তিনশত পয়ষট্টি পৃষ্ঠা পর্ব-০২

0
426

#তিনশত_পয়ষট্টি_পৃষ্ঠা
#মুসফিরাত_জান্নাত
#পর্বসংখ্যা_০২

বরের পাশে আধুনিক পোশাকে সজ্জিত নীলিকে দেখে হৃদয় ভেঙে খান খান হয়ে যায় প্রিয়তার।যে মানুষটার অপেক্ষায় সে দু’টো বছর ধরে অতি যত্নে তীলে তীলে ভালোবাসার প্রাসাদ সাজালো তা মুহুর্তেই চুরমার হয়ে যায়।তার আঘাতে হৃদয়ে র”ক্তক্ষরণ হয়,চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসতে চায়।কিন্তু সেসবকে আশকারা দেয় না সে।যে মানুষ তার ভালোবাসার প্রাসাদে সানন্দে আগমন না করে দূর থেকেই ভাঙার অস্ত্র নিয়ে ফিরেছে, সে মানুষের জন্য তার চোখের মূল্যবান পানি ফেলবে না সে।বরং তাকে ভাঙতে কেও ইট ছুঁড়ে মা’রলে সেও উল্টো পাটকেল ছুঁড়ে দিবে।মন ভাঙার সব যন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে সে নির্লিপ্ত স্বরে বলে ওঠে,

“দেশে ফিরেই দেখছি হুবু বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরঘুর করা শুরু করেছেন।এয়ারপোর্ট থেকে সঙ্গী হলো নাকি!”

প্রিয়তার প্রশ্নে তায়্যেব তার সামনে দাঁড়ানো তার বঁধুর দিকে পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকালো।কেমন অগোছালো ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে মেয়েটি।তারপর নীলিকে দেখলো সে।সে আসবে বলে নিজেকে কত পরিপাটি করেছে নীলি।নিজের বউ ও হবু বউয়ের মাঝের ফারাক নিজের চোখে আবারও ধরা পড়লো তার।সে প্রিয়তার প্রশ্নের জবাব না দিয়ে কেবল ক্লান্ত স্বরে বললো,

“আমার বিশ্রাম দরকার আম্মু।অহেতুক কোনো কথা আমি শুনতে চাচ্ছি না।মানুষ জনকে তাদের সীমা বুঝিয়ে দিও।”

কথাটা বলে গটগট করে নিজের ঘরে চলে গেলো তায়্যেব।সেদিকে তাকিয়ে ক্ষীন হাসি হেসে নীলি পাশে থেকে বলে ওঠে,

“ফর ইওর কাইন্ড ইনফরমেশন, আমি এয়ারপোর্ট থেকে নয় ইউকে থেকেই তার সঙ্গী হয়েছি।আমিও যে তার সাথে সেখানে পড়তে গিয়েছিলাম ভুলে গিয়েছো?সে যেতেই পারো।তা তোমার বর এটা কি বলে গেলো বলোতো!তবুও তুমি কিসের আশায় এখানে আছো?কোনো স্বার্থ টার্থ অবশিষ্ট আছে কি?নাকি আমাদের বিয়ে নিজ চোখে দেখে বাড়ি ফিরতে চাও, কোনটা?”

কথাটা শুনে প্রিয়তা ব্যঙ্গ করে জবাব দেয়,

“এতটা দুর্দিনও আমার আসেনি আপু, যে কোনো কিছুর আশায় থাকতে হবে।ওসব স্বার্থের আশা তো আপনাদের থাকে।আর রইলো আপনাদের বিয়ে দেখা।করছেন তো দ্বিতীয় পাত্র বিয়ে।এটা এত খুশি হয়ে দেখার কিছু নেই।”

কথাটা শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠে নীলি।দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

“তোমার কথার এই শ্রী’র জন্যই তায়্যেব ছাড়তে চাইছে তোমাকে।স্বামীকে সম্মান করতে জানে না।অভদ্র মেয়ে মানুষ!”

প্রিয়তা এবার তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,

“আমি আসলেই অভদ্র মেয়ে মানুষ।আসলে কি বলুন তো, অন্যের জামাইয়ের পিছনে পড়ে থাকার মতো ভদ্রতা শেখা হয়নি আমার।বাবা মা বেঁচে নেই তো।এসব কে শিখাবে!”

কথাটা বলে নীলির বাবা মাকে এক পলক দেখে সেখান থেকে প্রস্থান করে প্রিয়তা।এই কাল না’গীনির মুখ আর দেখতে চায় না সে।এমনিতেও সব বিষিয়ে উঠেছে।নিজেকে হালকা করার জন্য একটু সময় দরকার।অপরদিকে নীলি তার যাত্রাপথে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে।প্রিয়তা যে কথার পৃষ্ঠে কথা বলতে শিখে গিয়েছে তা তার জানা ছিলো না।নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে নিজেদের ফ্লাটের দিকে যাত্রা করে নীলি।একই বিল্ডিং এর পঞ্চম ফ্লোর এ তায়্যেবরা ও সপ্তম ফ্লোরে নীলিরা থাকে।তাই এক সাথেই এতদূর আসতে পেরেছে তারা।সময়টা ভালোই কেটেছে।কিন্তু বাসার সামনে এসে মুডটা নষ্ট হয়ে গেলো।

______
দুই বছর বিদেশ থেকে আরও একটা উচ্চ ডিগ্রি অর্জন করে দেশে ফিরেছে তায়্যেব।তাকে দেখতে এখন এ বাড়ি নিকট আত্মীয়দের ভীর।সেই ভীরকে উপেক্ষা করে তায়্যেবের রুমে দুই পক্ষের মুরুব্বিরা জড়ো হয়েছে। প্রিয়তার পক্ষের মুরুব্বী বলতে কেবল তার বড় ভাই উপস্থিত আছে।তাদের আলোচনার বিষয়বস্তু তায়্যেবের হুট করে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ।বড়দের মাঝে প্রিয়তা নিজে কোনো কথা বললো না।তার হয়ে তার বড় ভাই বোনের স্বামীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,

“তুমি আসলে কি চাইছো বলো তো!এসব কি করছো তুমি!বিয়েটা কি ছেলেখেলা নাকি?একবার ইচ্ছে হচ্ছে তো বিয়ে করলে আবার মন চাইলে ছাড়তে চাইছো।এগুলো কি ধরনের ছেলেমানুষি খেলা?”

তার কথার বিপরীতে তায়েব ভাবলেশহীন কণ্ঠে জবাবে বলে,

“আমি কোনো ছেলেমানুষী করছি না।বরং বাস্তব যা তাই বলছি এবং করছি।”

তার এমন গা ছাড়া ভাব রাগান্বিত করে তোলে প্রিয়তার ভাইকে।এবার সে রুষ্ট কন্ঠে বলে,

“তো তোমার সেই বাস্তব টা কি তায়্যেব?অন্যের জীবন নিয়ে খেলা?কিন্তু তুমিও জেনে রাখো আমার বোনকে নিয়ে খেলা এত সহজ নয়।”

তায়্যেব এবার পূর্ণ দৃষ্টিতে প্রিয়তার ভাই প্রান্তর দিকে তাকায়।গম্ভীর হয়ে বলে,

“আমি কারো জীবন নিয়ে খেলছি না প্রান্ত ভাই।এটা আপনিও ভালো জানেন।আমি বরং মুক্তি দিচ্ছি তাকে।বিয়ের পর এক বছর আমি এ বাড়িতে ছিলাম।একটা বছর তো কম সময় নয়।অথচ তার মাঝেও তার সাথে আমার বনিবনা হয়নি।সে আমাকে একটা বার স্পর্শ অবধি করতে দেয়নি।বরং পালিয়ে বেরিয়েছে।এভাবে কখনো সংসার হয় না।কোনো পুরুষ এভাবে থাকতে পারে না।আমিও আর এভাবে মানিয়ে চলতে পারবো না।আমার এখানে থাকলে তারও যেহেতু কষ্ট হবে তাই তাকে ডিভোর্স দেওয়া যুক্তিযুক্ত মনে করছি।আর আমি নীলিকে বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছি বছর দুই আগেই।সে শিক্ষিতা,স্মার্ট ও আধুনিকা।আমরা দুইজন একই প্রফেশনের।তারচেয়ে বড় কথা আমি বিবাহিত হওয়া সত্বেও সে আমাকে বিয়ে করতে রাজী।সে আগে থেকেই আমাকে ভালোবাসে।এর চেয়ে বেটার অপশন আমি আর একটা পাবো না।এটাই বাস্তবতা।”

এসব শোনার পর বিষাক্ত এক অনুভুতির গন্ধ পেলো প্রিয়তা।লোকটার প্রতি সব অনুভুতি ক্ষণকালের জন্য উবে গেলো তার।শুধুমাত্র দৈহিক সম্পর্ক হয়নি বলে আরেকটা বিয়ে করবে?সে তো তখন ছোট ছিলো।এসব ভয় পেতো।পাওয়াটা অস্বাভাবিকও নয়।এতটুক জ্ঞান কি এই লোকের নেই।এমন মানুষের সাথে সংসার করার, নিজের অধিকার রাখার ইচ্ছেটাও উবে গেলো।যেখানে সম্মান নেই সেখানে জোর করে ঘর টিকিয়ে রাখার মানে হয় না।তাই তো একদম নিরব হয়ে রইলো সে।এদিকে তায়্যেবের কথাটা শুনে বিতৃষ্ণায় মুখ ছেয়ে গেলো জামেলা বানুর।মায়ের সামনে মুখে কোনো লাগাম নেই, এ কেমন ছেলে পেটে ধরেছেন তিনি।রাগে ঘোঁৎঘোঁৎ করে তিনি বলেন,

“এই কথা তোর আগে মাথায় ছিলো না?প্রিয়তার বয়স কম ছিলো।তার উপর সে ছোট থেকেই একটু অন্যরকম।আমরা তাকে বিয়ে করার আগে হাজার বার বারণ করে বুঝিয়েছিলাম তোকে।তখন তো কিছু মানিস নি। জিদ করে মেয়েটাকে বিয়ে করলি তখন।আর এখন সেই ওকেই ছাড়তে চাইছিস!আমাদের কথা না হয় নাই ভাবলি।সে কি খেলার পুতুল?বাপ মা ম’রা মেয়ের ডিভোর্স হলে তার কি হবে সে খেয়াল আছে?আচ্ছা মানলাম প্রিয়তার সাথে তোর বনিবনা হয়নি কখনো।তোর আর মানিয়ে নেওয়া সম্ভব না, তুই নীলিকে বিয়ে করে নতুন করে সংসার করবি। ঠিক আছে আমরাও মেনে নিয়েছি।কিন্তু প্রিয়তাকে ডিভোর্স দেওয়ার কি দরকার?দুই বউ নিয়ে সংসার করা যায় না?”

প্রতিউত্তরে তায়্যেব নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে বলে,

“আম্মু, প্রিয়তাকে রাখতে আমার কোনো আপত্তি নেই।সে যদি থাকতে চায় এখনের মতই থাকতে পারে।ওকে নিয়ে মাথা ঘামাবো না আমি।আমি তো শুধু বলেছি আমি…”

তায়্যেব তার কথা সম্পূর্ণ করতে পারে না। তার আগেই নীলি প্রতিবাদ করে বলে,

“কিন্তু আমার আপত্তি আছে এতে।আমি কখনোই সতীনের সংসার করবো না।হয় সে মেয়েকে তুমি ডিভোর্স দিবে না হয় আমি তোমাকে বিয়ে করবো না।অন্য মেয়ে খুঁজে নিও তুমি।”

জামেলা বানু নীলির দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে বলে,

“একি কথা মেয়ে।বিবাহিত ছেলেকে বিয়ে করবে আর সতীনের সাথে ঘর করতে পারবে না?তায়্যেব যখন তোমাকে সেচ্ছায় বিয়ে করতে চাইছে তখন তুমিই তায়্যেবের প্রথম গুরুত্ব হয়ে থাকবে।প্রিয়তা কেবল থাকার মত একটা ঘর পেলো।মেয়েটার এই হলেই ঢের।তাতেও আপত্তি!”

প্রান্ত এবার তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে ওঠে,

“তার বরই যখন অন্য কারো হতে চলেছে , তখন তার উছিলায় আমার বোনের ঘর দিয়ে কি হবে আন্টি?তার থাকার জন্য তার ভাইয়ের বাড়ি অবশিষ্ট আছে।বর বিহীন ঘরে তার থাকতে হবে না।”

প্রান্তর এমন কথায় তার দিকে দৃষ্টি দেয় সবাই।হুট করে তার এমন কথা বেশ চমকে দিয়েছে তাদেরকে।জামেলা বানু সচকিত দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে বলে,

“তুমি কি বলো? চলে যেতে চাইছো?”

প্রিয়তা ধাতস্থ কণ্ঠে বললো,

“জ্বী আম্মা।এখানে থেকে বিনা পয়সায় নাটক দেখার সখ বা সময় কোনোটাই আমার নেই।তারচেয়ে নিজেকে গুছিয়ে নিতে সময় দেওয়া দরকার।”

প্রিয়তার স্বীকারোক্তি অবাক করে দিলো সবাইকে।একটু আগেও যে প্রিয়তা নিজ অধিকার ত্যাগ করে এ বাড়ি থেকে কোথাও সড়বে না বলেছিলো, ক্ষণকালের ব্যবধানে সেই বলছে এ ঘর তার চাই না?প্রিয়তার এমন কথায় উপমাও অবাক হয়ে গেলো।প্রিয়তা ও তার ভাই যে হুট করে নিজের সিদ্ধান্ত বদলে ফেলবে এটা ভাবেনি সে নিজেও।তারা তো ভেবেছিলো মেয়েটির যাওয়ার জায়গা নেই বলে এখানেই মাটি খা’মচে পড়ে রইবে।যেভাবে ঠিক এতদিন পড়ে ছিলো সেইভাবে।কিন্তু তাদের সেই ভাবনা যেনো ভুল প্রমাণিত হলো প্রান্তের কথায়।বড় বড় চোখ করে তারা তাকিয়ে রইলো।কেবল নির্লিপ্ত তায়্যেব চোখ ফিরিয়ে নিলো।তার ভাব ভঙ্গিতেই স্পষ্ট এমন কিছু হবে সে নিশ্চিত ছিলো।

পুত্রবধুর উত্তরে নিরব হয়ে যায় জামেলা।এমন একটা পরিস্থিতি যেখানে তার ছেলেই মেয়েটাকে রাখতে চায় না সেখানে সে ঠিক কি বলবে বুঝেও পায় না।নিজ স্বামী হয়ে এভাবে ভরা আসরে বলছে এই মেয়েকে দিয়ে সে সুখী নয়,একটা মেয়ের জন্য এমন পরিস্থিতি যে কতটা কষ্টকর তা তিনি নিজে কখনো উপলব্ধি না করলেও আজ সচক্ষে দেখতে পাচ্ছে যেনো।এতেই নিজেকে কেমন অসহায় লাগছে তাঁর।জামেলা বানুর কেবলই মনে হচ্ছে যদি তার ক্ষমতা থাকতো তবে সে সব ঘটনা পিছিয়ে দিতো।ঘটনার মোড় টেনে থামিয়ে দিত বছর তিনেক আগে।যেখানে তায়্যেব প্রিয়তাকে বিয়ে করে কত সন্তষ্ট চিত্তে ছিলো।সব সময় বউকে কাছে পাশে রাখতে চাইতো।আর প্রিয়তা তার থেকে পালিয়ে বেড়াতো।এসব দেখে তখন কতই না বিরক্ত হতেন তিনি।অথচ এই অবেলার স্মৃতিতে ওসবই মধুর ঠেকছে।মনে হচ্ছে দিন গুলো ফিরে আসুক।অথচ যে দিন একবার যায় তা কখনো ফিরে আসে না।যদি আসতো তবে সবাই যে তার ভুল গুলো মুছে ফেলতো।তপ্ত শ্বাস ছাড়ে জামেলা বানু।প্রান্তর দিকে তাকাতে সে আবারও বলে,

“শুনলেন তো ওর মনোভাব।এখন আর কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।ওকে আজই সঙ্গে নিয়ে যাব আমি।তাকে তার বিয়ের সময় দেওয়া মায়ের স্মৃতি ধারণ করা গহনা গুলো ফিরিয়ে দিয়ে দেন।সাথে আজই সব মিটমাট করে নেওয়া প্রয়োজন।”

কথাটা বলে আড়চোখে তায়্যেবের দিকে তাকালো প্রান্ত।লোকটি এখনো ওভাবেই বিছানায় বসে রয়েছে।তাকে দেখা মাত্র চোখের দৃষ্টি নামিয়ে ফেললো সে।প্রিয়তা ও তায়্যেবের মাঝের সম্পর্কের ফারাক একসময় সবার দৃষ্টিতে এসেছিলো।প্রিয়তার যখন বিয়ে হয় তখন তার বয়স পনেরো মাত্র।ওই বয়সে গ্রামের অনেক মেয়ে সংসারে জড়িয়ে গেলেও প্রিয়তা স্বামী বুঝতো না।কেবলই তার থেকে পালানোর বাহানা খুঁজতো।তার আকাশ ভালোলাগতো,বাতাস ভালোলাগতো।ভালোলাগতো ঝুম বৃষ্টিতে ছাদে ভিজতে।মাঝে মাঝে তার কড়া রোদও দেখতে ভালোলাগতো।এই শহরের আনাচ কানাচে বিকেল নামা মন ভরে দেখতে ভালোলাগতো তার।অথচ তার স্বামী চাইতো প্রিয়তা এসব রেখে তার সান্নিধ্য থাকুক।আর পাঁচ দশটা স্বামী যেমন চায় ঠিক তেমন।যেটা প্রিয়তার জন্য অসহ্য লাগতো।ভয় পেতো সে তায়্যেবকে।কিন্তু এখনও কি সেই অনুভুতি আছে?জানে না প্রান্ত।জানে না অন্য কেও।প্রিয়তাকে দেখে এখন কিছু আঁচ করাও যায় না।তাদের মন মস্তিষ্ক বলে এই তিনটা বছরে আঠারোতে পদার্পণ করেছে সে।এখন তো স্বামী বোঝার কথা।হয়তো বোঝেও সে।অথচ তার স্বামীই আর তাকে চায় না।এই সবটা জানার পর জোর করে এই সংসার টিকিয়ে রাখতে চাওয়ার মতো বোকামি নিজ ভাই হয়ে কিভাবে করবে সে?তার জীবনে আপন বলতে আছেই কেবল এই একটা বোন।এই বোনটাকে সে অবহেলায় ফেলে যেতো পারে না।তাই নিজের উচিত কর্ম বুঝে নিয়ে সে ক্লান্ত স্বরে বললো,

“কারো অনাগত সংসারে দুঃখের কাঁ’টা হয়ে ফুটে থাকবে না আমার বোন।নিশ্চিন্ত থাকতে পারো তুমি।ডিভোর্স পেপারও সে পাঠিয়ে দিবে।কিন্তু তার কাবিন নামার পাওনাটা..।”

“দিয়ে দিবো।”

প্রান্তর কথার সমাপ্তি নিজেই টেনে দিলো তায়্যেব।ভাইয়ের কথায় এভাবে ফুল স্টপ পড়ায় প্রিয়তা বুঝে গেলো এ বাড়ি আর তার কোনো স্থান নেই। একটা তপ্ত শ্বাস ছাড়ে প্রিয়তা।অতপর এই ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।একে একে সবাই বেরিয়ে যায়।তায়্যেব সেদিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে।প্রিয়তার বিধ্বস্ত মুখখানা দেখে হাহাকার করে উঠেছিলো হৃদয়।এইতো এই মুখের অধিকারীনিকেই জীবনের প্রথম বার ভালোবেসেছিলো সে।কত বাধা বিপত্তিকে উপেক্ষা করে বিয়েও করেছিলো।সংসার জীবনের তিনটি বছর তার সাথে আবদ্ধ থেকে এখন নিজে থেকেই সড়িয়ে দিতে হলো তাকে। জীবন এ কেমন খেলা খেললো তার সাথে! সে ঠাই বসে থেকে নিজের ভালোবাসার নিরব বিদায় দেখে গেলো।বুকের বা পাশটায় পুরাতন স্মৃতিগুলো কেমন টনটন করে উঠলো।বুক চিরে বেরিয়ে এলো একটি দীর্ঘশ্বাস।বুকের যন্ত্রণার কাতরানো স্বরে মনে মনে সে বললো,

“আমি তোমাকে ভীষণ ভালোবেসেছিলাম প্রিয়তা।অনেক শখ করে বিয়ে করেছিলাম তোমায়।অথচ আমার ভাগ্য দেখো, তোমাকে নিজের করে পেয়েও নিজের নামে বন্দী রাখতে পারলাম না।ঠিক পালিয়ে গেলে তুমি।আমিও নিজ হাতে উড়িয়ে দিলাম।”

#চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে