#তুই শুধু আমার
#Writer_মারিয়া
#Part : 23+24
সারাদিন কাঠফাটা রোদ ছিলো, অথচ সন্ধ্যার পর হালকা মেঘ আর এখন কালো মেঘে ছেয়ে গেছে পুরো আকাশ। আবহাওয়ার যেনো কোনো ঠিকই নাই, কখন বৃষ্টি কখন রোদ কিছুই যেনো বোঝার উপায় নাই।
আরসাল আর সেহের গাড়িতে করে যাচ্ছে। আরসাল কোনো কথা বলছে নাহ। চুপচাপ গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। সেহের ভয়তে চুপ মেরে আছে। বেজে উঠে। সেহের ফোন অন করে দেখে মায়া চৌধুরী কল করেছে। আরসাল একবার সেহেরের দিকে তাকিয়ে হাত বাড়িয়ে দেয়। সেহের চুপচাপ আরসালের হাতের উপর ফোন টাহ দিয়া দেয়। আরসাল ফোন টাহ রিসিভ করে কানে রাখতেই ঐপাশ থেকে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” সেহের কই তুই মা? আরসাল চলে আসলে বিপদ হয়ে যাবে, তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আই।”
–” হুম আসছে।”
আরসালের কন্ঠ শুনে মায়া চৌধুরী ভেবাচেকা খেয়ে যায়। হালকা কম্পিত কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আরসাল! তুই?”
–” হুম। রাখছি।”
–” আরসাল, আরসাল শোন।”
আরসাল ফোন কেটে দেয়। সেহেরের দিকে আবার ফোন এগিয়ে দেয় আরসাল। সেহের ফোন নিয়ে আবার চুপ করে বসে থাকে। কিছু সময়ের মাঝে ঝমঝম করে বৃষ্টি পড়তে শুরু হয়ে যায় সাথে ঝড়ো হাওয়া। হঠাৎ শব্দ করে গাড়িটাহ থেমে যায়। সেহের ভয় পেয়ে বলে ওঠে,
–” কি হলো?”
আরসাল সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহের চুপ মেরে যায়। আরসাল গাড়ি থেকে নামতে গেলে সেহের আরসালের হাত ধরে বলে ওঠে,
–” কই যাও? বাইরে কেমন ঝড় হচ্ছে দেখতে পাচ্ছো নাহ?”
আরসাল সেহের দিকে তাকিয়ে তার হাত ধরা সেহেরের হাতের দিকে তাকাতেই সেহের হাত সরিয়ে নেয়। আরসাল আবার সেহেরের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে যায়। কয়েক সেকেন্ডের মাঝেই আরসাল একদম ভিজে যায়। গাড়ির টায়ারের কাছে এসে দেখে টায়ার পান্চার হয়ে গেছে। গাড়িতে একটা এক্সট্রা টায়ার থাকলেও এই ঝড়ের কারনে তাহ বদলানো সম্ভব নাহ। আর তাছাড়া গাড়িতে থাকাটাও একটা বিপজ্জনক হয়ে যাবে। আরসাল চারিদিকে তাকিয়ে দেখে রাস্তার পাশে একটা পুরোনো বিল্ডিং আছে। আরসাল গাড়ির দরজা খুলে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” নেমে আই।”
–” কি? এই ঝড়ের মাঝে নামবো কেনো?”
–” এখন গাড়িতে থাকা ঠিক নাহ।”
–” তাহলে কোথায় যাবো?”
আরসালের সেহেরের এতো প্রশ্ন শুনে রাগ উঠে যায়। আর কোনো কথা নাহ বলে সেহেরকে কোলে তুলে নেয়। কয়েক সেকেন্ডের মাঝে সেহেরও ভিজে যায়। আরসাল সেহেরকে নিয়ে পুরোনো বিল্ডিং এ চলে আসে। চারিপাশে একদম অন্ধকার। আরসাল ফোন বের করতে গিয়ে দেখে ফোন নাই, তারমানে ফোন গাড়িতে রেখে এসেছে। সেহের আরসালের হাত ধরে আছে। সেহের অন্ধকার ভয় পায়। আরসাল বলে ওঠে,
–” তুই এখানে থাক। আমি গাড়ি থেকে ফোনটাহ নিয়ে আসি।”
–” কি বলছো আমি একা একা?”
–” পাঁচ মিনিট লাগবে। ওয়েট।”
কথাটা বলেই আরসাল গাড়ি থেকে ফোন আনতে চলে যায়। সেহের ভয়তে চোখ বন্ধ করে বসে থাকে। আরসাল গাড়ি থেকে একটা প্যাকেটে করে ফোন নিয়ে আসে। এসেই ফ্লাস লাইট অন করে সেহেরের দিকে মারতেই আরসালের চোখ যেনো সেখানেই আটকে যায়। সেহের আজ মিষ্টি কালারের একটা গাউন পরেছিলো যাহ বৃষ্টির পানিতে ভিজে শরীরের সাথে একদম এটে আছে, ছাড়া চুলগুলো ভিজে শরীর মুখের সাথে লেগে রয়েছে, মুখ গলা দিয়ে পানির ফোঁটা রয়েছে, চোখ কুঁচকে বন্ধ করে রেখেছে, সেহেরকে দেখতে অনেক আবেদনময়ী লাগছে। মুখের উপর আলোর অনুভব হতেই সেহের চোখ খুলে দেখে আরসাল ফ্লাশ লাইট অন করে তাকিয়ে আছে। সেহের দৌড়ে গিয়ে আরসালকে জড়িয়ে ধরে ভিতু কন্ঠে বলে ওঠে,
–” কোথায় গিয়েছিলে তুমি? আমি কত ভয় পাচ্ছিলাম জানো?”
আরসাল এক হাত দিয়ে সেহেরকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” ফোন আনতে গেছিলাম।”
–” আর যাবা নাহ।”
হঠাৎ অনেক জোরে বাজ পড়ার শব্দে সেহের আরসালকে আরও জোরে আকড়ে ধরে। আরসাল পাশে একটা উচু জায়গার উপর ফোন টাহ উবুড় করে রাখে, যার কারনে পুরো জায়গায় হালকা আলোতে ভরে যায়। আরসালের সেহেরকে এতো কাছে পেয়ে কেমন যেনো নিজেকে মাতালের মতো লাগছে। আরসালের কাছে সেহের একটা নেশা জাতীয় দ্রব্য, যাকে দেখলেই আরসালের নেশা হয়ে যায়, মাতালের মতো লাগে নিজেকে। সেহের কিছু সময় পর আরসালের থেকে সরে এসে আরসালের দিকে তাকাতেই সেহেরের মনে হয় আরসালের চোখ অনেক নাহ পাওয়া জিনিস পেতে চায়। তাকিয়ে থাকতে পারে নাহ সেহের আরসালের চোখের দিকে। চোখ সরিয়ে নিয়ে কিছুটা দুরে গিয়ে দাড়ায় সেহের।
★★★
আশা বিছানা গুছিয়ে নিচ্ছে। আমান মাত্র বাসায় এসে ফ্রেশ হচ্ছে। আজ বাসায় কেউ নেই। মি. আশরাফ, মিসেস. আখি, আশিকা সবাই আমানের নানুর বাসায় গেছে বেড়াতে। হঠাৎ বাইরে ঝড়ো হাওয়ার সাথে বৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। আশা তাড়াতাড়ি বারান্দায় গিয়ে দাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরতে থাকে। বারান্দায় রেলিং এর কাছে দাড়ানোর জন্য আশা অনেকটায় ভিজে যায়। আমান ফ্রেশ হয়ে দেখে আশা নেই, আশা হয়তো নিচে গেছে ভেবে জানালা দিয়ে বাইরে তাকাতেই দেখে ঝড় হচ্ছে। বারান্দার দরজা আটাকানোর জন্য এগোতেই দেখে আশা বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টির পানি ধরছে সেই সাথে ভিজেও যাচ্ছে। আমান গিয়ে আশার হাত ধরে টেনে ভেতরে নিয়ে এসে বলে ওঠে,
–” কি করেছিলি? বড় আর হলি নাহ? ভিজে যাচ্ছিস দেখিস নাহ?”
–” আরে তাতে কি হয়েছে?”
–” তাতে কি হয়েছে মানে! ঠান্ডা লেগে গেলে।”
–” আরে কিছু হবে নাহ।”
–” তোকে এতো বুঝতে হবে নাহ।”
বলেই আশার দিকে তাকাতেই থেমে যায় আমান। এতো সময় আশার সাথে কথা বললেও আশাকে ভালোভাবে লক্ষ্য করে নি আমান। এখন আশার দিকে তাকাতেই যেনো থেমে যায় আমান। আশা একটা আকাশী কালারের শাড়ি পরা যার সামনের দিকে বৃষ্টির পানিতে অনেকটাহ ভিজে গেছে, সামনের চুলগুলো হালকা ভিজে মুখের সাথে লেগে আছে, শাড়ি টাহ গুছিয়ে কাধের উপর নেওয়ার জন্য কোমরের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে এবং বৃষ্টির কয়েক ফোঁটা পানি চিকচিক করছে, এক কথায় আশাকে দেখে আমান অনেকটাহ ঘোরের মাঝে চলে যাচ্ছে। আশা আমানকে নিজের দিকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। আমান হঠাৎ করেই আশার দিকে এগিয়ে আসতে শুরু করে। আমানকে নিজের দিকে আসতে দেখে আশা অনেকটা ঘাবড়ে যেয়ে পেছনে যেতে থাকে। আমানও আশার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে, আশা পেছনে যেতে যেতে দেওয়ালে বাধা পায়। আমান এগিয়ে এসে একহাত আশার মাথার পাশে দেওয়ালে রাখে, আর একহাত আশার কোমরে রাখে। আমান আশার কোমরে হাত রাখতেই আশা কেঁপে উঠে আমানের হাত চেপে ধরে। আমান নিজের মুখটাহ একদম আশার সামনে আনতেই আশার মুখে আমানের নিশ্বাস আছড়ে পড়ে। আমান আস্তে করে আশার কোমরে চাপ দিতেই আশা আরও জোরে আমানের হাত চেপে ধরে এবং চোখ বন্ধ করে, জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আমান আশার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে আশার কপালে চুমু একে দেয়। আশা এই প্রথম আমানের ভালোবাসার পরশ পেয়ে, আমানকে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দেয়। আমান বুঝতে পারে আশার এমোন করার কারন, আমানও মুচকি হেসে আশাকে জড়িয়ে ধরে। আশা আমানের দিকে তাকিয়ে কাঁদো গলায় বলে ওঠে,
–” আমি তোমাকে ভালোবাসি, খুব ভালোবাসি তোমায়।”
আমান মুচকি হেসে আবারও আশার কপালে চুমু একে দেয়। আশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়৷ আমান আশাকে চোখ বন্ধ করতে দেখে, আশার দুই চোখের উপর চুমু দেয়। আমান আশার ঠোঁটে হালকা চুমু দিতেই আশা চোখ খুলে আমানের দিকে তাকাতেই দেখে আমান মুচকি হাসছে। আশা লজ্জা পেয়ে সরে যেতে নিলেই আমান আশার হাত ধরে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আমানের এক হাত আশার পেটে গিয়ে আকড়ে ধরে। আশা জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকে। আমান আশার কাঁধের থেকে চুল গুলো সরিয়ে চুমু দিতেই আশা কেপে উঠে। আমান আশাকে ঘুরিয়ে নিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আমান আশার কোমরে এক হাত দেয় আর এক হাত আশার মাথার পিছনে দিয়ে আশার মুখ এগিয়ে এনে আশার ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দেয়। আশা আমানের হাত জোরে চেপে ধরে। আমান যেনো এক অন্যরকম সুখের ঠিকানায় চলে যাচ্ছে। আশার চোখের কোনা বেয়ে পানি পড়ছে।
★★★
আরসাল সেহেরের থেকে অনেক দুরত্ব বজায় রেখে দাড়িয়ে আছে। কারন আরসাল চায় নাহ, সে কোনো ভুল করে ফেলুক। তাই দুরে আছে। কিছু সময়ের মাঝেই বৃষ্টি কমে আসলে আরসাল সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” চল।”
–” হুম।”
গাড়ির কাছে এসে গাড়ির টায়ার পান্চার দেখে সেহের বলে ওঠে,
–” ওমা! গাড়ির টায়ার তোহ গেছে। এখন?”
আরসাল কিছু নাহ বলে গাড়ির ব্যাকসাইড থেকে একটা টায়ার এনে ঠিক করতে শুরু করে। সেহের চুপ করে দাড়িয়ে আছে, আর আরসালের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ভাইয়া এতো শান্ত আছে কি করে? যাহ হলো, এতো শান্ত থাকার তোহ কথা নাহ। তাহলে? আচ্ছা এইটা আবার ঝড় আসার পূর্ব লক্ষণ নাহ তোহ? সেহের তোর জীবনে আবার কি বিপদ আসতে চলেছে কে জানে?”
আরসাল টায়ার টাহ ঠিক করে সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” এখানে দাড়িয়ে থাকবি নাকি যাবি?”
–” হুম? ওহ হ্যা চলো।”
সেহের গাড়িতে উঠে বসে। আরসাল নষ্ট টায়ার টাহ ব্যাক সাইডে রেখে গাড়িতে উঠে গাড়ি চালানো শুরু করে।
★★★
প্রায় মিনিট পাঁচেক পর আশার ঠোঁটের স্পর্শ ত্যাগ করে আমান। আশার দিকে তাকিয়ে দেখে আশা এখনো চোখ বন্ধ করে রয়েছে। আমান একদম সফ্ট কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আশা!”
আশা আস্তে আস্তে চোখ খুলে আমানের দিকে তাকায়। আমান আশার দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সময় লাগবে?”
আশা কি বলবে বুঝে উঠতে পারে নাহ, চোখ নামিয়ে নেয় আমানের থেকে। আশা মাথা নিচু করে চুপ করে থাকে। আমান বলে ওঠে,
–” আশা তুই আমাকে ভালোবাসিস এইটা ঠিক। কিন্তু তুই এখনো আমার সংস্পর্শে আসার জন্য প্রস্তুত নাহ। তোর সময় দরকার। আর আমি তোকে সেই সময় টাহ দিতে চাই। তুই হয়তো বলতে পারিস, সময় তোহ তোমার আরও বেশি দরকার। আশা, আমি এই কয়েকদিন অনেক ভেবেছি। নিজেকে নিয়ে ভেবেছি। জেরিনকে আমি ভুলতে পারবো নাহ এইটা যেমন ঠিক, তার থেকেও বড় ঠিক তোর পাশে কাউকে সহ্য করতে পারছিলাম নাহ। জেরিন আমার অতীত, আর তুই আমার বর্তমান ও ভবিষ্যৎ। আমি অতীত নিয়ে নাহ, আমি আমার বর্তমান আর আমার ভবিষ্যত নিয়ে থাকতে চাই। আমার জীবনসঙ্গিনীর সাথে থাকতে চাই। দিন শেষে তোকেই বলতে চাই, #তুই_শুধু_আমার। বলতে চাই, ভালোবাসি তোকে, ভালোবাসতে চাই তোকে।”
আশা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে। অবশেষে আমান তার ভালোবাসা কে পেলো আশা। আশার চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসতেই আমান সেইটা মুছে দেয়। আমান আশাকে কোলে তুলে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে লাইট অফ করে দেয়। বিছানায় শুয়ে আশাকে বুকে টেনে নিয়ে আমান বলে ওঠে,
–” আজ থেকে এইটাই তোর ঘুমানোর জায়গা।”
আশার আজ কোনো কথা বলতে ইচ্ছা করছে নাহ। আজ তার ভালোবাসার মানুষ কে পেলো এইটায় তার কাছে সবথেকে বড় পাওয়া জীবনের। আশা আমানের বুকে মাথা রেখে এতোদিনের স্বপ্ন পূূরন করে।
★★★
মায়া চৌধুরী, কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী, আশফি সবাই ড্রইংরুমে চিন্তিত ভাবে বসে আছে। মায়া চৌধুরী সবাইকে সবটা বলতেই সবার চিন্তা শুরু হয়ে যায়। হঠাৎ কলিং বেলের শব্দ হতেই সবাই চমকে উঠে। আশফি গিয়ে দরজা খুলতেই দেখে আরসাল আর সেহের দুইজনেই ভিজে রয়েছে। আরসাল ভেতরে এসে কাউকে কিছু নাহ বলে উপরে চলে যেতে নিলে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আরসাল!”
–” আম্মু একদম ভিজে গেছি এখন কথা বলা পসিবেল নাহ। কিন্তু একটা কথা বলে যায়। আগামীকাল থেকে সেহেরের ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ।”
কথাটা বলেই আরসাল কারো দিকে নাহ তাকিয়ে উপরে চলে যায়। সবাই আরসালের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। সেহের চুপ করে কাউকে কিছু নাহ বলে মাথা নিচু করে নিজের রুমে চলে যায়।
সেহের নিজের রুমে বসে আছে। আশা ফোন দিয়েছিল ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। কিন্তু সেহের যাবে কি করে? আরসাল তোহ বারন করে দিয়েছে ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। তখনই মায়া চৌধুরী সেহেরের রুমে এসে দেখেন সেহের চুপচাপ বসে আছে। মায়া চৌধুরী পিছন থেকে সেহেরের মাথায় হাত রাখতেই সেহের পিছনে ঘুরে মায়া চৌধুরী কে দেখে জড়িয়ে ধরে। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কিরে মা, মন খারাপ?”
–” সবাই ভার্সিটি যাচ্ছে বড় আম্মু। শুধু আমারই যাওয়া বারন হয়ে গেলো।”
–” গতকাল কি হয়েছে কিছু বললিও নাহ।”
–” আমি যার বার্থডে পার্টিতে গেছিলাম সেখানে আরসাল ভাইয়াও ইনভাইটেড ছিলো।”
–” হায় আল্লাহ, কি বলিস?”
–” হুম, সে যাই হোক আমি কি আর ভার্সিটি যাবো নাহ?”
–” কে বলেছে যাবি নাহ? আমি ঠিক আরসালকে বুঝিয়ে দিবো।”
–” হুম।”
মায়া চৌধুরী সেহেরের মুখটাহ কাছে এনে কপালে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে, আরসালের রুমের দিকে যান।
আরসাল ল্যাপটপে কাজ করছে। দরজা খোলার আওয়াজ হতে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী। মায়া চৌধুরীর দিকে একবার তাকিয়ে আবার কাজ করতে থাকে আরসাল। মায়া চৌধুরী আরসালের পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আরসাল!”
–” বলো।”
–” মায়ের দিকে তাকিয়ে কি কখনো একটুও কথা বলতে ইচ্ছে করে নাহ তোর?”
–” আমি কাজ করছি।”
–” কাজ তোহ তুই সবসময় করিস। এমোন ভাবে কথা বলিস, যেনো আমার আরও পাঁচ দশটা ছেলে আছে, তুই কথা নাহ বললে তাদের কাছে যাবো।”
আরসাল কিছু বলে নাহ। কিন্তু কাজও করছে নাহ, শুধু কোলের উপর ল্যাপটপ টাহ ধরে রেখেছে। মায়া চৌধুরী আবার কাদো কন্ঠে বলে ওঠে,
–” সেদিনের জন্য এখনও মায়ের উপর রেগে আছিস। আমি তোহ তোদের ভালোর কথা ভেবেই সব করেছি। আমার তোহ তুই একটায় ছেলে। তুই এমন রেগে থাকলে আমি কার কাছে যাবো বল।”
কথা গুলো বলেই আশা চৌধুরী কেঁদে উঠে। আরসাল কোল থেকে ল্যাপটপ টাহ নামিয়ে সেন্টার টেবিলের উপর রেখে, মায়া চৌধুরীকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” I am sorry ammu. I am so sorry. Please don’t cry. I am sorry.”
মায়া চৌধুরীও ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। এতোদিন পর ছেলেটাহকে জড়িয়ে ধরতে পেরে চোখের পানি ছেড়ে দেয় মায়া চৌধুরী। আরসাল মায়া চৌধুরী কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে নিজের হাতে মায়ের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” আমি তোমার খুব খারাপ ছেলে তাই নাহ আম্মু? আমার জন্য তোমাকে কত কষ্ট পেতে হয়। সত্যিই আমি খুব খারাপ।”
–” এইসব কি বলছিস বাবা তুই। আমার ছেলে তোহ আমার কাছে বেস্ট। আমার একমাত্র মানিক তুই। তুই কখনো খারাপ হতেই পারিস নাহ।”
মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে আবার আরসালকে জড়িয়ে ধরে। আরসালও তার মাকে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরে। মায়া চৌধুরী আরসালকে সরিয়ে আরসালের দিকে তাকিয়ে একটু চিন্তিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” আরসাল! বাবা, তোর শরীর টাহ গরম গরম লাগছে। তুই ঠিক আছিস? গতকাল তোহ বৃষ্টিতে একদম ভিজে এসেছিস। তোর জ্বর আসে নি তোহ আবার?”
–” আম্মু তুমি শুধু শুধু চিন্তা করছো। আমি একদম ঠিক আছি। শরীর একদম সুস্থ। মাঝে মাঝে শরীর গরম লাগতেই পারে। এইটা কোনো ব্যাপার নাহ।”
–” কিন্তু আরসাল!”
–” প্লিজ আম্মু। কিছু হয় নি আমার।”
–” আচ্ছা, ঠিক আছে। আরসাল তোকে একটা কথা বলার ছিলো।”
–” হুম বলো।”
–” আরসাল! সেহেরের ভার্সিটি।”
–” আম্মু তুমি যদি এই বিষয়ে কথা বলতে আসো, তাহলে বলবো এখানেই থেমে যাও।”
কথাটাহ বলেই আরসাল উঠে দাড়ায়। মায়া চৌধুরীও উঠে দাড়িয়ে আরসালের সামনে এসে বলে উঠে,
–” কিন্তু আরসাল এইভাবে ভার্সিটি বন্ধ করে। আর তাছাড়া গতকাল ও তোহ।”
–” আম্মু প্লিজ! তোমরা জানো ইয়েসটারডে আমি যদি নাহ থাকতাম কি হতো? সেহেরের সাথে কি কি ঘটে যেতে পারতো? তাছাড়া ঐ ইডিয়েট টার মাথায় তোহ এতটুকু থাকা উচিত ছিলো, তাই নাহ?”
–” আরসাল কাল রাতে কি খারাপ কিছু হয়েছিল?”
আরসাল অনেকটাহ থতমত খেয়ে যায়। আরসাল কোনোরকম ভাবে বলে ওঠে,
–” নাহ কিছু হয় নি। বাট গতকাল যেভাবে ঝড় শুরু হয়েছিল, ও তোহ প্রবলেমে পড়ে যেতো। আর তাছাড়া তোমরা তোহ জানোই আমি রাতে মেয়েদের এইভাবে একা একা যাওয়াটাহ পছন্দ করি নাহ। তারপরও তুমি ওকে পারমিশন দিলা?”
–” আচ্ছা সরি, ওর আর কখনো এরকম যাবে নাহ। কিন্তু ভার্সিটিতে নাহ গেলে তোহ ওর স্টাডিতে প্রবলেম হবে।”
–” সেইটা পরে দেখা যাবে। বাট ও আপাততো ভার্সিটি যাবে নাহ এইটায় ফাইনাল। এরপরও যদি ও ভার্সিটি যায় তাহলে আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাবো। আর কখনো আসবো নাহ এই বাসায়।”
–” আচ্ছা, ঠিক আছে। তুই শান্ত হ। সেহের আপাততো ভার্সিটি যাবে নাহ। ওকে।”
মায়া চৌধুরী কথাগুলো বলে বেরিয়ে যায়। আরসাল বারান্দায় এসে ডিভানের উপর বসে। আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” ইয়াশকে আমি যতটাহ চিনি, গতকালকের ঘটনার পর ইয়াশ চুপ করে থাকবে নাহ। আপাততো সেহেরের ভার্সিটি নাহ যাওয়ায় ভালো।”
আরসাল মাথাটাহ হঠাৎ ব্যাথা করে উঠতেই আরসাল হাত দিয়ে মাথাটা চেপে ধরে বলে ওঠে,
–” উফ! মাথাটা ব্যাথা কেনো করছে কে জানে? চোখ গুলোও জ্বলে যাচ্ছে।”
★★★
রাহুল অফিসে কাজ করতে করতে হঠাৎ সেহেরের কথা মনে পড়ে। রাহুল মনে মনে বলে ওঠে,
–” I love you Seher. কিন্তু তোমাকে বলতে পারছি নাহ। আজই ড্যাড কে বলবো, যে আমি সেহের কে বিয়ে করতে চাই।”
রাহুল বসে বসে সেহেরের কথা ভাবছে এমন সময় ফোন টাহ বেজে উঠে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে মি. মুবিনের ( রাহুলের বাবা ) ফোন। রাহুল ফোন টাহ রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো ড্যাড!”
–” রাহুল! তুমি একটু আজিজের বাসায় যাবে আজ। ওকে?”
–” But why dad?”
–” আজিজের কাছে আমাদের বিজনেসের একটা ফাইল আছে। কিছু কাজের জন্য ওকে দিয়েছিলাম। কাজ কমপ্লিট হয়ে গেছে আর আমি চাই ঐগুলো তুমি নিজে নিয়ে আসো।”
–” ওকে ড্যাড নিয়ে আসবো।”
রাহুল ফোন কেটে দেখে রাত ৮ টাহ বেজে গেছে। রাহুল অফিস থেকে বেরিয়ে এসে চৌধুরী ম্যানশনের দিকে যাত্রা শুরু করে।
★★★
সেহের টিভিতে কার্টুন দেখতেছে আর চকলেট খাচ্ছে। আরসাল স্টাডি রুম থেকে নিজের রুমে যাওয়ার সময় নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে, সেহের সোফার উপর বসে চকলেট খাচ্ছে আর কার্টুন দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছে। আরসাল সেদিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে থাকে,
–” এই মেয়েটাহ জীবনেও বড় হবে নাহ। বাচ্চা বাচ্চাই থেকে যাবে। বাট ওর বাচ্চা বাচ্চা কিউটনেস গুলো অনেক জোস লাগে। শুধু দেখতে ইচ্ছে করে।”
এমন সময় দরজায় বেল বেজে উঠতেই সেহের গিয়ে দরজা খুলে দেখে রাহুল। সেহের রাহুলকে দেখে আনন্দের সাথে বলে ওঠে,
–” রাহুল ভাইয়া তুমি? আমি তোহ ভাবতেই পারছি নাহ। এতো রাতে? এসো।”
আরসালও উপর থেকে তাকিয়ে আছে কে এসেছে দেখার জন্য। রাহুলকে ভেতরে আসতে দেখেই আরসালের মেজাজ গরম হয়ে যায়। সাথে সেহেরের উপরও রাগ উঠতে থাকে। আরসাল রাগেতে নিজের রুমে চলে যায়। সেহের রাহুলকে ভেতরে নিয়ে এসেই চেচিয়ে বলে ওঠে,
–” আম্মু, বড় আম্মু, মেঝো আম্মু, বাবা, বড় আব্বু, মেঝো আব্বু, আশফি ভাইয়া সবাই দেখে যাও কে আসছে?”
সেহেরের কান্ড দেখে রাহুল হেসে দিয়ে বলে ওঠে,
–” সেহের কি করছো এইসব?”
–” সবাইকে জানাচ্ছি যে তুমি এসেছো।”
তখনই কেয়া চৌধুরী এসে রাহুল কে দেখে হেসে বলে ওঠে,
–” আরে রাহুল! কখন এলে?”
–” এইতো আন্টি এখনই এলাম।”
–” আচ্ছা দাড়িয়ে আছো কেনো? বসো।”
এর মাঝে সবাই বেরিয়ে এসে রাহুলকে দেখে খুশি হয় এবং গল্প করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর রাহুল আজিজ চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আংকেল এইবার ফাইলটা দিতে পারলে আমি বাসায় চলে যেতাম।”
–” বাসায় যাবা মানে কি? আমাদের সাথে ডিনার করে তারপর যেও।”
–” কিন্তু আংকেল।”
রাহুলকে আর বলতে নাহ দিয়ে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” কোনো কিন্তু নাহ রাহুল। তুমি আমাদের সাথে ডিনার করছো আর এইটায় ফাইনাল।”
–” ওকে!”
মায়া চৌধুরী সাথীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” সাথী যা তোহ মা, আরসাল ভাইয়া কে ডেকে নিয়ে আই।”
–” ওকে বড় আম্মু।”
বলেই সাথী দৌড়ে চলে যায় আরসালের রুমে।
আরসালের মাথার ব্যাথাটাহ একটু কমেছে। তাই কিছু ফাইল চেক করছিলো। সাথী গিয়ে ওঠে,
–” ভাইয়া।”
–” কে? ও টুনটুনি তুই? বল কি বলবি?”
–” ভাইয়া আমাকে টুনটুনি বলবা নাহ।”
–” আচ্ছা, এখন বলতো কেনো এসেছিস আমার কাছে?”
–” নিচে সবাই ডিনার করতে ডাকতেছে।”
–” তুই যা আমি আসছি।”
–” নাহ তুমি এখনই আসো।”
কথাটাহ বলেই সাথী আরসালের হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে। আরসাল নিচে আসতেই আরসালের মাথা গরম হয়ে যায়। কারন সেহের রাহুলের পাশের চেয়ারে বসে ডিনার করছে আর হেসে হেসে কথা বলছে। সেহের হাসতে হাসতে আরসালের দিকে তাকাতেই দেখে আরসাল ওর দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে আছে। আরসালকে দেখেই সেহের চুপ করে যায়।
ডিনার শেষে রাহুল চলে যায়। বাকি সবাইও যার যার রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
★★★
নেহা নিজের রুমে ড্রেসিং টেবিলের সামনে আয়নায় নিজেকে দেখছে আর মনে মনে ভাবছে,
–” অনেক সময় পেরিয়ে গেছে। আমি এখানে আর তুমি ওখানে থাকলে আমি কিছুতেই তোমার নাগাল পাবো নাহ আরসাল। তাই আমাকে তোমার কাছে যেতে হবে। তাই কালই আমি বাবা মাকে বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছি। আর আমি আসছি আরসাল তোমার কাছে। সেই সাথে সেহেরের সর্বনাশ ডেকে আনতে।”
নেহা একটা দুইটা ফটো হাতে নেয়। একটা আরসাল আর একটা সেহেরের। নেহা আরসালের ফটো তে একটা চুমু দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে দিয়ে সেহেরের ফটো টাহ সামনে নিয়ে একটা শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে,
–” আজ আরসাল তোমাকে ঘৃনা করে কিন্তু তাও ভালোবাসে। আর তোমার কাছে যদি আরসাল থাকে তাহলে আজ নাহ হয় কাল আরসাল তোমাকে ঠিকই মেনে নিবে। কিন্তু আমি তোহ তাহ হতে দিবো নাহ সেহের। আমি এইটাও বুঝতে পেরেছি, তুমিও আরসালের উপর দূর্বল হয়ে পড়েছো। কিন্তু আমি তোমাদের মিলতে কি করে দেই বলোতো। তাই আমি আসছি তোমার জীবনের খুশি কেড়ে নিতে এবং আমার আরসালকে নিজের করে নিতে।”
কথাগুলো বলে নেহা একটা শয়তানি হাসি দিয়ে সেহেরের ফটোতে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেহেরের পুরো ফটো পুড়ে একদম ছাই হয়ে যায়। আর নেহা সেইদিকে তাকিয়ে শয়তানি হাসি দেয়।
চলবে…………….🌹