তপ্ত সরোবরে পর্ব-০২

0
867

#তপ্ত_সরোবরে
#তেজস্মিতা_মর্তুজা

২.

ফারজাদ গিয়েছিল দুপুরের দিকে আব্বুর সাথে দেখা করতে আড়ৎয়ে। ফিরেছে বিকেল পেরিয়ে। দুপুরের খাওয়াটাও হয়নি তার এখনও। ফিরেই আগে গোসল নিয়েছে। তাও আবার বাথরুমের শাওয়ারে গোসল না করে, করেছে টিউবওয়েলের ঠান্ডা পানিতে। ফারহানা বেগম বহুবার নিষেধ করেছেন—এই ঠান্ডায় গোসল করাটা মোটেই জরুরী নয়। কে শোনে কার কথা?

ফারহানা বেগম কলপাড়ে এলে ফারজাদ বলল, আম্মা “এক কাপ কফি বানান তো গরম গরম!ʼʼ

ফারহানা বেগম ভ্রুকুটি করেন, “এই তুই ভাত খাইছিস? আইছে আমার শহুরে বাবু, সকাল-দুপুর-রাত কফি! আমাদের চা-তেই চলে।ʼʼ

ফারজাদ কফি নিয়ে এসে নিজের ঘরের বারান্দাতে দাঁড়াল। ঠিক বারান্দা না, ফারজাদের রুমের সাথে দোতলায় এটাকে রেলিং দেয়া খোলা যায়গা বলা চলে। তার শরীরে শীতের প্রভাব বরাবরই খুব কম বলা চলে। একটা পাতলা টিশার্ট পরে দাঁড়িয়ে আছে একহাত রেলিংয়ে রেখে। উত্তরের হাওয়া বইছে, যা শরীর ছুঁয়ে চলে যাচ্ছে। এই-যে শরীরের লোমগুলো শিউরে উঠছে, গা’টা কেঁপে কেঁপে উঠছে–ব্যাপারটা মন্দ লাগছে না তার।

হঠাৎ-ই রুমে কেউ প্রবেশ করল। তা বুঝেও ফারজাদ পেছন ফিরে তাকাল না। বরং মানুষটি এগিয়ে এসে দাঁড়াল পাশে। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে, ঠান্ডা হাওয়া বেশ জোরেই বইছে। ওড়নাটা উড়ে এসে ফারজাদের মুখে আটকে আবার উড়তে লাগল মুখের সামনেই। ফারজাদ বিরক্ত হয়ে ঘাঁড়টা কাত করে একটু পিছিয়ে নিলো। উড়তে থাকা ওড়নাটা খপ করে ডান হাতে ধরে লাবন্যর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, “ধর! নিজের ওড়না সামলে রাখ।ʼʼ

লাবন্য হাসল একটু। ওড়নাটা ধরে ভালোভাবে গায়ে জড়িয়ে নিয়ে মৃদু স্বরে বলল, “শীত লাগছে না আপনার?ʼʼ

“লাগছে তবে, চলনসই। শীত তো তোরও লাগার কথা, একটা পাতলা ওড়না জড়িয়ে আছিস শুধু গায়ে।ʼʼ

লাবন্য বলে, “ঢাকাতে কোথায় থাকেন আপনি?ʼʼ

“এখন আপাতত মহানগর রাজারবাগের এর পাশে আছি। কেন তুই যাবি নাকি ঢাকা?ʼʼ

লাবন্য তাকাল ফারজাদের দিকে, “যেতে তো ইচ্ছে করে, তবে.. ʼʼ

ফারজাদও তাকাল এবার, “তবে কী?ʼʼ

চোখটা তড়িঘড়ি নামিয়ে নিলো লাবন্য। যেন কিছু প্রকাশ হয়ে যাওয়ার ভয়। দ্রুত বলল, “ইচ্ছে করলেই তো আর যাওয়া যায় না।ʼʼ

ফারজাদ অবুঝের মতো প্রশ্ন করে, “তাহলে কী করলে যাওয়া যায়?ʼʼ

লাবন্য জবাব না দিয়ে কেবল সন্তর্পণে আড়চোখে তাকাল ফারজাদের দিকে। ফারজাদ জিজ্ঞেস করে, “তোকে নাকি আগামীকাল দেখতে আসছে, শুনলাম।ʼʼ

লাবন্য নিষ্প্রভ, ক্ষীণ স্বরে উত্তর দেয়, “হু!ʼʼ

ফারজাদ কফির মগে চুমুক দিয়ে একবার ঘুরে তাকিয়ে দেখল লাবন্যর অচঞ্চল মুখটা। একদৃষ্টে চেয়ে আছে মাঠের প্রান্তরে ঘন হয়ে আসা কুয়াশার দিকে। সে এখানে দাঁড়িয়ে থাকলেও, নেই সে এখানে। হারিয়ে গেছে কোথাও। হঠাৎ-ই জিজ্ঞেস করল, “জীবনটা কেমন, ফারজাদ ভাই!ʼʼ

ফারজাদ মাঠ পেরিয়ে ওই দিগন্তের আকাশের দিকে চেয়ে বলল, “জীবনকে বর্ণনা করা যায় না, তবে জীবন সুন্দর, যদি সেখানে চাওয়া না থাকে।ʼʼ

“তাহলে তো জীবন স্বার্থপর, ফারজাদ ভাই। তার কাছে চাইতে নেই, নিজের চাওয়াগুলো তার ধারাবাহিকতায় বলি দিয়ে দিতে হয় বরং।ʼʼ

ফারজাদ হাসল মৃদু, “তুই যা চেয়ে না পেয়ে জীবনকে দোষারোপ করছিস, খোঁজ নিলে দেখবি—তা জীবনটাকেই পুড়িয়ে একমুঠো কাঠকয়লা রূপে হাতের মুঠোয় চেপে বেঁচে আছে।ʼʼ

লাবন্য ছটফটিয়ে উঠল যেন নীরবে। ফারজাদ তা খেয়াল করে, আবার কফিতে চুমুক দেয়। লাবন্য হাওয়ার তরে একটু শিউরে উঠে দু’হাত দ্বারা নিজের দু’হাতের বাহু চেপে ধরে। একবার অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল পাশে দাঁড়ানো জটিল, সদ্য ভেজা ভেজা পুরুষটির দিকে। চোখ ফিরিয়ে দ্রুত বলে উঠল, “আচ্ছা থাকেন। আম্মা ডাকছে, যাই আমি।ʼʼ

ফারজাদ পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল একবার লাবন্যর চঞ্চল পায়ের প্রস্থান। এ বাড়ির সব পুচকে পুচকে মেয়েগুলো বড়ো হয়ে গেছে বেশ। অবশ্য মেয়েটা আগে-পরেই এমন! অদ্ভুত আচরণ। খুব বেশি কথা বলে না, খুব বেশি হাসে না, আবার হুটহাট উত্তেজিত হয়ে যায় খুব। তবে ফারজাদকে এড়িয়ে চলার ক্ষমতা নেই এ বাড়িতে কারও। তেমনই লাবন্যও পারে না বোধহয়! ফারজাদ ভ্রু কুঁচকে আবার ফিরে তাকাল বিস্তর মাঠের দিকে।

দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে। এই ফসলহীন মাঠ এখন ঢেকে যাবে অন্ধকারের তলায়। মাগরিবের আজান শোনা গেল। মসজিদটা ফারজাদদের বাড়ি থেকে সামান্য দূরে। গ্রামে তাদের বাড়িটা এক বিশিষ্ট বাড়িই বটে! এ গ্রামের মানুষ সাধারণত চাষাবাদ অথবা ব্যাবসা করেই জীবিকা চালায়। গ্রামের কাউন্সিলর ফারজাদের চাচাতো চাচা। গ্রামের সবচেয়ে বড়ো গাঙটা ফারজাদের বাবা আজাদ খান সাহেবের। সেই গাঙের মাছেই চলে আজাদ সাহেবের মাছের আড়ৎ। ফারজাদের দাদার আমলের করা বিল্ডিং বাড়িতে দোতলা তুলেছেন আজাদ সাহেব। বেশ আধুনিক করেই করা ফারজাদদের বাড়ি। বিঘাখানেক জায়গাজুরে বাড়ির সীমানা। দেখতে বাগান বাড়ির মতো লাগে।

ফারজাদ ঘরে চলে এলো বারান্দা থেকে। ফরিদ কাকার বদলে যদি গরুর খাবার আজাদ সাহেব দিতে যান, এক্ষুনি একটা ঝাড়ি মারবেন—দামড়া ছেলে, নামাজ কালাম নাই! শহরে পড়তে দিয়া বিরাট ভুল করছি তরে, ফারজাদ! চল, আয় মজ্জিদে যাই, নামাজ পড়ে আইবি আমার লগে।

তবে ঘরে এসেও বিশেষ লাভ হলো না তার। আজাদ সাহেব এসেই শুরু করলেন, “ফারজাদ! চল ঈমাম সাহেব তরে দেখবার চাইছে। চল আমার লগে, নামাজের পর একটু দোয়া নিয়ে আসবোনে, চল।ʼʼ

ফারজাদ হাঁ করে একটা হতাশ নিঃশ্বাস ফেলল। সবার কাছে ফারজাদ বিশেষ কিছু হলেও, দাদু, মা আর এই লোকের কাছে সে এখনও হাফপ্যান্ট পরে টায়ারের পেছনে লাঠি নিয়ে ছুটে বেড়ানো ছোটো ফারজাদ।


দ্বিজা এবার ইন্টার পরীক্ষার্থী। তবে মাস দুয়েকের মতো দেরী আছে এখনও পরীক্ষার। শীতকাল যাচ্ছে। ওদের বাড়িটা প্রায় কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার সদরেই। তবে গৌরিপুর নানির বাড়িতেই ছোটোবেলায় মানুষ দ্বিজা। দ্বিজার মতে, বাবা বিদেশ থাকার এই একটা সুবিধা। ছোটোবেলা থেকে মায়ের সাথেই মামার বাড়িতে থাকত। বাবা দেশে না থাকায় দাদির বাড়ির সাথে বিশেষ খাতির ছিল না তার। এরপর যখন ছোটো মামা অর্থাৎ, লাবন্যর বাবা ঢাকা থেকে বাড়িতে এসে বসবাস শুরু করল, তখন দ্বিজার মা দিলরুবা বেগম দ্বিজা ও তার ছোটো ভাই দিহানকে নিয়ে শশুরবাড়ি থাকা শুরু করেন। কিন্তু দ্বিজার এ বাড়িতে যাতায়াত থেমে থাকেনি।

সে এখানে এসেছে দু’দিন হলো। তার আসার পরেরদিন মাঝরাতে এসে পৌঁছেছে ফারজাদ। মূলত তার এবারের আগমন নানুর হাতের শীতের পিঠা বোধহয়। অথচ সকাল থেকেই অজানা কারণেই মনটা গুমোট হয়ে আছে তার। বড়ো মামি এসে অনেকবার ডেকে গেলেও বের হয়নি। হঠাৎ-ই ভারী পায়ের শব্দ এগিয়ে এলো বারান্দার দিকে। রুমের লাইট জ্বলে উঠল। ফারজাদ এসে বসল পাশের চেয়ারটায়। গম্ভীর মুখে প্রশ্ন করল, “এভাবে এখানে বসে আছিস কেন? কী ভাবছিস?ʼʼ

“উহু, ভাবছি না।ʼʼ

“ঠান্ডা লেগে যাবে তো, রুমে গিয়ে গরম কাপড় জড়া গায়ে, যা।ʼʼ

“ঠান্ডা লাগছে না।ʼʼ

ফারজাদের গলাটা এবার কড়া শোনায়, “ঠান্ডা লাগছে কি-না তা শুনতে চাইনি। কিছু বললাম, সে অনুযায়ী কাজ কর।ʼʼ

“হুকুম করছেন?ʼʼ

“করছি।ʼʼ

দ্বিজার তর্ক করার মানসিকতা নেই আপাতত। আস্তে করে উঠে রুমে গিয়ে নিজের চাদরটা খুঁজল, পেল না। হঠাৎ-ই মনে পড়ল সকালে চাদরটা ফারজাদকে দিয়েছিল। লাবন্যর একটা চাদর গায়ে চড়িয়ে ভার মুখে বেরিয়ে যাচ্ছিল রুম থেকে। তখনই ডাক এলো ফারজাদের, “এদিকে আয়, বস এখানে।ʼʼ

কোন ত্যাড়ামো করতে ইচ্ছে করল না এখন আর। আস্তে করে হেঁটে গিয়ে বসল ফারজাদের পাশের চেয়ারটায়। ফারজাদ প্রশ্ন করে, “কী হয়েছে? মন খারাপ কেন?ʼʼ

দ্বিজা কোনরকম ভনিতা না করে, সরাসরি বলল, “জানি না, তবে ভালো লাগছে না।ʼʼ

“নিজেকে জিজ্ঞেস কর, কেন খারাপ লাগছে?ʼʼ

দ্বিজা কিছুটা অবাক হয়ে বলল, “উত্তর পাব?ʼʼ

“পাবি।ʼʼ

দ্বিজা কিছুক্ষণ চুপচাপ চেয়ে রইল বাড়ির সামনের অন্ধকার রাস্তার দিকে। কিছুটা সময় নিয়ে তারপর বলল, “জানিনা আজকাল কেন জানি আজব আজব অনুভূতি হয়। হঠাৎ করেই মন খারাপ হয়ে যায়, কারণটা আমি নিজেও বুঝতে পারি না। খুব অস্থির লাগে। সবকিছু ছেড়ে দূরে কোথাও চলে যেতে ইচ্ছে করে। একা থাকতে ভালো লাগে, হুচহাট খুব চঞ্চল হয়ে পড়ি। শুধু মনে হয়—কিছু একটা নেই, কিছুর অভাববোধ করি। কিন্তু ভাবলে তেমন কিছুই মনে আসে না–যেটার অভাব আছে আমার।ʼʼ

দ্বিজা থামল, তবে মনে হলো আরও অনেক কিছুই বলার আছে তার, কথা ফুরোয় নি। ফারজাদ হাসল একটু। নিঃশব্দ হাসি আধো অন্ধকারে দ্বিজার চোখে পড়ল না। বলল, “ভয়ংকর একটা বয়স পার করছিস। সাবধানে চলাফেরা করিস, যেকোন সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।ʼʼ

দ্বিজা অবুঝের মতো প্রশ্ন করে, “কিসের দুর্ঘটনা, কেমন দুর্ঘটনা?ʼʼ

ফারজাদ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “তা তুই নিজেই বুঝতে পারবি ঘটলে। তবে মনকে প্রশ্রয় দিস না একদম। মন যা বলে, মনের যা ভালো লাগে তা থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকার চেষ্টা কর।ʼʼ

হেঁটে চলে যেতে বলল, “দাদি ডাকছে তোকে, নিচে আয়।ʼʼ

ফারজাদ চলে যায়। হঠাৎ-ই ফারজাদ চলে কেন গেল তাও বুঝতে পারল না দ্বিজা। হতবুদ্ধি হয়ে বসে রইল কিছুক্ষণ। কী বলে গেল ফারজাদ? কী হবে তার সঙ্গে? কীসের থেকে দূরে থাকতে বলে গেল? মাথা ঝাঁকাল পাগলের মতো করে। এই ছেলে আইনের লোক হয়েই জন্মেছে বোধহয়। এখন না-হয় প্রশাসনে যোগ দিয়েছে। তবে চিরদিনই এমন হেঁয়ালি করে কথা বলার স্বভাব আছে। দ্বিজার এবার মন খারাপের চেয়ে বেশি চিন্তা হতে শুরু করল, সাথে রাগও।


পিঠা বানানোর উৎসব লেগেছে আজ খান বাড়িতে। ফারজাদের দাদি আমেনা বেগম, বয়স তো ভালোই হয়েছে তবে শখ আহ্লাদ ষোল আনা রয়েছে নাতি-নাতনি নিয়ে আনন্দ-ফূর্তি করার। লাবন্য, লাবন্যর ভাই লিমন, ফারজাদ, দ্বিজা, ফারজাদের ফুফাতো দুই বোন–নিপা ও রূপা,ছোটো ফুফুর ছেলে নিবির— সবগুলো বসে আছে মাটির চুলোকে ঘিরে। সেখানে এক একটা করে ভাঁপা পিঠা উঠছে, সবগুলো হৈ-হুল্লোড়ে মেতে উঠছে—কে নেবে সেই পিঠাটা। ফারজাদের সে বয়স নেই, সে ওদের সঙ্গে যোগও দেয়নি, তবে দাদির মন রক্ষার্থে বসতে হয়েছে। ফারজাদের দুই বোন এসে এখনও পৌঁছায় নি অবশ্য। তারা আজ সংসারী হয়ে গেলেও এ বাড়িতে এলে যেন সবগুলো আবার শৈশবে ফিরে যায়।

পিঠার উৎসব বেশ কিছুক্ষণ চলার পর সবাই উঠে যার যার ঘরে যাবে, সেই সময় হঠাৎ-ই গেল কারেন্ট চলে। গ্রামের বাড়ির পরিচিত দৃশ্য আর কী! সকলে একযোগে চিৎকার করে ওঠে খুশিতে। এদিকে ফারজাদ বিরক্ত হলো। ল্যাপটপে চার্জ নেই, তার ইচ্ছে ছিল এ সময়টুকু চার্জ দিয়ে রাতে কাজ করবে নিজের।

ফারজাদ মোবাইলের ফ্লাশ জ্বালিয়ে বাড়ির পেছনের বাগানে চলে এলো। সকলে এসে আবার জড়ো হলো চুলোর পাশে একটু তাপ নিতে। অথচ দ্বিজার কেন জানি এসব ভালো লাগছে না। সে কোথাও হারিয়ে আছে সে। কিছু একটা তাজা হয়েছে ভেতরে আবার। এই অভাববোধটা বহুদিন চাপা ছিল ভেতরে। অথচ আজ সকাল থেকে বুকে খোঁচাচ্ছে কিছু একটা। দ্বিজা উঠে পড়ল চুলোর পাশ থেকে। লাবন্য জিজ্ঞেস করে, “কোথায় যাচ্ছিস, দ্বিজা!ʼʼ

দ্বিজা উত্তর দিলো না, কেবল মাথা নেড়ে ইশারা করে দেখাল সামনের দিকে। অন্ধকারে হয়ত তা দেখা গেল না। দ্বিজা ধীর পায়ে হেঁটে বাগানের দিকে যায়। অন্ধকারের সঙ্গে কুয়াশা মিশে আরও জটিল লাগে ঠান্ডা পরিবেশটা। দ্বিজা ভেজা ঘাসে হেঁটে ফারজাদের লম্বাটে আবছায়া লক্ষ করে এগিয়ে গিয়ে পাশে দাঁড়াল। ফারজাদ কিছু বলার আগেই দ্বিজা বলল, “অন্ধকারে এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?ʼʼ

ফারজাদ সে কথার জবাব না দিয়ে বলল, “দলবল রেখে ঠান্ডার ভেতরে এখানে কেন এসেছিস?ʼʼ

দ্বিজা হাসল সামান্য, “আমিও মনেহয় আপনার মত গোমরামুখো হয়ে যাচ্ছি। ওসব ভালো লাগছে না, নীরবতা ভালো লাগছে।ʼʼ

ফারজাদ জিজ্ঞেস করল, “প্রেমে-টেমে পড়েছিস নাকি?ʼʼ

“বুঝতে পারছি না।ʼʼ

কথাটা মনের অজান্তেই বলে ফেলে নিজেই একটু অপ্রস্তুত হয়ে পড়ল দ্বিজা। প্রসঙ্গ এড়াতে বলল, “আগুন জলাবেন বাগানে? কারেন্ট কখন আসবে কে জানে?ʼʼ

“জলাবেন না, জ্বালাবেন। কথা শিখবি কবে তুই?ʼʼ

ফারজাদের কথায় নাক-মুখ কুঁচকায় দ্বিজা, “ধূর! সবসময় অত শুদ্ধতা শেখাতে আসার-ই বা কী দরকার আপনার?ʼʼ

“আছে দরকার। এককালে তুই আমার ছাত্রী ছিলি। এসব উল্টোপাল্টা কথা লোকের সামনে বললে আমার জাত যাবে।ʼʼ

দ্বিজার মনটা আচমকাই হালকা লাগে। এতক্ষণ কেন গুমোট হয়ে ছিল–তা সে জানে না। তবে এখন-ই বা কেন ভালো লাগছে–সেটাও তার অজানা। ফারজাদ মোবাইলের ফ্লাশ অন করল, সেই আলোতে দুজনে গিয়ে গোয়ালের পাশে খড়ির ঘর থেকে কয়েকটা শুকনো লাকড়ি নিয়ে এলো। দ্বিজা কৃত্রিম চিন্তিত হয়ে বলল,

“এখন শুকনি পাতা পাওয়া যাবে না, তাইলে উপায়?ʼʼ

“শুকনি পাতা পাওয়া গেলেও যেতে পারে, তবে একচুয়ালি ওটা শুকনো পাতা হবে–যেটা পাওয়া যাবে না।ʼʼ

ফারজাদের বাঁকা করে দেওয়া কথার খোঁটায় দ্বিজা কটমটিয়ে ওঠে, “আপনার সাথে এজন্যই আমার কথা বলতে ইচ্ছে করে না। থাকেন আপনে গেলাম আমি।ʼʼ

ফারজাদ আবার বলে, “মূর্খ ওটা ‘আপনেʼ না, শুদ্ধ ভাষায় ‘আপনিʼ হয়।ʼʼ

দ্বিজার মনটা চাইল হাফ বালতি পানিতে ডুবে মরে যেতে। এরকম একটা সিরিয়াস সময়েও যে মানুষ ভাষা শেখায়, তার সাথে রাগ-অভিমান করার-ই বা উপায় কী?

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে