#তুমিময়_নেশার_আসক্তি
#আলফি_শাহরিন _অর্পা
#পর্ব_৯
অপরদিকে আজ অনেক ক্লান্ত ফায়াজ। আজ সারাদিন তার দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কেটে গেছে। হঠাৎ করে তার মাথা ব্যাথা করছে। তাই সে তাড়াতাড়ি বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্য রওনা দিলো। বাসায় যেয়ে বাবাকে বলবে এক কাপ চা বানিয়ে দিতে। মাথা ব্যাথার জন্য যোগ্য ওষুধ বাবার হাতের চা। পরক্ষণেই তার মনে হলো বাসায় তো বাবা নেই কিছু কাজের জন্য আউট অফ টাউন গেছে। আগে কোথায় গেলে তাকে বলে যেত এইবারই তাকে না বলে কোথাও গেছে। ব্যাপারটা অদ্ভুত তাও সে এই নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করলো না। বাসায় প্রবেশ করে দেখলো বাসা প্রচন্ড অন্ধকার। কারেন্ট কী নেই? মনে মনে নিজেকে প্রশ্ন করলো। অতঃপর কিছু না ভেবে বাসার ভিতরে ঢুকে গেল। হঠাৎ করে বাসার লাইটগুলো জ্বলে উঠলো আর ফায়াজ সামনে থাকা ব্যক্তিকে দেখে তার মুখ অটোমেটিকলি হা হয়ে গেল। সে আর কিছু না ভেবে দৌড় দিয়ে ব্যক্তিটিকে জড়িয়ে ধরলো।
–তুই! হঠাৎ! এভাবে! ফায়াজ নিজের পুরানো বন্ধু কে দেখে কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। কতদিন পর একে অপরের সাথে দেখা।
–আরে দোস্ত থাম। আমি জানতাম না তুই আমাকে দেখে এতো খুশি হবি। কিন্তু আমাকে ছাড়। নানুষ দেখলে ভুল ভাববে। রাহাতের কথায় ফায়াজের হুশ আসে।
–শা’লা হা’রা’মি। তুই আর ঠিক হইলি না। এই বলে ফায়াজ রাহাতকে মারতে থাকলো। অনেকদিন পর নিজের প্রাণের প্রিয় বন্ধুকে দেখে ফায়াজ অনেক খুশি। রাহাত এক জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলো তাই এতদিন চিকিৎসার জন্য বাহিরে ছিলো। এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এসেছে। তার দেশে ফিরার আরেকটা উদ্দেশ্য আছে।
নেশার সাথে ঘটা দুর্ঘটনার আজ অনেকদিন কেটে গেছে। এই ক’দিন নেশা ভার্সিটিতে যায়নি। কেননা সে নিজেকে সময় দিতে চেয়েছিল ঐ দুর্ঘটনা থেকে নিজেকে বের করার জন্য। সে নিজেকে ও ফায়াজকে নিয়ে অনেক চিন্তা করেছে এবং তার কী করতে হবে সে ব্যাপারেও সে ভেবে নিয়েছে।
আজ বহুদিন পর নেশা ভার্সিটির উদ্দেশ্য রওনা দিলো।
~ভার্সিটি~
ভার্সিটিতে এসে নেশা কোনোদিকে না তাকিয়ে ক্লাসরুমে চলে গেল। সেখানে রিমঝিম আগের থেকে উপস্থিত ছিলো। রিমঝিম নেশাকে দেখে দৌড়ে তার কাছে এলো।
–দোস্ত তুই ঠিক আছিস তো? আমি যদি জানতাম সেদিন তোর সাথে এমন দুর্ঘটনা ঘটবে তাহলে আমি তোকে সেদিন একা ছাড়তাম নাহ। নেশার দিকে করুণ চোখে তাকিয়ে কথাটি বললো রিমঝিম।
–থাম! আমি ঠিক আছি। এত চিন্তার কিছু নেই। এই বলে নেশা একটা সীটে যেয়ে বসে পড়লো। রিমঝিম ও সেসব বিষয়ে পাত্তা দিলো না। সে ও চুপচাপ নেশার পাশে বসে ক্লাস করলো।
ক্লাস শেষে রিমঝিম আর নেশা কথা বলতে বলতে করিডোরে হাঁটছে এমন সময় রিমঝিম হাত দিয়ে কিছুর দিকে লক্ষ্য করে বলে উঠলো-
–দোস্ত! ফায়াজ ভাইয়া। নেশা রিমঝিমের কথা শুনে সেই দিকে তাকালো। আবার রিমঝিম বলে উঠলো-
–দোস্ত! ফায়াজ ভাইয়া তোর জীবন বাচিয়েছে তোর তাকে ধন্যবাদ দেওয়া দরকার। বর্তমান যুগে কেউ কাউকে এতটা সাহায্য করে নাহ। নেশা রিমঝিমের কথাটা মন দিয়ে শুনলো। অতঃপর ধীর পায়ে হেটে ফায়াজের কাছে গেলো। ফায়াজ এতক্ষণ রাহাতের সাথে কথা বলছিলো। নেশাকে ওর দিকে আসতে দেখে সে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো। নেশা কিছুটা ইতস্তত করে ফায়াজের কাছে গেল। অতঃপর বললো-
–আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি সেইদিন আমার সাহায্য না করলে আমার অনেক বড় ক্ষতি হতে পারত। আমি আপনার ঋণ কোনোদিন শোধ করতে পারবো নাহ। এই বলে নেশা সেখান থেকে চলে গেল। সে আর পিছে ফিরে তাকায়নি। কিন্তু ফায়াজ একদৃষ্টিতে তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে ছিলো। এসব কিছু লক্ষ্য করছিলো রাহাত। কিন্তু সে ব্যাপারটাকে বেশি পাত্তা দিলো না কেননা ফায়াজ প্রায় মানুষকে সহযোগিতা করতো।
~৩ মাস পর~
অনেকটা সময় কেটে গেছে ফায়াজ নেশার জীবন থেকে। নেশা এই ক’দিনে যত পেরেছে তত এড়িয়ে গেছে ফায়াজকে। সব সময় তার থেকে দূরে দূরে থাকতো। এড়িয়ে আলতো। অপরদিকে ফায়াজ যথা সম্ভব চেষ্টা করেছে নেশার কাছে যাওয়ার। নেশার এরকম ব্যবহারের কারণ ফায়াজ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরেছে তাও সে চুপ আছে সঠিক সময়ের অপেক্ষায়। রিখিয়াও অনেক চেষ্টা করেছে ফায়াজের আশেপাশে থাকার যেহেতু ফায়াজ তার ভাই রাহাতের বেষ্ট ফ্রেন্ড তাই সে এই সুযোগটা লুফে নিতে চেয়েছিল। সে রাহাতের সাথে ফায়াজের বাসায়, অফিস এবং ভার্সিটি তো আছে সব জায়গায় পৌছে যেত। কিন্তু ফায়াজের জন্য রিখিয়া তার কাছাকাছি যেতে পারতো নাহ।
–আমি অনেকদিন ধরে দেখছি নেশা তুই নিজেকে সবকিছু থেকে গুটিয়ে ফেলেছিস। এর কারণ কী ফায়াজ ভাইয়া ?
–কি ফালতু প্রশ্ন করছিস। আমি তো ছোটবেলা থেকেই এমন। আর এখানে ফায়াজ ভাইয়া কীভাবে আসবে?
–দেখ আমি তোর সাথে স্ট্রেট কথা বলছি আমার মনে হয় ফায়াজ ভাইয়া তোকে ভালোবাসে।
–এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে সরা। সে কেনো আমার মতো একটা গ্রামের মেয়ের প্রেমে পড়বে।
–প্রেম ধনী-গরিব, গ্রাম-শহর দেখে হয় না। যদি ফায়াজ ভাইয়া তোকে সত্যি ভালোবাসে তুই কী করবি? শান্ত কণ্ঠে প্রশ্নটি করলো রিমঝিম। রিমঝিমের প্রশ্নের জবাব নেই নেশার কাছে তার দৃষ্টি স্থির।
চলবে….