#তুই শুধু আমার
#Writer : মারিয়া
#Part : 11+12
ওয়াশরুমে হাত কে পেছন করে বেধে বসিয়ে রাখা হয়েছে সেহেরকে। আর সেহেরের সামনে দাড়িয়ে আছে আরসাল। সেহের একবার আরসালের দিকে তাকাচ্ছে আর একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে।
একটু আগে,
সেহের অন্য কারো সাথে নাহ, আরসালের সাথে ধাক্কা খায় আর আরসালের উপর গ্লাসের সব পানি পড়ে যায়। আর চোখ লাল করে সেহেরের দিকে তাকাতেই সেহেরের কলিজা শুকিয়ে আসে। আরসাল রাগী গলায় বলে ওঠে,
–” Are you mad? What are you doing?”
–” নাহ, মানে ভাইয়া, মানে আমি।”
–” কি মানে মানে করছিস?”
–” আসলে।”
–” Just shut up.”
আরসালের রাগী কন্ঠ শুনে সেহের ভয়ে কেপে উঠে। আরসাল নিজে আর কিছু নাহ বলে সেহেরকেও আর কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়ে সেহেরের হাত ধরে টেনে নিজের রুমে নিয়ে এসে চারিদিকে তাকাতে থাকে। সেহের ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,
–” ভা, ভা, ভাইয়া তু, তু তুমি কি খুজছো?”
আরসাল কোনো উত্তর নাহ দিয়ে সোফার উপর থেকে তার টাই নিয়ে ওয়াশরুমে গিয়ে সেহেরের হাত পিছনে নিয়ে বেধে বসিয়ে রাখে। তখন থেকেই সেহের একবার ভয়ে আরসালের দিকে আর একবার নিচের দিকে তাকাচ্ছে। আর আরসাল সেহেরের দিকে রাগান্বিত ভাবে একভাবে তাকিয়ে আছে। সেহের এইবার ভয়ে ভয়ে বলে ওঠে,
–” ভা ভা ভা ভাইয়া আ আ আমাকে এ এ এইভাবে বে বে বেধে রেখেছো কে কে কেন?”
–” আমাকে ভিজিয়েছিস তাই নাহ। এইবার তোকে আমি শাওয়ার দিয়ে ছাড়বো।”
–” আমি ইচ্ছে করে তোমার গায়ে ফেলেছি নাকি? তুমি আমাকে ধাক্কা দিছো তাই পড়ে গেছে।”
–” আমি তোকে ধাক্কা দিছি মানে!”
–” হ্যা, তুমিই তোহ ধাক্কা দিলা।”
–” শোন, একদম মিথ্যা কথা বলবি নাহ বলে দিচ্ছি।”
–” শোনো, সবাইকে নিজের মতো মনে করবা নাহ বুঝছো। আমি মিথ্যা বলি নাহ।”
–” What do you mean? আমি মিথ্যা কথা বলি?”
–” আমি কি তোমাকে বলেছি নাকি, যে তুমি মিথ্যা বলো।”
–” ডিরেক্টলি নাহ বলিস ইনডিরেক্টলি এইটাই বলতে চাচ্ছিস।”
–” একদম নাহ, পড়লো কথা হাটের মাঝে, যার কথা তার বুকে বাজে। তোমার হয়েছে সেই দশা।”
–” তোকে তোহ।”
আরসালের রাগে যেনো চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে। সেহের এতোক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে কথা বলছিলো, নাহলে আরসালের বর্তমান মুখের অবস্থা দেখলে সেহেরের গলা দিয়ে আর কথায় বের হতো নাহ। এইবার আরসালের আর কোনো আওয়াজ নাহ পেয়ে আরসালের দিকে তাকাতেই সেহেরের ভয়তে গলা শুকিয়ে যায়। আরসালের চোখ মুখ একদম লাল হয়ে গেছে রাগেতে। আরসালের রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকে নাহ এইটা সেহেরের অজানা নয়। তাই সেহেরের আরও ভয় করছে। আরসাল নিজের চোখ বন্ধ করে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছে। আর আরসালের এই অবস্থা দেখে সেহের ভয়ে বার বার ঢোক গিলছে। বেশ কিছুক্ষন পর আরসাল চোখ খুলে একটা জোরে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। আর কিছু নাহ বলে সেহেরের হাতের বাঁধন খুলে দেয় আরসাল। সেহেরও আর কিছু নাহ বলে চলে যেতে নেয়, কিন্তু ওয়াশরুমে একটু পানি থাকায় স্লিপ করে পড়ে যেতে নেয়। সেহেরকে পড়ে যেতে দেখে আরসাল তাড়াতাড়ি সেহেরকে এক হাত দিয়ে ধরে আর এক হাত দিয়ে নিজেকে সামলানোর জন্য দেওয়াল ধরতে গিয়ে শাওয়ার অন হয়ে পানি পড়া শুরু করে দেয়। হঠাৎ এই রাতের বেলা ঠান্ডা পানি গায়ে পড়ায় সেহের কেঁপে উঠে আরসালের হাত জোরে চেপে ধরে। আরসালের এক হাত সেহেরের কোমর দিয়ে সেহেরেকে ধরে রেখেছে আর এক হাত শাওয়ারের সুইচের কাছে। আরসালের মুখ বেয়ে পানি পড়ছে সেহেরের উপর। সেহের পানির জন্য ভালোভাবে তাকাতে পারছে নাহ, কোনো রকম ভাবে নিবু নিবু করে তাকাচ্ছে। কিন্তু আরসালের তাকাতে কোনো অসুবিধা হচ্ছে নাহ, কারন আরসাল সেহেরের দিকে ঝুকে রয়েছে। আরসাল একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সেহেরের দিকে, সেহেরের মুখে এসে পড়ছে পানির ফোঁটা গুলো, চোখ টাও ভালো করে খুলতে নাহ পারার জন্য নিবু নিবু ভাবে তাকাচ্ছে মাঝে মাঝে, পানি পেয়ে ঠোঁট টাহ যেনো আরও গোলাপি হয়ে উঠেছে এবং তার সাথে পাল্লা দিয়ে যেনো কালো তিলটাহ আরও গাঢ় হয়ে উঠেছে। আরসাল তাকিয়ে আছে একভাবে, সেহেরের ঠোঁট যেনো আরসালকে সবসময় একটা ঘোরের মাঝে ফেলে দেয়। আরসাল বুঝেই উঠতে পারে নাহ, সেহেরের ঠোঁট তার কাছে এতো আকর্ষনীয় কেনো লাগে। আরসাল সেহেরের মুখ ধরে কাছে নিয়ে আসে। সেহের টের পায় আরসাল আর তার মাঝে এখন খুব বেশি দুরত্ব নেই। সেহেরও আর চোখ খুলে তাকায় নাহ আরসালের দিকে। আরসাল সেহেরের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মেলাতে যাবে এমন সময় রুম থেকে কারও আরসাল ডাকার আওয়াজে আরসালের ঘোর কেটে যায়। আর তাড়াতাড়ি সেহেরের কাছের থেকে সরে আসে আরসাল। সেহের আরসালের দিকে একবার তাকিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে যায়। আরসাল টের পায় রুম থেকে তার আম্মু মায়া চৌধুরী কথা বলছে। আরসাল শাওয়ার অফ করে দেয়। মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আরসাল, তুই কি শাওয়ার নিচ্ছিস?”
–” হ্যা, আম্মু।”
–” আরসাল এই রাতের বেলা কেউ শাওয়ার নেয়। এমনি আবহাওয়ার অবস্থা ভালো নাহ। ঠান্ডা লেগে যাবে তোহ।”
–” নাহ সমস্যা নাই।”
–” আচ্ছা, শাওয়ার নিয়ে ডিনার করতে নিচে আসবি নাকি আমি খাবার এখানে দিয়ে যাবো?”
–” নাহ আমি নিচে আসছি। তুমি নিচে যাও।”
–” আচ্ছা, তাড়াতাড়ি আয়। আর পানি নিস নাহ।”
–” আচ্ছা।”
আরসাল সামনে তাকিয়ে দেখে সেহের উল্টো দিকে ঘুরে রয়েছে। আরসাল বলে ওঠে,
–” তাড়াতাড়ি নিজের রুমে চলে যা।”
কথাটা বলে আরসাল ওয়াশরুমের দরজা খুলে বারান্দার দিকে চলে যায়। সেহের পিছন ফিরে দেখে আরসাল নেই। সেহের চারিপাশে একবার চোখ বুলিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
★★★
সবাই ডাইনিং টেবিলে বসে ডিনার করছে। শুধু সেহের আর আশা নেই। তাই দেখে জিহাদ চৌধুরী বলে ওঠে,
–” একি সবাই আছে, কিন্তু সেহের আর আশা কই?”
জিহাদ চৌধুরীর কথাতে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আশা নাকি খাবে নাহ। শরীর টাহ নাকি ভালো লাগছে নাহ। মনে হয় গ্যাস্ট্রিক পব্লেম হয়েছে। মেডিসিন দিয়ে আসলাম, ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।”
–” আর সেহের।”
–” সে নাকি কিসব চকলেট ফকলেট খেয়েছে। খাবে নাহ বললো।”
আরসাল মায়া চৌধুরীর কথা শুনে নিজের খাওয়া বন্ধ করে হুট করেই নিজের রুমে চলে গেলো। তাহ দেখে মায়া চৌধুরী বলে ওঠে,
–” আরসাল খাবার শেষ নাহ করে কোথায় যাচ্ছিস বাবা।”
কিন্তু আরসাল কোনো উত্তর নাহ দিয়ে চলে যায় নিজের রুমে।
★★★
আমান বারান্দায় রকিং চেয়ারে বসে আছে। হাতে একটা জলন্ত সিগারেট। চোখ টাহ ছানির মতো রক্ত লাল হয়ে আছে। আশিকা আমানের রুমের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় কি ভেবে যেনো আমানের রুমে ঢুকে পড়ে।
(( আশিকা, আমানের আদরের ছোট বোন। এইবার ইন্টার সেকেন্ড সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে আশিকা। আমান আশিকা কে মারাত্মক ভালোবাসে আবার আশিকাও। ))
আশিকা আমানের রুমে ঢুকতেই সিগারেটের গন্ধ পায়, কিন্তু রুমে আমানকে নাহ পেয়ে চারিপাশে তাকাতে থাকে। হঠাৎ বারান্দার দিকে নজর যায় আশিকার। আশিকা সোজা চলে যায় বারান্দায়। বারান্দায় গিয়ে দেখে আমান স্মোক করছে। আশিকা কখনো আমানকে স্মোক করতে দেখেনি। আশিকা বলে ওঠে,
–” ভাইয়ু তুমি স্মোক করছো।” ( আশিকা আমানকে ভাইয়ু বলে ডাকে )
আমান কারো আওয়াজ পেয়ে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখে আশিকা অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আমান দ্রুত তার হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে রুমে চলে আসে। আশিকাও আমানের পিছন পিছন এসে বলে ওঠে,
–” তুমি ঐদিকে ফিরে আছো কেনো? আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞাসা করছি। তুমি স্মোক কেনো করছিলে?”
আমানকে জোর করে সামনে ফেরায় আশিকা, সামনে ফিরিয়ে আমানের দিকে তাকাতেই আশিকা চমকে উঠে। আমানের চোখ লাল হয়ে আছে, চুল গুলো উস্কো খুস্কো হয়ে আছে, মুখে যেনো হতাশার ছাপ ফুটে উঠেছে। আশিকা আমানের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” ভাইয়ু, কি হয়েছে তোমার?”
–” কিছু হয় নি।”
–” মিথ্যা, বলো কি হয়েছে?”
–” সত্যি, কিছু হয় নিরে বোন।”
–” বলবা নাহ?”
–” আশিকা, আমার কিছুই হয় নি। শরীর টাহ খারাপ লাগছে। তাই!”
–” শরীর খারাপ লাগলে বুঝি স্মোক করতে হয়?”
–” আরে নাহ, আমি তোহ কখনো এইসব খাই নি। তাই একটু শখের বসে খেয়েছি।”
–” বলবানা যখন ঠিক করেছো, বলো নাহ। কিন্তু মিথ্যা কথা বলো নাহ। কারন আমার ভাইয়ুর মুখে মিথ্যা মানায় নাহ।”
বলেই আশিকা রুম থেকে বের হয়ে যায়। আমান আশিকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” আমাকে ক্ষমা করে দে বোন, আমি তোকে মিথ্যা বলতে চায় নি। কিন্তু আমি যে এখন সত্যিটা বলতেও পারবো নাহ।”
আমান বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবতে থাকে,
–” আচ্ছা, আমি তোহ এইটায় চেয়েছিলাম। যেনো আশার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়, আমাকে যেনো ভুলে যায়। তাহলে আজ যখন আশার অন্য কারো সাথে বিয়ের কথা হচ্ছে তাহলে আজ আমি খুশি হতে পারছি নাহ কেনো? আমার এতো কষ্ট হচ্ছে কেনো? মনে হচ্ছে দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
★★★
সেহের বারান্দায় দোলনায় বসে আছে। আর মনে মনে ভাবছে,
–” আজ আরসাল ভাইয়া আমার কতো কাছে এসেছিলো। কিন্তু আমি আরসাল ভাইয়া কে আজ নিষেধ করলাম নাহ কেনো? বড় আম্মু যদি তখন নাহ আসতো, তাহলে!”
আর কিছু ভাবার আগেই সেহের দোলনা থেকে উঠে রুমে চলে আসে। তখনই সেহেরের ফোনে একটা কল আসে। সেহের ভাবে এতো রাতে আবার কে ফোন দিলো। ফোনটাহ হাতে নিয়ে দেখে ইয়াশের নাম্বার। কল টাহ দেখেই বিরক্তিতে মুখ ভরে যায় সেহেরের। ফোন টাহ নাহ ধরে সাইলেন্ট করে রেখে দেয়।
★★★
ইয়াশ সেই কখন থেকে সেহেরকে ফোন দিয়ে যাচ্ছে। অথচ মেয়েটা ফোনই তুলছে নাহ। ইয়াশ মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” সেহেরকি ফোনের কাছে নেই নাকি ইচ্ছে করেই ফোন টাহ তুলছে নাহ। সেহের রানি তুমি এখনো আমাকে ভালো করে চেনো নাহ। তুমি যদি ভালোই ভালোই আমার বউ নাহ হও, তাহলে কয়েক ঘন্টার বেড পার্টনার হয়ে যাবা আমার।”
হঠাৎ কোনো একজোড়া হাত ইয়াশকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে। ইয়াশ পেছন ঘুরে দেখে জেনি। জেনির সাথে ইয়াশ এই দুইদিন হলো সময় কাটাচ্ছে। ইয়াশ জেনির দিকে তাকিয়ে একটা বাকা হাসি দেয়, আর জেনির কোমরে হাত দিয়ে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। জেনি একটা ছোট্ট ফ্রক পরা। ইয়াশ জেনির জামার পেছনের চেইন টাহ খুলে দিয়ে জেনি কে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে গিয়ে শারীরিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়।
আমান অফিস যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে নিচে নেমে আসে। আমান নিচে আসতেই দেখে মিসেস. আখি টেবিলে ব্রেকফাস্ট গোছাচ্ছেন আর মি. আশরাফ টেবিলে বসে পেপার পড়ছেন।
(( মিসেস. আখি, আমানের আম্মু আর মি. আশরাফ আমানের বাবা। মি. আশরাফের নিজস্ব বিজনেস আছে। যে বিজনেসে কয়েকদিন হলো আমান জয়েন্ট করেছে। ))
মিসেস. আখি আমানকে দেখে বলে ওঠে,
–” আমান, রেডি হয়ে গেছিস। আই খেয়ে নে বাবা।”
–” আম্মু এখন খেতে ইচ্ছে করছে নাহ।”
–” ওমা, কেনো? গতকাল থেকেই তোকে কেমন মনমরা দেখছি। কি হয়েছে বাবা তোর? কোনো সমস্যা?”
–” নাহ, আম্মু। আমি ঠিক আছি। আশিকা কই?”
–” ওহ ঘুমাচ্ছে।”
–” কেন? আজ কলেজ নেই ওর?”
–” হ্যা আছে, কিন্তু আজ যাবে নাহ।”
–” কেনো? শরীর ঠিক আছে ওর?”
–” হ্যা, শরীর ঠিক আছে। আসলে আজ একটু পর আরসালদের বাসায় যেতে হবে। কেনো তুই জানিস নাহ? আজ তোহ আশাকে দেখতে আসবে। তাই গতকাল রাত থেকে জিহাদ ভাই অনেকবার তোর বাবাকে ফোন করেছে।”
–” ওহ।”
–” শোন, তুই একদম আরসালদের বাসায় চলে যাস বুঝলি।”
–” আম্মু তোমরা চলে যেও। আমি যেতে পারবো কি নাহ বলতে পারছি নাহ?”
মি. আশরাফ এতোক্ষণ মা ছেলের কথা শুনছিলো, কিছু বলছিলো নাহ। কিন্তু আমানের শেষ কথা শুনে মি. আশরাফ বলে ওঠে,
–” মানে কি, আমান? আমান, আরসাল তোমার বন্ধুর আগে জিহাদ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তুমি খুব ভালো করেই জানো এই দুই পরিবারে যেকোনো ধরনের কাজে দুই পরিবারই উপস্থিত থাকে। আর যেখানে আজ আশাকে দেখতে আসবে, এতো বড় একটা কাজ আর সেখানে তুমি যাবে নাহ।”
আমান মি. আশরাফের কথা শুনে মনে মনে বলতে শুরু করে,
–” কি করে বলবো বাবা তোমাকে, আমার নাহ যাওয়ার কারনই তোহ এইটা। আশাকে অন্য কোনো ছেলে এসে বিয়ের কথা বলবে আর আমি সেইটা কিভাবে সহ্য করবো? কিন্তু আমি তোহ এইটায় চেয়েছিলাম। তাহলে কেনো সহ্য করতে পারছি নাহ আমি? কি করবো আমি? নাহ পারছি আশাকে মেনে নিতে আর নাহ পারছি আশাকে দুরে ঠেলে দিতে।”
আমানকে চুপ করে থাকতে দেখে মি. আশরাফ আবার বলে ওঠে,
–” কি হলো আমান? চুপ করে আছো কেনো?”
–” বাবা আসলে।”
–” আমান কোনো আসলে নকলে নেই। তুমি অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে জিহাদের বাসায় আসছো এইটায় ফাইনাল।”
–” ঠিক আছে বাবা। চলে আসবো।”
–” আর শুনো, আমি আজ অফিস যাচ্ছি নাহ। সবকিছু দেখে সামলে এসো।”
–” Ok. আসি আম্মু।”
মিসেস. আখি আমানের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ব্রেকফাস্ট?”
–” অফিসে করে নিবো।”
বলেই আমান অফিসের উদ্দেশ্যে বের হয়ে যায়।
★★★
সেহের, আশা কেউ আজ ভার্সিটি যায় নি। আশা একভাবে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। আর সেহের তার নিজের মতো করে বক বক করেই যাচ্ছে। কেউ তার কথা শুনলো কি নাহ বা শুনছে কি নাহ, এতে তার কিছু যায় আসে নাহ। সে একাই বক বক করে যেতে পারে। তখনই কেয়া চৌধুরী এবং আহিয়া চৌধুরী রুমে আসেন। এসে দেখেন আশা জানালার কাছে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে আর সেহের একা একা বক বক করেই যাচ্ছে। আহিয়া চৌধুরী সেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” তুই এতো কথা বলিস কিভাবে বলতো? একা একা বক বক করেই যাস।”
সেহের আহিয়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” আসলে আম্মু, আমি নাহ চুপ করে থাকতে পারি নাহ। চুপ করে থাকলেই আমার ভেতরের কথার পোকা গুলো হরতাল শুরু করে দেয়। কথা বলো, কথা বলো।”
সেহেরের কথা শুনে আহিয়া চৌধুরী এবং কেয়া চৌধুরী হেসে উঠে। কেয়া চৌধুরী আশার কাছে গিয়ে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে দেখে চোখ থেকে পানি পড়ছে। কেয়া চৌধুরী, আহিয়া চৌধুরী, সেহের সবার মুখের হাসি মিলিয়ে যায় আশার দিকে তাকিয়ে। কেয়া চৌধুরী মেয়ের দিকে তাকিয়ে চিন্তিত কণ্ঠে বলে ওঠে,
–” কি হয়েছে মা, তুই কাদছিস কেনো?”
–” আম্মু, আমি বিয়ে করতে চাই নাহ। আমি তোমাদের ছেড়ে থাকতে পারবো নাহ।”
–” ধুর বোকা মেয়ে। এমন সবারই প্রথম প্রথম মনে হয় পরে ঠিক হয়ে যায়। তার জন্য এইভাবে কাঁদতে আছে নাকি? তাছাড়া আজ তোহ তোকে শুধু দেখতে আসছে। বিয়ে তোহ আর আজ নাহ, তাই নাহ। এমোন করে কাদে নাহ মা।”
সেহের আশার দিকে তাকিয়ে নিজের মাজায় হাত দিয়ে বলে ওঠে,
–” এই তুই কি পাগল নাকি? তোর বিয়ে হলে কতো শপিং করতে পারবি বলতো৷ এমন সুযোগ কেউ হাত ছাড়া করে।”
সেহেরের কতা শুনে আশা রাগী কন্ঠে বলে ওঠে,
–” আচ্ছা, তাই নাহ। তাহলে আই তোকেও বিয়ে দিয়ে দেই। তাহলে তোরও শপিং করার সুযোগ চলে আসবে।”
–” আরে না নাহ। এতো তাড়াতাড়ি তোর ঐ বদরাগী আরসাল ভাইকে বিয়ে করার ইচ্ছা আমার নাই। তাহলে আমাকে আলু ভর্তা বানিয়ে দেবে। বেডা একটু বুইড়া হোক, তাহলে মেজাজ টাহ একটু নরম হবে। তারপর বিয়ে করবো ঐ বেডারে।”
সেহেরের কথা শুনে সবাই অবাক চোখে সেহেরের দিকে তাকালো।
–” বিয়ে করবি আমার বদরাগী ছেলেটাকে?”
কারোর কথা শুনে সবাই দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে মায়া চৌধুরী মুচকি হাসি দিয়ে সেহেরের দিকে তাকিয়ে আছে। সেহেরের এতক্ষণে খেয়াল এলো সে কি বলে ফেলেছে। সেহেরের একবার সবার দিকে তাকিয়ে দেখে সবাই অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। সেহেরের ইচ্ছা করছে মাটি ফুড়ে নিচে চলে যেতে। সেহের মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। মায়া চৌধুরী সেহেরের সামনে এসে দাড়ায়। সেহের একবার মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেলে। মায়া চৌধুরী মুচকি হেসে সেহের থুতনি ধরে মুখটাহ উচু করে বলে ওঠে,
–” কিরে, বললি নাহ যে? বিয়ে করবি আমার বদরাগী ছেলেটাকে? সামলে দিবি আমার বদরাগী, যেদী ছেলেটাকে? খেয়াল রাখার দায়িত্ব নিবি আমার ছেলেটার?”
–” বড় আম্মু।”
–” হুম বল, নিবি আমার ছেলেটার দায়িত্ব?”
–” আমার একটা ফোন করার আছে। আমি একটু পর আসছি।”
বলেই সেহের আর এক সেকেন্ডও দাড়ায় নাহ। চলে যায় রুম থেকে। আর সবাই সেহেরের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। আশা এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলে ওঠে,
–” কি বুঝলে বড় আম্মু?”
–” এইটায় বুঝলাম, যে সেহেরের মনেও আমার বদরাগী ছেলেটার জন্য জায়গা আছে।”
আহিয়া এগিয়ে এসে মায়া চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
–” ঠিক বলেছো, বড়দি। কিন্তু বড়দি আরসাল তোহ বলে যে ও সেহের কে ঘৃনা করে তাহলে।”
–” আহা, ছোটো তুই এতো ভয় পাচ্ছিস কেনো? আরসাল মুখে যতই বলুক ও সেহেরকে ঘৃনা করে কিন্তু আমি জানি আরসাল সেহেরকে আজও ভালোবাসে। অনেক ভালোবাসে।”
★★★
আরসাল, আশফি কেউই আজ অফিস যায় নি। আরসাল নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আর আশফি আরসালের পাশে বসে ট্যাবে গেম খেলছে। হঠাৎ আরসালের ফোন বেজে উঠে। আরসাল ফোন টাহ হাতে নিয়ে দেখে নেহা ফোন করেছে। আরসাল আশফির দিকে ফোনটাহ এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে,
–” নেহা ফোন করেছে। কলটাহ রিসিভ করে বল আমি একটু ব্যাস্ত আছি।”
নেহার কল শুনেই আশফি ফোন টাহ নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। এবং তাড়াতাড়ি রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”
–” হ্যালো! কে বলছেন?”
–” আমি আশফি।”
–” ওহ, আশফি তুমি।”
–” হুম, কেমন আছো?”
–” ফাইন, তুমি?”
–” আমিও ভালো আছি।”
–” আচ্ছা, আরসাল কোথায়? আর ওর ফোন তোমার কাছে কেনো?”
–” আসলে, ভাই একটু কাজে ব্যাস্ত আছে। তাই আমাকে বললো তোমাকে বলে দিতে।”
–” ওহ, আচ্ছা।”
–” হুম।”
–” ওকে বাই, পরে কথা হবে।”
–” হুম, বাই।”
নেহা ফোন কেটে দেয়। কিন্তু আশফি এখনো ফোন কানে রেখে দিয়েছে। যদি আরও প্রিয় সেই কন্ঠস্বর টাহ শোনা যায় এই আশায়। কিন্তু নাহ, আর শোনা যায় নাহ। আশফি ভেতরে এসে আরসালের পাশে ফোন টাহ রেখে দেয়। আরসাল আশফির দিকে তাকিয়ে বলে,
–” আশফি শোন। কিছু ইমেইল পাঠিয়েছি তোকে। একটু চেক করে নিস।”
–” ওকে।”
আশফি আর কিছু নাহ বলে আরসালের রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
In evening……..
আর কিছুক্ষনের মাঝেই সিরাজ রহমানের বাড়ি থেকেই সবাই চলে আসবে। জিহাদ চৌধুরী, কবির চৌধুরী, আজিজ চৌধুরী এবং মি. আশরাফ সবাই ড্রইংরুমে বসে গেস্টদের জন্য অপেক্ষা করছে এবং গল্প করছে।
আরসাল নিজের রুমে পায়চারি করছে আর আমানকে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু আমান ফোন টায় তুলছেই নাহ। আরসালের প্রচন্ড রাগ উঠতেছে আমানের উপর। এইদিকে আবার মিসেস. আখি এবং আশিকার কাছের থেকে শুনেছে যে আমান হয়তো কোনো কারনে আপসেট। আশিকা এইটাও বলেছে আরসালকে, যে সে গতকাল আমানকে স্মোক করতে দেখেছে। আরসাল মনে মনে ভাবছে,
–” কি হয়েছে আমানের? আমান তোহ কখনো স্মোক করে নাহ। তাহলে, তাছাড়া আমান নাকি আপসেট। বাট হোয়াই? আমান তোহ কখনোই আমার কাছের থেকে কিছু লুকাই নাহ তাহলে।”
এইসব ভাবতে ভাবতে আবার আমানকে ফোন দেয় আরসাল। এইবার আমান রিসিভ করে বলে ওঠে,
–” হ্যালো!”
–” কই ছিলি তুই? কতগুলো ফোন দিয়েছি দেখেছিস।”
–” আসলে ফোন টাহ সাইলেন্ট ছিলো। তাই টের পাই নি।”
–” আচ্ছা। এখনি এখানে চলে আই।”
–” আসতেই হবে।”
–” আসতেই হবে মানে কি? আমি তোকে যেনো আর কিছুক্ষনের মাঝেই আমার রুমে দেখি।”
আরসাল, আমানকে আর কিছু বলার সুযোগ নাহ দিয়ে ফোন কেটে দেয়। আমানেরও আর কি করার। আরসালের বাড়ির দিকে যাত্রা শুরু করে।
কিছুক্ষনের মাঝেই আমান চলে আসে চৌধুরী ম্যানশনে। আমান এসেই আরসালের রুমে চলে আসে। আরসাল দরজা খোলার আওয়াজ পেয়ে তাকিয়ে দেখে আমান। আমানকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সার্ভেন্ট এসে বলে যায় গেস্টরা চলে এসেছে। আমান আর আরসালও নিচে নেমে আসে।
চলবে……………🌹