#তি_আমো❤
#পর্ব_৩০
Writer: Sidratul muntaz
🍂
বিছানার দেয়াল ঘেষে টেবিল ল্যাম্পটা হাল্কা ছুয়ে বসে আছি আমি। রুমটা মোহনা আন্টির। আমার সামনে বসেও আছেন তিনি। কেমন আছি,চেহারার এই হাল কেনো ইত্যাদি টুকটাক প্রশ্ন করছেন। আমি তেমন কোনো উত্তর দিতে পারছি না। শুধু কাদছি। নিহা ভেতরে এসেই আমাকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিল। এক ঢোকে সম্পুর্ণটা শেষ করলাম। তারপর আবার কাদতে গিয়ে বিষম খেলাম। মোহনা আন্টি আমার মাথা হাত রাখলেন, দুই-একটা চাপড় দিলেন। আমি শান্ত হয়ে বসলাম। আন্টি বললেন,
“সাবধানে খেতে হয় তো মা! এতো অস্থির হলে চলে? কি হাল করেছো বলোতো চেহারাটার? চেনাই যাচ্ছে না। আমি তো প্রথম দেখে চিনতেই পারিনি তোমাকে।”
আমি মাথা নিচু করলাম। নিহা বলল,
“ফিরতে অনেক দেরি করে ফেলেছিস তারু। খুব বেশিই দেরি হয়ে গেছে। যদি আর দুইটা মাস আগে আসতি না..”
মোহনা আন্টি হাতের ইশারায় থামিয়ে দিয়ে বললেন,
“কিচ্ছু দেরি হয়নি। ঈশান যদি শুধু একবার জানতে পারে যে তারিন ফিরে এসেছে, তাহলে সেও ফিরে আসবে। যেখানেই থাকুক ফিরে আসবেই। এই নিহা, সাফিনকে একটা ফোন করো না। বলো বাসায় আসতে। তারিনকে দেখে যাক সেও।”
“ফোন করেছি আন্টি। ও আসছে।”
“তাহলে তো খুব ভালো।তুমি একটু অপেক্ষা করো তারিন। সাফিন আসলেই ঈশানের খবর পাওয়া যাবে। আচ্ছা নিহা, তুমি তারিনের সাথে বসে কথা বলো। আমি কুইনকে দেখে আসছি।”
“আচ্ছা আন্টি। ”
মোহনা আন্টি চলে যাওয়ার পর নিহা আমার সামনে বরাবর বসল। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
“কেমন আছিস?”
আমি উত্তর না দিয়ে আবার মরাকান্না জুড়লাম। নিহাকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করলাম। কান্নাময় ককষ্টগুলো বিসর্জন দেওয়ার পালা এবার। বেশ কিছুক্ষণ কান্নাকাটির পর নিহা টেনে তুলল আমায়। আমি চোখমুখ মুছলাম। নিহা আমার পিঠে হাত বুলিয়ে বলল,
“কাদিস না থাক। শান্ত হো এবার।”
আমি ফুপিয়ে ফুপিয়ে বললাম, “ঈশান কোথায়?”
নিহা নাসূচক মাথা নেড়ে বলল, “জানিনা। ফারায আঙ্কেল বের করে দিয়েছে। অনেক ঝামেলাও হয়েছে এসব নিয়ে। বিরাট ঝামেলা।”
“কি এমন করেছে উনি? যে বের করে দিলেন?”
“বললে বিশ্বাস করবি না।”
“বল না আগে!”
“ড্রাগস নিতো।”
“কি?”
“হুম। সব তো তোর জন্যই তারু। তোর বিয়ের খবর শুনে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিলেন উনি। প্রথম কিছুদিন স্বাভাবিক থাকলেও দিন যত বাড়ছিল ততই অগোছালো আর বেসামাল হয়ে পড়ছিলেন উনি। খাওয়া-দাওয়া, ঘুম কিচ্ছু ঠিক চলছিল না। সবথেকে বেশি সাফার করেছে মোহনা আন্টি। ঈশান ভাইয়া কি যে পাগলামি গুলো করতেন। গাড়ি নিয়ে এক্সিডেন্ট করেছে কয়বার জানিস? ফুলস্পিডে হাইওয়ে তে নেমে গাড়ি চালাতেন। কয়বার যে এর জন্য থানায় যেতে হয়েছে। সারাদিন বাহিরে বাহিরে ঘুরতেন, বারে থাকতেন। মাঝে মাঝে পার্কের বেঞ্চিতে অতপ্রোতভাবে খুজে পাওয়া যেতো। সাফিন ধরে নিয়ে আসতো। প্রতিদিন রাতে এসব নিয়ে গেঞ্জাম হতো বাসায়। ঝগড়া হতো। ফারায আঙ্কেল তো থাপ্পড়ও দিয়েছিলেন ঈশান ভাইয়াকে। আর তাতেও উনার কোনো মতিভ্রম হয়নি। বরং ড্রিংক করে তিনদিন বিছানায় বেহুশ হয়ে ছিলেন। তবুও ফারায আঙ্কেলের ধৈর্য ছিল, ভেবেছিলেন ঈশান ভাইয়া ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু যখন ড্রাগসের ব্যাপারটা জানাজানি হল, তারপর আর সহ্য করতে পারেন নি আঙ্কেল। সেদিনই এক কাপড়ে ঈশান ভাইয়াকে বের করে দিয়েছেন বাসা থেকে। ফোনটা পর্যন্ত নিতে দেন নি। সাথে একটা পয়সাও না, সম্পুর্ণ খালিহাতে।”
আমি হাটু জড়িয়ে বসে আছি। চোখের পানি মুছতে মুছতে বললাম,
“তারপর?”
নিহা চোখের কোণ মুছে বলল,” তারপর আমি আমার শ্বশুরবাড়ি নিয়ে রেখেছিলাম ক’দিন। মা উনাকে খুব পছন্দ করেতেন।সেখানেও আগের মতোই সারাদিন এক ঘরে দরজা বন্ধ করে থাকতেন। প্রায় রাতেই জ্বর আসতো। আমি জ্বর পট্টি দিতে যেতাম। তখন আমাকে জিজ্ঞেস করতেন তোর কথা। এমন কোনো দিন নেই যে তোর নাম উচ্চারণ করে নি উনি। উঠতে বসতে শুধু তারিন, তারিন আর তারিন। মানসিক রোগী হয়ে গিয়েছিলেন। উনার চেহারা দেখলেই কান্না পেতো আমার।এতোটা অসহায় ছিলেন, তারপর হঠাৎ একদিন কি হলো জানিস? সকাল সকাল লাপাত্তা হয়ে গেলেন বাসা থেকে। কোথায় গিয়েছেন, কেমন আছেন কিচ্ছু জানিনা। এখন পর্যন্ত কোনো খোজ পাইনি। তবে সাফিনের সাথে নাকি দেখা হয়েছিল একবার।”
আমি উৎকণ্ঠা নিয়ে বললাম,” সাফিন ভাইয়া জানে উনি কোথায় আছে?”
“জানিনা দোস্ত! আমাকে কিছু বলেনা এই ব্যাপারে। ও আসলে তুই জিজ্ঞেস করিস। তোকে অবশ্যই বলবে।”
কথার মাঝখানেই একটা পিচ্চি মেয়ে ভেতরে ঢুকল। মেয়েটার হাতে একটা টুথপেষ্ট আর ব্রাশ। টুথপেষ্ট টা হাতের মুঠোয় রেখে ব্রাশ দিয়ে দেয়াল ঘষছে সে। আমি বললাম,
“এমন করো না। নোংরা হয়ে যাবে তো ওইটা। ”
আমার কথা শুনে মেয়েটা তৎক্ষণাৎ দেয়াল থেকে ব্রাশ টা সরিয়ে মুখ দিয়ে দিল। আমি আরো জোরে শব্দ করলাম,
“ছি! ময়লাটা মুখে দিচ্ছো কেনো?”
নিহা হেসে দিয়ে বাচ্চাটার কাছে গেল। ব্রাশআর পেষ্ট হাত থেকে নিয়ে পিসি টেবিলে রাখল। আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল,
“ও এমনই। এতোবড় হয়ে গেছে এখনো ঠিক করে কথা বলতে পারে না জানিস? শুধু যাকে তাকে ধমক দিতে পারে। শুপ! শুপ করে দাও তো আপুকে একটা। ”
মেয়েটা নির্বিকার ভাবে তাকিয়ে থেকে আঙুল উঠিয়ে উচ্চারণ করল, “শুপ!”
নিহা জোরে হাসল। আর মুচকি হেসে জানতে চাইলাম,
“কে ও?”
নিহা মেয়েটিকে কোল থেকে নামিয়ে বিছানায় বসিয়ে বলল,” কুইন।”
আমি মেয়েটার দিকে ভালো করে তাকালাম। চেনা চেনা লাগছে। আচ্ছা এই মেয়েটাই কি তখন ঈশানের ফোন ধরেছিল? নিহা বলে উঠল,
“তারু, সাফিন চলে এসেছে। তুই কথা বলবি না?”
আমি সামনে তাকালাম। সাফিন ভাইয়া দরজায় দাড়িয়ে। আমি তাকাতেই দীর্ঘ হাসি দিলেন উনি। এগিয়ে এসে বললেন,
“হায় তারিন।এমন হাড্ডিসার রোগীর মতো অবস্থা কেন তোমার? চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে এখনি বেরিয়ে আসবে। ধরো ধরো ধরো!”
বলতে বলতে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন উনি। আমি ভয় পেয়ে বললাম,
“কি ধরবো?”
“তোমার চোখ।”
নিহা বিরক্ত হয়ে বলল,
“ধুর, ইয়ার্কি করো না। ও মরছে ওর টেনশনে.. আচ্ছা ঈশান ভাইয়ার কোনো খবর জানো?”
সাফিন ভাইয়ার উৎফুল্লকর হাসি এবার চিন্তাময় হাসির রুপ নিলো। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে দীর্ঘশ্বাস ফেলে “হুম” উচ্চারণ করলেন উনি। যার অর্থ “হ্যা’ও হয়ে পারে আবার ‘নাও’ হতে পারে।
নিহা বলল,” আচ্ছা ঠিকাছে। তাহলে তুমি তারুর সাথে কথা বলো। আমি কুইনকে নিয়ে যাই। এসো কুইন!”
সাফিন ভাইয়া মাথা হেলিয়ে সম্মতি দিলেন। নিহা কুইনকে কোলে নিয়ে বেরিয়ে গেল তারপর সাফিন ভাইয়া বিছাবায় বসতে বসতে বললেন,
“তারপর বলো, কেমন আছো? ”
আমি মৃদু হেসে বললাম,
“ভালো, ভালো আছি। আপনি ভালো আছেন?”
“ভালো।”
আমি অধৈর্যের ন্যায় বললাম,
“তারপর বলেন ভাইয়া। ঈশানের খবর কিছু জানেন? কোথায় আছে উনি? কেমন আছে?”
সাফিন ভাইয়ার হাসি পুরোপুরি ম্লান হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। উনার নিরবতায় তটস্থ হয়ে আমি আবার জানতে চাইলাম,
“ভাইয়া বলুন না! কিছু কি জানেন?”
সাফিন ভাইয়া মাথা ঝাকিয়ে চিন্তিত গলায় বললেন,” জানি। ”
আমি পরম উৎসাহী কণ্ঠে বললাম, “তাহলে আমাকে নিয়ে চলেন না। আমি যাবো সেখানে। প্লিজ!”
🍂
#তি_আমো❤
#পর্ব_৩০(অতিরিক্ত)
Writer: Sidratul muntaz
🍂
বর্তমানে সাফিন ভাইয়ার সাথে গাড়িতে বসে আছি। উনি আমায় নিয়ে যাচ্ছেন প্রত্যাশিত গন্তব্যে। যেখানে ঈশান আছেন। কিন্তু সেখানে পৌছানোর আগে আমায় অদ্ভুত একটা শর্ত পালন করতে হয়েছে। নিজ সত্তাকে বিসর্জন দিয়ে এক অচেনা রুপে সজ্জিত হয়েছি আমি। আমাকে ছেলে সাজিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঈশানের কাছে। কালো কোর্ট, চোখে ক্লাসিক চশমা, মাথায় পাগড়ি, গালভরা আর্টিফিশিয়াল দাড়ি, এমনকি হাতের উপরেও অদ্ভুত স্কিন কালার টাইডস পড়তে হয়েছে।যেন আমার হাত-পা দেখেও বোঝার উপায় না থাকে যে আমি একজন মেয়ে। ঈশানের কাছে কেনো এই রুপ নিয়ে যেতে হচ্ছে সেই কারণটা সাফিন ভাইয়া আমায় এখনো বলেনি। আমিও জানার জন্য খুব একটা আগ্রহ দেখাই নি। আপাতত আমার একমাত্র কৌতুহল ঈশানকে দেখা, চোখের তৃষ্ণা মিটিয়ে দেখা, এর বেশি কোনোকিচ্ছুতে আগ্রহ নেই। শুধু ঈশানের কাছে পৌছাতে পারলেই হলো।এবার সেজন্য ছেলে, বুড়ো, যাই সাজতে হোক, আমার কোনো দ্বিধা নেই। উত্তেজনায় হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছে আমার। কখন দেখবো ঈশানকে?মনের ভিতরটা হাসফাস করছে।সাফিন ভাইয়া আমাকে ডাকলেন,
“তারিন!”
“হুম?”
“আশফীয়া তারিন রাইট?”
“হ্যা।”
“আজকে থেকে তোমার নাম আশফাক তারিক। মনে থাকবে?”
আমি নিঃসংকোচে মাথা নাড়লাম। তারপর ভ্রু কুচকে বললাম,
“আচ্ছা সাফিন ভাইয়া, আমরা কি কোনো মেসে বা ব্যাচেলার হোস্টেলে যাচ্ছি?”
সাফিন ভাইয়া মুচকি হেসে ধীরে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, “বলছি বলছি। সব জানবে। আগে চলো।”
বহুতল ভবনের সামনে গাড়ি থামল। গাড়ি থেকে নেমে লিফটে ওঠা পর্যন্ত আমাদের মধ্যে তেমন কোনো কথা হলো না। লিফট থেকে নামার পর শুধু সাফিন ভাইয়া বললেন ঈশানের সামনে গিয়ে আমি যাতে কোনো ওভার রিয়েক্ট না করি। সম্পুর্ণ নরমাল থাকি। আর কথাও যেন না বলি। আমি বাধ্য মেয়ের মতো সব মেনে নিলাম। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে ঈশানকে একবার দেখতে চাই। এতেই আমার শান্তি। দরজা খুললেন একজন মাঝবয়সী ভদ্রলোক। সাফিন ভাইয়াকে দেখে প্রথম কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে থেকে চেনার চেষ্টা করে বড় হাসি দিলেন উনি। আর বললেন,
“আরে তুমি ঈশানের বন্ধু না?”
সাফিন ভাইয়া হেসে বললেন,
“জী আঙ্কেল। ঈশান বাসায় আছে?”
“হ্যা আছে আছে। এসো।”
দরজা থেকে সরে ভিতরে ঢুকতে ইশারা করলেন ভদ্রলোক। সাফিন ভাইয়া আমাকে প্রথমে ঢুকতে বললেন। লোকটা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে বললেন,
“এটা কে?”
সাফিন ভাইয়া আমার কাধ চাপড়ে বললেন, “ভাই, ছোট ভাই।”
“ও আচ্ছা এসো বাবা ভেতরে এসো।
আমরা সোফায় বসতেই একজন মধ্যবয়স্কা মহিলাও বেরিয়ে আসলেন। গায়ে খয়েরী রঙের শাড়ি। ইনি হয়তো ভদ্রলোকের পত্নী। আমি অভ্যাস অনুযায়ী সোফা থেকে দাড়িয়ে সালাম দিতে চাইলাম। ওমনি সাফিন ভাইয়া আমায় আটকালেন। আমিও চুপ মেরে গেলাম। ভদ্র মহিলা সাফিন ভাইয়ার দিকে এগিয়ে এসে বললেন,
” কি খবর সাফিন? এতোদিন পর মনে পড়ল?”
সাফিন ভাইয়া হাসি খুশি মুখে বললেন, “কি করবো আন্টি? ঈশানই আসতে নিষেধ করতো। রাগারাগি করতো বলেই আসতাম না।”
ভদ্রমহিলা চিন্তিত মুখে বললেন,” হ্যা, সেটা অবশ্য আমি আগেই বুঝেছি। ছেলেটা দিন দিন আরো বেশি একগুঁয়ে হয়ে যাচ্ছে। তোমরা বিয়ের কথা ভাবছো না কেনো ঈশানের? বিয়ে করিয়ে দিলেই সব ঠিক হয়ে যাবে দেখবে।”
“বিয়েই কি সব সমস্যার সমাধান আন্টি?”
“হ্যা অবশ্যই। বিয়ে হলে দায়িত্ব হবে, সংসার হবে, একটা বাকে বাধা পড়বে জীবন। তবেই না অতীত ভুলে যাওয়া সম্ভব। সারাদিন ঘরে গুম মেরে বসে থেকে কি অতীত ভোলা যায়? ছেলেটা তো এখনো সেই অতীতেই পড়ে আছে। জীবনটা তিলে তিলে শেষ করছে। আর ওই মেয়েটা সুখে শান্তিতে ঘর-সংসার করছে। মেয়ে কি মনে রেখেছে ওর কথা? দুনিয়া বড়ই স্বার্থপর।”
দীর্ঘশ্বাস ফেললেন ভদ্রমহিলা। সাফিন আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে হাসার চেষ্টা করে ভদ্রমহিলাকে বললেন,
“ঈশানকে ডাকুন আন্টি। অনেকদিন দেখা হয়না।”
“হ্যা আসছে। সায়রার আব্বু ডাকতে গেছে। ওর তো আবার দরজা খুলতেও দশমিনিট সময় লাগে। কি যে করে সারাদিন একা একা!”
ভদ্রমহিলার কথা শেষ হতেই ঈশান চলে আসলেন। আমি সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাড়ালাম। হ্রৎস্পন্দনটা ইতিমধ্যেই মাত্রাতিরিক্ত বেগলাভ করে কম্পিত হচ্ছে। ঈশান চোখমুখ ছোট করে তাকালেন। চোখগুলো টকটকে লাল, নির্বিকার দৃষ্টি। যেন অনুভূতিহীন মানব। মুখটা হাল্কা ফোলা। চুল-দাড়ি বেড়ে অনেকটা জেলখানার আসামীর মতো অবস্থা। সহজ কথায়, কবির সিং ইন রিয়েল লাইফ।খুব বেশি অসহায় লাগছে, প্রাণবন্ত ঘাসের মতো চুলগুলোও যেন আগাছার রুপ নিয়েছে। সবকিছু মুষড়ে গেছে। যেন পৃথিবীর সবথেকে অসহায় ব্যক্তিটি উনিই। আমি নিষ্পলক তাকিয়ে আছি। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু জল। চশমাটা ঝাপসা হয়ে আসছে। সাফিন ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে বসালেন।চোখের ঈশারায় দিয়ে বুঝালেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে। আমি বসে পড়লাম, এখনো নিজেকে স্বাভাবিক করতে পারছিনা। কাজটা এতো কঠিন হবে ভাবিনি। ঈশান বললেন,
“সাফিন! তুই কেনো এসেছিস এখানে?”
ভদ্রমহিলা বললেন, ” এটা কেমন কথা বাবা? তোমাকে দেখতে এসেছে! শত হলেও বন্ধু তো।”
ঈশান ভ্রু কুচকে বললেন,” সাথে এটা কে?”
ভদ্রমহিলা এবার আমার দিকে তাকালেন। তারপর সাফিন ভাইয়াকে বললেন, “ও হ্যা.. এইটা কে সাফিন?”
সাফিন ভাইয়া অপ্রস্তুত ভাবে বললেন,” ভাই। ঈশানের ছোট ভাই। ”
ভদ্রমহিলা মুখ কালো করে বললেন,” ছোটভাই? তাহলে ঈশান চিনতে পারছে না যে?”
ঈশান একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই তেড়ে আসলেন আমার দিকে। এক টানে আমাকে সোফা থেকে উঠিয়ে দুই গাল চেপে ধরে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে অস্থির গলায় বললেন,
“কে তুমি? কে?”
ঈশানের আচরণে সাফিন ভাইয়ার সাথে ভদ্রমহিলাও উঠে দাড়ালেন। সাফিন ভাইয়া দ্রুতগতিতে আমাকে টেনে সরালেন।আমি সাফিন ভাইয়ার পেছনে লুকিয়ে গেলাম। ঈশান উঁকিঝুঁকি মেরে আমাকে দেখছেন। আমিও সাফিন ভাইয়ার পেছন থেকে উকি মেরে উনার দিকে তাকালাম। ঈশান এগিয়ে আসতে নিলে সাফিন ভাইয়া হাত দিয়ে আটকালেন। খুব ইতস্ততভাবে বললেন,
“ঈশান! তুই চিনতে পারছিস না ওকে? ও তারিক।”
ঈশান বিরক্তি নিয়ে বললেন,” কে তারিক?”
ভদ্রমহিলা ঈশানের উত্তরে ভ্রু কুচকালেন।
সাফিন ভাইয়া ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে জোরপূর্বক হেসে বললেন,
“আসলে আন্টি, অনেকদিন পর দেখা তো। ও হয়তো চেহারা ভুলে গেছে। তাই চিনতে পারছে না।”
ভদ্রমহিলা হেসে বললেন,” বুঝতে পেরেছি। এইটা নতুন কিছুনা। মাঝে মাঝে তো আমাকেও চিনতে পারেনা ও। ওর ঘরে গিয়ে দরজা ধাক্কালে মাঝে মাঝে দরজা খুলেই জিজ্ঞেস করে, কে আপনি?”
সাফিন ভাইয়া হেসে দিলেন। ভদ্রমহিলাও হাসলেন। আমি আর ঈশান নিশ্চুপ। তৃষ্ণার্ত দৃষ্টিতে একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছি।
🍂
চলবে