“তিমির” পর্ব ৩

0
1570

“তিমির” পর্ব ৩

সে যখন চোখ খুলল, তখন তার চোখে ভয় বিরাজ করছিল। আমিও ভয় পেলাম। কী দেখেছে সে? কী এমন জেনেছে? ধ্রুব আমার হাত ছেড়ে তড়িঘড়ি করে চলে গেল। একটিবারও পেছনে ফিরে তাকাল না। এমনকি আমার পেছন থেকে জিসান ভাইও ইতোমধ্যে তাকে ডাকা শুরু করেছে। কিন্তু সে হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছে। আমি কি কিছু ভুল করেছি?
আমি চিন্তিত হয়ে আসিয়ার সাথে বাসায় ফিরে এলাম। এসে সজীব ভাইয়ার সাথে যোগাযোগ করলাম। তিনি কাল থেকে পড়াতে আসবেন। তাঁর কাছে আসিয়াও পড়বে।
আমরা রাতের পড়া সেরে কিছুক্ষণ টিভি দেখলাম। আসিয়া কেবল আমার দিকে তাকিয়েছিল। সে হয়তো ধরে ফেলতে পেরেছে, আমি কলেজ থেকে ফেরার পর হতে অন্যমনস্ক হয়ে আছি। সে টিভি বন্ধ করলে আমরা এক ঘরে বসলাম। এখানে আসার শুরুতে তার কাছ থেকে অবহেলাই আশা করেছিলাম। সপ্তাহটা পার হওয়ার পর বুঝেছি, ও ভেতর থেকে অনেকটাই নম্র। আমার কাছেও নম্র হওয়া উচিত। কারণ আমি এখন একা নই। আসিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, “তো জিসান ভাইয়ের স্টোরিটা কী?”
সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে। নিস্তব্ধতার পরিবর্তে প্রসঙ্গটা তার ভালো লাগল। “মুনতাহারা এখানে একসময় বেশি থাকত। যদিও সে আমার একবছরের বড়, ওর সাথে আমার অনেক ভালো বন্ধুত্ব ছিল। ওকে নিজের বেস্টফ্রেন্ড মনে করতাম। এই কারণেই জিসানকে পছন্দ করার কথা ওকে আমি জানাই। তখনও আমি জিসানকে পুরোপুরি ভালোবাসিনি। আমার মনের কথা এতটা তীব্র হয়নি যে, জিসানকে তা বলতে যাব। এমন সময় মুনতাহা রূপ পাল্টাতে শুরু করে। কীভাবে যেন জিসানকে ও নিজের করে নেয়, এটা জানার সত্ত্বেও যে, ওই ছেলেটিকে আমি পছন্দ করি। এরপর যেদিন বুঝেছি, ওরা দু’জন রিলেশনে আছে, সেদিন এও বুঝি, আমি জিসানকে ভালোবাসতে শুরু করেছি। আর ওকে এভাবে মুনতাহার সাথে দেখা, আমার মাঝে কতটা হতাশার সৃষ্টি করে, তা তোকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। মুনতাহাকে অপছন্দ করি এজন্য না যে, ও আমার ভালোবাসাকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়েছে। আমি ওকে এজন্যই অপছন্দ করি, কারণ ও একটা খারাপ মেয়ে। জিসান ওর মতো মেয়েকে ডিজার্ভ করে না। মুনতাহা যখন আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল, তখন আমি তাকে পাল্টানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও আজীবন ওর মায়ের মতোই লোভী আর স্বার্থপর থাকবে।”
“ফুফি..”
সে আমার কথাটা শেষ করতে দিলো না, “তিনি বাবার চাচাতো বোন। বাবারই উদারতা যে, আমাদের আত্মীয়ের লিস্টে ওঁদের রেখেছে। আজকালকার আত্মীয়গুলো একজনও বিশ্বাসের যোগ্য নয়।”
আমি চুপ করে রইলাম। একসময় বললাম, “আমি নিজের বাবাকেও বিশ্বাস করি না।”
“কেন?’
“তিনি যে মাকে ছেড়ে দিলেন, আমি তা কখনও ভুলব না।” আমি এক মুহূর্তের জন্য ভুলে গেলাম, আসিয়া তাঁরই মেয়ে। “আমরা অনেক প্রতিকূলতা পেরিয়ে এটুকু এসেছি। ভাগ্যিস নানুর রেখে যাওয়া সম্পদ ছিল। মা এগুলো দিয়েই বেচে-কেনে সংসার করেছেন। আমার লালন-পালন করেছেন। একাই আমাকে মানুষ করে গড়ে তুলেছেন। বাবা তাঁকে ছেড়ে দেওয়ায় সমাজের কাছে অনেক লাঞ্ছিত হয়েছেন। আমি মাত্র এক বছরের ছিলাম, মা আর বিয়ে না করায় আরও লাঞ্ছিত হয়েছেন। বুজুর্গরা বিশ্রী কথাবার্তা বলত। বলত, আমাদের এলাকার পুরুষগুলোর মনে আজীবন লালসা জাগিয়ে রাখার জন্যই তিনি এমনটা করছেন। কিন্তু মা কখনও বাসা থেকে বেরুতেন না। প্রতিবেশীরা কেউই আমাদের মা-মেয়েকে গুরুত্ব দিত না। আমাদের ওই পরিবেশে দেখেছি, মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে ফেলা হয়। আমাকে আরও পড়ানো হচ্ছে দেখে, প্রতিবেশীরা আমার পরিবারের সাথে লেনদেন একদমই কমিয়ে ফেলেছে। কেবল এক চাচাই আমাদের চিন্তা করতেন। মহিম চাচা। আমার সুবিধা-অসুবিধার কথা তাঁকে বলতাম। তিনি সংশোধন করতে না পারলেও অন্তত ভালো পরামর্শ দিতেন। আমি তবু অসহায় ছিলাম। এমনটা হতো না, যদি না বাবা মাকে সাথে রাখতেন।”
“তুই কি সম্পূর্ণ সত্যটা জানিস?”
“আমি জানতে চাই না। আমি আগের কথা মনে করে ব্যথিত হতে চাই না।”
এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share

এরপরের নীরবতা আমাকে আবারও ধ্রুবের কথা মনে করিয়ে দিলো। ছেলেটি কেন আজ ওই উদ্ভট কাজটা করেছে? নিশ্চয় সে কিছু লুকাচ্ছে। সে কি কোনো টেলিপ্যাথিক? হাতের সংস্পর্শেও কি টেলিপ্যাথি সম্পন্ন হয়? একটি সাধারণ মানুষ টেলিপ্যাথি ক্ষমতা কতদূর পর্যন্ত ধারণ করতে পারে? সে যদি টেলিপ্যাথিক হয়, তবে তার তো কোনো দোষ নেই। তাহলে সে এভাবে পালিয়েছে কেন? নাকি সে মানুষকে হিপনোসিস করে? টেলিপ্যাথির সম্বন্ধে জানি না, হিপনোসিস সম্ভবত চোখ দ্বারা করা হয়। সে আমার চোখে তাকিয়ে আমাকে হিপনোটিক কেন করতে চাইবে? হাজারো প্রশ্ন। কিন্তু জবাব জানা নেই। সে যাই হোক, সে কী নিয়ে এতো ভয় পেয়েছে?
আমি পরদিন কলেজে গিয়ে অনেকটুকু হতাশ হলাম। অধ্যয়নের এই জীবনে আমি কখনও এতটা বিষণ্ণ বোধ করিনি। এর আগে কখনও কারও প্রত্যাশায় ছিলাম না। ধ্রুবের অনুপস্থিতি বরাবরই আমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। কালরাত স্বপ্নে দেখেছিলাম, এর পূর্বের রাতের স্বপ্নের পর থেকে। কাল দেখেছিলাম, ধ্রুব আমার গাল থেকে হাত সরিয়ে ফেলেছে। আমি চেয়ে দেখলাম, আমার গায়ে সেই লাল শাড়িটি নেই। ধ্রুবের চেহারা দেখে লাগল, সে যদি পারত, তবে কেঁদে ফেলত। তার ঠোঁট মুচড়ে গেলেও তার চোখ দিয়ে কান্না বেরুচ্ছে না। তাকে একটা ছোট বাচ্চার মতোই দেখাচ্ছে। আমি তাকে আশ্বস্ত করার জন্য তার হাত ধরলাম। সে হাত ছেড়ে দিয়ে জঙ্গলের ভেতর চলে গেল। আমি ওর পিছু দৌড় লাগালাম। কিন্তু সে মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই হারিয়ে গেছে। আমি আবারও একা হয়ে পড়ি। ভয় ঢুকল, সেই বীভৎস লোকটি ভেটকি হাসি মুখে লাগিয়ে রেখে আমাকে আবারও নিয়ে যাবে। আমার ঘুম এখানেই ভেঙে গেছে। আমার কপাল ঘেমে ভিজে গিয়েছিল। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে, এই ভয়কে দূর করার জন্য আমাকে ধ্রুবের সাথে থাকতে হবে। ধ্রুব আশেপাশে থাকলে আমি ওর প্রশ্ন নিয়ে মত্ত থাকব। তখন আমার জীবনে ওই লোকের ছায়া আর পড়বে না। কিন্তু সে কেন আসেনি? আমি কি ওর কোনো ক্ষতি করেছি? না, আগামীবার থেকে ওকে ওর মতো করে থাকতে দেবো। ওকে কোনো প্রশ্ন করতে দেবো না। অন্তত সব ঠিক থাকবে। আমি ঠিক থাকব। আমি ওর সেই দেবদূতের ন্যায় চেহারাটা দেখলে সবকিছু ভুলে যাই।
কলেজে ভর্তির কাজ চলায় আমাদের ক্লাস দুটোর চেয়ে বেশি হচ্ছে না। এই সময়টুকুতে আমি কেবল বিগত সময়ের কথাই ভাবছিলাম। এটেনটিভ ছেলেটি আজ আমার কারণেই হয়তো কলেজে আসেনি। আমি আর কিছুই করব না। প্লিজ, চলে এসো… আমার মন অজান্তেই আওড়াতে লাগল।
ছুটির পর আমাকে একটি মেয়ে ডাকল। আমি পেছনে ফিরে দেখলাম, কালকের সে মেয়েটি, যে কানে হ্যাডফোন গুঁজেছিল। সে এসে বলল, “আমি শুনলাম, তোমাদের দুই বোনের জন্য ইংলিশের টিউটর খুঁজে পেয়েছ?”
“হ্যাঁ”
“নাম কী ওই স্যারের?”
“সজীব আহমেদ।”
“আমি কি তোমাদের সাথে পড়তে পারব?”
সে? কানে এখনের মতোই হ্যাডফোন গুঁজে পড়বে? “আজ থেকে আমরা পড়ছি। তুমি যদি আমাদের বাসায় আসো, তবে স্যারের জন্য অনেক সুবিধা হবে। কিছু মনে করো না, হ্যাডফোন কি সবসময় গুঁজে রাখ?”
“হ্যাঁ, তবে প্রাইভেটের সময় না। কালকের ক্লাসটা বোরিং লাগছিল বলেই। বাই দ্যা ওয়ে, আমার নাম মৌমিতা।”
“মৌমিতা। আমাদের বাসা চিনবে তো?”
“কে না চেনে? বিজন্যাস টাইকোন আসগর আঙ্কেলের মেয়ে তোমরা।”
“ঠিক আছে। বিকেল সাড়ে চারটায় দেখা হবে।”
“ওকে।”
আমরা কথা শেষ করার পর সাঈদ দৌড়ে এলো। মৌমিতার সাথে কথা বলার পর সে হঠাৎ আমাকে লক্ষ করে বলল, “এই, আমাদের বিজ্ঞানের স্টুডেন্টের ওপর নবীন বরণ অনুষ্ঠানের অর্ধেক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ফিজিক্সের ম্যাম হুমকি দিয়েছেন, অংশ না নিলে মার্কস কাটবেন। তুমিও কী দায়িত্ব নেবে?”
“প্ল্যান করা যাক।”
অনুষ্ঠানটা পরশু করতে হবে। তাই আমরা এখন থেকে লেগে পড়লাম। প্রথমে চাঁদার একটা লিস্ট করি। প্রতিটা বিভাগ থেকে মোট কত টাকা উঠবে তা হিসাব করে অনুষ্ঠানের কার্যক্রমের কথা ভাবতে লাগলাম।
ফারহা, বিজ্ঞানের লম্বা মেয়েটি বলল, “এটুকু টাকায় কি সম্ভব হবে?”
সাঈদ বলল, “বেসরকারি কলেজের কাছে বেশিকিছু আশা করা যায় না। প্রিন্সিপ্যাল স্রেফ ব্যানারই দেবেন।”
আমি বিরক্ত প্রকাশ করলাম। সরকারি কলেজ থাকতে আসিয়াকে এখানেই কেন ভর্তি করা হয়েছে? ল্যাবের ভালো সুবিধা নেই। ক্লাসের তেমন নিয়ম নেই। এমন অবস্থায় পড়াশোনা হয় কী করে? আমাদের আগের কলেজের অবস্থা এর চেয়েও খারাপ ছিল। বাসায় এসে আসিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, “এখানে কি কোনো সরকারি কলেজ নেই?”
“আছে, একটু দূরে, শহরের দিকে। এদিকে এটুকুই আশা করা যায়।”
বিকেলের দিকে সজীব স্যার এলেন। তিনি হয়তো আবির স্যারেরই সমবয়সী। তাঁর চেয়ে আরেকটু লম্বা। গায়ের রং শ্যামলা। চোখগুলো কিছুটা ভোলা। মাথায় কুঁকড়ানো কিন্তু মানানসই একগাদা চুল। ঘাড় তাঁর চওড়া। তিনি যখন বসলেন, তখন তার পাঁজরের দিক থেকে মাংসপেশির মোচড়ানোর আওয়াজ পেলাম। বসার পর তিনি ঘাড়কে একাঁত-ওকাঁত করে দুইবার গলার হাড় দিয়ে শব্দ করলেন। সম্ভবত তাঁর হাতের মাত্র এক থাবায় আমি শেষ হয়ে যাব। তাঁর হাতের শক্ত মাংসপেশির আকার শার্টের হাতার ওপর থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। তাঁর এসব দেখে শুরুতেই আমি ভয় পেয়ে গেলাম। কিন্তু যখন আমার নাম জিজ্ঞেস করলেন…
“তোমার নাম কী যেন বলেছিলে?” স্যারের কণ্ঠ যতটা গম্ভীর আর কঠিন হবে ভেবেছিলাম, ততটা নয়। গাম্ভীর্যের মাঝে কোমলতা আছে। ভয়টা কমে এলো।
“আলিয়া। আলিয়া সিকদার।”
“তুমি?”
“আসিয়া আসগর।”
“দুইজন বোন তো?”
“হু, দুইজন দুই মায়ের।” আমি সরাসরি বলেই ফেললাম, “আমার নামে আসগর ছিল। মা তা কেটে পরবর্তীতে নানুর নামটা দিয়েছেন।”
মৌমিতাও এলো। তিনি তার সাথে পরিচিত হয়ে আমাদের সমস্যার কথা জিজ্ঞেস করলেন। আমরা অধ্যায়গুলো দেখিয়ে দেই। তিনি পড়ানো শুরু করলেন। তিনি আবির স্যারের মতোই ভালো পড়ান। তাঁকে দেখে মনে হয় না, তিনি বিবাহিত। দুই বছর আগে তাঁর বিয়ে হয়েছে। আবির স্যারেরও। কারণটা কী? তাঁদের কি লাভ ম্যারেজ হয়েছে? লাভ ম্যারেজ কি ভালো? যদি আমি আমার প্রায় হতে যাওয়া এরেঞ্জ ম্যারেজের কথা ভাবি, তবে লাভ ম্যারেজ এরচেয়ে বহুগুণে ভালো। অন্তত মনের মতো একটা মানুষকে পাওয়া যায়। পরের জীবন যেমনই হোক, ওই মনের মানুষটির সাথে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করে কাটানো যাবে।
সজীব স্যারদের শহরে বাসা আছে। কিন্তু তাঁরা এখানে থাকেন। এখানে কোথায় থাকেন, তা স্পষ্ট করে বলছেন না। শহরে সুবিধা একটু বেশি হওয়ার কথা। তাঁরা এই ছোট নির্জন গ্রামটিতে কী করছেন? কথাগুলো জিজ্ঞেস করার সময় তিনি কিছুটা ইতস্তত করেছিলেন। বললেন, ইচ্ছের বশেই থাকেন। কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি, তিনি এই মিথ্যেটা বিবেকে তৈরি করতে গিয়েই ইতস্তত করেছেন। আমি যখন তাঁকে চারটা পঁচিশ মিনিটে কল দেই, তখন তিনি বাসায় ছিলেন। বরাবর সাড়ে চারটায় তিনি এখানে এসেছিলেন। পাঁচ মিনিটের দূরত্বে বাইকে করে কোত্থেকে এসেছেন? আশেপাশেই কি থাকেন?
তিনি যাওয়ার পর আমি নিজেকে বই নিয়ে ব্যস্ত রাখলাম। আসিয়া তার পারিবারিক ফটো এলবামটা দেখিয়েছে। আজকের রাতে আমি আবারও কাল রাতের স্বপ্নটা দেখি। আমার এই অবচেতন মনের চিন্তা কবে দূর হবে? কবে আমি শান্তিতে ঘুমাতে পারব?
পরদিন কলেজে গিয়ে আবারও হতাশ হই। এবার ক্লাস একটাই হয়েছে। অন্যটার সময়টুকু আমরা আয়োজনের দিকে লাগিয়ে দিলাম। সবার কাছ থেকে চাঁদা তোলা হলে হিসাব করে দেখলাম, টাকা একজনের বেশি হয়েছে। সাঈদ বলল, এই টাকাগুলো ধ্রুবের পক্ষ থেকে সেই অ্যাড করেছে। তাহলে ধ্রুবের কলেজে আসার সম্ভাবনা আছে। আমি ঠোঁট কামড়ালাম।
আজ ঘুমানোর পর আমি স্বপ্ন দেখিনি। তবে জঙ্গলের ভেতরের আঁধারটা আমি রীতিমতোই দেখেছিলাম। এই ভয়ঙ্কর আঁধার কোন জঙ্গলে আছে? নাকি আমার মস্তিষ্কই ওই আঁধার সৃষ্টি করেছে? কিন্তু আমি গাছগুলোকে চিনি। ঝোপঝাড়গুলোকে চিনি। আমি বেলকনি থেকে দেখেছি রাস্তার ওধারের এই জিনিসগুলোকে। তবে আমি কি নিজেই ওই জিনিসগুলোকে আঁধারে স্থাপন করে ভয় পাচ্ছি?
পরের দিন তাড়াতাড়ি কলেজে যেতে হলো। আমি, আসিয়া, সাঈদ, তানিয়া, ফারহা, রুমন, হাসীব সকলে আয়োজনে প্রধান ছিলাম। নয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত কাজ করার পর আমি হঠাৎ ধ্রুবকে দেখতে পাই। সে কি সত্যিই এসেছে? সে এসে আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার পর আমার ভ্রম ভাঙল। এটা তাহলে বাস্তব। সেদিনের ভয়টা ধ্রুবের চেহারায় এখন আর নেই দেখে ভালো লাগল। সে যখন কাজের সময় পাশে ছিল, তখন আমি ওকে ইগনোর করার চেষ্টা করলাম। আমি চাই না, ও ওর ক্লাসগুলো মিস দিক।
কে যেন সুরেলা কোমল কণ্ঠে বলল, “ইংলিশে প্রোগ্রেস কেমন হচ্ছে?”
আমি চমকে ধ্রুবের দিকে তাকাই। সে আমার সাথে কথা বলছে? নিজেকে সংযত করে বললাম, “ওই দুর্বলতার কথা তুমি কী করে জানো?”
“সেদিন আবির স্যারকে বলতে শুনেছিলাম।”
“ওহ্। ওটার জন্য টিউটর রাখা হয়েছে।’
সে ইতস্তত করে বলল, “তুমি এরপরের দিনের অদ্ভুত কাণ্ডটা নিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবে না? আমি তো খারাপ ছেলেও হতে পারি। তাই না?”
“খারাপ ছেলেরা হয়তো ওভাবে হিপনোটাইজ করে না। সরাসরি একশন নেয়।”
“হিপনোটাইজ?”
“না, কিছু না।”
“বলো, সমস্যা নেই।”
“সম্মোহন। তুমি কি আমার চোখ দেখে ওটাই করতে চেয়েছিলে?”
“না তো।”
“তাহলে ওটা কী ছিল? টেলিপ্যাথি?”
“ওই ধরনেরই।”
আমরা খুব নিচু স্বরে কথা বলছিলাম। কেউ কেউ লক্ষ করলেও তাদের ধ্রুব পাত্তা দেয়নি। “তা কিসের মাধ্যমে করো?”
“চোখের মাধ্যমে। চোখের মাধ্যমে না হলে কারো অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে। আর যদি সিরিয়াস কোনো কথা জানতে চাই, তবে সরাসরি হাত ধরি।”
“আর কীভাবে এসব করো?”
“চোখের মাধ্যমটা তোমাকে বুঝিয়ে বলতে পারব না। এটা আমার কাছে সবচেয়ে সহজ। কীভাবে করে ফেলি নিজেই বুঝতে পারি না। অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমটার জন্য অভ্যাস লাগে। এটা স্বভাবত তখনই করি, যখন কোনো মানুষের মস্তিষ্ক দুর্বল, সাধারণত যারা রক্তকে ভয় পায়, যাদের মস্তিষ্ক চোখ দেখে পড়তে পারি না। আর শেষেরটা হাতের মাধ্যমে, আগের দুটো অকৃতকার্য হলে। হাতের মাধ্যমে আমি দুটো মস্তিষ্কে শিরার মাধ্যমে কমিউনিকেট করি। এটা দক্ষতার ব্যাপার।”
জিজ্ঞেস করতে চাইলাম, এসবও কি সম্ভব? না। আমি ওর অদ্ভুত ব্যাপারে প্রশ্ন করব না। “তুমি বললে, সিরিয়াস কিছু জানার জন্যই শেষেরটা করো। আমার কাছে কী জানতে চেয়েছিলে?”
“আমার সম্বন্ধে কী ভাবো।”
“ওটা তো আমি সরাসরিই বলতে পারি।”
“তাই?” সে অবাক হলো।
“হ্যাঁ, আমি ভাবছিলাম, তোমার রূপটা খুবই অমানবিক। কিছু কিছু ক্ষেত্রে তোমার কাজ বেমানান লাগে। ধরো, তোমার ভাই আর তোমার মাঝের তফাৎ।”
আমি সত্য বলে দিয়েছি বিধায় ওকে নিশ্চিন্ত দেখাল। “আমার রূপে আমার কোনো হাত নেই। মা-বাবার কাছ থেকেই পেয়েছি। ভাইয়া, ও আসলে আমার ভাই নয়। মানে আমি ওর পরিবারের পালিত সন্তান।”
“ওহ্। আর সেদিন তুমি বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলে। আমি যখন গেইট পর্যন্ত এসে পেছনে ফিরি, তুমি ততক্ষণে উধাও হয়ে গিয়েছিলে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডে কীভাবে সম্ভব?” শিট! প্রশ্নটা করা উচিত হয়নি।
“আমি তোমার পাশ দিয়েই গিয়েছি। তুমি লক্ষ করোনি। আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম না। তোমার পিছু পিছু গেইট পর্যন্ত গিয়েছি। তুমি যখন কলেজের দিকে ফিরলে, তখন ততক্ষণে আমি তোমার পাশ কাটিয়ে গেইট অতিক্রম করে ফেলেছিলাম।”
আর আমি কেবল কলেজের দিকেই না, সাথে সাথে চারিদিকে চোখ ঘুরিয়ে ছিলাম। কোথাও তোমার অস্তিত্ব পাইনি। কথাগুলো সরাসরি বলতে না পেরে আমি ঠোঁট কামড়ালাম। ধ্রুব মিটিমিটি হাসছে।
“কী হয়েছে?”
“তোমার অনেক কনফিউশন এখনও দূর হয়নি। তাই না?”
হ্যাঁ। আমি কিছু বললাম না।
“দেখ, একটা চুক্তি করা যায় না? তুমি কী চাও তা বলো, আমি দেওয়ার চেষ্টা করব। পরিবর্তে তুমি আমাকে নিয়ে বিশ্লেষণ করা বন্ধ করে দাও। মানে এই ধরনের ইনভেস্টিগেশন বন্ধ করে দেবে। আমি মিথ্যা বলতে পারি না তাই বলছি। বলো, তুমি কী চাও? এর পরিবর্তে তোমায় কী দেব?”
আমি একদণ্ডও ভাবলাম না, “আমি তোমার বন্ধু হতে চাই। কেবল বন্ধু।” হ্যাঁ, বন্ধু হিসেবে তুমি পাশে থাকলে আমি অন্তত আমার দুঃস্বপ্ন থেকে দূরে থাকব।
ধ্রুব নীরব রইল।
(চলবে..)
লেখা: ফারিয়া কাউছার

এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি মাসে জিতে নিন নগদ টাকা এবং বই সামগ্রী উপহার।
শুধুমাত্র আপনার লেখা মানসম্মত গল্প/কবিতাগুলোই আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হবে। এবং সেই সাথে আপনাদের জন্য থাকছে আকর্ষণীয় পুরষ্কার।

গল্পপোকার এবারের আয়োজন
ধারাবাহিক গল্প প্রতিযোগিতা

◆লেখক ৬ জন পাবে ৫০০ টাকা করে মোট ৩০০০ টাকা
◆পাঠক ২ জন পাবে ৫০০ টাকা করে ১০০০ টাকা।

আমাদের গল্প পোকা ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এই লিংকে ক্লিক করুন: https://www.facebook.com/groups/golpopoka/?ref=share