলে আমিও শেষ দেখে ছাড়তাম।ওদের পুলিশ হওয়ার কোন যোগ্যতাই নেই!”

শুভ্রকে এত রাগতে কখনো চৈতি দেখেনি।আজকেই ফাস্ট দেখল।এর আগে যতবারই কথা হয়েছে শুভ্র যথেষ্ট নরম, শান্ত কন্ঠে কথা বলেছে।

“আপনি এত রেগে যাচ্ছেন কেন?কিছু তো হয়নি তাই না?”

“হতে তো পারত!অনেক বড় একটা এক্সিডেন্ট হতে পারতো।আমি সময়মতো না গেলে…..”

“শান্ত হন।”

শুভ্র একটা জোরে শ্বাস নিয়ে শান্ত হয়ে বলল,

” আপনি যে ছেলের সাথে দেখা করতে এসেছেন সেই ছেলে কই?ওকে তো দেখলাম না!”

“উনি অনেক আগেই চলে গেছেন।”

“কিহ্!কিন্তু আপনাকে ফেলে উনি কিভাবে চলে গেলেন?”

“আমিই যেতে বলেছি উনাকে।”

“কিন্তু কেন?”

“বাদ দেন না!”

“আচ্ছা।বাসায় যাবেন এখন?”

“হুম।”

“চলুন।”

চৈতি বেঞ্চ থেকে উঠে শুভ্রের পিছু পিছু হাঁটতে লাগল।গাড়ির সামনে আসতেই শুভ্র গাড়ির দরজা খোলে দিলো।চৈতি চুপচাপ সিটে বসে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইল।শুভ্র নিজের সিটে বসে চৈতির দিকে একবার তাকিয়ে একটা নিঃশ্বাস ফেলল।অতঃপর গাড়ি চালানোর দিকে মনযোগ দিল।বাসার সামনে আসতেই গাড়িটা গ্যারেজে পার্কিং করে চৈতির সামনে এসে বলল,

“চলুন!আপনাকে আপনার বাসায় দিয়ে আসি।”

“আমি পারব যেতে!”

“কোন কথা না।এত বড় এক্সিডেন্টের পর আপনার শরীর দুর্বল হয়ে আছে আমি কোন রিস্ক নিতে চাচ্ছি
না।”

“কিন্তু….”

“আপনার মা তো আমাকে চিনেনই!তাহলে অসুবিধাটা কোথায়?”।

” আচ্ছা চলুন।”

দরজা নক করতেই দরজা খুলতে খুলতে চৈতির মা বললেন,

“কিরে!এত দেরি হলো কেন?”

সামনের দিকে তাকাতে শুভ্রকে দেখে বললেন,

“একি শুভ্র বাবা তুমি?আর চৈতির কি হয়েছে?”

“একটু পরে বলি?উনার রুম কোনদিকে?”

চৈতির মা হাত দিয়ে দেখিয়ে দিতেই শুভ্র চৈতিকে ওর রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,

“আপনি রেস্ট নিন।”
চৈতিকে বসিয়ে রুম থেকে বের হতেই চৈতির মা সামনে এসে বললেন,

“বলবে তো!ওর কি হয়েছে?চোখ মুখ অমন হয়ে আছে কেন ওর?”

শুভ্র সব খুলে বলতেই চৈতির মা বললেন,

“বলো কি?ওর কোন কিছু হয়নি তো?”

শুভ্র হেসে বলল,

“নাহ আন্টি!একদম ঠিক আছে ও।”

“তোমাকে যে কি বলে ধন্যবাদ দিব…”

“আরে আন্টি!তার কোন দরকার নেই।আমি আজ আসি।”

চৈতিদের বাসা থেকে বের হতেই মোবাইলে ফোন আসল।পকেট থেকে ফোনটা বের করে রিসিভ করতে অপর পাশ থেকে…..
#চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে