তিক্ত ভালোবাসা পর্ব-০১

0
3457

#তিক্ত_ভালোবাসা
#ক্যাটাগরিঃ সাইকো থ্রিলিক
#Tafsia_Meghla
#সূচনা পর্ব

ভাইয়ের রক্ত মাখা লাশের সামনে বসে আছে স্নিগ্ধা, পাশেই চেয়ারে পায়ের উপর পা তুলে মাথা নিচু করে বসে আছে শোভন৷ শোভনের পাশেই নিচে বসে কান্না করছে রেহানা বেগম (শোভনের মা)!!!
চারোপাশে আত্মীয় স্বজনের ভীর বাড়িতে মানুষ গিজগিজ করছে৷
লাশটা বিচ্ছিরী হয়ে আছে, মনে হচ্ছে কেও খুব খারাপ ভাবে মেরেছে আকাশকে, যার কারনে এমন ভয়াবহ অবস্থা৷
কিন্তু পুলিশ বলেছে এটা এক্সিডেন্ট লাশটা একটা খাদে পেয়েছে৷
স্নিগ্ধার আপন ভাই না হলেও আকাশ ভালোবাসতো স্নিগ্ধাকে৷
ভালোবাসা বললে হয়তো ভুল হবে মুখে ভালোবাসি বলতো কিন্তু স্নিগ্ধা ছিলো আকাশের মোহো৷ মোহো না হলে কাল রাতে ওভাবে স্নিগ্ধা কে একা পেয়ে ধস্তাধস্তি করতো না, কিন্তু স্নিগ্ধা সবসময় নিজের ভাইয়ের মতই দেখতো আকাশ কে৷ অনেকবার স্নিগ্ধা কে প্রেম নিবেদন করেছে স্নিগ্ধা ” না ” করে দিয়েছে প্রতিবার৷
স্নিগ্ধা আকাশেকে বরাবরই অপছন্দ করে কিন্তু এভাবে মৃত্যুটা স্নিগ্ধা ও মানতে পারছে না৷ স্নিগ্ধা ভাবনায় মগ্ন,
—“আকাশের এমন কি করে হলো? এক্সিডেন্ট? সত্যি কি এক্সিডেন্ট এটা?
নাকি খুন? কিন্তু খুন করবে কে? বডিটা কে দেখে পুরোপুরি এক্সিডেন্ট ও বলা যাচ্ছে না খুন ও বলা যাচ্ছে না৷
তাও এমন বিচ্ছিরী ভাবে, হাতের একটা আঙ্গুলও নেই চোখ গুলো খুটিয়ে উঠিয়েছে ঠোঁট গুলো নেই বললেই চলে চেহারা ক্ষত বিক্ষত হয়ে আছে শরীরটাও কোনো দিক ঠিক নেই
ভালো সুস্থ মানুষ হাসি মুখে বের হলো সারা রাত পর সকালে লাশ হয়ে ফিরে এলো৷ ”

স্নিগ্ধা আর এভাবে বসে থাকতে পারছে না লাশটা দেখলেই শরীর শিউরে উঠছে হঠাৎ করে গা ছেড়ে নিচে ঢলে পরে৷
শোভন উত্তেজিত হয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে স্নিগ্ধার গাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলে,
— ” এই স্নিগ্ধা, কি হলো তোর? স্নিগ্ধা?”
স্নিগ্ধার কোনো সারা না পেয়ে উঠিয়ে রুমে নিয়ে আসে৷

চোখ খুলেই স্নিগ্ধা নিজেকে নিজের ঘরে আবিষ্কার করে আশে পাশে কেউ নেই, আশেপাশেও পিনপতন নীরবতা, পরক্ষণেই আকাশের ভয়াবহ লাশের কথা মনে পরতে ভয়ে কুকড়ে উঠে কাপাকাপা পায়ে বিছানা ছেরে উঠে বাইরে আসে৷
খালি বাড়ি দেখে স্নিগ্ধার আরো ভয় করছে৷
— “কোথায় সবাই? আকাশ ভাইয়ার লাশ দাফন কাফন করতে গেলে বাড়ির ছেলেরা যাবে কিন্তু বাকি সবাই কোথায়?”

স্নিগ্ধা এবার কিছুটা সাহস জুগিয়ে নিচে যায় গিয়ে কাউকেই দেখতে পায় না , আবার উপরে এসে নিজের রুমের দিকে পা বাড়াবে তখনি ছাদে কিছু পরার আওয়াজ পেয়ে আতকে উঠে৷
ভয়ে ভয়ে এক পা দুপা করে সিরি বেয়ে চিলে কোঠার দিকে গিয়ে দেখে ছাদের দরজা টা খোলা৷ স্নিগ্ধা ভেবেছে বাড়ির কোন কাজের লোক আছে তাই ছাদের ভিতরে আসে কিন্তু কাউকে দেখতে পায় না পিছনে ফিরে ছাদ থেকে বের হবে তখনি রক্ত মাখা একটা কাগজ স্নিগ্ধার উপর এসে পরে৷

কাগজটা দেখে কাপা কাপা হাতে নিয়ে লেখাটি পরে আতকে উঠে৷ কাগজটিতে লেখা,
— ” হুর পরি!! নেশা তুমি আমার তিক্ত নেশা, যে নেশা মাদকের চেয়ো প্রখোপ তুমি আমার সেরকম নেশা পৃথিবীর সব নেশা থেকে মুক্তির পথ আছে তোমার নেশা থেকে মুক্তির পথ নেই আমার৷ আমি আমার #তিক্ত_ভালোবাসা দিয়ে তোমাকে আপন করবো তুমি শুধু আমার!! তোমার শরীরে হাত কেন তোমার দিকে তাকালেও এর থেকে ভয়াবহ অবস্থা করবো সে যেই হোক না কেন৷ ”

__ তোমার পাগল প্রেমিক❤️

রক্ত মাখা কাগজ টা ছুরে ফেলে জোরে “শোভন ভাইয়া” বলে ডেকে ফুপিয়ে কেদে উঠে তখনই বাগান থেকে মালি চাচা শুনতে পেয়ে দৌড়ে এসে বলে,
— “কি হয়েছে ছোট মা?”

স্নিগ্ধা ফুপিয়ে কাদতে কাদতে বলে,
— “শ শোভন ভাইয়া কোথায়?”

মালি চাচা বলে,
— “বড় বাবায় তো সবাইরে নিয়া আস্রমে গেছে আশ্রমের পাশেই ছোট বাবারে দাফন করা হইছে আজ ছোট বাবার মৃত্যুর তিনদিন হইলো তাই সবাই ওইখানে আশ্রমের বাচ্চাদের খাবার আর পোষাক বিতরন করতে গেছে৷ ”

মালি চাচার কথা শুনে স্নিগ্ধা অবাক, তিন দিন অচেতন ছিলো?
স্নিগ্ধা উঠে চোখ মুখ মুছে কাগজ টা নিয়ে রুমের দিকে হাটা দেয়, সন্ধ্যা গরিয়ে এলো বাড়ির সবাই এখনো আসেনি৷ মন মরা হয়ে বসে আছে স্নিগ্ধা৷
— “কে করলো এমনটা? কে এই পাগল প্রেমিক? কি চাইছে? আকাশের ওই ভুলের জন্য এতো বড় স্বাস্থি?
যে মানুষ কে এমন করে খুন করতে পারে সে আর যাই হোক কাওকে ভালোবাসতে যানে না সে তো নর পিচাশ৷ ”

হঠাৎ দরজার আওয়াজে ধ্যান ভাঙে স্নিগ্ধার দরজায় থাকা ব্যাক্তি টিকে দেখে ঝাপটে জরিয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে উঠে৷ শোভন স্নিগ্ধাকে সামনে ঘুরিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলে,
— “কি হয়েছে স্নিগ্ধা? এভাবে কাদছিস কেন?”

স্নিগ্ধা ফুপিয়ে কেদে বলে,
— “শোভন ভাইয়া আকাশ ভাইয়ার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ি, আমায় শাস্তি দাও৷ ”

শোভন অবাক হয়ে বলে,
— “কি বলছিস?”

স্নিগ্ধা রক্ত মাখা চিরকুট টা শোভনের হাতে দেয় শোভন দেখে চোয়াল শক্ত করে বলে,
— “এর জন্য তুই নিজেকে কেন শাস্তি দিতে বলছিস কেন? তোর কোনো দোষ নেই আর যারা এসব করেছে তারা ঠিক শাস্তি পাবে কিন্তু আপাদত আমাদের কাছে কোনো প্রমান নেই প্রমানের ভিত্তিতেই পুলিশ ইনবেষ্টিগেশন শুরু করে, প্রমান আগে জোগার করতে হবে তুই চিন্তা করিস না পাখি আমি আছি তো৷ ”

শোভনের কথায় অনেকটা স্বস্তি পেলো এখনো শোভন কে জরিয়ে আছে স্নিগ্ধা আপাদত এই যায়গাটা সবচেয়ে বেশি নিরাপদ লাগছে৷
স্নিগ্ধা ছোট বেলা থেকেই মামার বাড়িতেই বড় হয়েছে ছয় বছর থাকা কালিন আকাশের বাবা-মা আর স্নিগ্ধার মা এক্সিডেন্ট এ মারা যায় সেই থেকে স্নিগ্ধা এখানেই থাকে স্নিগ্ধার বাবা কাজের জন্য দেশের বাইরে থাকে মাসে একবার ও মেয়ের সাথে কথা বলার সময় পায় না৷
আর এই বাড়িতে সবার থেকে বেশি কেয়ারিং পার্সন যদি কেও হয় তাহলে শোভনই এই বুকে মাথা রেখে হাজারো বছর পার করে দিতে পারবে স্নিগ্ধা৷

রাত ঘনিয়ে এসেছে বাড়ির সবাই মাত্রই ফিরলো স্নিগ্ধা নিচে এসে দেখে সবাই বসে আছে৷ স্নিগ্ধা নিচে আসতেই স্নিগ্ধার ছোট মামি রাজি ঠেস মেরে বলে,
— “হুস ফিরেছে নবাব জাদির? আচ্ছা স্নিগ্ধা তুই কি সত্যি বেহুস ছিলি নাকি বাড়িতে কাজ করতে হবে তাই ভান করে সুয়ে ছিলি?”

শোভন পানি খাচ্ছিলো পানির গ্লাস টা জোরে টেবিলের উপর রেখে বলে,
— “ছোট কাকি মনি তোমার কি ওর সাথে এভাবে কথা না বললে পেটের ভাত হজম হয় না?”

শোভনের এমন রেগে যাওয়ায় রাজি জেন আরো তেলে বেগুনে জলে যাচ্ছে রাজি ঠেস মেরে বলে,
— “বুঝি না বাবা এই অপয়া মেয়ে কে কিছু বললে তোর এতো লাগে কিসে, জন্মের পর থেকে তো একের পর এক অনর্থ হয়েই যাচ্ছে এই মেয়ের বাপ তো এই মেয়ের মুখটা ঠিক মতো দেখেছে কিনা এটাই সন্দেহ জন্মের পর বাপ বাহানা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যায়, এর ছয় বছর পর মা টা মারা যায় কে যানে এই মেয়ের দোষেই বোধহয় আকাশের এমন এক্সিডেন্ট হয়েছে৷ ”

শোভন রেগে গিয়ে বলে,
— “কাকি মনি আকাশ খু,,,৷ ”

শোভনের মা রেহানা বুঝতে পেরেছে ছেলে ঢের রেগে গেছে রাজি কে না থামালে তিন নাম্বার বিশ্ব যুদ্ধ হয়ে যাবে সবারই শোভনের রাগ সম্পর্কে ধারনা আছে তাই নিজেই শোভনকে থামিয়ে রাজি কে উদ্দেশ্য করে বলে,
— ” আহ রাজি, এখন অশান্তি না করলে হয় না? দেখছো কারো মন ভালো না ছেলেটার মৃত্যুর এক সপ্তাহ ও হলো না শুরু করে দিলে অশান্তি৷ ”
রাজি রাগ দেখিয়ে ফুসতে ফুসতে উপরে চলে যায়৷

শোভন ও উপরে চলে যায় একে একে সবাই উপরে চলে যায় স্নিগ্ধা ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বাগানের দিকে চলে যায়৷
বাগানের বেঞ্চিটায় বসে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে, উপর থেকে শোভনের গিটারের টুং টাং শব্দ হচ্ছে৷ এই গিটারের শব্দ প্রতিবারই স্নিগ্ধার মন ভালো করার কারন হয়৷ হঠাৎ করে বাড়ির সব লাইট নিভে যায়৷
ঘুটঘুটে অন্ধকার চারো পাশ কিছুই দেখতে পারছে না স্নিগ্ধার অজানা ভয় কাজ করছে কাপা কাপা পায়ে একপা দুপা এগোতে হঠাৎ কেউ মুখ চেপে আরেক হাত দিয়ে কোমর চেপে ধরে দেয়ালের সাথে মিশিয়ে স্নিগ্ধার গলায় মুখ ডুবায়৷
স্নিগ্ধা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে তাও ব্যাক্তিটি ছারছে না জোরে স্নিগ্ধার গলায় কামড় বসিয়ে দিয়ে ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে,
— “হুরর পরি,,,,,,
এ কেমন নেশায় জরালে আমায়? আমি তো এক মূহুর্তে ও তোমাকে ছাড়া থাকতে পারছি না ইচ্ছে করছে বন্দী পাখির মতো তোমাকেও আমার নিজের খাচায় বন্দী করে রাখি৷
ভালোবাসি হুর পরি খুব বেশি ভালোবাসি,,,,,,,৷ ”

চলবে,,,,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে