তুই শুধু আমার পর্ব-২৫+২৬

0
1539

#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 25+26

আশা নিজের রুমে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাড়িয়ে চুল আচড়িয়ে নিচ্ছে। আমান হঠাৎ পেছন থেকে আশাকে জড়িয়ে ধরে দুইটা টিকিট আশার সামনে এগিয়ে দেয়। আশা বলে ওঠে,
–” এইটা কি?”

–” টিকিট।”

–” কিসের টিকিট।”

আশার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলে ওঠে,
–” হানিমুনের।”
আমানের কথা শুনে আশা লজ্জা পেয়ে সরে যেতে গেলেই, আমান আশার হাত ধরে টান দিতেই আশা আমানের বুকে এসে পড়ে। আমান এক হাত আশার কোমরে দিয়ে চেপে ধরে, আর এক হাত আশার হাতের মাঝে দিয়ে ধরে বলতে শুরু করে,
–” এইসব কি ম্যাডাম। হাজব্যান্ড এতো ভালো একটা গুড নিউজ দিলো। কোথায় হাজব্যন্ড কে খুশি হয়ে কয়েকটা কিস দিবেন, তা নাহ করে আপনি চলে যাচ্ছেন। এটা মানা যায় নাহ।”

আশা মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমান, বাসায় মা, বাবা, আশিকা কেউ নেই। আমরা কিভাবে ঘুরতে যেতে পারি।”

–” আরেহ! আমাকে তোহ আম্মুই বলছে হানিমুনে যেতে। ওনারা তাহলে আরও দুইদিন পরে আসবেন।”

–” কিন্তু!”

–” কোনো কিন্তু নাহ। ওহ্যা আম্মু বলেছে, হানিমুন থেকে আসার পর যেনো তারা সুসংবাদ পায়।”

–” মিথ্যাবাদি একটা ছাড়ো আমাকে।”

–” নাহ ছাড়বো নাহ।”

–” ডিনার রেডি করতে হবে ছাড়ো।”
আশা জোর করে আমানের কাছের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে চলে যায়। আর আমান মুচকি হেসে ফোন নিয়ে বিছানার হেলান দিয়ে বসে।

★★★
সেহের বারান্দায় দোলনায় বসে বসে গান শুনছিলো। ফোনটাহ হাতে নিয়ে দেখে ১ টাহ বেজে গেছে, তাই রুমে এসে পানি খেতে গিয়ে দেখে বোতলে একটুও পানি নাই। তাই পানি নিতে নিচে আসতে যেতেই, একটা হালকা আওয়াজ পায়। সেহের চারপাশে তাকিয়ে আরসালের রুমের দিকে চোখ যায়। সেহের আরসালের রুমের দিকে একটু এগিয়ে এসে, দরজায় হালকা চাপ দিতেই দরজা খুলে যায় এবং রুমের লাইট অন করা। সেহেরের কেমন যেনো মনে হওয়ায় ভেতরে এসে দেখে, আরসাল বিছানায় শুয়ে কেমন কাঁপছে। সেহের তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” ভাইয়া তুমি ঠিক আছো?”

সেহের আরসালের কপালে হাত দিতেই দেখে আরসালের শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে, শুধু তাই নাহ আরসাল ঘুমের মাঝে বিড়বিড় করে কি যেনো বলছে। সেহের আরসালের মুখের কাছে কান নিয়ে যায় শোনার জন্য। আরসাল জ্বরের ঘোরে বলে ওঠে,
–” সেহের!”

–” ভাইয়া কিছু বলবে। বলো! তোমার কি বেশি কষ্ট হচ্ছে?”

–” I love you Seher. I really love you. Please তুই আমাকে ছেড়ে কোথাও যাস নাহ। আমি বাঁচতে পারবো নাহ তোকে ছাড়া। সেহের আমি সত্যিই তোকে অনেক ভালোবাসি। #তুই_শুধু_আমার সেহের।”
সেহের মুখ উঠিয়ে আরসালের দিকে তাকায়। আরসালকে একদম একটা নিষ্পাপ বাচ্চার মতো লাগছে। জ্বরের জন্য ঠোঁট টাহ হালকা ফুলে লাল হয়ে আছে, এতে যেনো আরসালকে আরও কিউট লাগছে। আরসালের কথা শুনে সেহেরের চোখে পানিতে ভরে গেছে। সেহের চোখে পানি, মুখে মুচকি হাসি নিয়ে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। সেহের আরসালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” I know, I know mr. Arsal. তুমি আমাকে এখনো ভালোবাসাে। অনেক ভালোবাসাে। আমিও তোমার প্রতি দূর্বল হয়েছি। কিন্তু এইটা কি ভালোবাসা? আমি জানি নাহ। শুধু এইটুকু জানি, তোমার পাশেও কাউকে আমি সহ্য করতে পারি নাহ।”

সেহের আরসালের কপালে একটা চুমু একে দেয়। তারপর নিচে থেকে একটা বাটিতে করে পানি আর একটা কাপড় নিয়ে আসে। আরসালের মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে সেহের।

★★★
রাহুল অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নামতেই দেখে মি. মুবিন পেপার পড়ছেন। রাহুল বলে ওঠে,
–” গুড মর্নিং ড্যাড!”

–” আরে রাহুল! গুড মর্নিং ডেয়ার। কাম তোর জন্যই বসে আছি। আই, ব্রেকফাস্ট শুরু কর।”
রাহুল এসে ডাইনিং টেবিলে বসতেই মি. মুবিন বলে ওঠে,
–” রাহুল! আমার মনে হয় তোর এখন বিয়ে করা উচিত।”

–” ড্যাড! আমার তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো?’

–” হুম বল।”

–” ড্যাড! আমার সেহেরকে ভালো লাগে।”

–” সেহের মানে, আজিজের মেয়ে?”

–” হুম! আসলে ড্যাড।”

–” রাহুল! তুই যখন জন্ম নিয়েছিলি তখন তোর মা মারা যায়। তখন আমাকে সবাই বলেছিলো, বিয়ে করার জন্য। কিন্তু আমি বিয়ে করি নি। কারন সে যদি আমার ছেলে কে দেখতে অস্বীকার করতো। তুই, আমার ছেলে যেনো কষ্ট নাহ পায়, তাছাড়া তোর মায়ের জায়গায় কাউকে বসাতে পারতাম নাহ। তাই আর দ্বিতীয় বার বিয়ে করার কথা ভাবি নি। ছোট বেলা থেকে তুই যাহ চেয়েছিস আমি তোকে দিয়েছি। যখন তুই ছোটো ছিলি আমাকে বলতি, ড্যাড আমার এই গাড়ি লাগবে, ঐ ডল লাগবে, ঐ রোবট লাগবে, এইটা লাগবে ঐটা লাগবে দিয়েছি তোকে। আর একটু বড় হয়ে বললি ড্যাড! আমি এক সাথে ৩ টাহ গাড়ি দেখেছি আমার ৩ টায় চাই। আমি তোকে ৩টাই কিনে দিলাম। যাহ যাহ চেয়েছিস সব দিয়েছি শুধু তাের মাকে ছাড়া। কিন্তু তুই এতো কিছু পেয়েও কখনো বিপথগামী হস নিহ। ভালো ভাবে স্টাডি করেছিস, তোকে নিয়ে আমার স্বপ্নগুলো পূরন করেছিস। I am proud of you my son. আর আজ তুই সেহেরকে চাচ্ছিস। আমি তোকে সেহেরকে এনে দিবো। আমার ঘরের রাজকুমারের জন্য সেহেরই বেস্ট।”

রাহুম মি. মুবিন কে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” I love you dad.”

–” I love you too my son.”

★★★
জানালা দিয়ে রোদ এসে আরসালের মুখে পড়তেই আরসাল চোখ মুখ কুচকে নিয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়। আরসালের কাছে বুকের উপর ভারি কিছু অনুভব হওয়ায় বুকের দিকে তাকতেই সেহেরের ঘুমন্ত মুখ দেখতে পায়। সেহের বিছানার পাশে একটা চেয়ারে বসে মাথাটা আরসালের বুকের উপর দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে, এই মুখটাহ আরসাল যতবার দেখে ততবার আরসাল এই মুখের প্রেমে পড়ে যায়। সেহেরকে একটু নড়ে উঠতে দেখে আরসাল আবার চোখ বন্ধ করে ফেলে। সেহের উঠে আরসালকে ঘুমাতে দেখে আস্তে করে আরসালের বুকের উপর থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে বসে। সেহের আরসালের মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বর নেই, তাও সেহের আরসালের ঘুম নাহ ভাঙিয়ে কাপড় আর পানির বাটি নিয়ে চলে যায়। সেহের যেতেই আরসাল চোখে খুলে তাকিয়ে উঠে বসে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সেহের কি গতকাল সারারাত এখানে ছিলো? আর আমার কি জ্বর এসেছিল নাকি? আর, আসলেও বাহ সেহের জানলো কিভাবে আমার জ্বর এসেছে?”

আরসাল আর কিছু নাহ ভেবেই ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে।
মায়া চৌধুরী আরসালের জন্য খাবার নিয়ে আরসালের রুমে ঢুকতেই দেখে আরসাল অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। মায়া চৌধুরী খাবারের ট্রে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে আরসালের কাছে এসে বলে ওঠে,
–” আরসাল! তোর নাকি জ্বর এসেছে? আর তুই রেডি হচ্ছিস কেনো?”

–” আম্মু অল্প এসেছিলো কোনো ব্যাপার নাহ। আর আমাকে অফিস যেতে হবে। কাজ আছে অফিসে।”

–” কিন্তু আমি তোকে কোথাও যেতে দিবো নাহ। আমি গতকালই তোকে বলেছিলাম, কিন্তু তুই আমার কথা শুনিস নি। ভাগ্যিস সেহের বুঝতো পেরেছিলো। নাহলে সারারাত কি কষ্ট টায় নাহ পেতি। আমি আর তোর কোনো কথা শুনবো নাহ। তুই অফিস যাবি নাহ ফাইনাল।”

–” আম্মু প্লিজ। আমি তাড়াতাড়ি চলে আসবো। আর এখন তোহ আমার জ্বরও নেই। তুমি চিন্তা করো নাহ।”

–” আচ্ছা ঠিক আছে। তাহলে আগে খাবার খাবি, তারপর মেডিসিন নিয়ে তারপর যাবি।”

–” আম্মু!”

–” আরসাল! আমি কিন্তু এইবার রেগে যাবো।”

–” ওকে ওকে! তোমাকে আর রাগতে হবে নাহ। তুমি যাহ বলছো তাই হবে। চলো খাইয়ে দিবা।”
মায়া চৌধুরীও মুচকি হেসে আরসালকে খাইয়ে দিতে থাকে।

★★★
আশা আর আমান এয়ারপোর্টে বসে আছে। আশা আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা, আমি যে তোমাকে গতকাল রাত থেকে বলে যাচ্ছি যে আমরা কোথায় যাচ্ছি। অথচ তুমি বলছো নাহ। এইটা কি ঠিক হচ্ছে?”

–” সারপ্রাইজ!”

–” আমার সারপ্রাইজ চাই নাহ। প্লিজ বলো।”

–” আচ্ছা বাবা বলতেছি। আমরা কক্সবাজার যাচ্ছি।”

–” সত্যি। ইয়ে! কক্সবাজার আমার অনেক ভালো লাগে।”

–” I know!”
কিছুক্ষণ পর এনাউন্সমেন্ট হতেই আমান আর আশা গিয়ে প্লেনে উঠে। কিন্তু ওদের প্লেনে আরও একজন আছে, যে ওদের দুইজনের দিকে তীক্ষ্ণ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” তোমাদের এই সুখের সংসার আমি শেষ করে দিবো। একটা কথা আমার কাছে সবসময় মূল্যবান আর সেইটা হলো, আমি যাহ চাই তাহ পাই আর আমি যদি নাহ পাই তাহলে আর কাউকে সেটা পেতে দেই নাহ।”
কথাগুলো বলেই অচেনা লোকটাহ আমান আর আশার দিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দেয়।

★★★
আরসাল অফিসে নিজের কেবিনে বসে কাজ করছে। তখনই কারো “আরসাল” ডাকার আওয়াজে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে নেহা। আরসাল নেহাকে দেখে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি এখানে?”

–” হুম। এয়ারপোর্ট থেকে সোজা এখানে এলাম।”

–” এয়ারপোর্টে কেনো গিয়েছিলে।”
নেহা আরসালের অপোজিটে রাখা একটি চেয়ারে বসে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” মম, ড্যাড কে সি অফ করতে।”

–” মানে, আংকেল আন্টি কি চলে যাচ্ছে?”

–” হুম।”

–” ওহ। তাহলে তুমি কি তোমার বাসায় একা থাকবা।”

–” নাহ, কোনো হোটেলে থাকবো। ওতো বড় বাসায় আমি একা একা থাকতে পারবো নাহ।”

–” তাহলে তুমি হোটেলে কেনো থাকবা? তুমি আমার বাসায় শিফট করে যাও।”

–” সেইটা কিভাবে হয়?”

–” কোনো কথা নাহ তুমি আমার বাসায় শিফট হচ্ছো। আর সেইটা আজই। ওকে! ওয়েট আমি বাসায় ফোন করে বলে দেয় তোমার জন্য রুম গুছিয়ে রাখতে।”
আরসাল ফোন টাহ নিয়ে জানালার পাশে চলে যায়। আর নেহা মুখে শয়তানি হাসি দিয়া মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আমি তোহ এইটায় চেয়েছিলাম আরসাল। তাই তোহ মম, ড্যাড কে বিদেশে পাঠিয়ে দিলাম। আর আমিও কি সুন্দর করে তোমার বাসায় শিফট হয়ে গেলাম। এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। তোমার আর সেহেরের ভিতর চিরদিনের জন্য দেওয়াল তুলে দেওয়া।”

সেহের ডাইনিং টেবিলের উপর বসে পা দুলিয়ে দুলিয়ে চকলেট খাচ্ছে। মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী সোফায় বসে বসে গল্প করছে। এর মাঝে কলিং বেলের আওয়াজ পেয়ে সেহের যায় দরজা খুলতে। দরজা খুলেই সামনে তাকিয়ে সেহের অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কারন সামনে আরসাল এবং নেহা দাড়ানো আছে, সাথে বড় লাগেজ। সেহেরকে সামনে এভাবে দাড়িয়ে থাকতে দেখে আরসাল ধমক দিয়ে বলে ওঠে,
–” কিরে সামনে এভাবে দাড়িয়ে আছিস কেনো?”

আরসালের ধমক শুনে সেহের তাড়াতাড়ি সরে যায়। নেহা ভেতরে আসতেই মায়া চৌধুরী এগিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কেমন আছো নেহা?”

–” জি আন্টি ভালো।”

–” হুম। কে আছিস নেহাকে ওর রুম টাহ একটু দেখিয়ে দে। যাও মা। আগে ফ্রেশ হয়ে নাও। আরসাল তুইও যা ফ্রেশ হয়ে নে।”
নেহা আর আরসাল চলে যায়। সেহের এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরী কে জিজ্ঞাসা করে,
–” বড় আম্মু, এই নেহা আমাদের বাসায় কেনো?”

–” আজ থেকে ও এখানে থাকবে।”

–” কিহ? কেনো?”

–” ওর বাবা মা আবার বিদেশে চলে গেছে। তাই ও হোটেল থাকবে বলে ঠিক করে। আরসাল তাই ওকে এখানে নিয়ে এলো।’
মায়া চৌধুরীর কথা শুনে সেহেরের মারাত্মক রাগ উঠে। সেহের আর কোনো কিছু নাহ ভেবেই রেগে আরসালের রুমে চলে যায়। আরসালের রুমে আসতেই দেখে আরসাল রুমে নাই। চারপাশে একবার তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” কোথায় গেলো?”

কথাটা বলেই পিছন ঘুরতেই সামনে আরসালকে দেখে ভয় পেয়ে পড়ে যেতে গেলে আরসাল ধরতে যায়, কিন্তু তাল সামলাতে নাহ পেরে সেহেরকে নিয়ে বিছানার উপর পড়ে আরসাল। আরসাল মাত্র শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছিলো। বের হতেই সেহেরকে বিছানার কাছে দাড়িয়ে কি যেনো বিড়বিড় করতে দেকে এগিয়ে আসে। তারপরই এই অবস্থা হয়।
সেহের চোখ কুঁচকে বন্ধ করে রেখেছে। আরসালের চুল থেকে পানি পড়ছে সেহেরের মুখের উপর। আরসাল একভাবে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে। সেহেরের মুখে ফোঁটা ফোঁটা পানি পড়ে মুখ ভিজে যাচ্ছে। সেহের আস্তে আস্তে করে চোখ খুলে দেখে আরসাল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। সেহের বলে ওঠে,
–” ওঠো।”

সেহেরের কথায় আরসালের ধ্যান ভাঙতেই তাড়াতাড়ি সেহেরের উপর থেকে উঠে যায়। সেহের উঠে বসে ওড়না দিয়ে নিজের মুখের পানি মুছে নেয়। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এখন এখানে কেনো?”

তখনই সেহেরের মনে পড়ে আবার নেহাকে এই বাসায় আনার কথা। উঠে দাড়িয়ে নিজের কোমরে হাত দিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” ওহ হ্যা! তুমি ঐ নেহাকে কেনো আনছো?”

–” তাতে তোর কি?”

–” আমার কি মানে? কি ভেবেছো তুমি নাহ বললে আমি কিছু বুঝতে পারবো নাহ?”

–” আচ্ছা তোহ, কি বুঝিস তুই?”

–” ঐ নেহার সাথে চিপকে নাহ থাকলে তোহ আর তোমার আবার ভালো লাগে নাহ। তাই বলে বাসায় নিয়ে আসবা?”
সেহেরের কথা শুনে আরসালের প্রচন্ড রাগ উঠে। আর সেহেরের হাত ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” কি ভাবিস আমাকে বলতো? ক্যারেক্টারলেস?”

আরসালের রাগ দেখে সেহেরের গলা শুকিয়ে যায়। সেহের আমতা আমতা করে বলে ওঠে,
–” নান নান না, তা তা তাহ ম মনে ক ক করবো কেনো? ব ব ব বলছিলাম।”

–” Shut up. কি, তোতলায়া কথা বলতেছিস কেনো?”
সেহের কান্না করে দেয় শব্দ করে। আর সেহেরের এমন ভাবে কান্না দেখে ভেবাচেকা খেয়ে সেহেরকে ছেড়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” এরোকম ভাবে কান্না করছিস কেনো?”

–” তুমি আমাকে সবসময় বকো কেনো?”

–” আমি সবসময় বকা দেয় মানে। কান্না অফ কর।”

–” নাহ!”

–” এই তুই আমার রুম থেকে যাহ তোহ।”

–” সত্যি?”

–” হুম! যাহ।”
সেহের তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে এসে একটা লাফ দিয়ে বলে ওঠে,
–” যাক বাবা বাচলাম! এখানে আর একটু সময় থাকলে নির্ঘাত আমাকে মেরে ফেলতো। ঐ নেহার সাথে চিপকে থাকলে পরে দেখা যাবে। এখন প্রান নিয়ে বাচি বাবা।”
কথাগুলো বলেই সেহের নিজের রুমে চলে যায়।

★★★
আশা আর আমান কক্সবাজারের লং বিচ হোটেলে এসে উঠে। আমান ফ্রেশ হতে গেছে আর আশা বারান্দায় দাড়িয়ে সমুদ্র দেখছে। হোটেলের বারান্দা থেকে সমুদ্র খুব ভালো ভাবেই দেখা যায়। সমুদ্রের শীতল হাওয়া উপভোগ করা যায়। হঠাৎ কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় আশা চমকে উঠলেও বুঝে যায় যে ব্যাক্তিটি আমান। আমান আশার শাড়ির নিচ দিয়ে হাত দিয়ে আশার পেট আকড়ে ধরে। আশা আমান ছোয়া পেতেই জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আমান আশার চুল গুলো সরিয়ে কাধে চুমু দিতেই আশা কেঁপে উঠে। আমান আশাকে ঘুরিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে আশার কপালে একটা চুমু একে দেয়। আশা আমানের ভালোবাসার ছোয়া পেতেই মুচকি হাসি দেয়। আশার মুখে হাসি দেখে আমানের মুখেও হাসি ফুটে উঠে। আমান আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” যাহ ফ্রেশ হয়ে নে। আমি ডিনার অর্ডার করছি।”

–” হুম।”
আশা ফ্রেশ হতে চলে যায় আর আমান ডিনার অর্ডার দিতে থাকে। কিন্তু কেউ একজন তাদের ভালোবাসা দেখে রেগে লাল হয়ে যাচ্ছে। আমানদের পাশের রুমের বারান্দায় একজন দাড়িয়ে তাদের এই ভালোবাসা দেখে মনে মনে বলে ওঠে,
–” তোমাদের এই সুখের সংসার বেশিদিন থাকবে নাহ। আশা, তোমাকে আমার চাই। আর যদি তোমাকে নাহ পাই, তাহলে আর কাউকেই পেতে দিবো নাহ। কথাতেই আছে, আমি যাহ চাই, তাহ পাই। আর আমি নাহ পেলে তাহ মাড়িয়ে দিয়ে যায়।”

★★★
সেহেরের আজ খুব সকালে ঘুম ভেঙে গেছে। তাই সেহের ছাদে গিয়ে হেটে বেড়াচ্ছে। সাদের রেলিং এর কাছে গিয়ে নিচে তাকাতেই দেখে আরসাল জগিং করতে করতে আসছে। আরসালকে দেখে সেহেরের চোখ যেনো আরসালের উপরই আটকে যায়। আরসাল একটা ব্লাক জগিং সুট পরেছে, হাতে একটা ব্লাক ব্লেটেড ব্রেসলেট, বাম কানে একটা ব্লাক টপ, হাতে হাত মোজা যার আঙুল কাটা জাস্ট হাতের তালু ঢাকা আছে, পায়ে ব্লাক কের্চ, মাথায় একটা ব্লাক রাবার ব্যান্ট পরা যেটার উপরে কয়েকটা চুল পড়ে আছে, একদম অন্যরকম লুক। যে কেউ আরসালের এই লুক দেখলে ফিদা হয়ে যাবে। সেহের আরসালকে দেখছে, হঠাৎ সেহেরের মেজাজ গরম হয়ে যায়, আরসালের পাশে নেহাকে দেখে। নেহা ও তাহলে আরসালের সাথে জগিং করতে গেছিলো। আরসাল আর নেহা জগিং করে এসে গার্ডেনে দাড়িয়ে কি নিয়ে যেনো কথা বলছে এবং হাসাহাসি করছে। সেহের তোহ রাগে পুরা লাল হয়ে গেছে। আরসাল নেহার সাথে কথা বলতে বলতে হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের সাদ থেকে তাদের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে আবার নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা ভেতরে চলো, ফ্রেশ হতে হবে।”

–” হুম চলো!”
আরসাল সেহেরের দিকে আর একবার তাকিয়ে ভেতরে চলে যায়। সেহেরের ও রেগে নিচে চলে আসে। সেহের নিচে এসে দেখে একজন সার্ভেন্ট ট্রেতে খাবার নিয়ে আরসালের রমের দিকে যাচ্ছে। সেহের সার্ভেন্টের কাছে এসে বলে ওঠে,
–” শোনো এইগুলা নিয়ে কই যাও।”

–” আরসাল ভাইয়া আজ নিচে আসবে নাহ খেতে, তাই নেহা আপু বললো ওনাদের দুইজনের জন্য খাবার নিয়ে যেতে।”

–” কে কোনটা খাবে?”

–” আরসাল ভাইয়া সালাদ আর কফি খাবেন আর নেহা আপু চিকেন স্টু খাবেন।”

–” ওহ, তুমি আমার কাছে দাও।”

–” নাহ আপু কি বলেন, আমি দিয়ে আসি।”

–” নাহ তোমাকে বলছি তোহ আমার কাছে দাও। আর তুমি যাও।”

–” ওকে আপু।”
সার্ভেন্টটি চলে যেতেই সেহের ট্রে টাহ ডাইনিং টেবিলের উপর রেখে কিচেন রুম থেকে লবন নিয়ে এসে চিকেন স্টু তে মিশিয়ে দেয়। আর মনে মনে বলতে থাকে,
–” খা এইবার। গিয়েছিলি নাহ আরসালের সাথে জগিং আর হাসাহাসি করতে। এখন এই সল্ট চিকেন স্টু খেয়ে সেইটা হজম কর।”

সেহের ট্রে টাহ নিয়ে আরসালের রুমে ঢুকে দেখে আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে আর নেহা সামনে বসে একভাবে তাকিয়ে আছে আরসালের দিকে। দৃশ্যটাহ দেখেই সেহেরের মনে হচ্ছে তার শরীরে কেউ আগুন ধরিয়ে দিছে। নেহা হঠাৎ সেহেরের দিকে তাকাতেই নেহার রাগ উঠলেও নিজেকে সামলিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আরে! সেহের তুমি?”

নেহার কথা শুনে আরসাল দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে সেহের হাতে ট্রে নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সেহের এগিয়ে এসে ট্রে টাহ সেন্টার টেবিলের উপর রেখে নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তোমাদের ব্রেকফাস্ট।”

–” তাহ তুমি কেনো আনতে গেলে? সার্ভেন্টই তোহ এনে দিতো।”

–” নাহ কোনো প্রব্লেম নেই। তোমরা ব্রেকফাস্ট করে নেও।”
কথাটা বলে সেহের বেরিয়ে যায় রুম থেকে। কিন্তু রুম থেকে বেরিয়ে সেহের দরজার পাশ থেকে উকি দিয়ে দেখতে লাগে সবকিছু। নেহা আরসালের দিকে খাবার এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল আগে খেয়ে নাও। পরে কাজ ওকে!”

–” হুম!”
আরসাল খাবার এগিয়ে নিয়ে খাবার খেতে শুরু করে। নেহা খাবার মুখে দিতেই চোখ বড় করে ফেলে আর ওয়াশরুমের দিকে দৌড়ে যায়। নেহাকে এরকম ভাবে যেতে দেখে আরসাল বলে ওঠে,
–” Neha are you ok? কি হয়েছে?”

নেহা ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এসে আরসালের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল খাবারে অনেক লবন। মুখেই তোলা যাচ্ছে নাহ।”

–” বাট নেহা আমাদের শেফ তোহ অনেক ভালো রান্না করে।”

–” মেবি কোনো ভাবে লবন পড়ে গেছে৷”

–” হুম। হতে পারে।”

–” ইশ! মুখের ভেতর কেমন যেনো করছে।”
আরসাল নেহাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই দরজার দিকে চোখ পড়তেই দেখে সেহের মুখ চেপে হাসছে। আরসালকে নিজের দিকে তাকাতে দেখে সেহের তাড়াতাড়ি সরে যায়। কিন্তু আরসাল বুঝে যায় নেহার খাবারে এতো লবন হওয়ার কারন কি? আরসাল নেহার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা তুমি রুমে গিয়ে রেস্ট নাও৷ আমি সার্ভেন্ট কে বলছি আবার ভালো খাবার পাঠানোর জন্য।”

–” হুম!”
নেহা তার রুমে চলে যায়। আর এইদিকে আরসাল মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আমি জানি সেহের এইটা তোর কাজ। তুই করেছিস এইসব। দেখাচ্ছি মজা তোকে।”

আরসাল এসব ভেবেই সেহেরের রুমের দিকে চলে যায়। সেহের নিজের রুমে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ দরজা লক করার আওয়াজে পিছনে তাকিয়ে দেখে আরসাল। আরসাল কে দেখেই সেহের বলে ওঠে,
–” ভাইয়া, তুমি দরজা কেনো লক করছো?”

–” তোর সাথে বাসর করবো তোহ তাই।”

–” মানে?”
আরসাল সেহেরের একদম কাছে চলে আসে। সেহের আরসালকে এতো কাছে দেখে ভয় পেয়ে যেয়ে পিছনে সরতেই আরসাল সেহেরের হাত ধরে বলে ওঠে,
–” একদম পিছিয়ে যাবি নাহ। আগে আমার কথার এ্যান্স দে।”

–” কিক কিক কি কথা?”

–” নেহার খাবারে লবন কেনো মিশিয়েছিস?”

–” আমি?”

–” হ্যা তুই। একদম নাটক করবি নাহ, যে তুই কিছুই জানিস নাহ। এখন বল লবন কেনো মিশিয়েছিস?”

–” হ্যা, তুমি ঠিকই বলেছো। আমি মিশিয়েছি লবন। আর যাহ করেছি বেশ করেছি।”

–” কেনো মিশিয়েছিস আমি সেইটা আস্ক করছি?”

–” তোমার সাথে অলটাইম চিপকে থাকে কেনো, তাই মিশিয়েছি। আমার রাগ হয়, ও যখন তোমার কাছে যায়।”

–” কেনো? তোর কেনো রাগ হয়? আমার সাথে যার ইচ্ছে মিশুক, চিপকে থাকুক, যাহ খুশি করুক। তোর কেনো রাগ হয়?”
আরসালের এই কথা শুনে সেহের চুপ হয়ে যায়। সেহের মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” সত্যি তোহ! আমার কেনো রাগ হয়। আমার রাগ হওয়ার তোহ কোনো কারন নেই। আরসাল ভাইয়ার সাথে যার খুশি মিশবে। কিন্তু আমি কেনো মেনে নিতে পারি নাহ? কেনো এমন হচ্ছে?”

আরসাল সেহেরকে কিছু ভাবতে দেখে বলে ওঠে,
–” কি ভাবছিস? আমার পাশে কাউকে দেখলে তোর খারাপ কেনো লাগে, সহ্য কেনো করতে পারিস নাহ, এইসব ভাবতেছিস তোহ?”

–” হ্যা, তাই ভাবছি। কিন্তু আমার কাছে কোনো উত্তর নেই।”

–” সেহের ভাব, তাড়াতাড়ি ভেবে নে সেহের। উত্তর বের কর, নাহলে অনেক দেরী হয়ে যেতে পারে।”
কথাটাহ বলেই আরসাল সেহেরের রুম থেকে বেরিয়ে আসে। আর সেহের আরসালের যাওয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে থাকে।

চলবে……………….🌹

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে