তুই আমারই থাকবি part-23

0
2063

#তুই_আমারই_থাকবি?
#Esrat_Jahan?
#Part_23
!
‘হঠাৎ করে ধাক্কা খেলাম একটা ছেলের সাথে।আমি পার্কিং লটে দাঁড়িয়ে মামানির জন্য ওয়েট করছি আর এই ছেলের সাথে খেলাম এক ধাক্কা! যত্তসব বলেই নিজেকে সামলে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ছেলেটার দিকে তাকাতেই ওই ব্যাটা ফাজিল বললো, ওয়াও!ফ্যান্টাস্টিক! এই কিউট গার্ল,হোয়াট ইজ ইউর নেইম?

-আমার মেজাজে সপ্তমে চড়ে গেলো। ইচ্ছে হলো জুতো পেটা করতে। কিছু বলতে যাবো তার আগেই মামানি হাজির….মামানি বললো, ধর মা! আবরারের জন্য কিছু কিনতে গিয়েছিলাম,তুই গেলি না কেন?তাই আমিও ওর জন্য কিছুই নিইনি!

-আমার শপিং শেষ। তোমার গুণধর ছেলের জন্য তুমিই নিয়ে যাও, আমি এখন বাসায় যেতে চাই!

-তাহলে আমার ছেলের জন্য কিছু নেবো না?থাক তাহলে অন্যদিন আসলেই নিয়ে যাবো।

-মামানি, তোমার এতবড় ছেলে কী নিজের জিনিস টাও নিজে কিনতে পারেনা?তোমাকে নিতে হবে?

-তুই যে কি বলিস!আমার ছেলের পছন্দ দেখলে তুই সারাদিন তাকে নিয়েই শপিং করবি।এতই ভালো চয়েজ তার।কিন্তু আমি শপিং করতে এলে ওর জন্যও কিনি আরকি!

-ওকে, আরেকদিন কেনাকাটা করো।এখন চলো।

-চল।

-পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই হাঁদারাম বদ ছেলে এখনো তাকিয়েই আছে।যেন গভীর ভাবনায় মত্ত সে…..

মামানি আর আমি প্রচুর শপিং করে রাত আটটায় বাসায় চলে এলাম।সবার জন্যেই কিছু না কিছু এনেছি, কিন্ত মিস্টার ফায়ারের জন্য কিছু আনিনি।ইনফেক্ট মামানি উনার জন্য কিছু নিতে পারেনি।সেটা অবশ্য আমার জন্যই, আমি তাড়াহুড়ো করাতে!যাইহোক, সবাই গিফট পেয়ে মহাখুশি,আর ফায়ার মিয়া রাগে চুপসে আছে।

রাতের খাওয়া-দাওয়ার পর মিস্টার ফায়ারের সাথে কাইণ্ডলি আমার মুখোমুখি দেখা হলো রুমে!চোখমুখ ফুলে আছে,সেটা অবশ্য অতিরিক্ত ঘুমানোর কারণে।


-ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরুতেই কে যেন পেছন থেকে আমার ওড়না টেনে ধরলো।

-আমি পেছন ফিরে তাকাতেই উনি ফট করে আমার ঠোঁটে গাঢ় চুমু এঁকে দিলেন।আমি লজ্জায় মাটিতে মিশে যাচ্ছি।তাও ব্যাটার সামনে তো আর এমন ভাব দেখালে চলবে না।তাই লজ্জা নামক বস্তুটা সাইডে সরিয়ে রেখে হালকা কেশে রাগী গলায় কোনোমতে বললাম,এমন করলেন কেন?

-উনি আমার ওড়নার একপাশ ছেড়ে দিয়ে হাত দুটো পকেটের ভেতর ঢুকিয়ে ব্রাশমার্কা হাসি দিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।

-উনার হাসি দেখে আমার পিত্তি জ্বলে যাচ্ছিলো। উনি আমার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিলেন।আমিতো রীতিমতো হতবিহ্বল হয়ে পড়েছি উনার কান্ডকারখানা দেখে।উনি চোখ মারা কোথা থেকে শিখলেন?হাউ?

-ছেলেদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে এলে,তো কেমন লাগলো?

-কীহ?আমি ছেলেদের সাথে ধাক্কাধাক্কি করে এসেছি?রাগী গলায়!লাইক সিরিয়াসলি?

-ইয়েস,অভিয়াসলি!ভুলে গেলে?পার্কিং লটে?

-ওহহ….এই ফায়ার মিয়া এটা জানলো কীভাবে? হাউ ইজ পসিবল?

-কী?কথা নেই মুখে?

-দেখুন, আমি ধাক্কাধাক্কি করিনি।হঠাৎ করে না দেখতে পেয়ে একটা ধাক্কা লেগে গিয়েছে। এখানে ওই হাঁদারাম ছেলে বা আমার,কারোরই দোষ ছিল না।সো,,এক্সিডেন্ট বলা যায়।

-তাই নাকি?

-জ্বি!হ্যাঁ!

-বলেই ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে চুল আঁচড়াতে লাগলাম।কিন্তু চুলে এতোই জট লেগেছে যে, কিছুক্ষণ পর রেগেমেগে সব ছেড়েছুড়ে মুখ ফুলিয়ে সোফায় বসে রইলাম।

-আর উনি সেই ঠেস দেওয়া দেওয়ালে দাঁড়িয়ে আমার কান্ডকারখানা দেখছিলেন।এই সিচুয়েশন দেখে উনি হু হা করে হেসে উঠলেন।আমি প্রচন্ড রেগে বললাম,চুল থাকলে বুঝতেন,কত কষ্ট করতে হয়!তখন এই বেকুবের মতো বেক্কলিমার্কা হাসি থাকতো না।

-আমি শুনেছি যে,বাঙ্গালী রমণীদের সৌন্দর্যের প্রধান বস্তু হচ্ছে তাদের চুল।তারা নাকি চুলের যত্ন নেয়।চুল বলতে অজ্ঞান,দিনে তিনবার চুল আঁচড়ানো বাধ্যতামূলক!আর আমি তো দেখছি তুমি যে সেইদিন চুল বেঁধেছিলে আজ সেই চুল ছাড়া পেয়েছে,তাহলে চুলগুলো ভালো থাকবে কীভাবে?

-মোটেও না।আমি প্রতিদিন চুল আঁচড়াই!

-তাই বুঝি চুলের এ অবস্থা?

-আমি কিছু বললাম না। সেভাবেই গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম।

কিছুক্ষণ পর!উনি এসে ঠাস করে আমার চুলগুলো আঁচড়াতে লাগলেন।আমি বাধা দিতে গেলেই এক ধমকে চুপ করিয়ে দিলেন।সুন্দর করে জট খুলে বিনুনি নামক অসম্ভব কাজ করতে লেগে গেলেন।বাট ফলাফল জিরো। এই মহান কার্য উনি সাধন করিতে পারিলেন না।রেগে মেগে বিনুনি ট্রাই করতে গিয়ে চুলগুলোতে দড়ি পাকিয়ে ফেললো। অবশ্য এটা দড়ি নাকি অন্যকিছু সেটা উপরওয়ালাই জানেন।

আমি যতোটা না রেগেছি তার চেয়েও বেশী অবাক হয়েছি।লোকটাকে এই মূহুর্তে কী বলবো মাথায় আসছে না। উনি এখন আমার ওড়না দিয়ে কপালে লেপ্টে থাকা লাল সিল্কি চুলগুলো সরিয়ে ঘাম মুছলেন।কপালের কোণে থাকা তিলটা বেশ দেখা যাচ্ছে।আমি আরো একবার ক্রাশ খেলাম।কিন্তু তার পরেই যে বাঁশ খেতে হবে সেটা ভাবিনি।উনি ফট করে আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন,কপালে চুমু খেলে নাকি ভালোবাসা গভীর হয়?সো আমার কপালেও চুমু দাও।

-আমি চিৎকার করে বললাম,না!নো, নেভার!

-না, মানে?

-না মানে না।নো মিনস নো।

-দিতেই হবে।

-বললেই হলো,মগের মুল্লুক নাকি!

-দিবে না?

-না,আমি এত লুতুপুতু মেয়ে না যে ফটাফট চুমু খাই!খাইতে গেলে,বসতে গেলে,ঘুমাতে গেলে,সুযোগ পেলে,সুযোগ না পেলে এবং আরো বিভিন্ন কারণে চুমু খাওয়া মেয়ে আমি নই!

-উনি কিছুক্ষণ ভেবে আমাকে বললেন,তাহলে ছাদে চলো।

আমি সন্দেহ নিয়ে উনার দিকে তাকালাম। বললাম, কেন?

-এমনি!

-চুমু খেতে চান জোর করে, তাই না?সব মতলব বুঝি।

-সবকিছু বেশিই বুঝো।বয়স দেখলে মনে হয় সদ্য জন্ম নেওয়া শিশু, কথা শুনলে মনে হয় আশি বছরের দাদীমা আমার!

-এই মিয়া ফায়ার!একদম বয়স নিয়ে খোটা দেবেন না।নিজে কী?

-এখন ছাদে চলো।

-যেতে পারি একশর্তে!

-উনি ভ্রু কুঁচকে বললেন,কী?

-আজ বড় চাঁদ উঠেছে।জোৎস্নাবিলাস করবো।

-ওকে,চলো।

রাত বারোটা। আমি আর উনি ছাদে মাদুর পেতে বসে আছি।অবশ্য বালিশ,কাঁথা, ছাতা নিয়ে এসে এসেছি।সারারাত জোৎস্নাবিলাস করবো। আর ছাতা এনেছি যদি হঠাৎ করে বৃষ্টি আসে তার জন্য।আকাশে অল্প অল্প মেঘ দল বেঁধে ঘুরে বেড়াচ্ছে।চাঁদের আলোতে সবকিছু দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ করে বৃষ্টি এলে জোৎস্নাবিলাস আর বৃষ্টিবিলাস দুটো একসাথেই হয়ে যাবে।

-উনি একটা বালিশ নিয়ে মাদুরের উপর শুয়ে পড়লেন।

-কেমন লাগছে,আপনার?

-ভালো।

-উনার কন্ঠ শুনে কেমন যেন লাগলো আমার।জিজ্ঞেস করলাম,আপনার মন খারাপ?

-উনি কিছু না বলে উনার মাথাটা আমার কোলের উপর রেখে বললেন,ছোটবেলা কেন ফিরে আসে না,বলতো খুশবু!আমার আর এসব ভালো লাগে না।

-চকিতে চমকে উঠলাম উনার এমন বিষণ্ণ কথায়।কেমন যেন খারাপ লাগলো। উনি আবারো ধরা গলায় বললেন,আমি ছোটবেলাটাকে খুব মিস করি!

-আমি কিছু বললাম না।উনি কথা বলেই চলেছেন নিজের মতো।আমার কাছে উনি যেন এক অচেনা মানুষ, এমন আবরার আগুনকে আজ নতুন আবিষ্কার করেছি আমি।

-উনি মন্ত্রমুগ্ধের মতো বলে চলেছেন…..

‘আজকাল প্রায়ই আমি স্বপ্ন দেখি।স্বপ্নের মাঝে আমি কেমন উন্মাদের মতো হারিয়ে যাই।তখন চোখের সামনে ভেসে উঠে সেই সোনালী দিনগুলো,যেগুলো হয়তো এই পৃথিবীর বুকে আর কোনোদিনও ফিরে আসবেনা। আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে রুপোলী দিনের সোনালী দুপুরে রোদের আলোয় ঝিকঝিক করা একটি মূহুর্ত!আনমনা হয়ে তাকিয়ে থাকা বর্ষার মেঘে ঢাকা আকাশের দিকে।দূরের রেললাইন, ছোট্ট পাহাড়ি নদী এবং তেপান্তরের মাঠ!ভাঙা দো’তলা লাল টালির ছাদ থেকে ঝপঝপিয়ে নামা বৃষ্টির ফোঁটা আর বাড়ির পেছনের ঘন বুনো গাছ-গাছালির ঝোপ! আমি হারিয়ে যাই সেই নিঃস্তব্ধ অতীতে! যে অতীত আমাকে বহুদূর থেকে হাতছানি দিয়ে আজও ডাকে!ছোটকাল সব সময়ই রঙিন হয়,বড়বেলা তাহলে কেন এমন হয় না খুশবু?
-স্বপ্নালু চোখে খুশবু তাকালো আবরারের দিকে।
লোকটা যে এভাবেও চিন্তা করতে পারে তা খুশবু মোটেও ভাবেনি!’
!

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে