তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_৩

0
2133

তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_৩
মেঘ_বালিকা
.
.
মুখের ওপর কিছু পরাতে ঘুম ছেড়ে তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম…মুখে হাত দিয়ে মনে হলো তরল কোনো কিছু পরে বুঝতে পারলাম পানি…কিন্তু পানিটা কে দিলো মুখে!!সামনে তাকিয়ে দেখি তাসিন তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে…আর তার হাতে পানির গ্লাস..বুঝতে আর বাকি রইলো না কাজটা কে করেছে…আমি ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করলাম,এটা কি হলো??
সে আমার কথার কোনো পাত্তা না দিয়ে বলে উঠলো,
-যাও ওজু করে আসো নামাজ পরবো…
-ভালো কথা..ডাকলেই তো উঠে যেতাম পানি দিয়ার কি দরকার ছিলো!!
-ডেকেছিলাম উঠো নি..এখন আর একটা কথা বললে ওই যে (ওয়াশরুম দেখিয়ে)এক বালতি পানি রেখে দিয়েছি সেটা এনে পুরোটা তোমার মাথায় ঢেলে দিবো..নাউ গো…
.
.
আমি আর কোনো কথা না বলে এক দৌড়ে ওয়াশরুমে গিয়ে দরজা আটকে দিলাম..ওখানে আর এক মুহুর্ত থাকালে শয়তান টা সত্যি সত্যিই বালতির পুরো পানি আমার মাথায় ঢেলে দিতো..ওকে দিয়ে বিশ্বাস নেই…চুপচাপ ওজু করে বের হয়ে এলাম…এসে দেখি সে সব কিছু রেডি করে বসে আছে…আমাকে বের হতে দেখেই উঠে দাড়িয়ে জায়নামাজ দুটো পাশাপাশি বিছিয়ে আমাকে ইশারায় তার পাশে দাড়াতে বললো..আমিও কোনো কথা না বলে চুপচাপ তার পাশে দাড়িয়ে নামাজ আদায় করলাম…
.
.
নামাজ আদায় শেষ করে মনে একটা শান্তি অনুভব করলাম…স্বামী-স্ত্রী একসাথে প্রথম নামাজ আদায় করতে পেরে কেমন একটা অদ্ভুত ফিলিংস অনুভব করছি যা এর আগে কখনো করিনি…সবাই কী একই রকম ফিলিংস অনুভব করে!!!
/
/
/
ভোরে ডাকার ফলে ঘুমটা পরিপূর্ন হয়নি তাই ভাবলাম আর কিছুক্ষন ঘুমিয়ে নেই..ঘুম ভালোভাবে না হলে আবার আমার মাথা ব্যাথা শুরু হয়…কিন্তু কোনো একজন এর এটা সহ্য হলো না…আমাকে শুতে দেখেই তাসিন বলে উঠলো,,,
-এক কাপ কফি বানিয়ে আনো তো..সকালে আবার কফি না খেলে আমার শরীর চাঙ্গা হয় না….
-খাবেন ভালো কথা আমাকে কেনো বলছেন!!নিজেও তো বানিয়ে খেতে পারেন..আল্লাহ্ তো আপনার হাত-পা সবই দিয়েছে…
-আমি তোমার কাছে কিছু শুনতে চাইনি…যেটা বলছি সেটা করো যাও কুইক…(দাঁতে দাঁত চেপে)
-পারবো না আমি..আমার এখন ঘুম পাচ্ছে আমি ঘুমাবো..আপনার খেতে ইচ্ছা করলে নিজে বানিয়ে খান…(মুখ ভেংচি দিয়ে)
.
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

হঠাৎ তাসিন আমার কাছে আসতে আসতে বললো,,,,
-কী যেনো বললে শুনতে পাইনি আবার একটু বলো তো!!!!!
.
.
ওকে এভাবে আসতে দেখে এইবার আমার হাওয়া সব ফুস হয়ে গেলো….ও একদম আমার কাছে এসে বলতে লাগলো,,,
-হ্যা বলো কী যেন বলছিলে কী পারবে না তুমি আবার একটু বলো তো তখন ঠিক মতো শুনতে পাইনি…ও আমার এতো কাছে আসাতে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে..না পারছি নড়তে,না পারছি সরে যেতে…কোনো রকম ওকে ধাক্কা দিয়ে দৌঁড় দিতে যাব তার আগেই তাসিন আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেললো…এক টানে কাছে নিয়ে এসে বুকের সাথে চেপে ধরলো….আর বললো,,,
-কই পালাচ্ছো?আর তো পালাতে পারবে না তুমি…অনেক পালিয়ে বেরিয়েছো আর নয়..এখন থেকে সব সময় আমার কাছেই থাকতে হবে তোমার চাইলেও পালাতে পারবে না…
.
তারপর হালকা ধাক্কা দিয়ে আমাকে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে আর বললো,,,
-এখন তাড়াতাড়ি আমার জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে আসো…না হলে যেটা করতে চাচ্ছি না সেটা এখন করতে তুমি বাধ্য করবে..
.
.
আমি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলাম…কোনো রকমে ওখান থেকে কেটে পরলাম..আর কিছু সময় ওখানে থাকলে না জানি কী করে বসতো…
.
.
কিচেনে এসে কফি বানাচ্ছি…পাশে আমার শাশুরি মা সকালের নাস্তা রেডি করছে…আমাকে প্রথম দিনই কিচেনে দেখে সে অবাক হয়ে গেলো কিছুতেই আমাকে কাজ করতে দিবে না সে…অবশেষে তাকে রাজি করিয়ে কফি বানাতে সক্ষম হয়েছি…ভাগ্যকরমে এমন শশুর-শাশুরি পেয়েছি..তারা দুজনই খুবই ভালো মানুষ…আর আমাকে ও নিজের মেয়ের মতোই দেখেন…কিন্তু তাদের ছেলে এমন বদ কেনো হলো এটাই আমি বুঝতে পারছি না…আগেও আমাকে জ্বালিয়েছে এখনও জ্বালাচ্ছে…
.
.
হঠাৎ মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি চলে এলো…খুব কফি খাওয়ার শখ হয়েছে না তোর দাড়া তোকে আজকে আমার স্পেশাল কফি খাওয়াবো….যা তুই জীবনেও ভুলতে পারবি না…ইচ্ছা মতো কফি গুলিয়ে একটা কাপে নিয়ে নিলাম..তার মধ্যে কোনো চিনি দেই নিই..খুব মজা লাগছে এখন..এটা খাওয়ার পর ওর ফেসের ঠিক কী অবস্থা হবে ভাবতেই খিক করে হেসে দিলাম..ব্যাটা বুঝবে আজকে ঠেলা…
.
.
আধ ঘন্টা যাবত ওয়াশরুমে গিয়ে মুখে চোখে পানি দিচ্ছি..আর একটু পর পর কুলকুচি করছি…আমার এই অবস্থা দেখে তাসিন হেসে কুটিকুটি…এই মুহুর্তে আমার ওর গলা চেপে মেরে ফেলতে ইচ্ছে করছে..শয়তান ব্যাটা এইদিকে আমার অবস্থা খারাপ আর ও সেই কখন থেকে হেসেই চলেছে…চোখে মুখে পানি দিচ্ছি আর ওর গুষ্টি উদ্ধার করছি…
.
.
একটু আগে…..
আমি কফি টা নিয়ে রুমে গিয়ে দেখি ব্যাটা ফোনের মধ্যে মুখ গুজে বসে আছে…আমাকে কফি আনতে দেখে ফোনটা রেখে আমার হাত থেকে কফির কাপটা হাতে নিলো…আমিও এইদিকে সেই খুশি…খুব আগ্রহ নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছি আমি..কিন্তু ব্যাটা খাচ্ছে না কেনো..আরে খা না এতো কী ভাবিস!!!যা ভাবার পরে ভাবিস আগে খা তোর ওই ফেসটা দেখার জন্যে যে আমি উতোলা হয়ে গেছি…
কিন্তু আমার সব ভাবনার মধ্যে এক বালতি ঠান্ডা পানি ঢেলে তাসিন বলে উঠলো,,,
-নেও কফিটা খাও…
আমি থতমত খেয়ে বললাম,,,
-ক,,ক,,কেনো,,আ,,আমি কেনো খাবো,,,আমি তো এটা তোমার জন্যে বানিয়ে এনেছি তুমিই খাও…
-বউকে না খাইয়ে নিজে কি করে খাই বলো তো…তাই আগে তুমি খাবে তারপর আমি খাবো…নেও এখন খাওয়া শুরু করো….(বাঁকা হেসে)
-আ,,,আমি আসলে কফি খাই না…(ভয়ে গলা শুকিয়ে গেছে আমার)
-কি বলো!!আমি যতদূর জানি তুমি তো কফি খুব পছন্দ করো…তাহলে মিথ্যা কেনো বলছো!!!
-করতাম এখন আর করিনা..আপনি খেলে খান,না হলে আমি নিয়ে চলে যাচ্ছি….
.
.
হঠাৎ তাসিন উঠে দাড়ালো…তারপর একপা দুপা করে দরজার দিকে এগিয়ে গেলো…আর আস্তে করে দরজাটা বন্ধ করে দিলো…
.
.
এতোক্ষন যাও একটু সাহস ছিলো তাসিনের দরজা আটকানো দেখে তা হাওয়া হয়ে গেলো…
তাসিন দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে একটা ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে আমার দিকে একটু একটু করে এগুতে লাগলো…আমিও একটা ক্যাবলা মার্কা হাসি দিয়ে চুপ করে দাড়িয়ে রইলাম…ওকে এগুতে দেখেও আমি নড়তে পারছি না..মনে হচ্ছে কেউ পা টা শক্ত করে ধরে রেখেছে…
কিন্তু ও তেমন কিছুই করলো না আমার পাশ ঘেসে গিয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পরলো আর আমার হাতে কফির কাপটা ধরিয়ে দিলো…সে ইশারায় আমাকে কফি টা খেতে বলছে কিন্তু আমি খেতে নারাজ…কিছুতেই আমি খাবো না…কারনটা আমি খুব ভালো করেই জানি…পুরো কফির কৌটো ঢেলে দিয়েছি এতে আর না দিয়েছি কোনো চিনি..এটা খেলে কি হতে পারে তা বেশ বুঝতে পারছি…
আমাকে চুপ করে দাড়িয়ে থাকতে দেখে এবার তাসিন কিছুটা ধমকের সুরেই বলে উঠলো,,,
-তুমি কি খাবে নাকি আমি অন্য কোনো স্টেপ নিবো!!!
ওর ধমকে আমি কিছুটা কেপে উঠলাম..তাড়াতাড়ি ভয়ে ভয়ে এক চুমুকে পুরোটা কফি খেয়ে ফেললাম…এতোটা তেতো ছিলো যে ওয়াক থু করতে করতে ওয়াশরুমে দৌড় দিলাম আর গিয়ে সোজা বমি করে দিলাম…এরপর থেকেই চোখে মুখে পানি দিচ্ছি আর একটু পর পর কুলকুচি করছি..মুখ পুরো তেতো হয়ে গেছে…আমার এমন করুন অবস্থা দেখে শয়তানটার হাসিই থামছে না…
.
.
এখন,,,,
খুবই ক্লান্ত লাগছে,মাথাটাও কেমন ঘুরাচ্ছে…ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোজা বেডে শুয়ে পরলাম..যা অবস্থা হয়েছে এখন শরীর খুব দুর্বল লাগছে..বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই কিছুক্ষনের মধ্যেই গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম….
.
.
ঘুমের মধ্যে টের পেলাম কেউ একজন খুব যত্ন সহকারে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে…স্পর্শটা খুব পরিচিত মনে হচ্ছে….হঠাৎ ঠোঁটে শীতল নরম কিছুর স্পর্শ অনুভব করলাম…এমন কিছু ঘটায় তাড়াতাড়ি শোয়া থেকে উঠে বসলাম…কিন্তু আশেপাশে কাউকেই খুজে পেলাম না…কে ছিলো ভাবতে ভাবতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ১১টা বেজে গেছে…ইশশ এতো বেলা অব্দি আমি ঘুমিয়ে ছিলাম…নতুন বউকে এতো বেলা অব্দি ঘুমানো সাজে না…না জানি সবাই কি ভাবছে…আর ওই শয়তানটাও আমাকে একটু ডেকে দিতে পারলো না…এখন তাদের সামনে আমি দাড়াবো কিভাবে!!!এসব ভাবতেই লজ্জা লাগছে…আবার খুব ক্ষিধেও পেয়েছে..ক্ষিধেয় পেট চো চো করছে…হঠাৎ চোখ পরলো বেডের পাশের ছোট টেবিলটায় যেখানে খাবার রাখা…কিছু না ভেবেই খাওয়া শুরু করে দিলাম…এতোটাই ক্ষিধে পেয়েছে যে ভাবার সময় নাই…
.
.
তনু বাচ্চাদের মতো করে খেয়েই যাচ্ছে কিন্তু সে জানে না তার এভাবে খাওয়া দেখে কেউ একজন লুকিয়ে মিটমিট করে হাসছে…হ্যা সে তাসিন..তাসিন এতোক্ষন লুকিয়ে তনুর কান্ড কারখানা দেখছিলো…ওর এভাবে খাওয়া দেখে আর না হেসে পারলো না…তারপর কিছু একটা ভেবে তাসিন গম্ভীর মুখে নিচে চলে গেলো…
.
.
কোন শাড়িটা পরবো কিছুতেই ঠিক করতে পারছি না…হঠাৎ চোখ গেলো সোফার উপর একটা প্যাকেটের দিকে…প্যাকেটটা খুলে দেখি তার মধ্যে মেরুন রঙ্গের খুব সুন্দর একটা শাড়ি…দেখেই পছন্দ হয়ে গেলো…তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিয়ে শাড়িটা গায়ে জড়িয়ে নিলাম…তারপর আয়নার সামনে গিয়ে সব ঠিক আছে কিনা দেখে মাথায় একহাত ঘুমটা টেনে নিচে চলে এলাম…
.
.
নিচে নেমে দেখি ফাজিলটা খুব মনোযোগ সহকারে টিভি দেখছে…
.
তনুকে নিচে নামতে দেখেই তাসিনের চোখ যেনো আটকে গেলো…মেরুন রঙ্গের শাড়িটায় তনুকে কোনো এক অপ্সরির মতো লাগছে..আজ তার চোখ যেনো তনুর উপর থেকে সরতেই চাচ্ছে না…বিয়ের পর নাকি মেয়েরা আরো সুন্দর হয়ে যায় তার প্রমান আজ তাসিন হাতে নাতে পেয়েছে… সে নেশাগ্রস্ত চোখে তনুর দিকে তাকিয়ে আছে…সে যেনো এভাবেই তনুর মাঝে হারিয়ে যেতে চায়…
.
.
তাসিনকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে একটা ভেংচি কেটে কিচিনের দিকে হাঁটা দিলাম…এতোক্ষনে তাসিনের ঘোর কাটলো…তারপর একটু মুচকি হেসে আবার টিভি দেখায় মনোযোগ দিলো….
.
.
.
চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে