তপ্ত সরোবরে পর্ব-০৫

0
678

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

৫.

ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো লাবন্য। ওপাশ থেকে সালামের জবাব আসলে লাবন্য বুঝতে পারে কলটা কে করেছে। ইরফান নিজেই আবার বলল, “আমি যা বলতে কল করেছি, হয়ত একটু উইয়ার্ড লাগবে, তবে.. আচ্ছা, তুমি কি আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে?ʼʼ

লাবন্য একটু সপ্রতিভ হলো। ‘তুমিʼ করে বলছে। সেদিন দেখে একদম ফ্রি মাইন্ডেড মনে হয়নি লোকটাকে। লাবন্য এমন একটা কথার কী জবাব দেবে! ওকে চুপ থাকতে দেখে ইরফান নিজেই আবার বলল, “তুমি কি ভয় পাচ্ছ, লাবন্য? আমি তোমার পরিবার থেকে অনুমতি নিয়েই দেখা করব, সো বি ইজি।ʼʼ

লাবন্য একটু থমকাল এবার। আস্তে করে বলল, “আমি পরে জানাব।ʼʼ

“হু, শুনেছিলাম তুমি খুব সল্পভাষী। তবে সমস্যা নেই, আমার সঙ্গে থাকতে থাকতে কথা বলতে শিখে যাবে।ʼʼ

ইরফানের কথায় লাবন্য চমকিত হয়। লোকটা বেশ কায়দা করে কথা বলতে জানে। সংকুচিত গলায় বলল, “আচ্ছা রাখছি, পরে জানাব এ বিষয়ে।ʼʼ

“পরে অথবা আগে যা-ই জানাও, উত্তর হ্যাঁ হবে। আমি আসব তোমায় পিক করতে।ʼʼ


রসের হাড়িটা ফারজাদের হাতে, সে মাঠের মাঝে সরু রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। দ্বিজা পেছন পেছন হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ-ই ধনের ক্ষেতের মধ্যে নেমে পড়ল। সতেজ, তাজা ধনেপাতার গাছ—লোভ সামলাতে পারে না দ্বিজা। ওমনি বসে যায় ধনেপাতা তুলতে। ততক্ষণে ফারজাদ বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে। সে বসে ইচ্ছেমতো ধনেপাতার গাছ টেনে টেনে তুলছে। হঠাৎ-ই পেছন থেকে কারও ধাওয়া করার আওয়াজ পেল। ততক্ষণে দ্বিজা বুঝে গেছে ক্ষেতওয়ালা নিশ্চয়ই। উঠে দৌঁড় দিল, তবে ধনেপাতার ঝোপটা দুহাতে ধরে। ক্ষেতওয়ালা গালি ঝারছে আর এগিয়ে আসছে দ্বিজার দিকে। দ্বিজাকে পেছন থেকে দেখে চিনতে চেনার উপায় নেই। দ্বিজা দৌঁড়ে এসে ফারজাদের বাঁ-হাতের বাহু ঝাপটে ধরে উত্তেজনা ও খুশিতে হাসতে থাকে। হাসতে হাসতে ঢলে-ঢলে পড়ছে আনমনেই ফারজাদের বাহুতে। ফারজাদকে ধরে জোরে জোরে এগোচ্ছে আর হাসছে দ্বিজা। ফারজাদ তাকাল হাসিতে ভেঙে পড়া দ্বিজার দিকে। চোখে-মুখে দ্বিজার উপচে পড়া আনন্দ, সে যে ফারজাদকে ঝাপটে ধরে আছে সেদিকে বিশেষ খেয়াল নেই, হয়ত খেয়াল দিতে চাইছে না মেয়েটা!

ফারজাদ একটু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে আস্তে করে হাতটা নিজের বাহু থেকে ছড়িয়ে দিলো। দ্বিজা থেমে যায়, চেহারাটা গুমটে হয়ে উঠল। ফারজাদ গম্ভীর হয়ে বলল, “বাচ্চা আছিস নাকি এখনও? এটা কী ধরণের আচরণ?ʼʼ
একটু থেমে আবার বলল, “ধনেপাতা নেই বাড়িতে? এখান থেকে তুলতে হবে কেন?ʼʼ

ফারজাদ আগে আগে হাঁটতে শুরু করল এটুকু বলে। দ্বিজা চুপচাপ হাঁটতে লাগল পেছন পেছন।

বাড়িতে ঢুকতেই আমেনা বেগম রসের হাড়ি নিলেন। ফারজাদ ভেতরে চলে যেতে অগ্রসর হয়। পেছন থেকে ফারহানা ডাকলেন, “রস খেয়ে যা, ফারজাদ!ʼʼ

ফারজাদ কিছু না বলে ভেতরে চলে যায়।

দ্বিজা বসে আছে ড্রইং রুমে। কিছুক্ষণ পর সকলে এসে ঘিরে ধরল ওকে। আজ সন্ধ্যায় পিঠা উৎসব আছে বাড়িতে। ফারজাদ তো ফেরারি, এই আছে তো কখন ফুরুৎ করে উড়ে যাবে, খবর পাওয়া যাবে না। তাই সময় থাকতেই পিঠাপুলি খাওয়া শেষ করা চাই। বাড়িতে লোকের আমদানী তো কম নয়। আর সকলে মিলে প্লান করে বসল—আজ তারা বাড়ির রান্না খাবে না। মাঝারী একটা চড়ুইভাতি হবে। দ্বিজা কথা বলল নি কোন। ফারিন সরু চোখে তাকায়, “কী হইছে তোর? সারাদিন নাচানাচি করে বেড়ানো লোক এত চুপচাপ ক্যান? তোর আনা ধনেপাতা দিয়ে বড়ই মাখাবে রূপা, আয় খাবি আয়।ʼʼ

দ্বিজা জোর করে একটু হাসল, “ঠিক আছে করো, তোমরা করলে আমিও আছি।ʼʼ


বেলা এগারোটার মতো বাজে। বাড়িতে বিয়ের তোড়জোড় চলছে। সামনের শুক্রবারে বিয়ে। তুলে দেওয়া হবে না, তবে আয়োজন তো মেয়ের বাড়িতে ষোল আনাই করতে হয় বরপক্ষকে খুশি করতে। মাঝখানে ছয়দিন আছে, বাড়িতে দুটো মজদুর লাগিয়েছেন আজাদ সাহেব। পেছনের বাগানটার আশপাশ একটু ঝোপঝাড়ে ভরে গেছে, সেগুলো পরিষ্কার করার কাজে লাগানো হয়েছে। খাঁড়া দুপুর হতে হতেই রোদ বেরোলো বেশ ভালোই। ফারজাদ বসে আছে বাগানে মোড়া পেতে, কাজ দেখছে। ফোনে কোন জরুরী কথা বলছে মনে হলো। সে-সময় নিপা গিয়ে দাঁড়াল পাশে। ফোন রেখে নিপার দিকে তাকিয়ে ইশারা করল, কী হয়েছে?

নিপা তাড়াহুড়ো করে বলে, “ভাইয়া, একটা চুলা কেটে দাও না! আমরা রান্না করব, মামি রান্নাঘরে রান্না করতে দিচ্ছে না।ʼʼ

ফারজাদ ভ্রু কুঁচকে বলল, “তোরা পিকনিক করছিস, তোরা কাটবি, আমি কেন কেটে দেব?ʼʼ

ফিরোজা এলো ছেলেকে কোলে নিয়ে। ফারজাদের দিকে এগিয়ে বলল, “একটু মানুষ হ এবার। ভুতের মতো অতৃপ্ত মুখে না ঘুরে, ওদের পিকনিকের ব্যাবস্থা করে দে।ʼʼ

অগত্যা ফারজাদ উঠল। বলল, “একটা কোদাল এনে দে।ʼʼ

ফারিন কোদাল নিয়ে এলো। ফারজাদ জ্যাকেটটা খুলে ফারিনের হাতে দিয়ে, রূপাকে বলল, “আমার রুম থেকে আমার গামছাটা এনে দে।ʼʼ

ফারজাদ কিছুটা মাটি খুঁড়ে, গর্তের তিনপাশে কয়েকটা ইট সাজিয়ে দিলো। দ্বিজা তাকিয়ে দেখছে ফারজাদকে। কাজ শেষ করে গামছাটা গলায় ঝুলিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে যায় ফারজাদ। ফারজাদ উঠোনের ডানদিকে কলপাড়ে যায় হাত ধুতে। হঠাৎ-ই লাবন্য এসে পেছনে দাঁড়াল। ফারজাদ সেদিকে না ফিরেই জিজ্ঞেস করল, “কিছু বলবি?ʼʼ

লাবন্য আস্তে করে মাথা নাড়ে, “হু।ʼʼ

“হু, আসছি যা।ʼʼ

লাবন্য বলল, “কোথায় যাব?ʼʼ

ফারজাদ ঘুরে তাকায় লাবন্যর দিক, “ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বস।ʼʼ

লাবন্য বুকটা ধুক করে উঠল। এটা ফারজাদের পুরোনো স্বভাব—সকলকে একসাথে ডেকে নিয়ে খেতে বসা। আগেও এমন দ্বিজা, লাবন্য, লিমন, ফারিনকে ডেকে নিয়ে একসাথে খেতে বসত ফারজাদ। লাবন্য রেগে থাকলে, তাকে ধমকে-ধামকে টেনে এনে খেতে বসাতো। কবে জানি কেমন করে ফারজাদ বদলে গেল। এবং সে বদল এমন, যে তা উল্লেখ করা যায় না। শুধু অনুভব করা যায়— ফারজাদ কঠোর হয়ে গেছে। ফারজাদ মায়াহীন হয়ে গেছে। লাবন্য গেল না, দাঁড়িয়ে রইল।

হাত-মুখ ধুয়ে চশমাটা চোখে লাগিয়ে রোবটিক ভঙ্গিতে হেঁটে চলে গেল ফারজাদ। ঢাকাতে থাকলে খাওয়া, ঘুম ঘড়ির কাঁটার সাথে বেঁধে থাকে। বাড়ি আসলেই সব গুলিয়ে যায়। ডাইনিং রুমে টেবিলে বসে খাচ্ছে দ্বিজা। লাবন্য হঠাৎ-ই একটু বিরক্ত হলো। ভালো লাগল না কেন জানি ব্যাপারটা। সে হঠাৎ-ই স্বার্থপরের মতো ভাবছে, তা বুঝে নিজের মনেই হাসল একবার। ফারজাদ গিয়ে বসল দ্বিজার পাশের চেয়ারে। লাবন্য মাথা নিচু করে খাচ্ছে। হঠাৎ-ই ফারজাদ জিজ্ঞেস করল, “কী বলবি, বল এবার।ʼʼ

দ্বিজা মাথা তুলে তাকায় লাবন্যর দিকে, সেই মুহূর্তে লাবন্যও ঠিক দ্বিজার দিকেই তাকিয়েছে। দ্বিজা মনোযোগ সহকারে খাবার চিবোচ্ছে। লাবন্যকে একটু অপ্রস্তুত দেখাল। ফারজাদ নজর তুলে তাকিয়ে দেখল এক নজর লাবন্যর অপ্রস্তুত বোধ। বলল, “কী বলবি?ʼʼ —ফারজাদের কণ্ঠটা কেমন ভারী শোনাল।

লাবন্য দ্রুত বলে উঠল, “আসলে..

আকস্মিক দ্বিজা চট করে দাঁড়িয়ে পড়ল চেয়ার থেকে। খাবারের প্লেট হাতে নিয়ে আস্তে করে সেখান থেকে চলে যেতে অগ্রসর হয়। ফারজাদ ডাকল, “দ্বিজা! বস এখানে, দ্বিতীয়বার যেন না বলতে হয়।ʼʼ

দ্বিজা একটু ইতস্তত করে ঘুরে এসে বসল আবার ভারী পায়ে। ফারজাদ লাবন্যকে বলল, “এবার বল।ʼʼ

লাবন্য অবাক হয়। ফারজাদের স্বাভাবিক ভঙ্গি, আশেপাশে আদৌ কিছু হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না তার মুখের দিকে তাকিয়ে। কয়েক মুহুর্ত কেটে যায় এভাবেই। ফারজাদ তাকিয়ে আছে লাবন্যর দিকে। লাবন্য সেদিকে তাকিয়ে থমকে যায়। ফারজাদ কঠিন দৃষ্টি মেলে তাকিয়ে আছে। চাপা স্বভাবের হওয়ায় রাগটুকু হয়ত তামাশার পর্যায়ে যায়নি এখনও। হঠাৎ-ই দাঁতে দাঁত পিষে টেবিলের ওপর একটা চাপা থাবা মেরে বলল,

“নাটক চলছে এ বাড়িতে? অভিনয় কারা কারা করছে? তোর কী হয়েছে, বল? কী বলবি, যেটা কারও সামনে বলা যায় না? তোর আমার সঙ্গে এমন কী কথা থাকতে পারে যেটা দ্বিজা থাকলে বলতে মুখে বাধে? আর তুই, তুই উঠে যাচ্ছিলি কেন? বলেছিলাম? কী চলছে তোদের মাঝে?ʼʼ

লাবন্য মাথাটা নত করে নেয় আস্তে করে। দ্বিজা সংকুচিত নজরে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে। ফারজাদ চাপা গর্জন করে উঠল, “এই তাকা, আমার দিকে তাকা। আমাকে কী মনে হয়? বাই** মনে হয়? এই-যে সকাল বিকেল দীর্ঘশ্বাস, আড়ালে আড়ালে বিরহ যাপন করছিস। আমি পরোয়া করিনা বলে বুঝিও না কিছু? পাগল শালা আমি, রাইট? বাড়িতে কয়েকদিনের জন্য এসেছি, ভেবেছিলাম এভাবেই এভোয়েড করে পার করে দিই দিনগুলো। চলেই তো যাব। অথচ তোদের এসব মেলোড্রামা টাইপ পারফরমেন্সে মন্তব্য না করে পারলাম না। ওয়েট ওয়েট, লুক—আমায় দেখে প্রেম পায় তোদের? কোন ভিত্তিতে? তাকা এদিকে..

হুংকার করে ওঠে ফারজাদ। লাবন্য একটু শক্ত হয়ে চোখটা বুজে নিলো এঁটে। দ্বিজা ফারজাদের দিকে তাকিয়ে একটা অর্ধভেজা ঢোক গিলল। ফারজাদ আবার বলে, “আমার প্রতি প্রেম জাগার কারণ কী? না আমি কখনও তেমন আশকারা দিয়েছি, না পাত্তা দিয়েছি, আর না আমার আচরণ কারও মনে ধরার মতো। তাহলে তোদের ভেতরে প্রেম পোকা কিরকির করে কীভাবে? আমার ব্যবহার-আচার, স্বভাব চরিত্র, পছন্দ, কথাবার্তা–এসবের কোন কিছু প্রেমে পড়ার মতো?ʼʼ

ফারজাদকে ক্ষেপা ষাঁড়ের মতো লাগল এবার। সকলে জানে অবশ্য এই ফারজাদকে। আবার এটাও জানে ফারজাদ বহুরূপি। দ্বিজার চোখটা ভিজে উঠেছে অপমানে। দাঁতের মাড়ি আটকে বসে আছে। লাবন্য মাথাটা নত করে আছে, কিঞ্চিত নড়াচড়ার ক্ষমতাটুকু হারিয়েছে।

ফারজাদ আবার বলল, “আমার মতো ছেলের প্রেমেও পড়া যায়? হাহ! আমি জানতাম আমার যে জঘন্য আচরণ, আর চলাফেরা–সেসবে লোকে আমায় ঘৃণা করে কূল পাবে না। শালা, দুই পুচকে মেয়ে বিরহে মরছে!ʼʼ
হাতের আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে দ্বিজাকে উদ্দেশ্য করে বলল,
“লুক এট মি, ড্যাম! লুক, আমার জীবনটা আর পাঁচটা মানুষের মতো? আমার চলাফেরা? আমার কথাবার্তা? কিসে আটকেছিস? আমার রূপে? রূপ তো নেই, তাহলে কিসে আটকেছিস? আবেগে, শালার আবেগ! লিসেন, আমার লাইফটা সাধারণ মানুষের মতো নয়, আর না আমি স্বাভাবিক। আর আমার এই অস্বাভাবিক জীবনের দিকে প্রেমময় নজর দিয়ে নিজেদের ফালতু মেয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা করিস না। আমি খারাপ, এর চেয়ে বড়ো সত্য নেই। তা সকলে জানে, আর আমিও মানি। আর এই আমি থেকে দূরে থাকবি, এটা আমার ওয়ার্নিং থাকল।ʼʼ

ফারজাদ জোরে জোরে কয়েকটা নিশ্বাস নিলো, লাবন্যকে বলল, “তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে, মাইন্ড ইট। আমি কেবল তোর চাচাতো ভাই। এত বছরে যখন কোন রকম রেসপন্স করিনি, আশা করি বুঝতে পেরেছিস–আমি মরিচিকা। এই যে দিনের পর দিন চুপ আছি, অবুঝ হয়ে আছি–কত ভালো-মানুষির পরিচয় দিয়েছি ভাবতে পারছিস? আজ আর নিতে পারলাম না তোদের ঢং, সিরিয়াসলি ইরিটেটিং এই আবেগী মেয়েদের ন্যাকা আবেগ আমার কাছে।ʼʼ

দ্বিজার চোখের কোণ বেয়ে অনুমতিহীন এক ফোটা জল গড়াল অপমান আর ক্ষোভ ঝরিয়ে। লাবন্য পাথরের মতো বসে আছে। যখন তখন খাবার ঘরে যে কেউ ঢুকবে। ফারজাদ অমানুষের মতো ধমকে উঠল, “ওঠ, যা সামনে থেকে।ʼʼ

লাবন্য জড় পদার্থের মতো উঠে চলে যায় ভঙ্গুর মনটাকে নিয়ে। দ্বিজার শরীরটা শিউরে শিউরে উঠছে থেকে থেকে। ফারজাদ চাপা স্বরে বলল, “নিজের এই মূল্যহীন অনুভূতিকে দাফন করে ফেল নিজের ভেতরে। আমি খারাপ, খারাপ মানুষের প্রতি অনুভূতি আনাও পাপ। পাপ তুই করেছিস, পাপমুক্ত কর নিজেকে। আর তোর এই অনুভূতি নিতান্তই সস্তা, এসব প্রেম ভালোবাসা পৃথিবীতে নেহাত নিচু একটা ব্যাপার। ফারজাদ ভালো না, দ্বিজা। ফারজাদ মুখোশধারী। যা সে দেখায়, সে এক্সাক্টলি তার বিপরীত। নিজেকে কাঠখড়ি হিসেবে পুড়িয়ে সেই আগুনে নিজের অনুভূতিগুলো ছাই করে ফেলেছে ফারজাদ। সেই অনুভূতিশূন্য, খারাপ মানুষটার ওপর থেকে নিজের আবেগী অনুভূতিগুলো উঠিয়ে নে। আবেগকে ঘৃণা করি আমি। তোর মাঝে সেই অনুভূতি দেখে তোকেও ঘৃণা করতে শুরু করি, তার আগে এসব ফালতু চিন্তা মাথা থেকে ঝেরে বের কর।ʼʼ

ফারজাদ প্লেট সরিয়ে উঠে চলে গেল। দ্বিজা বসে রইল ওভাবেই। তার অনুভূতি মিথ্যা, ফালতু, সস্তা? ভাবতেই বুকে আঘাত অনুভূত হলো। এতদিন ধরে সুপ্ত অবস্থায় জমিয়ে রাখা তার অনুভূতিগুলো সস্তা! তা কেবল আবেগ?

আর ফারজাদ সব বুঝেও কখনও বুঝতে দেয়নি সে বোঝে। দ্বিজা নিজের ওপর তাচ্ছিল্য প্রকাশ করে হাসে—সে এরকম একটা নির্দয় পুরুষের প্রেমে আটকেছে জীবনের সেই শুরুতে! আজ লাবন্যর জন্য সহানুভূতি জাগল ভেতরে। চোখে পানি নিয়ে ঠোঁট বাঁকিয়ে হেসে ফেলল দ্বিজা। হাসিটুকু স্থায়ী হয় না ঠোঁটে। কান্নার বহর বাড়তেই ঠোঁটের হাসি মিলিয়ে ঠোঁট দুটো ভেঙে পড়ে কান্নায়।

চলবে..

[রিচেইক করিনি। ভুলভ্রান্তি ক্ষমা করবেন।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে