তুমি অপরূপা পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
878

#তুমি-অপরূপা(২৯)

রূপার জ্বর যেনো পাল্লা দিয়ে বাড়ছে।রূপক নিজ হাতে স্যুপ বানিয়ে আনলো রূপার জন্য। সেই স্যুপ মুখে দিতেই রূপা বমি করে ভাসিয়ে দিলো রত্নার সারা শরীর। হাসিমুখে রত্না রূপাক ধরে রাখলো।
বমি করার পর রূপার শরীর ভীষণ হালকা হয়ে গেলো। মাথার ভেতর বড্ড ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।
জ্বরের প্রলাপে রূপা বারবার বলতে লাগলো, “মা আমি তোমার অপরূপা গো মা।আমাকে চিনতে পারছো না কেন তুমি মা?আমি কখনো ভুল কাজ করবো না মা।আমাকে একটু বিশ্বাস করো তুমি। ”

রূপার সম্পর্কে রত্না পান্না কেউ-ই কিছু জানে না।তাই তারা বুঝতেই পারলো না রূপার এসব কথার মানে।
রাত যখন ১১ টা বাজে সমুদ্রের ফোনে টেক্সট এলো রূপার ভীষণ জ্বর।

সমুদ্র তখন রূপার স্বপ্নে বিভোর। মনের খুশি খুশি ভাব উড়ে গেলো মুহূর্তে। রূপক উঠে টিশার্ট গায়ে চাপিয়ে বের হতে যেতেই রেখার প্রশ্নের সম্মুখীন হলো। রেখা সবেমাত্র বিছানায় পিঠ লাগিয়েছে। এই অবস্থায় শুনলেন সমুদ্র দরজা খুলে বের হচ্ছে।

উঠে এসে রেখা ছেলের হাত চেপে ধরলেন। সমুদ্র মায়ের এই ব্যবহারে কিছুটা অবাক হলো। রেখা হলেন উদ্বিগ্ন।
সমুদ্র তো কখনো এতো রাতে বের হয় না তাকে না জানিয়ে। অথচ এখন কি হলো তার?

কিছুটা কর্তৃত্বপরায়ণ হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, “এতো রাতে কোথায় বের হচ্ছো তুমি আমাকে না জানিয়ে? ”

সমুদ্র অবাক হলো। অবাক হয়েই বললো, “আমার একটু কাজ আছে মা।আমাকে যেতে হবে।হয়তো ফিরবো না রাতে।তুমি শুয়ে পড়ো।”

রেখার গলা চড়লো।বিরক্তি প্রকাশ করে বললেন,”তোমার সমস্যা কি সমুদ্র?দিন দিন তুমি দেখছি বাউন্ডুলে হয়ে যাচ্ছ!এতো রাতে কোনো ভদ্র ঘরের ছেলে বাসার বাহির হয় না সমুদ্র।আর বাহিরে রাত কাটানোর কথা তুমি ভাবলে কি করে আমার অনুমতি না নিয়ে? ”

সমুদ্র হতভম্বের সুরে বললো, “মা,আমি যথেষ্ট বড় হয়েছি।আমার একটা প্রাইভেসি আছে।অভিভাবক হিসেবে তোমার দেখা উচিত আমি ভুল কিছু করছি কি-না। আমি তোমাকে হলফ করে বলতে পারি আমি ভুল কিছু করছি না।আমাকে যেতেই হবে মা।”

রেখা ও রেগে বললো, “কি কাজে বের হবে আমাকে বলো তুমি আগে,তারপর আমি ভেবে দেখবো তোমাকে অনুমতি দেওয়া যায় কি-না। ”

“যথাযথ সময় এলে আমি সবার আগে তোমাকেই জানাবো মা।এখন আপাতত বলতে পারবো না। আমাকে যেতে হবে মা।”

“না তুমি কিছুতেই যাবে না।ভেতরে আসো।”

সমুদ্র আরেকটু পিছিয়ে গিয়ে বললো, “আমি সরি মা।তবে আজ আমি তোমার কথা রাখতে পারবো না।আমার যাওয়াটা ভীষণ জরুরি। আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে যদি না যেতে পারি এই মুহূর্তে। ”

রেখা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলেন। সমুদ্র কিছুদূর গিয়ে ফিরে তাকিয়ে বললো, “ঘুমিয়ে যাও মা।আমার আজ রাতে আর ফেরা হবে না। ”

সমুদ্র চলে যেতেই রেখা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো। এই তার ছেলে!
তার সমুদ্র!
যে ছেলে মায়ের অনুমতি ছাড়া কিছু করে না,কিসের জন্য সে এরকম করে আজ মা’কে উপেক্ষা করে চলে গেলো!
সত্যি কি তবে তিনি যা ভাবছেন তা?
ছেলে ও কি তার চাচার পথের পথিক হবে?
নিজের হাতের মুঠোয় যার লাগাম ছিলো এবার কি লাগাম ছিড়ে সে বের হয়ে যাবে!

রেখা কিছুতেই তা হতে দিবে না।সমুদ্র তাই করবে যা তার মা চাইবে।এর বাহিরে সমুদ্রের কোনো চাওয়া পাওয়া থাকতে পারে না কিছুতেই।রেখা কিছুতেই এটা সহ্য করতে পারবে না।

সমুদ্র রূপার বারান্দার সামনে দাঁড়িয়ে বারবার টহল দিচ্ছে।আস্তে আস্তে রাস্তা নির্জন হয়ে গেলো। সমুদ্র সেই নাম্বারে টেক্সট দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, “কি অবস্থা রূপার এখন?কোনো কিছু দরকার হলে আমাকে সাথে সাথে জানাবেন প্লিজ।আমি আপনাদের বাসার নিচে আছি।ঔষধ, মেডিসিন যাই লাগুক আমাকে জানাবেন।রূপাকে একটু লেবু সিদ্ধ করে খাওয়ান,মালটা খাওয়ানো দরকার ওকে। আমি এনে দিবো?”

ওপাশ থেকে টেক্সট এলো, “না দরকার নেই।আপনি চলে যান বাসায়।ওর বন্ধুরা ওর দেখাশোনা করছে।”

সমুদ্র টেক্সট দিলো, “আমার প্রাণ এখানে রেখে আমি বাসায় গিয়ে নিশ্চিন্তে থাকতে পারবো না।আমি এখানেই থাকবো।”

ল্যাম্পপোস্টের নিচে একা দাঁড়িয়ে রইলো সমুদ্র।বুকের ভেতর ভীষণ চাপ অনুভব হচ্ছে। রূপা সেরে যাবে তো!
একটা বার যদি রূপাকে দেখতে পেতো।
ওর উত্তপ্ত কপালে একটা বার যদি নিজের হাত রাখা যেতো!

আকাশের দিকে তাকিয়ে সমুদ্র বললো, “আল্লাহ,আজ রূপা অসুস্থ,অথচ আমাদের মাঝে কতো দূরত্ব। আমার রূপাকে আমার করে দাও যাতে এরপর আর ওর অসুস্থতায় অন্য কেউ নয় বরং আমি নিজে ওর সেবা করতে পারি।আজ আমরা যত দূরে তখন যেনো ঠিক ততটাই কাছাকাছি যেতে পারি।”

রূপক বারান্দায় এসে দাঁড়িয়ে চারদিকে তাকাতে তাকাতে দেখলো সমুদ্রকে।
বারবার মশা মারছে আর রূপার বারান্দার দিকে তাকাচ্ছে।

রূপকের ভীষণ হাসি পেলো। রেখা আন্টি আজ কিভাবে ছেলেকে ছেড়ে দিলো এভাবে?আজ তো রূপক ওর সাথে কথা বলে না তবে এবারও কার ঘাড়ে বন্দুক রেখে বলবেন যে “অমুকের জন্য আমার ছেলে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে! ”

রূপার জ্বর ছাড়লো সকাল দশটার দিকে। রূপক বারান্দায় গিয়ে দেখলো তখনও সমুদ্র দাঁড়িয়ে আছে একই জায়গায়, একই ভাবে।

আজকে আর রূপার কলেজে যাওয়া হবে না।রত্না পান্না কেউ-ই গেলো না। পান্না নিজে গেলো আজ নাশতা বানাতে। রূপার ঝাল ঝাল করে নুডলস করলো। রূপা তার কিছুই মুখে দিতে পারলো না।

রূপা খাচ্ছে না দেখে রূপক বের হলো বাহিরে।রূপার জন্য কলা আর রুটি কিনতে গেলো। কিছুটা দূরে ফলের দোকান আছে সেখান থেকে ফল কিনতে হবে।
অন্যমনস্ক হয়ে বাইক চালাতে গিয়ে এক্সিডেন্ট ঘটিয়ে ফেললো। বাম পায়ের হাটুর চামড়া অনেকখানি উঠে গেছে। টপটপ করে রক্ত পড়ছে।ডান হাত মুচকে গেছে।নাড়াতে পারছে না।
রূপক বহু কষ্টে কলা,পাউরুটি, মালটা,আঙ্গুর কিনে বাসার সামনে গিয়ে দারোয়ানকে দিলো।তারপর নিজে ডাক্তার দেখাতে গেলো।
কলা আর এক পিস রুটি খেয়ে রূপা ঔষধ খেয়ে নিলো।

রূপক বাসায় ফিরলো প্রায় দুই ঘন্টা পরে।রত্না আৎকে উঠলো এই অবস্থা দেখে। হাতে প্ল্যাসটার, পায়ে ব্যান্ডেজ,কপালে ব্যান্ডেজ।
রূপক রত্নাকে চুপ থাকতে বলে রুমে গেলো।

একটু শরীর ভালো লাগতেই রূপা বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো। বাহিরে তাকিয়ে দেখে সমুদ্র বাহিরে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে আছে তাদের বারান্দার দিকে তাকিয়ে।

রূপা রুমে চলে এলো। মনটা ভীষণ অস্থির হয়ে আছে।এরকম হচ্ছে কেনো তার সাথে!
সমুদ্র তো কোনো পাশ ছাড়ছে না তার।

বিছানায় বসে রূপা উপরের দিকে তাকিয়ে রইলো। মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে।সেই সাথে ঘুরছে রূপার মন। কেনো এরকম লাগছে!
একবার রাগ হচ্ছে ভীষণ সবার উপর। ইচ্ছে করছে নিজেও ভুল পথে পা বাড়ায়।যদি দোষ না করেও দোষী হতে হয় তবে এবার দোষ করবে সে ও।পরক্ষণেই মন বলছে, না এই পথে যাওয়া যাবে না।

রত্না রূপার পাশে বসে বললো, “কি ভাবছিস এতো?
কি হয়েছে তোর আমাকে বলবি একটু?গেলি আবার চলে এলি,আবার এরকম জ্বর বাঁধালি কিভাবে?কিছু হয়েছে বাড়িতে? ”

রূপা থম মেরে রইলো। রত্না বললো, “কাল রাতে অনেক প্রলাপ বকেছিস।আমার কাছে একটু বল কিসের এতো কষ্ট তোর?”

রূপার মনে হলো এই মেয়েটা তার ভীষণ আপন। একে বলে সে কিছুটা হালকা হতে পারে।
রত্নার কাছে সবটা খুলে বললো রূপা।অন্তরার কথা, অনামিকার কথা, মায়ের অসুস্থতার কথা।

রত্না সব শুনে বললো, “জানিস, আমার বড় ফুফুও এরকম করেছিলো। তারপর ফুফু আর ফিরে আসে নি।এই দেখ।”

রত্না উঠে গিয়ে কয়েকটা পেপার নিয়ে এলো এই মাসের।রত্না রূপার পাশে বসে বললো, “এখনো আমার দাদা ফুফুকে খোঁজাখুঁজি করে যাচ্ছে। প্রতি মাসে ৪ টা দৈনিক পত্রিকায় নিখোঁজ সংবাদ ছাপানো হয়।”

রূপা এক নজর তাকিয়ে দেখলো। পর মুহূর্তে চমকে উঠলো রূপা। রত্নার হাত থেকে টান দিয়ে পত্রিকা নিয়ে এক নিশ্বাসে পড়তে লাগলো।

মায়ের একটা অল্প বয়সী কালের ছবি।রূপা জানে এটা তার মা।
দুই চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো রূপার।কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমি চিনি,ওনাকে আমি চিনি রত্না।”

চমকে উঠলো রত্না।তারপর চিৎকার দিয়ে দাদাকে ডেকে বললো, “দাদা,জলদি আয়।ফুফুর খোঁজ পাওয়া গেছে দাদা।”

রূপক বিছানায় হেলান দিয়ে বসে ছিলো । রত্নার কথা কানে যেতেই রূপকের সারা শরীর কেঁপে উঠলো। ল্যাংচাতে ল্যাংচাতে গিয়ে বললো, “কই,আমার ফুফু কই।কই পেলি খবর?”

রত্না বললো, “রূপা না-কি চেনে ফুফুকে? ”

রূপা গুমরে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমি চিনি ওনাকে রূপকদা,আমি ওনাকে ভীষণ ভালো করে চিনি।উনি আমার অনেক আপন।”

রূপক কাছে গিয়ে বললো, “উনি কে হয় তোমার রূপা?আমার ফুফু এখন কোথায় আছে?আমাকে একবার বলো।আমি এখনই যাবো।”

পরক্ষণেই রূপার মনে হলো, বাবার অনুমতি না নিয়ে মায়ের পরিচয় এদের দিলে বাবা যদি রাগ করে?
একবার বাবাকে জিজ্ঞেস করে নেওয়া উচিত নয় কি?

চলবে…….

রাজিয়া রহমান

#তুমি_অপরূপা (৩০)
অন্তরা আর রেশমা একা বাসায় আজ তিন দিন হলো। জুয়েল গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। অন্তরার মনে মনে খুশির জোয়ার।জুয়েল রেশমাকে ডিভোর্স দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এজন্যেই তার গ্রামে যাওয়া।

জুয়েক বাড়ি গিয়ে বাবা মায়ের সাথে কথা বললো । জুয়েলের মা জমিলা বানু ভীষণ হিসেবি মানুষ। ছেলের কথা শুনে তিনি আর্তনাদ করে উঠলেন।শেষে কি-না জায়গাজমি বেচে বউ বিদায় করতে হবে?

জুয়েলের বাবা কিছু বলার আগে তিনি বললেন,”অসম্ভব এইডা।আমি কিছুতেই এরকম কিছু হইতে দিমু না।মগের মুল্লুক নি? এই জায়গা জমি করতে শরীরের রক্ত পানি করছি আমি।আমি কিছুতেই এসব করতে দিমু না।তাছাড়া ভুল মানুষেই করে। শয়তান আছেই তো মানুষরে দিয়া ভুল করানোর জন্যে। যা হইবার হইছে।ওরে তো ঘরে তুলছস।তাইলে এখন আবার এতো নাটক কিসের?তাছাড়া তোর পোলার কথা ও তো ভাবতে হইবো। পোলার মুখের দিকে তাকাইয়া হইলেও এখন এমন কিছু করিস না যাতে পোলার কাছে তুই অপরাধী হইয়া যাস।
এই বয়স সারাজীবন থাকবো না।তারপর আমাগো মতো বয়সে আইলে পোলাপানের কাছে যাওন লাগবো। তখন যদি তোর পোলা মুখ ফিরাইয়া নেয়?
নতুন যারে বিয়া করছস তার তো সন্তানাদির কোনো খবর নাই।আল্লাহ নারাজ হইয়া যদি তোরে আর সন্তান না দেয় তখন বুড়াকালে তোর কি হইবো জুয়েল,?

তোরা ভাইয়েগো সবার ৩-৪ টা পোলাপান, তোর তো এই একজনই।তারে যদি তুই এখন খেদাইয়া দেস,আল্লাহ তোরে মাফ করবো না।”

জুয়েলের মাথা ঘুরতে লাগলো এসব শুনে। মা যা বলেছে তা শুনতে খারাপ লাগলেও সত্যি।অন্তরাকে তো রানার জন্যই আনা হয়েছে মূলত। সেখানে যদি রানাকেই ত্যাগ করতে হয় তবে জুয়েল কিভাবে থাকবে?
অন্তরার মোহে পড়ে কিভাবে ছেলেকে ভুলে গেলো সে!

চোখের সামনে রানার সহজ সরল মুখখানা ভেসে উঠলো । জুয়েলের সিদ্ধান্ত বদলে গেলো সেই মুহুর্তে। না,কিছতেই সে রেশমাকে ডিভোর্স দিবে না।দু’জনকে রাখবে সে।কতো মানুষের তো দুই বউ একসাথে থাকে।তার থাকলে কি অসুবিধা!

জুয়েল সিদ্ধান্ত নিলো একটু কঠোর হবে দুজনের সাথে। তাহলে দুজনেই মিলেমিশে থাকবে ভয়ে।

————–

রূপকের দুই চোখে জিজ্ঞাসা। রূপা থম মেরে আছে। কিছুতেই হিসেব মিলাতে পারছে না সে।
একটা জীবন যেই নানাবাড়ি, মামাবাড়ির গল্প শুনেছে তা তাদের ও আছে?
এটা স্বপ্ন নয়তো!

মাথা ঝিমঝিম করছে। রূপক উৎকণ্ঠিত হয়ে বললো, “বলো রূপা,আমার ফুফুর ঠিকানাটা আমাকে বলো প্লিজ।আমার আর ধৈর্যের পরীক্ষা নিও না।”

রূপা কিছুটা ভেবে বললো, “আমি আগে তাদের অনুমতি নিতে হবে তারা আপনার কাছে তাদের পরিচয়, ঠিকানা দিতে অনুমতি দিলে তারপর আমি আপনাকে বলবো।তার আগে আমি কিছুতেই বলতে পারবো না। ”

রূপক অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়েটা এতো কঠোর!
রূপকের এই ব্যাকুলতা, এই অনুরোধ কিছুই তাকে কাবু করতে পারছে না। সে এখনো তার কথায় স্থির।

রূপা ফোন নিয়ে বারান্দায় উঠে গেলো। বাবাকে কল দিলো। সিরাজ হায়দার দোকানে বসে ঝিমাচ্ছে। বিক্রি বাট্টা নেই তেমন একটা। তাই ঝিমানো ছাড়া উপায় নেই।

রূপার ফোন আসতেই তাড়াতাড়ি রিসিভ করলেন।সালাম দিয়ে রূপা বললো, “আব্বা,আমি একটু অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম তাই আপনার কল রিসিভ করতে পারি নি।এখন ঠিক আছি।”

সিরাজ হায়দারের চিন্তা হলো মেয়ের অসুস্থতার কথা শুনে। জিজ্ঞেস করলেন, “ঔষধ খাচ্ছিস তো মা?”

রূপা হেসে বললো, “হ্যাঁ আব্বা।খাচ্ছি।আব্বা একটা কথা বলতাম?”

“কি কথা?”

আমি মায়ের বাবার বাড়ির সন্ধান পেয়েছি বাবা।মা’য়ের বাবার বাড়ির দিক থেকে মা’কে খোঁজার অনেক চেষ্টা তারা করেছে, এখনো করছে।আমি কি জানাবো মা’য়ের কথা? ”

সিরাজ হায়দার চুপ থেকে বললেন,”না।বলবি না মা।আমি তাদের সুস্থ মেয়ে এনেছি।তোর মা’কে ওরা এখন দেখলে আমি সবার কাছে ছোট হয়ে যাব।ওরা সবাই জানবে আমি তোর মায়ের যোগ্য না।আমি আসলেও তো তোর মায়ের যোগ্য না রে মা।আমাকে আর ছোট করিস না ওদের কাছে।”

রূপা কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো, “ঠিক আছে আব্বা।”

ভেতরে আসার সাথে সাথে রূপক বললো, “কি বললো রূপা?এবার তো বলো ঠিকানা। ”

রূপা মাথা নিচু করে বললো, “আমি পারবো না রূপকদা।আমি কিছুতেই তাদের খোঁজ দিতে পারবো না।আমাকে ক্ষমা করবেন।”

রূপক হতবাক হলো। আশার প্রদীপ জ্বলে এভাবে নিভে যাবে রূপক তা ভাবে নি।রূপক যেভাবেই হোক ফুফুর সন্ধান চায়।যেই দায়িত্ব তাকে দাদামশাই দিয়ে গেছেন তা তাকে সঠিকভাবে পালন করতেই হবে।

রূপক কিছু বলার আগেই রূপা চলে গেলো নিজেদের রুমে।
রূপা এখনো ভেবে পাচ্ছে না এরকম কাকতালীয় ঘটনা ও ঘটে!
কখনো কি ভেবেছে রূপা কোনো দিন এভাবে তাদের সন্ধান পাবে!

রূপা চলে আসতেই রূপক উঠে দাঁড়ালো। মাথায় রোখ চেপেছে তার।রূপা জানে তার ফুফুর খবর। রূপার কথা শুনে যতটা বুঝেছে অবশ্যই রূপার বাড়ির সাথে সম্পর্কিত কেউ।কিছুক্ষণ চুপ করে ভেবে রূপক পান্নাকে ডেকে পাঠালো।তারপর বললো রূপার রুমে গিয়ে এক সুযোগে দেখে নিতে রূপা কাকে কল করেছিলো কিছুক্ষণ আগে।সেই নাম্বারটাও টুকে নিয়ে আসতে।

দাদার কথামতো পান্না রূপার রুমে গেলো। রূপা ততক্ষণে গোসল সেরে চুল শুকাচ্ছে।এদিক ওদিক তাকিয়ে পান্না রূপার ফোন খুঁজলো।রূপা পান্নাকে দেখে মুচকি হেসে বললো, “তুই রুমে বস,আমি একটু চুল শুকিয়ে নিই।”

পান্না বললো, “একটু তোর ফোনটা দে তো রূপা।আপাকে একটা কল দিবো।আপা একটু বাহিরে গিয়েছে। ”

ফোন দিতে গিয়ে রূপার সন্দেহ হলো। রূপকদা বাসায় থাকতে রত্না বাহিরে বের হবে?
এটা তো অসম্ভব!
তাছাড়া যদি বের হয় ও,রূপকদা থাকতে পান্না রূপার ফোন থেকে কল দিতে এলো কেনো!

তাহলে কি?
সন্দেহ ঘনীভূত হলো রূপার। ডায়াল থেকে আজকের সকল নাম্বার ডিলিট করে দিলো।তারপর ফোনটা দিলো পান্নাকে।
রূপা বারান্দায় যেতেই পান্না কললিস্ট চেক করতে লাগলো। ডায়ালে ঢুকে পুরোপুরি হতাশ হলো পান্না।আজকে কারো কাছে কল দেয় নি রূপা।আজকের লিস্টে কারো নাম নেই।নাম্বার ও নেই। তাহলে কি রূপা নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছে?

মন খারাপ হয়ে গেলো পান্নার। দাদা এখন কি বলবে তাকে!
একটা কাজ সে করতে পারলো না দাদার জন্য। কার নাম্বার নিবে এখন সে?
অগত্যা রূপার ফোনটা নিয়েই দাদার কাছে চলে গেলো।

রূপক কল লিস্ট ঘেঁটে দেখলো আজকের সব নাম্বার ডিলিট করা। আশাহত হয়ে বসে রইলো রূপক। মাথার মধ্যে ঝড়েরবেগে হিসেবনিকেশ চলছে।
হঠাৎ করেই রূপকের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠলো।

পান্না দাদাকে হাসতে দেখে বললো, “কি হলো দাদা?”

রূপক হেসে বললো, “রূপা ভীষণ স্মার্ট বুঝলি।তবে আমি ও ছেড়ে দেবার মানুষ না।কষ্ট হবে একটু আমার তবে ঠিক বের করে ফেলবো।এই দেখ।

এখানে আজকে ছাড়া অন্য সব দিনের নাম্বার আছে।তার মানে এখানের এই নাম্বারগুলোতে আজকে রূপা কল দেয় নি। সিরিয়ালে সব নাম লিখে ফেল তো।”

পান্না লিখে নিলো।রূপক এবার বললো, “এই দেখ, রূপার কন্টাক্ট লিস্ট। অল্প কয়েকটা নাম্বার। ওর বাবার নাম্বার, ওর ফুফুর নাম্বার, রত্নার নাম্বার, আমার নাম্বার। এগুলো ওর মেসের মেয়েদের নাম্বার। আর দেখ,এগুলো হচ্ছে ওর কলেজের ক্লাসের মেয়েদের নাম্বার। সবার নামের সাথে কলেজ লিখা আছে। ওর কললিস্টে ওর বাবা,ফুফু ছাড়া সবার নাম্বার আছে যাদের সাথে ও আজকের দিন ব্যতীত আগে কথা বলেছে।এবার বল,রূপা বাড়ি গেলো, বাড়ি থেকে আসলো। ওর তো নিশ্চয় বাড়িতে কথা বলা হয়েছে। অন্তত ও যে এসেছে ঠিকঠাকভাবে অথবা ও অসুস্থ এসব তো জানানোর ছিলো কাউকে।তাহলে নিশ্চয় জানিয়েছে তাই না?
কিন্তু দেখ ওর কললিস্টে কোথাও নেই বাড়ির নাম্বার। তার মানে কি?

এবার ভেবে বল,রূপা তো এই শহরে নতুন এসেছে। আর আমাদের বাসার আগে অন্য কোথাও ওর বেশি দিন থাকা হয় নি।তাছাড়া ওর এক্সপ্রেশন দেখে মনে হয়েছে ফুফু ওর ভীষণ চেনা কেউ।
ওর গ্রামে যেতে হবে আমার। সব রহস্য রূপার গ্রামে।”

পান্নার মাথা ঘুরতে লাগলো। আসলেই তো দাদার এক্সপ্লেইন তো ঠিক।

রূপক ভীষণ উত্তেজিত হয়ে উঠলো। মুচকে যাওয়া পা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে গিয়ে ব্যথা পেলো ভীষণভাবে।তবুও উঠলো। রূপার গ্রামের বাড়ির ঠিকানা জোগাড় করতে হবে এবার।

পান্না বললো, “দাদা,রূপাদের বাড়ি কিভাবে খুঁজে পাবি?আমার তো মনে হয় না ও ওর ঠিকানা আমাদের দিবে।”

রূপক হেসে বললো, “সেই ব্যবস্থা আমি করে নিবো।ওর থেকে ঠিকানা নেওয়া লাগবে না।”

রূপক ফুরফুরে মনে উঠে গেলো। ফোনে রূপার বাবার আর ফুফুর নাম্বার সেভ করে নিয়েছে। এবার আগামীকাল ওদের গ্রামে যাবে।

চলবে…..

রাজিয়া রহমান

#তুমি_অপরূপা (৩১)
জুয়েল গ্রাম থেকে বাসায় ফিরলো যখন তখন প্রকৃতিতে সন্ধ্যা নামি নামি করছে।সাঁঝের মায়াবী আকাশের তাকিয়ে অন্তরা ভাবছে ভবিষ্যতের কথা। জুয়েল বলেছে আজ ফিরবে। তারপর?
তারপর জুয়েল ফিরে এলে শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা থাকবে দুজনের মধ্যে। তৃতীয় কেউ থাকবে না।অন্তরার দিবা স্বপ্ন বেশি সময় দেখার সুযোগ হলো না।হয়তো এই স্বপ্ন পূর্ণ হবে না বলেই শুনতে পেলো বাহিরে রানার হুটোপুটি।
এতোক্ষণ অন্তরা তার রুমের জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিলো আর ভাবছিলো।
রানার জন্য মন খারাপ করবে ভীষণ। অন্তরা বাহিরে বের হতেই দেখলো জুয়েল এদেছে।ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে আছে।
রেশমা জুয়েলের জন্য লেবুর শরবত করছে।

অন্তরার কেমন যেনো লাগলো এই দৃশ্য দেখে। বুকের ভেতর চুরমার অথব মুখে রাজ্যের শীতলতা।
রেশমা গলায় মধু ঢেলে বললো, “আব্বা,আম্মা কেমন আছেন?
ভাই,ভাবী,বড় আপা ওনাদের সবার অবস্থা কেমন? ”

জুয়েল স্বাভাবিক স্বরে বললো, “ভালো আছে সবাই।”

অন্তরার মন আর মানলো না।সে যে পেছনে দাঁড়িয়ে আছে জুয়েল দেখে নি,রেশমা দেখেছে।রেশমা দেখে ও না দেখার ভান করে আছে।যাতে জুয়েল তার সাথে এরকম সহজভাবে কথা বলে। অন্তরা শুনুক ভালো করে যে,যতই রূপসী হোক অন্তরা, রেশমার প্রতি জুয়েলের দুর্বলতা থাকবেই।

রেশমা আবারও জিজ্ঞেস করলো, “আব্বার কি এখনো শ্বাসের সমস্যা হয়?ইনহেলার নেন নাই এবার?”

জুয়েল জবাব দিলো, “নিছি,আব্বার ইনহেলার, মা’র জন্যে শান্তিপুরি জর্দা ছাড়া কি বাড়িত যাওন যায়!”

রেশমা হেসে বললো, “আপনের মনে আছে, একবার আম্মার জন্যে শান্তিপুরি জর্দা নেন নাই, সেই বার আম্মার সে কি রাগ আপনের উপরে!”

জুয়েল হেসে ফেললো। সেবার মায়ের জন্য জর্দা নিতে ভুলে যাওয়ায় দুই দিন তিনি ছেলের সাথে রাগ করে কথা বলে নি। পরে জুয়েল ঢাকায় এসে এক বন্ধুকে দিয়ে ১০টা জর্দা পাঠায়।

অন্তরার হাত পা কেমন অসাড় হয়ে এলো।অন্তরার মন কু ডাক ডাকতে লাগলো। ধীর পায়ে অন্তরা রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
জুয়েল রুমে এলো বেশ কিছুক্ষণ পর। অন্তরার মন ততক্ষণে বিমর্ষ। গায়ের কাপড় পালটে জুয়েল বললো, ”
কি হইছে,এভাবে বসে আছো কেনো?”

অন্তরা জবাব দিলো, “এমনি ভালো লাগছে না।”

জুয়েল বিরক্ত হলো। বাসায় এসেছে, কোথায় অন্তরা আনন্দে জ্বলজ্বল করবে তা না মনমরা হয়ে বসে আছে। অথচ রেশমা কেমন স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে কথা বলছে।

বিরক্ত হয়ে বললো, বাসায় আসলাম, কোথায় হাসিখুশি হয়ে কথা কইবা তা না এমনভাবে কথা কইতাছো যেনো তোমারে তিন দিন খাইতে দেয় নাই।”

অন্তরার ভীষণ রাগ হলো। একে তো তাকে প্রতিনিয়ত ঠকাচ্ছে তার উপর আবার উল্টো রাগ দেখাচ্ছে।
রেগে গিয়ে অন্তরা বললো, “হাসিমুখে কথা বলার মানুষের তো অভাব নাই।আমি না বললেও চলবে।”

কে জানে কেনো জুয়েলের ও মেজাজ বিগড়ে গেলো। হয়তো বাড়িতে গিয়ে মায়ের ব্রেইন ওয়াশ,বাসায় এসে রেশমার আন্তরিকতা, অন্তরার গোমড়া মুখ।সব মিলিয়ে অত্যন্ত কঠোর স্বরে বললো জুয়েল বললো, “সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারো না না-কি? দিন দিন ব্যবহার এতো বাজে হচ্ছে ক্যান?”

“বাসায় ঢুকেই তো মধুর ব্যবহার দিয়ে তোমার প্রাণ জুড়িয়ে দিয়েছে একজন, আমার ব্যবহার এজন্য এখন খারাপই লাগবে।”

জুয়েলের কি হলো কে জানে।অন্তরার হাত মুচকে ধরে বললো, “দিন দিন পাংখা গজাইতেছে না?
না-কি এতোদিন নরম ব্যবহার করছি দেইখা ভাবছস আমারে হাতের মুঠোয় কইরা নাচাবি?এসব স্বপ্ন দেইখা থাকলে ভুইলা যাইও।আর আরেকটা কথা মন দিয়া শুইনা রাখো,যারে ইংগিত কইরা এসব কথা কইতেছো,তার সাথেই থাকতে হইবো।আমি কোনো কোটিপতি না যে টাকাপয়সা খরচ কইরা বড় বউরে বিদায় দিমু।বিয়ে হইছে এতো দিন হইছে এখনো একটা সুখবর শুনাইতে পারলা না।তার আবার চ্যাটাং চ্যাটাং কথা! ”

জুয়েল ভেবেছিলো আস্তে ধীরে অন্তরাকে শান্ত মাথায় বুঝিয়ে বলবে সব।কিন্তু হটাৎ কি হলো বুঝতে পারলো না। হুট করেই মাথা গরম হয়ে উল্টো পাল্টা কথা বলতে লাগলো। যার ফলস্বরুপ অন্তরাকে এসব বলে ফেললো।

অন্তরার মনে হলো বুকের উপর কেউ একটা দশমণি পাথর তুলে দিয়েছে। এই কোন রূপ দেখছে সে জুয়েলের!
এই তার ভালোবাসার মানুষ!

অন্তরা কাঁদলো না। সবার জন্য চোখের জল ফেলতে নেই। বিশেষ করে যারা এর মূল্য জানে না।
জুয়েল রাগান্বিত হয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। অন্তরা রুমে বসে রইলো। রাতটা এভাবেই কেটে গেলো । জুয়েল রুমে আসে নি রাগ করে, অন্তরা ও ডাকে নি জুয়েলকে।

পরদিন কাক ডাকা ভোরে অন্তরা উঠে বের হয়ে গেলো একটা ছোট চিরকুট লিখে।জুয়েল তখন ফ্লোরে একপাশে শুয়ে আছে। রেশমা ছেলেকে নিয়ে অন্যখানে।

অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হতে জুয়েল রুমে গিয়ে দেখে অন্তরা নেই।একটু অবাক হলো জুয়েল।অন্তরা কোথায় গেলো।বিছানার উপর ছোট একটা কাগজ ভাঁজ করে রাখা।জুয়েল খুলে দেখে লিখা,”ভালোবাসা ছাড়া কোনো কিছু চাই নি তোমার কাছে ,যতদিন আমার জন্য ভালোবাসা ছিলো ততদিন তুমি একান্ত আমার ছিলে।আজ ভালোবাসা ভাগ হয়ে গেছে, আজ তুমি ও তাই আমার নেই। ভাগ করে তো ভালোবাসি নি,তাই ভাগের সংসার করতে পারলাম না।ক্ষমা করে দিও। ভালো থেকো স্ত্রী সন্তান নিয়ে।”

জুয়েল বিরক্ত হয়ে বললো, “যতসব নাটক।দুই দিন ঠিকই ফিরে আসবো। ”

কাউকে কিছু না বলে জুয়েল চলে গেলো অফিসে। অন্তরা বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলো। এটুকু বুঝেছে অন্তরা এই নির্মম পৃথিবীতে বাবা মা ছাড়া কেউ নেই স্বার্থহীন ভাবে ভালোবাসার।

————–

পরদিন খুব সকালেই স্টেশনে গিয়ে রূপক বাসের খোঁজ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো রূপা সেদিন কোন জায়গার টিকিট কেটেছে।
একা সুন্দরী মেয়ে ট্রাভেল করলে সবাই একটু বেশি মনযোগ দেয়।তেমনই অপরূপার কথা ও কাউন্টারে বসা ছেলেটার মনে ছিলো। রূপক জিজ্ঞেস করতেই একটূ ভেবে বলে দেয়।রূপক ও টিকিট কেটে অপেক্ষা করে বাসের।

কিছুক্ষণ পর বাস এলো। নিজের সীট খুঁজতে খুঁজতে এগিয়ে গিয়ে দেখে তার সীটে একটা মেয়ে বসে আছে । ওড়না দিয়ে মুখটা ঢেকে রাখা।

রূপক গলা খাঁকারি দিয়ে বললো, “ওই সীটটা আমার। ”

অন্তরা উঠে বের হয়ে দাঁড়িয়ে রূপককে ভেতরে যাওয়ার জায়গা দিলো।নিজের সীটে বসতে গিয়ে রূপক থমকে দাঁড়ালো। তারপর বললো, “আপনার মনে হয় জানালার পাশের সীট পছন্দ। তাহলে আপনি বসতে পারেন।”

অন্তরা কথা বাড়ালো না। বসে পড়লো আগের জায়গায় ধপ করে। রূপক কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সেদিকে। কিছুক্ষণ পর ব্যাগ থেকে একটা জয়ট্রিপ ঔষধ বের করে, পানির বোতল এগিয়ে দিয়ে বললো, “আপনার মনে হয় বমির সমস্যা আছে বাসে উঠলে।এখান থেকে একটা ঔষধ খেয়ে নিন তাহলে ভালো লাগবে।”

অন্তরার আসলেও ভীষণ খারাপ লাগছে।তাই দ্বিধা করে নি আর।রূপকের থেকে ঔষধ নিয়ে খেয়ে নিলো। অন্তরা মুখ ঢেকে রাখতে চাইছে দেখে রূপক ও অন্তরা ঔষধ খাওয়ার সময় অন্যদিকে তাকিয়ে রইলো।

অনেকক্ষণ পর বাস চলতে লাগলো। সারারাত না ঘুমানোয় অন্তরা ঘুমিয়ে গেলো।রূপক কিছুটা দূরত্ব রেখে বসলো। হাতে থাকা পেপারটা আবারও মনোযোগ দিয়ে পড়তে লাগলো।

বুকের মধ্যে অস্থিরতা। পাবে তো শেষ পর্যন্ত ফুফুকে?
দেরি হয়ে যাবে না তো!
কোনো অসুবিধা হবে না তো!
দাদা যেই দায়িত্ব দিয়ে গেছেন তা পালন করতে পারবে তো?

বেশ অনেকক্ষণ বাস চলার পর অন্তরার ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ করে। আচমকা অন্তরা ভেবে পেলো না সে কোথায়,যাচ্ছে কোথায়।

ধরমড়িয়ে উঠে বসে বললো, “কোথায় আমি?কোথায় যাচ্ছি? ”

রূপক অন্তরার দিকে তাকিয়ে বলতে গিয়ে থেমে গেলো। এ কাকে দেখছে সে!
এ-তো রূপা বসে আছে যেনো।একই রকম নাক,চোখ।

বিড়বিড় করে রূপক বললো, “রূপা তুমি? ”

অন্তরা চমকে উঠে বললো, “রূপা?অপরূপা? আমার ছোট বোন?আপনি চেনেন কিভাবে?”

রূপকের হাসি পেলো। সেই সাথে স্বস্তি ও লাগলো। যাক বাবা,এবার আর চিন্তা নেই।রূপার বোনকে যখন পাওয়া গেছে তখন ফুফুকে বের করা টাফ হবে না রূপা যেহেতু চিনে রূপার বোন ও ফুফুকে চিনবে।

চলবে…..

রাজিয়া রহমান

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে