তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা পর্ব_২

0
2309

তুমিই_আমার_প্রথম_এবং_শেষ_ভালোবাসা
পর্ব_২
#মেঘ_বালিকা
.
.
.
সকালে এক টুকরো রোদ চোখে পরতেই ঘুমটা ভেঙ্গে যায়…পাশে তাকিয়ে দেখি ফারিয়া এখনো ঘুমুচ্ছে..সত্যিই মেয়েটা খুবই ঘুম পাগলা…উঠে বসলাম আজকে যে আমার বিয়ে ব্যাপারটা আমি ভুলেই গেছি..বাইরে থেকে চেচামেচির আওয়াজ শুনে বাইরে বেরিয়ে এলাম..দেখলাম সবাই বিয়ের তোড়জোড় করছে..এতোক্ষনে আমার হুস ফিরে…মনটা খারাপ হয়ে গেলো..সবাইকে ছেড়ে চলে যেতে হবে ভেবেই বুকটা কষ্টে ফেটে যাচ্ছে আমার…আম্মুকে দেখে বুঝা যাচ্ছে সে এই মুহুর্তে খুব রেগে আছে কিন্তু রাগের কারনটা বুঝতে পারছি না..আমি গিয়ে পিছন থেকে আম্মুকে জড়িয়ে ধরলাম…আম্মু একঝটকায় আমাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো,,,
-ছাড় ছাড় এখন আর এতো ঢং করতে হবে না..কয়টা বাজে দেখেছিস!!তোর মাথায় কি কিছুই নাই আজ তোর বিয়ে আর তুই এতো বেলা অব্দি ঘুমিয়ে ছিলি…এখুনি যা ফ্রেশ হয়ে আয় একটু পর পারলার থেকে লোক আসবে সাজাতে..যা তাড়াতাড়ি…
.
.
একি আমার মা নাকি অন্য কেউ আমি বুঝতে পারছি না..আজকের দিনে এমন ব্যবহার কেউ করে…
-আম্মু আজকে তো আমি চলেই যাব তুমি আজকের দিনেও আমাকে রাগারাগি করছো!!
-তো কী করবো..যা যা জ্বালাস না..এমনিতেই অনেক কাজ বাকি একা হাতে আর কতো কাজ করবো..বিউটিরও(কাজের মহিলা) কোনো খবর নাই কালকে বলে দিলাম আজকে সকাল সকাল চলে আসতে এখনো তার আসার নাম নাই…
এসব বলতে বলতে আম্মু চলে গেলো…আর আমি হা করে দাড়িয়ে রইলাম..এদের দেখি আমার জন্যে কোনো মায়াই নাই..যেনো আমি চলে গেলেই এরা বাঁচে…ঠিক আছে যাব চলে আর আসবো না..তখন বুঝবে হুহহ…….
.
.“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন
.
একটু আগে পারলারের লোকজন এসে আমাকে ভুত সাজিয়ে চলে গেছে..এতো করে বললাম কম মেকআপ দিতে কিন্তু না তাদের মতে বিয়ের দিনে কনেকে একটু ভাড়ি মেকআপ দিতে হয় নাহলে বউ বউ মনে হয়না যত্তসব…এমন ভাবে সাজিয়েছে যে আমি নিজেকে নিজেই চিনতে পারছি না…
.
.
ফারিয়া আজকে শাড়ি পরেছে..ওকে দেখতে খুব মিষ্টি লাগছে..ও এমনিতেই সুন্দর সাজার ফলে আরোও সুন্দর লাগছে…আমাকেও নাকি আজ সুন্দর লাগছে সবাই বলছে কিন্তু আমার তো তেমনটা মনে হচ্ছে না..আমি ভাবছি আমাকে দেখে তাসিন আবার উলটো দৌড় না দেয়..দিলে অবশ্য মন্দ হবে না…ভালোই হবে বিয়েটা আর হবে না….
.
.
.
রুমে বসে আছি হঠাৎ বাইরে থেকে সবাই চেচিয়ে বলে উঠলো বর এসে গেছে…ওই মুহুর্তে আমার ভিতর কেমন একটা অদ্ভুত অনুভুতি কাজ করতে লাগলো…পাশে ফারিয়া ছিলো ওকে পাঠিয়ে দিলাম তাসিনের একটা ছবি তুলে আনতে…কেনো জানি ওকে বর বেশে কেমন লাগছে সেটা খুব দেখতে ইচ্ছা করছে…
.
একটুপর ফারিয়া আসলো ওর হাত থেকে ফোনটা নিয়ে তাসিনের পিকটা দেখতে লাগলাম…বাহহ খুব সুন্দর লাগছে ওকে আজকে..মনে হচ্ছে কোনো রাজকুমার..শেরওয়ানিতে বেশ মানিয়েছে ওকে…কেনো জানি ওর থেকে আজকে আর চোখ ফিরাতে পারছি না…খালি তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছা করছে… ছবিতেই এতো সুন্দর না জানি সামনা সামনি কতো সুন্দর লাগে….
.
.
.
অবশেষে বিয়েটা সম্পূর্ন হলো…কিভাবে কি হয়ে গেলো কিছুই বুঝতে পারলাম না..কবুল বলার সময় খুব কান্না পাচ্ছিলো..বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো আমার…কিছুতেই মন মানছিলো না আমার…জানি না কি আছে কপালে…
বিদায়ের সময় আব্বু-আম্মুকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করেছি…এই মানুষগুলো যতই রাগারাগি করুক না কেনো যতই রাগ দেখাক না কেনো আমি জানি তারা ঠিক কতোটা ভালোবাসে আমাকে…সব বাবা-মা রাই তার সন্তানকে খুব ভালোবাসে কিন্তু আমরা কেউ কেউ তাদের এই ভালোবাসা বুঝি না…আমি কখনো আমার আব্বুকে কান্না করতে দেখিনি কিন্তু আজ আমি তার চোখে স্পস্ট পানি দেখেছি…সত্যি সেই ছোটবেলা থেকে মানুষ করে বড় করে তুলে যখন মেয়েকে অন্যের ঘরে পাঠাতে হয় সেই কষ্ট কোনো বাবাই সহ্য করতে পারেনা..না চাইতেও তার চোখে পানি চলে আসে…আম্মু তো কান্না করতে করতে জ্ঞান হারিয়েছে সবাই তাকে ঘরে নিয়ে গেছে…এই অবস্থায় আমার আম্মুকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করছে না…কিন্তু আব্বু জোড় করেই আমাকে গাড়িতে তুলে দিলো আর চিন্তা করতে না করলো…
তারপর তাসিনের হাত ধরে আব্বু বললো,,,,
-বাবা আমার মেয়েটাকে একটু দেখে রেখো..ওকে একটু ভালোবেসে আগলে রেখো..অনেক ভরসা করে ওকে তোমার হাতে তুলে দিয়েছি…ও একটু চঞ্চল স্বভাবের মাঝে মাঝে একটু দুষ্টুমি করে তাই শাসণ করো না হলে আবার মাথা উঠে যাবে(কান্নারত অবস্থায় একটু হেসে)
-আব্বু আপনি চিন্তা করবেন না..ও আমার কাছে খুব ভালো থাকবে..কোনো অভিযোগ করার জায়গা রাখবো না আমি..আপনি আমার উপর ভরসা রাখেন..আর নিজেদের খেয়াল রাখবেন…
আব্বুর মুখে হাসি ফুটে উঠলো…সে আজ খুব নিশ্চিন্ত এমন একজনের হাতে নিজের একমাত্র মেয়েকে তুলে দিতে পেরে…
.
.
.
বাসর ঘরে বসে আছি…রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে…সারা রুমে ফুলের গন্ধে মো মো করছে…এমন একটা পরিবেশ যেকারো মন ভালো করার জন্য যথেষ্ট…কিন্তু আমার বুকের ভিতর তোড়পাড় শুরু হয়েছে…খুব ভয় কাজ করছে…এই দিনটা নিয়ে সব মেয়েরই একটা স্বপ্ন থাকে আমারও ছিলো…অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে হয়তো এতোটা ভয় কাজ করতো না যতটা না তাসিনকে বিয়ে করে করছে..জানিনা শয়তানটা কী পরিকল্পনা করে রাখছে আজকের রাতের জন্যে…
.
.
.
অনেক্ষন যাবত বসে আছি কিন্তু তাসিনের আসার নাম নেই…সারাদিন যা ধকল গেলো এখন খুব ক্লান্ত লাগছে..একটু ঘুমের প্রয়োজন কিন্তু ঘুমোতেও পারছি না….অবশেষে সব কিছু সমাপ্তি ঘটিয়ে তাসিন রুমে প্রবেশ করলো…আর এইদিকে আমার হ্রদপিন্ডটা ঢোল বাজানো শুরু করেছে কী একটা অস্বস্তিকর পরিবেশ…আমি মাথা নিচু করে বসে আছি আর ভাবছি এখন আমার সাথে কী হতে পারে…কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে তাসিন আমার পাশে এসে ধপ করে বিছানায় উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে পরলো…আমি একদম বোকা বনে গেলাম…এটা কী হলো!!!তাসিন এতো শান্ত কেনো..আমি তো কতো কিছুই না ভাবছিলাম কিন্তু এমনটাও আশা করিনি…নাকি এটা ঝড়ের পূর্বাভাস…কিছুই বুঝতে পারছি না…ওর মনে ঠিক কী চলছে!!!আচ্ছা ওকি পুরোনো কথা ভুলে আবার সব কিছু নতুন করে শুরু করতে চাচ্ছে!!!!!
হঠাৎ আমার ভাবনার মধ্যে ছেদ ঘটিয়ে তাসিন আমার হাতটা টান দিয়ে ওর বুকের ওপর ফেলে দেয়ে…তারপর বুকের সাথে ঝাপতে ধরে বলে,,,,
-এতো নিশ্চিন্ত হওয়ার কিছু নেই যাও ঘুমিয়ে পরো..গুড নাইট….
কপালে আলতো একটা চুমু দিয়ে আমাকে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে আবার পাশ ফিরে শুয়ে পরে তাসিন…আর আমি থম মেরে বসে রইলাম কী ঘটলো আমার সাথে কিছুই বুঝতে পারলাম না…..
.
.
.
.
চলবে……..
.
.
(ভুল-ক্রটি ক্ষমার চোখে দেখবেন….জানি না কেমন হচ্ছে লেখা…সবাই দোয়া করবেন এবং পাশে থাকবেন..ধন্যবাদ)

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে